৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৭

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৭
সারা চৌধুরী

দুপুরের কড়া রোদ স্নিগ্ধ হয়ে জানালার পর্দা ভেদ করে ভিতরে এসে সারার চোখে আসতেই সারার ভ্রু কুচকে গেলো,,শরীর টা খুব দুর্বল চোখের কার্নিশ ভেজা,,সারা উঠতে চাইলো তবে শুভ্র ভারী ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখা থেকে সারা মুক্তি পেলো না,,সারা শুভ্রকে ঠেলতে লাগলো হাত দিয়ে বুকে কয়েকবার ধাক্কা দিতেই শুভ্র ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে চোখ খুললো তার পর ঘুমন্ত নেশালো স্বরে বলে উঠলো…

-“উহ পিচ্চি পাখি ঘুমাতে দাও,, ডিস্টার্ব করিও না..!
-“সরেন আমার খুব খিদে লেগেছে,,আপনিও খান নি আমাকে খেতে দেন নি..!
-“উহু পিচ্চি পাখি তোমার পেট ভরে নি এখোনো..?
-“মানেহ??
-“এতো আদর খেয়েও পেট ভরলো না আর একটু খাইবা..”
-“সরেন তো কি সব বলছেন..!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুভ্র মুচকি হাসলো,, হেসে সারার ঘাড়ে চুমু আকলো,,সারা কিছুটা কেপে উঠলো শুভ্র উঠে বসলো তারপর টি শার্ট পরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,এফিকে সারা এখোনো চুপ চাপ সুয়ে আছে,,মনে মনে রোদ এর প্রতি বিরক্ত মাত্রই গোসল সেরে এসে ঘুমালো,,খাওয়ার জন্য ডাকতে আসলেও সারার পায়ে ব্যাথা অনুভব করার জন্য যায়নি ঘুমিয়েছে,, সারা খাই নি বলে শুভ্র ও আর খাইনি সারাকে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছিলো।।
প্রায় বিশ মিনিট পর শুভ্র হাতে করে একটা প্লেট আর একটা পানির গ্লাস নিয়ে ঘরে ঢুকে,, সারা তাকিয়ে দেখলো প্লেটে বিরিয়ানি,,কিন্তু এতো কেনো,,নিজের ভাবনাই নিজের রাগ হলো,,শুভ্র ও তো কিছু খাইনি,,শুভ্র সারার পাশে এসে বসলো,,প্লেট আর গ্লাস টা বেড সাইড টেবিল এ রেখে সারার দিকে ঝুকে কপালে চুমু দিলো তারপর উঠে বসালো,,শুভ্র বুজেছে ওয়াশরুমে পা পিচলে পড়ার জন্য ব্যাথা পেয়েছে পায়ে,,শুভ্র তখন ব্যাথার ওষুধ দিয়েছিলো বলে এখন আর দিলো না।।

সারা এক দৃষ্টিতে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে কি স্নিগ্ধ মানুষটা,,ইশ কত ভাগ্য করেই না হুট করে তাকে পেলো,,এতো কেয়ার এতো ভালোবাসা,,শুভ্র প্লেট হাতে নিয়ে এক লোকমা সারার গালের সামনে ধরে সারাও হা করে গালে নিয়ে খাই,,শুভ্র নিজেও এক লোকমা খাই,,সারাকে খাওয়াতে খাওয়াতে শুভ্রর ও খাওয়া শেষ।শুভ্র সারাকে পানি খাইয়ে সুইয়ে দিয়ে প্লেট গ্লাস নিয়ে নিচে চলে আসে।।সারা চোখ বুজে সুয়ে থাকে এই প্রথম শুভ্র তাকে খাইয়ে দিলো ইশ কি লজ্জাটা না তার করছে,,শুভ্র মুখ বার চোখের সামনে ভেষে উঠছে,,সারা কম্বল টেনে চোখের উপর দিয়ে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।।

আজ দু-দিন ধরে ফোন করে করে পাগল হয়ে যাচ্ছে রিহান,,ফাতিহা কোনো মতে কল তুলছে না,,রিহানের মেজাজ তুঙ্গে সামান্য কারনে কেও এভাবে ইগনোর করে,, রিহানের এতো পরিমান রাগ হচ্ছে যে মনে হচ্ছে ফাতিহা কে সামনে পেলে ঠাস করে কয়েকটা চড় লাগিয়ে দিতো,,এক ধরে পনেরোশ তেইশ নম্বর কল দিচ্ছে,,বাড়ি পুরো ফাকা,,রিহান গিয়ে চেক করে এসেছে নইতো বাড়িতে গিয়েই মেয়েটার কানে চড় লাগাতো।।সে শুধু কথা বলেছে একটা মেয়ের সাথে তাও নিজের বোনের সাথে,, এটাকে ভুল বুজে কথা বলা অফ করেছে।।রিহান মোবাইল টা টি টেবিলের উপর রেখে নিজের চুল গুলো টেনে ধরলো দু হাত দিয়ে অসহ্য লাগছে..ফাতিহা যখন ক্লাসমেট আফ্রিদির হাত ধরেছিলো তখন সে ভুলে ধরেছে আর সে নিজের আপন বোনের সাথে কথা বলেছে এটা নিয়ে ভুল বুঝার কি আছে।।

রিহান রেগে ফোনটা হাতে নিয়ে সাদে এসে আবার কল লাগালো ফাতিহার ফোন এ।। ফাতিহা সবে মাত্র বিছানায় এসে বসেছে,,ফোন তার কাছে ছিলো অন্তু নিয়ে গিয়েছিলো তাই আর এই ঝামেলায় ফোনের কথা পুরো ভুলে গেছে।।একটু আগেই ফোনটা নিয়ে এসে চার্জ এ দিলো।।ফাতিহা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রিহান এর কল সাথে সাথে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রিহান একটা রাম ধমক দিলো।।ফাতিহার আত্মা কেপে উঠলো সে করেছে টা কি এই লোক তাকে এভাবে বকছে কেন,,ফাতিহা করুন কন্ঠে বললো..

-“আমি কি করেছি আমাকে বকছেন কেন ভাইয়া?
-“আমি তোর ভাইয়া হয় বেয়াদোব!
-“না সরি সরি,, আমি কি করেছি বকছেন কেন?
-“কল ধরিস নাই কেন তুই?
-“আপনি কল দেওয়া মাত্রই তো রিসিভ করলাম..!
রিহানের ইচ্ছা হচ্ছে এই মেয়েটাকে পিটিয়ে সোজা বানাতে,, এসদিকে ফাতিহাও বুজলো রিহান রেগে আছে,, রিহান রেগে বলে উঠে…
-“ফোন কোথাই রাখিস তুই?
-“আ.আ.আসলে..?
-“কি আসলে আসলে..?

-“আমার ফোন আম্মুর কাছে ছিলো এখানে অনেক বড় ঝামেলা হয়েছে বাসাই এসে বলবো..?
রিহানের কথা বলার মাঝেই রিহানের বোন সাদের দরজার কাছে এসে বলে উঠে,, রিহু শুন,,নিজের বোনকে দেখে রিহান ফাতিহাকে রাখছি পরে কথা বলে, টুকুস করে কল কেটে দিয়ে নিজের বোন জড়িয়ে ধরে।।মেয়েটি রিহানের পিট চাপড়ে বলে উঠে কেমন আছিস ভাই..?
-“ভালো আপু কখন এলি..?
-“এই তো মাত্র এবার একেবারে ব্যাগ গুছিয়ে চলে এসেছি..?
-“ওয়াও সত্যি..?
-“হুম রে ভাই তোরে ছাড়া আর ভালো লাগে না।।
-“আমারো আপু..?
মেয়েটি রিহান কে নিয়ে নিচে নেমে আসে।। রিহান ও হাসি মুখে গল্প করতে থাকে,,হটাৎ মেয়েটি বলে উঠে কি কোনো খুজ পেলি,,রিহান হেসে বললো,,আগে রেস্ট নাও পরে বলছি..!

শ্রাবন এর মন বিষিয়ে আছে,,দুপুরে খেয়ে ফারুক তালুকদার আর আনিস তালুকদার যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন কড়া কন্ঠে বলে গেছেন,,শ্রাবন যেনো সারার থেকে দূরে থাকে,,শ্রাবন তখন মাথা নিচু করে ছিলো,,তারা চলে যেতেই শ্রাবন রুমে এসে সিগারেট দিয়ে হাত পুড়াতে শুরু করে পৈশাচিল আনন্দ পাচ্ছে সে,,চোখ রক্তিম বর্ন ধারন করেছে,,বুকের মাঝে অসহ্য যন্ত্রনা,,যা সারা নামক ওষুধ ই ছাড়াতে পারবে,,শ্রাবন হাফ পুড়ে যাওয়া সিগারেট টা হুট করে নিজের হাতে চেপে ধরে বলে উঠে..
-“রাত্রি তোকে আমার করেই ছাড়বো,,তুই দশ বাচ্চার মা হয়ে গেলেও আমার বাচ্চার মা হবি,,এই প্রত্যেক দিনের হিসাব তোর কাছ থেকে তুলবো আই সয়ার তোর জিবনে শ্রাবন ছাড়া অন্য কারোর নাম থাকলে তার অস্তিত্ব নিঃশেষ করে দিবো।।

পুড়ে যাওয়া স্থান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে ভেতরের লাল মাংস দেখা যাচ্ছে,,শ্রাবন হাসলো এ যেনো কোনো সাইকোর হাসি,,শ্রাবন জানে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাকাতে হয় কিন্তু শ্রাবন তো চামচ দিয়ে তুলবে,,শ্রাবন পৈশাচিক সয়তানি একটা হাসি দিয়ে আর একটা সিগারেট ধরিয়ে আধকালো ঠোঁটে চেপে ধরে।।

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৬ (২)

শুভ্র ঘরে এসে দেখে সারা ঘুমিয়ে গেছে,,শুভ্র সারার কপালে একটা চুমু দিয়ে সোফাই বসে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে।।অফিসের বেশ কিছু কাজ জমে আছে,,যা এখন তাকে নিজের হাতে কন্ট্রোল করতে হবে।।শুভ্র কাজ করা শুরু করলো ঠিক সেই মুহুর্তে শুভ্রর পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠে,,আননোন নম্বর দেখে ভ্রু কুচকে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে চেনা পরিচিত কন্ঠ শুনে শুভ্র বলে ঊঠে..-“ত..ত..তুই…?

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here