মায়াবতী পর্ব ৪
ইসরাত জাহান ইকরা
মাহিদ লাকেজ টা দরজার পাশে রেখে বললো _ হুম প্রেতনী ম্যাডাম বুঝেছি, কিন্তু আমি ভিশন ভাবে দুঃখিত আপনার কথা আমি রাখতে পারলাম না। আমি এই মূহুর্তে, এবং এক্ষুনি রুমে প্রবেশ করবো, আসেন তো দেড়ি কইরেন না এখুনি এসে আমার ঘাড় মটকান। এই বলে মাহিদ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে সিরির দিকে আসছে। মাটি দেয়ালের পেছন থেকে তা দেখে চোখ বড় বড় করে ফেললো।
আর মনে মনে বলতে লাগলো _ এই ব্যাডা দেখি আসলেই ঘ্যাড়তেরা আর আমি ও এটাকে এসেছি বোকা বানাতে, এখন আমাকে হাতের কাছে পেলে কি করবে, নিশ্চয়ই চাটনি বানিয়ে ফেলবে। ওরে মাটি পালা। এই বলে মাটি দিল দৌড়। জুতার আওয়াজ শুনে মাহিদ শার্টের হাতা গুটিয়ে দিল দৌড় লাগালো, আজকে সে ধরেই ছাড়বে।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সিরির নিচে গিয়ে পেলো না, ডানদিকে গেছে নাকি বাম দিকে গেছে কিছুই আঁচ করতে পারলো না।
অগত্যা মাহিদ দাঁড়িয়ে না থেকে উপরে চলে গেল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে মেঘা, কফি বানিয়ে ভয় এবং কিছুটা সংকোচ বোধ নিয়ে মেহমিদের রুমের দরজায় নক দিলো। মেহমিদ ভেতর থেকে বলে উঠলো _ come in,। মেঘা অনুমতি পেয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে টেবিলের উপর কফি রেখে বললো, মেহমিদ ভাই আপনার কফি।
আমি এখন আসি, এই বলে মেঘা চলে যেতে নিলে মেহমিদ বলে উঠলো _ আমি কি চলে যেতে বলেছি।
মূহুর্তেই মেঘা থমকে দাঁড়ালো, মেঘা বলে উঠলো আমার কাজ আছে, রান্না ঘরে গিয়ে মাছ কুটতে হবে। মেহমিদ বলে উঠলো _ সেসব নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।
হঠাৎ মেঘার মেহমিদের বুকের ভিতর টা কেঁপে উঠলো। তখন থেকে তুই তুই করে কথা বলছে। এখন আপনি আপনি করছে, বেটার মতলব তো ভালো ঠেকছে না। যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। এই ভেবে মেঘা ফট করে মেহমিদের দিকে তাকালো। দেখলো মাত্রই শাওয়ার নিয়ে কালো টিশার্ট পরে বিছানায় বসে আছে। এক হাতে মোবাইল ফোন, আরেক হাতে টাওয়াল নিয়ে চুল মুচছে। মেঘা তো পুরো হা হয়ে দেখছে।
মেহমিদ ভ্রু কুঁচকে ফোন টিপছিলো, মেঘার দিকে তাকাতেই, মেঘা এভাবে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে মেহমিদ ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসলো।
মেঘা মুগ্ধ হয়ে দেখছে, পর মূহুর্তেই বুঝতে পারলো মেঘা হা করে তাকিয়ে আছে। থতমত খেয়ে চলে যেতে নিলে, মেহমিদ বলে উঠলো _ বসেন ম্যাডাম, আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
মেঘা খাটের এক পাশে বসে, বলে উঠলো _ জ্বী মেহমিদ ভাইয়া বলেন।
মেহমিদ _ কোন ক্লাস?
মেঘা _ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
মেহমিদ _ তো গ্ৰুপ চেঞ্জ কেন?
মেঘা _ আপনি জানতেন আমি সাইন্সে ছিলাম?
মেহমিদ _ জ্বী, এখন বলেন আর্সে চলে আসলেন কেন।
মেঘা_ আসলে, সাইন্স নিয়ে পড়তে হলে গ্ৰুপিং সাবজেক্ট নিয়ে ও প্রাইভেট পড়া লাগে। পড়াশোনার একটু এক্সট্রা কেয়ার নিতে হয়। টাকা পয়সার একটু ব্যাপার আছে। কিন্তু এতো কাজের চাপে পড়ার সময় পাই না, ঠিকমতো কলেজে যেতে পারি না। তাই গ্ৰুপ চেঞ্জ করে ফেলেছি।
মেহমিদ _ হুম বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আর্স থেকে প্লাস তুলা টা কিন্তু কঠিন। আপনি যেই গ্ৰুপ নিয়েই পড়াশোনা করেন না কেন। ভালোমতো পড়াশোনা করতে হবে। নয়তো ভালো রেজাল্ট করতে পারবেন না।আর আপনি এতো বলদ কেন শুনি।
মেঘার এতোক্ষণ সমস্ত কথা মনযোগ দিয়ে শুনছিলো, কিন্তু লাস্টের কথায় মেঘা চোখ তুলে তাকালো। মেঘা বললো, আমি আবার কি করলাম ।
মেহমিদ _ এই যে, আপনি কাকিয়ার এতোসব সহ্য করেন।
মেঘা অবাক হয়ে বললো _ আপনি এতকিছু কীভাবে জানেন।
মেহমিদ_ কালকে আপনার লুকিয়ে খাবার নিয়ে যাওয়ার পর ই বুঝছি। মাটি বলার পর সব ক্লিয়ার হলো।
মেঘা কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
মেহমিদ বলে উঠলো _ শুধু দীর্ঘশ্বাস নয়, প্রতিবাদ ও করতে হবে। কালকে সকালে আমার সাথে দেখা করবি, বুঝছিস।
মেঘার গলা শুকিয়ে গেল, মেঘা উঠলো_ হ্যা কেন।
মেহমিদ _ ফাইটিং শিখাবো।
মেঘা _ এ্যাঁ………।
মেহমিদ _ এ্যাঁ নয় হ্যা।
মেঘা _ ওরে বাবা,আমি পারবো না। ( বলেই অসহায় ফেস বানিয়ে মেহমিদের দিকে তাকালো)
মেহমিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _ না আসলে আমি রুম থেকে তুলে নিয়ে আসবো। এখন আমার রুম থেকে যেতে পারেন। বলেই লেপটপ নিয়ে বসে পড়লো।
এদিকে মেঘার চোখ বড় বড় হয়ে গেল বলে কি। মেঘা একটা ঢুক গিলে চলে যেতে নিলে পিছন থেকে মেহমিদ বলে উঠলো _ আর খবরদার রান্না ঘরের আশেপাশে যেনো না দেখি। আয়েশা অলরেডি মাছ কাটা শেষ করে ফেলেছে হয়তো। যদি আমার কথার অমান্য দেখি মাইর একটা ও মাটিতে পরবে না।
যা শুনে মেঘার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো _ বলে কি মেঘা কে নাকি মারবে। জেনো আমি ওনার বিয়ে করা বউ। আমার জন্য এতো দরদ কিসের।
মেঘা বলে উঠলো _ আমি পারবো না, এবং আপনার একটা কথা ও শুনবো না।
মেহমিদ বলে উঠলো _ তো আমার কথার বাইরে গিয়ে দেখান ম্যাডাম আপনি।
মেঘা রেগে মেগে যেই চলে যেতে নিবে।
তখনি মেহমিদ এর রুমে মাহিদ প্রবেশ করলো। মাহিদ রুমে প্রবেশ করে বলে উঠলো _ হায় ব্রো, হোয়াটস আপ।
মেহমিদ বলে উঠলো _ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কখন আসলি।
মাহিদ _ এইতো। এই বলে মেঘার দিকে চোখ পড়তেই বলে উঠলো _ who are you?
মেহমিদ বলে উঠলো _ ওও হচ্ছে মেঘা, শাহিন কাকার মেয়ে। আরেকজন আছে মাটি, তোর মতোই ফাজিল।
মাহিদ _ ওহ্ আচ্ছা তাই। শাহিন কাকার মেয়ে আছে আমরা জানি না কেন,, এতো দিন কইছিলো।
মেহমিদ রেগে বলে উঠলো _ জামাইর বাড়ি ছিল, হইছে। এখন যা ।
মাহিদ মজার ছলে বলে উঠলো _ সেই জামাইটা বুঝি তুমি।
মেহমিদ রেগে বলে উঠলো _ just shut up মাহিদ।
মাহিদ ঠোঁটে আঙুল রেখে মিনমিন করে বলে উঠলো _ তোমার ঘর ছাড়া তো কোথাও দেখতে পেলাম না।
এদিকে মেঘা এদের ঝগড়া দেখে ফিক করে হেসে দিল।
মেহমিদ রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো _ get lost.
সাথে সাথে মেঘা আর মাহিদ মেহমিদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
বারান্দায় এসে মেঘা আর মাহিদ হেসে কুটিকুটি। মাহিদ মেঘার উদ্দেশ্য বলে উঠলো _ ভাইয়া কে রাগাইতে আমার ভালোই লাগে বুঝছো। বাই দা ওয়ে তুমি মাইন্ড করো নাই তো। আমি দুষ্টুমি করলাম।
মেঘা _ আরেহ না। জেঠি মনি ঠিকিই বলেছিলো তুমি আসলেই একটা ফাজিল।
মাহিদ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো _ ফ্রেন্ডস। মেঘা হ্যান্ডশেক করে বললো শিউর।
মাহিদ _ চলো নিচে যাওয়া যাক, আয়েশা মাছ কুটতেছে একটু মজা নিয়ে আসি।
মেঘা বলে উঠলো _ না আমি এখন যাবো না, এখন আমি বান্ধবীর বাসায় যাবো কিছু নোট নিয়ে আসতে বুঝছো।
মাহিদ _ ওকে ঠিক আছে। বাই
এই বলে মেঘা ঘরে চলে গেল। মাহিদ সিরি ডিঙিয়ে রান্নাঘরে গেল।
মেহমিদ রান্না ঘরে ঢুকে গিয়ে আয়েশা ওয়াক থু বলে একটা চেয়ার টেনে বসলো। আয়েশা রণমূর্তী ধারণ করে বলে উঠলো _ মাহিদ ভাই বমি কি আমার উপরে করে দিবে নাকি যত্তসব।
মাহিদ দুঃখী দুঃখী ফেস করে বললো _ আয়েশা তুই মাছ কুটছিস। ছিঃ কি আঁশটে গন্ধ। ভাবলেই গা গুলিয়ে যায়।
আয়েশা _ ফাজলামি করো না তো মাহিদ ভাই। জেঠি মনি ঠিকিই বলে তুমি আসলেই একটা ফাজিল।
মাহিদ কপাল কুঁচকে বলে উঠলো _ আমার দুঃখপ্রকাশ কে তুই ফাইজলামি বলছিস জরিনা। তোর দুঃখে আমি ব্যাথিত।
তখনি মাটি পিছন থেকে বলে উঠলো _ আয়েশা, যেহেতু ওনি তোর দুঃখে ব্যাথিত তবে মনে হচ্ছে তোর বদলে ওনিই মাছ কেটে দিবে। তুই বরং উঠে আয়।
কন্ঠ টা চিরপরিচিত হতেই ভ্রু কুঁচকে মাহিদ ফট করে মাটির দিকে তাকালো।
আয়েশা রেগে বলে উঠলো _ তোর বোনের কাজ চালাকি করে মেহমিদ ভাই আমাকে দিয়ে করাচ্ছে,কি ভেবেছে আমি কিছু বুঝি না। আমি মা কে আজ সব বলবো।
কিন্তু এদিকে কে শুনে কার কথা, মাহিদের এমন তাকানো দেখেই মাটি বুঝতে পারছে তাকে চিনে ফেলেছে। মেকি একটা হাসি দিয়ে দিল দৌড়। এবার মাহিদ তাড়াতাড়ি করে শার্টের হাতা গুটিয়ে, চেয়ার ফেলে দৌড় মেরে মাটির পিছু নিলো ।
মাটি দৌড়ে এসে একটা রুমের মধ্যে দরজা লাগাতে নিলে, মাহিদ এসে এক হাত দিয়ে আটকিয়ে ফেলে।
এদিকে মাটি ভয়ের চোটে _ ইতর, বান্দর, ইবলিশ, অশভ্য কি বলছে নিজেই জানে না।
মাহিদ রেগে এক ধাক্কা মারতেই মেঝেতে পড়ে গেল মাটি। সাথে সাথে উঠে দরজার চিপায় গিয়ে লুকালো।
তখনি দুটি শক্ত হাতের বেড়াজালে নিজেকে বন্দি পেলো মাটি। মাটি জোরে বলে উঠলো _ এই আপনার সমস্যা কি হ্যা। আমার দেয়ালের দুই সাইটে নিজের এমন খাম্বার মতো হাত রেখেছেন কেন। যেতে দিন বলছি।
মাহিদ, আফসোসের সুরে বলে উঠলো,_আমি তো এখন যেতে দিতে পারবো না।
মাটি আমতা আমতা করে বলে উঠলো _ মানে কি?
মাহিদ _ আসলেই, মানে কি বলোতো। সেই আমি আসার পর থেকে আমার পেছনে লেগেছো । কেন বলতো কি সমস্যা।
মাটি _ নাউজুবিল্লাহ, কখন, আমি তো আপনাকে এই প্রথম দেখলাম এখন।
মাহিদ রেগে বলে উঠলো _ আমার সাথে ইয়ার্কি করো, এক থাপ্পর মেরে দাত ফেলে দিব। কেন যখন রুমে ঢুকতে ছিলাম তখন ভুত সেজে ভয় দেখাতে চেয়েছিলে না। আর যদি আমাকে এখন প্রথম ই দেখো তাহলে এতোক্ষণ দৌড়ালে কেন। এখন কিসব বললে, ইতর, বান্দর, অসভ্য। এই তোমার সাথে আমি অসভ্যতামি করছি।
মাহিদের এমন বকাঝকাই মাটি কেঁদে ফেললো। কান্নার মাঝে হেঁচকি তুলে বলতে লাগলো _ মেহমিদ ভাইয়া বললো আপনি নাকি খুব ফাজিল, ছোটদের বোকা বানাতে ভালোবাসেন। তাই আমি আপনাকে বোকা বানাতে চেয়েছিলাম। আমাকে যেতে দিন আমি আর আপনার সামনেই আসবো না।।
মায়াবতী পর্ব ৩
মাহিদ _ মাটির এমন বোকা বোকা কথা শুনে হাসতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু নিজে যে সত্যি একটু ঝাঁঝালো কন্ঠে কড়া শাসন করে ফেলেছে বুঝতে পেরে, মাটির সামনে থেকে সরে গেল।
মাহিদ বলে উঠলো _ ঠিক আছে যাও।
মাটি ছাড়া পেতেই দৌড়ে চলে গেল। কিন্তু এতোক্ষণ যাকে শাসন করলো সেই মেয়েটি কে, মাটি?
মাহিদ নিশ্চিত হয়ে বললো _ হ্যা মাটিই হবে হয়তো।