ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৬ (২)
মিথুবুড়ি
“একি আপনি এখানে?”
‘তাকবীর ঢুলু ঢুলু চোখে দরজার পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল। চোখজোড়া ফুলে রয়েছে। এলিজাবেথ ঘুমকাতুরে চোখে তাকিয়ে রয়েছে তাকবীরের দিকে একদৃষ্টিতে। নেত্রদ্বয় ঝিলঝিল করছে কৌতুহলে। তাকবীরের আচরণে স্পষ্ট ঘুমের ঘাটতি রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ। গতরাত কারোরই ঘুম হয়নি, তাই এসেই দু’জনে ঘুমিয়েছিল। এলিজাবেথ ঘুম থেকে উঠে দরজার খুলতেই দেখতে পায় তাকবীর ঠিক দরজার পাশটায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছিল। তাকবীর হাই তুলছে তুলতে বলল,
” হঠাৎই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। কেমন যেন অশান্ত, অশান্ত লাগছিল। ভাবলাম তোমায় একবার এসে দেখে যায়। কিন্তু এসে দেখলাম দরজা ভিতর থেকে আটকানো।”
‘ এলিজাবেথের অবাক স্বর,” তাই বলে আপনি এখানেই ঘুমিয়ে যাবেন? আমাকে ডাকবেন তো।”
‘ তাকবীর স্মিত হাসল। হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে আবেশিত গলায় বলল,
” কি অদ্ভুত তুমি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলেও সবার আগে তোমার কথা মনে হয়।”
” ওহ তাই বুঝি? আর আমার তো ঘুমই ভাঙে প্রকৃতির ডাকে।”
‘ গুরুতর কথাটাকেও হেসে উড়িয়ে দিয়ে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকল এলিজাবেথ। তাকবীর ছোট মনে হালকা হাসল। তাড়া দিল এলিজাবেথকে।
” যাও রেডি হও গিয়ে। তোমাদের মেয়ে মানুষের তো আবার সাজুগুজুই শেষ হয় না।”
‘ এলিজাবেথ ভেংচি কেটে খট করে তাকবীরের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল। ওর এহেন বাচ্ছামি তাকবীরের বেশ ভালোই লাগে। তবে এই মুহুর্তে তাকবীর অন্য চিন্তার মগ্ন। বদ্ধ দরজার পানে চেয়ে অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়,
” আমি উন্মাদ নই, এলোকেশী। পাগলও নিজের ভালো বোঝে। তবে কেন বারবার আমার সাজানো বাগান তছনছ হতে দিই? তোমাকে একা রেখে ঘুমোতেও ভয় পাই, মুখ ফুটে বলতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে জেগে থাকি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ সৌন্দর্য কী? এর কোনো স্থির সংজ্ঞা নেই। এটি ভাঙা আয়নার মতো—প্রতিটি খণ্ডে ভিন্ন অর্থ, ভিন্ন অনুভূতি। প্রেমিকের চোখে তার প্রিয়তমা অপ্সরা, কবির কাব্যে প্রেম তার পূর্ণ রূপে অনন্য। যে যাকে ভালোবাসে, তার কাছে সেই মানুষই সর্বাধিক সুন্দর। বাবা-মায়ের কাছে তাদের কালো সন্তানটিও যেন আকাশের উজ্জ্বল চাঁদ। তবুও, আমরা নিজেদের সৌন্দর্যকে বুঝতে ভুলে যাই। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত আমাদের নিজেদের চেয়ে বেশি মূল্য পায়। কেন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা সর্বদা অন্যের ভাষায় লিখতে হবে? আমি আমার সৌন্দর্যকে আমার ভাষায়, আমার রঙে গুছিয়ে তুলব। সাজবো নিজের মতো করে, নিজের জন্য। কারণ এই জীবনটা একান্তই আমার। আমার জীবন, আমার রং, আমার গল্প। সৌন্দর্য আসলে তাতেই, যেখানে আমি নিজেই নিজেকে ভালোবাসি।
‘ ঠিক যেমন আজ এলিজাবেথ নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছে। আজ এলিজাবেথ তাকবীরের পছন্দ করা জামা পরেনি; নিজের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়েছে। তাকবীরও এতে কোনো আপত্তি করেনি, বরং নির্লিপ্ত ছিল। এলিজাবেথ পরেছে ওয়ান-শোল্ডার লং ফ্লোরাল প্রিন্টের প্রিন্সেস গাউন। ওর লম্বা লাল চুলগুলো আজ কার্ল করা, আর পার্টির সাথে মানানসই হালকা মেকআপও করেছে এলিজাবেথ। অন্যদিকে, তাকবীর পরেছে ধূসর রঙের স্যুট। গাড়ি চলছে মিল্কিওয়ে রিসোর্টের উদ্দেশ্য , যেখানে ফাদারের উল্লেখ করা পার্টি আয়োজন করা হয়েছে। এটি একটি বিজনেস থ্রো পার্টি, যেখানে তাকবীর একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিমন্ত্রিত। যদিও এলিজাবেথ জানে তারা শুধু ফাদারের ইনভাইটে যাচ্ছে। এবার এলিজাবেথ আসতে রাজি হয়েছে কোনো জোরাজুরি ছাড়াই। বরং আজ সকালে থেকেই ওকে বেশ আগ্রহী লাগছিল। তাকবীর ড্রাইভ করতে করতে এলিজাবেথের দিকে তেরছা নজরে তাকাচ্ছে। লক্ষ্য করল, এলিজাবেথ নিজের মাঝে ডুবে রয়েছে , একাগ্র মনে ফোনে রিলস দেখছে। একটু থেমে তাকবীর গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করল,
” উমহু, উমহু।”
‘ এলিজাবেথ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকবীরের দিকে তাকায়। আবার সঙ্গে সঙ্গে ফোনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সাবলীল গলায় বলল,” কি অবাক হচ্ছেন?”
‘ তাকবীর এবার বেশ অবাক হলো এলিজাবেথের কথায়। বলল,” কিছুটা।”
‘ হাসল এলিজাবেথ। হেসে ফোন রেখে তাকবীরের দিকে ঘুরে বসল। অতঃপর উদ্ভাসিত গলায় বলল,
“খুব অবাক হচ্ছেন, আমি এতো তারাতাড়ি স্বাভাবিক হলাম কি করে! কিভাবে এতো খোশমেজাজে আছি তাই না?”
‘ তাকবীর বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়ালো। এলিজাবেথ আবারও হাসল মৃদু শব্দে। গদগদকণ্ঠে বলতে শুরু করল,
“আমার সেড মুডের মেয়াদ এই বছর পর্যন্তই। সামনের বছর ভন্ড হয়ে যাবো। এখন থেকে নাচবো শুধু_ লে পাগলু ডান্স, ডান্স, ডান্স। কারণ আমি বুঝে গিয়েছি আমাকে কষ্ট দেওয়াই হয় আনন্দ পাবার জন্য। আমি কষ্টও পাবো, আবার তাদের আনন্দও পেতে দিব তা কি করে হয়?”
‘ তাকবীর চুপ। এলিজাবেথ নিজে থেকেই বলতে থাকল,
“কেউ যদি আমার হাসি দেখে জ্বলে, তবে সেই দ্বায়িত্ব আমার উপর ফরজ হয়ে যায়, তাকে আরো জ্বলানো। আজকে থেকে আমি শুধু হাসবো। আর এতো হাসব যে, যাদের আমার হাসিতে জ্বলে তাদের পেট যেন কষা হয়ে যায়৷”
‘ তাকবীর এলিজাবেথের কথা শুনে ঠৌঁট চেপে হাসতে থাকল। হঠাৎ করে এলিজাবেথ ফোঁস নিশ্বাস ছেড়ে সিটে গাঁ এলিয়ে দেয়। হতাশার স্বরে বলল,
“চুলের জীবন । দুনিয়াতে এত মানুষ থাকতেও আমার সাথে শুধু সব সাপের-ই সাথে পরিচয় হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, আমি নারী না নাগ মুনি, কে জানে! যেন সবার সাথে আমি বাদ, শুধু সাপই আমার সাথী।”
“আরেকবার কোনো সাপ ছোবল দিতে আসলে কি বলবে জানো? বলবে_” আমি কার সাথে চলি জানিস? বাবা খোর নাজমুলের সাথে চলি; পাওয়ারই অন্যরকম।”
‘শোনা গেল গাড়ির ভিতর দু’জনের উচ্চস্বরের হাসির রিনঝিনে শব্দ। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে দুজনেরই। এলিজাবেথ পেটে হাত চেপে ধরে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলল,
“হুম এখন থেকে এই মোটিভেশন নিয়েই চলব। সব বাদ একদমে সামনে এগিয়ে যাব। জীবনে চলার পথে আর থামব না, জুতো ছিঁড়ে গেলে সেটা আরেক বিষয়।”
“হ্যাঁ! এজন্য আমরা সবসময়ই এক্সট্রা জুতো রাখব সাথে।” ~ তাকবীরও একই ভাবে হেসে হেসে এলিজাবেথের সঙ্গ দিতে থাকল। কথার মধ্যেই এলিজাবেথ তাকবীর কে ভেংচি কেটে বলল,
“ইশশশ !! আপনার অভিনয় হয়নি। আপনি ফেইল।”
‘ খুব গায়ে লাগল তাকবীরের। কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,
“ফেলই আমি জীবনে একবারই করেছি জীবনে হুহ। মান দিয়ে কথা বলবে মেয়ে।”
‘ এলিজাবেথ ভ্রুদ্বয় গুছিয়ে তাকবীরের দিকে তাকিয়ে বলল,” তা কবে ফেল করেছিলেন শুনি?”
‘ তাকবীর লাজুক হাসল। আমতাআমতা করে বলল,
“ক্লাস ফ্লোরে থাকতে। বাংলা পরিক্ষায়। আমার গরু রচনা দেখে স্যার রাগে পুরো খাতায় ছিড়ে ফেলে দিয়েছিল। ”
‘ এলিজাবেথের চোখে চকচকে কৌতুহল। খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল,” কেন! কেন? কি এমন লেখেছিলেন?”
‘ তাকবীর গরম নিশ্বাস ছেড়ে বলল,” গরু জনগণ কমাতে সাহায্য করে। যেমন: গরুর গোশত খেয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় মানুষ। দুর্ভাগ্যবশত স্যারের গরুর ফার্ম ছিল।”
‘ বাক্য শেষ করে সেন্টি খাওয়া মুখ করল তাকবীর। ফিক করে হেসে দিল এলিজাবেথ। সাথে একটু হাসল তাকবীরও।
” এভাবে হাসবে না মেয়ে, অন্তরে গিয়ে বিঁধে সোজা।”
‘ এলিজাবেথের হাসি তাও থামে না। খিলখিল করে হাসতে থাকে। সেই হাসি থেকে যেন মুক্ত দানা ঝড়ছে। এতো দেখেও তৃষ্ণা মিটে না তাকবীরের।
__মিল্কিওয়ে রিসোর্ট__
‘ ইতালির মিল্কিওয়ে রিসোর্ট বরফের মাঝে জ্বলজ্বল করছে আলোকসজ্জায়। পার্টির জন্য তৈরি কেন্দ্রীয় এলাকা সাজানো হয়েছে বিলাসিতায় ভরা আধুনিক ডিজাইনে। শীতল পরিবেশে উষ্ণ হিটার, লাইভ মিউজিক, আর খাবারের সুবাস পুরো পরিবেশে স্বপ্নের মতো অনুভূতি যোগ করেছে। এই পার্টিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ একপ্রকার নিষিদ্ধ। রিসোর্টের প্রাচীরের ভেতর শুধুই নামি-দামি ব্যবসায়ী, কুখ্যাত গ্যাংস্টার, মাফিয়া, স্মাগলার আর আন্ডারগ্রাউন্ড ডনদের উপস্থিতি। পানীয় বলতে সকলের হাতে কেবল এলকোহল, আর চারপাশে নারী-পুরুষের বেপরোয়া আচরণে সভ্যতার লেশমাত্র নেই। এ যেন এক অন্ধকার জগতের আলোকময় প্রদর্শনী, যেখানে বিলাসিতা ও নৈতিকতা একে অপরের পরিপন্থী।
‘ রিসোর্টের নিস্তব্ধ পরিবেশ হঠাৎ ভেঙে গেল প্রধান ফটকের সামনে কালো ল্যাম্বরগিনির ব্রেক কষার তীক্ষ্ণ শব্দে। উত্তেজনার স্রোত বয়ে গেল চারপাশে। গাড়ির দরজা খুলতেই কালো পোশাকে মোড়া এক বিশাল দেহের মানব নেমে এল। সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেওয়া হলো পিছনের দরজা। সেখান থেকে কালো চকচকে সো পরিহিত একটি পা ধাতব মেঝের ওপর পরল। সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ হওয়ার বিকট শব্দ শোনা গেল। গাড়ি থেকে মাত্রই নামা মানব দাঁড়িয়ে এক ঝলক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারপাশ স্ক্যান করে নিল। অতঃপর পরণে কালো স্যুটের দুই পাশের কেন্দ্রবিন্দু ধরে টান প্রয়োগ করে নিখুঁত ভাবে ফিটিং করে নিল সুঠাম দেহের সাথে। পরপর ওয়েস্ট কোটের পকেটে রাখা গোল্ড প্লেটের পেনটি সোজা করে নিল। অতঃপর দু’কদম এগোতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন কোট-স্যুট পরিহিত ব্যক্তি বিনয়ের সাথে তার হাত বাড়িয়ে দিল। রিচার্ড হাত রাখল সেই হাতের উপর, হাত মেলানোর পরপর লোকটি রির্চাডকে যথাযোগ্য সম্মানের সাথে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগল। পিছনে বিশ্বস্ত বডিগার্ড লুকাস অনুগামী।
‘প্রধান ফটকের বিশাল দরজা দুপাশে খুলে গেল। আবিষ্কার হলো এক রহস্যময় জগতের দুয়ার। ভেতরে আলোর ঝলকানি, মিউজিকের তালে নাচতে থাকা অর্ধনগ্ন নারীদের ভিড়, আর বিলাসিতার এক রোমাঞ্চকর দৃশ্য। উপস্থিত নারীদের চোখ ঝলমলিয়ে উঠল রিচার্ড কে দেখা মাত্র। কেউ কেউ দূর থেকেই রিচার্ডকে খিলে খাচ্ছিল। কিন্তু রিচার্ড, চওড়া চিবুকের সেই ভয়ঙ্কর ব্যক্তিত্ব, কোনো দিকে না তাকিয়ে সরাসরি বার কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল। বারের কাছে বসা অন্যান্য মাফিয়া ও গ্যাংস্টারদের মাঝে তার উপস্থিতি অন্ধকার ঘরে আগুনের মতো। চারপাশের পরিবেশ নিমেষে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। রিচার্ডের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর ভারী উপস্থিতি বাকি সবাইকে ভীত করে তুলল। আলাপআলোচনার মধ্যেই হঠাৎ রিচার্ডের চোখ যায় কিছুদূর কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেরুন রঙের গাউন পরিহিত এক লাস্যময়ী নারীর উপর। সেখানেই থমকে গেল গ্যাংস্টার বসের চোখ। রিচার্ডের দৃষ্টি অনুসরণ করে একজন মাফিয়া তাকাল সেদিকে। তাকাতেই চোখ ঝলঝল করে উঠল তার। রিচার্ডের কানের লতির কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ম্যানেজ করা যাবে?”
‘রিচার্ডের দৃষ্টি ছিল ঘোর লাগা অনড়। ঘোরের ভিতর থেকেই বলে দিল, ” হুম।”
‘বিদঘুটে হাসি দিল লোকটি। মেয়েটির দিকে লালসালু দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাস্কি স্বরে বলল,
“এটা আমাকে ম্যানেজ করে দাও। মোটা অংকের টাকা দিব। পরের চালানের সব মেয়ে আমি কিনব দ্বিগুণ দামে। শুধু এটা আমাকে দাও, এক রাতের জন্য হলেও।”
‘মস্তিষ্ক কথা ধরতে পারার সাথে সাথে দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায় রিচার্ডের। ফুটে উঠে ওর চেহারায় হিংস্র ভাব। তবে রিচার্ড নিজের হিংস্রতাকে ওর ভিতরেরই চেপে রাখল। বাইরে প্রকাশে আনল না। ক্ষণিকের ক্রোধের শিকার হয়ে এতোদিনের সাজানো প্ল্যান, এতো টানাপোড়ান ভেস্তে দিতে চায় না তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী গ্যাংস্টার বস। রিচার্ড ওর গম্ভীর দৃষ্টি দিল মাফিয়ার উপর। বাঁকা হেসে খোশমেজাজে বলল,
“গোডাউনে গিয়ে যেটা পছন্দ নিয়ে আসবেন। এটা বেচা যাবে না। নিজের জন্য পছন্দ করে নিয়ে নিয়েছি।”
‘লোকটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেই দিকে হেঁটে যেতে থাকল রিচার্ড। হঠাৎ করে একটা অর্ধ মাতাল মেয়ে ঢুলতে ঢুলতে রিচার্ডের সামনে এসে দাঁড়াল। রিচার্ড ছিটকে দু’কদম সরে গেল। মেয়েটি ঠৌঁট কামড়ে হেসে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে বলল,
“হেই হ্যান্ডসাম।”
‘চিবুক ক্রমে ক্রমে শক্ত হতে থাকে রিচার্ডের। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,” মুভ অ্যাওয়ে।”
‘মেয়েটি সরতে নারাজ। ঢুলতে ঢুলতে বলল,”স্টপ অ্যাক্টিং লাইক সাচ আ জেন্টলম্যান। লুক হাউ সে °ক্সি আই অ্যাম।”
‘ রিচার্ড একইভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,” ইফ ইউ আরন’ট হার, আই লিটারালি ডোন’ট গিভ আ ফা°ক হাউ গর্জিয়াস ইউ আর।”
‘ সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির পাশ কাটিয়ে চলে গেল রিচার্ড। মেয়েটি হেরে যাওয়া পথিকের মতো ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে থাকে রিচার্ডের যাওয়ার পানে।
“এলোকেশী বেশি অস্বস্তি লাগছে?”
‘তাকবীরের কণ্ঠে এলিজাবেথ সোজা করল নিজেকে। ওর দিকে তাকিয়ে মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলল, ” কিছুটা! আসলে এমন পরিবেশে প্রথম তো।”
‘তাকবীর ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। পাশেই ডান্স ফ্লোরে শব্দের তোড়ে অনেকেই নাচছে। কথা বলতে হলে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু জোরে বলতে হয়। ওর মুখটাও চুপসে রয়েছে , নিজের মনেই ভাবছে_ এলিজাবেথকে এখানে আনা কি সঠিক ছিল? এখানে অনেকেই ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে যে তাকাচ্ছে তা তাকবীরের নজর এড়ায়নি।
“সরি, এলোকেশী। আসলে এই পার্টিতে আসা আমার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন তোমাকে একা রেখে আসার সাহস পাচ্ছিলাম না! সরি। আচ্ছা, এখানে বসার জায়গা তো আছে? চলো, আমরা বসি।”
‘তাকবীর বলে, নিজের জন্য একটা টুল টেনে নিল। এলিজাবেথ বসতে যাবে, তখনই নজরে পড়ে এখানে মাত্র একটি টুল।
“ভালো মানুষ, এখানে তো কেবল একটা টুলই আছে!”
‘তাকবীর নিজে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে যায়, কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই পিছন থেকে গভীর, গম্ভীর স্বরে এক হাস্কি কণ্ঠ ভেসে আসে।
“ইউ ক্যান সিট হিয়ার, বেবি। মাই ল্যাপ ইজ অলওয়েজ অ্যাভেইলেবল ফর ইউ।”
‘ সেই ভারিক্কি শব্দে কেঁপে উঠল এলিজাবেথের অভ্যন্তর। চকিতে পিছন ফিরল। তাকবীর শক্ত চিবুকে তাকিয়ে আছে রিচার্ডের দিকে। যে একটি টুলে বসে দু’পা ছড়িয়ে উরুর উপর ইশারা করে কথাটা বলল মাত্রই। তাকবীর নিজেকে ধরে রাখল। আন্তরিক হেসে বলল,
“তুমি বয়সে আমার ছোট হও। এভাবে কথা না বলে ভাবিকে সালাম দাও।”
‘রিচার্ড হেসে অহেতুক থুতু ফেলল। পরপর তাকবীরের চোখে চোখ রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হাঁট সালা, বয়সের মাইরে বাপ! তুই শুধুমাত্র আমার শত্রু, আর শত্রুরা কখনো গুরুজন কিংবা সম্মানের লায়েক হয় না।”
__থেমে, অতঃপর এলিজাবেথের দিকে তাকিয়ে অধর এলিয়ে হেসে বিদ্রুপ মাখা স্বরে বলল,
“আর আজ ভাবি, কাল বৌ। সবই সময় সাপেক্ষ।”
‘ তাকবীর চোখ বন্ধ করে ঠৌঁটে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালো। পরপর তিনবার তপ্ত শ্বাস ফেলে এলিজাবেথকে নিজের টুলে বসাল, ডান্স ফ্লোরের দিকে ঘুরিয়ে। তারপর এগিয়ে গেল রিচার্ডের সম্মুখে। মিলন হলো দু’টো অগ্নি দৃষ্টির।
“তোকে নষ্ট প্রমাণ করার কোনো ঘাটতি-ই নেই আমার। কারণ তুই এমনিতেই নষ্ট। আমার কাজ একটাই—নিজের ভালোবাসা দিয়ে এলোকেশীকে জয় করা। এতে দুটো লাভ: এক, ওকে নিজের করা, আর দুই, তোকে হারানো।”
‘ রিচার্ড তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। সমুদ্র নীল চোখ দু’টোতে ঘনীভূত হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। ক্রোধে মটমট করতে থাকা ধারালো চিবুকে রুষ্ট গলায় বলল,
” কিছু ছিড়তে না পারলে বড় বড় কথা বলবি না। মানায় না মুখে।”
‘ তাকবীর বাঁকা হাসল, জিভ গালের ভিতর চালিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,” বেডরুমের কথা কি এখন বাইরে বলবো?”
‘ সঙ্গে সঙ্গে তাকবীরের কলার চেপে ধরে রিচার্ড। তবুও তাকবীরের ঠৌঁটের কোণে হাসির রেখা। এ যেন উল্লাসের হাসি। তাকবীর ওর গভীর নিকোষ কালো চোখ রিচার্ডের চোখে রেখে তুষ্ট হেসে বলল,” এগুলো ভিলেনদের চরিত্রেই মানায়, হিরোর না।”
” ভিলেন, হিরো—এসব তর্ক তোদের জন্য। আমার নিয়মে একটাই কথা, শেষমেশ রেড আমারই হবে, এটাই চিরন্তন নিয়ম। বাকিদের অস্তিত্ব শুধু সময়ের অপচয়।”
‘ তাকবীর ঝাড়া মেরে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিল রিচার্ডের কাছ থেকে। কিছু বলতে যাবে তখনই মাইকে এনাউন্সমেন্ট দিতে থাকে ডান্স ফ্লোর থেকে। এখন কাপল ডান্স হবে। তাকবীর আশপাশ তাকিয়ে দেখল অনেকেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকবীর রিচার্ডের দিকে শক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এলিজাবেথের পাশে চলে গেল। ওয়েটারকে দিয়ে টুল আনিয়ে বসল এলিজাবেথের পাশে। রিচার্ডও নিজের টুল এ স্থান নিল।
‘ স্টেজে মাইক হাতে ইতালির সবচেয়ে বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এমডির স্ত্রী। পাশেই তার স্বামী। তবে আজ সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু রিচার্ড—পাওয়ারফুল, রহস্যময়, এবং মদ্যপানরত। এখানকার সবথেকে শক্তিশালী হলো রিচার্ড একই সাথে ইতালির টপ বিজনেস ম্যান,সেই সাথে সৌন্দর্যের দিক দিয়েও সবাইকে ছাড়িয়ে। ভদ্রমহিলা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন রির্চাডের দিকে। এক মুহূর্তেই দ্বিধা কাটিয়ে বললেন,
“হেই হ্যান্ডসাম কাম, লেট’স ডান্স।”
‘রিচার্ডের হাতে ওয়াইনের গ্লাস ছিল। মহিলার কথা ওকে একটু বিচলিত করল না। বরংচ দূর থেকে তাকালো এলিজাবেথের দিকে। যে আগে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর দৃষ্টি যেন খুব করে জানতে চাচ্ছে রিচার্ডের পরবর্তী পদক্ষেপ। রিচার্ড এলিজাবেথের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মহিলার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
“সরি! আই’ম ম্যারেড।”
‘মুহূর্তের মধ্যে পুরো হলজুড়ে স্রোতের মতো ফিসফিসানি। রিচার্ড বিবাহিত! ইতালির রাজপথ কাঁপানো গ্যাংস্টার বসের স্ত্রীর খবর কারও জানা ছিল না। চমকে ওঠা ভিড়ের মাঝে এলিজাবেথের হাত আপনাআপনি চলে গেল বুকে। বুক চিঁড়ে বেরিয়ে এলো এক গভীর দীর্ঘশ্বাস। তাকবীরের মাথায় অজস্র প্রশ্নের ঘুরপাক। ভদ্রমহিলা মাথা নিচু করে স্টেজ ছেড়ে নেমে গেলেন। আর রিচার্ড ঠাণ্ডা চাহনিতে নিজের ওয়াইনের গ্লাসে এক চুমুক দিতে থাকল। সকল কাপল স্টেজে উঠে গেল ডান্স করার জন্য। আকষ্মিক তাকবীর উঠে দাঁড়ায়। রিচার্ডের দিকে চেয়ে চোখ টিপে এলিজাবেথের থেকে হাত বাড়িয়ে দিল। এলিজাবেথ কিছুটা হচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলিয়ে নিল, মনে করল তার সকালের দৃঢ় চিন্তা ভাবনার কথা। সেও একপ্রকাশ রিচার্ডকে দেখানোর জন্য রাজি হয়ে গেল ডান্স করতে। হাত রাখল, তাকবীরের হাতে। দুজনেই এগিয়ে গেল স্টেজে।
‘রিচার্ডের মাঝে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা গেল না। উল্টো, ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল। সাউন্ডবক্সে লাইট মিউজিক বাজছে। লাইট নিভে গেছে। সকলে মত্ত প্রিয় মানুষের সাথে নৃত্যে। কিন্তু এলিজাবেথের অবস্থা ভিন্ন। তাকবীরের শক্ত বাঁধনে ওর হাত থাকলেও, মন কোথাও হারিয়ে । নিয়ন আলোয় তাকবীরের চোখ আটকে আছে
এলিজাবেথের মুখে। ওর দৃষ্টিতে মুগ্ধতা আর ভালোলাগার স্পষ্ট ছাপ। কোনো আক্ষেপ নেই—এলিজাবেথ তার সঙ্গে মন খুলে নাচছে না, দেখেই সে তৃপ্তি পাচ্ছে। এবার পালা পার্টনার বদলের। নিয়মের ফাঁদে পড়ে তাকবীরকে বাধ্য হয়েই এলিজাবেথকে ছাড়তে হলো, যদিও এক মুহূর্তও তা চাইছিল না তাকবীর। এলিজাবেথ তখনো ধ্যানমগ্ন।
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৬
হঠাৎ তাকবীর ওর হাত উপরে তুলে গুড়িয়ে দূরে সরিয়ে দিল। ঠিক তখনই, একটি শক্ত হাত এলিজাবেথের কোমর আঁকড়ে ধরল। ধনুকের মতো বাঁকা শরীর শক্তপোক্ত এক দেহের সাথে লেপ্টে গেল। এলিজাবেথ মুহূর্তেই চিনে ফেলল সেই মানুষটিকে। শরীরের ঘ্রাণেই বুঝে গেল সুযোগ সন্ধানি মানুষটি কে। শরীর জুড়ে বৈদুত্যিক তরঙ্গ খেলে গেল। হঠাৎ ওর কানের লতিতে ঠান্ডা স্পর্শ, ঠৌঁট গহ্বরের ফাঁক গলিয়ে গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পরছে। সাথে সাথে ভেসে এলো গম্ভীর কণ্ঠের কিছু শব্দ, যা মুহূর্তেই এলিজাবেথের ভেতরের অস্থিরতায় যেন পানি ঢাললো।
“প্রতিটি নাচের তালে, নিঃশব্দে ছুঁয়ে যাবে আমার উপস্থিতি, তোমার শরীরের গভীরতম রেখাগুলোয় রেখে যাবে না-বলা অনুভবের স্পর্শ। ”