আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৭ (২)

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৭ (২)
তানহা ইসলাম বৈশাখী

“-হু আর ইউ? রাস্তা ব্লক করেছেন কেন? সরে দাঁড়ান।
সমৃদ্ধির খুশির জোয়ারে নিমিষেই ভাটা পরে গেলো। চোখ মুখে ভর করলো বিষ্ময়। এখন বোধহয় ক্লাসটাইম এজন্য মানুষজন এখানে নেই বললেই চলে। নয়তো কখন সবাই ঘিরে ধরতো তাকে।
সমৃদ্ধি বিষ্ময় নিয়েই বললো।
“-প্রার্থ! তুই চিনতে পারছিস না আমাকে? আমি সমৃদ্ধি।
প্রার্থ বিরক্তি নিয়ে বললো।
“-সো? হোয়াট ইউল আই ডু?
“-প্রার্থ তোর সাথে কিছু কথা ছিলো আমার।
প্রার্থ ওকে ইগনোর করতে চাইলো। পাশ কাটিয়ে যেতে নিলো। সমৃদ্ধি ওকে যেতে দেখে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে প্রার্থ হাত ধরতে চায়। সে ওর হাত বাড়ানো দেখেই দু কদম পিছিয়ে যায়। মুখের সামনে আঙ্গুল তুলে বলে।
“-ডোন্ট টাচ। দূরে সর। প্রার্থ মুখ খুললে অপমানের তোপ সামলাতে পারবি না। বেহায়ার মতো পথ না আটকে সর সামনে থেকে।
সমৃদ্ধি চোখমুখে খুশির ঝলক নিয়ে বললো।

“- জানি এখনো ভুলিসনি আমাকে। শুধু রেগে আছিস তাই তো? আমি তোকে সব বলবো তুই একটু কথা শোন আমার।
প্রার্থ চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“-মন চাচ্ছে তোর কানের নিচে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে। কিন্তু আমি নর্দমার কীটে হাত দেই না। আমি তো আমার বউকে ছাড়া কাউকে টাচও করি না। তাই বলছি পথ ছাড় নয়তো পায়ে জুতো আছে। হাতের আর প্রয়োজন পরবে না।
প্রার্থর অপমান সে গায়ে লাগালো কিনা সন্দেহ। সে আটকে রইলো প্রার্থর সেই বউ বলা কথায়। বললো।
“-তুই সত্যিই বিয়ে করেছিস? কই আমিতো করলাম না। বিশ্বাস কর তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই।
প্রার্থর সমৃদ্ধির কথায় কিছুই যায় আসছে না। এমনিই তার পাথর দিল। এসব কথায় কি আর ও গলবে নাকি? তাও আবার সে তার প্রাক্তন। এখন তার প্রতি সিমপ্যাথি দেখানোর কোন মানেই হয় না৷ প্রার্থ একরাশ বিরক্ত নিয়ে বললো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“-ইউ নো হোয়াট? ইউ আর দ্যা মোস্ট অকওয়ার্ড গার্ল আই হ্যাভ এভার সিন।
সমৃদ্ধি চোখে বিষ্ময় ও কন্ঠে অসহায়ত্ব নিয়ে বললো।
“-প্রার্থ!
“- শশশ! জাস্ট সাট আপ ওকে? তোর মুখে আমার নামটাও বিশ্রি শোনাচ্ছে। বুঝলাম না এতবছর পর তুই আমার সামনে এভাবে এলি কেন? ডু ইউ হ্যাভ এ্যনি কমন সেন্স? আই ডোন্ট থিংক সো। তুই কি করে ভাবলি এতবছর পর আমার সামনে এভাবে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে? হাউ কুড ইউ থিংক দ্যাট?
সমৃদ্ধি চোখে জল নিয়ে ন্যাকা কান্নার মতো করে বললো।

“-তুই কি এখন আমাকে ভালোবাসিস না প্রার্থ? আমার একটা ভুলের জন্য এতবড় শাস্তি দিবি? ওই পুষ্প…
“-পুষ্পর নাম নিবি না। তুই তোর মুখে ওর নাম নিবি না। নয়তো জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।
প্রার্থ তর্জনী তুলে ওকে শাসানোর মতো করে বললো কথাটুকু। আবারও গলা ঝেড়ে বললো।
“-দেখ তোকে আজ একটা কথা ক্লিয়ার করে দেই। ইউ আর জাস্ট মাই এক্স। নট মাই প্রেজেন্ট। আর ভার্সিটি লাইফের দু একটা এক্স সবারই থাকে। আমারও আছে। যেমন তুই। তোকে আমি দুবছর আগেই ভুলে গেছি যখন তোর জন্য আমি থাকতেও আরেকজনকে লাগতো। লাইক আ প্লে গার্ল। বাট আমার আফসোস কি হয় জানিস? আমি প্লে বয় হতে পারলাম না। ছ্যাহ কি করলাম এতদিনের জীবনে? ভয় লাগতো বুঝছিস। ভাবতাম সব মেয়েরাই মনেহয় এমন শুধু টাকার পিছনে ঘুরে। কিন্তু ধীরে ধীরে ধারনাটা বদলাচ্ছে। সবাই টাকার পিছে ছুটেনা তোর মতো।
প্রার্থর এগুলা কথার পিঠে সমৃদ্ধি শুধু বললো।

“-আচ্ছা তুই সত্যি করে বলতো। তুই কি সত্যিই ওইসময় আমাকে ভালোবেসে ছিলি?
প্রার্থ চুলগুলো দু হাতে ব্যাকব্রাশ করে বললো।
“-দের বছরের রিলেশনে কেউ কাউকে ভালোবাসে নাকি? তবুও আমি মনেহয় একটু একটু বাসতে শুরু করেছিলাম। পুরোপুরি বাসিনী। পুরোপুরি ভালোবাসা কাকে বলে প্রার্থ এখনো শিখেনি। তবে তুই চলে গিয়ে ভালোই করেছিস। জীবনটা নষ্ট হওয়া থেকে বেচে গেছে।
অদূরে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির চোখে ভীষন ভাবে বিধছে প্রার্থ সমৃদ্ধির কথোপকথনের দৃশ্য টুকু।
সাথে বুকেও ভেতরেও কোথাও চিনচিন করে উঠছে। চোখের কোটর আপনাআপনি ভরে যাচ্ছে। পুষ্প নিজের মনেই প্রশ্ন করলো খুব রুক্ষ ভাবে

” এত কষ্ট কেন হচ্ছে তোর? তুই তো তাদের পথের কাটা। এটা জানা সত্যেও রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছিস না কেন? লজ্জা লাগে না তোর? এমন একটা মানুষের জন্যও তোর চোখে জল আসে, বুকে ব্যাথা করে। শেম অন ইউ পুষ্প।
পুষ্প, অর্নব দুজনে মাত্র ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসলো। এখনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতো। কিন্তু মাঝপথেই পুষ্প পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে যায়। পুষ্পর দাড়িয়ে যাওয়ায় অর্নবও দাড়িয়ে পরে৷ তার চোখের চাওনি অনুসরণ করে সে-ও তাকায় সামনে। দেখে প্রার্থ সমৃদ্ধি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। দূর থেকে বোঝাও যাচ্ছে না তারা কি বলছে। অর্নব পুষ্পর চোখ মুখের ভাষা বুঝতে পেরে ডাকলো তাকে।
“-লিটেল প্রিন্সেস!
পুষ্প অন্যমনস্ক হয়ে জবাব দেয়
“-হু?
“-চলো সামনে প্রার্থ এসেছে। দেখবে সমৃদ্ধ কে এবার উচিত শিক্ষা দিবে।
পুষ্প অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে বললো।
“-আমি যাবো না অর্নব ভাই। আপনি যান। আমি বাসায় যাবো।
“-কেন যাবেনা? দেখবে না তোমার স্বামী কি বলে তাকে?

“-উহুম ওত সৎ সাহস আমার নেই। তারা যা ইচ্ছে বলুক। তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার সেটা।
“-তুমি ইদানিং এত বোকামি করছো যা আমার কল্পনার বাইরে। তুমি চলো আগে বাকিটা পরে দেখা যাবে।
“-না ভাই যাবো না। আমার এমনিতেও ওনার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আমি আর উনার সামনে যাবো না।
“-ঠিকাছে। তুমি আমার বন্ধু হয়ে চলো আমার সাথে। আমি তোমাকে আমার বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
অর্নব পুষ্পকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার হাত ধরলো। কবজি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো সামনের দিকে। পুষ্পকে অনিচ্ছা থাকা সত্তেও যেতে হচ্ছে। কিন্তু ওখানে যাওয়ার মতো ইচ্ছেশক্তি তার নেই।
সমৃদ্ধি প্রার্থকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই সেখানে পৌছালো অর্নব আর পুষ্প। অর্নব প্রার্থকে শুধিয়ে বললো।

“-কি হচ্ছেরে প্রার্থ? ও তোকে আবার কি বলছে?
প্রার্থ ওদের দিকে তাকালো। তার চোখ আটকালো অর্নবের ধরে থাকা পুষ্পর ফর্সা হাতের দিকে। নিজের স্ত্রীকে এভাবে কেউ ছুয়েছে বলে কি তার কোথাও একটা লাগলো? লাগলো বোধহয়। নয়তো ওই হাত থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না কেন ? এত জেদই বা হচ্ছে কেন? মন চাচ্ছে যেখানে অর্নব ধরেছে ওইখানে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলতে। অন্যকেউ কেন ছুবে তাকে? সে কি পারমিশন দিয়েছে কাউকে তার বউকে ছোয়ার ?
অর্নব প্রার্থর চাহনি বুঝতে পেরে হাতটা ছেড়ে দিলো। আবারো বললো প্রার্থর উদ্দেশ্যে।
“- আমি আসার সময় বলেছিলাম যে প্রার্থর সামনে এসব বলিস না তাও মনেহয় বলেছে।
প্রার্থ চোখ সরিয়ে একবার পুষ্পর মুখের দিকে তাকালো। পুষ্পকে দেখে মনেহচ্ছে তার এসব বিষয়ে কোন মন নেই। এখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই।

অর্নব পুষ্প যে হাতটা ধরেছিলো সে হাতটা প্রার্থ শক্ত করে ধরলো। এক টানে নিজের পাশে নিয়ে দাঁড় করালো। পুষ্প অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে চাইলো প্রার্থর মুখের দিকে। সে অর্নবের দিকে তাকিয়ে। এরপর আবার চাইলো প্রার্থর ধরে থাকা হাতের দিকে। যেখানে শক্ত করে ধরে আছে সে। কি হলো বোধগম্য হলো না। প্রার্থ এভাবে ওর হাত কেন ধরলো?
অর্নবও ভালোই অবাক হয়েছে। প্রার্থ যে এভাবে পুষ্পকে টেনে তার পাশে দাঁড় করাবে তা কল্পনাতেও ছিলো না তার।
প্রার্থ ওদের চাহনিনপাত্তা না দিয়ে অর্নবকে বললো।
“-অর্নব। ওকে সরা আমার চোখের সামনে থেকে। নয়তো আমি কি করবো বুঝতেই তো পারছিস।
অর্নব সমৃদ্ধি কে বললো।

“-তোকে আগেও বলেছিলাম ওর সামনে আসিস না। দেখ কিভাবে বউয়ের হাত ধরে আছে। তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে ছ্যা*চ*রা*মি করলে মা’র খেতে সময় লাগবে না। মেয়ে বলে ছেড়ে দিবো না রে। ভাগ এখান থেকে।
এবারে ওদের অপমান বেশ গায়ে লাগলো বোধহয় সমৃদ্ধির। চোখে টলটলে জল নিয়ে বললো।
“-ঠিক হলো না। আমাকে ঠকিয়ে ঠিক করলি না প্রার্থ। ঠিক করলি না।
বলেই একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো তাদের সামনে থেকে। অর্নব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।
“-কি বলে এই মেয়ে। তুই কখন ওকে ঠকালি? আসলে ভুলটা আমাদেরই। আমরা যদি তোকে জোর করে ওই হাফ মেন্টাল টার সাথে প্রেম না করাতাম তাহলেই হতো। এদের বলে বিউটি উইদাউট ব্রেইন ওয়ালা পাবলিক।
প্রার্থ অর্নবের কোন কথার প্রতিক্রিয়া জানালো না। সে পুষ্পকে মুখোমুখি করে বললো।

“-বাসায় চল।
এখনো পুষ্পর হাত ধরে আছে সে। পুষ্প সেই হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো
“-ছাড়ুন আমার হাত। আমি বাসায় যাবো।
“-হ্যাঁ তো তোকে বাসায়ই নিয়ে যাচ্ছি।
“-আমি আমার বাড়ি যাবো।
“-আমার বাড়িও তোর বাড়ি হিসেবেই পরিচিত। এখন চল চুপচাপ। মা যেতে বলেছে তোকে। এজন্যই এখানে এসেছি।
পুষ্প জোরাজুরি করেও হাত ছাড়াতে পারছে না প্রার্থ শক্ত করে ধরে আছে। পুষ্প আবার বললো।
“-ছাড়ুন আপনি। আমি অর্নব ভাইয়ের সাথে এসেছি তার সাথেই যাবো।
অর্নবও বলো।
“-হ্যাঁ ছাড় ছাড়। আমি নিয়ে এসেছি আমিই দিয়ে আসতে পারবো।
প্রার্থ শক্ত চোখে তাকালো তার দিকে। বললো দাতে দাঁত চেপে।
“-গাড়ি এনেছিস? গাড়িতে করে একা চলে যা।
অর্নব বললো।
“-না বাইক এনেছি।

প্রার্থর দাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। চোয়াল ধারালো ব্লে*ডের মতো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তীক্ষ্ণ গলায় বললো।
“-এখন বাইকে করেই চলে যা। ওকে আমি নিয়ে যেতে পারবো।
অর্নব বললো।
“- ঠিকাছে। তোর বউ তুই নিয়ে যা। প্রিন্সেস তুমি ওর সাথে চলে যাও কেমন। আমি আসছি।
অর্নব আর দাঁড়ালো না। চলে গেলো ওদের একা রেখে। এমনিতেও তার কাজ এখন এই পর্যন্তই ছিলো বাকিটা ওরাই বুঝে নিবে। তার উপর এখানে থাকতেও কষ্ট হচ্ছিলো। মানুষ যতই ভালো হোক এক সময় যাকে মনে রেখেছিলো তাকে নিজের হাতে অন্যের করে দেওয়াটা বেদনাদায়ক। যেই বেদনা অর্নব খুব করে টের পায়। যদি এক পার্সেন্টও চান্স থাকতো পুষ্পকে নিজের করার তাহলে এতদিনে অনেক চেষ্টা করতো হয়তো। কিন্তু এখানে চান্স বলতে কোন শব্দই আসে না। কারন সে জানে পুষ্প কখনো এটা মানবে না। আর অর্নবও চায় না ওর আর প্রার্থর মাঝের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আর পুষ্পর সাথে বন্ধুত্ব আছে এটাই অনেক। ওরা দুজন খুশিতে থাকলেই অর্নব খুশি। সবার ভাগ্যে তো আর সব রকমের সুখ থাকেনা। সবাই সুখী হলে দুঃখের মর্ম কেউ বুঝবে না।

অর্নব চলে যেতেই প্রার্থ পুষ্পর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো। পুষ্প নিজের কথায় অনড়। সে কিছুতেই প্রার্থর সাথে যাবে না। অপমানের একটা কথাও ভুলেনি। প্রতিটা কথায়ই প্রতিনিয়ত গায়ে কাটা দেয়। এমন একটা মানুষের সাথে কখনোই যাবে না সে। তাই বারবার হাত মুচড়ে ছুটতে চাইছে প্রার্থর হাত থেকে। কিন্তু পারছে না। প্রার্থ ওকে টানতে টানতে গাড়ির সামনে এনে দাঁড়িয়ে গেলো। ধমকে বলে উঠলো।
“-থাম! বাইম মাছের মতো এতো ছটফট করছিস কেন? গাড়িতে উঠ।
“-বললাম না আমি যাবো না আপনার সাথে। আমি বাসায় গিয়ে বড় আম্মুর সাথে কথা বলে নেবো। আপনি যান এখান থেকে। আমি যাবো না আপনার সাথে।
প্রার্থর রাগ হলো ভীষন। দিনে দুপুরে রাস্তার মাঝে তাকে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো। পুষ্পর দুই বাহু শক্ত করে ধরে চেপে আছে গাড়ির সাথে। চোখ নিমিষেই লাল হয়ে উঠেছে। জবা লাল চোখে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
“-আমার সাথে যাবি না তো কার সাথে যাবি? অর্নবের সাথে? ও কি হয় তোর? ভুলে যাস না ও আমার বন্ধু। ওর সাথে তোর ছুঁকছুঁক ভাব দেখলে পা কেটে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
পুষ্প প্রার্থর থেকে ছুটার চেষ্টা করে বললো।

“- আপনার মাইন্ড একইরকম আছে। নিচু মন মানসিকতা আপনার। অর্নব ভাই আমার বড় ভাইয়ের মতো। তাকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করি একজন বন্ধুর মতো মনে করি। আপনি তার সাথে আমাকে জুরে দিলেন?
অর্নব ওর ভাইয়ের মতো শুনে একটু শিথিল হলো প্রার্থ। পুষ্পর হাত ছেড়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। বললো।
“-হ্যাঁ আমি নিচু মাইন্ডের। আমাকে ভালো হতে হবে না। তুই ভালো থাকলেই চলবে। চুপচাপ ভালো মানুষের মতো গাড়িতে উঠ। তোর জন্য যদি মায়ের কিছু হয় পুষ্প আই সোয়্যার আাই উইল…
“-কিচ্ছু হবে না বড়আম্মুর। আমি যাবো তবে আমাকে আপনারা কেউ রাখতে পারবেন না ওখানে। আমি থাকবো না আপনার নামের বাড়িতে। শুধু দেখা করেই চলে আসবো।

কঠোরতার বান ছুড়ে গাড়িতে উঠে বসলো সে। আর কোন কথা ব্যায় করতে দিলো না প্রার্থকে। প্রার্থ ঠাস করলে গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে দিলো। গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো। গাড়ি চালু করলো ব্যাস্ততার সাথে।
চলতে চলতে আস্তে আস্তে রাগ কমে আসলো প্রার্থর। নরম হয়ে আসলো সে। এইযে পুষ্প তার প্রতিটা কথার প্রতিবাদ করছে, প্রার্থর থেকে দূরে যেতে চাইছে এটাই তার সহ্য হচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে কোথাও। সেটা কি এই মেয়ে জানে? সে তো শুধু দেখছে প্রার্থর উপরের দিকটা। ভেতরের দিকটা একটু ছেঁকে দেখেছে? ওখানে যে উথাল-পাতাল ঝড় চলছে সেটা কি ও জানে? জানে না। কি করে জানবে?যেখানে প্রার্থ নিজেই তার অনুভুতি স্বিকার করতে নারাজ সেখানে পুষ্পর এ সম্পর্কে জানা তো বিলাসিতা।

প্রার্থ পুষ্পর দিকে তাকালো। সে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। প্রার্থ গাড়ির গতি কমিয়ে আনলো। গাড়ির বক্স থেকে এক প্যাকেট সিগারেট আর ম্যাচ বের করে আনলো। গাড়ি চালানো অবস্থায়ই পাকা হাতে সিগারেটটা ধরালো। ম্যাচটা আবার জায়গায় রেখে দিলো। একটানে অনেকটা ধোয়া ভেতরে নিয়ে আবার ছেড়ে দিলো। বদ্ধ গাড়ির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গেলো তা। সিগারেটের ধোয়ায় পুষ্পর কাশি উঠে গেছে। সে নাকে ওরনা চেপে তাকালো প্রার্থর দিকে। চোখ মুখ কুচকে তাকালো ঠিকই কিন্তু বললো না কিছু।
পুষ্প কাশছে বলে প্রার্থ গাড়ির গতি আরেকটু কমিয়ে আনলো। ঝুকে গিয়ে পুষ্পর জানালার কাচ নামিয়ে দিতে গেলো। ঝুকে এদিকটায় আসায় একেবারে পুষ্পর গায়ের সাথে মিশে যাওয়ার মতো অবস্থা। সে গাড়ির সিটে আরেকটু চেপে গেলো যাতে ওর শরীরের সাথে কোনপ্রকার ছোঁয়া না লাগে।
প্রার্থ গাড়ির কাচটা নামিয়ে দিয়ে আবারও সোজা হয়ে বসলো। নিজের পাশের কাচও নামিয়ে দিলো।
দুজনেই নিশ্চুপ। গাড়ির ভেতর শুধু সিগারেটের সাদা ধোয়া উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রার্থ হুট করে বলে উঠলো।

“-আজ শাড়ী কেন পরিস নি?
পুষ্প বোধহয় এমন একটা প্রশ্ন কখনো আশা করেনি। তাও এত শান্ত কন্ঠে। একটু আগেই তো কত রুড বিহেভ করছিলো। এখন এরকম প্রশ্নে ক্ষানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তবুও অপ্রস্তুত ভাবটাকে দামিয়ে রেখে বললো।
“-ইচ্ছে হয়নি তাই।
প্রার্থ একই স্বরে বললো।
“-কেন?
পুষ্প বোধহয় বিরক্ত হলো। চোখ মুখ কুচকে তাকালো প্রার্থর দিকে। প্রার্থর সমস্ত মনোযোগ ড্রাইভিংয়ের উপর। পুষ্প বিরক্তি নিয়ে বললো।
“-আপনি এত প্রশ্ন করছেন কেন? আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বধ্য নই।
প্রার্থ পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো।
“-অবশ্যই বাধ্য। আমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য তুই। এখন যা যা প্রশ্ন করবো সুন্দর মতো সবগুলোর উত্তর দিবি।
অর্নবের বাইকে করে কেন এসেছিস?
পুষ্প অবাক হয়। হঠাৎ এরকম ধরনের প্রশ্ন কেন করছে। অর্নব ভাইকে নিয়ে উনার এত সমস্যা কিসের? পুষ্প ভ্রু কুচকে বললো।

“-আশ্চর্য আপনি অর্নব ভাইকে নিয়ে কেন পরে আছেন?
“-তোকে যেটা বলেছি সেটার উত্তর দে। তুই অর্নবের বাইকে এসেছিস?
“-না। অর্নব ভাই তো আমার আগেই ভার্সিটিতে এসেছে। আমি কি করে তার সাথে আসবো?
কথাটা শুনে প্রার্থ একটু শান্তি অনুভব করলো হয়তো। কিন্তু এই অনুভুতি তার ধরার বাইরে। সে আবারও প্রশ্ন করলো।
“-অর্নবকে নিয়েই কেন ভার্সিটি এলি? প্রিয়ুকে নিয়ে আসা যেতো না?
“-আমি বুঝতেছিনা আপনি অর্নব ভাইতে কেন আটকে আছেন।
“-কারন আছে তাই আটকে আছি। কারণ ছাড়াতো আর আটকাইনি।
“-তো সেই কারনটা কি?
প্রার্থ কি বলবে এখন? কি কারনে এত প্রশ্ন করছে ওকে নিয়ে। কারণ তো অবশ্যই আছে কিন্তু সেই কারনটা কি? বুকের উথাল-পাতাল ঢেউ? এখন এটা কি আর পুষ্পকে বলা যাবে? কখনোই না।
প্রার্থ গম্ভীর হয়ে বললো।
“-কিছুনা।

পুষ্পও আর ঘাটতে গেলো না। দুজন আবার মৌনতা পালন করতে ব্যাস্ত হলো। কেউ কিছু বললো না। কিন্তু পুষ্প মনে মনে ভাবছে। হঠাৎ হলো টা কি? এত শান্ত বিহেভ করছে যে। সবসময় খারাপ ব্যাবহার করা মানুষজন যখন হুট করে ভালো করে কথা বলে তখন সেটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। মনে হয় কোন ঘাপলা নিশ্চয়ই আছে। এতটা অসভ্য মানুষ তো আর এমনি এমনি ভালোভাবে কথা বলবে না। কারন নিশ্চয়ই আছে। ওইদিন যে মানুষটা এতটা বাজেভাবে অপমান করলো এখন তাকে দেখে মনে হচ্ছে না এইটাই সেই মানুষ। গিরগিটি যেমন মিনিটে মিনিটে রূপ বদলায় প্রার্থর দশাও মনেহয় তাই হয়েছে।
কিছুটা সময় আবার একভাবে কাটলো কোন কথা বার্তা ছাড়া। হঠাৎ পুষ্পর মনে কিছু প্রশ্নরা হাতছানি দিয়ে উঠলো। প্রশ্ন দামিয়ে রাখতে না পেরে বললো।

“-একটা কথা বলি?
প্রার্থ সামনে মনোযোগ রেখেই বললো।
“-হুম।
“-আপনি এখনো সমৃদ্ধি কে ভালোবাসেন তাই না?
প্রার্থ তাকালো পুষ্পর চোখে। পুষ্পও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। চোখাচোখি হলো দুজনের। প্রার্থ ওর চোখে তাকিয়েই ভাবলো, মানুষ বোকা হতে পারে কিন্তু এতটা বোকা? এটা মানা যায় না।
পরপর গলা ঝেড়ে বললো।
“-তোর তাই মনেহয়?

“-আমার মনে হওয়া দিয়ে কি আসে যায় বলুন? আমার তো তাই মনেহয়। এছাড়া এর আগেও আপনি বলেছিলেন আপনি বাসেন। কিন্তু আজ আপনি ওনার সাথে এত বাজে ব্যাবহার করলেন তাই বললাম।
“-মানুষ মুখে যা বলে তাই কি সবসময় সত্যি হয়?
“-সেটা সেই মানুষটার ব্যাপার। সে মিথ্যে বলবে না সত্যিই সেটা সেই জানে। আমাদের সে যা বলবে আমরা তো তাই বিশ্বাস করবো।
“-শুনেছিলাম কেউ কাউকে ভালোবাসলে তার মনের সব খবর সে আপনাআপনিই টের পেয়ে যায়। তাকে আলাদা করে কিছু বলতে হয় না।
“-কথা সরাসরি বললে বলবেন। নয়তো বলে দিবেন বলতে ইচ্ছুক নন। প্যাচ লাগাবেন না কথায়। আপনাকে আর বলতে হবে না যা বোঝার বুঝে নিয়েছি।
প্রার্থ কাধ উঁচু করে বললো।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৭

“-ঠিকাছে। বুঝলে তো বুঝলিই।
এরপর আবার সেই নিস্তব্ধতা। কোন কথা ছাড়া চললো বাকিটা পথ। এরা সব কথা নিজেদের মনেই চেপে রাখলে মনের কথা একে অপরে বুঝবে কি করে কে জানে!

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৮