প্রেমসুধা পর্ব ৬৬

প্রেমসুধা পর্ব ৬৬
সাইয়্যারা খান

পৌষ’কে নিয়ে বাড়ীতে আসতে চেয়েছিলো হেমন্ত কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর পৌষ না করেছে। এখন তৌসিফ’কে না বলে গেলে আবার রেগে যাবে। এই লোক হুটহাট রেগে যায়। সেই রাগ সামলাতে পারে না পৌষ। হেমন্ত এতে রেগে আছে। গাড়িতে করে তৌসিফে’র বাসার সামনে এনে চৈত্র’কে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— ওকে ভেতরে দিয়ে আয়।
পৌষ আহত চোখে তাকালো। মিনমিন করে বললো,
— হেমু ভাই….
হেমন্ত যেন ওর কথা শুনলোই না বরং চৈত্র’কে ধমকালো। পৌষ’র নাক পিটপিট করে। এখনই যেন কান্না চলে আসবে। হেমন্ত গম্ভীরই রইলো। পৌষ ভাইয়ের হাত ধরে। ধরা গলায় ক্লান্ত স্বরে বলে,

— ভাই, উনি রাগ করবে না বলে যদি যাই।
— তোর ওনিকে কত মাস ধরে চিনিস? ছোট থেকে পেলে বড় করলাম আমরা। নিজের বাড়ীতে যেতে দিবে না, থাকতে দিবে না। এটা কেমন আচরণ?
— উনি সবটা জানে ভাই।
— জানুন! আমি পালি নি? আদর করি নি? এখনও কি ফেলে দিব?
পৌষ চোখ নামিয়ে ফেললো। জ্ঞান ফিরলেও ভালো লাগছে না। পৌষ হেমন্তের হাত ছাড়লো। বললো,
— ভেতরে এসো না ভাই।
— যা তুই।
— আমলা যাই?
ইনি,মিনি একতালে বললো। পিহা একটু গা ঝাড়া দিলো। সম্মতি দিয়ে বললো,
— সাথে আমিও।
জৈষ্ঠ্য একটু গলা খেঁকিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— না মানি আমিও চলি। ওদের দেখে নিয়ে আসব।
হেমন্ত কপাল কুঁচকে তাকালো। এদের মতো তারও বলতে মন চাইছে সে যাবে সাথে। পৌষ’টাকে একা ছাড়তে মন চাইছে না কিন্তু সম্পর্কের মারপ্যাঁচে পড়ে কথাটা বলা হলো না। শান্ত স্বরে শুধু বললো,
— ওকে ভেতরে দিয়ে সোজা চলে আসবি সব-কয়টা।
সবগুলো যেন লাফিয়ে উঠে। গাড়ি থেকে টপটপ করে নামে। পৌষ হেমন্তের হাত ধরে। ছোট্ট সেই পৌষ’র মতো আবদার ধরে,
— এসো না হেমু ভাই।
হেমন্তের মন ভাঙে। অভিমান ভেঙে টুকরো হয়। পৌষ’র মাথায় হাত দিয়ে বলে,
— আজ না পৌষ। ভাই আসব আরেকদিন।
— আজ কেন নয়?
— বড় হচ্ছিস না ভাইয়ের বোন। তোর শশুর বাড়ী এটা। চাইলেই কি আসা যায়? সম্পর্কে বড় না আমি? হুটহাট যাওয়া বেমানান।
পৌষ যেন বুঝলো। মাথা নিচু করে নেড়ে বললো,

— একদিন এসো তাহলে।
— আসব।
— যাব?
— যাহ।
পৌষ হাঁটা ধরলো। একহাতে ধরা পিহা অন্য হাত জৈষ্ঠ্য। পেছনে চৈত্র বোনের ঢাল হয়ে যাচ্ছে। হাঁটুর সমান ইনি,মিনি তাদের আপা’র সামনে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। হেমন্ত পেছন থেকে দেখলো। পৌষটা তাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। দূরত্বটা তৌসিফ তৈরী করছে। হেমন্ত বুঝে না এমন না। হয়তো তৌসিফ নিজের জায়গায় ঠিক কিন্তু তার কি উচিত হচ্ছে এভাবে পৌষ’কে দূর করা। হেমন্ত চোখ বুজে সিটে হেলান দিলো। মনে পরলো সেদিনকার কথা যেদিন তৌসিফ প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো। বাবা-চাচা মেনে নিলো। তৌসিফ কঠিন ভাবে শর্ত দিলো বিয়ের পর পৌষ এ বাড়ী পা রাখবে না। চাচারা চট করে মেনে নিলো। হেমন্ত প্রতিবাদ করেছে। বাবা কিছুটা দমেছিলো কিন্তু ততক্ষণে তৌসিফ জোর দেয়া শুরু করে। সোজা নেমে আসে হুমকিতে। তার কাছে বিয়ে না দিয়ে পৌষ’কে আর কোথাও বিয়ে দেয়া যাবে না। তার বাবার নাকি ইচ্ছে ছিলো। তার ফুপির মেয়ে, অধিকারও ছিলো।
সেদিক দিয়ে ভাবলে তৌসিফ যতটুকু আসা-যাওয়া করতে দিচ্ছে তাতেই তো শুকরিয়া। ক্ষুদ্র একটা শ্বাস ফেলে হেমন্ত। তার চাওড়া শুধু পৌষ সুখী হোক। ছোট্ট একটা চাওয়া। হেমন্ত জানে তৌসিফ তাকে ভালো রাখবে বরং রাখছে।

পাঁচ ভাই-বোন নিয়ে ভেতরে ঢুকলো পৌষ। তার মনটা খুবই উৎফুল্ল। ওদের নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো মিনু হা করে বসে টিভি দেখছে। ফ্লোরে দুইজন বুয়া বসা। পৌষ’কে দেখে ওরা উঠে দাঁড়ালো। পৌষ হেসে বললো,
— আপনারা টিভি দেখুন খালা।
বুয়া দু’জন হাসিমুখে এগিয়ে এলো। বললেন,
— আপনার ভাই-বোন, কত্ত সুন্দর বাচ্চা দুইটা।
পৌষ’র ভালো লাগলো। ওর ভাই-বোনদের প্রশংসা শুনতে ওর ভালো লাগে। পৌষ ওদের নিয়ে ভেতরে এলো। মিনু ডাগর চোখে শুধু দেখলো। ইনি, মিনি গিয়ে উঠে ওর পাশে বসে। টিভির রিমোট হাতে নিতেই মিনু চাপা স্বরে বলে উঠলো,

— পাল্টাবা না। বুঝসো?
দুই বোন পিটপিট করে তাকালো। ডাকলো,
— আপা?
পৌষ তাকাতেই এক স্বরে তারা বলে উঠলো,
— কার্তুল ছেলে দাও।
মিনু চোখ বড়বড় করে তাকালো। পৌষ এসে দুই বোনের হাত ধরে। বলে,
— আপার রুমে চল। ওখানেও টিভি আছে।
পৌষ ওদের নিয়ে রুমে যায়। ভাই-বোনদের নিজের রুমে বসায়। চৈত্র বলে উঠলো,
— আপা হেমু ভাই বকলে?
— বকলে আমার নাম বলবি তাহলেই দেখবি চুপ করে গিয়েছে। তোর দুলাভাই থাকলে দেখতি এতক্ষণে হেমু ভাইকেও ভেতরে নিয়ে আসতো।
বলতে বলতে আলমারি খুলে তার লুকিয়ে আনা সব চকলেট, বিস্কুট বের করতে লাগলো। জানালো কিভাবে চুরি করে এসব এনেছে। নরম কুসনটা ইনি টেনে নিলো৷ ছোট্ট সাদা মাখনের মতো একটা বালিশ। মিনি ওটায় গাল লাগিয়ে দুই বোন একসাথে বলে উঠলো,

— কত্ত নলম। বলো আপা? এটা নেই?
পৌষ ওদের গালে চুমু দিলো। সবকিছু পাঁচ ভাগ করে বললো,
— বাসায় কেউ মা-রামারি করবি না। ঠিক আছে?
ওরা মাথা নাড়তেই পৌষ বলে,
— এখানে থাক। কি খাবি বল? কি রাঁধব?
চৈত্র বোনের হাত ধরে। বলে,
— আপা, তুমি অসুস্থ। রেস্ট নাও একটু। আমরা এখন যাই? হেমু ভাই অপেক্ষা করছে।
— তাহলে তো ভালো হয়। হেমু ভাইয়ের জন্য প্যাক করে দিব নে। মুরগী ভাজব? তোদের দুলাভাই থাকলে এতক্ষণ দেখতি…..
বলতে বলতে ওর ফোনটা বেজে উঠলো। পৌষ দেখেই হাসি মুখে তা হাতে তুলে। বলে,
— দেখ, তোদের দুলাভাই কল দিয়েছে। এখন যদি শুনে তোরা এখানে তাহলে দেখবি যেতেই দিবে না। বস, আমি মুরগী ভিজিয়ে আসি।
বলতে বলতে পৌষ রুম থেকে বের হয়। ফোন রিসিভ করে খুশি খুশি গলায় বলে,

— অ্যাই আপনি কই? জানেন বাসায় কারা এসেছে? আমার…..
— কোথায় তুমি?
মাত্রাতিরিক্ত গম্ভীর কণ্ঠ। পৌষ’র হাসি নিভতে লাগলো তবুও তা সচল রেখে বললো,
— কোথায় আবার? বাসায়? আচ্ছা, শুনুন না….
— মীরা’র সাথে দেখা হয়েছে?
পৌষ’র কথা শেষ করতে দিলো না তৌসিফ। পৌষ ঢোক গিলে বললো,
— আরে আপনি ঠিক বলেছেন। ঐ মহিলা পা’গল। আমাকে আজও উল্টোপাল্টা কথা বলছিলো।
— তুমি শুনেছো?
— আরে বাদ দিন না। বাসায় আমার সব ভাই-বোন এসেছে। প্রথম সবাই একসাথে। ওদের আজ….
তৌসিফ যেন কিছুই শুনলো না। রাগী এবং গম্ভীর তেজ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

— বাসায় আসছি আমি। রুম থেকে বের হবে না।
পৌষ মুখ খুলে কিছু বলার আগেই তৌসিফ কল কেটে দিলো। পৌষ’র মুখ চুপসে গেলো। এতক্ষণে থাকা হাসিটা ধপ করে নিভে যায়। বুকটা না চাইতেই ধুকপুক শুরু হয়। কপালে জমা হয় বিন্দু বিন্দু ঘাম। তৌসিফ রেগে আছে। এখন যদি বাসায় এসে চিল্লাপাল্লা করে? বলা তো যায় না রাগের মাথায় যদি থাপ্পড় টাপ্পড় দিয়ে বসে?
পৌষ’র ভেতর শুকিয়ে আসে। ফোন রেখে তারাতাড়ি ভেতরে যায়। পিহা উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আপা, দুলাভাই কি আসছে আমাদের কথা শুনে?
পৌষ হাসার চেষ্টা করে। তারাহুরোয় বলে উঠে,

— আআরে, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম৷ তোদের দুলাভাই আসতে আজ রাত হবে। আফসোস করলো। আমি আমিও কত গাধা। হেমু ভাই জুতা পিটা করবে সবকটাকে। তারাতাড়ি যা। অপেক্ষা করছে। জানালা দিয়ে দেখলাম রেগে আছে মনে হয়।
এক প্রকার তারাহুরো করে ওদের দরজা দিয়ে বের করে পৌষ। ওর মনে হচ্ছে ওর ভেতর ফেঁটে যাচ্ছে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে ঠিক যেন দাবিয়ে রাখা দাবানল। ওরা গাড়িতে উঠা মাত্রই পৌষ দরজা লাগাতে যায় তখনই দেখে তেড়ে আসতে ওর দিকে তৌফিকের বউ। পৌষ ভাবে মুখের উপর দরজা লাগালে বিষয়টা অপমানজনক তাই দাঁড়িয়ে থাকে ঠাই। আদিত্যের মা তখন রাগে চিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,
— লোভী চোর কোথাকার। ভাই বোন এনে এভাবেই সব পাচার করে। ছোট লোক বিয়ে করেছে তৌসিফ। এর ছোট লোকের ভয়ে ছাদে কাপড়ও দেই না৷ না জানি কবে কি চুরি করে।
— ধরুন সেই ছাদ থেকে আপনি পড়ে গেলেন। বিষয়টা কেমন হয় বড় ভাবী?
আদিত্যের মা চমকে উঠলেন। তার ঠিক পিছনে তৌসিফ। কথাটা সেই বলেছে। গলাটা তার খড়খড় করে উঠলো। পৌষ দরজা ছেড়ে ভেতরে যেতেই আদিত্যে’র মা কেটে পরতে চাইলো। তৌসিফ পেছন থেকে বললো,
— সাবধানে বড় ভাবী। সিঁড়ি দিয়ে সাবধানে নামুন।
মহিলার ঘাম ছুটে গেলো। তৌসিফ’কে ভরসা নেই। সবেই খবর এসেছে মীরা’র গাড়ি রাস্তায় উল্টে গিয়েছে।

পৌষ চুপ করে সোফায় পা তুলে বসে ছিলো। তৌসিফ ঢুকেই শব্দ করে দরজা লাগালো। বাড়ীতে উপস্থিত সকলেই কেঁপে উঠে। আস্তে করে টিভি বন্ধ করে মিনু পালালো। বুয়ারা রান্না ঘরে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো কিন্তু পৌষ? পৌষ কিভাবে পালাবে এদের মতো? তার পালানোর রাস্তা কোথায়? আদৌ কি কোন রাস্তা আছে?
তৌসিফ এসেই ঠান্ডা স্বরে বলে,
— রুমে যাও।
পৌষ বসেই রইলো। তৌসিফ ওর হাতের কবজি চেপে ধরে টেনে দাঁড় করায়। পৌষ’র চেপে রাখা কান্না ছিটকে বেড়িয়ে আসে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— আমি যাব না। ছাড়ুন আমার হাত।
তৌসিফ ছাড়ে না৷ রুমে নিয়ে পৌষ’কে খাটে রেখে দরজা লাগায় শব্দ করে। পৌষ কেঁপে উঠে। তৌসিফ দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো,

— কেন কাঁদছো?
— কথা বলো!
এবারেও উত্তর আসে না৷ তৌসিফ এবার পৌষ’র চোয়াল চেপে ধরে। পৌষ ওর হাত সরিয়ে দিলো। চিৎকার করে বললো,
— কি বলব? কি শুনতে চান আপনি? আমি কাঁদছি কারণ আমি আপনাকে ভয় পাই৷ ভয় লাগে আপনাকে আমার। আতঙ্কে থাকি আমি৷
পৌষ ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। তৌসিফ ওর থুতনি ধরে নিজের মুখ বরাবর করলো। বললো,
— আমাকে ভয় পাও?
পৌষ’র কান্না বাড়লো। তার ভাই-বোন গুলো তার জানের টুকরো। তাদের আজ এক প্রকার তাড়িয়ে দিয়েছে পৌষ। ওর বুক ফেঁটে কান্না আসছে। তৌসিফ দাঁত চেপে খড়খড়ে গলায় বললো,
— মীরা’র সাথে কি কথা হয়েছে?
পৌষ’র গা শিউরে উঠলো৷ কোনমতে বললো,

— ক…কথা হয় নি।
— মিথ্যা!
— শুধু উনি বলেছে।
— আর তুমি? বিশ্বাস করে নিয়েছো? এই! ও কি বলেছে?
পৌষ কেঁদেই যাচ্ছে। তৌসিফে’র ফোন বেজে উঠলো। তৌফিক ফোন করেছে। পৌষ’কে ছেড়ে কল তুললো ও। চওড়া গলায় কথা বলছে তৌসিফ। পৌষ যতটুকু বুঝলো তা হলো মীরা’র গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। তারজন্য তৌফিক তৌসিফ’কে দায়ী করছে। এছাড়াও একটু আগে নিজের বড় ভাবীর সাথে বাজে ব্যবহার করায় ধমকাচ্ছেন তিনি। তৌসিফ উন্মাদের মতো ফুসফুস করতে লাগলো৷ রাগে তার কপাল ছিঁড়ে যাচ্ছে। বড় ভাইকে ছাড় দিলো না সে। বাজখাঁই গলায় বললো,
— জানে মে’রে দিব আমার সংসার ভাঙতে আসলে। ঐ মহিলাকে আগেও ওয়ার্নিং দিয়েছি। আজ গাড়ি উল্টেছে দুইদিন পর ওর জীবন উল্টে দিব আমি৷ আমি কে তা ভুলে যায় কেন?
তৌসিফ ফোন কেটে দিলো। পৌষ মুখ চেপে ধরলো। তার বমি পাচ্ছে। ভয়ে বমিও আসছে না। সামনেই পানির গ্লাস কিন্তু খাওয়ার সাহস পাচ্ছে না৷ তৌসিফ এগিয়ে আসতেই পৌষ সরতে চাইলো কিন্তু তার আগেই ধরা খেলো। পৌষ মোচড়ালো। ছাড়া পেতে চাইলো। তৌসিফ ধমক দিলেও পৌষ থামে না। কাঁূতে কাঁদতেই বলে,

— ছাড়ুন আমাকে। চোর আমি। সব আমার ভাই-বোনদের দেই?
— মিথ্যা এটা? এসেছিলো তো তোমার ভাই-বোন। একটা কথার এত…
পৌষ’র মাথায় কথাটা ঢুকলো না৷ তার দূর্বল মস্তিষ্ক তাকে শুধু বুঝালো তৌসিফ তাকে চোর ভাবছে। পৌষ তার ভাই-বোনদের সব দিয়ে দেয়। ওর মাথা ঘুরে গেলো। আজ পর্যন্ত একটা সুতাও তো দিলো না ও। যা করার তৌসিফ করে। আজও তৌসিফে’র অনুমতি ছাড়া একটা চকলেট দেয় নি৷ যা দিয়েছে তার সবটা পৌষ টুকটাক করে লুকিয়ে এনেছে। পৌষ তৌসিফ’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ওর বুকটা উঠা নামা করছে। দৌড়ে রুম থেকে বের হতে হতে বললো,
— সব এনে দিব। সব ফিরত দিব। আমার ভাই-বোন ফকির না৷ ওরা না খেয়ে থাকে না।
তৌসিফ উঠে ওকে ধরতে ধরতে পৌষ বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। তৌসিফ সমান তালে চিৎকার করে গেলো। বুয়াদের ডাকতেই তারা দরজা খুললো। তৌসিফ পিছনে দৌড়ে দিলো। ও কি বললো আর পৌষ কি বুঝলো? কথাটা শেষ ও করতে দিলো না। তৌসিফ নামতে নামতে পৌষ সিএনজিতে উঠেছে। দূরত্ব নগন্য। তৌসিফ পিছু নিলো। এই মেয়ে তাকে জ্বালিয়ে মা’রবে। পৌষ নিজদের বাসার সামনে নেমেই বললো,

— ভাড়া পাঠাচ্ছি।
বলতে বলতে দেখলো পেছনে তৌসিফ। পৌষ ভেতরে দৌড়ে ঢুকলো। সোজা গেলো পিহা’র রুমে। ততক্ষণে ওকে দেখে শ্রেয়া এসেছে। পিহা থেকে সব নিয়ে দুই ভাইয়ের রুম থেকে চকলেট গুলো নিয়ে নিলো। তৌসিফ ভেতরে ঢুকা মাত্রই হেমন্তও বের হয়েছে। বাসায় শুধু বড় চাচা ছিলেন। পৌষ’কে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন৷ ইনি,মিনি’র রুমে ঢুকে চকলেট সহ ঐ কুসনটা নিতে গেলেই দু’জন টেনে ধরলো। টলমলে চোখে তাকিয়ে বললো,

— আপা, এতা না দেই?
তৌসিফ পৌষ’র হাত ধরে বললো,
— ছাড়ো এটা।
পৌষ ধমকে উঠলো,
— ছাড় এটা। এটা ওনাদের। আমার না৷ ফেরত দিতে হবে। চুরি করে এনেছিলাম। চোর আমি।
বলেই এক টানে নিয়ে নিলো পৌষ। পা’গলের মতো চকলেট গুনে বললো,
— একটাও কেউ খায় নি। সবগুলো আছে। গুনে দেখুন। দেখুন।
তৌসিফে’র বুকে অসহনীয় জ্বালা হলো। পৌষ’র হাত শক্ত করে ধরে বললো,
— সোজা বাসায় এখন৷
পৌষ ওভাবেই শ্রেয়া’কে বললো,
— ভাবী, বাবুকে যে ব্রেসলেট দিলো ওটা ফেরত দিয়ে দাও। ওনারা চোর ভাবে আমাকে। ছোট্ট জানটা, ওর ফুপির শশুর বাড়ীর জিনিস পরতে পারবে না। ফেরত দাও। এখনই দিয়ে দাও। বলতে বলতে নিজের গলার পাতলা চেইনটা এক টানে ছিঁড়ে শ্রেয়ার হাতে দিলো। বললো,

— এটা আমার। আমার মায়ের।
তৌসিফ দাঁতে দাঁত চেপে পৌষ’র চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে। মুহুর্তে তৌসিফে’র ডান হাতের শক্ত নখগুলো ডেবে গেলো পৌষ’র গালে। পৌষ তখনও বললো,
— ভাবী নিয়ে এসো।
বড় চাচা এতক্ষণে এগিয়ে এলেন৷ জিজ্ঞেস করলেন,
— কি হয়েছে পৌষ?
— কিচ্ছু হয় নি।
শ্রেয়া ব্রেসলেট আনতেই পৌষ তা নিয়ে নিলো৷ তৌসিফে’র হাত ধরে বললো,
— চলুন৷ আমরা চলে যাই।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে যেতে যেতে পৌষ বললো,
— আজকের পর থেকে আমি তোমাদের কাছে মৃত। কেউ কখনো আমার খোঁজ নিবে না৷ ফোন দিবে না৷ আমি আমার মা-বাবা’র মতোই মৃত।

প্রেমসুধা পর্ব ৬৫

খুব স্বাভাবিক ভাবেই পৌষ বিদায় নিয়ে চলে গেলো। গাড়িতে উঠে চুপ করে রইলো। তৌসিফও কথা বললো না৷ গাড়ি চললো কম সময়। ওরা পৌছাতেই পৌষ আগে দৌড়ে উঠলো। আদিত্যদের ফ্লাটের সামনে এসে এক নাগাড়ে কলিং বেল বাজালো৷ তৌসিফ ওকে ধরে সরানোর আগেই হাতে থাকা চকলেট, বিস্কুট আর কুসন পৌষ ভেতরে ছুঁড়ে দিলো। ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,
— চুরির মাল ফেরত দিয়ে গেলাম৷
পৌষ চলে গেলো। তৌসিফও চলে গেল। এদিকে হা করে তাকিয়ে আছে আদিত্য’র মা৷ অপমানে গা জ্বলছে তার।

প্রেমসুধা পর্ব ৬৭