হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১৫
তোয়া নিধী দোয়েল
মুজাহিদের বিছানায় শুয়ে ফোনে চ্যাট করছে রেজুয়ান। মুজাহিদ অনেক্ষণ ধরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অবলোকন করছে তিমির রাত। বেশ কিছুক্ষণ পর মুজাহিদ বলে,
“কেমন যেনো চারিপাশ খালি খালি লাগছে তাইনা? আদনান টা যে কবে আসবে।”
“আজ মাত্র শ্বশুর বাড়ি গেলো। কয়দিন জামাই আদর খাবে তার পর। আর জাহিদ মাস্টার তুমি এই গুলা বুঝবা না। তোমার কপালে তো বিয়ে-ই নেই।”
“হুম। আমি এই ভাবে বেশি সুখে আছি। কি দরকার নিজের সুখ নষ্ট করার?”(দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে।)
জোরে শ্বাস ফেলার শব্দ শুনে; রেজুয়ান ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুজাহিদের দিকে নেয়। মুজাহিদ ধীর পায়ে হেঁটে রেজুয়ানের পাশে এসে পা-যুগল উঠিয়ে বসে। রেজুয়ান মুজাহিদকে আগাগোড়া পরখ করে বলে,
“এই বাপের ভাই এত সিরিয়াস মুডে কেন? কি হয়েছে?”
মুজাহিদ মৃদু ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“উহুম, তেমন কিছু না।”
রেজুয়ান ফোন রেখে উঠে বসে। সাধারণত মুজাহিদ এমন শান্ত ব্যবহার করে না। রেজুয়ানের সব উল্টা-পাল্টা কথার জবাব তিনি তীব্র প্রতিবাদের সাথে দেন। তবে আজ এমন কিছু হলো না।
“উহুম! কিছু তো একটা হয়েছে। তা-না হলে জাহিদ মাস্টার এত শান্ত ব্যবহার করার মানুষ নয়! কি হয়েছে বাপের ভাই? মন এত ভারী কেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুই আবার মন পড়তে ও পারছ!” (অবাক হয়ে)
“আরে বাপের ভাই, এত বছর ধরে তোমার সাথে সংসার করছি। তোমার কখন কেমন লাগে, কখন কি চাও এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। এখন ভণিতা না করে বলো কি হয়েছে?”
মুজাহিদ দেয়ালে হেলান দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে
“আজ ২৭ জানুয়ারি!”
সব বোঝা হয়ে গেছে! এমন একটা ভাব নিয়ে হাঁপ ছাড়ে রেজুয়ান। ও ভেবে ছিলো না জনি কি হয়েছে। ব্যঙ্গ স্বরে বলে„
“ওই বা* এখনো মনে রাখছো? কি শান্তি পাও এতে?”
“ও তুই বুঝবি না। হাজার ঘাটের পানি খাস তুই। ভালোবাসা, আশা, অপেক্ষা! এই তিনটি জিনিস কত সুন্দর যারা করে তারা জানে।”
“আমার জীবনে ওই রকম কোনো ভালোবাসা আসবে না, যে ভালোবাসায় অপেক্ষা করা লাগবে। আশা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।”
মাত্র-ই যেনো কৌতুক করেছে রেজুয়ান! এমন ভাবে হেসে উঠে মুজাহিদ। রেজুয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হাসো কেনো বাপের ভাই? ভুল কি বললাম। আমার ভালোবাসা হবে এমন প্রখর, যাকে ভালোবাসবো জোর করে হোক, কিংবা মেরে। হাজার দিনের জন্য হোক কিংবা এক দিনের জন্য হোক। তবু ও আমার করে ছাড়বো। কোনো অপেক্ষা আমি করতে পারবো না। ভালোবাসি মানে ভালোবাসি! তাকে আমার হতে-ই হবে। সে রাজি থাক বা না থাক। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তাঁর সব চেয়ে বড় অন্যায় হবে আমি তাকে কেনো ভালোবেসলাম। আর এই অন্যায়ের মাশুল হিসেবে তাঁকে আমার হতে হবে।”
শব্দ করে হেসে উঠে মুজাহিদ। কিছু-তে-ই যেনো হাসি থামাতে পারছে না। রেজুয়ান বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ হাসার পর মুজাহিদ বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়। এর পর রেজুয়ানের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে,
“মানুষ প্রেমে পড়ার আগে কত কিছু-ই না বলে৷ এই টা করবো সেটা করবো। তোমাকে না পেলে জীবন দিয়ে দেবো। আরো আরো কত কি! তবে সব চেয়ে কঠিন সত্য কি জানিস, যখন কেউ কাউকে সত্যি কারে ভালোবাসে তখন সে চায়, সে শুধু সুখে থাকুক। ভালো থাকুক। শুধু এই টুকুর জন্য যদি তাকে ছাড়তে ও হয় তাতে ও রাজি! যদি সারাজীবন অপেক্ষা করতে হয়, আশা নিয়ে বাঁচতে ও হয় তবু ও দ্বিমত করবে না।”
রেজুয়ান ঘাড় বাঁকিয়ে বলে,
“তোমার আমাকে কি মনে হয়? সাত ঘাটের পানি খাই বলে ভালোবাসতে জানিনা?”
“আরে না। ভালোবাসতে সবাই জানে। তবে তা ভুল সময়। ভুল কোনো মানুষ পেয়ে গেলে-ই মানুষ প্রেমে পড়ে! ভয়ংকর প্রেমে পড়ে! যে প্রেম তাকে শেখায় আর কখনো প্রেমে না পড়তে। শেখায় সারাজীবন অপেক্ষা করতে।
এই তো চোখ বুঝলে সে এত নিকটে, তবে খুললে সে অনেক দূরে! তাই হারিয়ে যাওয়া মানুষকে নিয়ে মানুষ সব সময় কল্পনায় থাকে। যাতে দ্বিতীয় বার আর না হারায়।”
“আরে বাপের ভাই কবিদের ডাইলগ ছাড়ো৷ আমার কথা শুনো। তুমি হাত ছেড়ে দিছো তাই সে এত দূরে। ভালোবাসলে হিংস্র বাঘ হতে হয়। যাতে তোমার শিকারের দিকে অন্য কেউ চোখ তুলে তাকালে ও হুংকার দিয়ে সব কিছু তছনছ করে দেওয়া যায়। যেটা তোমার সেটা শুধুই তোমার! অন্যের কলিজা যত বড়ই হোক। তোমার জিনিসের প্রতি নজর দিতে গেলে দশবার ভেবে আসে।”
মুজাহিদ মৃদু হেসে বলে,
“আরে আমার বাচ্চা। পুরুষ মানুষ হিংস্র বাঘ হওয়ার চেয়ে টাকাওলা ইঁদুর হওয়া বেশি প্রয়োজন। যাতে দুই তিন টা হিংস্র বাঘ সে পুষতে পারে।”
“ও বা* প্যাঁচাল আমার সামনে পেরে লাভ হবে না। আমি ভালোবাসি মানে ভালোবাসি। এর উপরে কোনো কথা হবে না। আমি ফকির নাকি বাদশা সেটা দেখার সময় আমার নেই। মেয়ের বাপ মেয়ে দিবো না তো বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে আসবো।”
“এত কথা বাদ দিয়ে বিসিএসটা আরেকবার দে। তা না হলে অন্য চাকরির জন্য আ্যপ্লাই কর। লেখা-পড়া শিখে বসে থাকলে সে লেখা-পড়ার দাম নেই। কলেজে গিয়ে বাঁদরামো বাদ দে। বাস্তবতা অনেক কঠিন। টাকা থাকলে মানুষ এমনতে-ই ছুটে আসবে। মনে রাখিস টাকা যার হাতে থাকে তাঁর কথা বলে।”
“বা* দিবো আমার। থাকো ঘুম আসতাছে। আজকের রাত টা একা একা নিজের সাথে কাটাও। যে মেয়েটা তখন নাম্বার দিছিলো সে কল দিতেছে। টাটা।”
রেজুয়ান চলে যেতে মুজাহিদ জানাল দিয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকায়। কত বিশাল এই নিকষকালো আকাশ! নিশ্চয়ই সে এই আকাশের নিচে-ই আছে। এই তো এক সাথে-ই রয়েছি। তাহলে মন কেনো বার বার সুর ধরে সে দূরে!
ডাইনিং টেবিলে অনেক রকমের খাবারের পদ। সব একা হাতে করেছে জুবাইরা। তাঁর এক মাত্র মেয়ের জামাই এসেছে বলে কথা! কি রেখে কি করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না।
আদনান খাবারের টেবিলে বসে রয়েছে। বিকেলের দিকে এই বাড়িতে এসেছে। আসা মাত্র তুর্কি কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেছে। ওর সামনে এক বার ও আসে নি। পিচ্চি বউ টা গেলো কই! সারাক্ষণ তোতা পাখির মত বুলি আওড়ানো পাখিটার আওয়াজ, একবার ও পেলো না।
বাইরে থেকে এসে আদনানের পেছনে দাঁড়ায় তুর্কি। এত খাবারের পদ দেখে অবাক হয়ে যায়! মা একা করেছে এত কিছু! জুবাইরাকে হাতে করে কি যেনো আনতে দেখে রাগি স্বরে বলে উঠে,
“এত কিছু কার জন্য রান্না করেছো মা!”
জুবাইরা মৃদু হেসে বলে,
“এ আবার কেমন কথা? বাড়িতে জামাই এসেছে তাঁর জন্য রান্না করবো না তো কার জন্য করবো?”
“মানে তুমি এত কিছু এই লোকটার জন্য রান্না করেছো? কই আমার জন্য তো কোনোদিন এত কিছু এক সাথে রান্না করো নি!”
জুবাইরা কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
“এক প্লেট ভাত খেতে-ই তুই হাজার বাহানা দেখাতি ;আর এখন এত কিছু এক সাথে খেতে চাচ্ছিস! চুপ চাপ এখানে বসে খা। তা না হলে রুমে চলে যা।”
এতটুকু বলে জুবাইরা আবারো রান্নাঘরের দিকে যায়। আদনান নীরব দর্শকের মত সব কিছু শ্রবণ করে যাচ্ছে। ওর খুব মজা লাগছে এই পিচ্চি মেয়েটার রাগ দেখে। তুর্কি আদনানের দিকে তাকিয়ে ফোসতে ফোসতে বলে,
“আমার মা কোনো দিন ও আমার জন্য এত কিছু এক সাথে রান্না করে নি! আর আপনি আসতে না আসতে-ই এত কিছু! কী জাদু করেছেন আমার মাকে?”
“চিন্তা করো না তোতা-পাখি। দুই দিন পর সে জাদু তোমার ওপরে ও করে ফেলবো। যাতে সব সময় আদনান আদনান করতে পারো। ঠিক আছে।”
“কোনো দিন ও না। অসভ্য মার্কা খারাপ লোক।”
এই বলে তুর্কি উপরে চলে যায়। ওর কোনো ইচ্ছা-ই নেই এখানে বসে খাওয়ার। অন্ততঃ এই লোকের সাথে!
এত কিছু খেতে না পারলে ও অল্প অল্প করে সব কিছু খায় আদনান। খাওয়া শেষে জুবাইরা কে বলে তুর্কির খাবার টা দিতে। ওর নাকি শরীর খারাপ তাই উপরে নিয়ে যেতে বলেছে। জুবাইরা বলেছিলো সে নিয়ে যাবে। কিন্তু, আদনান বিভিন্ন ভোজবাজী দিয়ে ও নিয়ে আসে। আর বলে দুইটা জায়নামাজ দিতে।
দরজায় টোকা পরতে দরজা খুলে তুর্কি। আদনান কে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“এখানে কী চাই আপনার?”
“তোতা-পাখির খাবার টা নিয়ে আসলাম। খাবার না খেলে তোতা-পাখি কথা বলার শক্তি পাবে কই? তাই দ্রুত খাবার টা শেষ করো তোতা পাখি।”
“আপনাকে বলেছি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে। আর এইটা আমার বাড়ি আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। তাই আমি কখন খাবো না খাবো আপনাকে দেখতে বলি নি।”
“বাড়ি তোমার হলে কী হবে? তুমি তো আমার। আর আমি চাই না আমার কোনো ক্ষতি হোক। দুপুরে ও বাড়িতে ভালো মতো খেতে পারো নি। তাই চুপ চাপ কথা না বলে খেয়ে নেও।”
তুর্কি প্লেট হাতে নিয়ে বলে,
“এ বার বের হন।”
জুবাইরা জায়নামাজ নিয়ে এসে বলে,
“কই যাবে? তোর অসুবিধা হলে তুই ঘর থেকে বেরিয়ে যা।”
“মা!”
“সর মা মা করিস না। যাও বাবা ঘরে যাও।”
আদনান মৃদু হেসে জুবাইরার হাত থেকে জায়নামাজ নিয়ে তুর্কির পাশ কাটিয়ে ভেতরে যায়। তুর্কি কটমট করে তাকিয়ে থাকে। জুবাইরা মেয়েকে হুমকি দিয়ে যায়।
“যদি ফের এই রকম বাজে ব্যবহার করস, তোর এক দিন কি আমার এক দিন মেয়ের-পু। আর যদি একেবারে-ই অসুবিধা হয় তাহলে চুপ চাপ আমার রুমে এসে পরিস।”
শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয় তুর্কি৷ খাবারের প্লেট টেবিলে রাখেন। প্লেট রেখে ঘুরতে-ই আদনান এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেয় তুর্কির মাথায়। তুর্কি হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। আদনান গ্লাস পাশে রেখে বলে,
“শান্ত হন বেগম সাহেবা, শান্ত হন।”
তুর্কি অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে আদনানের দিকে।
“বিনা কারণে রাগারাগি আমার পছন্দ না। তাই মাথা ঠান্ডা করে দিলাম।নেক্সট টাইম এই রকম ভুল যেনো আর না হয়। কী নিয়ে রাগ সেটা বলো। অহেতুক চিল্লাচিল্লি আমার পছন্দ না। খাবার শেষ করে অজু করে এসো।”
তুর্কি কিছু বলার জন্য মুখ খোলে। আদনান হাত উঁচিয়ে বলে,
“উঁহু। কোনো কথা না। আগে আমি যেটা করতে বলেছি সেটা করো। তারপর তোমার বক্তব্য শুনবো। গো ফাস্ট।”
এ লোক যে পাগল তাতে আর দ্বিমত রইলো না তুর্কির। ও আর কোনো শব্দ না করে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার শেষ করে। এর পর অজু করে এসে এশার নামাজ আদায় করে। সাথে যোহর, আসর, মাগরিবের কাজা নামাজ ও শেষ করে।
ও জানে এই মূহুর্তে ওকে নিশ্চয়ই পড়তে বসাবে। তাই ও আগে থেকেই পড়ার টেবিলে গিয়ে বসে। কিন্তু, সব বই খাতা তো ও বাড়ি। এই লোক পড়াবে কী! আদনান বিছানায় বসে জিজ্ঞাসা করে
“তো রাগের কারণ কী, বেগম সাহেবা?”
তুর্কি কোনো উত্তর দেয় না। চুপ চাপ দুই গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। ও নিজে ও জানে না এই লোকের সাথে ও ঐ রকম ব্যবহার কেনো করে। কিন্তু, এখন তো কিছু উত্তর দিতে হবে৷ তা না হলে দেখা যাবে এই টা নিয়ে আবার কোনো ঝড় সৃষ্টি করবে।
“কিছু জিজ্ঞাসা করেছি।”
ঐ যে বলতে না বলতেই। তুর্কি কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে বলে,
“এতক্ষণ সোফিয়া দের বাড়ি তে ছিলাম।”
“ভলিউম কমাও। আমি কানে কম শুনি না।”
তুর্কি নিজেকে শান্ত করে ধীর কণ্ঠে বলে,
“ও উঠতে বসতে…
“উহুম শুরু থেকে”
তুর্কি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। এই লোক এত এই রকম কেনো! ও নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
“ও বাড়ি থেকে আসার পর সোফিয়াদের বাড়ি গেছিলাম। ও আমার ফ্রেণ্ড৷ আমার সাথে পড়ে। ও উঠতে বসতে আপনার কথা বলে যাচ্ছিলো। আপনাকে নাকি ওর খুব পছন্দ। আপনার নাকি বিশাল ফ্যান ও।”
“হুম তাতে সমস্যা কী? এতে রণক্ষেত্র সৃষ্টি করার কারণ?”
“সমস্যা কী মানে! আপনাকে কেউ পছন্দ করলে আমার সমস্যা থাকবে না?”
আদনান এক ভ্রু উঁচু করে বলে,
“থাকার তো কথা না। কারণ, আমাকে তো তোমার পছন্দ না।”
তুর্কি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-সেটা আমার ব্যাপার। তাই বলে এই না অন্য কেউ আপনাকে নিয়ে কিছু বললে তা আমি সহ্য করবো। আর আপনার ঐ এক্স কে বলবেন আপনার থেকে দূরে থাকতে। তা না হলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে। আমি ওনার প্রোফেশনকে অনেক সম্মান করি। তবে আপনার আশে পাশে কিন্তু সহ্য করবো না। এত ধৈর্য শক্তি আমার নেই। বুঝেছেন?
আদনান মৃদু হেসে উঠে এসে চেয়ারের উপর থেকে গামছা নিয়ে তুর্কির লম্বা অর্ধভেজা চুল গুলো মুছতে থাকে। আড় চোখে তাকায় তুর্কি।
আদনান চুল মুছতে মুছতে বলে,
“বাহ্! হঠাৎ একদিনেই আমার প্রতি এত কনসার্ন?
তুর্কি নিরদ্বিধায় বলে,
– কারণে, এখন পর্যন্ত কোনো রিলেশন করি নি৷ শুধু মাত্র বরের সাথে প্রেম করবো বলে। তবে ভাবতে পারি নি আপনার মত একটা মানুষ পাবো! যাই হোক, প্রেম টা না হোক, বাকি দিকে খেয়াল আমি অবশ্যই রাখবো৷ কোথায় কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন সব! পড়ে ধীরে ধীরে আপনাকে প্রেম শেখাবো।
আদনান তুর্কির কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। একটা মেয়ে এত বেলাজ হতে পারে! পরপরই তুর্কি আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ এমনি তে-ও আপনি ভীষণ সুন্দর। আমি কখনো ভাবতে পারিনি আপনার মত এত সুদর্শন স্বামী পাবো। আমার তো ধন্য হওয়া উচিত। কিন্তু তা না করে কেমন সব সময় পায়রার মত খ্যাচ্ খ্যাচ্ করি তাইনা।”
কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আদনান বলে,
“মানে!”
“কিছু না স্যার। এমনি একটু আপনার প্রশংসা করতে ইচ্ছে হলো তাই করলাম। তো স্যার, আজ তো বই খাতা নেই। সব তো ওই বাড়ি। তো কী পড়াবেন এখন?”
পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে অবাক হয় আদনান। তবে তা প্রকাশ করে না। তুর্কি আবার বলে,
“আপনি চাইলে আমরা গল্প করতে পারি।”
“আমার কোনো ইচ্ছে নেই।”
উঠে চলে যায় আদনান। তুর্কি পেছন থেকে ডেকে বলে,
“স্যার, আই লাভ ইউ!”
“প্রেজেন্ট ইনডিফিনেট টেন্স!”
তুর্কি ভ্রু যুগল কুঁচকে বলে,
“মানে!”
“একটু আগে তো বললে কী পড়াবেন। যেহেতু বই খাতা ওই বাড়ি। তো চলো ইংরেজি শুরু করি। ইংরেজি পড়তে তো বই লাগে না। (আদনান ঘুরে বলে)
তো বসো বুঝিয়ে দিচ্ছি। কি ভাবে “আই লাভ ইউ” সেন্টেন্সটি প্রেজেন্ট ইনডিফিনেট টেন্স হলো।”
“আমি কি আপনার কাছে জানতে চেয়েছি এইটা কোন টেন্স? এইটার পরিবর্তে অন্য কিছু বলতে হয় সেটা বলুন।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই। এইটা কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, কীভাবে এর সঠিক ব্যবহার করা যায় সব শিখিয়ে দিচ্ছি মনোযোগ দিয়ে শোনো।”
হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১৪
তুর্কি রেগে চেয়ার থেকে উঠে যায়। এ লোক এক নাম্বারের পাগল। ফিজিক্স পড়তে পড়তে পাগল হয়ে গেছে।
“ঘোড়ার মাথা পড়বে। ঘুম আসছে আমার। অসভ্য মার্কা খারাপ লোক।”
রাগে গজগজ করতে করতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে তুর্কি। আদনান তুর্কির রাগ দেখে মৃদ হেসে উঠে। বাচ্চা তোতা-পাখি! খুব এসেছিলো ওকে জ্বলাতে। নিজেই জ্বলে গেলো!