আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪০
ইশিকা ইসলাম ইশা
রাত তখন প্রায় ৪ টার কাছাকাছি। গ্রামের মানুষ সবাই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।মির,তীর একে একে সবাইকে তীব্রর আনা জামা কাপড় দিচ্ছে।মেয়েরা এক লাইনে দাড়িয়ে ,ছেলেরা এক লাইনে।মেয়েদের শাড়ি আর ছেলেরদের পাঞ্জাবি, পাজামা দেওয়া হচ্ছে।অনেকেই এসব পেয়ে খুশি।একটু আগের তীব্রর বর্বরতা ভুলে তীব্রর দেওয়া উপহার পেয়ে সবাই তীব্র আর রিদির জন্য দোয়াও করছে হাসিমুখে। এদিকে তীর কাপড় গুলো দিতে দিতে মুখটা ঝ্যামটা মেরে মিরের উদ্দেশ্য বলল,
দেখছিস সালা কি স্বার্থ নিজ!!
মির ভু কুঁচকে বলল,
স্বাথনিজ আবার কি??
ঐ দেখ!বৌ কে কি সুন্দর খায়িয়ে দিচ্ছে।অথচ আমরা যে খাই নি সেটার খেয়াল আছে??
মির কপালের তিনটা ভাজ ফেলে বলল,
সেটাই!!৩ প্লেট গিলে তো তোর হয়নি!!
এই একদম আমার খাবারে নজর দিবি না!মির জাফর…..
সালা!হারামি!বাংলা ইতিহাস পড়ছো কোনদিন!মির জাফর বলতে কি বুঝায় বল?
তীর থতমত খেয়ে বলল,
আমি জানি! বলেই বলব না।তুই বল……
ইডিয়ট!!
এই এই আমাকে ইডিয়ট বলবি না!
আর তুই ভুলেও মির জাফর উচ্চারণ করবি না!
মির……..
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীর কিছু বলার আগেই, দুইজনের কথা উরফে কথা কাটাকাটির মাঝেই একজন বৃদ্ধা বলল,
বাবা! সেই সন্ধ্যা থেকে এইহানে আছি!এবার কাপড় খানা দিয়ে বিদায় কর বাবা।
তীর বৃদ্ধার কথায় চটপট বলল,
আহারে!!কি নির্দয়!!
বৃদ্ধা আলতো হেসে বলল,
হেই রিদির জামাই নির্দয় তবে ভালা!
তীর জাসুরের মতো বৃদ্ধার দিকে ঝুকে এসে বলল,
নির্দয় আর ভালা কেমনে হয় দাদিমা!!আপনাদের সবাইকে তো জামা দিল অথচ আমাকে!!আমাকে কি দিল!একটা বৌও গিফট করল না।আপনিই বলুন সে নির্দয় কি না??
বৃদ্ধা হচকচিয়ে উঠে ড্যাবড্যাব করে তাকালো তীরের দিকে!
তুমিও মেলাই সুন্দর!ভালা ম্যাইয়াই পাবা।
তীর কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে বলল,
কি আবার বলব দুঃখের কথা। ভালা গুলান তো সব ঐ (তীব্র)নিয়া যাই।
বৃদ্ধা তীরের অদ্ভুত কথায় মুখে জোর পূর্বক হাসি টেনে বলল,
এহন আমি যাইই বাবা!ভালা থাইকো!
তীর ফট করেই বলল,
কিন্তু আমার তো আরো অনেক দুঃখের কথা বলার আছে দাদি।জানেন এরা কেউ আমার দুঃখের কথা শোনে না।
বৃদ্ধা পারে না তো কেঁদেই দেয় এমন নাটক দেখে।মির এতোক্ষণ সহ্য করলেও এবার রাগী গলায় বলল,
নাটক কম করো প্রিয়…….কাজ করো!দাদি আপনি যান।
বৃদ্ধা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। দ্রুত হেঁটে যেতে যেতে বিরবির করে বলল,
মরার আগ পর্যন্ত সে আর এই মিজা বাড়ির চৌকাঠ মারাবো না।জন্মের শিক্ষা হয়েছে ।
রিদিকে খাবার খাওয়ানোর মাঝেই কয়েকজন মহিলা এসে দাড়ালো রিদিদের সামনে। তাদের হাতে তীব্রর দেওয়া জামা কাপড়। সবাই সামনে এসে দাড়ালেও তীব্র সেদিকে তোয়াক্কা করল না ,সে রিদিকে খাওয়াতে ব্যস্ত। এদিকে ওদিকে কোনদিকেই যেন তাকানোর সুযোগ নেই।এতোই ব্যস্ত সে।মহিলাগুলোকে দেখে রিদি ঘাবরে গিয়ে তীব্রর হাত ধরতেই সবাই একে একে বলতে শুরু করল,
_আল্লাহ তোমাগো ভালা রাখুক বাবা!
_এই রিদিত্যা ভালাই একখান জামাই পাইছোস রে!!
_প্রথ্থমবার এমন বিয়া দেখলাম জীবনে। গিফোট দেওয়ানের কথা আমাগো হেথায় উল্টা আমাগো গিফোট দিচ্ছে !
_চান্দের লাহান জামাই পাইছোস রে রিদিতা!!দুয়া করি মেলায় সুখে থাক!!
_হোন রিদি !নাতি কিন্তু বার বার কইতাছে তার মেয়েরে আনবার জন্যই।হের ম্যাইয়া নাকি আসবার জন্য ডাক দিতাছে বাপরে ।তুই এবার জলদি ওরে পেটে আনিস বুঝলি!!
বুড়ি দাদির ফিসফিস করে বলা কথা শুনে রিদি চোখ বড় বড় করে চাইলো তার দিকে। এদিকে তীব্রর কানে ফিসফিস কথা আসতেই তীব্র রিদির মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে মুচকি হাসল।
বুড়ি দাদি এবার তীব্রর উদ্দেশ্য বলল,
আমাগো কথায় রাগ করো না গো নাতি।গ্রারামের মানুষ। ছলচাতুরি কম বুঝি গো। আমরা হেই ছেমরির কথায় অনেক ভুল করছি।
বুড়ি দাদির কথায় তীব্র আবারো হাসল।তবে তাতে রয়েছে তাচ্ছিল্য।রিদি খেতে খেতে তীব্রর দিকে একবার তাকালো।তীব্র কে উওর করতে না দেখে রিদি হাসার চেষ্টা করে বলল,
সমস্যা নাই দাদি!আপনার নাতির মন মেলাই ভালা।কিছু মনে করেনি।
বুড়ি দাদি আবারো দুইজনকে দোয়া করে চলে গেলেন।
উনি যেতেই রিদি প্লেট থেকে খাবার নিয়ে চামচে তুলে তীব্রর মুখের সামনে ধরল।তীব্র রিদির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিদির হাত ধরে খাবার প্লেটে নামিয়ে দিল।
সরি!! আমি শুনেছিলাম আপনি কারো হাতে খাবার খান না।আমি……..
তীব্র মুচকি হেসে রিদির হাত থেকে চামচ নিয়ে খাবার প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
আপনার হাতে খাবো।দিবেন খাইয়ে??
রিদি হতবাক ,হতভম্ব !! তীব্র চৌধুরী তার হাতে খাবার খাওয়ার জন্য বলছে!!এটা সম্ভব!!কেন সম্ভব নয়!কতোকিছুই তো সম্ভব হলো! তবুও রিদি নিজের হাত দেখিয়ে বলল,
আমার হাতের ভাত খাবেন??
তীব্র রিদির অবাক হয়ে যাওয়া মুখ দেখে বাঁকা হেসে বলল,
শুধু আপনার হাতের ভাত কেন বেগমজান!পুরো আপনাকেই আজ খাবো!
রিদি বেকুবের মত না বুঝে বলল,
কিন্তু আমাকে কিভাবে খাবেন?
তীব্র বাঁকা হেসে বলল,
চলুন দেখাই…..
রিদি অবাক হয়ে বলল,
কোথায়??
বেডরুমে……..
এতক্ষণ পর তীব্রর কথার মানে বুঝতে পেরে রিদি ছিটকে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বলল,
ছিইইই !!আপনি অসভ্য……..
তীব্র রিদির রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার ন্যায় গালগুলো দেখে বলল,
বৌয়ের কাছে এমন অসভ্য হওয়াই যাই!! চলুন চলুন…
রিদি ভয়ার্ত মুখে আশেপাশে একবার তাকিয়ে দেখল অনেকের দৃষ্টি তাদের উপর।রিদি সবার দিকে একবার তাকিয়ে তীব্রর দিকে তাকালো তীব্র রিদির ভয়ার্ত কাঁচুমাচু মুখখানা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো……
তীব্রর হাসিতে চারপাশের পরিবেশ শান্ত আবহাওয়া তৈরি করল যেন।নাজমা চৌধুরী চপল পায়ে হেঁটে এলেন তীব্রর কাছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে দেখলেন তীব্রর হাসি। কতোদিন পর!! উহু!!! কতো বছর পর দেখলেন এমন হাসি…
নাজমা চৌধুরীর মনে হলো তিশার কোলে সেই ছোট্ট গুলুমুলু পান্ডাটা হাসছে। তীব্র ছোট বেলায় চোখ ধাঁধানো গোল গাল কিউট একটা ছেলে ছিল।যাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করত।নাজমা চৌধুরীর চোখ ছলছল করে উঠল।ছেলেটা তাহলে সত্যি এতটা বছর পর হাসছে।
এদিকে রিদি আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে দেখছে তীব্রর হাসি। তীব্র হাসলে যে এতো সুন্দর লাগে আগে ধারণা ছিল না তার।
“ও মাই আল্লাহ!!ভাবি কি জাদু করলেন!!বোবা ,কালা দেখছি হাসতেছে ।এই দিন দেখবো বলেই মনে হয় বেঁচে ছিলাম। আল্লাহ আল্লাহ!!”
তীব্র তীরের কথায় হাসি থামিয়ে বললো,
বেশি দিন মনে হয় বাচবি না আর!!
তীর হচকচিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
তোর এমন কিলার মার্কা হাসি দেখে মরতেই রাজি মেরি জান……
এই দেখি সর তো! ভাবির সাথে আমার গোপন কিছু কথা আছে!
তীব্র চরম বিরক্ত হলেও কিছু বলল না।সে জানে একে বলা না বলা এক।তাই বিরক্ত হলেও সরে দাঁড়ালো।
এদিকে তীর রিদির হাতে একটা চকলেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
আসুন পিচ্চি ভাবী!কথা আছে!
রিদি তীব্রর দিকে একবার তাকিয়ে তিরের পাশের চেয়ারে বসল। যদিও তীর দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছে।
তীর মজার সুরে বলল,
ভাবী আপনার কবুল বলার এতো তাড়া ছিল।বাহ!!ওটার পটর বলে দিলেন।
রিদি সরল মনে বলল,
আগের বার কবুল বলিনি তাই ঠাঁটিয়ে চর দিয়েছিল যে।
তীর হতবাক হয়ে বলল,
এ্যা?????
রিদি চকলেট খুলে ততক্ষণে খেতে শুরু করেছে। খেতে খেতে বলল,
হুম।তাইতো এবার তাড়াতাড়ি বলেছি।
তীর ফিক করে হাসতে হাসতে বলল,
ভাবি একটা কথা বলি?
রিদি চকলেট খেতে খেতেই বলল,
হুম…
তীর আদুরে গলায় বলল,
ভাবি আপনি যাস্ট মাশাআল্লাহ!!একদম কিউট এর ডিব্বা! ভাবি আপনার কি কোন বোন আছে? মানে আরকি……..
তীরের কথা শেষ করার আগেই পিঠে ধাম করে তাল পড়ল!তীর কুকিড়ে উঠল,
আই আই আই আআ আই..
মির ক্ষিপ্ত সুরে বলল,
নাটক কম কর। তীব্র ডাকছে ওদিকে চল!!
তীর মিরের দিকে রাগী লুকে তাকালেও তীব্র ডাকছে শুনে আশেপাশে তাকালো। কিছুক্ষণ আগে এখানেই তো ছিল। হুট করেই কোথায় ডাকছে !
পিচ্চি ভাবি আপনি দু মিনিট বসুন আমি তিন মিনিটের মধ্যেই আসছি ……
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৯
ফজরের আজানের ধ্বনি কানে আসতেই থেমে যাই তীব্র।হাতে থাকা মোটা রড টা মাটিতে ছুড়ে ফেলে চেঁচিয়ে উঠলো,
“আজকের পর থেকে আমি,তীব্র চৌধুরী তোর কাছে আর আসবো না। মিসেস রিদিতা তীব্র চৌধুরী! তীব্র চৌধুরীর বৌ হওয়ার সব সুবিধা পাবি কিন্তু তীব্র চৌধুরী কে পাবি না……এন্ড আই প্রমিস ইউ দ্যাট!”
রিদি কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। কিছু বলতে চেয়েও কান্নার তোপে কোন কথা বের হচ্ছে না।নাজমা চৌধুরী রিদিকে জরিয়ে ধরে আছে। কিন্তু তীব্র কে কিছু বলার সাহস করল না।তীব্র কে এই মূহুর্তে তার ভয়ংকর লাগছে। কিছুক্ষণ আগের তীব্রর সাথে এই তীব্রর আকাশ পাতাল পার্থক্য….
তীব্র কথাটুকু শেষ করেই গটগট পায়ে হেটে বেরিয়ে যায় মির্জা বাড়ি থেকে।তীর,লাবিব ছুটে যায় তীব্রর পিছু পিছু……….