ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫
মাহিরা ইসলাম মাহী
মাহরিসা জেদি হলে আদ্রিত জেদি সঙ্গে তেজী।
আদ্রিত মাহরিসার হাত দুটো চেপে ধরলো শক্ত করে। মাহরিসা নিজের হাত দুটো আরো শক্ত করে ধরলো।
ঠোঁট সে আজ কিছুতেই ছাড়বে না।
আদ্রিতের সামনে আজ সে মুখ কিছুতেই খুলবেনা যাই হয়ে যাক না কেন।
“ হাত সরা।”
মাহরিসা মুখে হাত চেপেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো,
“ হাত সরানো যাবে না আদু ভাইয়া।”
আদ্রিত সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে চাইলো।
মাহরিসা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।ইশশ আবার মিস্টেক। ইচ্ছে হচ্ছে সে তার নিজের মাথায় নিজেই একটা বারি মারে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে তোর কোন দিক দিয়ে আদৌতে আদু ভাই লাগে আমায় জানা?”
মাহরিসা মাথা নাড়ালো এপাশ ওপাশ।
“ তুই হাত সরাবি কি না?”
মাহরিসা মাথা নাড়তে লাগলো সর্বোচ্চ গতিতে, সে কিছুতেই সরাবে না হাত।
“ ওকে, ফাইন।”
আদ্রিত নিজের শক্তি খাঁটিয়ে এক চুটকিতে মাহরিসার হাত সরিয়ে দিলো তার মুখের উপর হতে।নিজের এক হাতের সাহায্যে সিটের সঙ্গে চেপে ধরলো মাহরিসার দুই হাত।
“আদ….”
“ হুঁশশশ।”
আদ্রিত মাহরিসার ঠোঁটের আগায় আসা বাক্য খানা গিলে নিতে বাধ্য করলো সে রমণীর ঠোঁটে নিজের অপর হাতের আঙুল থেকিয়ে।
আদ্রিত মাহরিসার গাল চেপে ধরে ঠোঁটের পাশে দৃষ্টি ঘুরালো, চিন্তিত ভঙ্গিতে ভ্রু কুঁচকে সুধালো,
“ কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস? বেশি ব্যাথা করছে কি?”
মাহরিসা আদ্রিতের আজগুবি প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে ড্যাবড্যাব করে দেয়ে রইলো তার চিন্তিত মুখশ্রীপানে।
“ কই কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না। আর কোথাও ব্যাথা পেয়েছিস? তখন গাড়ির সামনে পড়ে গেলি যে দেখি।”
মাহরিসা চোখ বড় বড় করে বলল,
“ আশ্চর্য কি দেখবেন আপনি?আমি কি এখনো ছোট বাচ্চা নাকি আদু ভাইয়া?”
“ এক্সাক্টলি। আমি এটাই বলছি তোকে। তুই কি ছোট বাচ্চা আছিস এতগুলো বছর পরেও?”
মাহরিসা পিটপিট করে চেয়ে মাথা নাড়লো।
“ তবে কেন ছোট সাজছিস? আমার থেকে পালাতে চাইছিস?”
মাহরিসা আবারো শব্দ করে কেঁদে দিলো।
আদ্রিত চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিলো।
“ বুঝতে পেরেছি,তোর জেনেটিক্যালি সমস্যা আছে।ওকে থাকুক সমস্যা বাট তুই খুব ভালো করেই জানিস মারু আমার কোনো সমস্যা নেই। কি আছে?”
মাহরিসা মাথা নেড়ে বলল,
“ নেই।”
“ তোর সমস্যা আছে?”
“ আছে… না না নেই।”
“ আছে সমস্যা তোর মনে ইডিয়েট। এই তুই সামান্য কথা মনে রাখতে পারছিস না।এমবিবিএস পাশ করবি কেমন করে?”
মাহরিসা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
“ আপনি শিখিয়ে দেবেন না আদু ভাইয়া?”
আদ্রিত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ হ্যাঁ শিখিয়ে তো দেবই, এক সঙ্গে মুখস্থ করিয়ে দেব সব, এক সাথে প্রাকটিক্যালি সব বুঝিয়েও দেব। ব্যাপারটা দারুণ না বল?”
“ প্রাকটিক্যালি বুঝতে চাস সব?”
মাহরিসা কথার অর্থ উদ্ধার করতে পিটপিট করে চাইলো।
“ চাই।”
“ চুপপপ, উসকানিমূলক বার্তা দিচ্ছিস তুই আমায়? বয়স হয়েছে তোর সব প্রাকটিক্যালি শেখার ইডিয়েট। “
মাহরিসা পারলো না আদ্রিতের কথার অর্থ উদ্ধার করতে।
“হারামজাদা টা কোন হাতে ছুঁয়ে দিয়েছিলো তোর? বাসায় গিয়ে হারপিক দিয়ে ধুবি।খবরদার যদি একটু স্পট পরে তুই জায়গায় শেষ।”
মাহরিসার ফিসফিস করে বলতে ইচ্ছে হলো,
“আপনি ছুঁয়ে দিলেন যে। আর কি ধোঁয়ার প্রয়োজন আছে বলুন?হারপিক দিয়ে ধূলে তো আপনার স্পর্শ ও মুছে যাবে আদু ভাই।”
কিন্তু বলা হলো না।
এমন অনেক কথা কেন জানিনা মানুষের মনের মাঝেই থেকে যায়, বাহিরে প্রকাশ করা হয় না।বহুদিন, বহু বছর যাবত ধরে।
সময়ের ঘূর্ণিপাকে মানুষ তা ভুলেও যায়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সৃষ্টি কর্তার তৈরী নিয়ম।
মাহরিসা শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো।
“ সিট বেল্ট বাঁধ।”
“হু?”
আদ্রিত তার অপেক্ষা করলো না।নিজের হাতে মাহরিসার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো।
আদ্রিত তার দিকে সামান্য ঝুঁকে ছিলো।
মাহরিসার নাকটা প্রচুর চুলকাচ্ছিলো।
সুযোগ বুঝে সে নিজের নাকের পানি আদ্রিতের সাদা শার্টে মুছে দিলো।
আদ্রিত কঠিন দৃষ্টিতে চাইতেই মাহরিসা চুপসে গেল।
সে চিৎকার করে উঠলো,
“ কি করলি তুই এটা? রাবিশ।”
আদ্রিত সঙ্গে সঙ্গে নিজের গায়ের শার্টখানা টান মেরে খুলে ফেলল।
মাহরিসা সঙ্গে সঙ্গে চোখ ঘুরিয়ে দিলো।
“ ছিঃ।”
আদ্রিত বাঁকা হাসলো।
মাহরিসার নিচু থাকা থুতমা উঁচু করে ধরে বলল,
“ তাকা আমার দিকে।নিচে কি? আমার দিকে তাকা।”
মাহরিসা থমথমে কন্ঠে বলল,
“ আমি অন্যের আমানতের দিকে তাকিয়ে থাকি না বেহায়ার মতো। অসভ্য লোক।”
“ ও আচ্ছা। তো তোর আদু ভাইকে কার আমানত করে দিয়ে আসলি শুনি?”
মাহরিসা চমকে তাকালো।
“ আমি আপনাকে আমানত রাখার কে আদ্রিত ভাই?”
“ ফ্যানটাষ্টিক।এখন কি করে আমার নামটা তোর মুখ দিয়ে বের হলো?”
মাহরিসা জবাব দিলো না।
আদ্রিত ইস্টেয়ারিংয়ে থাপ্পড় মেরে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মাহীনদের বাড়ির সামনে এসে মাহরিসার দিকে আদেশ ছুঁড়ে বলল,
“ বের হ। মিনিটের মাঝে নামবি। এক সেকেন্ড দেরি হলে তোর ছোট দেহটা তুলে ছুঁড়ে মারবো হড প্রমিস।”
মাহরিসা নিজেও কোনো কথা না বাড়িয়ে নেমে পরলো।
মাহরিসা নেমে দাঁড়াতেই আদ্রিত ঝড়ের বেগে গাড়ি ছুটিয়ে চলে গেল।
হুশিয়ারী দিয়ে বলে গেল,
“ চেঞ্জ করে নিবি।ঠান্ডা লেগে যাবে।”
মাহরিসা ধূলো উড়ানো পথের দিলে চেয়ে রয় ইফস সরি ধূলো নয় বৃষ্টি ভেজা পথে গাড়ির চাকার মৃদু দাগ কাটা আস্তরণের পানে চেয়ে রইলো অস্থায়ী ক্ষণ সেকেন্ড।
আদ্রিত মাহরিসা কে নামিয়ে দিয়ে ওসমান ভিলায় প্রবেশ করতেই নিস্তব্ধ তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো ততক্ষণাৎ।
“দাঁড়াও। মাহরিসার সঙ্গে কি করেছ? “
আদ্রিত সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নিয়েও থেমে গেল।থমথমে কন্ঠে বলল,
“ ও ছোট বাচ্চা যে ওকে গুম করে দিয়ে কিছু করতে পারবো?
নিজের ছেলের পেছনে স্পাই লাগানো বন্ধ করুণ।”
“ তুমি ওর সঙ্গে… “
আদ্রিত নিস্তব্ধ’র মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
“ আমি ওকে সঙ্গে নিয়ে খেয়ে ফেলিনি।খেয়ে ফেললে দেখতে পেতেন না আর।তবে তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বোধহয় বড্ড পাপ করেছি।এমন ঘোরতর পাপ হবে জানলে তাকে বখাটেদের হাতে ভোগের বস্তু হতে ছেড়ে দিয়ে আসতাম।
ব্যাপার টা খুব ইন্টারেস্টিং হতো তাই না বলুন?
আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ব্যাঘাত ঘটতো না, আপনারাও একটু শোক বিলাপ করে ন্যাকা কান্না করতে পারতেন।”
ছেলের জবাবে নিস্তব্ধ হতবাক হয়ে চেয়ে রয়।
আদ্রিত সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত বেগে উঠে যায়।
নিলয় সাহেব নিস্তব্ধ’র পানে চেয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
নিস্তব্ধ যেন স্পষ্ট বুঝতে সক্ষম হচ্ছে তার সেই দাঁত কেলানোর ভাষা,
লোকটা তাকে বলছে,
“ কি এখন কেমন লাগছে বাজান? নিজে আমায় কখনো পাত্তা দাও নি। এবারে তোমার ছেলে তোমার চাইতেও বেশি তোমার উপরেই ওভার গেম খেলছে।কেমন লাগছে বাজান?
তোমার মুখ থেকে আমি বাবা ডাক শুনতে পেতাম কালে ভদ্রে হলেও।কিন্তু তোমার ছেলে?
সে তো না ডাকে নাম ধরে আর না ডাকে বাবা।
কি কেমন লাগছে বাজান আমার?
ভালো লাগছে তো এবারে?
বলেছিলাম নিজের ছেলে মেয়ে হলে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল হয় সিদ্ধ করলে।”
নিস্তব্ধ রাগে হনহন করতে করতে রুমে ঢুকলো।
ছেলেটা হঠাৎ এমন বেপরোয়া কেন হলো।ছোট সময়ে তার আদ্রিত তো স্বাভাবিকই ছিলো। তবে এখন কেন এই অতিরঞ্জিত আচরণ।
কই সে এতটা টক্সিক ছিলো না।
তার ভেতরকার সত্তা চিৎকার করে বলে উঠে,
“ তুমি টক্সিক ছিলে না নিস্তব্ধ? বউকে কাছে পেতে কি না করেছ তুমি।কত প্লান খাটিয়েছো।বউয়ের জন্য অন্যকে শাসিয়েছ।
বউকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে কত্ত কৌশলে।
আর সেই তোমার সত্তা কি করে দুই কাঠি উপরে না উঠে থাকতে পারে বলো?
তোমার ছেলে যদি তোমার চেয়ে আরো একধাপ নিচে নেমে যায় তবে তো ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।তোমার জিনের দাম রইলো কোথায়।
তুমি নিজে ঘাড়ত্যাড়া হলে তোমার ছেলে কেন হতে পারবে না?”
নিস্তব্ধ মন কে ভীষণ করে শাসায়।
সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে। তাসফি মাত্রই হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলো।
নিস্তব্ধ কে হনহন করে রুমে প্রবেশ করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে চাইলো সে।
“ কি ব্যাপার? কোনো সমস্যা? এভাবে সাপের মতন ফোঁস ফোঁস করছেন কেন?”
“ তো কি করতে বলছো? বসে বসে আঙুল চুসতে? ছেলেকে বানিয়েছো একদম নিজের মত। নিজের আমায় জুয়ান বয়সে জ্বালিয়ে খেয়েছ।এখন ছেলেকে দিয়ে জ্বালাতন শুরু করেছ। “
তাসফি তীর্যক কন্ঠে বলল,
“ বাহ তবে আপনি শিকার করছেন আপনি বুড়ো হয়ে গিয়েছেন?”
নিস্তব্ধ রক্তচক্ষু বদনে চাইতেই তাসফি হেসে দিলো।
প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনীর হাসিটুকু অবলোকন করে ফুঁসতে থাকা নিস্তব্ধ ইয়াসারের গর্জে উঠা হৃদয়টা হঠাৎ’ই শীতলতায় ছেয়ে গেল।
নিস্তব্ধ এগিয়ে গিয়ে তাসফিকে নিজের সত্তায় জরিয়ে নিলো।
ফিসফিস করে বলল,
“ শুনো হে রমণী তুমি কি জানো তোমার হাসি দেখতে….”
তাসফি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইলো?
“ একদম পঁচা ভেটকি মাছের ন্যায়।হাসলেই কেমন একটা পঁচা গন্ধ বেরিয়ে আসে।”
তাসফি খেয়ে ফেলা দৃষ্টিতে চাইলো নিস্তব্ধ’র পানে।
নিস্তব্ধ তার তোয়াক্কা না করে টুপ করে রমণীর গালে চুমু খেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
তাসফি গর্জে উঠে বলল,
“ এই আপনি বের হন একবার, আজ আপনার একদিন কি আমার একদিন”
“ তা নাহয় বাদ দিলাম জান। বাট তোমার এই আপনি থেকে তুমিতে আসবে কবে শুনি?”
“ ইহজনমে নহে, বুঝলেন অসভ্য লোক।”
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪
নাওমী’র ছুঁড়ে দেওয়া গ্লাসে থাকা সমস্ত পানি টুকু এই মুহুর্তে নীবিড়ের পুরো মুখমণ্ডলের সঙ্গে পুরো শরীরে টালমাটাল হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে ।
নীবিড় রাগে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।
ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহুর্তে অসভ্য মেয়েটার গালে ঠাস ঠাস করে কতগুলো চর বসিয়ে দিতে।
রাগে তার সমস্ত মুখমন্ডল লালচে বর্ণ ধারণ করেছে
এই তো খানিকক্ষণ আগের ঘটনা….