প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২৬
মিমি মুসকান
হাসপাতাল হচ্ছে সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গা অথচ কোলাহোল কম। বিনা বাক্যে এখানে সবসময় চাপা অস্থিরতা কাজ করে। এই ডাক্তার ছুটছে, তো ওই নার্স। একেকটা জীবন ভীষণ দামী হয়ে উঠে এখানে। একপর্যায়ে নিজেকে যার তুচ্ছ মনে হয় তারা যদি একটিবার দেখত, তার জীবনের শেষ সময়ে কতো গুলো মানুষ ছুটছে অহর্নিশ। তাকে বাঁচিয়ে তোলার ব্যাকুল আবেদন। একটিমাত্রই তো জীবন, এতো তুচ্ছ*তাচ্ছিল্য করে লাভ টা কি? জীবন মূর্ছা গেলে আচমকা সকলের কাছে দামী হয়ে উঠার ব্যাপারটা আজও এক রহস্য। এই রহস্য প্রকৃতি পছন্দ করে দারুণ ভাবে!
আরিনা শেখের জ্ঞান ফিরেছে কয়েক ঘণ্টা হবে। ডাক্তার দুবার এসে চেকআপ করে গেছে। তৃতীয় বার খুব জলদি আসবেন। প্রথমে এসে দেখেছেন স্মৃতি শক্তি ঠিক আছে না, বেঁচে আছো তো? আবার জ্ঞান হারাবে না তো। পরের বার এসে দেখলেন শরীর নাড়াতে পারছে কি না। একটু কষ্ট হলো কিন্তু হাত নাড়াতে সক্ষম হলো। কিছুদিন হুইলচেয়ারে থাকার উপদেশ দিয়ে আপাতত বিদায় নিয়েছেন। তৃতীয় উপদেশ আসছে বলে।
জ্ঞান ফেরার পর ইজান শিকদারকে দেখেছিলো। এখনো সেই আছে। মাঝে একবার মা কে দেখল। এতো বি*রক্তি ঠেকল! কানের কাছে কান্নাকাটি। মেয়েটা সবে সবে চোখ মেলে তাকিয়েছে এখনি তার কান্নাকাটি করতে হবে। বি*রক্ত হয়ে আরিনা নিজেই বলেছে বেরিয়ে যেতে। যত কান্না আছে বাইরে বসে কাদুক। শেষ হয়ে এসে দেখা করা যাবে।
ইজান শিকদার বসে ছিল পাশে নিশ্চুপ ফুলগাছের মতো। তার ঘন কালো কেশ গুলো হাওয়ায় দোল খাচ্ছিল ফুলের ন্যায়। আগ বাড়িয়ে একটি কথাও বলেনি। কিছু জিজ্ঞেস করেনি। পাশে বসে রইল প্রহরের পর প্রহর। আরিনা বুঝতে পারে না, এই ছেলেটার এতো ধৈর্য হয় কিভাবে? ওমন ভালো একটা ছেলে লক্ষ্মী একটা বউ খুঁজে কবেই সংসার পেতে ফেলতে পারে কিন্তু বসে আছে তার আশায়। জীবনে এই প্রথম তার আফসোস হচ্ছে। কেন প্রান্তিক চৌধুরী? ইজান শিকদারকে ভালোবাসলে দোষের কি হতো?
ইজান শিকদার কিছুক্ষণ আগেই কক্ষ ছেড়ে বেরিয়েছে। বেড়িয়েছে ডাক্তারের উদ্দেশ্য। তার সাথে আলাপ আলোচনা করার ছিল। কিন্তু বেরিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দুটো চেনা পরিচিত মানবকে দেখে অবাক হলো না মোটেও। প্রিয়তা প্রান্তিকের হাত চেপে আছে শক্ত করে। সে কি ইজান শিকদারকে ভয় দেখাচ্ছে? ওসব প্রান্তিক চৌধুরীকে তোয়াক্কা করে না সে। এখন প্রান্তিক চৌধুরীর চেয়ে আরিনা ইম্পর্ট্যান্ট।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাদের দু’জনের চোখাচোখি হলো। নিরব যুদ্ধ হলো দৃষ্টির মাধ্যমে। বিনা বাক্যে ইজান শিকদার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ডাক্তারের সাথে দেখা করা জরুরি। শ্বাসরোধ এবার ছেড়ে দিল প্রিয়তা। মনে স্বস্তি মিলল। প্রান্তিকের সাথে তার কোনো কথাবার্তা হলো না। কেনো কিছু হলো না। ভয়ে’র কিছু নেই তো আবার?
রিসেপশনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে প্রিয়তা। এতোটুকু ব্যাপার থেকেই বোঝা যায় প্রান্তিক চৌধুরীর অবহেলা। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাকে এখানে জোর করিয়ে আনানো হয়েছে। সে নিশ্চুপে দেওয়ালের কোণায় ঠায় দাঁড়িয়ে। প্রিয়তার আশেপাশে অনেক মহিলা দাঁড়িয়ে। তার দাঁড়ানো তো সম্ভব নয়!
আচমকা তীব্র সুগন্ধি এসে নাকে ঠেকল। অপরিচিত এই ঘ্রাণ উপস্থিতি , দিচ্ছে কোনো রমণীর। পাশেই দাঁড়িয়ে বোধহয়! টের পাচ্ছে খুব! কাছাকাছি দাঁড়ানো নাকি?
মাথা নিচু করে নাড়িয়ে যাচ্ছে। পায়ের জুতো জোড়া দেখে বুঝে ফেলল কোনো নার্স বোধহয়। তোয়াক্কা দিলো না তেমন। তার দৃষ্টি সামনের দিকে। রিসেপশনের লোক ছেড়ে এবার ডাক্তারকে ধরেছে প্রিয়তা। আজ সকলের মাথা চিবিয়ে খাবে।
পাশের সুগন্ধি ঘ্রাণ আরো জোরালো হচ্ছে। তাকে মা’তাল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। নার্সের মেয়েটা এবার একটু গা ঘেসেই দাঁড়ালো। শরীরের সাথে শরীরের সংস্পর্শ আসতেই প্রান্তিক চৌধুরী এড়িয়ে দাঁড়াল। হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মুক্তো ঝরে পড়ছে যেন। প্রান্তিক চৌধুরী আড়চোখে তাকাল। মেয়েটার হাসি তার চোখে পড়ল। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখের ইশারা দিচ্ছে অন্যকিছু। নার্স মেয়েটি ফিক করে হেসে বলল,
“ভয় পাচ্ছেন?”
প্রান্তিক দাঁত এক পাটি বের করে হাসল। মাথা দুলিয়ে বলল, “জি বউকে অসম্ভব রকম ভয় পাই!”
আবারো হাসির শব্দ! প্রান্তিক হাসল ঠোঁট বাঁকিয়ে। মেয়েটার গলার স্বর অমায়িক! অনেক পাঠক বলবে আমি বানিয়ে বলছি কিংবা বেশি বলছি । না! যাহা হচ্ছে তাহাই! মেয়েটি অসম্ভব রূপবতী তা আমার মতামত। গুলিয়ে ফেলবেন না যেন?
“হ্যান্ডসাম ছেলেরা বউদের ভয় না পেলে ভালো লাগে না। একটু আধটু ভয় পেতে হয়।”
“আমি একটু আধটু না বোন, পুরোটাই পাই!”
“বোন বানিয়ে ফেললেন? ইশ সেবার না হাত ধরে বললেন আমি তোমার রোমিও তুমি আমার জুলিয়েট!”
হাস্যোজ্জ্বল মুখখানি পাংশু’বর্ণ ধারণ করল মূহুর্তে। স্মৃতির পাতা নাড়িয়ে যাচ্ছে দ্রুত। মেয়েটিকে এখন চেনা চেনা লাগছে। বছরখানেক আগের কথা, তখন সেবার গাড়ি দুর্ঘট’নার পর হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছিল সে। তেমন গুরুতর কিছু না পায়েই একটু চোট পেয়েছিল। মেয়েটির সাহসের কারণে এতোক্ষণ বাদে প্রান্তিকের মাথায় ঢুকল। মলিন হয়ে যাওয়া হাসি আবারো ফিরিয়ে আনল। মিষ্টি সুরে বলল,
“কিন্তু আপনি তো প্রত্যাখ্যান করছিলেন! মনে আছে, বলেছিলেন আমি আপনার রোমিও না!”
মেয়েটির হাসির স্বর দ্বিগুণ হতে হয়ে চেপে গেলো। হালকা কেশে গলা শীতল করে নিল। মধুর স্বরে বলল, “তা রোমিও সাহেব নতুন জুলিয়েট জুটিয়ে ফেলেছেন দেখছি!”
“আমরা সকলেই তো রোমিও হতে চাই, জুলিয়েট পাবো না তা কি করে হয়?”
“কথার তেজ এখনো আগের মতন। শুধরে গেছেন দেখছি! তা অফার কি এখনো আছে?”
“এটা কি রেস্টুরেন্ট পেয়েছেন ম্যাম! সিজন সিজন নতুন অফার নিয়ে হাজির হবো!”
“ভালো কথা বলতে শিখে গেছেন।”
“আগেও বলতাম। আপনি কানে নেননি?”
“হুমম এখনো ফ্লার্টিং করছেন।”
“উহু ভুল বুঝবেন না। ( হাতের অনামিকা আঙুল দেখিয়ে বলল) সত্যি শুধরে গেছি।”
“মানতে কষ্ট হচ্ছে!”
“মেনে নিন। আমার বউ এদিকেই আসছে। এদিক থেকে ওদিক হলে আপনাকে সহ আমাকে জ’’বাই করবে। সাবধানে থাকুন ম্যাডাম!”
প্রান্তিক সামনে ফিরল। প্রিয়তা ততোক্ষণে তার কাছেই চলে এসেছে। নার্স আর তার বর মশাইয়ের আলাপ দূর থেকেই খেয়াল করছিলো সে। ভ্রু যুগল কুঁচকে নাক খাড়া করে রেখেছিলো। কান খাড়া করে শোনার আগেই প্রান্তিক ফিরে তাকাল। চালাক বটে লোকটা। প্রান্তিক এগিয়ে এসে তার হাত আঁকড়ে ধরে বলল, কথা হয়েছে? খবর কি এখন?”
প্রশ্নের ভাজে প্রশ্ন ছুঁড়ল। তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বরে,
“মেয়েটা কে?”
“নার্স!
“আপনি চিনেন নাকি? এতোক্ষণ কি কথা বলছিলেন?”
“কিছু না এমনি?”
“অনেক তো হেসে হেসে কথা বলছিলেন আর বলছেন কিছু না? দাঁড়ান আমি জিজ্ঞেস করে আসি।”
“আরে আরে কি করো। বলছি বলছি, বছর খানেক আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম তখন মেয়েটির সাথে দেখা হয়েছিল!”
“এখনো কথা বলেন?”
“এটা জিজ্ঞেস করলে? কই ভাবলাম হাই হুতোশ করবে। জিজ্ঞেস করবে কি জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলাম আর তুমি কি না মেয়েটিকে নিয়ে পড়ে আছো? আমার ইম্পর্ট্যান্টস কি নেই তোমার কাছে?
প্রিয়তা কিন্তু বলতে গিয়েও থেমে গেল। চক্ষু শীতল করে মেয়েটির দিকে ফিরল। মেয়েটি দাঁড়িয়ে নেই চলে গেছে। ইনসিকিউরিটি ফিল সে করে না। প্রান্তিক নিশ্চিত এখন তাকে ভীষণ ভালোবাসে। মারাত্মক ভালোই না হয় বাসে। তবু ভয় হয়, এক অতীত নিয়েই কি ঝামেলায় আছে। আরেকটা এসে যদি আবার হাজির হয়। ভালোবেসে কি ফাঁদেই না পড়ে গেছে মেয়েটা।
দুজনে যাচ্ছে আরিনার কক্ষের দিকে। প্রান্তিকের হাতের মুঠোয় প্রিয়তার হাত। বেশ শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল, “ডাক্তার কি বলল?”
“এখন সুস্থ আছে। কথাবার্তা বলতে পারে তবে হাঁটা চলা নিয়ে অসুবিধে হবে। স্ট্রে’স দেওয়া যাবে না একদম!”
প্রান্তিক ফট করে থেমে গেল। বলল, “তাহলে আমাদের যাবার দরকার নেই। আমাকে দেখেই ও উত্তেজিত হয়ে পড়বে।”
প্রিয়তা বি’রক্তি নিয়ে তাকাল। হাত টেনে বলল, “বাহানা রেখে সাথে চলুন। কতো কুকর্ম যে করবেন আপনি!”
“আমি কোনো কুকর্ম করিনি!”
“তো কি করেছেন? সাধু সন্ন্যাসী নাকি আপনি? পুজো করব এমন কাজ ও তো করেননি?”
প্রান্তিক মুখ বুজে শুনে নিল সমস্ত কথা। মুখ বুজে কথা শোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ইদানিং খেয়াল করল, তার ধৈর্য ভীষণ বেড়ে গেছে।
দুজন দাঁড়িয়ে কক্ষের সামনে। প্রিয়তা হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, “যান আপনি। আমায় দেখে হাইপার হয়ে যেতে পারে?”
“তা ঠিক, আমায় দেখে খুশি হয়ে চুমু টুমু খেলে তুমি কষ্ট পাবা!”
প্রিয়তা চমকে তাকাল। কি বলল লোকটা! প্রান্তিক দাঁত বের করে হেসে বলল, “চলো আমার সাথে, নজরে রাখতে পারবে!”
“এতো নজরে রাখতে পারব না। যার ভালো থাকার, সাথে থাকার এভাবেই থাকবে। শত নজরে রেখেও কোনো কাজ হবে না। যার থাকার ইচ্ছা এভাবেই থাকবে।”
“আমার তো সাধ জনম মরণের পরেও তোমার সাথে থাকার!”
“যা কার্যকলাপ করছেন মনে তো হয় না আমরা একসাথে থাকতে পারব।”
“এজন্য তো প্রায়শ্চিত্ত করতে এলাম।”
“যান এবার!”
প্রান্তিক দম নিল। দরজা খুলে পা বাড়াল ভেতরে। ঠান্ডা শীতল রুম, ফুরফুরে বাতাস ঢুকছে জানালা দিয়ে। পুরো রুম স্বচ্ছ, শুভ্র! মাঝে বিছানা পেতে শুয়ে আছে আরিনা। সাদা চাদরে আবৃত তার দুর্বল দেহ। দৃষ্টি জানালার দিকে! একপাশে কেবিনেটে কিছু ওষুধ পত্র পড়ে আছে অন্যদিকে মনিটরিং ডিভাইস। আইসিইউ তে ছিল গত ১৭ ঘণ্টা। জ্ঞান ফিরেছে ৫ ঘণ্টা আগে। এখন কিছুটা সুস্থই বলা যায়।
কানের কাছে খসখস পায়ের শব্দে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করল না সে। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কণ্ঠস্বরে কপালে ভাঁজ পড়ল কিছুটা। বুকের হৃদস্পন্দন ছুটল তরঙ্গ বেগে। সত্যিই কি সে?
মুখ ঘুরিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির মুখশ্রী দেখে তব্ধা খেয়ে গেল। কোটর থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল কয়েকটা। তবু চোখ মুখ শক্ত করে রাখল। প্রান্তিক চেয়ার পেতে এগিয়ে এসে পাশে বসল। ঘড়ির কাটা ঘুরছে আনমনে। মিনিট কয়েক পেরুনোর পর সে বলতে শুরু করল,
“এখন কেমন আছো?”
“ভালো!” কণ্ঠ শান্ত, শীতল, নিষ্প্রাণ! যেনো কোনো আগ্রহ নেই। প্রান্তিক ঠোঁট কামড়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়েনি। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। অপরিচিত পরিবেশে মানিয়ে নিতে সময় লাগল বেশ। আরিনা চাইছে প্রান্তিকের উপস্থিতি ভুলে যেতে। কিন্তু নিঃশ্বাসের শব্দ বার বার উপস্থিতির জাগান দিচ্ছে। অতঃপর সে নিজে থেকেই বলল,
“তুমি এখানে?”
“হ্যাঁ, তোমায় দেখতে এলাম!”
“নিজ থেকে হঠাৎ?”
“আসতে চাইনি। ও জোর করে নিয়ে এলো। বলছে এখান তোমার পরিস্থিতির জন্য একটু হলেও আমি দা’য়ী!”
আরিনা উপরে তাকাল। চক্ষুতে কেবল সাদায় আবৃত কংক্রিটের দেওয়াল। কণ্ঠে রুক্ষতা এসে ঠেকল।
“কেউ না, আমিই বুঝি দায়ী! এখন বুঝছি কাউকে সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে নেই।”
কিছুক্ষণ দম নিয়ে বলেই ফেলল কথাটা।
“আমি তোমার কাছে মাফ চাইতে এসেছি।”
“ও তোমায় জোর করে আনল বলে?”
“না, আমিই বলছি!”
আরিনা ঘুরে ফিরল। বহুদিন বাদে তার চেহারা দেখল। ওই তো ঢেউ খেলানো চুল গুলো সাজিয়ে রেখেছে শক্ত করে। মুখে তার সবসময় দুষ্টুমি একটা ভাব থাকে। ভাব গম্ভীরতা বলতে কখনো ছিলো না। সবকিছুতে খেয়ালীপনা। বেপরোয়া ভাব, কোনো কিছুতে যায় আসে না যেন। বাদামী রঙের চোখজোড়া সর্বক্ষণ যেন কিছু বলার প্রয়াস করে। একটু বাদে বাদে ঢোক গিলে সে। চোখের পাতার বারংবার উঠানামা বোঝায় ভেতরে ভেতরে কতোটা অস্থির সে। মুখশ্রী তো একই, আগের মতোই! তাও কেন চিনতে কষ্ট হচ্ছে!
আরিনা মুখ ফিরিয়ে নিল। হেসে বলল, “তোমায় আমি চিনি না। এই প্রান্তিক চৌধুরী কে আমার বড় অচেনা লাগে!”
“সত্যিই বলছো। আজকাল আয়নাতে নিজেকে দেখেও চিনতে পারি না।”
“মশকরা করছো?”
“না করছি না। আরিনা, এই পৃথিবীতে কতো মানুষেরই বিচ্ছেদ হয়। বিরহ সবার থাকে। সব বিচ্ছেদ কি প্রতিহিং’সা দরকার?”
“জানি না। আমি জানতে চাইনি।”
প্রান্তিক উঠে দাঁড়ালো। শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো, “আমি আসছি!”
বলে দাঁড়াল না। উল্টো পথে পা বাড়ল। আরিনা সহসা বলে উঠলো, “আমার মনে হয় আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না প্রান্তিক!”
প্রান্তিক ফিরে তাকাল না। ওপাশ থেকেই বলে উঠলো, “ভালো। এটাই তো দরকার!”
“হ্যাঁ, তোমার খুব প্রয়োজন ছিল!”
প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ২৫
“তোমার কি ছিলো না?”
“জানি না! আমরা অপ্রয়োজনীয় কাজ বেশি করে থাকি!”
সে হাসল বুঝি ঠোঁট বাঁকিয়ে। নরম স্বরে বলল, “খেয়াল রেখো!” অতঃপর বেরিয়ে গেল। আরিনা আবারো দৃষ্টি ভেরাল জানালার দিকে। ঠোঁট কামড়ে অশ্রু আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে খুব। কথা শুনলে হয়!