হ্যালো 2441139 পর্ব ২৫

হ্যালো 2441139 পর্ব ২৫
রাজিয়া রহমান

নিচতলার সদর দরজার পাশের বড় রুমটা পিয়াসার জন্য গুছিয়ে রেখেছে রজনী। নারগিস তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মহুয়া বেগমের কাছে গেলো।
মহুয়া বেগমের চুলে ঝুনি তেল মালিশ করছে।
নারগিস থমথমে সুরে বললো, “সবসময় দেখছি মেহমান কেউ আসলে পেছনের দিকের রুমে থাকে।তাহলে এবার সামনের রুমে কেনো আম্মা?”

আরামে মহুয়া বেগমের চোখ লেগে এসেছে। নার্গিসের গলার স্বর তার কাছে ভীষণ বিরক্তিকর লাগলো। কিন্তু কথাটা ভীষণ গুরুতর। রজনী তার সাথে কথা না বলে তার বান্ধবীর মেয়েকে ওই রুমে থাকতে দিচ্ছে!
এই সংসারের হর্তাকর্তা তিনি এখনো। সব কিছু এখন তার নামে।তিনি যা বলবেন তাই শেষ সিদ্ধান্ত যেখানে,সেখানে রজনী কি নিজেই মতামত দেওয়া,সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখে গেছে?তার মানে কি এখন আর তার দাম থাকবে না?
মহুয়া বেগম সটান হয়ে বসলেন।ঝুনিকে বললেন,”যা,রজনীকে ডেকে আন।”
ঝুনির ভীষণ বিরক্ত লাগলো। ছোট ভাবী মানুষটার মনের ভেতর এমন কুচকুচে কালা ক্যান?
নিজের ভালো ছাড়া কারো ভালো চায় না।
রজনী রান্নাঘরে পিয়াসার জন্য খাবার রেডি করছে।শারমিনের মেয়েটা এতো মিষ্টি, রজনীর ইচ্ছে করে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঝুনি এসে বললো, “চাচী আপনারা যাইতে বলছে।”
রজনী এক মুহূর্ত ভেবে বললো, “আবার কি হয়েছে?”
“কি আর হইবো,কাল নাগিনী গিয়া বিষ ছাইড়া আইছে।যান গিয়ে শোনেন।আমি ওঝা নিয়ে আসতেছি।”
রজনী কিছু বুঝতে পারলো না। ঝুনিকে বললো, “পিয়াসাকে খাবারটা দিয়ে আয়।”
রজনী শাশুড়ীর রুমে ঢুকে দেখে রুমে শিরিন বসে আছে মায়ের পাশে।তার হাতে পানের বাটা।
রূপার এই পানের বাটাটা তারিন পাঠিয়েছে।
রজনী জিজ্ঞেস করলো, “আমাকে ডেকেছেন?”
“হ্যাঁ, ডাকছি।কি করতেছিলা?”
“পিয়াসার জন্য খাবার বানাচ্ছিলাম।ও সব খাবার খায় না।খুব বাছ গোছ করে খাবার নিয়ে।”
“আমার বাড়িরে ধর্মশালা বানাইতেছো দেখি তুমি। এইটা হোটেল না যে তোমার বান্ধবীর মাইয়ার জন্য এতো নকশা করে খাওয়াতে হবে।”

রজনী ভীত চোখে এদিক ওদিক তাকায়। লজ্জায় তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে ম্যেটা এসেছে আজকে সকালে।এরইমধ্যে কি-না উনি এরকম কথাবার্তা বলছেন!
অথচ এই বাড়িতে বছরের ১২ মাস অতিথি থাকে।অতিথি ছাড়া ও নার্গিসের দুই মামাতো ভাইয়ের ছেলে মেয়ে ও থাকছে বছর দুয়েক হলো।তারিনের ফুফু শাশুড়ীর এক ডিভোর্সি মেয়ে ও থাকছে।
কারো বেলায় তো কোনো কথা হয় নি।বরং মহুয়া বেগম নিজেই সবসময় বলেন তাদের হচ্ছে জমিদার বংশ।জমিদার বাড়িতে এরকম অতিথি থাকেই। যতো বেশি অতিথি তত বেশি গৌরব, তত বেশি সম্মান।
সেই তিনিই আজ পিয়াসা আসতে না আসতে এরকম কথা বলছে!
আষাঢ় বাহিরে বের হবে এমন সময় ঝড়ের গতিতে ঝুনি খালা গিয়ে বললো, “মামা জলদি চলেন।বিষ নামাইতে হইবো।”

আষাঢ় হতবাক হয়ে বললো, “কিসের বিষ খালা?”
“আপনের ছোট আম্মা তো তার সব বিষ ছাইড়া আসছে চাচী আম্মার গায়ে।এখন আপনে না গেলে আপনের দাদীর বিষ নামাইবো কে?বড় ভাবীরে ডাইকা নিয়ে গেছে বিষ নামাইবো বড় ভাবীর উপরে।”
আষাঢ়ের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। হাতের ঘড়িটা খুলে রেখে আষাঢ় দাদীর রুমে গেলো।
রজনী ভয় পাচ্ছে আষাঢ় যদি কিছু জানতে পারে তাহলে আজকে আবারও অশান্তি হবে।রজনীর ভয় সত্যি হলো।আষাঢ় রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, “এই কথাটাই এই বাড়িতে কেউ বুঝতে চায় না দাদী।কারো লাগে মিনিকেট চালের ভাত আবার কারো লাগে আতপ চালের জাউভাত।আবার কেউ খায় লাল চালের ভাত।আমার মা হইছে এই বাড়ির বাবুর্চি। শুধু ফরমায়েশ খাটাই তার কাজ।”
মহুয়া বেগম গোমড়া মুখে বললো, “তোর এখানে কি কাম?ক্যান আসছস?”
রজনী ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই যা এখান থেকে।আমি তোর দাদীর সাথে কথা বলছি।”
“আমার সামনেই কথা হোক মা।”

মহুয়া বেগমের মাথায় আগুন জ্বলছে। এতো ছেলেটা বড় বেয়াড়া,ঘাড়ত্যাড়া।
অথচ নির্জন,নীরব কতো ভদ্র ছেলে।
মহুয়া বেগম আষাঢ়ের দিকে না তাকিয়ে বললো, “সামনের দিকের দরজার সাথের বড় রুমটা পরিস্কার করে রেখো।ওই রুমে গেরাম থাইকা আমার অতিথি আসবো।”
রজনীর গলা শুকিয়ে যায়। মহুয়া বেগমের আসল উদ্দেশ্য যে এটাই রজনী ভালো করেই বুঝতে পারে। তাই শান্ত সুরে বললো, “ওই রুমে পিয়াসা থাকবে আম্মা।”
“পিয়াসা ওই রুমে থাকবো কেনো?ওরে নার্গিসের মামাতো ভাইয়ের মেয়ের সাথে ওই রুমে থাকতে বলো।”
আষাঢ় এসে বললো, “না দাদী,পিয়াসা ওই রুমেই থাকবে।”
“কে অনুমতি দিছে ওরে ওই রুমে থাকতে দেওয়ার?”
“আমি অনুমতি দিছি দাদী।”
“এই বাড়ি আমার। সবকিছু আমার নামে।আমি যা কমু এই বাড়িতে তাই হইবো।তুই কে এই বাড়ির সিদ্ধান্ত নেওয়ার?”

আষাঢ় হেসে শিরিনের পাশে বসে। পানের বাটা হাতে নিয়ে গোলাপপুরি জর্দা দিয়ে একটা পান বানিয়ে দাদীর গালে পুরে দিয়ে বললো, “এই রুমে আসার আগে আমি ফোনের রেকর্ডার অন করে এসেছি দাদী।এই বাড়িটা যেহেতু শুধু তোমার, আমাদের কোনো অধিকার নেই তাহলে শুনে রাখো আগামীকাল সূর্যাস্তের আগেই আমি, মা,বাবা,বর্ষা,পিয়াসা এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।আমি এখন গিয়ে বাসা দেখে এডভান্স পেমেন্ট করে আসবো।”
শিরিন চমকে মায়ের দিকে তাকায়। তারপর চোখের ইশারা করে বলে, “এসব মাথাগরম করা কথা বলিস না আষাঢ়। তোর দাদী মুরুব্বি মানুষ। ওনার সাথে এসব কেমন কথা বলস তুই?”
“আমি যা বলেছি ঠিকই বলেছি ফুফু।এটা আমার দাদীর সংসার, আমার মায়ের না।আমার বাবা তো পারলো না আমার মা’কে একটা সংসারের ব্যবস্থা করে দিতে।তাই আমি করে দিবো।”
শিরিন অরম সুরে বললো, “দূর পাগল ছেলে।এরকম উল্টো পালটা কথা বলে না।তোর দাদীর দোষ নাই রে বাবা।তোর ছোট মা এসে কতো কথা বলে গেলো।এজন্য তোর দাদী এসব বলেছে।”

পিয়াসা,পিংকি,মিনি একই কোচিং এ ভর্তি হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম তিনজনের জন্য একটা রিকশা ঠিক করে দিয়েছেন।
পিয়াসা এই বাড়িতে আসার পর থেকে সর্বদা ভয়ে তটস্থ থাকে কখন মুখোমুখি হয়ে যায় আষাঢ়ের।
দুই দিন হয়ে গেছে এখনো আষাঢ়ের টিকিটিও দেখে নি পিয়াসা।
পিংকি বলেছে আষাঢ় বাড়িতে খুব কম থাকে।শুনে পিয়াসা স্বস্তি পেয়েছে।
সপ্তাহ খানেক পরে একদিন কোচিং এ যাওয়ার সময় নির্জন ও বের হলো।পিয়াসার সাথে যদিও তার খুবই হালকা পাতলা কথা হয়,মায়ের ভয়ে কথাবার্তা তেমন বলে না নির্জন।
বের হয়ে পিয়াসাকে বললো, “কোচিং এ যাচ্ছো?”
মিনি সলজ্জ হেসে বললো, “হ্যাঁ ভাইয়া,আমরা কোচিং এ যাচ্ছি। ”
নির্জন বিরক্ত হয়ে বললো, “তোকে জিজ্ঞেস করছি?এক রিকশায় তিন জন বসতে পারো?অসুবিধা হয় না পিয়াসা?”
পিয়াসা মৃদু হেসে বললো, “না সমস্যা হয় না।আমরা তিনজনেই চিকন মানুষ তো,আর এই ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলো একটু বড় সীটের হওয়ায় আরাম করে বসা যায়।”
নির্জন আমতা আমতা করে বললো, “না মানে আমি ও ওদিকেই যাবো, আমার সাথে আসতে পারো তুমি। ”
পিংকি মুচকি হাসে ভাইয়ের কথা শুনে।মা’য়ের ভয়ে তার ভাইটা এতো ভেজা বেড়াল হয়ে থাকে যে কথা ও বলতে পারে না।

পিয়াসা বললো, “না ভাই,আমি যাবো না।”
মিনি বললো, “আচ্ছা আমি আসি ভাইয়া।”
নির্জনের মুখটা ভোঁতা হয়ে গেলো। মিনি এসে নির্জনের পাশে দাঁড়ায়। রিকশা চলে গেলো পিয়াসা আর পিংকিকে নিয়ে।
নির্জন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বললো, “ও মিনি,আমি ভুলে গেছি আমার একটু কাজ আছে।তুই একটা রিকশা নিয়ে চলে যা প্লিজ।”
নির্জন মিনিকে রেখে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।
মিনি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এই মানুষটা এই মাত্র পিয়াসাকে নিয়ে যেতে চাইলো আর এখন মিনিকে রেখে চলে গেলো। সবই সাদা চামড়ার খেলা।

হ্যালো 2441139 পর্ব ২৪

এজন্যই পিয়াসাকে মিনি,নিরা,মিরা কেউ পছন্দ করে না।
সব অ্যাটেনশন সব সময় নিজের দিকে নিয়ে যায় কিভাবে যেনো।
রাগ করে মিনি আর কোচিং-এ গেলো না।

হ্যালো 2441139 পর্ব ২৬