আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৬
তানহা ইসলাম বৈশাখী
সময় বহমান। অতি মুল্যবান এই সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। পুষ্প এ বাড়ি থেকে গেছে আজ দুদিন। দুদিনে কোথাও কোন কিছু থেমে নেই। সব আগের মতোই চলছে ঠিকঠাক। শুধু থেমে যাওয়ার জোগাড় হচ্ছে কয়েকটা হৃদয়ের স্পন্দন। কেউ তা আচ করতে পারছে কেউ পারছে না।যেমন অন্ত যে নিজের অনুভুতি সম্পর্কে অবগত সে ঠিকই বুঝতে পারছে তার ভেতরের তোলপাড়। কিন্তু যার নিজের অনুভুতি সম্পর্কে কোন ধারনা নেই সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না তার ভেতরে ঠিক কি চলছে। কি নাম দেওয়া যায় এই অস্বাভাবিক তান্ডবের?
প্রার্থ কেবল শাওয়ার নিয়ে বের হলো ওয়াসরুম থেকে। অর্ধ উ/ল/ঙ্গ অবস্থায়। শরীরে শুধু একটা তোয়ালে পেচানো। শক্ত পেটানো বডি পুরোপুরি দৃশ্যমান। মুক্তোর দানার মতো বিন্দু বিন্দু পানি শরীরে চিক চিক করছে। বড় বড় চুলগলো পানিতে ভিজে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ সেখান থেকে ছোট ছোট শিশির বিন্দুর ন্যায় পানি টপটপ করে পড়ছে।
প্রথমেই সে গেলো কাবার্ডের কাছে। নিজের জন্য শার্ট বের করার জন্য। কাবার্ডটা খুলতেই মেয়েলি একটা ঘ্রান নাকে এসে লাগলো। খুব চেনা এই ঘ্রান। ইদানিং সব জায়গায়ই এই ঘ্রানটা পাওয়া যায়। বিছানায় ঘুমাতে গেলেও পাওয়া যায়। বালিস বিছানার চাদর সবখান থেকেই এসে ঘিরে ধরে। যেখানে যেখানে মেয়েটা গিয়েছে সেখানে সেখানেই নিজের অস্তিত্ব রেখে গেছে। রুমের কোনা কোনা থেকে তাকে অনুভব করা যায়। এমনকি অনেকক্ষন পরে যখন রুমে ঢুকে তখনও মনেহয় রুমে হয়তো পুষ্প আছে ভেতরে। তার গায়ের সুগন্ধে ম-ম করে চারিপাশ।
আর এই বিষয়টা প্রার্থর কাছে খুবই অসহ্যকর লাগে। প্রতিটা ক্ষন মাথায় পুষ্পর কথা ভেসে বেড়ায়। কি যন্ত্রনা! তাকে দূরে ঠেলেও যেন দূরে যেতে পারছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রার্থ তপ্ত শ্বাস ফেলে কালো রংয়ের একটা শার্ট আর প্যান্ট বের করে নিলো। সেগুলো পড়ে গিয়ে দাড়ালো ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে। সেখানে গেলে আবার আরেক জ্বালা। ড্রেসিং টেবিল জুরে মেয়েলি জিনিসপত্র। এতদিন এটা তারই অধীনে ছিলো এখন চলে যাওয়ার পরও তার অধীনে আছে। মেয়েটা কি সবকিছু এখানেই ফেলে গেছে?
ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেললো। পুষ্পর খেয়াল বাদ দিয়ে নিজের চুলগুলো ঠিক করে নিলো। ভেজা চুলগুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে একটু শুকিয়ে নিয়ে সব পেছনে দিয়ে সেট করে নিলো।
এখন ফিটফাট হয়ে যাচ্ছে তাদের স্টুডিও তে। সকালে খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে ফেলেছে অনেকক্ষণ। পূর্নিমা বেগমের একটু সকাল সকাল খেতে হয়। কারন টাইম মতো ওষুধও নিতে হয় তাকে। আর প্রার্থ সকালে তার মায়ের সাথে খেয়েই কোথাও বের হবে। আজ আর একেবারে তৈরী হয়ে নিচে যায়নি। একেবারে নিচ থেকে সব সেরে এসে উপরে এসেছিলো তৈরী হতে। নিচে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি মায়ের প্রশ্নের জালায়।
দুদিন তো হয়ে গেলো পুষ্প কেন এখনো ফিরছে না? প্রার্থ কেন তাকে বাড়িতে আনছে না। পুষ্প দুইবার ফোন করেছিলো দুদিনে আর করেনি। তিনি ফোন করলেও ধরে না প্রিয়া কথা বলে কিন্তু পুষ্পের নাকি কোন খোজ থাকে না। এ নিয়ে ভদ্রমহিলার কত প্রশ্ন ছেলের কাছে।
প্রার্থ তাকে একটু বুঝ দিয়েই উপরে চলে এসেছে। এখন মাকে না বলেই বের হবে নাহলে আবার সেই পুষ্পকে নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। যার কোন জবাব তার কাছে নেই।
পুষ্প একা ঘরে টেবিলের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। টেবিলের উপরে তার মাথার পাশেই ফোনে গান বাজছে। লালনগীতি। তার পড়ার টেবিলটা জানালার সামনেই। বাইরে থেকে দমকা হাওয়ায় খোলা চুলেরা খেলা করছে। সাথে বাজছে লালন ফকিরের মন জুরানো কিছু লাইন।
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
ওই প্রেম যে করে সে জানে
ওই প্রেম যে করে সে জানে
আমার মনের মানুষেরও সনে
আমার মনের মানুষেরও সনে
মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষেরও সনে
আমার মনের মানুষেরও সনে
হঠাৎ পুষ্পের মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলো। চোখ দুটো খুলে দেখলো সামনে প্রত্যয় সাহেব মানে পুষ্পর বাবা। তিনি মেয়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে। পুষ্প টেবিলে শোয়া থেকে মাথা উঠিয়ে বসলো। ফোনের চলা গানটা বন্ধ করে দিলো। পুষ্প স্বাভাবিক ভাবেই বললো।
“-আব্বু! তুমি অফিসে যাওনি এখনো?
তিনি মেয়ের পাশে আরেকটা চেয়ার টেনে বসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
“-আজ আর আব্বু অফিসে যাবে না। আজ সে তার মেয়ের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিবে।
“-কিন্তু অফিস?
“-অফিসকে আজ ছুটি দিয়েছি। তোদের সাথে তো কখনো ঠিকঠাক কথা বলতে পারি না। সারাদিন অফিস করতে হয়। এখনো সময় দিতে পারবো না। এখন তো মেয়ে বড় হয়ে গেছে তাকে বিয়ে দিয়েছি।
“-আব্বু, এমন কেন বলছো? তুমি আমাদের সর্বোচ্চ সময় দিয়েছো। এত কাজের মাঝেও ওইটুকু সময়ই বা কে দেয়? তুমি আমাদের যেটুকু সময় দিয়েছো সেটুকুই চলবে।
“-ওরকম সময় দিতে পারলে তো মেয়ের মনের কথাগুলোও জানতে পারতাম। সময় দিতে পারিনা বলেই মনের খবর রাখতে পারি না। বাবা হিসেবে অসফলই বলা চলে।
পুষ্প এগিয়ে এলো। বাবার হাত ধরলো সন্তর্পণে। আশ্বাস দিয়ে বললো।
“-তুমি বাবা হিসেবে বেস্ট। কে বললো তুমি আমাদের মনের খবর রাখো না। এইযে না বলাতেও কতকিছু বুঝে নিচ্ছো।
“-আমি কি তাহলে ঠিকই বুঝছি ধরে নেবো।
পুষ্প একটু দ্বিধাদন্তে পরে গেলো। বাবা কিসের কথা বলছে এত জোর দিয়ে। প্রার্থ পুষ্পর সম্পর্ক নিয়ে নয়তো। পুষ্প ঠোট ডোবালো জ্বিভে। বললো রয়েসয়ে।
“-কিসের কথা বলছো আব্বু?
তিনি পুষ্পর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টে প্রশ্ন করলো।
“-আমাকে একটা সত্যি করে কথা বলবি মা?
“-হুম বলবো তো।
“-তাহলে বল প্রার্থ তোকে অনেক কষ্ট দেয়? তোদের মাঝে সব ঠিক আছে? দুজনেই কি বিয়েটা মেনে নিয়েছিস? তুই বল। ও তোর সাথে খারাপ আচরণ করে?
প্রত্যয় সাহেব যেন মেয়ের জন্য উতলা হয়ে পড়েছেন। তার মেয়ে যে সুখে নেই তা একটু হলেও আচ করতে পেরেছে। পুষ্প তাকে শান্ত করতে বললো।
“-এমন কিছুই না আব্বু প্রার্থ ভাই অনেক ভালো। আমার খেয়াল রাখে। তুমি তো চেনোই তাকে সবারই কেয়ার করে। আমারও করে।
“-অনেক বড় হয়ে গেছিস তাইনা? বাবার কাছেও কথা লুকানো শিখে গেছিস। কিকরে সব সামলাতে হয় তাও শিখে গেছিস। কিন্তু মনে রাখ আমি তোর বাবা। আমার কাছে আমার মেয়ে কিছু লুকাতে পারবে না।
পুষ্প কত চেষ্টা করলো নিজেকে সংযত রাখতে কিন্তু পারলো না। বাবার কাছে কি আদোও কিছু লুকানো যায়। যে বাবা কিছু না বলাতেই মেয়ের মনের অবস্থা টের পায় সে বাবার কাছে মেয়েরা আর কি লুকাবে? এতদিন পর বাবার এত আদর এত ভালোবাসা দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারলো না। বাবার বুকে মাথা ঠেকিয়ে রেখে কেদে ফেললো মেয়েটা। প্রত্যয় সাহেব তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
“-আমি জানি তো আমার মেয়ে সুখে নেই। বাবাকে বন্ধু ভাবিস তো? বিশ্বাস আছে তো বাবার উপর? তাহলে বল সব। প্রার্থর সাথে তোর সম্পর্ক ঠিক নেই, তাইনা?
পুষ্প মাথা তুলে বসলো। তবে নিচু করে রেখেছে এখনো। চোখ মুছে নাক টেনে বললো।
“-ঠিক নেই আব্বু। উনি আমাকে মেনে নিতে পারেনি। আমি থাকবোও না উনার জীবনে। থাকতে চাই না আমি।
বলতে বলতে আবার কেঁদে ফেলেছে সে। প্রত্যয় সাহেবেও চোখে জল এসে যাচ্ছে। মেয়ের দুঃখে বাবারা কখনো ঠিক থাকতে পারেনা। তিনি তেজী গলায় বললেন।
“-ভুলটা আমারই। তোর মায়ের কথা শোনা উচিত হয়নি আমার। তুই যখন বিয়েতে রাজি ছিলিনা তখন আমার উচিত ছিলো তোদের বিয়ে না দেওয়া কিন্তু… । যা হওয়ার হয়েছে আর নয়। আমি আমার মেয়েকে কষ্ট পেতে দেবো না।
হাত বাড়িয়ে পুষ্পর চোখের জল মুছিয়ে বললো।
“-তুই কাঁদিস না মা। তোদের বিয়ের এখানেই সমাপ্তি টানবো আমি। প্রার্থকে ডিভোর্স লেটার পাঠাবো খুব শীঘ্রই।
পুষ্পর চোখ বিষ্ময়ে বড় বড় হয়ে গেলো।কান্না থেমে গেলো নিমিষেই। বিষ্ময় ভরা দৃষ্টিতেই বললো।
“-আব্বু! কি বলছো?
“-ঠিকই বলছি। যেখানে তোর সুখ নেই সেখানে আমি তোকে রাখবো না। তাতে যা হওয়ার হোক। আমার মেয়ে এর থেকে ভালো কিছু ডিজার্ভ করে।
“-কিন্তু আমি ডিভোর্স চাই না।
“-কেন? তুই এভাবেই জীবন কাটাতে চাস? আমি তোকে এভাবে থাকতে দেবো না।
ডিভোর্সের কথা শুনেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে। ডিভোর্স শব্দটা একটা বিবাহিত মেয়ের কাছে কি তা হয়তো আজ বেশ ভালো ভাবেই আচ করতে পারলো পুষ্প। যত যাই হোক সে ডিভোর্স চায় না। দরকার পরলে সে এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবে কিন্তু ডিভোর্স নয়। হ্যাঁ যদি প্রার্থ নিজে ডিভোর্স লেটার পাঠায় তবে নির্দিধায় সেখানে সাইন করো দেবে। পুষ্প নিজে থেকে কখনো এমনটা করবে না।
কেন যে বাবাকে সব বলতে গেলো? এজন্যই এসব নিয়ে বলতে চায়নি সে। কিন্তু তার যে বাবা, তার কাছে কিচ্ছু লুকানো যায় না। কি করে যেন সব বুঝে ফেলে। এখন তাকে অন্যকিছু বলে বোঝাতে হবে। সে তার বাবাকে বুঝাতে বললো
“-আব্বু বোঝার চেষ্টা করো। বড়আম্মু অসুস্থ। আমি তো তার জন্যই বিয়েটা করেছি, তাইনা? এই কয়দিনের মাথায় সব শেষ হয়ে গেলে বড় আম্মুর কি হবে একবার ভাবো। প্লিজ আব্বু এরকম কিছু করো না। আমি তো কষ্টে নেই। প্রার্থ ভাই যথেষ্ট সম্মান দেয়। শুধু বিয়েটা মানতে চাইছে না এটুকুই। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
“-শুধু সম্মান দিয়ে সব সম্পর্ক টেকানো যায় না পুষ্প। সম্পর্কে ভালোবাসাটাও প্রয়োজন।
“-সবই হবে আব্বু। একটু সময় দাও আমাদের। মাত্র কয়েকটা দিন হলো বিয়ের। আর কয়েকটা দিন কি সময় দেওয়া যায় না বলো?
“- কয়েকদিন সময় দিলে সে ঠিক হবে? সম্পর্ক সামলাতে পারবে?
পুষ্পর গলা শুকিয়ে আসছে। হাত পা কাঁপছে। অস্থির লাগছে। কি বলবে কি করবে বুঝতে পাড়ছে না। প্রার্থ তো কখনো মানবে না। পুষ্প সে আশায় বসেও নেই। সরে এসেছে মানে আর ফিরে যাবে না। কিন্তু ফিরে না গেলে তো ডিভোর্সই হবে। আজ হোক বা কাল ডিভোরৃস তাদের হবেই। এটাই হয়তো তাদের ভবিতব্য। কিন্তু এখন ডিভোর্স হলে বড়আম্মুর কি হবে?
এতগুলো কিন্তুর মাঝে বেচারি ফোসে গেছে। এত তাড়াহুড়ো করে কিছু করা যাবে না দেখে বললো।
“-পারবে। সব ঠিকও হবে। সময় দাও। সময়ের প্রয়োজন। যদি সব ঠিক না হয় তবে আমি নিজে তোমাকে জানাবো। তখন তুমি যা বলবে তাই হবে।
“-ঠিকাছে। তাহলে দিলাম সময়। এই সময়ের মধ্যেই সে ঠিক না হলে আমি আর রাখবো না তোকে সেখানে।
পুষ্প ছোট করে বললো।
“-হুম।
প্রত্যায় সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে গেলেন। বিয়েটা দিয়ে ভীষন আফসোস তার। মেয়ের সামনে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারবে না। থাকলেই মনে হবে তার মেয়ের দুঃখের জন্য দায়ী সে নিজে। তাই আর কিছু না বলে চলে গেলো রুম থেকে। সময় যখন চেয়েছে তাহলে সময় নিক আরো কয়েকদিন। তারপরে সবাইকে সামনে নিয়েই সব ফয়সালা হবে। বাবা হয়ে বসে বসে তো আর মেয়ের দুঃখ দেখতে পারবেন না তিনি।
প্রত্যায় সাহেব চলে যেতেই পুষ্প আবার ভেঙে পড়লো। কেন সব বললো তাকে? কেন এত টেনশন দিলো। নিশ্চয়ই এখন দিনরাত এ নিয়েই ভাববে। রাগে নিজেকে নিজের মারতে ইচ্ছে করছে। বলার হলে সঠিক সময়েই বলতো। এখন তো সঠিক সময় নয় এসব বলার। এত ঝামেলার মাঝে এখন পুষ্পর নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তিটি মনে হচ্ছে।
প্রার্থ স্টুডিওতে পৌছে দেখলো সবাই সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত। স্টুডিওটা বেশ বড়সড়। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, মাইক, কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সোফা, টি টেবিল সবকিছুই আছে।
অর্নবরা সবাই কাজ বাদে সোফায় বসে আছে। হয়তো প্রার্থর জন্যই অপেক্ষা করছে। প্রার্থ ভেতরে ঢুকতেই হৃদয় বললো।
“-কিরে প্রার্থ? তুই না শা*লা কত পাংচুয়াল ছিলি। এখন এত ঢিলে কি করে হলি? ও বুঝেছি, এখন তো আমাদের ভাবি আছে। সকাল সকাল ডোজ না নিয়ে আসতে ইচ্ছে হয় না তাইনা।
প্রার্থ কিছু বললো না। গিয়ে ওদের পাশে সোফায় গা এলিয়ে বসলো। হৃদয়ের এসব ফালতু কথার উত্তর এমনিতেই কখনো দেয়না সে। আজকেও কিছু বললো না। কিন্তু মাঝখানে অর্নব বলে উঠলো
“-ও এমনিতেই ঢিলে হয়ে গেছে। আজ তো ওর বউও বাড়িতে নেই তাহলে এত দেরি করলো কেন জিজ্ঞেস কর ওকে।
একসাথে সবগুলো চোখ গিয়ে পড়লো প্রার্থর উপর। কিন্তু প্রার্থর চোখ পরে রইলো অর্নবের উপর।
রকি প্রার্থকে বললো।
“-তাই নাকি। বউ নাই তাও এত লেট করলি কেমনে মামা? চক্কর বক্কর আছে নাকি আবার?
প্রার্থ রকির প্রশ্নের উত্তর দিলো না। উল্টে প্রশ্ন করলো অর্নবকে। ভ্রু কুচকে সন্দিহান গলায় বললো।
“-তুই কি করে জানলি ও বাড়িতে নেই?
অর্নব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
“-তো জানবো না? তুই কিছু না বললে কি হবে পুষ্প আমাকে সবই বলে।
“-কি বলেছে?
অর্নব ওকে জ্বলানোর জন্য বললো।
“-তোকে কেন বলবো? এটা আমাদের ব্যাপার।
প্রার্থ দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো। একটুকু কথায়ই রাগ হলো তার। দাত চেপেই বললো।
“-আমাকেই বলবি। বিকজ সি ইজ মাই ওয়াইফ। আই হ্যাভ রাইট টু নো এভরিথিং এবাউট হার।
অর্নব মনে মনে হসে বললো। ” এইতো বাবা লাইনে আসছো। তোমাকে আমি এভাবেই লাইনে আনবো চান্দু। ”
অর্নব আরো ভাব নিয়ে বললো।
“-আচ্ছা বলছি। যেহেতু তোর অধিকার আছে জানার। কাল রাতে আমাকে ও ফোন দিয়েছিলো। বললো ও নাকি এখন বাবার বাড়িতে আছে। তারপর এমনি কথা বললাম। তুই তো জানিসই লিটেল প্রিন্সেস আমার কাছে সব শেয়ার করে আগে থেকেই। এরপর বললো কয়েকদিন পর নাকি ভার্সিটি যেতে হবে। এসাইনমেন্ট জমা দিতে। বললাম তাহলে আমিই দিয়ে আসবো তোমাকে বললো ঠিকাছে।
তোর তো অনেক কাজ থাকে। তাই ভাবলাম আমিই ওকে ভার্সিটি নিয়ে যাবো।
প্রার্থ গম্ভীর হয়ে রইলো। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। দাঁত চেপে সব হজম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গম্ভীর হয়েই আবার বললো
“-আমাদের মাঝে যা হয় সব শেয়ার করে?
কার্তিক মাঝখানে বলে উঠলো।
“-এটা কেমন ধরনের প্রশ্ন প্রার্থ? তোদের স্বামী স্ত্রীর মাঝের সবকিছু কেন শেয়ার করবে? এমনিই বড় ভাই হিসবে সম্মান করে তাই বলে।
অর্নবও খুব বেশি কিছু বলতে চাইলো না শেষে দেখা যাবে জ্বলা বাদে মনে আরো ঘৃণা তৈরী হয়ে গেছে। লিটেল প্রিন্সেস এতটুকু মেয়ে হয়ে এমনেই অনেক সহ্য করছে। তার কষ্ট টা তো আর অর্নবের অজানা নয়। সে-ও তো সমান কষ্টেই আছে। তার নিজের এই কষ্টের কোন সমাধান নেই কিন্তু পুষ্পর কষ্ট চাইলেই সমাধান করা যাবে। আর ও সুখে থাকলে অর্নবের কষ্টও কিছুটা অন্তত লাঘব হবে। এখন থেকে সবকিছু মেপে মেপে সাবধানে করতে হবে। ও বললো।
“-হ্যাঁ! যেগুলো বলা চলে সেগুলো বলে
প্রার্থ আবার প্রশ্ন করলো।
“-কি কি বলা চলে?
অর্নব ‘চ’ সূচক শব্দ করে বললো।
“-এত প্রশ্ন কেন করছিস ভাই? তুই প্রিন্সেসকেই জিজ্ঞেস করে নিস। এখন চল কাজে লেগে পর সামনে আমাদের কনসার্ট আছে মনে আছে তো?
অর্নবের মুখে ওই প্রিন্সেস নামটুকুও অসহ্য লাগছে আজ প্রার্থর কাছে। সে উঠে দাড়ালো। বললো।
“-তোরা কাজ কর আমি আসছি।
ওদেরকে ফেলে রেখেই বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। সবাই জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছিস। কিন্তু সে কোন উত্তর দিলো না। হনহন করে হেটে চলে গেলো।
অর্নব হাসলো মনে মনে। কাজ যে হচ্ছে তা স্পষ্ট। কাল রাতে অর্নবই ফোন করেছিলো পুষ্পকে। প্রার্থর কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা তা জানার জন্য কিন্তু পুষ্প এসব এড়িয়ে গেছে শুধু বলেছে ও নাকি আর প্রার্থকে চায় না। ভুলে যাবে সব। কিন্তু পুষ্প হার মানলে কি হবে অর্নব এত সহজে হার মানছে না। সে তার তরফ থেকে চেষ্টা করে যাবে।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৫
কালকে পুষ্পর পড়াশোনা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে ও জানায় এসাইনমেন্ট জমা দিতে যাবে ভার্সিটিতে। অর্নব বলেছে সেও যাবে। এখন সে কথায়ই ঘুরিয়ে পেচিয়ে বললো প্রার্থকে। আর প্রার্থর ব্যাবহারেই বোঝা যাচ্ছে তীর সঠিক নিশানায় গিয়ে লেগেছে।