পূর্ণিমাতিথি গল্পের লিংক || লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

এ্যাংগেইজমেন্টের পার্টিতে আমার হবু বর আমাকে রেখে আমার মামাতো বোনকে রিং পড়িয়ে দেয়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমার কানে শুধু একটা কথায় বাঁজছে।
উইল ইউ মেরি মি প্রিলিয়া।

চোখ উপচে জল গড়িয়ে পড়ছে। অপমানে মাথা নিচু হয়ে গেছে। পার্টিতে লোকজন ভরপুর সবাই আমার দিকে অন্য রকম চোখে তাকাচ্ছে। অনেকের অনেক কটূক্তি কানে আসছে। অন্য সময় হলে হয়তো আমি প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু এখন চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
কিছুক্ষণ আগে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বেশ জাঁকজমক ভাবেই আমার এ্যাংগেইজমেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই ঠিক করা হয়েছিল। শুনেছিলাম বিহান (হবু বর) আমাকে অনেক ভালোবাসে। আব্বু এখন আমাকে বিয়ে দিতে রাজি ছিল না। সেই নাকি অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে আব্বুকে রাজি করিয়েছে। আমি প্রথমে জেদ ধরে বসেছিলাম এখন বিয়ে করবো না। সবে মাত্র এইচ এসসি পরীক্ষা দিয়েছি। এখন সময় চিল করার আর এখনি বিয়ে নামক প্যারা নিতে চাইনি।

কিন্তু বিহানের সাথে কথা বলার পর আমার বিহানকে ভালো লেগে যায়। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে যাই। দুই পরিবার মিলেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আর বড়সড় করে একটা এ্যাংগেইজমেন্ট পার্টি আয়োজন করে।
(আমি তাসনিম জাহান রিয়া। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমার বড় একজন ভাই আছে।)
এনাউসমেন্ট করার পর আমরা দুজনেই স্টেইজে ওঠি। আমাদের সাথে আমার মামাতো বোন প্রীলিয়াও স্টেইজে ওঠে। যখন রিং পড়ানোর সময় হয় তখন বিহান আমাকে রেখে আমার মামাতো বোনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে প্রোপোজ করে ফেলে।

উইল ইউ মেরি মি প্রীলিয়া।
প্রীলিয়া আপুও হাসি মুখে প্রোপোজেল এক্সসেপ্ট করে নেয়। তখনি আব্বু এগিয়ে আসে। আব্বু চিৎকার করে বলে,
এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি। তুমি রিয়াকে রেখে প্রীলিয়াকে কেনো রিং পড়িয়েছো। আমার মেয়েকে সবার সামনে অপমান করার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে?
আব্বু বিহানকে আরো কিছু বলার আগেই মামা এসে আব্বুকে টেনে নিয়ে চলে যায়। আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। বিহানের কলার চেপে ধরলাম। আচমকা বিহানের কলার চেপে ধরায় বিহান অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। গলার স্বর নিচু করে বলে,

রিয়া কলার ছাড়ো।
না ছাড়বো না। আপনার লজ্জা করছে না। একজন কে রেখে আরেকজনকে রিং পড়িয়ে দিয়েছেন। তাও আবার যাকে রিং পড়ানোর কথা ছিল তার মামাতো বোনকে। আপনি আমার সাথে কেনো এমন করলেন? কী অন্যায় করেছিলাম আমি আপনার সাথে? যার জন্য আপনি এভাবে আমাকে সবার সামনে হাসির পাত্র বানালেন। চুপ করে আছেন কেনো? উত্তর দিন। উত্তর দিন আমার প্রশ্নের।

দেখো রিয়া তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হওয়াটা ছিল একটা মিসটেইক। আমি তোমাকে না তোমার মামাতো বোন প্রীলিয়াকে ভালোবাসতাম। তোমার সাথে যে ভুলটা হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত। একচুয়ালি ভুলটা আমার ছিল না। ভুলটা করেছে আমার বন্ধু। ঐই ভুল ইনফরমেশন এনে দিয়েছিল। তবুও আমি তোমাকে সরি বলছি।

আপনি সরি বলে দিলেন আর সবকিছু সমাধান হয়ে গেলো। আপনি যে আমাকে সবার সামনে হাসির পাত্র বানালেন। আপনি সরি বললে কী সব মিটে যাবে? একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে সমাজের মানুষ তাকে কোনো চোখে দেখে আপনি জানেন? সবাই ভাববে আমার চরিত্রে সমস্যা তাই আপনি বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। আমার পরিবারের যে মান সম্মান গেছে তা কী আপনি ফিরিয়ে দিতে পারবেন? পারবেন ফিরিয়ে দিতে আমার আগের জীবন?

জানি পারবেন নাহ। আপনাদের মতো বড়লোকের ছেলেদের স্বভাব মেয়েদের নিয়ে খেলা। তারপর সরি বলে দেওয়া। আপনারা ভাবেন সরি বললেই সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়। আপনাদের মতো ছেলেদের উচিত বিষ খেয়ে মরে যাওয়া। আমার জানেন এখন কী ইচ্ছে হচ্ছে? আপনার মুখে এক ধলা থুতু ছুঁড়ে মারতে। আফসোস আমি সেটা পারবো না। কিন্তু আমি আপনাকে জীবনেও ক্ষমা করবো না জীবনেও না।

আমি বিহানের কলার ছেড়ে দুই পা পিছিয়ে গেলাম। তখনি ভাইয়া এগিয়ে আসে। ভাইয়া রেগে অগ্নিমুর্তি হয়ে আছে।
তুই এই ডাফারকে ক্ষমা করবি কিনা সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমি ওকে ক্ষমা করবো না। ওকে আমি পুলিশে দিবো। ওর নামে আমি মানহানির মামলা দিবো। ওকে আমি জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো।
ভাইয়া বিহানকে ঘুষি মারতে গেলেই আব্বু পিছন থেকে ভাইয়ার হাত ধরে ফেলে।
আব্বু তুমি আমার হাতটা ছাড়। আমি ওকে আজ খুন করে ফেলবো। ও আমার কলিজায় হাত দিয়েছে। আমার কলিজার হাত দেওয়ার ফল আমি ওকে বুঝিয়ে দিবো।

বিহানের সাথে প্রীলিয়ারই বিয়ে হবে। আমি আর কারো কোনো কথা শুনতে চাই না।
তুমি শুনতে না চাইলেও তোমাকে শুনতে হবে। তোমার হয়তো নিজের মেয়ের প্রতি দরদ নেই। তোমার কাছে তো প্রীলিয়াই সব। কিন্তু আমি আমার বোনকে ভালোবাসি। ওর সাথে এতো বড় অন্যায় হবে আর সেটা আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো সেটা হতে পারে না।
তুমি চুপ করবে।

না আব্বু আজকে তুমি আমাকে চুপ করাতে পারবে না। তোমার এতো কীসের দরদ প্রীলিয়ার প্রতি? আমার মাঝে মাঝে তো মনে হয় তুমি আমাকে আর রিয়াকে কুড়িয়ে এনেছ আর প্রীলিয়াই তোমার মেয়ে।
শাওন।
আব্বু হাত ওঠাতে গিয়েও নামিয়ে ফেলে।

হাত নামিয়ে নিলে কেনো? মারো আমাকে মারো। আমি তো জানি তুমি আমাদের ভালোবাসা না। আমার বোনের সাথে যারা অন্যায় করেছে আমি তাদের কাউকে ছাড়বো না। আব্বু তুমি একদিন পস্তাবে।
কথাগুলো বলেই ভাইয়া লাথি দিয়ে চেয়ার ওল্ঠে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
বর্তমানে

ঘাড়ে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে আমি পিছন ঘুরে তাকাই। আমার ঠিক পিছনেই মামুনি দাঁড়িয়ে আছে। আমি মামুনিকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরি। ফুফি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
একদম মন খারাপ করিস না রিয়া। আজকে তোকে যারা অপমান করেছে তারা তাদের পাপ্য শাস্তি পাবে। আমি তোকে বিহানের থেকেও ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিব। তোকে আমার…….

থাক মামুনি তোমাদের আর আমার বিয়ের চিন্তা করতে হবে না। আমি আর মানুষের সামনে হাসির পাত্র হতে চাই না। আব্বুও তো আমার ভালো ছেলের সাথেই বিয়ে ঠিক করেছিল। এটা হলো ভালো ছেলের রূপ। তোমরা আমার বিয়ে নিয়ে ভাবা বন্ধ করো প্লিজ।

আমি মামুনির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এক পলক স্টেইজের দিকে তাকাই। স্টেইজে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে বিহান আর প্রীলিয়া আপু ছবি তুলছে। আমি এক দৌড়ে রুমে চলে আসি।
রুমে এসেই ফ্লোরে বসে পড়ি।

এর আগে কখনো আমাকে এতোটা অপমানিত হতে হয়নি। আমি জানতাম প্রীলিয়া আপু আমাকে সহ্য করতে পারে না। তাই বলে এভাবে সবার সামনে ছোট করবে।
মাথায় কারো হাতের আলতো স্পর্শ পেয়ে আমি মুখ তুলে তাকাই। আমার সামনেই বসে আছে আব্বু। আব্বুকে দেখেই আমি ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই।

আব্বু আমি তো এখন বিয়ে করতে চাইনি। তোমাদের কথায় আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। তাহলে আমাকে কেনো এভাবে সবার সামনে অপমানিত হতে হলো।
মারে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি তোর জন্য সঠিক পাত্র নির্বাচন করতে পারিনি। আমার কারণে আজকে তোকে অপমানিত হতে হলো। আমি চেয়েও কিছু করতে পারিনি। অনেক কিছুই তোর অজানা। সেই অজানা কারণে আজকে আমাকে চুপ করে থাকতে হলো। মামুনি তোমার আব্বুকে একটা সুযোগ দিবে না নিজের ভুল সুধরে নেওয়ার? আমি তোমার বিয়ে রু……

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২