অনুভবে তুমি পর্ব ৫১

অনুভবে তুমি পর্ব ৫১
লিজা মনি

আহান কেবিনের বাহিরে স্তব্দ হয়ে বসে পড়ে। অজানা ভয় আবার ও আকড়ে ধরে। মনে হচ্ছে ভিতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভিতর থেকে ইয়ানার চিৎকার শুনতে পেয়ে আহান আহান বেপোরোয়া হয়ে পড়ে। দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরে। নিজের শরীরটাকে নাড়াতে ও ভয় করছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে, কিছু একটা চলে যাচ্ছে। ইয়ানার চিৎকার এই রাতের নিস্তব্দ হসপিটালে এক প্রকার ঝংকার তুলছে।কি করে সহ্য করবে অগ্নি চৌধুরি সেই আর্তিনাদ। যার একটু আহহ বলাতে হৃদয়ে ঝড় বয়ে যায় সেখানে সে ব্যক্তিটি মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।

এই জন্য বলেছিলাম আমার বাচ্চার দরকার নেই। কিন্তু এই মেয়ে ত্যারামি করে সব কিছুতে। একবার সুস্থ হোক থাপরিয়ে অজ্ঞান করব বিয়াদপটাকে। স্বামীর কথা অমান্য করে। এখন কষ্ট কার হচ্ছে? নিজে তো কষ্ট ভোগ করছে তার সাথে দিগুন কষ্ট আমাকে উপভোগ করাচ্ছে। না পারছে ইয়ানার আর্তনাদ সহ্য করতে আর না পারছে ইয়ানার কাছে যেতে। সে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারবে না। দেখতে পারবে না ইয়ানার এই ধ্বংসাত্বক বিধ্বস্ত অবস্থা। ইয়ানার এই অবস্থা নিজের চোখে দেখলে হয়ত মাথা খারাপ হয়ে যেতে পারে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কি করবে সে নিজে ও বুঝতে পারবে না। এর চেয়ে করিডরে থাকি। আহান বড় বড় শ্বাস টানছে। জীবনে এতটা ভয়ের সম্মখীন সে কখনো হয় নি। কিন্তু আজ জেনো সমস্ত ভয় এক সাথে আকড়ে ধরেছে। আহান বিরবির করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। আবার মনে মনে ভাবে এই পাপীর কথা কি বিধাতা শুনবে। কিন্তু আল্লাহ তো পরম দয়ালু বান্দার এক ফোটা চোখের জল পড়ার আগেই তিনি কবুল করে নেন। আহান সেই বিশ্বাস থেকে চুল খামচে ধরে আল্লাহর দরবারে বিরবির করে মিনতি করতে থাকে তার ইয়ানার যাতে কিছু না হয়।প্রায় অনেক্ষন পর ইয়ানার চিৎকার করা থেমে যায়। ইয়ানার কোনো শব্দ না পেয়ে আহানের বুকটা ছেত করে উঠে।আহান নিজেকে আর সামলাতে না পেরে কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করতে নিবে এমন সময় এক বাচ্চার কান্নার শব্দে আবার দাঁড়িয়ে যায়। এই বাচ্চার আওয়াজ আহানের শক্তপোক্ত মনকে নাড়িয়ে তুলে। ছয় ফুট লম্বা জিম করা বডিটা সহসা কেঁপে উঠে। আহান স্তব্দ হয়ে গিয়েছে।

নার্সের কথা শুনে আহানের ধ্যান ভঙ্গ হয়। তার সামনে সাদা কাপর দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে একটা পুতুল। যার মুখমন্ডল শুধু বের করা। ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে আছে নার্সটার দিকে।
নার্স আহানের সামনে গিয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” অভিনন্দন স্যার আপনার ছেলে সন্তান হয়েছে। এই নিন বাচ্চাকে কোলে নিন।
আহান নার্স এর কথা এড়িয়ে গিয়ে বলে,,,,
“” আমার বউ কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো? “”
ডাক্তার দরজার সামনে এসে বলে,,,,
“” চিন্তার কিছু কারন নেই মি. চৌধুরি আপনার ওয়াইফ প্রচন্ড ধৈর্যশীল। তাই আমরা খুব সহজে নরমাল ডেলিবারি করতে পেরেছি কোনো সমস্যা হয় নি। “”
আহান ডাক্তারের কথা শুনে চোয়াল শক্ত করে বলে,,,,

“” ডেলিবারি কি আপনি করিয়েছেন? এমন হলে এখানেই শেষ করে ফেলব। আমি যেই মেয়ে ডাক্তার রেখেছিলাম ওনি কোথায়। “”
আহানের হঠাৎ রেগে যাওয়া দেখে ডাক্তার আর নার্স ভড়কে যায়,,,
ডাক্তার — না না মি. চৌধুরি ডেলিবারি আমি করি নি। আপনি বিদেশ থেকে যে ডাক্তার আনিয়েছিলেন ওনি করেছেন। ওনি এখন আপনার ওইয়াইফকে দেখছে। এখন ওই চলে আসবে।
ডাক্তারের কথা শুনে আহান একটা নিশ্বাস ছাড়ে। যাক তার বউকে কোনো পুরুষ তাহলে ছুঁই নি।
নার্স — বাচ্চা নিবেন না স্যার। বাচ্চার মাকে কোলে দিয়েছিলাম পরে উনি বলেছে আপনি যাতে আগে দেখেন।
আহান — আগে বউ দেখে আসি।
আহান কথাটি শেষ করে কেবিনের ভিতর চলে যায়। ডাক্তার ইয়ানার হাতে স্যালাইন দিয়ে দিচ্ছে। ইয়ানা হালকা নেত্র মেলে তাকায়।

এইদিকে নার্স হা করে তাকিয়ে আছে। এই সাত বছর কাজ করা জীবনে কোনো পুরুষ এই প্রথম বলেছে আগে নিজের স্ত্রীকে দেখে আসি। অন্য পুরুষ তো বাচ্চা নিয়ে স্ত্রীকে ভুলেই যায়।
আহান ইয়ানার কাছে গিয়ে বসে। ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত চাহনিতে মেকি হাসি দেয়।
ইয়ানা — বাবুকে কোলে নেন নি কেনো? জানেন ও যখন পৃথিবীতে এসেছিলো তখন আমার বুকের উপর রাখা হয়। কিন্ত আপনার ছেলে কি দুষ্টু মাকে রেখে বাবাকে খুজা শুরু করে। আমার বুকের উপর ফিসফিসে বলে,,
“” মাম্মাম বাবা কোথায়?””

ইয়ানার কথা শুনে আহান হেসে ফেলে। এতক্ষনের চাপা ভয় যেনো হৃদয় থেকে মুছে গিয়েছে নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে সুস্থ দেখতে পেয়ে। আহান ইয়ানার কাপালে আলতু চুমু খেয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়।
নার্স ইয়ানার ইশারা পেয়ে আহানের কাছে এনে বাবুকে দেয়।
আহান কাপাঁকাপাঁ হাতে বাচ্চাটাকে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। সন্তানের স্পর্শ পেয়ে আহানের পুরো সত্তা কেঁপে উঠে। যার সামনে কথা বললে মানুষ কাঁপাকাঁপি শুরু করে দেয় আজ সেই ভয়ংকর মানব এক বাচ্চার স্পর্শ পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এইটা তার অস্তিত্ব। বাচ্চাটা আহানের দিকে বড় বড় চোখ মেলে তাকায়। আহান বাবুর কপালে আলতো ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। টুপ করে গড়িয়ে পরে চোখ থেকে নোনা জল।
বাচ্চা বাবার মুখে হাত দিয়ে নাড়াচ্ছে। আর আহান নিজের ছেলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ইয়ানা বাবা ছেলের মুহূর্ত দেখে এক তৃপ্তিময় হাসি দেয়।
এরপর আহানকে খুচানোর জন্য বলে,,,,

“” কে জেনো বলেছিলো আমার বাচ্চা চাই না ইয়ানা। আমার বাচ্চার প্রয়োজন নেই। আমার কাছে তুমি আছো আর কি চাই আমার। কিছু চাই না। কিন্ত যেই সন্তান চলে আসলো ওমনি ইয়ানাকে ভুলে গেছে। আমাকে ভুলে বাপ ছেলে ভাব আদান – প্রদান করছে। বাহহহ কি ভাগ্য আমার।'”
আহান ইয়ানার কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” থাপ্পর চিনো? হসপিটালে পড়ে আছো তবুও ফাইজলামি যায় না। তোমার ভালোবাসার ভাগ চলে এসেছে জান। তুমি আমার আত্না আমার অনুভবের সেহজাদী কিন্তু আমার সন্তান আমার জীবন। তুমি যদি আমার হৃদস্পন্দন হও তাহলে আমার সন্তান আমার বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠি। কাউকে ভুলে এই অগ্নি চৌধুরি বাঁচতে পারবে না।
ইয়ানা হঠাৎ চারপাশে লক্ষ করে আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” সকাল হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়?

আহান — হ্যা।
ইয়ানা — আপনি বাড়িতে কাউকে জানান নি? কেউ আসে নি কেনো.?
আহান ভাবলেশহীন উত্তর দেয়,,,,,,
“” না জানাই নি ”
আহান অবাক হয়ে বলে,,,,
“” কেনো? “”
আহান — তোমার কি মনে হয় তখন আমি কাউকে জানানোর পরিস্থিতে ছিলাম। হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো আমার। এখন ইউভিকে এস এম এস করে দিয়েছি ও সবাইকে জানিয়ে দিবে। দেখবে বিশ মিনিটের মধ্যে চলে ও এসেছে।

ইয়ানা — সেই জন্য বাহিরে এত শব্দ এসেছিলো? ডাক্তারের সাথে রেগেছেন নাকি?
আহান — ভেবেছিলাম তোমার ডেলিবারি ওনি করেছেন?
ইয়ানা — করলে কি হয়েছে?
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে মৃদু ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” পুরুষ ডাক্তার কেনো তোমার ডেলিবারি করাবে ইডিয়েট। ওদের ছোঁয়া কেনো তোমাকে লাগাতে দিবো। হ্যা ওনি বড় ডাক্তার তাই তোমার নিরাপত্তার জন্য ভিতরে যেতে দিয়েছিলাম কিন্ত কঠোর নিষিদ্ধ ছিলো তোমার দিকে যাতে ভুলে ও না তাকায়। হুশিয়ারি দিয়েছি সিসি ক্যামেরা চেক করে এমন কিছু পেলে জান খেয়ে ফেলব।

ইয়ানা নিরবে এক হতাশার শ্বাস ফেলে। হসপিটালে আছি তবুও ধমক দেওয়া ছাড়ছে না। চিকিৎসা করতে আসবে এই নিয়ে ও ডাক্তারকে হুশিয়ারি দেয় আজব পসেসিভ স্বামী পেয়েছি আমি। এই কিছু সময়ের ভিতরে লোকটার চেহারা কি ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। সবসময় জেল দিয়ে সেট করে রাখা ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ইয়ানার ব্লিডিং এখন ও আহানের শভ্র রঙ্গের শার্টে লেগে ভাসমান হয়ে আছে কিছুটা। হঠাৎ আহানের বাবু নেওয়ার স্টাইল দেখে ইয়ানার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। ইয়ানার হাসি দেখে আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,

“” হাসছো কেনো? ”
ইয়ানা — আপনার বাবু নেওয়ার স্টাইল দেখে। এইভাবে কেউ বাচ্চা কোলে নেয়। ওকে তো দেখা ওই যাচ্ছে না।
আহান — আমি বাচ্চা কখনো কোলে নেই নি। আমার জীবনে শুধু আহিয়াকেই কোলে নিয়েছি আর কোনো বাবু স্পর্শ করি নি।
ইয়ানা — সেটা দেখে ওই বুঝা যাচ্ছে। কিন্ত মাফিয়া লিডার অগ্নি চৌধুরির এই রুপ কি জনগন মেনে নিবে। সে এক সন্তানের বাবা হতে গিয়েই বেহাল দশা। সবসময় ক্রাশ নামক উস্টা খেয়ে পড়ে থাকা মেয়েরা এখনকার রুপ দেখলে বলবে,,,
“” হায় হায় আমাদের ক্রাশ বয় এক বাচ্চার বাবা হওয়ার পর কি অবস্থা হয়েছে।
তাই বলছি আম্মু তারা আসলে আপনি বাড়িতে চলে যাবেন এরপর আবার আগের ফর্মে ফিরে আসবেন। এই রুপ ঠিক মানাচ্ছে না।
আহান ইয়ানার কথা শুনে নিজের দিকে তাকায়। দেখে গায়ের শার্টে রক্ত লেগে আছে। এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,

“” আমার সেহজাদী যদি আমাকে বাবা ডাক শুনানোর জন্য মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে পারে তাহলে আমি কি তার সামান্য নারী সত্তা নিয়ে বসে থাকতে পারব না।
আহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাবু চিৎকার করে উঠে। আহান বাচ্চার কান্না শুনে বলে,,,,
“” এই দেখি তোমার মত শুধু কান্না করে। কান্না করার কি আছে বাবার কোলে আরাম করে বসে আছে।”
ইয়ানা — ওর খিদে পেয়েঁছে।
আহান — ওহহহ আচ্ছা। তাই বলো এত জোড়ে চিৎকার করবে। তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও নয়ত তোমার ছেলে পুরো হসপিটালের লোকজন নিয়ে চলে আসবে।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা মেকি হাসি দেয়। কিন্তু ও একা একা খাওয়াবে কি করে।

ইয়ানা — নার্সকে ডাক দিন।
আহান — কেনো?
ইয়ানা –* আমার হাতে স্যালাইন চলছে একা হাতে কিভাবে খাওয়াব?
আহান — এখানে নার্স ডাকার কি আছে।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। কি লজ্জাজনক পরিস্থিতি।
আহান ইয়ানার লজ্জামাখা মুখ দেখে বলে,,,,
“” বাচ্চার মা হয়ে গিয়েছো এখন ও লজ্জা পাওয়ার কি আছে হুম। প্রতিদিন সকালে কি লজ্জার অ্যাপস ডাউনলোড দেও নাকি। আমি তো লজ্জা ভেঙ্গে দেয় কিন্তু কিছুক্ষন পর ওই আবার লজ্জা পাও। এত লজ্জা কই থেকে আসে তোমার?

আহান কথা বলতে বলতে বাবুকে ইয়ানার পাশে শুইয়ে দেয়। আহানের কথা শুনে ইয়ানা কটমট চোখে তাকায়।
বাচ্চা ও মায়ের শরীরেএ উষ্নতা পেয়ে কান্না অফ করে দিয়েছে। এরপর ইয়ানা মাথায় ভালোভাবে উড়না পেচিয়ে বিসমিল্লাহ বলে খাবার দিয়ে দেয়। বাচ্চা ও নিজের খাবার পেয়ে চুপ হয়ে যায়।
আহান — এইভাবে উড়না দিয়ে ডেকে রাখার কি আছে? উড়না মাথায় পেচিয়ে রাখলে তো মাথা গরম হয়ে ব্যাথা করবে। আমি ওই তো আছি রুমে আর তো কেউ নেই।
ইয়ানা — বাচ্চাদের তাদের খাবার খাওয়ানোর সময় মাথায় উড়না দিয়ে খাওয়ানো উত্তম।
আহান —- ওহহহহহ।

তাদের কথার মাঝেই সবাই করিডরে প্রবেশ করে। এক এক জনের মুখে খুশির ঝিলিক।
দাদুমনি —- আমাদের ফোন কর নি কেনো দাদুভাই?
আহান — ওই পরিস্থিতিতে ছিলাম না। আর ফোন করলে কি হত। এত রাত করে আসার তো কোনো মানে হয় না। সঠিক সময় তো দেখতে পেরেছো।
আহিয়া — তোমাদের কথা বন্ধ কর আগে আমি আমার বাবাকে দেখে নেই।
ইয়ানা সবাইকে এত খুশি দেখে নিজে ও প্রচুর খুশি। ছেলে ও নিজের আপন মানুষদের দেখে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আহিয়া আলতো হাতে বাবুকে কোলে তুলে নেয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে হল্লা পার্টি, রায়ান, ইউভি, রুয়ানা ও কেবিনে প্রবেশ করে।

ইয়ানার ইচ্ছে করছে সবাইকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু এই এইটা তো আর করতে পারবে না।
এক এক করে সবাই বাবুকে কোলে নিয়ে আদর করে।
আসাদ হোসেন নিজের নাতিকে দেখে খুশিতে আত্নহারা। স্বর্নের চেইন দিয়ে নাতির মুখ দেখেছে। ছেলেদের স্বর্ন পড়া ঠিক না জানা সত্তে ও ইয়ানা কিছু বলে না সে তার আব্বুর আনন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না।
রায়ান আহানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,,
” কিরে ভাই এক বাচ্চার বাপ হয়ে তর এই অবস্থা। জাস্ট চোখে দেখা যাচ্ছে না। একদম বেচারা বেচারা লাগছে।”
আহান কটমট চোখে রায়ানের দিকে তাকায়।
ইউভি নিজের হাসি সংবরন করে বলে,,,
“” যা বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।””

ইয়ানা —- হুম ভাইয়া আমি কখন থেকে বলছি যাওয়ার জন্য কিন্তু ওনি নড়ছেই না।
ইউভি — ছেলেকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
রায়ান — চলে যা ভাই চিন্তা করিস না তর ছেলের শশুর আছে। আমি সব সামলে নিব।
আহান — সময় হলে আমি অবশ্যয় যাব। আমার পিছনে লেগেছিস কেনো তরা।
ইয়ানা — রং লেগেছে তাই লেগেছি। ভাইয়া আপনারা আর কিছু বলবেন না উনার যখন ইচ্ছে হবে তখন যাবে। আমাদের কথা শুনেছে কখনো যে আজ শুনবে।
আহান ইয়ানার থম থমে মুখটার দিকে এক পলক তাকায়। মুখটা একদম ক্লন্ত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ত্বকের উজ্জলতা আর ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আসাদ হোসেনের প্রচন্ড জ্বর অসুস্থতা নিয়ে নিজের নাতিকে দেখতে এসেছে। তাই ইয়ানা জোর করে সেলিনা হোসেন আর আসাদ হোসেনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। দাদুমনি ও চলে যায় ড্রাইবারের সাথে। আহিয়া থেকে যায় আহানের সাথে যাবে বলে।

আহান, রায়ান আর ইউভি এক সাইড হয়ে কাজ নিয়ে কথা বলছে। আর এই দিকে হল্লাপার্টি রুয়ানা আর আহিয়া আড্ডা দিচ্ছি। পুচকো ঘুমিয়ে আছে।
আহিয়া রুহানের দিকে তাকালে দুইজনের চোখাচোখি হয়। কিন্তু আহিয়া আর ভেঙ্গে পড়বে না। আর ভালোবাসি বলে দাবি জানাবে না। রুহান নিজে আসবে আহিয়ার কাছে।
রুয়ানা — তোমাদের কাছে আমার একটা জিনিস জানার ছিলো?
আরু— কি জানতে চাস?
রুয়ানা — আচ্ছা বিয়ের পরের রাতকে বাসর রাত বলে তাইতো?
আয়াত— হ্যা।
রুয়ানা — হুম এই রাতে বিড়াল মারতে হয়। কিন্তু আমি তো বিড়াল খুজে পাই নি তাই মারতে ও পারি নি।
সবাই রুয়ানার দিকে হা করে তাকায় বলে কি এই মেয়ে।
আকাশ — বিড়ালটা মনে হয় অনেক বড় ছিলো তাই মারতে পারিস নি।
রুয়ানা হতাশ হয়ে বলে,,,,

“” খুজেই পাই নি। বড় ছোট বুঝাব কি করে।মানুষের থেকে শুনেছি বাসর রাতে অনেক কিছু হয় কিন্তু কি হয় আমি আজ ও জানি না। ওনাকে প্রশ্ন করলে শুধু বলে এইসব জানার এখনো বয়স হয় নি। দেখো অবনি আপুর চার মাসের প্রেগনেন্ট, সুমু আপু প্রেগনেন্ট তাহলে আমি হই না কেনো?
রুয়ানা কথাগুলো এইবার জোরে জোরে বলা শুরু করে। ইউভি রুয়ানার কথা শুনে কেশে উঠে।
আহান ঠোঁট চেপে হেসে বলে,,,,
“” তর বউ জানতে চাচ্ছে ওর বাচ্চা হচ্ছে না কেনো? তুই জানাস নি কেনো?
ইউভি — চুপ থাক সালা।
এরপর বিরবির করে বলে,,,,
এই মেয়ে মানসম্মান শেষ করে দিবে আজ।
রুয়ানার আবার ফের প্রশ্ন করে — কি হলো বলো না কেনো বাবু হই না? আর বাসর রাত মানে কি? ওনাকে প্রশ্ন করলে ধমক দেয় শুধু।

ইয়ানা তারা শুধই মূর্তির মত বসে আছে। কি উত্তর দিবে আর।
ইউভি আর বসে থাকতে পারল না। দেখা গেলো আর কিছু সময় থাকলে কোন কথা বলা শুরু করে।
ইউভি — তরা থাক বাচ্চা বউ সামলে আসি।
ইউভি রুয়ানার হাত ধরে বলে,,,
“” বাড়ি চলো? ”
রুয়ানা — আরেকটু সময় থাকি। পুচকু উঠে গেলে আদর করে চলে যাব। আর আমার প্রশ্নের উত্তর গুলো জেনে আসি।
ইউভি কটমট চোখে বলে,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৫০

“” তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব এখন চলো।
রুয়ানা আর কিছু না বলে মন খারাপ করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইউভির সাথে চলে যায়।

অনুভবে তুমি পর্ব ৫২