তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৬
নওরিন মুনতাহা হিয়া
মালদ্বীপে অবস্থান করছে এখন ইনায়া আর অরণ্য।সকালের ফ্লাইটে এসেছে তারা, সমুদ্রের কাছে এক হোটেলের রুম বুক করা হয়েছে। আজ এতোদিন পর অরণ্য সাথে কোথাও ঘুরতে এসে ইনায়া অনেক খুশি, কিন্তু অরণ্যর মনে হাজারো ভয়ের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। ইনায়ার অগোচরে রামিম সহ তার বর্ডিগাড ও এসেছে মালদ্বীপে, তারা যেই রিসোর্টে থাকবে তার ঠিকই পাশের প্রায় সব কয়টা রুম বুক করা হয়েছে। যদি ইনায়ার সন্দেহ হয়, এরজন্য খুব সাধারণ ভাবে সব লোক এসেছে। তবুও অরণ্যর মনের ভয় দূর হচ্ছে না, হৃদয়ের মাঝে এক অশান্ত ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইনায়ার খুশির জন্য, তার মুখে সবসময় হাসি বজায় রাখে।
°★ সম্পূর্ণ রিসোর্ট বুক করে অরণ্য, যার আশেপাশের রুমে তার লোক রয়েছে। রিসোর্টের রুমে যায় অরণ্য আর ইনায়া, এতোসময় জার্রি করে ভীষণ টার্য়াড সে। ভোরে মালদ্বীপে রওনা দিতো হবে বলে ঘুম ভালো করে হয় নাই, কিন্তু অরণ্য একটু ও টার্য়াড না বরং তার শরীর এখন প্রচুর এনার্জি রয়েছে রোমান্স করার জন্য। ফ্রেশ হওয়ার জন্য যখন ইনায়া ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়, তখন অরণ্য তার হাত শক্ত করে ধরে। ভ্রু কুঁচকে ইনায়া তাকায় অরণ্য দিকে, কিন্তু অরণ্য ইনায়ার এমন তাকানো সম্পূর্ণ ইগনোর করে তাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ইনায়া হয়তো বুঝতে পারে অরণ্য এখন কি চাই, যার জন্য সে বলে ———
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
_____ “- কি করছেন অরণ্য? এতোখন জার্নি করে এসে আমি প্রচুর টার্য়াড। এখন ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হব, এরপর ঘুমাবো ______.
°★ ইনায়ার কণ্ঠে ঘুমাবো কথাটা শুনে অরণ্যর ভীষণ রাগ হয়। হানিমুনে এসেছে কি ঘুমানোর জন্য, প্রায় দুইবছর পর বউয়ের সাথে একান্ত সময় কাটাতে এসেছে মালদ্বীপে। এখানে ও তার বউ দূরে দূরে থাকতে চাই তার থেকে, কত বড়ো সাহস। কিন্তু আজ ঝড়,তুফান,ভূমিকম্প, সুনামি যায় এসে যাক না কেনো অরণ্য বাসর করেই ছাড়বে। আর এগারো বাচ্চার মামা বানাবে ইভানকে, এরপর তার এতোদিনের প্রতিশোধ পূরণ হবে। অরণ্য বলে ____
____ “- একবার বাসর করে নেয় এরপর একসাথে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করব। কিন্তু এখন শুধু রোমান্স হবে, যদি ভুলে ও তড়িৎ বিড়িং করার চেষ্টা করেন ইনায়া। তবে কিন্তু সারাজীবনের জন্য দূরো সরে যাব, একবার কোমায় চলে গিয়েছিলাম এইবার কিন্তু মরে যাবো _____.
°★ কথাটা শেষ করার আগেই ইনায়া থামিয়ে দেয় অরণ্যকে। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ——
_____ “- আর কোনোদিন দূরো যাওয়া বা মরে যাওয়ার কথা বলবেন না। আপনাকে ছাড়া বাঁচা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। বউ হয় আপনার, আমার মন, হৃদয়, শরীর আত্মা, সবকিছুর উপর অধিকার রয়েছে আপনার। ভালোবাসুন আমায় অরণ্য ____.
°★ ইনায়ার কথা শুনে অরণ্যর মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে, তার বউ অনুমতি দিয়েছে তাকে কাছে যাওয়ার। ইনায়ার হাতের বাঁধন আলগা করে, ওকে কোলে তুলে নেয় অরণ্য। ইনায়া কাঁধ জড়িয়ে ধরে অরণ্য, বিছানায় শুয়িয়ে দেয় এরপর ওর অরণ্য ওর কাছে যায়। ইনায়ার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়, তার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যায়। অরণ্য আর দেরি করে না, এগিয়ে যায় ইনায়ার ঠোঁটের কাছে যখনই কিস করতে যাবে। তার আগেই আবার দরজায় শব্দ হয়, অতিরিক্ত বিরক্ত হয় অরণ্য। বাসায় থাকতে যখন বউকে কিস করতে যায়, তখন বোন বা মা এসো ডিসটার্ব করে। যার জন্য বাধ্য হয়ে হানিমুনে মালদ্বীপে এসেছে, এখানে ও বিরক্ত করার জন্য লোক চলে এসেছে ____।
°★ দরজায় শব্দ সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করে, আবার তার কাজ করার প্রতি মনোযোগ দেয়। কিন্তু দরজায় অনবরত শব্দ হতে থাকে, যা শুনে ইনায়া চোখ তুলে তাকায় এরপর বলে _____
___ “- দরজার বাহিরে কে এসেছে? এমন করে শব্দ করছে রিসাের্টে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
°★ অরণ্য বিরক্ত নিয়ে বলে ——
“- যদি আজ ভূমিকম্প, ঝড়,বৃষ্টি যায় আসুক না কেনো। তবুও বাসর করেই ছাড়ব “।
°★ অরণ্য আবার অগ্রসর হয় ইনায়ার দিকে, কিন্তু দরজার শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। অরণ্য এইবার প্রচুর বিরক্ত হয়, মালদ্বীপে এসে তাদের ঘনিষ্ঠ সময়ে বিরক্ত করার সাহস কার। মূলত সেটা দেখতে, দরজার কাছে এগিয়ে যায় সে। রাগ নিয়ে দরজা খুলে দেয়, কিন্তু দরজার অপরপাশে যা আছে সেটা দেখে সে সম্পূর্ণ শকড খায়। অরণ্যকে এমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ইনায়া এগিয়ে যায় দরজার কাছে এরপর বলে ——-
______ “- ইভান ভাই আপনি? _____
°★ দরজার বাহিরে ইভান দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সাথে প্রভা, ইনায়া এগিয়ে আসে দরজার কাছে। মালদ্বীপে হয়তো ইভান আর প্রভার আশা করে নাই ইনায়া, অন্যদিকে শকড খাওয়ার মতো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরণ্য। পৃথিবীর সকল মায়া, মোহ ত্যাগ করে এখন তার বনবাসে চলে যেতে ইচ্ছা করছে। ভাগ্যার উপর করুণা হচ্ছে, তার কপালে হয়তো এই জন্মে বাসর নেই। অরণ্যকে সাইড করে ইভান আর প্রভা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে, ইনায়া তো অনেক খুশি তাদের দেখে।
°★ গত দুইবছর প্রভা আর ইভান তার বিভিন্ন কাজে অনেক সাহায্য করেছে। যার ফলে সকলের মধ্যে ভালো বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ইনায়া আর ইভান খুব হেঁসে হেঁসে কথা বলছে, যা দেখে অরণ্যর হিংসা হচ্ছে। তার এখন ,, পরাণ যায় জ্বলিয়া গান গাইতে ইচ্ছা করছে,,। অরণ্যকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইভান তার কাছে, এরপর বলে –
_____”- কি ব্যাপার অরণ্য। হানিমুনের সময় কেমন কাটছে?
°★ ইভান যে কথাটা অরণ্যকে টিজ করে বলেছে, সেটা অরণ্য বেশ বুঝতে পারে। অরণ্য হাসি মুখে উত্তর দেয় ——-
_____ “- খুব সুন্দর ইভান ভাই। কিন্তু একটা কথা বলুন যদি আপনি বিরিয়ানি খেতে চান, আর সেটা অনেক সময় পেয়ে যান। ঠিক তখন যদি কেউ আপনার থেকে টান দিয়ে প্যাকেট কেঁড়ে নেয়, আপনি কি করবেন?
_”- অবশ্যই রাগ করব ____.
____ “- আপনার প্রতি এখন আমার ও রাগ হচ্ছে। হানিমুনে এসেছি বউয়ের সাথে রোমান্স করার জন্য, কিন্তু আপনি এসে বিরক্ত করলেন। মাঝে মধ্যে মনে হয় আপনি আমার চাচাতো ভাই না সতিন?
°★ অরণ্যর কথা শুনে ইভান হেঁসে ফেলে। সত্যি বলতে তারা এখানে ইনায়া আর অরণ্যকে বিরক্ত করতে আসে নাই। বরং বিজনেসের কাজে এসেছে, তিনদিন তাদের থাকতে হবে মালদ্বীপে। যেহেতু প্রভা ইভানের পিএ তাই ও এসেছে, কয়েকদিন আগে যখন ইনায়ার সাথে দেখা হয় তখন ইনায়া বলে তারা মালদ্বীপে যাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ ইভান আর প্রভা এখানে এসেছে, যদিও তারা অন্য রিসোর্টে উঠেছে। কারণ এই রিসোর্টের সমস্ত রুম আগে থেকে বুক করা হয়েছে, যার মধ্যে অরণ্যর লোক রয়েছে।
°★ প্রায় অনেক সময় ধরে প্রভা আর ইভান কথা বলে ইনায়ার সাথে, অরণ্য হাতভাগার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বলার মাঝে মধ্যে ইনায়া দেখে যাচ্ছে অরণ্যকে, ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার অরণ্যর এমন করে তাকিয়ে থাকা দেখে। আবার খারাপ ও লাগছে, প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রভা আর ইভার নিজের রিসোর্টে ফিরে যায়। অরণ্যর এখন রোমান্সের মুড নাই, প্রচুর খিদা লাগছে তার। যার জন্য খাবার অর্ডার দেয়, একসাথে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ইনায়া অনেক টার্য়াড যার জন্য অরণ্য তাকে বিরক্ত করে না, এবং ইনায়াকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় ——
°★ ইনায়া এখন অরণ্যর বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অরণ্য। ইনায়া হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করে ——
____ “- অরণ্য আপনি কি ইভান ভাইকে হিংসা করেন? মানে আমি যে ইভান ভাইয়ের সাথে এতো হেঁসে হেঁসে কথা বলি, এরজন্য কি আপনি রাগ করেছেন আমার উপর?
___ °★ ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হাসে। এরপর বলে ——
____ “- বউ আমি তোমাকে ভালোবাসি, এরজন্য হয়তো ইভানের সাথে দেখলে আমার হিংসা হয়। কিন্তু আমি জানি কোমায় থাকা অবস্থায় ইভান তোমাকে অনেক সাহায্যে করেছে। অতীতে যা হয়েছে তা ভুলে যাও, বর্তমানে তুমি আমার আর ইভান তোমার ভাসুর। আর জীবনে যায় হয়ে যাক না কেনো, এই অরণ্য কোনোদিন তার বউয়ের উপর রাগ করে থাকবে না। ভালোবাসি তোমায় বউ “।
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৫
°★ অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া হেঁসে দেয়, এরপর একসাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় অনেকটা সময় তারা ঘুমায়, বিকাল হয়ে যায়। অরণ্যর ঘুম থেকে উঠে দেখে ইনায়া তার বুকে নেয়, হয়তো ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেছে কথাটা ভাবে। কিন্তু তার মন যেনো কেমন করে উঠে, সে উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের কাছে। কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা খোলা ইনায়া কোথায়, তার মনে অজানা ভয় ঝুঁকে বসে। হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠে। নিশ্চয়ই ওই অজানা শএু কল করেছে। ইনায়া কোথায়?