হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩০

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩০
সানা শেখ

বাড়ির বাইরে আসতে আসতে আলভী মাহিদ কে বলে,
“কিসের এত জরুরি তোর?”
“চলো গেলেই তো বুঝতে পারবে।”
“কোনো কিছু প্ল্যান করিসনি তো আবার?”
“প্ল্যান! কিসের প্ল্যান? কোনো প্ল্যান করিনি।”
মাহিদ আলভী কে নিয়ে এসে দাঁড়ায় বাগানে।
ওদের দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন যুবক। যুবক টা কে চিনতে খুব একটা সময় লাগে না আলভীর।
সারপ্রাইজড হয়ে গেছে ওকে দেখে।
আলভী কে দেখে যুবক টা দুই হাত প্রসারিত করে হাসি মুখে বলে,

“সারপ্রাইজ বন্ধু।”
আলভী নিজেও দুই হাত প্রসারিত করে এগিয়ে গিয়ে নিজের স্কুল লাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড কে জড়িয়ে ধরে।
খুশি হয়ে বলে,
“সত্যি সত্যিই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি বন্ধু। তুই না বললি আসবি না!”
“তোর বিয়ে আর আমি আসবো না সেটা কি হয়?”
“কবে আসলি?”
“রাতেই এসেছি?”
“ভাবী আর বাচ্চারা কোথায়?”
“ওরা কেউ আসেনি, আমি একাই এসেছি।”
“আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি সত্যিই তুই আসবি না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এত গুলো বছর পর তোর ফোন পেয়ে তো আমি শকড হয়ে গিয়েছিলাম। পরে যখন বললি তুই মায়া কে আবার বিয়ে করছিস তখন তো আরো বেশি শকড হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আসতে পারবো না তাই না করেছিলাম। কিন্তু কোনো ভাবেই নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। আমি তিন মাস বাংলাদেশে এসেছিলাম। এখন তো কোনো ভাবেই অফিস থেকে ছুটি দেবে না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এক সপ্তাহের জন্য ছুটি ম্যানেজ করেছি। তোকে বলিনি ভাবলাম সারপ্রাইজ দেব।”

“ভেতরে আয়।”
“বাকিরা কখন আসবে?”
“শাফিন আসতে পারবে না। রানা আর তাজ বিকেলে আসবে।”
“তোর কলেজের ফ্রেন্ডরা?”
“ওদের কারো নাম্বার বা ঠিকানা জোগাড় করতে পারিনি। ওরা তো ভাড়া থাকতো, কলেজ শেষ করে অন্য কোথাও চলে গেছে। আগের নাম্বার গুলোও নেই আমার কাছে।”
“ওহ চল বাড়ির সকলের সাথে দেখা করি।”
রিমন আলভীর সাথে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। রিমন কে দেখে বাড়ির সবাই খুশি হয়। স্কুলে পড়ার সময় রিমন প্রায় সময় আলভীর সাথে এই বাড়িতে আসতো। সেই সুবাদে বাড়ির সকলের সাথেই বেশ ভালো সক্ষতা আছে রিমনের।

আসরের নামাজ শেষ হতেই আলভী কে হলুদ লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়।
হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে সকল যুবকরা। আলভী তৈরি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নেয়। হলুদ পাঞ্জাবিতে বেশ ভালো লাগছে দেখতে।
হৈ হৈ করে সবাই ছাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাহিদ হলুদের ডালা নিয়ে আসে। ডালার উপর লাল রঙের একটা নতুন গামছা ছিল। আলভীর নানা গামছা টার ভাঁজ খুলে আলভীর গলার দুই পাশ দিয়ে ঝুলিয়ে দেন।
আলভী নাক মুখ কুচকে গামছার দিকে তাকিয়ে রইলো।
“গলায় গামছা ঝুলিয়ে দিলে কেন?”

“নতুন জামাই নতুন গামছা ছাড়া জামাই জামাই ফিল আসবে নাকি? এখন না মনে হচ্ছে তুমি জামাই। এতক্ষণ তো সবাই কে একই রকম লাগছিল, বোঝাই যাচ্ছিল না কে জামাই!”
আলভী ভাব নিয়ে গামছাটার এক পাশ ওপর কাঁধের উপর তুলে দেয় প্যাচ দিয়ে।
“ভাইয়া চলো এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে, মাগরিবের আজান দিয়ে দেবে আবার।”
“হুম।”
সবাই আগায় ছাদের দিকে। মাহির বাপ চাচা কে ডাকতে যায়। ওনারা বাড়ির বাইরে ডেকরেশনের ওখানে রয়েছেন।
মাহিদ কে থামিয়ে ডালার উপর থাকা ছোট বাটি থেকে একটু হলুদ হাতে তুলে নেয় সকলের অগোচরে। মাহিদ বলে,

“হলুদ নিলে কেন?”
আলভী মাহিদ এর কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
“তোর বোন কে হলুদ লাগিয়ে আসছি তোরা যা।”
বলে পেছন থেকে মায়ার রুমের দিকে এগিয়ে আসে। মায়ার রুমের ভেতর থেকে মেয়েদের হু হা হাসির শব্দ ভেসে আসছে।
আলভী রুমের ডোরে নক করে। মেয়েদের হাঁসি বন্ধ হয়ে যায়। গলা খাঁকারি দিতেই সবাই বুঝতে পারে আলভী এসেছে। ডোর খুলে দেয় নাদিরা।
আলভী নাদিরার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,

“সবাই কে রুম থেকে বের হতে বলো।”
এক মিনিটের মধ্যে পুরো রুম খালি হয়ে যায়।
আলভী ভেতরে এসে ভেতর থেকে ডোর লক করে দেয়। মায়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মায়া কে হলুদের জন্য সবুজ পেড়ে হলুদ রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে, মেকআপ এখনো বাকি। শুধু হলুদ রঙের শাড়িতেই অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।
মায়া আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।
আলভী ধীর পায়ে মায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। বাম হাতে মায়ার কোমড় পেচিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

“আর মাত্র এক রাতের অপেক্ষা মায়া পরী।”
মায়া লজ্জায় এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,
“ছাড়ো, এখানে এসেছো কেনো এখন?”
“আমার পরী কে হলুদ লাগাতে।”
ডান হাতের মুঠোয় রাখা হলুদ মায়ার সম্মুখে উচু করে ধরে।
মায়ার গালে হলুদ লাগাতে নিলে মায়া থামিয়ে দিয়ে বলে,
“এমনিতেও ওরা সকাল থেকে খোঁচাচ্ছে আমাকে। এখন তুমি হলুদ লাগালে আরো খোঁচাবে।”
“কার কত বড় সাহস আমার বউ কে খোঁচায়!”

“ছাড়ো।”
আলভী মায়া কে বলে,
“তুমি হলুদ নাও হাতে।”
“কেন?”
“নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দাও।”
মায়া একটু হলুদ নিয়ে আলভীর গালে লাগিয়ে দেয়। হলুদ লাগানো গাল মায়ার গালের সাথে ঘষে মায়ার গালেও হলুদ লাগিয়ে দেয় আলভী।
“এখন এই হাতের টুকু কি করবো বউ?”
“ফেলে দাও।”
“উঁহু।”
“কি করবে তাহলে?”
“তোমাকে লাগাব।”

মায়া কে ছেড়ে দাঁড়ায়। মায়ার মাথা থেকে পা পর্যন্ত নজর বুলিয়ে নেয়। মায়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই শাড়ির একটা সেফটিপিন খুলে মায়ার পেটে-পিঠে হলুদ লেপ্টে দেয় আলভী। এরকম হওয়ায় জমে স্থির হয়ে গেছে মায়া। হলুদ লাগানো শেষ করে সেফটিপিন টা আবার আগের মতো করে লাগিয়ে দেয়।
“রাতে দেখা হচ্ছে আবার, এখন সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে বসে থাকো আমার অপেক্ষায়।”
“এখন কেনো তোমার অপেক্ষায় বসে থাকবো?”
“কারণ এখান থেকে তোমাকে আমিই ছাদে নিয়ে যাব।”
মায়া কিছু বলে না। আলভী ডোর খুলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

আলভী চলে যেতেই সবাই আবার রুমে চলে আসে। মায়ার গালে হলুদ দেখে নাদিরা বলে,
“ভাইয়া তো দেখছি হেব্বি চালক, সবার আগে হলুদ বউ কে হলুদ লাগিয়ে চলে গেল।”
মায়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে টুলের উপর বসে। এখন এদের খোঁচানো শুরু হয়ে যাবে আবার। যে যা খুশি বলুক, ও এক কান দিয়ে শুনবে অন্য কান দিয়ে বের করে দেবে।
ছাদে উঠে আসে আলভী। ওকে দেখে আলতাফ মাহমুদ বলেন,
“গায়ে হলুদ তোমার কিন্তু তুমি বাদে বাকি সবাই এখানে উপস্থিত হয়ে গেছে।”
আলভী বাপের দিকে তাকিয়ে থেকে স্টেজে গিয়ে উঠে বসে। প্রথমে সবাই ফটোশুট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তিন ভাই একসাথে বসে ফটো তোলে। রিমন কেও টেনে ওদের সাথে বসায়। আস্তে আস্তে সকলেই কম বেশি আলভীর সাথে ফটো তোলে।

এখন হলুদ লাগানোর পালা।
প্রথমে হলুদ লাগান নাহার বেগম। ওনাকেও আলভী হলুদ লাগিয়ে দেয়। নাহার বেগম হলুদ লাগানো শেষে ছাদ থেকে নেমে যান আস্তে আস্তে। আলভীর নানাও হলুদ লাগিয়ে দেন। সামসুন্নাহার বেগম কে ছাদে আসতে বললেও উনি ছাদে আসেননি। এখনো অহংকারে মাটিতে পা পড়তে চায় না ওনার। মায়া কথা বলতে গেলেও উনি কথা বলেননি সেজন্য আলভীও আর জোর করে ওনাকে নিয়ে আসেনি।
আলতাফ মাহমুদ, আহনাফ মাহমুদ ওনারাও দুই ভাই হলুদ লাগিয়ে দেন। তারপর আস্তে আস্তে সবাই লাগায়।
হলুদ নিয়ে রীতিমতো ছোট খাটো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে কে কাকে বেশি লাগাতে পারে সেটা নিয়ে।
হলুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে সবাই শান্ত হয়ে যায়।
আলভী বির বির করে বলে,

“আরেকটু হলেই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যাচ্ছিল।”
হুড়োহুড়ির মাঝেই মাগরিবের আজান হয়। ছেলেরা সবাই ছাদ থেকে নেমে চলে যায়।
মাগরিবের নামাজ শেষ হওয়ার পর মেয়েরা ছাদে আসতে শুরু করে।
ছেলেদের বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন আহনাফ মাহমুদ।
মায়া কে ছাদে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলভী মায়ার রুমে আসে। আলভী কে দেখেই সবাই সাইট হয়ে দাঁড়ায়।
আলভী মায়ার দিকে তাকায় পূর্ণদৃষ্টি মেলে। কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানোর জন্য মায়ার সৌন্দর্য আরো অনেক বেড়ে গেছে। চোখ ফেরানো দায় ওই মুখশ্রী থেকে। মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আলভী যেন শ্বাস নিতেই ভুলে গেছে।

আলভী কে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে মায়ার বুকের ভেতর কম্পন সৃষ্টি হয়। নেশালো ওই দৃষ্টি যেন মায়া কে আলিঙ্গন করছে।
নাদিরা আলভীর মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে,
“এভাবে দেখতে থাকলে তো রাত পাড় হয়ে যাবে।”
আলভী স্বাভাবিক হয়।
এগিয়ে এসে মায়ার এক হাত মুঠো করে ধরে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পুরোটা সময় ক্যামেরা বন্দী করে মাহিদ।
ছাদে এসে মায়া কে স্টেজের উপর বসানো হয়। আলভী নিজেও বসে মায়ার পাশে।
দুজনের ফটোশুট হয়। একের পর এক ক্যামেরা ক্লিক হতেই থাকে।
দুজন দুজন কে মিষ্টি, পায়েস, আর সাজিয়ে রাখা ফল তুলে খাওয়ায়। দুজন হাতে হলুদ নিয়ে দুজনের গালে ছোঁয়ায়। প্রতিটা মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দী হয়।

আলভী মানতাসা কে নিজের কোলে নেয়। একটু একটু করে সাজিয়ে রাখা খাবার গুলো তুলে তুলে খাওয়ায়। খাওয়ানো শেষ করে একটু হলুদ নিয়ে মানতাসার দুই গালে লাগিয়ে দেয়। মায়া নিজেও মানতাসা কে খাইয়ে দিয়ে হলুদ লাগায়।
আলভী মানতাসা কে বলে,
“আম্মা তুমি আমাকে খাওয়াবে না? হলুদ লাগাবে না?”
“লাগাবো তো।”
“তাহলে লাগাও।”

মানতাসা অদক্ষ হাতে মিষ্টি, পায়েস, ফল তুলে খাওয়ায় আলভী কে। মায়া কে খাওয়াতে গিয়ে পায়েস মায়ার থুতনিতে লেপ্টে দেয়। লেপ্টে দিয়েই হা হা করে হাসতে শুরু করে। ওর সাথে সাথে বাকি সবাইও হেসে ওঠে। আলভী টিস্যু দিয়ে মুছে দেয় মায়ার থুতনি।
আবারো অদক্ষ হাতে হলুদ তুলে নিয়ে আলভী আর মায়ার গালে লেপ্টে দেয়।
স্টেজ থেকে নেমে আসে আলভী। মানতাসা মায়ার পাশেই বসে রইলো।
আলভী একটা চেয়ার নিয়ে স্টেজের এক পাশে বসে পায়ের উপর পা তুলে। অপলক তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে। একটু পর পর মায়া নিজেও তাকাচ্ছে আলভীর দিকে।
বড়রা আগে হলুদ লাগিয়ে নিচে চলে যায়। মাহির আর মাহিদও মায়া কে হলুদ লাগায়।
মেয়েদের খায়ানো, হলুদ লাগানো, ফটো তোলা সব কিছু শেষ হতে হতে এশার আজান হয়ে যায়।
ছাদ থেকে নেমে যায় সবাই।

মায়া কে মায়ার রুমে নিয়ে যায় ওর কাজিন বোনরা।
আলভী ড্রইং রুমে এসে দাঁড়ায়। ঐশী রহমান নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আলভী মায়ের পেছন পেছন মায়ের রুমে আসে।
ছেলে কে পেছন পেছন আসতে দেখে কপাল ভ্রু কুঁচকে তাকান ঐশী রহমান।
“কিছু বলবে?”
“আজকে রাতে তুমি মায়ার সাথে ঘুমাবে। অন্য কেউ যেন মায়ার সাথে না শোয়। এখন গিয়ে ওকে ফ্রেস করিয়ে খাবার খাইয়ে ঘুমোতে বলো। মনে রেখো অন্য কেউ যেন ওর সাথে না শোয়। তুমিই ঘুমাবে ওর সাথে।”
ছেলের কথা শুনে কোনো প্রশ্ন করেন না ঐশী রহমান। মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলেন,
“আচ্ছা।”
আলভী রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়। ঐশী রহমান নিজের কাজ শেষ করে ডাইনিং টেবিলের কাছে এগিয়ে আসেন। মায়ার জন্য খাবার বেড়ে নিয়ে মায়ার রুমের দিকে এগিয়ে যান। মেহবুবা মেহের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখন।

এশার নামাজের পর ছেলে পেলে সব ছাদে উঠে আসে।
রিমন আলতাফ মাহমুদ এর আহনাফ মাহমুদ কে জরুরি কথা বলবে বলে ছাদে ডেকে নিয়ে এসেছে।
ছাদে আগে থেকেই ছোটরা সবাই উপস্থিত রয়েছে। আলভীর নানা, মায়ার দুই নানা সবাই রয়েছে শুধু মামারা আর খালুরা কেউ নেই।
আলতাফ মাহমুদ রিমনের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“বলো কি বলবে?”
“আমি না তো আলভী বলবে।”
আলভী বাপ শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে।
“কি বলবে বলো।”
“কই আমি তো কিছু বলবো না।”
“তাহলে ডাকতে বলেছো কেন?”
আলভী রিমনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ওই তোকে আমি বলেছি ডাকতে?”

“ডাকতে তো বলিসনি, শুধু বলেছিস নিয়ে আসতে তাই আমি নিয়ে এসেছি।”
দুই ভাই বিরক্ত হয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যান। গেটে তালা ঝুলতে দেখে আলতাফ মাহমুদ বলেন,
“গেটে তালা দিয়েছে কে? তালা খুলে দাও।”
আলভী ওষ্ঠদয় আগের চেয়েও চওড়া করে বলে,
“ছাদ থেকে যেতে পারবে না এখন। নাচতে হবে এখন, আমার বিয়ে আর তুমি নাচবে না তাতো হতে পারে না।”
আলতাফ মাহমুদ বড় বড় চোখ করে ছেলের পানে তাকিয়ে থাকেন কিছু সময়। তারপর অবাক স্বরে বলেন,
“আমি নাচবো? তাও এই বয়সে এসে?”
“জ্বি আব্বা প্লাস চাচা শশুর মশাই।”
আলভীর এমন কথা শুনে হা হা করে হেসে ওঠে সবাই।
আলতাফ মাহমুদ কর্কশ স্বরে বলেন,

“নাচবো না আমি, গেট খোলো।”
“শুধু তুমি না তো, আমার শশুর মশাইও নাচবে আমাদের সাথে।”
আহনাফ মাহমুদ বলেন,
“আবার আমাকে টানছ কেনো মাঝ খানে? আমি কোনো নাচ ফাঁচ করতে পারি না। আলতাফ নাচতে পারে ওকে নাচাও আমি গেলাম।”
“বড় ভাই হয়ে ছোট ভাই কে ফাঁসিয়ে কোথায় পালাতে চাইছো তুমি?”
“তুই ছোট বেলা থেকে অনেক জ্বালিয়েছিস, জোর করে নাচিয়েছিস আমাকে। এখন তোর ছেলে এসে গেছে নাচানোর জন্য। ছাড় আমার হাত।”

আহনাফ মাহমুদ ছোট ভাইয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেন। আলতাফ মাহমুদ বড় ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর ওনাদের দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।
আলতাফ মাহমুদ ছোট বেলায় আলভীর চেয়ে বেশি দুষ্ট ছিলেন। বড় ভাই কে অনেক জ্বালিয়েছেন তিনি। সব সময় বড় ভাইয়ের পেছনে লেগেছেন। এত দিনও বড় ভাইয়ের পেছনে লেগেছেন। এখন ছেলে বাড়িতে আসার পর থেকে ছেলের পেছনে লাগেন তাই বড় ভাইয়ের পেছনে লাগার সময় পান না।
“মাহিদ গান চালু কর, আজকে বাপ আর শ্বশুরের সাথে উরাধুরা নাচবো।”
আহনাফ মাহমুদ আলভীর দিকে তাকিয়ে বলেন,

“এই বয়সে এসে নাচলে হাড়ের জোড়া খুলে যাবে আমার।”
“সমস্যা নেই, হসপিটাল থেকে আবার জোড়া দিয়ে নিয়ে আসবো।”
“বড় দুই ভাই ছোট বেলায় বেশি আদর ভালোবাসা পেয়ে বাদর হয়ে গেছো।”
“এখানে বড় ভাই আবার কি দোষ করলো?”
অবাক স্বরে বলে আলভী। মাহিদ বলে,
“ভাইয়াও নিজের বিয়েতে দুজন কে নাচিয়েছিল।”
আলভী আগের চেয়েও অবাক হয়ে বলে,
“সত্যি।”
“হ্যাঁ।”

“তাহলে আমার বিয়েতে ডবল টাইম নাচতে হবে। প্লে কর লুঙ্গি ডান্স গান।”
মাহিদ মিউজিক বক্সে গান প্লে করে দেয়। গানের সাথে সাথে হৈ হৈ করে ওঠে সবাই।
“মুঁছোঁ কো থোড়া রাউন্ড ঘুমাকে
আন্না কে জ্যায়সে চশমা লাগাকে
কোকোনাট মে লস্সি মিলाके
আয়া যাও সারে মুড বনাকে
অল দ্য রজনী ফ্যানস…
ডোন্ট মিস দ্য চান্স…
অল দ্য রজনী ফ্যানস…
ডোন্ট মিস দ্য চান্স…
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স
লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স”

বাপ, শ্বশুর আর নানাদের মাঝখানে নিয়ে উরাধুরা নাচতে শুরু করে সবাই।
যখনই লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স বলে আলভী নিজের গলায় থাকা গামছা টা মেলে দিয়ে বাবার পেছন দিক থেকে সামনের দিকে ধরে লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স বলে লাফাতে শুরু করে।
প্রথমে না না করলেও ছেলেদের আর গানের তালে পড়ে নিজেরাও নাচতে শুরু করেছেন লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স।
গান শেষ হতে হতে সবাই হাঁপিয়ে উঠেছে।
ভালো ভাবে দম নেওয়ার আগেই একজন গিয়ে অন্য গান প্লে করে। গান প্লে হওয়ার সাথে সাথেই বেশির ভাগ যুবক সিটি বাজায়। কয়েক জন গান শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
গান অফ করে সকলের দিকে তাকিয়ে ছেলে টা বলে,

“হাসাহাসি বাদ দিয়ে সবাই নাচো।”
আবার গান প্লে করে।
চিকন চাকন মান্জা দোলে
গানের তালে তালে
হায় হায় গানের তালে তালে,
হাসি দিলে,ঠোল পড়ে
তোমার দু’টি গালে।
চুপি চুপি ডাকো তুমি
কাছে আসো না,
আসলে তুমি আমায়
ভালোবাসনা।
তুমি জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন
নিভাইয়া গেলা না।
তুমি জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন
নিভাইয়া গেলা না।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৯

একেক জনের মাজা দুলানো দেখে আলভী সহ আরো কয়েক জন হাসতে হাসতে বসে পড়েছে নিচে।
গান অর্ধেক হতেই বন্ধ করে দেয় আরেক জন। তারপর তৃতীয় গান প্লে করে।
“আজ এই রাতে তুমি আমারি সাথে,
আলো আঁধারে হাত রাখো এই হাতে।
মন দিয়ে যাও তুমি মন নিয়ে যাও,
মন দিয়ে যাও তুমি মন নিয়ে যাও।”
গানের সাথে সাথে নাচতে নাচতে আলভী বলে,
“আগামী কাল রাতে তুমি আমারি সাথে,
আলো আঁধারে ভাসবে প্রেমের সাগরে।”

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩১