মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৯

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৯
মুসতারিন মুসাররাত

কিচেনে সন্ধ্যার নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত দুই জা। এতক্ষণ আবির আর আনিশার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে প্রত্যাশা হাঁটতে হাঁটতে কিচেনের দিকে এল। প্রত্যাশাকে দেখে শর্মিলা মুখাবয়বে হালকা হাসি ছড়িয়ে স্নেহভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
-” প্রত্যাশা এখানে? কিছু দরকার সোনা?”
প্রত্যাশা এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বলল,
-” না ছোটো আন্টি। আসলে বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে আসছিল। তাই একটু হাঁটাহাঁটি করছি।”
-” ওহ্।”
নীহারিকা তেলে ভাজা পিঠা বানাচ্ছিল। প্রত্যাশা কাছে এগিয়ে এসে বলল,

-” বড় আন্টি, আমি হেল্প করি?”
নীহারিকা আড়চোখে একপল প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে ফের দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন। খুন্তি হাতে পিঠা উল্টাতে ব্যস্ত ছিলেন। তেলের ফোঁটার টগবগ শব্দে রান্নাঘর গরম। গরমের তোপে নীহারিকার ফর্সা মুখে ঘাম জমেছে। শাড়ির আঁচল তুলে কপালের ঘামটুকু মুছে নিয়ে বললেন,
-” থাক মা, এখন দরকার নেই। কাজ করতে গিয়ে গরম তেল ফেলে হাত পুড়িয়ে নিলে, শেষে তোমার মা বলবে; একদিনের জন্য ঘুরতে গিয়েছিল মেয়ে। আর তাকে দিয়ে কী না শাশুড়ি রান্নাবান্না করে নিয়েছে। একদিনেই হাতে খুন্তি তুলে দিয়েছে। যেদিন শুধু বেড়াতে নয়, সংসার করতে আসবে, একেবারে আসবে; সেদিন থেকে সংসারের দায়িত্ব নিও। সেদিন খুন্তিটা হাতে তুলে দেব। কেমন দক্ষতা তা দেখে, তখন না হয় একসাথে রান্নাঘর ভাগাভাগি হবে।”
প্রত্যাশা গমগমে স্বরে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” সংসারের দায়িত্ব তো আর আকাশ থেকে পড়ে পাওয়া যায় না। আগে তো পরীক্ষায় পাশ করতে হবে, তাই না? আর আমি তো এখনো বেড়াতে এসেছি পরীক্ষার হলে না। খুন্তি তো দিন, আগে পিঠা উল্টাতে শিখি। তারপর না হয় সংসার উল্টেপাল্টে দেখবো।”
-” মুখে তো বেশ সাহস দেখাচ্ছো। আচ্ছা মুখে যখন এত কথার খৈ ফুটছে, আবার মনেও এত জোর; তাহলে নাও খুন্তিটা। দেখি পিঠা উল্টানোর হাত কতটা চলে। দেখা যাক, ভবিষ্যতে কতটা সংসার সামলাতে পারবে।”
প্রত্যাশা খুশি মুখে খুন্তিটা হাতে নিয়ে বলল,
-” ঠিক আছে। আজ পিঠা, কাল সংসার। ধীরে সুস্থে সবই সামলে নিবো।”
প্রত্যাশা দক্ষ গিন্নির মতো পিঠা উল্টেপাল্টে তুলতে থাকল। নীহারিকা বেশ অবাকই হলেন। প্রত্যাশার ওরকম বাচ্চামো চালচলনে উনি ধারণা করেছিলেন, এ মেয়ে নীলার থেকেও কাজ-কর্মে কাঁচাই হবে।
ওদিকে নীলা রুম থেকে বেরিয়ে এদিক দিয়ে যাচ্ছিল। কিচেনে প্রত্যাশার গলা শুনে দাঁড়িয়ে পরে। কথাগুলো কানে যেতেই মুখটা একটু ভার করে ভ্রু কুঁচকে ভাবল– শুরু হয়ে গেল ওর ভালো মানুষি দেখানো। আমাকে খাটো না করলে ওর পেটের ভাত হজম হয় না তো। আগ বাড়িয়ে এটাওটা কাজ দেখিয়ে সবার থেকে প্রশংসা কুড়াবে। বাহবা নিবে! সাধে কী আর ওকে আমার এলার্জি লাগে! যেখানেই যাবে ওর পাকনামি করতেই হবে।
নীলা এগিয়ে এসে শাশুড়ির সামনে ভদ্র নম্র মেয়েটির মতন দাঁড়াল। মুখাবয়বে হালকা হাসি নিয়ে কোমল গলায় বলল,

-” মা, কিছু করতে হবে। আসলে এতক্ষণ রুম গোছাতে ব্যস্ত ছিলাম তো। এতদিন ছিলাম না, আপনার ছেলে তো সব এলোমেলো করে রেখেছিল। পুরো রুম জুড়ে সব ছড়ানো ছিটানো ছিলো। উফ্! এতক্ষণে সব গুছাতে গুছাতে আমি ক্লান্ত।”
পরী কালকের রান্নার জন্য মশলা বেটে নিচ্ছিল। চোখদুটো কপালে তুলে মশলা পিষতে পিষতে ভাবল–ঘরে বাচ্চা নাইকো, কাচ্চা নাইকো! এইটুকুন সময়ে কে এত সব ছড়াইয়া-ছিটাইল। দুপুরের দিকে আমিই না সব গুছাইয়া, ঘর ধুইয়া-মুইছা ফকফকা কইরা থুইলাম।
নীহারিকা জবাবে নরম স্বরে বললেন,
-” ছোটো আছে, প্রত্যাশা সাহায্য করছে। তুমি যেহেতু ক্লান্ত। যাও রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।”
-” আচ্ছা মা।”

নীলা মুখটা শুকনো শুকনো করে, শাড়ির আঁচল দিয়ে গলা আর কপালের ঘাম মুছার মত করে নিয়ে প্রস্থান করল।
নীহারিকা চা বানানোর জন্য কেটলিতে পানি গরম করতে দেয়। ওদিকে শর্মিলা আর প্রত্যাশা কাজের ফাঁকে গল্প জুড়ে বসেছে। থেমে নেই পরী। সেও সাথে এ গল্প সে গল্প জুড়েছে। তার আবার দুঃখের গল্পই বেশি। কথার ফাঁকে শর্মিলা পরীর বড় বোনের কথা জিজ্ঞেস করলেন,
-” ওহ্হো, পরী তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি। ভুলেই তো গিয়েছিলাম। তা কালকে যে তোমার অসুস্থ বোনকে দেখতে গিয়েছিলে। এখন সে কেমন আছে?”
-” আছো কোনো মতন। আল্লাহ যে হালে রাখছে আর কি ছোডো খালাম্মা।…..”
কথা শুনে প্রত্যাশা বুঝল, পরীর বোনের মিসক্যারিজ হয়েছে। এ কথা সে কথা বলতে বলতে পরী আপনমনে বলতে লাগল,

-” বোনডার বিয়ার বছর পাঁচেক হইল, তাও সোয়ায়ি ভালা হইলো না। রিশকা চালাইয়া যা কামাই করে, সব জুয়া খেইলা, এহানে-ওহানে গিয়া ফুর্তি কইরা খোয়া দেয়। চারডা ছোডো ছোডো ছাওয়াল মিয়ি নিয়ে বোনডার হয়েছে যত জ্বা’লা। বিয়ার পর থাইকাই সোয়ামি দেখতে পারে না, কোনো মিল মহব্বত নাইকা। সংসারে ক্যাচাল লাইগাই থাকে।”
কিছু ভেবে প্রত্যাশা ভ্রু কুঁচকে তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,
-” এই ওয়েট ওয়েট, শুনে যা বুঝলাম–বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর, চারটে বাচ্চা, একটা মিসক্যারিজ।”
আঙুলের কড়ে গুণে গুণে হিসাব করতে থাকে প্রত্যাশা। ভ্রু দু’টোতে ঢেউ ফেলে বলতে থাকে,
-” তারপর তুমি বলছো, তাদের মধ্যে মিল মহব্বত নেই। মানে ভালোবাসা নেই। বর দেখতে পারে না। ইয়া আল্লাহ! ইয়া মাবুদ! বর দেখতে পারে না, মহব্বত নেই, পাঁচ বছরে তাই, চারটে বাচ্চা, সাথে একটা মিসক্যারিজ। এই অবস্থা! দেখতে পারলে না জানি কী হতো!”
শর্মিলা ফিক করে হেসে ফেলে। নীহারিকা গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকাতেই প্রত্যাশার ঠোঁটজোড়া থেমে যায়। শাশুড়ির দৃষ্টি দেখে ভড়কে গেল–এইরে ভুল কিছু বলে ফেলল নাকি! যা মনে হলো তাই তো বলল।
মেয়েটা চালচলনেই না কথা বার্তাও ইমম্যাচিউর। তখন তিনি শত বাচ্চার কথা, এমনি কথার কথা বলছিলেন, মেয়েটা লাজ-লজ্জা নিয়ে চুপ করে থাকবে না। না তা না। ইমম্যাচিউর কথাবার্তা বলে ফেলে। নীহারিকা চা ভর্তি কাপটা প্রত্যাশার হাতে তুলে দিয়ে বলল,
-” এটা গিয়ে তোমার শ্বশুড়কে দাও। আর হ্যাঁ, তোমাকে এখন আর কিচেনে আসতে হবে না। বাকিটা আমিই করে নিবো।”

সন্ধ্যার পর ড্রয়িংরুমে সবাই। নীরব একটু আগেই ফিরেছে। প্রত্যাশার সাথে দেখা হয়নি। প্রত্যাশা মাহবুব সাহেবকে চা দিতে গিয়ে গল্প জমিয়ে ছিলো। মাত্র ড্রয়িংরুমে এসে জয়েন করল। নিভানের সাথে দেখা হতেই উচ্ছ্বসিত চোখেমুখে বলল,
-” জিজু, কখন আসলে?”
নিভান হাসিমুখে বলল,
-” এইতো একটু আগে। বসো তুমি।”
প্রত্যাশা তিন আসন বিশিষ্ট সোফায় নীলার পাশে বসল। নিভান টিভির রিমোট হাতে তুলে, টিভি অন করে অপর পাশের সোফায় বসল। নীলা মৃদুস্বরে বলল,
-” আম্মুর সাথে একটু আগে ফোনে কথা হয়েছে আমার। আম্মু কিন্তু বারবার বলে দিয়েছে চুপচাপ থাকতে। বেশি পাকনামি করতে বারণ করেছে।”
প্রত্যাশা ঠোঁট উল্টে বলল,

-” আমারও আম্মুর সাথে কথা হয়েছে। এইতো মাত্র কথা বললাম।”
নীলা কিছু বলবে তবে শর্মিলাকে দেখে কথাটা গিলে নিয়ে চুপচাপ রইল। শর্মিলা পিঠাসহ আরো নাস্তা এনে টি-টেবিলে নামিয়ে রাখল। আনিশা শর্মিলার শাড়ির আঁচল ধরে পিছুপিছু এঁকেবেঁকে পা ফেলে আসছিল। নিভান আনিশার একহাত ধরে টেনে কোলের উপর বসাল। গাল টিপে বলল,
-” এইযে আমাদের পাকনি বুড়ি। কী খবর? পড়াশোনা নেই?”
আনিশা চোখমুখ কুঁচকে বলল,
-” উফ্ফ! ছাড়ো তো বড় দাদান। আমার লাগছে।”
নিভান হেসে আরও আদর করে গালে চাপ দিয়ে বলল,
-” আরে পাকনি বুড়িকে রাগলে তো একদম বুড়ি বুড়ি লাগে। ঠিক যেনো চুল পাকা চাঁদের বুড়ির মতো।”
আনিশা নাক ফুলিয়ে বলল,
-” তুমি আমাকে বুড়ি বলেছো। আমি বড় ভাবীকে বলে দিবো। তুমি আ’গুন খেয়েছো। আমি দেখেছি। তুমি এইভাবে এইভাবে… আঙুল ঠোঁটে ধরে ফুঁ ফুঁ করে আ’গুন খেয়েছো।”

আঙুল ঠোঁটের উপর রেখে আনিশা দেখাতে থাকে। ঠোঁট দুটো চোখা করে ‘ফুঁ’ এমন ভঙিতে। ওর দেখানোতে প্রত্যাশা ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে। নীলা চোখ পাকিয়ে নিভানের দিকে তাকায়। যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে এমন। নীলার দৃষ্টি তারপর সবার সামনে এভাবে গোপনে গোপনে সিগারেট খাওয়ার বিষয়টা ফাঁস হতেই নিভান থতমত খেয়ে বসে। নীলার চোখের ভাষা বলছে– লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খাও না। দাঁড়াও এর মজা পরে দেখাব।
শর্মিলা ঠোঁট চেপে হেসে প্রস্থান করে। এরমধ্যে পাশের ফাঁকা জায়গায় কারো উপস্থিতি টের পেতেই ঘাড় ফিরে তাকায় প্রত্যাশা। নীরবের ভেজা চুল, গায়ে কালো টিশার্ট আর নীল ট্রাউজার। ভেজা চুল বলে দিচ্ছে জনাব শাওয়ার নিয়ে মাত্র বেরিয়েছে। প্রত্যাশা দৃষ্টি সরিয়ে সোজা হয়ে বসল। নীরবও কোনো কিছু না বলে টিভির দিকে চাইল। ওদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে নিভান জোর করে মেকি হাসতে হাসতে বলল,
-” আরে আরে! এইসব কথা কোথা থেকে শিখিস তুই?
আনিশা গম্ভীর গলায় বলল,

-” আমি সব জানি! আব্বু আ’গুন খেলে আম্মু তো খুব ব’কা দেয়। উমম! ছ্যাহ! কী গন্ধ! কী গন্ধ!
চোখ প্রায় বুঁজে ফেলে এমন করে নাক মুখ সিটকে বলে আনিশা। নীলা রাগি দৃষ্টিতে এখনো চেয়ে আছে। নিভান বেচারা বেকায়দায় পরে। লে বাবা, নীলা যে খুঁতখুঁতে; মনেহয় না একমাস আর চুমু খেতে দিবে। বিয়ের প্রথম দিকে একদিন অফিস থেকে ফেরার সময় খেয়েছিলো, তাতেই নীলার নাকে গন্ধ লেগেছিলো। ওসব সিগারেটের গন্ধ নীলার সহ্য হয় না। আবার সিগারেটখোরদের পছন্দও নয়। নিভান আনিশার মুখটা বন্ধ করতে তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে একটা চকোলেট বের করে দেখিয়ে বলল,
-” এইযে বুড়ি তোর জন্য ক্যাটবেরি আছে।”
আনিশা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কোমড়ে দুইহাত রেখে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
-” ঘু’ষ দিচ্ছো? ওইযে পু’লিশ আছে। ধরিয়ে দিবো, হুঁ।”
আঙুল দিয়ে নীরবকে দেখিয়ে বলে। প্রত্যাশা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আঁটকে রেখেছে। নিভান বলল,

-” আরে না রে, এইটা ভালোবাসা! ঘু’ষ-টুষ নয়।”
আনিশা অবশেষে খুশি হয়ে বলল,
-” ঠিক আছে, তবে এখন কিছু বলব না। কিন্তু আবার..”
নিভান মনেমনে বলল–আর কিছু বলার বাদ রেখেছিস বোন আমার।
প্রত্যাশা আনিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” এই যে আনিশা, শুধু বড় দাদানের পিছনেই স্পাই হয়ে থেকো না। ছোট দাদানের দিকেও নজর রেখো। না জানি কোনদিন গুপ্ত ধনের মতো তার কোন কীর্তি বেরিয়ে আসে।”
আনিশা নিভানের কোলের উপর বসে খেতে খেতে ঘাড় কাত করে জবাবে ‘হুঁ’ বোঝায়। নীলা রাগে নিভানের দিকে আর তাকাচ্ছে না। থমথমে মুখ করে পিঠা খাচ্ছে। নিভান পকেট থেকে আরেকটা ক্যাটবেরি বের করে প্রত্যাশার দিকে বাড়িয়ে বলল,

-” প্রত্যাশা নাও।”
-” থ্যাংকস।”
প্রত্যাশা হাসিমুখে নিলো। নিভান প্রত্যুত্তরে হালকা হাসল। তারপর আরেকটা ক্যাটবেরি বের করে নীলার দিকে বাড়িয়ে বলল,
-” নীলাশা, এটা তোমার।”
নীলা মুখের খাবার চিবুতে চিবুতে গম্ভীর গলায় বলল,
-” লাগবে না আমার।”

নিভান চোখের ইশারায় ‘স্যরি’ বলে। আর কখনো সিগারেটের ধারের কাছেও যাবে না, ছুঁয়েও দেখবে না বোঝায়। নীলার মন এবার একটু নরম হলো। অন্যদিকে তাকিয়েই ক্যাটবেরি হাতে নিলো। নীরব টিভির রিমোট হাতে, খবরের চ্যানেল ঘাঁটাঘাঁটি করছে। মাঝে-মাঝে নিভানের কথার উত্তর দিচ্ছে। ব্যস! নীলা উঠে ডায়নিংয়ে পানি খেতে যায়। প্রত্যাশা ক্যাটবেরি চিবুতে চিবুতে আড়চোখে নীরবের দিকে চাইল। নীরবও কোণা চোখে তাকাতেই– আকস্মিক দু’জনের চোখে চোখ পড়ল। নীরবের কপাল গুটিয়ে আসলো। নীরব চোখের ইশারায় হালকা ঠোঁটের কোণে ইশারা করল। প্রত্যাশা ভ্রু-ট্রু কুঁচকে ফেলল, বুঝতে পারল না। নীরব আবার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দেখাল। প্রত্যাশার চোখেমুখে বিস্ময় প্রকাশ পেল। আচ্ছা লোক তো এএসপি সাহেব!

সরাসরি ঠোঁটের দিকে ইশারা করছে। প্রত্যাশার চোখমুখ এবার কঠিন হয়ে এল। কী ফাজিল! কী ফাজিল! কথা নেই বার্তা নেই। ঠিক একটা না একটা ধান্দায় থাকে এই লোক! গ্লাস হাতে ধরিয়ে ধরার নাম করে হাত স্পর্শ করা, ধরে বসার নাম করে কাছাকাছি বসা। আবার এখন তো সরাসরি। না না…এই লোক তো পরীর দুলাভাইকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। বউকে দেখতে পারে না, মহব্বত নেই; অথচ বছরে বছরে বাচ্চার বাপ হওয়াতে পটু। এএসপি সাহেবও তো সেম কিছিমের লোক দেখা যাচ্ছে। কখনো ভালো মুখে দু’টো কথা বলল না। অথচ…. প্রত্যাশার ভাবনার মাঝেই নীরব আরেকটু এগিয়ে এল। সবার অগোচরে সন্তর্পণে এক আঙুলে প্রত্যাশার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা ক্যাটবেরির টুকুরো তুলে নিল। প্রত্যাশা তা’জ্জব বনে গেল। হইহই করে উঠবে তার আগেই ব্যাপারটা ধরতে পারল প্রত্যাশা। প্রত্যাশার দিকে ঝুঁকে নিচু গলায় বলল নীরব,

-” ঠোঁটের কোণে মিষ্টি জাতীয় কিছু থাকলে তো আবার পিঁপড়ে বসতে পারে। তাই রিস্ক না নিয়ে, নিজের গর্জেই ফেলে দিলাম।”
তখনকার কথা নীরব মনে রেখেছে এটা ভেবে প্রত্যাশা অবাক হলো। মনেমনে আ’তংকিত হয়ে ভাবল–ইয়া আল্লাহ! না জানি ওনার এই রিস্ক না নেওয়ার জন্য, রাতে আবার কী বলে-কয়ে বসে। রক্ষে করো মাবুদ!
প্রত্যাশা ধীরেধীরে চোখ তুলে নীরবের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। চোখে চোখ রেখে নিম্নস্বরে ভেঙে ভেঙে বলল,
-” তা আপনার এই ঝুঁকি না নেওয়া…এই বিশেষ খ্যাতির যত্ন… এসব শুধুই কী আমার জন্য? নাকি সবার ব্যাপারেই আপনি এমন কেয়ারফুল।”
নীরব কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে, প্রত্যাশার দিকে মাথাটা ঝুঁকে আছে; এমন সময় বিস্ফোরণ ঘটানোর মত আনিশা উচ্চ শব্দে হৈচৈ করে বলে উঠল,

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৮

-” এই এই ছোটো দাদান, নতুন ভাবী চুপিচুপি কী এত কথা বলছো শুনি? ছোটো দাদান কানে কানে কী বলছে গো তোমায়? নিশ্চয় তোমার থেকে চকলেট খেতে চাইছে। জানো, ভাইয়া চুপিচুপি আমার থেকে এভাবে আইসক্রিম খেতে চায়। আমি দিইনা। তুমিও দিও না কিন্তু। তাহলে লো’ভ লেগে যাবে।”
আনিশার কথাশুনে খালি গলায়ও নীরব খুকখুক কেশে ওঠে। প্রত্যাশা নিজেও লজ্জায় পরে–সবাই ভাববে কী জানি গল্প-টল্প করছিলো বুঝি। এইভেবে প্রত্যাশার অস্বস্তি ক্রমশ ভারী হলো। নিভান তাকাতেই নীরব অপ্রস্তুত হয়।

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ১০