এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৮
কাফাতুন নেছা কবিতা
” কী কাজ আব্বা?”
তানভীর সরকার তামিমকে একটি কাগজ বের করে দেয়!
” কিন্তু আব্বা?”
” কোনো কিন্তু নয় বাবা জান! এখন সুবহা মায়ের ভালোর কথা চিন্তা করতে হবে! কীভাবে তার উন্নতি হবে সেটার চিন্তা করতে হবে! আর বাকি রইলো শত্রুরা! আপনি বোধ হয় ভুলে যাচ্ছেন, আমি সরকার ভাই! যার সামনে কারো পাওয়ার নাই! ”
তামিম তার আব্বাজানের থেকে কাগজটি নিয়ে নেয়! আর তার দিকে তাকায়!
” আব্বাজান, দিনশেষে এটাই বুঝলাম, বাপ বাপই হয়! ”
তানভীর সরকার মুচকি হেসে তামিমের পিঠে হালকা আদুরে হাত রেখে চলে যায়! আর তামিম তার আব্বার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে!
তামিম ছোটোবেলা থেকে দেখতো মানুষ জন তার আব্বাজানকে ” সরকার ভাই! ” বলে ডাকছে! কিন্তু এ নামের অর্থ আর তার ক্ষমতা সম্পর্কে তামিম যুবক বয়সে এসে জানতে পারে! সরকার ভাই কোনো সাধারণ নাম নয়!
তামিম সরকার যতটা পাওয়ারফুল তার থেকে ও তিনগুন পাওয়ার ছিলো এই নামটার! কিন্তু আয়েশা সরকারের জন্য আজকে তানভীর সরকার একজন নিরীহ মানুষে পরিনত হয়েছে! ভালোবাসা এমন একটা জিনিস পাথরে ও ফুল ফোটাতে পারে! একজন খারাপ মানুষকে ও ভালো মানুষে পরিনত করতে পারে! যেমনটা হয়েছিলো তানভীর সরকারের সাথে!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত তখন ৯ টা ৪৫ মিনিট…!
সুবহা তার কক্ষে বসে আছে! তামিম সেই যে বেরিয়েছে ফেরার কোনো নামই নেই! কথা ছিলো একসাথে ডিনার করবে, তামিম নিজের হাতে খাওয়াবে সুবহাকে! কিন্তু আজকে পুরোপুরি ফাঁকি দিলো তামিম সুবহাকে!
প্রচন্ড মুখ গুমরো করে বসে থাকে সুবহা! হঠাৎ দরজায় পিন দেওয়ার শব্দ আসতেই আরো মুড নিয়ে বসে থাকে সে! আজকে আর শয়তান সরকারের সাথে কোনো কথা নেই!
তামিম রুমে ঢুকেই বুঝতে পারে তার পরী পেত্নি রুপ ধারন করে বসে আছে! রেগে যে আছে তার গাল লাল বর্ন ধারণ করা মুখটি দেখলেই বোঝা যায়!
তামিম এসে সুবার মুখ বরাবর দাড়ায়, আর একটা কাগজ বের করে দেয় সুবহার সামনে! সুবহা একটু মুড নিয়ে বসে থাকলে ও, কাগজটি নিয়ে নেই! কৌতুহল তো আছেই! কাগজটি নেওয়ার পর সুবহার মুখের রং পাল্টে যায়! সে অসহায় নয়নে তাকায় তামিমের দিকে! আর শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করে..!
” এটা কী তামিম? ”
” ফর্ম! জ্বলদি ফিলাপ কর!”
সুবহা বেচারির মতো করে তাকায় তামিমের দিকে! এতো কিছুর মধ্যে তার নিজের ক্লাস রোল টাই মনে নেই সেখানে পরীক্ষা? সুবহা তো ডাহা ফেল করবে! আর সবাই বলবে তামিম সরকারের বউ ফেলুপার্টি! ইজ্জত বলতে তো কিছু থাকবে না!
” আমি তো অসুস্থ তামিম, ব্রেনে সমস্যা! এখন কী আর পড়াশোনা হবে?”
তামিম সুবহার গাল টিপে বলে…
” ব্রেনের সাথে পড়ার সম্পর্ক কী? ”
” মানে কী ভাই? পড়াশোনা তো ব্রেন দিয়েই হয়!”
তামিম কিছু না বলে সুবহার দিকে তাকিয়ে থাকে! সুবহা ও বুঝতে পারে ডাল গলবে না! সে দাড়িয়ে তামিমকে বিছানায় বসায়, আর নিজে তামিমের কোলে বসে তার গলায় জড়িয়ে ধরে!
” মাই পুকি হাসবেন্ড!! আপনার কী ভালো লাগবে মানুষ জন বলবে তামিম সরকারের বউ ফেল করেছে? লাগবে না তো! আমি পরের বছর পরীক্ষা দেয়?”
তামিম সুবহার কোমর জাপ্টে ধরে বলে…!
” জীবনে অনেক স্টুডেন্ট দেখেছি, কিন্তু তোর মতো ফাঁকিবাজ ছাত্রী একটা ও দেখি নাই! ”
সুবহা রেগে গিয়ে, নিজের রাগটা সংযম করে! এখন রাগলে হবে না! তামিমকে ফুসলিয়ে ফুসলিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে হবে!
” আপনি কী চান আমি ব্রেন স্টোক করি পড়তে পড়তে?”
” সিরিয়াল একটু কমাইয়ে দেখ বোন! এসব মিষ্টি কথায় কাজ হবে না! জ্বলদি সাইন কর!”
সুবহা বুঝতে পারে এভাবে কোনো কাজ হবে না!
” হাতে শক্তি নেই তামিম! খিদে পেয়েছে ভিষণ! ”
তামিম সুবহার গোলগোল কথার অর্থ বুঝতে পারে! কিন্তু সময় তো নেই! ফর্ম ফিলাপ তো করতেই হবে! সুবহার ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না! অন্য দিকে সুবহা ও মনে মনে ঠিক করে যে করেই হোক তামিমকে আটকাতে হবে! এই এক মাস তেরো দিনে কী পড়বে সে??
তামিম চুপচাপ সুবহাকে নিয়ে নিচে চলে যায়! ডিনার শেষে অবশ্যই ফর্ম ফিলাপ করাতে হবে! এখন সুবহার মন যতটা সম্ভব অন্য দিকে ঘুরাতে হবে! বাসায় থাকলে উল্টো পাল্টা চিন্তা করে নিজের ক্ষতি করবে সে! তাই তানভীর সরকার ডাক্তারের সাথে ভালোমতো কনসাল করেই তামিমকে বলে সুবহাকে পড়াশোনার জগতে ঢোকাতে!
কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা! কিছু একটার মধ্যে থাকলে সুবহা উল্টো পাল্টা কিছু চিন্তা করবে না! আর ভালো ও থাকবে!
তামিম সুবহার হাত ধরে হল রুমে চলে আসে! সোজা ডিনার টেবিলে! সেখানে, তার পঞ্চ পান্ডব আগে থেকেই বসে ছিলো, আয়েশা সরকার সার্ভেন্ট দের দিয়ে সব করাছে, আর তানভীর সরকার সবার সামনের চেয়ারে বসা!
সুবহা এসে চুপচাপ বসে থাকে!
” ভাবি-মা আপনের মুখ এতো হুকনা ক্যালা?”
সুবহা বেচারির মতো মুখ করে সাকিবের দিকে তাকায়!সুবহা কিছু বলতে যাবে তখনই তামিম বলে বসে!
” ফাঁকি বাজ ছাত্রীর মুখ এমনই হয় সাকিব!”
তামিমের কথা শুনে উপস্থিত সকলে হেঁসে উঠে! তানভীর সরকার ও! আর সুবহা লজ্জা পায় ভিষণ! কিন্তু মনে মনে ঠিক করে তামিমকে এর উচিত শিক্ষা দিবে সে!
” পড়াশোনা তো করতেই হইবো ভাবি-মা! আমাগো সরকার বাড়িতে সবাই উচ্চ শিক্ষিত! ভাই বিদেশ থেকে পড়াশোনা করছে, বড় বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে! বড় মা ও! ”
মাহিরের কথা শুনে সুবহা একটু চিন্তায় পড়ে যায়! সবাই এতো উচ্চ শিক্ষিত, সে যদি ফেল করে আর মুখ দেখাতে পারবে না! পরক্ষণেই সুবহা পঞ্চ পান্ডবের দিকে তাকায়! সুবহার জানা মতে এরা তো সবাই ইন্টার অব্দি পড়েছে ঠিকই, কিন্তু পরীক্ষা তো কেউ দেয়নি!।
” সবাই উচ্চ শিক্ষিত?”
” জ্বি ভাবি-মা! ”
পঞ্চ পান্ডব এক সাথে বলে উঠে জ্বি! সুবহার মাথায় ও দুষ্টু বুদ্ধি বাসা বাঁধে! সে তামিমের দিকে তাকায়!
” সবাই উচ্চ শিক্ষিত তাহলে আমার ছেলেদের বেলায় উল্টো নিয়ম কেন? তাদের ও তো পড়ার অধিকার রয়েছে! ”
সুবহার কথা শুনে পঞ্চ পান্ডব খাওয়া বন্ধ করে তার দিকে ভোম ভোলার মতো তাকায়! যেনো তাদের গলায় খাবার আঁটকে যায়!
তামিম আর তানভীর সরকার ও বিষয়টি আমলে নেই! তামিম নিজের ফোন নিয়ে কিছু একটা করে, আর আয়েশা সরকার সবাইকে চুপচাপ খেতে বলে! কিন্তু সুবহা মনে মনে খুব খুশি হয়! ফাঁসলে সে একা কেন?
তামিম সবাইকে খাওয়া শেষ করে হল রুমে অপেক্ষা করতে বলে কোথাও বেরিয়ে পরে! তানভীর সরকার তার কক্ষে চলে যায়! নিচে সুবহা আর তামিমের পঞ্চ পান্ডব বসে থাকে! সকলে তখন ও বুঝেনি তামিম কেন তাদের ছয় জনকে হল রুমে থাকতে বলেছে?
কিছু ক্ষণ পর তামিম আর একজন হল রুমে আসতে থাকে! সাথে কোপা শামসু ও!
সুবহা সহ বাকি পাঁচ জন তামিম আসতেই দাড়িয়ে পড়ে! তামিম এসেই শামসুকে ইশারা! শামসু তামিমের পঞ্চ পান্ডবের হাতে একটি একটি করে কাগজ ধরিয়ে দেয়! কাগজটি হাতে পাওয়ার পর সকলে বেচারার মতো মুখ করে তামিমের দিকে তাকায়!
” আমার জীবন্ত কঙ্কাল বউ জীবনের প্রথম ভালো আইডিয়া দিছে!”
সুবহা তখন ও বুঝতে পারে না তামিম কীসের কথা বলছে!
” এইবার তোরা ছয় জন একসাথে পরীক্ষা দিবি!”
সুবহা পঞ্চ পান্ডবের দিকে তাকায়! আর পঞ্চ পান্ডব সুবহার দিকে!
” মা হয়ে ছেলেদের এইভাবে বাঁশ দিলেন ভাবি-মা! ”
মানিকের কথা শুনে সুবহা তাদের সামনে গিয়ে দাড়ায়!
” আরেহ, আমরা আমরাই তো…! ”
” আরো আম্মা আম্মা বলে কোলে উঠ!”
তামিম তার পঞ্চ পান্ডবের সাথে তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলে!
” কী-রে সাকিব আজকে গান গাইবি না? সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে! জ্বলদি গা!”
তামিম প্রত্যেকের উপরে খুব পরিহাস করে! সুইজারল্যান্ডে তারা তামিমের সাথে যা করেছিলো আজকে তার বদলা নিলো তামিম!
” ভাই মা_পোলা এক লোগে এইচএসসি দিবো, জনগন কী মানবো বিষয়টা?”
” না মানার কী আছে?”
” ভাই _মা পোলা এক ক্লাসে বিষয়টা কেমন না!”
তামিম রফিকের কাছে গিয়ে মাথায় গাট্টি মারে!
” আরে ব্যাটা তোরা তো ইতিহাস তৈরি করবি! তোগো নিয়া ব্রেকিং নিউজ হইবো, ” মা _পোলা একসাথে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে! ”
তামিম শামসুকে ইশারা করে! আর শামসু তাদের জোর করে সাইন করায়! পুরো কাগজ কমল্পিট ছিলো, শুধু স্টুডেন্ট সাইন ছাড়া! সকলেই সাইন করে সুবহা ছাড়া!
তামিম পাচ জনের গায়ের মাপ নিতে বলে! সকালের মধ্যে তাদের কলেজ ড্রেস চাই!
আর অন্য দিকে সুবহাকে নিয়ে রুমে চলে যায়!
রুমে এসে তামিম কাগজ সুবহার সামনে ধরে!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৭
” জ্বলদি!”
” আপনি এতো খারাপ লোক শয়তান সরকার! ”
” হা’রামিতে পিএইচডি করা! I know! সাইন কর!”
তামিম রীতিমতো জোড় করে সুবহাকে দিয়ে সাইন করায়!
” তামিম সরকার! ইতিহাস স্বাক্ষী থাকবে! জোর করে অসুস্থ বউকে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ায়ছেন!”
” অসুস্থ বউয়ের সাথে ১৯/২০ করতে দু’বার ও ভাবি নাই, আর এটা তো পরীক্ষা বেইবি!”
” ধর্মে সইবে তামিম সরকার! ”
” আবার সিরিয়াল দেখছে!”