গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৬

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৬
লেখনীতে জেনিফা চৌধুরী

এক পায়ে ভর করে হাতে বই নিয়ে দাড়িয়ে আছে ফাইজা। ওর সামনেই সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে এক ধ্যানে মোবাইলে গেম’স খেলছে ফারদিন। ফাইজা বার বার পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিচ্ছে। ফারদিন গেম’সের মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখছে ফাইজা’কে। অদ্ভুত সব শাস্তি দেয় ফারদিন। আজ পড়া না পা’রার এমন শাস্তি দিয়েছে। কালকে’ই তো কত কেয়ার দেখাচ্ছিলো আর আজ আবার এমন খা”টা’শের মতো বিহেভিয়ার করছে। ভাবতেই ফাইজা’র রাগে শরীর জ্বলে উঠলো। ফাইজা মনে মনে ফারদিনের গুষ্টি উদ্ধার করছে। ওর চেহারা দেখে ফারদিন মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। ফাইজা এইবার অসহায় ফেস করে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে নরম স্বরে বলে উঠলো…..

–স্যার কাল থেকে পাক্কা সব পড়ে আসব…..
ফারদিন যেনো শুনেও শুনলো না ওর কথা। তা দেখে ফাইজা রাগে দাতে দাত চেপে বিড়বিড় করতে লাগলো…..
–এহহ এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো কোন রাজ্যের রাজপুত্র। মন চাচ্ছে নাক বরাবর একটা ঘু’ষি মে-রে নাকের বারান্দা ছুটিয়ে ফেলি। শা’লা খা’রুশ…….
ফারদিন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে দেখে ফাইজা বিড়বিড় করছে। ওর বুঝতে বাকি রইলো না ফাইজা ওর গুষ্টি উদ্ধার করছে। ফারদিন আচমকা ধমক দিয়ে বলে উঠলো…..
–এই মেয়ে কি বিড়বিড় করছো?
ফারদিনের ধমক শুনে ফাইজা ভয়ে লাফিয়ে উঠতেই নিজেই নিজের প্লাজুর সাথে পা আটকে ধ’পাস করে পড়ে গেলো। এইবার আর ফারদিন হাসি কন্ট্রোল করতে পারলো না। রুম কাঁপিয়ে হাহা করে হেসে উঠলো। ফাইজা নিচে পড়ে হাবলার মতো তাঁকিয়ে ফারদিনের হাসি দেখছে। কোথায় ও পড়ে গেছে ওকে তুলবে। তা না করে সে হেসে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। ফাইজা রাগী চাহনি দিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে ফারদিনের হাসি থেমে গেলো। মুহূর্তেই চোখে মুখে একটা রাগী ভাব এনে বলে উঠলো…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—এক্ষুনি থা’প্প’ড় মে-রে গালের চামড়া তুলে দিব। সব পড়া ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা। কি ভেবেছো? এমন করলে তোমার শাস্তি কমে যাবে। নো ওয়ে, বরং শাস্তি বেড়ে যাবে। এখন তুমি এক পা তুলে কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে……..
ফারদিনের কথা শুনে ফাইজার কেঁদে দেওয়ার উপক্রম। এই ছেলে’টা কেনো ওর সাথে এমন করে। হাসলে ছেলে’টাকে কত সুন্দর লাগে। অথচ সব সময় মুখ গম্ভীর করে রাখবে। উঠে দাড়িয়ে ফাইজা আমতা আমতা করে বলে উঠলো……
—স্যার পেটে খুব ব্যাথা এভাবে দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে….

ফাইজার কথা শুনে ফারদিনের কালকের কথা মনে পড়ে গেলো। ফারদিন হুট করে দাড়িয়ে গেলো। চোখ দুটো সাথে সাথে রক্তিম বর্ণ ধারন করতে লাগলো। হাত দুটো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। হঠাৎ ফারদিনের বদলে যাওয়া রুপ’টা দেখে ফাইজা ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। ও ভাবছে ফারদিন এক্ষুনি ও’কে এসে থা’প্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবে। ভয়ে ফাইজা দুই গালে হাত দিয়ে কয়েক-পা পিছিয়ে গেলো। ফারদিন ফাইজার ভয়ার্ত চেহারা দেখে। মুষ্টিবদ্ধ হাত’টা ছেড়ে দিয়ে ঘাড়ের দুই পাশে হাত রেখে নিজেকে শান্ত করলো। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে। বিড়বিড় করে বললো…..
–ড্যাম ইট। এতটা স্টুপিডের মতো কাজ কি করে করতে পারলাম আমি। মেয়ে’টা অসুস্থ জানা স্বত্তেও কি করে এত ক্ষন এইভাবে দাড় করিয়ে রাখতে পারলাম। ওহ গড কি করে ভুলে গেলাম এই কথা’টা রাবিশ…..
নিজের উপরেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ফাইজা এখনো গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারদিন এগিয়ে ফাইজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফাইজা চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে উঠলো…..

–স্যারি, স্যারি, স্যার। আর হবে না স্যার প্লিজ মা’র’বে’ন না। আমার ভুল হয়ে গেছে….
গালে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই ফাইজা চোখ খুলতেই অবাকের শেষ সীমানায়। ফারদিন ওর দিকে এক দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের চোখে আজ কি যেনো আছে। কেমন একটা মাতাল চাহনী। এই দৃষ্টির অর্থ ফাইজা বুঝতে পারছে না। ফারদিনের স্পর্শে ফাইজা জমে গেলো। নড়ার শক্তি পাচ্ছেনা আজ। হৃদযন্ত্র’টা এত বেশি লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বের হয়ে যাবে। ফাইজা কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শীতল হাত দুটো ফাইজার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ফাইজা তাল সামলাতে না পেরে ফারদিনের বুকের সাথে বা’ড়ি খেলো। ফারদিনের কান্ডে অটোমেটিক কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো ওর। ফাইজা ফারদিনের পেশীবহুল বাহু খামচে ধরে আছে। ফারদিন কেনো এমন করছে? ফারদিনের দিকে প্রশ্ন সূচক চাহনী দিতেই ফাইজা’কে আরেক দফা অবাক করে ফাইজার কপালে পরম আবেশে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।

ফাইজা এইবার চারশো ভোল্টের শক খেয়ে চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের দিকে। ফাইজার ওষ্ঠ জোড়া তির তির করে কাঁপছে যা ফারদিন’কে আরো কাছে টানছে। ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে আসচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে৷ ফারদিনে কেমন যেনো ঘোরে চলে গেলো। ফাইজার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখার জন্য একদম কাছে যেতেই মুহূর্তে ওর সব এলোমেলো হয়ে গেলো। ফাইজা’কে ধাক্কা মে/রে দূরে সরিয়ে দিলো। আকস্মিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে ফাইজা ছিটকে টেবিলের কর্নারে বাড়ি খেতেই মৃদ স্বরে ব্যাথায় “আহঃ” বলে উঠলো। ফারদিন আর এক মিনিট ও না দাড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো। ফাইজা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। কি হয়ে গেলো ওর সাথে? ফারদিন কেনো এমন আচরণ করলো? আর ফারদিনের ছোয়া কেনো এত চেনা লাগছে ওর? ফাইজা ধপ করে বিছানায়া বসে পড়লো। ওর মাথা চড়কির মতো ঘুরছে। কাল রাতে ফারদিনের গাড়ি দেখে ফাইজা কিছুক্ষন বেলকনি’তে দাড়িয়ে থাকতেই দেখলো। ফারদিন ওদের বিল্ডিং থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তখন ফাইজা ভেবে নিয়েছিলো ও যা সব ভাবছিলো সব ভুল। ছায়া মানব’টি ফারদিন না। এমন কি কাল রাতে বেলকনি’র দরজা ইচ্ছেকৃত ভাবে খোলা রেখেছিলো ফাইজা। কিন্তু কাল রাতে কেউ ওর রুমে প্রবেশ করেনি। আর আজ ফারদিনের এমন আচরণ আবারো ভাবাচ্ছে ওকে??

ফারদিন বাড়ি এসেই রুমের সমস্ত কিছু ভাংচুর করছে। সায়মা খানম ফারদিন’কে কিছুতেই থামাতে পারছেনা। হাতের সামনে যা কিছু ছিলো ইতোমধ্যে সব ভাঙা শেষ। এক পর্যায় হাঁপিয়ে উঠে ক্লান্ত শরীরে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। দুই হাতে চুল গুলোকে শক্ত করে খামচে ধরলো। সায়মা খানম কাঁপা কাঁপা হাতে ফারদিনের কাঁধে হাত রাখতেই ফারদিন আচমকা সায়মা খানম’কে ঝাপটে ধরলো। সায়মা খানম আস্তে করে ফারদিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো…..
–কি হয়েছে নানু ভাই? কেনো এইভাবে নিজেকে আ’ঘাত করছো? কি প্রবলেম দীদা’কে খুলে বলো?
সায়মা খানমের কথা শুনে ফারদিন এলোমেলোহীন ভাবে বলতে লাগলো…..

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৫

–দীদা আমি কেনো ওর কাছে গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি’না। কেনো আমি নিজের অতীত ভুলতে পারছি’না। কেনো আমার মা’কে ওরা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো? শুধু মাত্র একজন নারীর জন্য আমি আজো কোনো নারী’কে মন থেকে মেনে নিতে পারছি’না। নিজের বোনের স্বামীর সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের দোষ ঢাকতে ওরা আমার মা’কে আমার থেকে কেড়ে নিলো। এত’টা জঘন্য একজন মেয়ে কি করে হতে পারে দীদা? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দীদা। খুব কষ্ট হচ্ছে…..
ফারদিনের কষ্টের পরিমান’টা সায়মা খানম বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। সায়মা খানমের চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ছে। ছেলে’টা যে ভালো নেই। তা সে বেশ বুঝতে পারছে। কবে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে ছেলেটা…………

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৭