ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৬

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৬
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

* অয়ন কলটা পিক করতেই অনু বেশ বিধ্বস্ত কন্ঠে বলে উঠে
— ভাইয়া কোথায় আছিস তুই?
— এই তো অফিসে যাচ্ছি। কেনো কি হয়েছে? সব ঠিক আছে তো?
— না ভাইয়া কিছু হয় নাই, সব ঠিক আছে। তুই একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয় প্লিজ।
— এই অনু কি হয়েছে বল আমায় আমি বাড়ি আসছি এখনি। বল কি হয়েছে? অধরা ঠিক আছে তো?
— ভাইয়া তুই শিগগিরই আয়।

* অনু কথাটা শেষ করতেই কলটা কেটে দিলো। অয়ন কিছু সময় হ্যালো হ্যালো করে কোনো রিসপন্স না পেয়ে ফোনটা কানে থেকে নামিয়ে রাখলো। অয়নের চোখের সামনে কালো মেঘ ভেসে এসেছে মনে হচ্ছে। সামনে কিছুই তার দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছে না। অয়ন চোখ থেকে জল ফেলছে। অনুর কান্না ভেজা কন্ঠ অয়নের মনের মধ্যে অধরাকে হারিয়ে ফেলার ভয় সৃষ্টি করে দিলো। অয়ন বেশ দ্রুত ড্রাইভ করছে গাড়িটা। এক একটা মিনিট যেনো ঘন্টায় পরিনত হয়েছে। সামান্য দূরতর পথ যেনো আজ আকাশ সমান দূরত্ব। অয়ন আপন মনে ভাবছে “অধরা প্লিজ আমাকে একা করে যেও না। তুমি যদি চলে যাও তবে আমি কি নিয়ে থাকব। একটিবার আমার জন্য থেকে যাও। প্লিজ”! সৃষ্টিকর্তার কাছে বিনয়ের সুরে প্রর্থনা করছে অয়ন। একটি বার যেনো তার প্রিয়তমাকে সুস্থ করে দেয়। একটিবার যেনো অধরা অয়নকে জরিয়ে ধরতে পারে। অয়ন গাড়ি নিয়ে চলে আসে বাড়ির সামনে‌। গাড়ি থেকে নেমে অয়ন দৌড়ে বাড়ির মধ্যে চলে আসে। নিজের রুমে গিয়ে অয়ন দেখতে পায় অধরা বিছানায় শুয়ে আছে। অধরার পাশে তার বাবা মা অনু দাঁড়িয়ে আছে। অধরার বাড়ির কেউ এখানে নেই। অয়ন দরজার বাহিরে থেকে অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অধরা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়ন নিজের চোখ জোড়া মুছে অধরার পাশে এসে বসে পরলো। অয়নের উপস্থিতি আজ আর অধরা পাত্তা দিচ্ছে না। অয়নের উপস্থিতি আজ আর অধরাকে ব্যাকূল করছে না। অয়ন অধরার কপালে হাত রেখে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— অধরা। আমি এসেছি।
কথাটা শেষ হতেই অধরা চোখ খুলে তাকালো অয়নের দিকে। মৃদু দৃষ্টিপাত করলো অধরা। অয়নকে তার পাশে দেখতে পেয়ে অধরার ঠোঁটের কোনে মৃদু হেসে উঁকি দিলো। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কি হয়েছে? এভাবে শুয়ে আছো কেনো? আমি এসেছি তো। আমার জন্য কি আজ আর কিছু নেই? এই আজ ও কি তুমি অভিমান করে শুয়ে থাকবে? অধরা হাসপালে কেনো গেলে না? বলো প্লিজ!
অধরা ঠোঁট জোড়া আলতো আলগা করে অয়নকে মৃদু কন্ঠে বলল
— অয়ন আমি এই সময়টা তোমার সাথে কাটাতে চাই। হাসপাতালের চারদেয়ালের মাঝে আমি শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চাই না। আমি তোমার বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চাই। বলো নিতে দিবে না আমায়!

অয়ন নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। বুকের বাম পাশের হৃদয়টা যেনো কেউ একজন রক্তাক্ত করে দিয়েছে। অপহৃত যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মধ্যে। এই যন্ত্রণার কোনো সমাধান নেই। অয়ন চোখটা মুছে অধরার কাঁপাতে আলতো করে চুমু খেয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমাকে ছেড়ে যেতে তোমার কষ্ট হবে না? প্লিজ একটা শেষ চেষ্টা করতে দাও প্লিজ। আমি তোমাকে এতো সহজে হারিয়ে যেতে দিবো না। তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
— অয়ন বৃথা চেষ্টা করার থেকে নিশ্চুপ থাকাটাই শ্রেয়।
— অধরা আমার জন্য না হলেও আমাদের সন্তানের জন্য। আমাদের সন্তান অধরা। প্লিজ ওর জন্য!
অয়নের ছলছল দৃষ্টি অধরাকে সায় দিতে বাধ্য করলো। অধরা মনে মনে ধরেই নিয়েছে সে আর কখনও সুস্থ হবে না। তাই আর অযথা মিছক প্রত্যাশা নিয়ে খুশি হয়ে লাভ নেই। অয়ন অধরার দিকে মৃদু হেসে বলল
— হেঁটে যাবে না কোলে করে?
অয়নের কথাতে অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— অয়ন আমার মনে হয় না আমি………
অধরাকে চুপ করিয়ে দিয়ে অয়ন বলল
— প্লিজ! আর কিছু বলো না।
— হুম।

অয়ন অধরাকে কোলে তুলে নিলো। অধরাকে কোলে করে অয়ন গাড়ি উবদি চলে আসে। অধরা অয়নের গলা জড়িয়ে ধরে আছে। অয়ন অধরার চোখের দিকে বারংবার তাকাচ্ছে। “এই চোখের মায়ায় জড়িয়ে থাকতে চাই সারা জীবন”। কথাটা মনে মধৈ বলল অয়ন। অয়ন অধরাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। গাড়ি আপন গতিতে ছুটে চলেথে। অধরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। “কতটা অসহায় লাগছে অয়নকে আজ। মনে হচ্ছে জীবনের সব থেকে দামী জিনিসটা হারিয়ে ফেলছে ও। আসলে দামী তো বটেই। খুব যে ভালোবাসে আমায়। এতোটা ভালোবাসে যে আমার কিছু হলে আমার থেকেও কয়েক গুণ বেশি কষ্ট পায় অয়ন। ওকে একা রেখে কি করে চলে যাবো আমি? এক সাথে অনেক বছর বাঁচতে চাই ওর সাথে। কিন্তু ভাগ্যটা আমার এমন যে চাইলেও আর অয়নের কাছে‌ থাকার উপায় নেই। ওর কাছে থাকার ইচ্ছে থাকার পরেও ওকে ছেড়ে যেতে হবে আমায়‌‌। বিধাতা কি‌ আমার সুখ সহ্য করতে পারে না? আমি একটু সুখি হতে নিলেই বিধাতা সব কেড়ে নেয়”। অয়নের দিকে তাকিয়ে অধরা এক দৃষ্টিতে ভাবছে কথা গুলো। অয়ন বারংবার তাকাচ্ছে অধরার দিকে। অধরা আলতো করে অয়নকে জড়িয়ে ধরে। হাসপাতালের সামনে এসে অয়ন গাড়িটা ব্রেক করে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অধরা চলো আমরা চলে এসেছি।
* কথাটা শেষ করতেই অধরা অয়নের হাত জোড়া ধরে অয়নকে উদ্দেশ্য করে কাঁপা গলায় বলে উঠলো
— অয়ন আমার বড্ড ভয় করছে। আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই। প্লিজ আমাকে তোমার কাছে থাকতে দিও।
অধরার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়ন দূর্বল হৃদয়ের মানুষ। অল্পতেই নিজের চোখের জল ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অয়ন নিজেকে শান্ত করে অধরাকে নিয়ে চলে আসে ডক্টরের চেম্বারে।
— ডক্টর প্লিজ! কোনো একটা উপায় বের করুন। আমাকে আমার অধরাকে ফিরিয়ে দিন। প্লিজ!
— মিস্টার অয়ন চৌধুরী, আপনি জানেন আমরা সর্বদা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। বাকিটা বিধাতার হাতে। আপনার অনুরোধে আমরা মেডিক্যাল বোর্ডের ব্যবস্থা করেছি। আলোচনা শেষে আমরা আপনাকে সিদ্ধান্ত জানাবো কি করা যায়।‌

* ডক্টর চলে যায় অয়নের সামনে দিয়ে। অয়ন বড্ড অসহায় হয়ে পরে। অধরাকে সুস্থ করতে তার এই চেষ্টা সফল হবে তো? অধরা কেবিনে আছে। অয়ন কেবিনের বাহিরে বসে আছে। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না। “অধরার সামনে গেলে কি উত্তর দিবো? অধরা যে আশা করে আছে আমি ওকে সুস্থ করার ব্যবস্থা করে দিবো। সত্যি আজ নিজেকে বড্ড উপহাস করতে ইচ্ছে করছে। নিজের স্ত্রীকে আমি সুস্থ করতে পারছি না। চিরদিনের জন্য আমার ভালোবাসা আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে আর আমি নিরব হয়ে তা দেখছি”। মাথাটা নিচু করে নিজের ব্যর্থতার দায় দিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে অয়ন। আকাশ সমান কষ্ট তার মধ্যে মর করে আছে। অয়ন অধরাকে নিয়ে ভাবছে এমন সময় হঠাৎ করে অয়নের কানে ভেসে আসে অধরার বাবা কন্ঠস্বর। অয়ন মাথা তুলতেই দেখতে পেলো অধরার বাবা মা ইরা ইরফান সবাই হাসপাতালে চলে এসেছে। অয়ন তাদের দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন উঠে দাঁড়াতেই অধরার বাবা অয়নের কাছে এসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ গলায় বলল

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৫

— আমার মেয়ে কোথায়?
অয়ন শান্ত গলায় অধরার বাবাকে কেবিন টা দেখিয়ে দিলো। অধরার বাবার ক্ষিপ্ত দৃষ্টি অয়নকে ভাবিয়ে তুলেছে উনি এই সময়েও এমন ব্যবহার করবে তার সাথে? অধরার বাবা কেবিনে যেতেই অয়ন তার পিছন পিছন কেবিনে চলে আসে। অধরার বাবা অধরার পাশে বসে শান্ত কন্ঠে বলল
— মা তোকে আগেই বারণ করেছি অয়নকে বিয়ে করিস না। তুই তো আমাদের কথা শুনলি না। দেখ আজ এই রাসকেলটার জন্য তোর এই অবস্থা হয়েছে।
* অধরা তার বাবা কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে যায়। এসব বাবা কি বলছে? অয়ন পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। অধরার বাবা অয়নকে কেবিনে দেখতে পেয়ে অয়নকে……………..

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২৭