৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১+২
সারা চৌধুরী
ভাগ্যের চরম হাস্যকর পরিহাসে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সেই সারারাত স্বামি নামক মানুষটার শারিরীক ক্ষুধা নিবারন আর ভোর রাত থেকেই মাত্র এক মাস বয়সি মা হারা বাচ্চা কে নিজের বুকের দুধ খাওয়ানোর অভিনয় করতে হচ্ছে..বাচ্চা টার নাম ইরিনা তালুকদার অরু..!
কাল এই বাড়িতে আসার এক মুহুর্ত আগেও জানতাম না এই লোকটাকে আমার বিয়ে করতে হবে..আমি শুধুই জানতাম একটা বাচ্চা কে দেখতে হবে বাচ্চার মা নেই..কিন্তু আমি বাচ্চার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করেও কিছু উত্তর পাইনি..পেয়েছি এক ভারি নিশ্বাস এর শব্দ..!
পুরান ঢাকার নাম করা তালুকদার বাড়ি..আব্রাহাম তালুকদার এর নাম অনুযায়ী এ বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়…কিন্তু বর্তমানে সেখানে বসবাস রত ও এক মাত্র উত্তরাধিকারী ফারিস তালুকদার শুভ্র বাদে থাকার মতো কেও নেই..শুভ্র ঢাকার এক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির মালিক…!
শুভ্র তার এক মাত্র মেয়ে অরুকে দেখাশোনার জন্য একজন বিশ্বস্ত আয়া খুজ্জিলেন..একদিন শুভ্র সোফাই বসে মেয়েকে ঘুম পড়াচ্ছিলেন তখন বাড়ির কাজের লোক রহিম মিয়া এসে শুভ্র কে বলেন একটা মেয়ের খোজ পেয়েছে তবে বয়স অল্প..শুভ্র প্রথম এ রাজি না হলেও পরে নিজের মেয়ের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যায়..!
ঘুম থেকে উঠে আসরের নামাজ পড়ে যখন ঘর থেকে বের হচ্ছিলাম তখন আমার চোখ গেলো ডাইনিং এর সোফার দিকে মামা আর দুই জন লোক কথা বলছে.. এক জন কে আমি চিনি গ্রামেই বাড়ি রহিম দাদা…!কিন্তু কি কথা বলছে তাতে আমি কান না দিয়ে সোজা বাইরে চলে গেলাম..যাওয়ার আগে পিছনে তাকাতেই লোকটার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেলো আমি লজ্জায় মাথা নুইয়ে বের হয়ে গেলাম..!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সোফায় বসে আছে সয়ং শুভ্র তালুকদার রহিমের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর সাথে সাথে ছুটে এসেছেন তিনি.. নিজের মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা মা এনে দিতে চাই সে..সে জন্যই মি. নাজমুল হুদা আমার ম্বমার সাথে কথা বলছিলেন..মামা প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে বিশ লক্ষ টাকার কথা শুনে এক পায়ে রাজি হয়ে যায় কিন্তু শুভ্র বাধাই অন্য এক বিপত্তি..সে একটা চুক্তি পত্র এগিয়ে দেই নাজমুল হুদার কাছে….চুক্তি টা এমন ছিলো…
❝আগামী চার বছরের জন্য আমার ভাগ্নীকে শুভ্র তালুকদার এর বাচ্চার মা হয়ে থাকবে.. তার সকল পড়াশোনা আর যাবতীয় খরচ শুভ্র তালুকদার বহন করবে. আমি বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমার ভাগ্নিকে শুভ্র তালুকদার এর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি চার বছরের জন্য আর চার বছরের আগে আমি যদি ভাগ্নি কে ফেরত পেতে চায় তাহলে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিবো❞
ন্সজমুল হুদা টাকার গরমে অন্ধ হয়ে রাজি হয়ে গেলেন সাথে শুভ্র বিশ লক্ষ টাকা নাজমুল হুদার দিকে এগিয়ে দিলো…নাজমুল হুদা এক পলক টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললো আমার ভাগ্নি টা ছোট যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলেন..?
-সেই দায় ভার আমার।। শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বললো..!
-কবে নিয়ে যাবেন..? নাজমুল হুদা চোখ চিকচিক করে জিজ্ঞাসা করলেন..!
-এক্ষনি আমার একটু ওর সাথে কথা বলার সুজোগ করে দিন…!
-আচ্ছা বাবা বসো চা নাস্তা কিছু দিবো নাজমুল হুদার স্ত্রী মারজিয়া বেগম বললেন…
-নাহ আমি যা বলছি তাই করেন…!শুভ্র বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠে..!
ডান পাশের ওই কর্নারের রুমে আছে নাজমুল হুদা বলার সাথে সাথেই শুভ্র চলে গেলো ওই রুমে…..
সকাল সাতটা বেজে গেছে আমার এক পাশে সুয়ে আছে শুভ্র নামক পুরুষটি..আর আমার অন্য পাশে তার মেয়ে অরু…আমি সিদরাতুল সারা..বয়স মাত্র চৌদ্দ.. ছোট বেলায় বাবা-মাকে হারানোর পর থেকে মামা বাড়িতে বড় হয়েছি..সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম এর পর খাবার খেয়ে দিন কেটেছে কোনো কোনো রাতে খাবার পড়েনি পেটে মামির মার খেয়েও দিন কেটেছে স্কুলে পড়াশোনার সৌভাগ্য ছিলো না বল্লেও চলে সপ্তাহে একদিন স্কুলে যেতে দিতো সেভাবেই ক্লাস নায়নে উঠেছি..!
আমি একটু নড়েচড়ে উঠতেই অরু কেদে উঠলো সাথে আমি নিজেও ব্যাথায় ককিয়ে গেলাম…চোখ মুখ খিচে অরুর দিকে তাকিয়ে……
নাজমুল হুদা বলার সাথে সাথে শুভ্র গিয়ে সারা রুমে নক করলো..সারা তখন জামা-কাপড় গুচাচ্ছিলো দরজায় কেও নক করছে ভেবে মাথায় উড়না দিয়ে বলে উঠলো…..
-কে…?
-আমি শুভ্র..! ( ক্ষীন স্বরে বললো শুভ্র)
এক মুহুর্তের জন্য কেপে উঠলো সারা ছোট্ট নারি সত্তা কেন এসেছেন তিনি এখানে.. যে জন্যই আসুক না কেন ভিতরে তো আসতে বলতে হবে ভদ্রতার খাতিরে..তাই সারা সাত পাচ না ভেবে বল্লো ভিতরে আসুন..!
সারা বলার সাথে সাথে শুভ্র ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো…দরজা লাগানো দেখে সারা একটু ভড়কে গেলো…
-একি দরজা লাগাচ্ছেন কেন…?
-তোমার সাথে কিছু কথা আছে…!
-কিহ..এতক্ষনে সারা শুভ্রকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করলো..ছয় ফুট লম্বা। গায়ের রঙ উজ্জ্বল ফর্সা।। জিম করা সিক্স প্যাক বডি..গাল ভর্তি চাপ দাড়ি..কালো রঙের প্যান্ট এর সাথে সাদা শার্ট হাতের পেশিবহুল শাটের উপর ভাসমান..প্রথম দেখায় সারা ক্রাশ খেয়ে গেলো..যদিও এই অনুভূতি টা নতুন তার কাছে তবে খুব ভালো লাগছে…!
-এই যে শুনছো…?
শুভ্রর ডাকে সারা হুস ফেরে তড়িৎ বেগে উত্তর দেয়।।
-জি..!
-তোমার নাম কি..!
-সারা… সিদরাতুল সারা..!
-ওহ…শুভ্র এক দমকা নিশ্বাস ছাড়লো..!
শুভ্র একটু থেমে বলে উঠলো মিস সারা তোমাকে আমি নিতে এসেছি গুছিয়ে নাও এক্ষুনি বের হবো..!
শুভ্রর কথার আগা মাথা কিছু না বুজে সারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে শুভ্রর দিকে তাকাতেই শুভ্র হাতে থাকা ডিল পেপার টা সারা হাতে দিয়ে বলে উঠে…
-তোমার মামা আগামী চার বছরের জন্য তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিছে বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে..তবে চিন্তা নেই তোমার কাজ হলো আমার ছোট্ট মেয়েকে দেখা..!
সারার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো এটা কি শুনছে মামা কি করছে এই লোক কি পাগল চার বছর কি ছেলে খেলা নাকি আর আমি কেন ওনার বাচ্চাকে দেখবো..!
আমি বাইরে গেলাম দশ মিনিটের মধ্যে বাইরে এসো আমরা এক্ষুনি বের হবো..বলেই শুভ্র হন হন করে রুম থেকে চলে গেলো..শুভ্রর বয়স ছাব্বিশ বছর..শুভ্র চলে যাওয়ার সাথে সাথে সারা মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তখনই তার মামা নাজমুল হুদা রুমে প্রবেশ করলেন….
নিজের মামাকে রুমে আসতে দেখে সারা কেদে দিলো.. এই সেই মামা যে কিনা সেই ছোট্ট থেকে আগলে রেখেছে তাকে..সারা গিয়ে নাজমুল হুদাকে জড়িয়ে ধরলো চোখ দিয়ে পড়ছে নোনাজল..সারা কাদতে কাদতে বল্লো..
-মামা বলোনা ওই লোক যা বল্লো সব মিথ্যা.. আমি তোমাদের ছেড়ে যাবো না..তোমরা আমার সাথে মজা করছো..সারা চতুর্দশি মন তখন ও বুজতে পারেনি তার জিবনে কি ঘটবে সামনে….
-নাজমুল হুদা সারার মাথায় হাত রেখে আস্তে করে বললেন শুভ্র যা বলেছে সত্যি বলেছে আমার খুব টাকার দরকার রে মা..তুই তো জানিস তোর মামির ভাইটার অসুখ দশ লাখ টাকা লাগবে..!তাই তো আমি এমন…
নাজমুল হিদা কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই সারা বলে উঠলো…
-এই তোমরা আমাকে ভালোবাসতে..মামির ভাইয়ের জন্য আমাকে বিক্রি করে দিলে..তোমরা কি মানুষ..সারা আর কিছু বলার পুর্বেই সপাটে চড় বসিয়ে দিলো নাজমুল হুদা।।গম্ভীর কন্ঠে বললেন যা বলছি কর এক্ষুনি চলে যা তুই আমার আপন বোনের মেয়ে না.. যে তোর প্রতি এত দরদ দেখাবো..আর কিছু শুনতে পেলো না সারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো মাটিতে…!
তালুকদার বাড়িতে…..
সকাল দশটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট ডাইনিং টেবিল এ বসে খাবার খাচ্ছে শুভ্র.. পাশে সোফায় বসে অরুকে ফিডিং করাচ্ছে সারা…শুভ্র সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো..সে জানে না এই মেয়ের মধ্যে কি দেখেছে সে. যে এই ছাব্বিশ বছরেও কোনো মেয়ের মধ্যে দেখেনি..শুধুই কি মায়া নাকি আত্মিক টান..ভেবে পাইনা শুভ্র খাওয়া শেষ করে সারার কাছ থেকে অরুকে নিয়ে নেই তার পর সারাকে খেয়ে রুমে আসতে বলে.. এবং শুভ্র দুতলার দিকে পা বাড়ায়.. এতক্ষনে অরু ঘুমিয়ে গেছে..!
সারা ডাইনিং টেবিল এ বসে খাচ্ছে আর বাড়ির চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে…বিশাল বাড়ি।চারিদিকে আভিজাত্যর ছাপ স্পষ্ট.. হয়তো শুভ্র নামক মানুষটা খুব শৌখিন..বিশাল ডাইনিং রুম একপাশে খাবার টেবিল তার ঠিক পাশেই কিচেন..ডাইনিং টেবিল এর অন্য পাশে সোফা রাখা…মেইন দরজা দিয়ে ঢুকলেই সোজাসোজি দুতলায় উটার সিড়ি দুতলায় পরপর তিন টা বেড রুম..দুতলার উত্তর দিকে শেষ পাশে সাদে উঠার সিড়ি আর ঠিক উলো পাশে এক সাদ বারান্দা..!
সারা খেয়ে উঠতেই একজন মহিলা এসে সারা হাত থেকে এটো থালাবাসন নিয়ে গেলো..সারা বেসিন থেকে হাত ধুয়ে সিড়ির দিকে যেতেই….