হ্যালো 2441139 পর্ব ৫৯
রাজিয়া রহমান
সারাজীবন শুনে এসেছে শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি,এখন তা টের পাচ্ছে আষাঢ়।
জামাই আদরটা তিন দিনেই তার কাছে অত্যাচার বলে মনে হচ্ছে। শ্বশুর শাশুড়ীর ভাবখানা এমন যেনো সে দীর্ঘ সময় দুর্ভিক্ষের অঞ্চলে থেকে সদ্যই বাসায় ফিরেছে তাই যেভাবেই হোক তাকে খাওয়াতে হবে।
আর তার বউ,তিনি তো আরো এক কাঠি উপরে।
খাবার সামনে এনে এমন হুমকি ধামকি শুরু করে আষাঢ় বাধ্য ছেলের মতো খেতে বসে যায়।
পিয়াসার আষাঢ়কে বেকায়দায় ফেলতে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।
পিয়াসা অবাক হয়ে খেয়াল করে সে আষাঢ়ের সবকিছুতেই খেয়াল রাখছে।এতটাই খেয়াল রাখছে যে বাবা মা’য়ের আবদার রক্ষার্থে আষাঢ় যখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্লেটে গরুর ভুড়ি তুলে নিলো পিয়াসা এসে মা’কে নিষেধ করলো।
শ্বশুর শাশুড়ীর আগ্রহ দেখে আষাঢ় চক্ষুলজ্জায় বলতে পারে নি সে ভুড়ি পছন্দ করে না।
সেই বিপদের মুহূর্তে পিয়াসা ছুটে আসে আষাঢ়কে রক্ষা করতে।
অবসরে বসে পিয়াসা আনমনে ভাবে সে কিভাবে জানলো আষাঢ় ভুড়ি অপছন্দ করে?
পরক্ষণে বুঝতে পারলো বৈশাখী আপার বিয়ের দিন যখন গরু জ বা ই করা হয় তখন রজনী আন্টি কথার কথা বলেছেন যে তাদের পরিবারে সবাই গরুর ভুড়ি পছন্দ করে শুধু তার ছেলেটা ছাড়া।
অনেক আগের কথা অথচ কিভাবে পিয়াসার মনে রইলো!
ভেবে পায় না পিয়াসা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পিয়াসার সাথে আষাঢ় ও অবাক হয়। পিয়াসা তার ব্যাপারে জানে এটা সে কখনো ভাবে নি।সবসময় অবহেলা দেখানো মেয়েটার মনে তার জন্য কিছুটা হলেও জায়গা আছে তাহলে!
আষাঢ়ের ভীষণ আনন্দ হয়।
দুপুরের খাওয়ার পর পিয়াসা সোফায় বসে একটা বই পড়ছিলো।আষাঢ় আর আনোয়ার চৌধুরী গল্প করছেন।কলিং বেলের শব্দ শুনে পিয়াসা উঠে যায়। একটানা কলিং বেল টিপে যাচ্ছে দরজার ওপাশে থাকা মানুষটা। শারমিন রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন এতো শব্দ শুনে।
আনোয়ার চৌধুরী আর আষাঢ় ও কথা বন্ধ করে সদর দরজার দিকে তাকালো।একটানা বেল বাজাতে থাকা মানুষটাকে দেখার জন্য।
পিয়াসা দরজা খুলতেই দেখে মধ্যবয়সী এক হাড় জিরজিরে লোক দাঁড়িয়ে আছে সামনে। পিয়াসা জিজ্ঞেস করলো, “কাকে চাই?”
সামনে থাকা লোকটা কথার উত্তর দিলো না।তাকিয়ে রইলো পিয়াসার দিকে।
পিয়াসা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কে আপনি?”
“তোর বাবা।”
পিয়াসা ভীষণ চমকে উঠে। এক মুহূর্ত সময় লাগে তার বুঝতে কে এই লোক।
মুহুর্তেই পিয়াসার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে যেনো।আনোয়ার চৌধুরীর মনে হলো কেউ তার কলিজা ধরে টান দিয়েছে। এতো বছর ধরে বুকের রক্ত দিয়ে বড় করে তোলা মেয়েটার সামনে এসে যখন অন্য কেউ বাবা বলে দাবি করে সেই যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না।
আনোয়ার চৌধুরী দ্রুত এগিয়ে এসে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন,”ওর বাবা আমি,আনোয়ার চৌধুরী।”
শাহেদ করুণ হেসে বললো, “যতই আপনি ওর বাবা বলেন নিজেকে,আপনি নিজে ও জানেন আপনি ওর বাবা না।পুরো দুনিয়া যদি অস্বীকার করে আমাকে ওর বাবা হিসেবে তবুও সত্যিটা মিথ্যা হয়ে যাবে না।আমিই ওর বাবা ডাক্তার সাব।”
পিয়াসার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা তার জন্মদাতা পিতা।
সেই পিতা যিনি কন্যা জন্মের ১২ বছর হওয়ার পরেও দেশে তার ইচ্ছে করে নি একবার কন্যাকে দেখার।
যিনি তার জন্মদাত্রীকে এতোটাই কষ্ট দিয়েছেন যার জন্য তিনি ও বাধ্য হয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেলো।
১২ বছরের একটা কন্যার কথা দুজনের কেউ-ই ভাবলো না।বিশাল পৃথিবীতে একা হয়ে ঝরে পড়া ফুলটাকে তুলে আনলেন যে দুজন মহৎপ্রাণ মানুষ, যারা তাকে আস্তাকুঁড়ে থেকে তুলে এনে হৃদয়ের ফুলদানিতে সাজিয়ে রেখেছেন।বুকের এক ফোঁটা এক ফোঁটা রক্ত ঢেলে তাকে বাঁচিয়ে তুলেছেন তারাই তো তার সবচেয়ে আপন।
শাহেদ এগিয়ে এসে পিয়াসার দিকে হাত বাড়ায়।চিৎকার করে পিয়াসা আনোয়ার চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে। আনোয়ার চৌধুরীর অশান্ত হৃদয় মুহুর্তেই শান্ত হয়ে যায়।
শাহেদ চুপচাপ তাকিয়ে দেখে।তেমনই তাকিয়ে থাকে আষাঢ়। এই মেয়েটা একটু একটু করে তার কালো অতীত থেকে যখন বের হয়ে আসতে চলেছে তখন আবারও সেই অতীত তার সামনে এসে দাঁড়ালো।আবারও পিয়াসা ভেঙে পড়বে। কাউকে বুঝতে না দিলেও এই কয়েকদিনে আষাঢ় ভালো করে বুঝে গেছে পিয়াসার বুকের ভেতর একটা দুঃখের সমুদ্র নিয়ে বেঁচে আছে। সময় অসময়ে সেই সমুদ্রে ঝড় উঠে আর সেই ঝড় উঠলেই পিয়াসা অন্যরকম হয়ে যায়। তখনই তার স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের উপর অবিশ্বাস চলে আসে।
প্রথম প্রথম আষাঢ় কষ্ট পেলেও এখন বুঝে সবকিছু।
সময় দিলে এই দুঃখের সমুদ্র সুখের রূপ নিবে।আষাঢ় সেই প্রচেষ্টাই করে যাচ্ছে।
পিয়াসার জীবনটা স্বাভাবিক হোক এটাই আষাঢ়ের সবচেয়ে বড় চাওয়া।
শাহেদের ভীষণ ইচ্ছে করছে তার মেয়েটাকে একবার ছুঁয়ে দেখার।পিয়াসার পুরোপুরি ওর মা’য়ের মতো দেখতে হয়েছে।
এক সময় অনেক অন্যায় করেছে নিজের স্ত্রী কন্যার উপর। উপরওয়ালা সেই শাস্তি তাকে দুনিয়াতেই দিয়েছেন।গলার ভেতর ভীষণ জ্বালা করছে।সেই সাথে কাশি তো নিত্যসঙ্গী। শেষ কবে পেটভরে খাবার খেয়েছে মনে পড়ে না।
আনোয়ার চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। লোকটার কণ্ঠস্বর কেমন যেনো!
হুট করে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কি কোনো অসুখ করেছে?আপনাকে দেখে ঠিক মনে হচ্ছে না। আমি যা ভাবছি তা যদি সঠিক হয় তবে আপনার…”
“ল্যারিনজিয়াল ক্যান্সার।একটা সময় নিজের স্ত্রী কন্যার উপর যতটা অন্যায় করেছি ততটা অন্যায় নিজের উপর ও করেছি।সুখ ভেবে সিগারেট আর মদ কে আপন করে নিয়েছি।আল্লাহ সেই শাস্তি আমাকে দুনিয়াতেই দিয়েছেন।আমার সময় ঘনিয়ে এসেছে।
আমি আমার মেয়েটাকে জীবনে প্রথম নিজের চোখে দেখেছি আজকে।আজ মনে হচ্ছে আল্লাহ আমার উপর এখনো সদয় আছেন।যদি আল্লাহ আমার দুই চোখ, দুই কান নিয়ে যেতো তাহলে আমি মরে গেলে ও আমার আফসোস থাকতো একবার মেয়েকে দেখি নি,কথা বলতে পারি নি।আমার আর কোনো আফসোস নেই।আমার সারা শরীর ও যদি এখন ক্যান্সার বাসা বাঁধে আমার আফসোস থাকবে না।
আমি ওকে আপনাদের থেকে নিয়ে যেতে আসি নি।আমি চাইলেও ও যাবে না তা আমি জানি।আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি ওর কাছে।আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।”
পিয়াসা হেসে ফেলে।
“আপনি ভেবেছেন আপনার অসুস্থতার কথা শুনে আমি আপনার করা সব অন্যায় ভুলে যাবো?আপনাকে ক্ষমা করে দিবো?কক্ষনো না।আপনার কষ্টে আমার বিন্দুমাত্র করুণা জন্মাচ্ছে না। আমি ও প্রতিনিয়ত কষ্টের সাথে লড়াই করে বড় হয়েছি।আপনি তো আজ মরতে মরতে এখানে এসেছেন আর আমি প্রতিদিন একটু একটু করে মরতে মরতে বেঁচে উঠেছি।আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই তবে আপনি ক্ষমা ও পাবেন না।আপনার আর আপনার স্ত্রীর সাথে আমার হিসাব হবে শেষ বিচারের দিন।যেদিন বিচারক হবেন আমার আল্লাহ। সেদিন আপনাদের থেকে আমি হিসাব চাইবো।”
শাহেদ আর দাঁড়ায় না।তার সারা শরীর কাঁপছে। পিয়াসার প্রতিটি কথা কেমন ছু রি র মতো এসে তাকে কেটে ফালাফালা করে দিচ্ছে।
শাহেদ চলে আসতেই পিয়াসা দরজা বন্ধ করে দেয়।যেনো কিছুই হয় নি এমন করে হেসে গিয়ে শারমিনের কাছে যায়।
পিয়াসা যতটা নিজেকে খুশি প্রমাণ করতে যায় ততই সবার চোখে পড়ে ওর ভেতরের যন্ত্রণা।
রান্নাঘর থেকে পিয়াসার অকারণ খিলখিল হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আনোয়ার চৌধুরী আর আষাঢ় দুজনেই চুপ হয়ে বসে আছে।
আষাঢ়ের কেমন যন্ত্রণা অনুভব হয়।পিয়াসা হাসছে অথচ সেই হাসিতে কোনো প্রাণ নেই।
কেমন মেকি লাগছে সবকিছু। আষাঢ় আর থাকতে পারে না। উঠে রান্নাঘরে যায়।পিয়াসাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে রান্নাঘর থেকে বের করে পিয়াসার রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
পিয়াসাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আষাঢ়।
“যেই হাসিতে প্রাণ নেই,সেই হাসি সবাই বুঝতে পারে পিয়াসা।”
“আমার দেহে যে প্রাণ আছে তাই তো অনেক।এই দেহেই তো প্রাণ থাকার কথা ছিলো না।”
“তুমি সাহসী মেয়ে পিয়াসা।সব সামলে নিতে পারবে।”
“জানেন,একটা সময় কতো ছটফট করেছি একটু বাবার সাথে কথা বলার জন্য। কখনোই বাবা আমার সাথে কথা বলে নি।
বাবা নামের মানুষটা কেমন হয় তাই আমি জানতে পারি নি ১২ বছর পর্যন্ত। আমি শুধু দেখেছি বাবা মানে সব আব্দারের ভান্ডার।বাবা মানে স্বপ্ন পূরণ।স্কুলে সবাই যখন বাবার গল্প করতো, কার বাবা কী এনেছে সেসব বলতো আমি তখন ভাবতাম এমন ও হয়!আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হতো। আমার ভেতরের ছোট্ট পিয়াসাটা কতো কেঁদেছে বাবার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য।
অথচ এখন যখন আমি একজন বাবা পেলাম,একটা পরিবার পেলাম,অতীতের কালো ছায়া থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম তখন কেনো উনি আমার সামনে এলো!
কেনো সেই তিক্ত অতীত আবার ও সামনে এসে দাঁড়ালো!
আমি ভীষণ ভেঙে পড়ছি।বিশ্বাস করুন,আমি বুঝাতে পারছি না আমার কেমন লাগছে।নিজের জন্মদাতাকে অস্বীকার করার যন্ত্রণা ভীষণ ভয়াবহ। আমি নিজেকে ভীষণ কুল প্রমাণ করে সেটা করে এসেছি অথচ ভেতরে ভেতরে আমার ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন জমাট বেঁধে আছে যন্ত্রণা। আমার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ কী জানেন,একটা সময় এই মানুষটাকে একবার দেখার জন্য আমার জন্মদাত্রী যতটা ছটফট করেছেন ততটাই আমি ছটফট করেছি। একটা মেয়ে তার জন্মদাতার দেখা পেলো তার ১৮ বছর বয়সে।এরচেয়ে নির্মম আর কী হতে পারে!”
মহুয়া বেগম শুয়ে আছেন। তার হাত-পা টনটন করছে ব্যথায়। স্নায়ুগুলো যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে ভিতর থেকে।
চোখের পাতা ভারী, দৃষ্টি অস্পষ্ট, মনে হচ্ছে পৃথিবীটা কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে।
জিহ্বা শুকিয়ে কাঠ, ঠোঁট ফেটে চৌচির। কথা বলার শক্তি ও নেই।শুধু নিঃশ্বাসটা একেকবারে বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চায়।
প্রতিটি শ্বাস নিচ্ছেন ধীরে, কিন্তু গভীরে কোথাও হাহাকার জমে আছে।কতো অন্যায়,অবিচার, জুলুম করেছেন তিনি এক সময় সবার সাথে। আজ চারদিন ধরে তার ডায়বেটিসের ঔষধ, ইনসুলিন বন্ধ করে দিয়েছে শিরিন।
হুট করে ঔষধ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীর নিতে পারছে না।ফলস্বরূপ মহুয়া বেগম বিছানায় পড়ে গেলেন।
মহুয়া বেগমের বুক ধক ধক করে। মনে হয়, এবার বুঝি হৃৎপিণ্ড থেমে যাবে।
কান্না গলার কাছে আটকে আছে,বেরোতে পারে না।
মহুয়া বেগম জানেন, শরীরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা আকাশ ছুঁয়েছে।
বাইরে থেকে সব কিছু শুনতে পান—ঘড়ির টিক টিক, দরজার ওপাশে শিরিন ও তার মেয়েদের হাসির শব্দ।
হুট করেই দরজাটা খুলে যায়।
শিরিন রুমে আসে।যার জন্য সমস্ত জীবন ছেলের বউদের প্রতি অবিচার করে এসেছেন তার সেই আদরের কন্যা এলো।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, “সিদ্ধান্ত বদলালে মা?তোমার জীবনের চাইতে ছেলে,বউদের উপর এতো বেশি দরদ?কবে থেকে মা?একটা বাড়ির জন্য নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করছো না তুমি? আমি তোমার মেয়ে মা,কি হয় বাড়িটা আমার নামে লিখে দিলে?”
মহুয়া বেগম মলিন হেসে বলেন, “আজীবন ওদের উপর যেই অন্যায় করে এসেছি নিজের জীবন দিয়ে যদি বিন্দুমাত্র প্রায়শ্চিত্ত হয় তাতে ক্ষতি কী!যেই বাড়ি থেকে তোকে আর তোর মেয়েদের আমার ছেলেরা বের করে দিয়েছে তোর জায়গা কখনোই ওই বাড়ির ত্রিসীমাতে হবে না।আমি বেঁচে থাকতে কখনোই তোর উদ্দেশ্য সফল হবে না।”
“সই না করে কতো দিন থাকবা?দেখা যাবে।আমার মেয়েকে তালাক দেওয়া, আমি তোমার ছেলেদের, তোমাকে কাউকে ছাড়বো না।ওই বাড়ি থেকে ওদের বের করেই ছাড়ব মা।আর নয়তো তুমি লাশ হয়ে বের হবে।”
মহুয়া বেগম তাকিয়ে থাকেন।
চোখের কোণে অনুনয় নেই, একবিন্দু অভিশাপও নেই।
শুধু একটা অভিমান ভাসে চোখে।সেই অভিমান, যা জন্ম দিয়েছিলো, লালন করেছিলো, আর আজ… মরতে বসে বুঝছে, সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছিল,ভালোবেসে।
তিনি সই করেন না।
শিরিনের আনা কাগজটা পায়ের কাছে পড়ে যায়।
শিরিন চলে যায়, দরজাটা খুকে রেখে যায়।অথচ বিছানা থেকে ওঠার শক্তি পান না মহুয়া বেগম। শুয়ে শুয়ে ভাবেন একবার যদি ছেলেদের বা নাতিদের কারো সাথে কথা বলতে পারতেন।একবার যদি জানাতে পারতেন তিনি কি অবস্থায় আছেন!
রাতে সিরাজুল ইসলাম কল করেন শিরিনকে।এই নিয়ে তিন দিন কল করছেন।
শিরিন কল রিসিভ করেই বললো, “কেনো কল করেছেন আবার? বললাম না মা বলেছেন,উনি আপনাদের সাথে কথা বলতে চান না।”
হ্যালো 2441139 পর্ব ৫৮
“তুই ফোনটা মায়ের কাছে নে।কথা বলবে কি বলবে না তা আমি বুঝবো।”
“না,মা আমাকে সোজা বলে দিয়েছেন আপনারা দুই ভাই ওনার কাছে মৃত। বাকি জীবন যাতে আপনারা ওনার সামনে না আসেন।তা না হলে ওনার মরা মুখ দেখবেন।”
শিরিন কল কেটে দিলো।মহুয়া বেগম জানেন না তার লোভী,ধুরন্ধর মেয়ে কায়দা করে ছেলেদের কাছে তাকে অপরাধী বানিয়ে রাখছে।