মি মাফিয়া পর্ব ৬০
সুমাইয়া সাবিহা
__বিশ্বাস করি তো আপনাকে আমি সেই বিশ্বাস নিয়েই তো আপনার কাছে আবদার করলাম আমি জানি আপনি কখনো আমার আবদার ফেলবেন না ।
____এতোটা বিশ্বাস কখন থেকে হয়েছে এই মি মাফিয়া টার উপর ?
___আরিয়া কোনো কথা বললো না এক হাতের উল্টো পিঠে এক চোখ মুছে আবারো আফরানের বুকে মাথা গুঁজে হালকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ।
আফরান নিজেকে হালকা গুটিয়ে নিয়ে নিজর বক্ষ আরিয়ার মাথা বরাবর করে । এতে আরিয়ার মাথা ঠিক আফরানের বুকের মধ্যখানে ঠেকে । একহাতে আরিয়ার মাথার পেছনের চুলে হাত রেখে বুকের সাথে আলতো ভাবে চেপে ধরে সাইড থেকে এলো কেশের মাতাল করা সেই সুগন্ধ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে শান্তির পরম নিঃশ্বাস ছাড়ে। শুধু মাত্র এই ছোঁয়া টুকু এতো কাছ থেকে পাওয়ার জন্য সেই গত সন্ধা থেকে একটু সুযোগ খুঁজে ছিলো এতো সময় পর সেটা পেয়েছে । এই স্পর্শে কি আছে আফফরানের জানা নেই তবে এই টুকু জানে এটাই তার অশান্ত হৃদয় কে শান্ত করে ।
মিনিটের মাথায় নিজের গালের একসাইডে ভেজা কিছু আঁচ করতে পেরে বুক থেকে মাথা উঠাতে চায় কিন্তু আফরান এমন ভাবে ধরে আছে যে নিজকে এখান থেকে সরানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছে তাই নিজের কান্না মুখশ্রীর ভাঙা গলার শব্দ টা কন্ঠ থেকে সরিয়ে বললো
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__একটু হসপিটাল কল দিয়ে দেবেন? এখন কেমন আছে আম্মু ?
আফরান যেনো শুনেও শুনলো না নিজেকে ঐ চুলের মাঝেই ডুবিয়ে রাখলো ।
___শুনছেন আপনি ? আপনি কি শাওয়ার নিয়েছেন নাকি ? কথাটা বলে আরিয়া আফরানের পিঠ থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিজের গাল থেকে সেই ভেজাতুর পানি টা মুছতে গিয়ে হাতের মধ্যে চোখ পড়তেই কেঁপে উঠে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে কাঁপা গলায় বলে উঠে
___ক…কি হয়েছে? র…রক্ত কোথা থেকে আসলো এখানে?
কথাটা বলেই আফরান কে আবারো সরাতে চায় নিশ্চয়ই লোকটার আবারো আঘাত লেগেছে এটা বুঝতে আরিয়া ভুল করবেনা । কিন্তু আফরান তো ছাড়ছেই না এভাবেই ধরে আছে ।
আরিয়া বিচলিত হয়ে দুহাতে আফরানের বাহু ধরে ডাকতে লাগলো
__কথা বলছেন না কেনো? সত্যি করে বলুন না কি হয়েছে ছাড়ুন আমায় আমি দেখবো । কথা বলতে বলতে আরিয়ার অক্ষিদ্বয়ে আবারো জলরাশি এসে ভিতর জমায় , টুপ করে আফরানের বুকের উপর দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরে ।
প্লীজ ছাড়ুন না আমি দেখবো কোথায় লেগেছে আপনার ? বলুন না ।
আফরান এবার ডিস্টার্ব ফিল করে নিম্ন আওয়াজে বললো
__চুপ
কথাটা বলে আবারো একটু নড়েচড়ে আরিয়ার গলার ডান সাইডে চুল গুলো তে আবারো মুখ গুজে ভালোভাবে।
এবার আরিয়া নিজের শরীরে আফরানের গরম নিঃশ্বাসের হালকা অনুভব করে আরিয়ার শরীর অনবদ্য পরিস্থিতি তেও কেঁপে উঠে । বুজতে বাকি নেই সাইকো লোকটা নিশ্চয়ই অসময়ে তার মাঝে ডুবে যেতে চাচ্ছে অথবা এভাবেই থাকতে চাচ্ছে।
____দ…. দেখুন আ….আপনি
আফরান নিজের অবস্থায় থেকেই তর্জনি আঙুল টি আরিয়ার ঠোঁটের উপর রাখে ।
আরিয়ার গলা শুকিয়ে আসছে বারবার । এর মধ্যেই কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে ফেলে
আফরানের প্রগাঢ় অনুভূতির রোদ্রতাপ শরীরের মৃদু স্পর্শ আরিয়ার কাছে এই মুহূর্তে যেমন বিষাদময় লাগছে অন্য দিকে আবার পাগলামু মনে হচ্ছে একপ্রকার ।
আরিয়া কে চুপ থাকতে দেখে ঠোঁটের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয় আফরান।
আরিয়ার গালের একপাশ রক্তে ভিজে আসছে আরিয়ার বুঝতে বাকি নেই নিশ্চয়ই বুকের পা সাইড টায় আঘাত পেয়েছে কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না এসব এখন ।মন টা ব্যাকুল হয়ে উঠছে বারবার ।চোখের জলে এবার আফরানের বুক ভিজে উঠছে রক্তের সাথে সংমিশ্রণ হয়ে ডার্ক লাল কালার টা টকটকে লাল হচ্ছে।
___শুনুন না প্লীজ ,কি হয়েছে আপনার ? কার সাথে আবার হাতাহাতি হয়েছে? বলুন না ।
আরিয়ার শ্বাস বারংবার থেমে আসছে বিষয় টা খেয়াল করে আরিয়া কে ছেড়ে দিয়ে বুক থেকে মাথা তুলে আরিয়ার গালে দৃষ্টি দিতেই বিরক্ত নিয়ে নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে আবারো অসহ্যকর বিরক্ত প্রকাশ করে বললো
__তেমন কিছু না একটুখানি…
এটুকু বলতেই আরিয়া উতলা কন্ঠে ক্ষত জায়গার একপাশে হাত রেখে বলে উঠলো
__কিভাবে এখানে এতোটা কেটে গিয়েছে? কখন হয়েছে? এখনো এতো রক্ত কেনো ঝরছে? কে মেরেছে আপনাকে? ব..বলুন না ।
আরিয়ার এমন মরিয়া হয়ে কথা বলার ধরন টা আফরানের কাছে বেশ ভালো লেগেছে । বউ সত্যিই তাকে নিয়েও খুব চিন্তা করে এটা ভাবতেই একরাশ ভালো লাগায় ছুঁয়ে যায় আফরানের হৃদয় ।
__বলছেন না কেনো? কিভাবে হয়েছে ?
আফরান একদৃষ্টিতে আরিয়ার সেই বিচলিত হওয়া রিয়েকশন গুলো দেখে যাচ্ছে ।
আফরান এর থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সময় নষ্ট না করে আফরানের দুহাত ধরে টেনে খাটের উপর বসিয়ে চোখের জল একহাতে মুছে আবারো বলতে লাগলো
__কি হয়েছে কথা বলছেন না কেনো?
এবারো আফরানের কোনো উত্তর আসলো না তাই এখানে না দাঁড়িয়ে থেকে ফাষ্ট এইড বক্স টা নিয়ে এসে আফরানের অপর পাশে বসে উপর থেকে রক্ত টা মুছতে মুছতে আবারো জিজ্ঞেস করতে লাগলো ,
__আপনি এমন কেনো? আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিন না কেনো? এভাবে এতোটা ক্ষত কতো গুলো দাগ বসেছে এখান টায় ।কষ্ট হচ্ছে না আপনার ? কিভাবে এতজটা সহ্য করে থাকেন? বলেছি না সব কিছু ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে লাগবেনা এমন কাজ যেটাতে আপনাকে এতোটা আঘাত পেতে হয় ।ঐসব মানুষের মাঝ থেকে বেড়িয়ে আসুননা প্লীজ চাচা জানের ও ভালো উন্নত মানের কম্পানি আছে ওসব ছেড়ে চলে আসুন না ।
আফরান উত্তর না দিয়ে নিজেও বক্স থেকে একটু তুলা নিয়ে আরিয়ার গালে লেগে থাকা রক্ত প্রবাহ গুলো মুছে দিলো । বড্ড বেমানান লাগছে ঐ ইনোসেন্ট মুখাবয়বে লাল রক্ত টা ।
আরিয়া চোখের জল আটকাতে চেয়েও পারছেনা বারবার চেয়েও । বুক থেকে পিঠ অব্দি ব্যান্ডেজ টেনে বেঁধে দিতে লাগলো ।
__কখন আঘাত পেয়েছেন ? এতোটা বেপরোয়া কেনো? শরীরে জখম দেখেও কিছু করেননি কেনো? কতোটা রক্ত ঝড়েছে এতোক্ষণে বুঝতে পারছেন? দেখুন আপনার এসব সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু আপনাকে এসব অবস্থায় দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগেনা বলে দিচ্ছি । একদম সহ্য করতে পারিনা আমি এসব ।
___তখন তুমি আমার কথামত আমার কাছে আসলে এসব হতো না ।
__ঠিক বুঝলাম না
____খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে তোমায় । তোমার স্পর্শ পেতে তীব্র ইচ্ছে হচ্ছিল । নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হয়েছিলো খুব ডাকার পরেও যখন আসলে না তখন আর সহ্য করতে পারিনি ।
আরিয়া চমকিয়ে উঠে কিছুটা । হকচকিয়ে ব্যান্ডেজ টা বাধা শেষ করেই আফরানের সামনে বসে উতলা কন্ঠে প্রশ্ন তুললো
__আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? সহ্য করতে পারেননি মানে কি ? এটা আপনি নিজে করেছেন তাই না ? তার মানে আপনাকে কেউ আঘাত করেনি আপনি নিজেই …..এটুকু বলতেই গলায় দলা পাকিয়ে আটকে যায় পরের শব্দ গুলো না চাইতেও গড়গড়িয়ে বুক বয়ে যায় সিক্ত নয়নের অশ্রু ।
পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে আফরানের চোখে , নিজের মতো অশ্রু সমুহ প্রবাহ হচ্ছে।জামার অগ্রভাগ ভিজে গেছে এতোক্ষণের কান্নাতে।
আফরান বউকে এমন করে পলকহীন তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝলো এই চোখে অভিযোগের বিশাল সাগর বানিয়েছে তাইতো এমন করে কান্না করছে । কিন্তু এই মুহূর্তে চোখের জল টুকু সহ্য করতে পারছেনা তাই একটু হাসি এনে ডান হাতে আরিয়ার চোখের জল মুছে দিতে চাইলো কিন্তু আরিয়ার এই ব্যাবহার টা এই মুহূর্তে আশা করেনি আফরান তাই কপাল কুচকায়।
আফরান আরিয়ার চোখের জল মুছার জন্য হাত বাড়াতেই আরিয়া আফরানের সামনে থেকে একটু পিছিয়ে গিয়ে বলে উঠে ,,
__একদম টাচ করবেন না আমায় আপনি কখনো ভালো হওয়ার নয় বুঝে গিয়েছি আমি । ভেবেছিলাম অন্তত আমার জন্য হলেও অনেক কিছু সেক্রিফাইস করে মানিয়ে চলবেন কিন্তু এখন তো দেখছি মাত্রাতিরিক্ত বেশি করছেন । লাগবেনা আপনার ঐ স্পর্শ যেই স্পর্শে নিজেকে অপরাধী মনে হবে আমার । সামান্য বিষয় টুকু তে মেন্টাল লোকদের মতো বিহেভিয়র করবেন বেশ ভালো করুন ।আপনি শুধু নিজের টা বুঝেন একবারও ভেবেছেন আমার কথা ? মনে তো হচ্ছে না । আপনার ব্যাবহার গুলো তে ভালোবাসা তো নয় উল্টো আপনাকে আমার কাছে জঘন্যতম পাগল একজন ব্যাক্তি ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না । আসবেন না আমার কাছে একদম । আপনি সত্যিই পাগলামু নয় উল্টো নিজেকে পাগল প্রমান করে দেন সব কিছু তে কোনো দিন আমায় বুঝেননি ।
কথা গুলো বলে দুহাতে চোখ মুছে খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাটা ধরে ।
আফরান বুঝলো আরিয়া সত্যিই রেগে গেছে অর্থাৎ নিজের স্বামীর এই কষ্ট টুকু সহ্য করতে পারছে না সত্য টা না বলাই ভালো ছিলো মনে হচ্ছে। নিজেই মনে মনে কিছুটা আফসোস করতে লাগলো ।” আরু ” বলে পেছন থেকে ডাকলো
__দেখ আরু আমার জন্য তখন সময় টা খুব বিষাক্তময় ছিলো কেনো করেছি জানিনা তবে ইচ্ছে করে করিনি সত্যি বলছি ।
আরিয়া শুনেও যেনো শুনছে না। দরজা অবদি চলে গেছে কোনো উত্তর না দিয়ে তাই আফরানও এবার খাট থেকে উঠে দ্রুত পায়ে আরিয়ার পিছু যেতে লাগলো ।
__দেখ আরু আবার উল্টা পাল্টা করবি না দাঁড়াতে বলেছি আমি নয়তো ভালো হবে না তোর জন্য ।
আরিয়া আফরানের কথার কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ না করে রুম ছেড়ে পাশের রুমে গিয়ে কিছুটা আওয়াজ করেই দরজা টা ঠাস করে বন্ধ করে দেয় ।
আফরান দ্রুত পায়ে এসেও আরিয়ার দৌড়ে আসার সাথে পা মিলাতে পারেনি ।
আরিয়া দরজা আটকিয়ে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পরে কাঁদতে লাগলো ।কেনো এতো প্যারা সহ্য করতে হয় তাকে । মায়ের অবস্থার কথা ভাবতেই মাথা টা আবারও ব্যাথা শুরু হয় তা উপর এই লোকটার একের পর এক বাধ্যবাধকতা মুলক কাজ তো আছেই ।
সব মিলিয়ে আরিয়ার ভিষন ভাবে কান্না আসছে এই মুহূর্তে।বালিশে মাথা গুঁজে কাঁদতে লাগলো ।
দরজা ঠকঠক আওয়াজ করে আফরান বলতে লাগলো
__বললাম তো তখন মাথা ঠিক ছিলো না আরু এখন কিন্তু এখন আবার মাথা টা এমন জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে খাস না । আর তোরই তো দোষ তাইনা ? এখন আবার আমার সাথেই রাগ দেখাচ্ছিস? তুই কথা শুনলে এমন করতাম আমি ? দেখ আরু দরজা খুলতে বলেছি । আচ্ছা ঠিক আছে আর এমন করবো না কন্ট্রোল করবো নিজেকে হয়েছে?
প্রায় আধঘন্টার মতো ধৈর্য নিয়ে আফরান এভাবেই বিভিন্ন রকম কথা বলে মানাতে চেয়েছে আরিয়া কে কিন্তু ভেতর থেকে আরিয়ার গুনগুন কান্নার আওয়াজ ছাড়া কিছুই আসেনি । এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে হাত দুটোর রগ একবার ভেসে উঠছে তো আবার মিশে যাচ্ছে। নিজেকে যথেষ্ট ধরে রাখার চেষ্টা করছে নয়তো একটু আগের কথা টার মুল্য থাকবেনা আরিয়ার কাছে ।তাই এখনো অবদি গলার আওয়াজ স্বাভাবিক আছে ।
এবার আর না ডেকে সোজা কথা বলতে লাগলো
__ঠিক আছে এভাবেই থাক লাগবেনা তোর দরজা খোলার তবে শুন আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো । বলেছি যখন ধৈর্য ধরবো তাহলে ওটা আমি করবোই । কিন্তু এমন রাগ করে থাকলে কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিতে পারছি না কতক্ষণ নিজকে আটকাতে পারবো তখন কি করবো তোর আইডিয়া নেই আরু।
ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় আরিয়ার ঘুম টা ভাঙে সেটাও বারান্দার ওপাশ থেকে গুঞ্জনের আওয়াজ পেয়ে । লম্বা ঘুম হয়েছে এক কথায় বলা যায় আজ সুর্যের আলোতেও আরিয়ার ঘুম ভাঙতে পারেনি ।রাতে কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো বুঝতে পারেনি ।
আওয়াজ পেয়ে হকচকিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে খাট থেকে নেমে বুঝার চেষ্টা করলো কিসের আওয়াজ আর কোথাও থেকে আসছে ?
দিক বুঝে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকাতেই দেখে বাড়ির সকল লোকজন আস্তে ধীরে আসছে পাশের দু তিনটা ফ্লাটের মানুষ জনও জড় হয়েছে । আরিয়ার বুঝতে বাকি নেই সবাই ফিরে এসেছে মা কে নিয়ে তার মানে সত্যি বলছিলেন আমাকে স্বান্তনা দিতে নয় ।
চটজলদি বেলকনি ছেড়ে নিজের রুমের দরজা টা খুলে দিতেই আকস্মিক পায়ের উপর মনে হলো ৬০-৭০ ওজনের বিশাল পাথর এসে পড়েছে ।
আরিয়া না বুঝেই একটু ভয় পেয়ে আ আ শব্দে চেচিয়ে উঠে মুহুর্তেই লক্ষ্য করে আফরান নিজের বাম হাতের কনুইয়ে ঘসতে ঘসতে উঠতে উঠতে বললো
___এখন তো নিজেই ছিলে দিয়েছিস আর আমি করলেই দোষ তোর টা দোষ নেই ? ওহ … একটু বলে তো দরজা টা খুলতে পারতি ।
আরিয়া আশ্চর্য হয়ে আফরানের দিকে তাকায় তার বুঝতে বাকি নেই নিশ্চয়ই সারারাত এখানেই দরজায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়েছে
__আ..আপনি এখানেই ছিলেন সারারাত ?
আফরান কপাল কুঁচকে
__তা কোথায় থাকবো? ভেতরে জায়গা দিয়েছিস?
আরিয়ার আবারো মনে হয় রাগ হলো এই লোকটার কাজ কর্ম মোটেও তার পছন্দ না এতোটা পাগল পান কিভাবে হয় এই লোকটা
____তাই বলে এখানে থাকবেন ? যা ইচ্ছে করুন এখন সামনে থেকে সরুন ।কথা নেই আপনার সাথে আমার ।
__আবার ও এমন করছিস দেখ আরু আমি কিন্তু বলেছি ধৈর্য ধরবো তাই তোর কপাল ভালো দরজা টা ভেঙে দেইনি।
____হুয়াট? আপনি বসে বসে দরজা ভাঙার প্লেন বানিয়েছিলেন ।আপনি যে কতোটা ওভার….
এটুকু বলতেই ঠিক হল রুমে থেকে জাফরের কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই আরিয়া আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত উদ্বেগ্ন হয়ে হন্তদন্ত পায়ে পাশ কেটে চলে যায় ।
আফরান কপাল কুঁচকে পেছন থেকে আরিয়ার চলে যাওয়ার দৃশ্য টুকু তে তাকিয়ে থাকে ,
__চীনা থেকে ভালো ডঃ না ডাকলেই মনে হয় ভালো হতো এতো জলদি আসতে পারতো না ।
সব সময় আমাদের মাঝে এই ফ্যামিলি টা না ঢুকলে হয়না যতো সব।
কথাটা দাঁতে দাঁত পিষিয়ে বলে নিজের রুমের দিকে চলে যায় আফরান ।
পাশ থেকে সামিরা রহিমা বেগম কে ছোট হাত পাখা দিয়ে ধীরে ধীরে বাতাস দিচ্ছে যদিও এসি চালু করাই আছে তবুও মুখের উপর গরম ভাব যেনো না পরে ডঃ বলে দিয়েছে ।
পুরো মুখে ব্যান্ডেজ এ বাঁধা। থুতনি থেকে নিয়ে কপাল অব্দি।কয়েকসপ্তাহ সময় পর এটা খোলা হবে ।
ডান হাতের আঙ্গুল থেকে শুরু করে কব্জীর উপর অবদি ব্যান্ডেজ এ বাঁধাইকৃত আছে ।
তবে সেটাও চীনের স্পেশাল আলগা চামড়ায় হাত সেলানো হয়েছে এই হাতের এই অংশটুকু তে কখনো চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা । তবে চোখ দুটির নিশ্চয়তা নেই সেটা পরে বুঝা যাবে ।মুখের আসল চামরাও গলে গিয়েছে তাই অন্য বিশেষ ক্যামিকেল ইউজ করে জোড়া দেওয়া হয়েছে আগের মতোন করে ।
মি মাফিয়া পর্ব ৫৯ (২)
আরিয়া দৌড়ে এসে সবার মাঝে মাকে দেখেই জড়িয়ে নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো
__একদম চিন্তা করবে না তোমার কিছু হবে না মা । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
আরিয়ার ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে মায়ের চেহারা টুকু দেখতে পাচ্ছে না ।
রহিমা বেগম যেটুকু শক্তি আছে সেটুকু তা খরচ করেই দুহাত তুলে আরিয়ার পিঠ জড়িয়ে ধরলো । হয়তো অনেক কিছু বলতে চেয়েও পারছেনা ।হাত জোড়া কাঁপছে রহিমা বেগমের ।শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে । তারপর……