প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪০ (২)
Drm Shohag
ফাইজ স্টেজ থেকে নেমে জুতো পরবে, কিন্তুু সে তার জুতো খুঁজে পায় না। কি জ্বালা! তার বিয়েতে কত বাঁধা আসলো! সব মিটিয়ে কবুল তো বলল, কিন্তুু এখন যে তার লিটল কুইনকে একটুখানি দেখবে সে আশাতেও কে যেন একশ বালতি পানি ঢেলেছে। শুদ্ধ পাশ থেকে বলে,
“পায়ে মেহেদী দিয়েছিস না-কি?”
ফাইজ রেগে বলে,
“আমার জুতো কই? মেজাজ খা’রা’প।”
শুদ্ধ ফাইজের পাশ থেকে নেমে ফাইজের জুতো খুঁজল। আসলেই নেই। গেল কোথায়?
তখনই মাইরা, ফারাহ সহ ইনায়ার সব কাজিন স্টেজ এর সামনে এসে উপস্থিত হয়। মাইরা চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“ভাইয়া কিছু খুঁজছেন?”
শুদ্ধ মাথা নিচু করেই বলে,
“ফাইজের জুতো কই গেল? এখানেই ছিল।”
কথাটা বলে মাথা তুলে তাকায়। মাইরা ফারাহ সহ একদম মেয়ে দেখে শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে নেয়। কিছু যেন বুঝলো। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“ফাইজের জুতো না দিলে কিন্তুু তোমার বান্ধবীর শ্বশুর বাড়ি যাওয়া হবে না মাইরা।”
মাইরা হেসে বলে,
“আপনারা জুতো না পেলে ফাইজ ভাইয়ার আর বউয়ের মুখদর্শন হবে না, এভাবে ভাবুন।”
শুদ্ধর পাশে নাছিম এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“আরে বার্বি ডল, তুমি কোথায় ছিলে? এতো খুঁজলাম তোমায়।”
মাইরা কিছুতা বিব্রতবোধ করে। শুদ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে ভিডিও অন করে বলে,
“নাও মাইরা, শুরু কর। ভিডিও টা ইরফানকে সেন্ড করব বুঝলে? তোমার এতো ক্রেডিট! এসব দেখার হক ইরফানের অবশ্যই আছে, কি বলো?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাইরার মুখটা চুপসে যায়। শুদ্ধ কিছু বোঝার আগেই ফারাহ খপ করে কেড়ে নেয় শুদ্ধর ফোনটা। শুদ্ধ চেঁচিয়ে বলে,
“আরে আরে আমার ফোন!”
ফারাহ’র দিকে চেয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“এসব কি করছ ফারাহ? তোমার ভাইয়ের বিয়ে। তুমি ছেলে পক্ষ হয়ে মেয়ে পক্ষের প্রক্সি দিচ্ছো?”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমার ভাই কিপ্টা নাম্বার ওয়ান। টাকা ফেললেই আবার ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়াবো।”
কথাটা বলে ফারাহ ফাইজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভাইয়া ৬০-৭০ হাজার ফেলো।”
ফাইজ চোখ বড় বড় করে বলে,
“কি?”
মাইরা বলে,
“কম হয়ে গেল দুলাভাই? আসলে আমদের শরীরে খুব দয়া। তাই বেশি আবদার করতে পারছি না। আপনি চাইলে আরেকটু বাড়িয়ে দিতেই পারেন।”
ফাইজ অসহায় মুখ করে চেয়ে রইল। তার জুতো নিতে ৬০-৭০ হাজার টাকা দিতে হবে? মুখ ছোট করে বলে,
“আমার জুতো ধুয়ে তোমরা পানি খাও। আমার ওই জুতো লাগবে না। দেখি সাইড প্লিজ!”
সবাই একসাথে চিল্লিয়ে ওঠে। সব ছেলেরা দু’হাতে কান চেপে ধরে। মাইরা বলে ওঠে,
“ইনায়া আপু বলেছে, জুতোহীন বরের পাশে সে বসবে না।”
মাইরার কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। নাছিম শব্দ করে হেসে দেয়। শুদ্ধ কিছু একটা ভেবে বলে,
“ওকে, তোমাদের ইচ্ছে পূরণ হবে। এতো টাকা পকেটে নেই। তোমরা ওয়েট কর, আমি আসছি।”
মাইরা, ফারাহ অবাক হলো। এতো দ্রুত রাজি হয়ে গেল? রাজি হলে তো ভালো। প্রায় মিনিট দশেক পরে শুদ্ধ তার হাতে ওয়ালেট নিয়ে হাজির হলো। অতঃপর বলে,
“আমার একটা শর্ত আছে।”
মেয়েরা সব উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে চেয়ে এক চোখ টিপ দেয়। ফারাহ থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“ভাইয়া চোখ টিপাটিপি করে লাভ নেই। আমাদের মেয়েদের সবার ক্যারেক্টার একদম সাদা কাগজের মতো ফকফকে পরিষ্কার।”
মাইরার কথায় শুদ্ধ থতমত খেয়ে তাকায়৷ বিড়বিড় করে, “কি সিসিটিভি মাইরি!”
অতঃপর নিজেকে সামলে বলে,
“আগে জুতো দিতে হবে, তারপর টাকা।”
ইরফানের মামাতো বোন মিশকা বলে ওঠে,
“আপনি আগে টাকা বের করে গুণে দেখান ভাইয়া। তাহলে আপনার শর্ত আমরা মানবো।”
শুদ্ধ কিছু একটা ভেবে ওয়ালেট এর ভাঁজ খুলে বেশ কিছু টাকা বের করে সবার উদ্দেশ্যে দেখালো। এরপর বলল,
“সব গুণতে অনেক টাইম লাগবে। টাকা তো আছে, দেখলে সবাই? এবার জুতো আনো।”
ইরফানের কাজিন রিয়া ফাইজের জুতোজোড়া এনে দিলে শুদ্ধ ওয়ালেট বাড়িয়ে দেয়। মাইরা ভ্রু কুঁচকে ওয়ালেট চেক করে বোকা বোনে যায়। এর মধ্যে সব পাতা, আর মাত্র কয়েকটা হাজার টাকার নোট। মাইরা অসহায় মুখ করে বলে,
“ভাইয়া আপনি আমাদের এভাবে ঠকাতে পারলেন?”
শুদ্ধ হাসছে। ফারাহ মাইরাকে বলে,
“মাইরা চাপ নিও না। এই ফোন বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে।”
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে বলে,
“আরে না না, আমার ইম্পর্ট্যান্ট অনেক কিছু আছে ফোনে।”
ফারাহ পাত্তা দিল না। নাছিম তার ওয়ালেট থেকে একটা চেক বের করে মাইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“বার্বি ডল এখানে পুরো এক লাখ টাকার চেক আছে। নাও।”
নাছিম এর কথায় মাইরা ভীষণ বিব্রতবোধ করে। টাকাটা তো মেইন না। সে দুলাভাইয়ের থেকে জোর করে টাকা হাতিয়ে নিবে এইখানেই তো মজা।
শুদ্ধ খপ করে নাছিম এর থেকে চেক টা কেড়ে নিয়ে বলে,
“চোখ ঠিক কর শা’লা।”
নাছিম থতমত খেয়ে মাথা চুলকালো। মাইরা কিছু বলতে চায় তার আগেই দেখে ইরফান এদিকে আসছে। সাথে সাথে বসে পড়ে। ওরে আল্লাহ! এই লোক তাকে দেখলে তো কাঁচা-ই চিবিয়ে খাবে। শুদ্ধ সামনে তাকিয়ে বলে,
“একি! সিসিটিভি কোথায় গেল?”
মাইরা নিচু হয়েই একপ্রকার দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে স্টেজ এর পিছন থেকে উঁকি দিয়ে বলে,
“আপনারা চিটিংবাজ। আমি ইনায়া আপুকে দিব না। দুলাভাই আপনি একাই রওয়ানা হন। বাই বাই।”
মাইরা ইরফানকে দেখেই পালাচ্ছিল। তবে ইরফান আর তার মাকে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সব ভুলে এগিয়ে যায় তার মা আর ইরফানদের দিকে।
ইরফান কিছু বলার আগেই সেখানে উপস্থিত হয়ে মাইরা তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“এখানে কি করছ?”
মাইরার মা মাইরাকে দেখে ইরফানের গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয়। মাইরার উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“বাইরে বেরিয়েছ কেন স্টুপিট?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আমি ঘরবন্দী হয়ে থাকতে পারবো না। তাই বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছি।”
ইরফান রেগে যায়। এই স্টুপিট যে কথা শোনার পাত্রী নয় এটা তো সে জানেই। রাগের মাথায় ভুলেই বসেছে মাইরার মা এখানে দাঁড়ানো। মাইরার গাল শক্ত করে চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট গার্ল। থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরার মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। তিনি একটু আগেই ছেলেটাকে কি সুন্দর করে বলল, আর এই ছেলেটা তার মেয়ের সাথে এমন করছে কেন? মাইরা আড়চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“আমার গাল ছাড়ুন। মা আছে এখানে।”
ইরফান রেগে বলে,
“স্টুপিট তোমার হাত পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখব।”
মাইরার মা বুঝতে পারছে না তিনি কি করবেন বা বলবেন। যেমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন, তেমনি খা’রা’প লাগছে। তার মেয়ে কি এখানে ভালো নেই? কোথা থেকে ইরফানের বাবা এসে দাঁড়ায় ইরফানদের এখানে। ইরফানকে মাইরার গাল চেপে ধরতে দেখে তারেক নেওয়াজ অবাক হয়ে বলেন,
“ইরফান কি করছ?”
বাবার কথায় ইরফান মাইরার গাল ছেড়ে চোখ বুজে শ্বাস নেয়। এরপর কোনোদিকে না তাকিয়ে মাইরার হাত টেনে তার ঘরের দিকে নিয়ে যায়। মাইরা রীতিমতো পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। তবে ইরফানকে বাঁধা দিল না। আশেপাশে অনেক মানুষ। উল্টাপাল্টা ভাববে, সেই ভেবেই নিজেকে দমিয়ে নিল।
এদিকে পিছন থেকে মাইরার মা অবাক হয়ে মাইরা আর ইরফানের দিকে তাকিয়ে রইল।
তারেক নেওয়াজ ছেলের কাজে অস্বস্তিতে পড়েছেন।মাইরার মা হঠাৎ-ই বলে উঠলেন,
“ভাইজান আমার মেয়ে কি ভালো আছে এখানে? মিথ্যা বলবেন না। ভালো না থাকলে এখানে কেন রাখবো বলুন? আমার মেয়েকে ভালো রাখতেই তো এখানে পাঠিয়েছি।”
তারেক নেওয়াজ গলা ঝেড়ে বলেন,
“আসলে আমার ছেলের মাথাটা একটু গরম। তাছাড়া মাইরার খুব যত্ন করে। চিন্তা করবেন না। মাইরা ভালো আছে এখানে।”
মাইরার মা চিন্তিত হলো। সত্যিই কি ভালো আছে মাইরা? তার নিজেকে অপরাধী লাগে। তার প্রথম স্বামীর আমানত টুকুর খেয়াল সে রাখতে পারল না। তিনি এ ব্যাপারে তারেক নেওয়াজকে আর কিছু বললেন না।
“আমাকে ছাড়ুন।”
ইরফান মাইরাকে নিয়ে সোজা তার ঘরে যায়। রেগে বলে,
“বাইরে কেন গেলে? বলেছিলাম তো বাইরে বেরোবে না।”
মাইরা অসহায় মুখ করে বলে,
“প্লিজ শুধু আজকে যাই। খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে। আপনাকে ভাগ দিব।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট? কিসের ভাগ?”
মাইরা থতমত খেয়ে যায়। ভুলভাল বলে ফেলেছে। ইরফানের ফোনে কল আসে। ছেলেটা বিরক্ত হয়। এই বিচ্ছুকে দেখে রাখতে পারছে না কাজের জন্য। আর এই স্টুপিটাও তার কথা শুনছে না। মাইরাকে ধমকে বলে,
“বাইরে গিয়েছিলে কেন? এখানে আটকে রেখে যাব?”
মাইরা মাথা নেড়ে বলে,
“না না। প্লিজ! আমি ইনায়া আপুর কাছে থাকবো। আমার ভাইয়ের কাছে যাবো।”
ইরফান শান্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। দু’পা এগিয়ে গিয়ে মাইরাকে ঘেঁষে দাঁড়ায়। এরপর মাইরার মুখ দু’হাতে আঁজলায় নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“লিপস্ থেকে এসব ওঠাও।”
মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“তাহলে বাইরে যেতে দিবেন?”
ইরফান মাইরার কথার উত্তর করল না। ঝড়ের গতিতে মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা ইরফানকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়। এই লোকের প্রবলেম কি, উফ! আজ সারাটাদিন জ্বালিয়ে খেল।
ইরফানের মামাতো বোন তামান্না ইরফানের ঘরের দিকে মাইরাকে ডাকতে ডাকতে আসে।
মাইরা ইরফানকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়। ইরফান বিরক্ত হয়ে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে মাইরাকে ছেড়ে দেয়।
মাইরা গুটিশুটি মেরে ইরফানের বুকে সিটিয়ে দাঁড়ায়। যেন তামান্না তাকে দেখলে আজ সে শেষ।
তামান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ইরফানকে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
“ইরফান ভাই মাইরাকে দেখেছ?”
ইরফান চোখ নামিয়ে মাইরাকে একবার পরোখ করে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা তার ঠোঁট মুছে গম্ভীর গলায় বলে,
“ডোন্ট নো।”
তামান্না যেতে গিয়েও মাইরাকে যেন নজরে পড়ল। নিচের দিকে চোখ পড়লে মাইরার লেহেঙ্গা দেখে বলে,
“মাইরা তো এখানেই। মিথ্যে বলছো কেন? এই মাইরা আসো। আমরা সবাই তোমার জন্য বসে আছি।”
মাইরার কেঁদে দেয়ার মতো অবস্থা। ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। যাস্ট লিভ।”
তামান্না বলে,
“ইরফান ভাই তোমাকে ডিস্টার্ব করব না। মাইরাকে দাও। শুদ্ধ ভাইয়া টাকা দিয়েছে।”
ইরফান চরম বিরক্ত হয়। মাইরা নিজেই ইরফানের আড়াল থেকে সরে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে বলে,
“আপু তুমি যাও। আমি আসছি।”
তামান্না চোখ ছোট ছোট করে মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“মাইরা তুমি কি অসুস্থ?”
মাইরা কি বলবে বোঝে না। অসুস্থ-ই তো সে। এই অ’স’ভ্য লোকটা তাকে অসুস্থ বানিয়ে দিচ্ছে। রা’গ লাগলো তার। জীবনটা পুরো কি বানিয়ে দিয়েছে। উফ! তামান্নার উদ্দেশ্যে মিনমিন করে বলে,
“না আপু। আসছি আমি।”
তামান্না চলে যায়। ইরফান রেগে বলে,
“কোথায় যাবে তুমি?”
মাইরাও রেগে বলে,
“উগান্ডায়। অ’স’ভ্য লোক।”
ইরফান রে’গে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট আমাকে রা’গ দেখালে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।”
মাইরা ধুপধাপ পা ফেলে বাইরে যেতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে তার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে মাইরার ঠোঁটজোড়ায় দৃষ্টি রেখে বলে,
“এটা ওঠাতে দাও।”
মাইরা চোখ বড় বড় দ্রুত তার ঠোঁট চেপে ধরে। ইরফান রে’গে বলে,
“স্টুপিট, হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরার কান্না পাচ্ছে। এই লোকটার চেয়ে রা’ক্ষ’স ও ভালো আছে। ইরফান মাইরার হাত টেনে সরিয়ে দিলে মাইরা মাথা নিচু করে চেঁচিয়ে বলে,
“অ’স’ভ্য লোক, আমাকে আপনার সরকারি লাগে? ছাড়ুন বলছি।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“নো। ইউ’র লিপস্ আর মাই পার্সোনাল চকলেট। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
মাইরা আগের চেয়েও জোরে চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফান বিরক্ত চোখে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“এভাবে উঠবে না। আমি উঠিয়ে নিচ্ছি। সরুন।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আই ক্যান। একটু সময় লাগছে, দ্যটস ইট।”
মাইরা দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে যায়, ইরফান ধরতে গিয়েও পারল না। মাইরা একপ্রকার দৌঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লিপস্টিক তুলে ফেলল। এরপর আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে নিজের দু’হাতে হিজাবের উপর দিয়েই তার দুইকান জোরে চিমটি দিয়ে ধরে বিড়বিড় করে,
“এই দেহে প্রাণ থাকতে আর লিপস্টিক দিব না।”
অনেকক্ষণ পরেও যখন মাইরা ওয়াশরুম থেকে বের হয় না। ইরফান রে’গে বলে,
“স্টুপিট এক্ষুনি বের না হলে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকব।”
তখনই মাইরা খট করে দরজা খুলে বের হয়। ইরফান মাইরার দিকে রেগে তাকায়। মাইরা মিনমিন করে বলে,
“বের হয়েছি। এবার আপনি যান।”
ইরফান মাইরার হাত ধরে টেনে তার সামনে দাঁড় করায়। মাইরার ভেজা ঠোঁটজোড়ায় তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে, “নাও পার্ফেক্ট।”
কথাটা বলেই টুপ করে মাইরার ভেজা ঠোঁটে একটা শুকনো চুমু খেয়ে ফেলে।
মাইরা কটমট দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে তাকায়। এই লোকটার প্রবলেম টা ঠিক কোন জায়গায়? তাকে একটু নিঃশ্বাস ও নিতে দেয় না। ইরফান মাইরার দৃষ্টি পাত্তা দিল না।
মাইরার থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“এসব খুলে ফেলো। আর বাইরে যেতে পারবে না। ইট’স ফাইনাল।”
কথাটা বলে ড্রয়ার থেকে তার রুমের দরজার চাবি নিয়ে গটগট পায়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে শব্দ করে দরজা লাগাতে ভোলেনি। মাইরা পিছু পিছু যেতে যেতে বলে,
“আমি যেতে চাই, প্লিজ! আর বাইরে যাবো না।”
কে শোনে কার কথা। ইরফান এবার তার ঘরের দরজা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে গিয়েছে। যেটার চাবি সে তার পকেটে রেখেছে। সে ছাড়া এই দরজা এবার কেউ খুলতে পারবে না।
মাইরা দরজা ধরে টানল। খুলতে পারল না। বুঝল ওপাশ থেকে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তার ভীষণ খা’রা’প লাগলো। কতক্ষণ এখানে বন্দী হয়ে বসে থাকবে? এখন তো ইনায়া আপু চলে যাবে। আর ইনায়া আপুর কাছে তার ছোট ভাইটা আছে।
ঘাড় বাঁকিয়ে দেয়াল ঘড়িতে নজর দেয়। ঘড়ির কাটায় রাত ৮ টা বেজে ৫ মিনিট। মাইরা অসহায় হয়ে বেডের উপর গিয়ে বসল। অপেক্ষা করতে লাগলো কখন দরজা খুলবে। তার মনে হয়, ইনায়া আপু যাওয়ার আগে ইরফান এসে দরজা খুলে দিবে, এই ভেবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
সময় পেরিয়েছে প্রায় এক ঘণ্টা। এর মাঝে মাইরা ঘুমায়নি বা কিচ্ছু করেনি। এতো সময় শুধু বসে বসে সময় পার করল, ইরফান আসলো না? হঠাৎ-ই দরজার ওপাশে তার ভাইয়ের কণ্ঠ পায়। মাইরা বেড থেকে নেমে দৌড়ে দরজার কাছে দাঁড়ায়। দরজায় থা’প্প’ড় দিয়ে বলে,
“সোনা ভাইয়া? কাউকে ডেকে এই দরজা খুলে দিতে বল তো।”
লাবিব দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার বোনের গলা পেয়ে ডেকে ওঠে,
“আপুই টুমি কুতায়?”
মাইরা এপাশ থেকে বলে,
“ভাইয়া আমি ঘরের ভেতর। কাউকে ডেকে আন যা। তাহলে দরজা খুলে দিবে।”
লাবিব বুঝলো না মাইরার কথা। সে তার ছোট হাতে দরজায় থা’প্প’ড় দেয়, আর অনবরত তার বোনকে ডাকে।
“আপুই আমাকে কুলে নাউ। আপুই? আমার চলকেট শেশ।”
মাইরার খারাপ লাগছে। সে কি করবে বুঝতে পারে না। তার ভাই এখানে একা কেন? লাবিব দরজায় থা’প্প’ড় দিতে দিতে কেঁদে দেয়। কান্নামাখা গলায় বলে,
“আপুই আমাকে কুলে নাউ। আপুই আসু।”
মাইরার কান্না পাচ্ছে। তার ভাই তার কাছে আসার জন্য কাঁদছে। অথচ সে নিতে পারছে না। অসহায় কণ্ঠে বলে,
“ভাইয়া আপুই ঘরের ভেতর। কাউকে বল, তাহলে দরজা খুলে দিবে।”
লাবিব তার বোনের কথা শোনে না। কাঁদতে কাঁদতে আবারও ডাকে,
“আপুই আমাকে কুলে নাউ। তুমু দাও। চলকেট দাও। আমু খাবু। আপুই আসু।”
মাইরা অসহায় চোখে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ইরফানের উপর ভীষণ রা’গ হচ্ছে। সে তো বলল আর বাইরে যাবে না।
লাবিব বোনের দেখা না পেয়ে ঠোঁট উল্টে কাঁদতে কাঁদতে সামনে দিকে যায়। ইরফানের মামি লাবিবকে একা একা কাঁদতে দেখে কোলে নেয়। মাইরার ভাই এটা, তিনি চেনেন। লাবিব ভদ্রমহিলার কোলে উঠে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আপুই আশে না আমাল কাছি। আপুই যাবু। আপুই যাবু। আপুই কুলে উবব।”
ইরফানের মামি লাবিবের গাল মুছে দিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলে,
“তোমার আপুই যে কোথায় বাবা। দেখিনি তো। কান্না করে না। আপুই চলে আসবে।”
লাবিব ভদ্রমহিলার কাঁধে মাথা রেখে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। তার আপুই আবার কোথায় হারালো?
এদিকে মাইরা লাবিব এর আর সাড়া না পেয়ে ভয় পায়। বিয়ে বাড়িতে কোথা থেকে কত মানুষ এসেছে। বাচ্চা ছেলেটা যদি হারিয়ে যায়? ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসলো। কান পেতে শোনার চেষ্টা করল, লাবিব এর গলা শোনা যায় কি-না। নাহ মনে হচ্ছে ত্রিসীমানায় নেই। মাইরার কান্না পায়। তার ভাই কোথায় গেল? মাইরা গলা চড়িয়ে ডাকে,
“লাবিব? ভাইয়া আছিস?”
কোনো সাড়া পায় না। তার এবার চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। তামান্না মাইরাকে না পেয়ে আবারও ইরফানের ঘরের সামনে এসে দেখল দরজা আটকানো। মাইরা লাবিবকে আবারও ডাকে। তামান্না বাইরে দাঁড়িয়ে বলে, “মাইরা তুমি ভেতরে কেন?”
মাইরা দ্রুত বলে,
“আপু দরজা টা খুলে দাও প্লিজ! তোমার ভাই আমাকে আটকে রেখে গিয়েছে।”
তামান্না লক ঘুরিয়ে চেষ্টা করল। খুলছে না। প্রায় অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও যখন পারল না। তখন হতাশার সুরে বলে,
“মাইরা ইরফান ভাই হয়তো এটা লক করে দিয়েছে। চাবি ছাড়া খুলবে না।”
মাইরা নিস্তেজ গলায় বলে,
“ওহ আচ্ছা আপু।”
তার চোখ থেকে সত্যি সত্যিই দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। তার ছোট ভাইটাকে কতদিন পর দেখল, একটুর জন্য তাকে রেখে বাইরে গিয়েছিল। আবার এসে নিত। কিন্তুু তা আর হলো না। মাইরা তামান্নাকে জিজ্ঞেস করে,
“আপু লাবিবকে দেখেছ?”
“হ্যাঁ, তোমার কোলে উঠবে বলে কাঁদছিল। আমার আম্মুর কোলে দেখলাম।
তুমি একটু দাঁড়াও মাইরা। আমি ইরফান ভাইয়ের থেকে চাবি আনছি।”
মাইরা লাবিবের কথাটা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর কিছু বলল না। চুপ করে গিয়ে বেডের উপর পা তুলে বসল। হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে রাখলো। কেন যেন তার কান্না পাচ্ছে খুব। কিছুকক্ষণের মাঝেই চোখের কোণ ঘেঁষে কয়েকফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
লাবিবকে তার মা কোলে নিয়েছে। এখন তারা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। লাবিব কাঁদছে গুণগুণ করে। ইরফানের ছোট ফুপি লাবিবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কান্না করে না বাবা।”
লাবিব তার মায়ের গলা জড়িয়ে গলায় মুখ গুঁজে রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
“আমি আপুই যাবু। আপুই কুলে যাব। আপু কুতায়?”
মাইরার মা বারবার চোখ ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকায়। মেয়েটাকে আর একটাবারের জন্যও দেখল না। ভদ্রমহিলা চাতক পাখির ন্যায় মেয়েকে একটিবার দেখতে চান। তার মেয়ের তার উপর খুব অভিমান জমেছে। সে কি আসলেই ভালো মা হতে পারেনি? মাইরার বলা সৎ মা শব্দটা কানে বাজলে এখনো কেন যেন সূঁচের ন্যায় বুকে বিঁধলো। ছেলেটাকে জড়িয়ে নিল। তার ছেলেকে মাইরা খুব ভালোবাসে। যাওয়ার আগে তার ছেলেকে একটিবার দেখতে আসলো না? মেয়েটার তার প্রতি এতো অভিমান? গ্রামে গিয়েও একটাবার তাদের বাড়ি যায়নি। ভদ্রমহিলা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার স্বামী বাইরে অপেক্ষা করছেন। দেরি করলেন তো অনেক সময়। মেয়ের দেখা পেলেন না। ইরফানের মা সহ ফুপিদের জিজ্ঞেস করল, কেউ বলতে পারলো না। আর দেরি করলেন না। এমনিতেই অনেক রাত হয়েছে। গ্রামে পৌঁছাতে হবে। আরও দেরি করলে তার স্বামী তাকে আস্ত রাখবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়ালেন।
লাবিব হঠাৎ-ই শব্দ করে কেঁদে দেয়। বাচ্চা ছেলেটি বোধয় বুঝল সে আর তার আপুই কে দেখতে পাবে না। আর তার আপুই এর কোলে উঠতে পারবে না। কেঁদে কেঁদে বলে,
“মা আপুই যাবু। আপুই কুলে উবব। আমাকে আপুই নিয়ে চলু।”
মাইরার মায়ের চোখের কোণে পানি। এই বাচ্চাটিকে তার সামলাতে এখন খুব কষ্ট হয়। তার আপুই এর অভাব পূরণ করতে পারে না। আজ কতদিন পর তার বাচ্চা তার আপুইকে পেয়ে কত খুশি হয়েছিল। আবার তাকে না দেখতে পেয়ে কাঁদছে। লাবিব তার মায়ের মুখ ঠেলে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আপুই কাচে নিয়ে চলু। আপুই যাবু। আপুই কুতায়? আপুই তুদু চলি যায় আমাল তেকে।”
বাইরে গেলে লাবিব এর বাবা লাবিব কে কোলে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়। বিরক্তও হয় খানিক। ওই মেয়ের মাঝে কি পায় কে জানে! তার ছেলে হয়ে অন্যের মেয়ের প্রতি এতো দরদ আসে কোথা থেকে? লাবিব কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে একপর্যায়ে ঘুমুঘুমু ভাব ধরা দেয় তার চোখে। বাবার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজে বিড়বিড় করে,
“আপুই পুচা। আমাকে কুলে নিই না। তুমু দেয় না। আমাল শামনে আছে না। পুতা আপুই।”
বিড়বিড় করতে করতে কান্নামাখা ক্লান্তি চোখজোড়ায় ঘুম এসে ভিড় করে। কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমিয়ে যায় বাচ্চা ছেলেটি তার আপুই এর জন্য কাঁদতে কাঁদতে।
ইরফান দরজা খুলে তার ঘরে প্রবেশ করে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মাইরা মাথা তুলে তাকায়। ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে যায়, মাইরা দ্রুত বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। ইরফানের দিকে একবার তাকায়, অভিমান-অভিযোগে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। ইরফানকে পাশ কাটিয়ে বাইরে যায়। ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। মাইরার পিছু পিছু যায় আর বলে,
“স্টুপিট, এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন?”
মাইরা ইরফানের কথা শুনলো না। একপ্রকার দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। কয়েকবার পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছে। ইরফান পিছন থেকে ধমকায়। তবে নিচে নামলো না। উপর থেকে দাঁড়িয়ে মাইরার কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলো। মাইরা আশেপাশে কাউকে যেন খুঁজছে। দু’হাতে চোখ মুছে নেয়। তার শ্বাশুড়ি রুমা নেওয়াজ কে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“মা আমার ছোট ভাই লাবিব কোথায়?”
রুমা নেওয়াজ বললেন,
“তুমি কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? বাচ্চাটা তোমার জন্য কাঁদলো দেখলাম। গ্রামে চলে গিয়েছে তারা।”
মাইরা মন খা’রা’প নিয়ে ছোট করে বলে,
“ওহ, আচ্ছা।”
মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। চোখের কোণে পানি। তার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। তার ভাই যে তার কোলে উঠতে চাইলো, সে নিতে পারলো না। তার কাছে চকলেট চেয়েছিল সে দিতে পারলো না। তাকে দেখতে না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে ভাবতেই কেন যেন শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে করল। কতদিন পর তার ভাইটাকে পেয়েছিল, অথচ সে এসে কেঁদে চলে গেল। কান্নাগুলো গিলে নিল। মাথা নিচু করেই ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দ্বারা চোখ মুছে নিল। এরপর ধীরপায়ে ইনায়ার ঘরের দিকে যায়।
ইনায়া তার ঘরেই বসে ছিল মন খা’রা’প করে। তার চোখ ভেজা। এই বাড়ি ছাড়া থাকতে হবে ভাবলেই কেমন দমবন্ধ লাগছে মেয়েটার। ছোট থেকে দুই তিনদিনের জন্য খালা মামা বাড়ি ঘুরতে যাওয়া ছাড়া আর কোথাও যায়নি। আজ সেখানে একেবারে চলে যেতে হবে ভাবলেই দুঃখরা ঘিরে ধরছে।
মাইরাকে দেখে ইনায়া ভেজা চোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা চুপ করে ইনায়ার পাশে বসে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরল। এই বাড়িতে তারেক নেওয়াজ এর পর এই আপুটাই তাকে খুব ভালোবাসে। তার বান্ধবীর মতো। সেও চলে যাচ্ছে ভাবতেই মাইরা নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। তার ভাইয়ের কথাটাও মনে পড়ে। মাইরার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর মাইরাকে ইনায়া ছেড়ে ইনায়ার গালে হাত দিয়ে বলে,
“আপু তুমি কিন্তুু শ্বশুর বাড়ি গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না। আমাকে ভুলে গেলে তোমার জামাইকে সিন্দুকে আটকে রেখে তোমাকে এখানে এনে আবার আমাকে মনে করিয়ে দিব।”
ইনায়া কান্নামাখা চোখেই হেসে ফেলে। অতঃপর বলে,
“তুমি আমাকে ভুলে গেলে কি হবে?”
মাইরা দু’হাতে চোখ মুছে বলে,
“মাইরা কাউকে ভুলে যায় না বুঝলে। নো টেনশন।”
এরপর ইনায়ার সাথে টুকটাক কথা বলে মাইরা বেরিয়ে আসে। ইনায়া আর কিছুক্ষণ পর চলে যাবে। মাইরার খা’রা’প লাগছে। সে চুপচাপ ইরফানের ঘরে এসে দেখল ইরফান ঘরে নেই। মাইরা বেডের এক কোণায় গিয়ে বসে। দু’হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে। তার ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। যতবার ভাবছে তার কোলে উঠার জন্য কেঁদেছে ততবারই তার বাচ্চাদের মতো কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তার মাকেও তো দেখতে পারলো না। আবার কখনো দেখা হবে কি-না! নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে।
ইরফান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মাইরাকে বেডের উপর বসে থাকতে দেখে অবাক হয়। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইল খানিক মাইরার পানে। মাইরা একটু পর পর যেন কেঁপে উঠছে। ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার পাশে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা মাথা তুলল না। একমাত্র এই লোকটার জন্যই তার ছোট ভাইটা কেঁদেকেটে চলে গিয়েছে। জীবনেও কথা বলবে না সে এই লোকটার সাথে। ইরফান মাইরার কোনো রেসপন্স না পেয়ে আবারও ডাকে। নো রেসপন্স। ইরফান রেগে যাচ্ছে। এইটুকু মেয়ে তাকে ইগনোর করছে? দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“হেই স্টুপিট! কি প্রবলেম? স্পিক আপ।”
মাইরা সেভাবেই বসে থাকলো। ইরফান ঝটকা মেরে মাইরাকে টেনে তুলে। মাইরার চোখ বন্ধ। কেঁদেকেটে মুখের অবস্থা যা তা করে ফেলেছে। ইরফান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার মুখপানে। মাইরা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। কাঁদতে কাঁদতে চোখদুটো লাল করে ফেলেছে। ইরফান কথা বলার ভাষা হারায়। মেয়েটা এভাবে কাঁদছে কেন? দ্রুত মাইরার মুখ দু’হাতের মাঝে নিয়ে বিচলিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?”
মাইরা ইরফানের দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকলো। চোখ থেকে আবারও পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফান তার খসখসে হাতে মাইরার নরম গাল মুছে দেয়। আবারও নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
“ব্য’থা পেয়েছ কোথাও? কেউ কিছু বলেছে?”
মাইরা এবারও কিছু বললো না। ইরফান ব্যস্ত হাতে মাইরার হিজাব খুলে পাশে রাখে। এরপর মাইরার গালে হাত দিয়ে কণ্ঠে নমনীয়তা ঢেলে বলে,
“কাঁদছো কেন স্টুপিট গার্ল? টেল মি হোয়াট হ্যাপেন্ড, আই উইল ফিক্স এভরিথিং।”
মাইরার এতো রাগ লাগছে এই লোকটার উপর। তাকে আর তার ভাইকে কাঁদিয়ে এখন এসেছে সব ঠিক করতে। স’হ্যই হচ্ছে না এই লোকটাকে। মায়ের উপর অভিমানের মাত্রা গাঢ় হয়। তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে ভালো কথা, এই দুনিয়াই কি একটা ভালো মানুষ ছিল না? যার মনে অন্তত একটু দয়ামায়া আছে। এই লোকটার গলাতেই তাকে ঝুলিয়ে দিতে হলো। তার আর বাঁচতেই ইচ্ছে করে না। কেউ তো তাকে ভালোইবাসে না। তার একটা ছোট ভাই আছে, তার সাথে সে একটু থাকতে চায়, অথচ সবাই তার সাথে শত্রুতা করতে উঠেপড়ে লাগে। মা তার জন্য অপেক্ষা না করেই তার ভাইকে নিয়ে চলে গেল। আর এই লোক তো তাকে তার ভাইয়ের কাছে যেতেই দিল না।
চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।
গায়ে যা শক্তি ছিল সব শক্তি দিয়ে ইরফানের দু’হাত তার গাল থেকে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। রাগে চিৎকার করে বলে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪০
“পা’ষা’ণ লোক। একটুও দয়ামায়া নেই আপনার? আমি একটু ভালো থাকলে আপনার গায়ে আগুন লেগে যায় তাই না? অ’মানুষ একটা, নির্দয় পুরুষ।”
কথাগুলো বলতে বলতে চোখ থেকে অগণিত অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। আবারও হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে বিড়বিড় করে,
“স্বার্থপর সবগুলো। কেউ আমার কথা দু’টো মিনিটও যদি ভাবতো!”