হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১০

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১০
তোয়া নিধী দোয়েল

আকষ্মিক পড়ে গিয়ে ভীষণ ভাবে কোমড়ে ব্যথা পায় তুর্কি। কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে বসে থাকে। উপর দিকে দুই জন ছেলে রাগান্বিত স্বরে বলে,
-এই মেয়ে চোখে দেখো না?
ওদের পাশে দাঁড়ানো মীম নামে ছেলেটি ওদের দু-জনের পায়ে লাথি মারে। ছেলে দু-জন লাথি খেয়ে মীমের দিকে তাকায়। তাকানো মাত্র-ই মীম চোখ টিপে। ছেলে দু-জন নিজে দের দিকে চাওয়া চাওই করে ঠোঁট উলটায়। একজন ছেলে বিড়বিড় করে,

-মনে হয় নতুন ভাবি।
মীম নামে ছেলেটি তুর্কির দিকে এগিয়ে বলে,
-সরি আপু। আমি দেখতে পাই-নি।
তুর্কি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
-চোখ থাকলে তো দেখবেন। অসহ্য!
তুর্কি ফ্লোরে ভর দিয়ে একা একা-ই উঠে। তারপর বোরকা ঝাড়ে। একটা ছেলে দৌড়ে এসে বলে,
-মীম ভাই মীম ভাই, পাখি আপনাকে দেখা করতে বলছে। ও কাঠ-বাগানে বসে রয়েছে।
মীম নামে ছেলেটি বিরক্ত চোখে ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটি তুর্কিকে দেখে থতমত খেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-আল্লাহরে নতুন ভাবি। কার সামনে কি কইলাম।
তুর্কি ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে বলে,
-কি বললেন?
মীম নামে ছেলেটি বাকি তিনটি ছেলের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
-বা*ই**দ তোরা যদি আর একটা কথা বলছ; পকেট থেকে মাল টা বের করে গলার শিরা টা ঘ্যাচাং ফুঁ করে দেবো।
ওরা-ও ফিসফিস করে বলে,
-ভাই মেয়ে-টা কে? এই-টা-রে তো তোমার সাথে কোনো দিন দেখি নাই।
-চুপ।
তারপর তুর্কির দিকে তাকিয়ে বলে,

-সরি আপু। আপনি ব্যথা পান-নি তো।
-সেটা আপনাকে বলতে যাবো কেনো? আর ওই ছেলেটা ভাবি কাকে বললো?
মীম নামে ছেলেটি বাকি ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে হুমকি দিলো। তারপর তুর্কির দিকে তাকিয়ে বলে ,
-আপনাকে বলে নাই আপু। আপনি কিছু মনে করবেন না। আর সরি আপু আমি একদম খেয়াল করি নাই।
তুর্কি ভ্রুকুঞ্চন করে তাকায়। তারপর শান্ত কণ্ঠে বলে,
-ইটস ওকে।
-আপু, আপনি কি কোনো সমস্যায় পড়েছেন? এই ভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন?
তুর্কি নিজেকে শান্ত করে মুখের হাসি প্রসস্থ করে বলে,

-না ভাই কিছু হয়-নি৷ এমনি।
-এমনি-এমনি কেউ এই ভাবে ছোটে?
মনে দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করে মীম। পাশ থেকে একটা ছেলে ফিসফিসে বলে,
-বা*ল! তুই এই ছেড়িরে নিয়া পড়লি কেন? এই ছেড়ি জাহান্নামে যাইক। আমরা যারে পাহারা দিতে আইছি তাঁর কাছে চল। তাঁর কিছু হইলে আমাগো জাহান্নামে যেতে হবে।
মীম নামে ছেলেটি ওই ছেলেটির পায়ে পারা দিয়ে বলে,
-গুতুর বাচ্চা। থামবি তুই।
-তোর বেডিবাজ। তোর জ্বলায় যদি আমরা মাইর খাই তোরে দেখিছ কি করি।
পাশ থেকে আরেকজন বলে,
-হো তোর জন্য আমরা মাইর খাইতে পারুম না। চল তুই।
ছেলেটি তুর্কির দিকে তাকিয়ে বলে,

-আপা সরি। আমাগো মাফ করেন। এখন আমাগো যাওয়া লাগবো। টাটা।
এই বলে ছেলেটি মীম সহ বাকি ছেলে গুলো কে নির্দেশ দেয় হাঁটার জন্য। মীম নামে ছেলেটি হাতের কনুই দিয়ে ওই ছেলেটির পেটে আঘাত করে। ছেলেটি কুকিয়ে উঠে ‘উ’ জাতীয় শব্দ করে। মীম নামে ছেলেটি ফিসফিসিয়ে বলে,
-হে***র*পুরা এই সেই।
সব গুলা ছেলে চমকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর বোকা বোকা হাসি দিয়ে এক সাথে বলে উঠে,
-আসসালামু-আলাইকুম ভাবি। ভালো আছেন।
তুর্কি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে
-ভাবি!!
মীম নামে ছেলেটি বাকি ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলে,

-বাই** তগো কপালে আজ শনি আছে। জাহান্নামে যাওয়ার জন্য তৈরি হ। হে** বার বার বলতেছি চুপ থাক চুপ থাক। বাই** তাও প্যাঁচাল শুরু করছে।
-এই বার আপনারা ভাবি কাকে বলছেন?
মীম নামে ছেলেটি
-আপু-আপু চেইতেইন না। ওদের মাথায় সমস্যা আছে। আপনি ব্যথা পাননি-তো। আমি তাহলে যাই ওকে। অন্য এক দিন কথা হবে।
-এই দাঁড়ান দাঁড়ান। আগে বলে যান ভাবি কে?
উপর থেকে গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠ স্বর ভেসে আসে
-আমি বলছি।

চেনা কণ্ঠ স্বর শুনতে পেয়ে তুর্কির বুক ধক করে উঠে! আদনানের পাশে কোহেলি এসে বলে,
-তুই বলবি মানে? তুই কি বলবি? তোর এখানে কোনো কথা নেই। চুপ চাপ চল।
কোহেলি আদনানের হাত টেনে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। তুর্কি ওদের রাস্তা আটকিয়ে বলে,
-এক মিনিট ম্যাম। বেয়াদবি মাফ করবেন। আমি স্যারের কাছে জানিতে চাই, এরা কেন আমাকে ভাবি ডাকছিলো।
মীম নামে ছেলেটি সুযোগ বুঝে তাঁর দলবল নিয়ে চলে যায়। কোহেলি রাগে কিরমির করতে করতে বলে,
-তো যাও ওদের কাছে শুনো। এখানে কি?
-আমি স্যারের কাছে শুনতে চাই ;এরা কেনো আমাকে ভাবি বললো। স্যার…..
কোহেলি এগিয়ে এসে বলে,

-হে ইউ। তোমার সাহস হলো কি ভাবে আমার সাথে এই ভাবে কথা বলার? তুমি জানো আমি কে?
-সরি ম্যাম। আমি শুধু স্যার এর কাছে কথাটা শুনেই চলে যাবো। আপনি আমার বেয়াদবি মাফ করুন।
-কী বললে তুমি?
-বাংলায় তো বললাম।
-রাজ চল তো। এই বেয়াদব মেয়ের সাথে আমি কথায় বলতে চাই না।
-হ্যাঁ, আপনি যান। স্যার একটু পর আসবে।
-ও আমার সাথে এখনি যাবে। তোমার যা প্রব্লেম সেটা ওদের কাছে গিয়ে শোনো।
– হ্যাঁ, তাই তো শুনতে চেয়েছিলান। কিন্তু, সির-ই তো বললো উনি বলবে তাহলে উনিই বলুক। তো স্যার (আদনানের দিকে তাকিয়ে) বলুন।
-রাজ, তুই যদি একটা কথা বলছ তাহলে তোর খবর আছে। তুই চুপ চাপ আমার সাথে যাবি।
– স্যার যাবে না।

-এই মেয়ে তুমি আমাদের আটকানোর কে?
-আমি যেই হই, আমাকে কেনো আজে- বাজে কথা বলা হলো তার জবাব চাই।
-রাজ তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়।
– এখানে বাধ্যের কী হলো। স্যার নিজেই বলেছেন উনি বলবেন তাহলে? স্যার, আপনি বলছেন না কেনো?
তুর্কি আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখে আদনান সেখানে নেই। তুর্কি কোহেলি আশে পাশে তাকিয়ে আদনান কে খুঁজতে থাকে। সে ততক্ষণে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেছে। এই সব ফালতু জিনিস দেখার সময় তার কাছে নেই। কোহেলি তুর্কিকে মুখ ভেঙিয়ে চলে যায়।

-ম্যানারলেস।
-আপনি। যে ভাব করেন বিয়ে যেনো আপনি একাই করেছেন। জামাই যেনো আপনার একাই আছে। ঢং।
তুর্কি ও মুখ ভেঙিয়ে কথা গুলা বলে৷ তবে তা মনে মনে। ও আগেই চলে গেছে।
-তুর্কিইইইইইইই
উপর থেকে জুবাইরার কণ্ঠ স্বর ভেসে আসে। ক্রোধে কাঁপছে সে। তুর্কির কাছে এসে হাত টেনে ধরে বলে,
-ফাজিলের বা*চ্চা তুই আজ বাড়ি চল। তোরে আমি এই শিখিয়েছি?
-আম্মু, তুমি আমাকে বাড়ি নিয়ে যাই করো; আগে তোমার ওই পছন্দ করা পাগলের সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে নিবে। তারপর মারবে না কাটবে সেটা তোমার ব্যাপার।
জুবাইরা অবাক চোখে তাকায়।
-কিইইইই

-হ্যাঁ, মা। আমি আর লেখা পড়া করবো না। আমি বিয়ে করবো এটাই লাস্ট কথা।
-পিটিয়ে তোর ছাল ছাড়িয়ে নেবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার।
-সমস্যা নেই আম্মু। বিয়ে দিয়ে বিদায়ের সময় আমার ছাল- চামড়া হাড্ডি মাংস সব রেখে দেও। আমি শশুড় বাড়ি গিয়ে জামাইয়ের টাকায় সব নতুন করে কিনে নেবো।
রাগে ফোসতে ফোসতে জুবাইরা ঠাস করে তুর্কির গালে চড় বসিয়ে দেয়। তুর্কি চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে বলে,
-এই গালে ও একটা দেও, আম্মু প্লিজ। দুই গাল এক সাথে লাল হলে আর ব্লাশ লাগাতে হবে না। ফলে, কিছু টাকা বেঁচে যাবে।
-আজ তোর বাপের এক দিন কি আমার দশ দিন। ওই ফাজিলের জন্যই তুই এত ফাজিল হইছস। আজ চল বাড়ি।
-আর কিছু টাকা ও পাঠিয়ে দিতে বলো। এক মাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। যদি ও বাবা থাকতে পারবে না। সমস্যা নেই আমি সব সময় ভিডিও কলে থাকবো।
জুবাইরা আর কিছু বলে না। এখন উনি যা বলবে এই মেয়ে তার অন্য সুর গাইবে। সে মেয়ের হাত ধরে নামতে থাকে।

-আ আ আ ভাই লাগছে তো।
-তুই থাকতে ও পড়লো কীভাবে?
ভাই ভাই, তুমি কান টা ছাড়ো আমি বলছি
-আগে বল তা না হলে ছিঁড়ে ফেলবো।
-উউউ ভাই। আচ্ছা শোনো শোনো। আমরা ভবির উপর নজর লাগছিলাম। পরে ভাবি যখন প্রিন্সিপাল রুমে ঢুকলো আমরা তখন সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। কে জানে ভাবি ওই রকম দৌড়ে আসবে। মোড় ঘুরতেই আ আ আ আ আ আ আ……..

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ৯

আরো জোরে কান টেনে ধরে আদনান। ব্যথায় চিৎকার করে উঠে মীম। পুরো নাম তামীম ফরাজি। আদনানের ছোট ভাই। কলেজে সবাই সংক্ষেপে মীম ভাই বলে ডাকে। আর বাড়িতে রেজুয়ান।
-বাড়িতে আয়। আজ তোর খবর আছে।
আদনান চলে যেতেই মীম ওর দুই চেলার ঘার চেপে ধরে বলে
-বাই** তগো জন্য যদি আমি বাটাম খাই তগো লেবু চিপরান চিপরামু দেখিস।
একটা ছেলে দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-মীম ভাই মীম ভাই ওই দিকে একটা বিরাট কেলেঙ্কারী হয়ে গেছে!

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১১