হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ২৯
তোয়া নিধী দোয়েল
ফজরের আজান কানে ভেসে আসতে-ই, চোখ মেলে তাকায় তুর্কি। আজ সারা-রাত ওর দু’চোখের পাতায় ঘুম নামে-নি। যখনি একটু ঘুম-ঘুম ধরেছে, তখনই মনের কোণে জানান দিয়েছে, আদনানের কোনো সমস্যা হচ্ছে না-তো! কিছু লাগবে না তো!
আদনান একটু নড়লেই, ও শতবার অন্ধকারের মধ্যেই আদনানের দিকে ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছে লোকটা কি অবস্থা আছে।
ও ধীরে ধীরে উঠে বসে। হাত বাড়িয়ে পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্প জ্বালায়। ল্যাম্পের হলুদ আলোয় পরখ করে আদনানের মুখশ্রী। ব্যান্ডেজ করা হাত। পিঠের ক্ষতস্থান। পিঠের ক্ষতস্থানে একটু রক্ত জমে আছে। বোধহয় রাতে পাশ ঘুরতে টান লেগে রক্ত বেরিয়ে ছিলো। ঘুম থেকে উঠুক পরে পরিষ্কার করে দেওয়া যাবে।
তুর্কি বিছানা থেকে নেমে, ফ্রেশ হয়ে অজু করে এসে জায়নামাজে দাঁড়ায়। নামাজ শেষ করে মন খুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে আদনানের জন্য দোয়া করে। লোকটা যেনো দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। লোকটার সব ক্ষত যেনো ঠিক হয়ে যায়। দোয়ার শেষ প্রান্তে ওর দুই চোখ বেয়ে পানি নেমে আসে।
অন্ধকার কেটে ধীরে ধীরে আলো প্রবেশ করে ধরণীতে। পাখিরা কিচির-মিচির করে গান শুরু করেছে। কিছু পাখিরা খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তুর্কি টেবিলে বসে কিছু একটা আঁকছে। বিছানায় আদনানের নড়া-চড়া লক্ষ্য হতে ও চেয়ার ছেড়ে উঠে বিছানার কাছে যায়। আদনান চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। নড়তে গিয়ে পিঠে কিঞ্চিৎ টান লেগেছে। ঘুমের ঘোরে খেয়াল হয়নি ওর পিঠে যে আঘাত।
তুর্কি আদনানের শরীর থেকে কাঁথা সরায়। মিষ্টি হেসে জিজ্ঞাসা করে,
– এখন কেমন লাগছে, স্যার?
আদনান ঘুম ঘুম কণ্ঠে জবাব দেয়
-হুম। একটু ভালো।
তুর্কি কাঁথা ভাজ করে পাশে রেখে বলে,
-ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
এই বলে তুর্কি আদনান কে উঠতে সাহায্য করে। আদনান বাধা দিয়ে বলে ও একাই উঠতে পারবে। কিন্তু, চঞ্চল তুর্কি কার কথা শোনে? ও নিজের মর্জিতে কাজ করে।
আদনান বাধা দেওয়া সত্ত্বেও- ও আদনানের হাত ধরে উঠায়। আদনান ওয়াশরুমে চলে যায়।
তুর্কি বারান্দা থেকে টাওয়েল নিয়ে আসে। ক্ষত স্থান পরিষ্কার করার জন্য তুলা আ্যন্টিসেপটিক বের করে।
আদনান ওয়াশরুমের দরজা খুললে, তুর্কি এগিয়ে গিয়ে ওর কাছে টাওয়েল দেয়। আদনান টাওয়েল গলায় পেঁচিয়ে, টুথপেষ্ট আর টুথব্রাশ তুর্কির দিকে এগিয়ে দেয়। তুর্কি টুথব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে দিয়ে টুথপেষ্ট জায়গা মত রাখে। আদনান সম্পূর্ণ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুমের দরজা আটকে আসে। বিছানায় বসতে, তুর্কি ক্ষত পরিষ্কার করার তুলা আ্যন্টিসেপটিক নিয়ে আসে।
তুর্কি আদনানকে ওর দিকে পিঠ ঘুরিয়ে বসতে বলে। আদনান অনীহা নিয়ে বলে,
-এত-বার পরিষ্কার করতে হয় নাকি?
তুর্কি কিছু পরিমান আ্যন্টিসেপটিক নিয়ে বলে,
-তো? পিঠে আবার রক্ত জমেছে। চুপচাপ বসুন।
কিছুক্ষণ মৌন থেকে তুর্কি আবার বলে,
-করে দিচ্ছি আমি। এতে আপনার সমস্যা হচ্ছে কোথায়? আপনি তো চুপ চাপ বসে রয়েছেন।
আদনান বেশ ভালোভাবেই জানে, তুর্কিকে মানা করলে শুনবে না। তাই ও আর কিছু বলে না। তুর্কি নিজের মত কাজ করতে থাকে। কিছুক্ষণ মৌন থাকার পর; আদনান অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে
-রেজুয়ানের অবস্থা কেমন? দেখে এসেছো?
– হ্যাঁ। সকালে চাচ্চুর সাথে দেখা হয়েছিলো। বললো তো ভালো আছে।
– তাড়াতাড়ি শেষ করো। ওকে দেখতে যেতে হবে।
-চাচু আছে। আপনি নিজের দিকে খেয়াল দিন।
তুর্কি কাজ পরিষ্কার করা শেষ করে ; ফের পিঠে ঔষধ লাগিয়ে দেয়। হাতে ঔষধ লাগাতে লাগাতে বলে,
– স্যার, হাতের জখম টা বেশ গভীর হয়েছে। ডাক্তার দেখাতে হবে।
আদনান কপালে ভাজ ফেলে বলে,
– এই সামান্য ক্ষত কেউ ডাক্তার দেখায়?
তুর্কি নিচু করা মাথা তুলে বলে,
-এই এতখানি ক্ষত আপনার কাছে সামান্য লাগছে! চোখ মেলে দেখেছেন হাতের ক্ষত টা? (মাথা আবার নিচু করে ঔষধ লাগাতে লাগাতে) আমি এত কথা শুনতে চাই না। কলেজে যাওয়ার আগে আমরা ডক্টরের কাছে যাবো।
-হুম। পাগল তো আমি। এই সামান্য ক্ষত নিয়ে ডক্টর দেখাবো।
-সমস্যা নেই, স্যার। আমি তো আগে থেকেই পাগল। আর আপনি পাগল হলে, আমি পাবনা পাগলা-গারদে দুইটা সিট বুকিং করে আসবো। তারপর দুই জনে মিলে পাগলামি করবো।তবুও ডাক্তার আপনাকে দেখা-তেই হবে। আমি কোনো না শুনবো না।
-মানে এই…
-আর কোনো কথা নয়। আর কথা বলে ও, এখানে আপনার কথা শোনার মত কেউ নেই। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।
আপনি বসুন। আমি আপনার খাবার নিয়ে আসছি। (ঔষধের বক্স জাগায় রাখতে রাখতে) আর আসার সময় আপনার ভাইয়ের খোঁজ নিয়ে আসবো। তবু ও আপনি উঠবেন না।
তুর্কিকে এত কর্মঠ দেখে আদনান কিঞ্চিৎ অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
-বাহ্!! বেশ এডভান্স হচ্ছো।
তুর্কি ঔষধের বক্স জায়গা মত রেখে বলে,
-আজ্ঞে, স্যার। আমি কাজের প্রতি আগে থেকেই এডভান্স। বিশেষ করে সংসারের কাজের প্রতি। (আদনানের দিকে হেঁটে এসে) আমার শুধু লেখা-পড়া-টাই ভালো লাগে না। আর সব কাজে আমি বেশ এক্টিভ৷ বুঝেছেন?
তুর্কি আদনানকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে জায়গা ছাড়ে। আদনান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবে, একবার রেজুয়ানের ঘরে যেতে হবে। ভাইয়ের অবস্থা না জানা পর্যন্ত, মনের এক কোণে অশান্তিরা বাসা বুনে যাচ্ছে!
রেজুয়ান নেত্রপল্লব মেলে তাকায়৷ ঘরে আবছা আলো। দরজার কপাট কিঞ্চিৎ খোলা। যা দিয়ে সামান্য পরিমাণ আলো ঘরে প্রবেশ করছে। ও পাশের বালিশে হাত রাখে। জায়গাটা শূন্য৷ বোধহয় মুজাহিদ নিজ কামরায় চলে গেছে। সারা-রাত ভাতিজার সেবা-যত্ন করে; ওর পাশেই শয়ন করেছিলো৷ যদি রাতে রেজুয়ানের বাইরে যেতে হয়; কিংবা কোনো প্রয়োজন পড়ে সেই জন্য।
রেজুয়ান দুই হাতের কনুই এর সাহায্যে ওঠতে যায়। সারা-রাত ব্যথার দরুন ঘুম হয়নি৷ তার উপর মনের কোণে বেজে চলেছে এক সুর! কাঠগোলাপের সাথে কথা বলার। নাম্বার থাকা সত্ত্বেও রাতে কল দিতে পারিনি৷ কারণ মুজাহিদ ফোন নিয়ে গিয়েছিলো। একে তো পায়ে আঘাত লেগেছে৷ তার উপর রাত জাগলে ব্যথা আরও বাড়বে সেই জন্য।
ও এক হাত দিয়ে ফোন খোঁজার চেষ্টা করে৷ বালিশ এপিঠ-ওপিঠ করে। কিন্তু, ফলাফল শূন্য! ফোন তো নেই। ও মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ করে আবার গা এলিয়ে দেয় বিছানার সাথে। বাপের ভাইটা যে কই ফোন রাখলো!
ক্ষণকাল পার হওয়ার পর দরজার কপাট পুরো-পুরি খুলে যায়। হাতে খাবারের প্লেট ও পানির জগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মুজাহিদ। রেজুয়ান মুজাহিদ কে দেখে প্রশ্ন করে,
-বাপের ভাই, ফোন কই রাখছো?
মুজাহিদ খাবারের প্লেট ও জগ টেবিলের উপর রেখে বলে,
-আরে বাচ্চা, ওঠে গেছিস? পা কেমন বোধ করছিস এখন?
– হ্যাঁ ভালো। তুমি সেবা করেছো; আর সুস্থ হবো না এইটা কোনো কথা?
মুজাহিদ জানালার পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দেয়। মুঠো-মুঠো সূর্যের আলো প্রবেশ করে ঘরে। রেজুয়ানের দিকে ফিরে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ! তা-ও এক বার হাসপাতালে যাবো। তর পা-টা একবার দেখাতে হবে।
রেজুয়ান মুজাহিদের কথা উপেক্ষা করে বলে,
-সে সব পরে হবে। আগে বলো, ফোন কই আমার?
মুজাহিদ টুথব্রাশ নিয়ে এসে বলে,
– ঐ যে টেবিলে। ফোন দিয়ে কি করবি? আগে ফ্রেশ হ।
রেজুয়ান টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলে,
-একটু দেও। তুমি তো জাহিদ মাস্টার ইবনে দেবদাস উদ্দিন চিরকুমার বিন বিয়ে করুম না ফরাজি! দয়া করে আমার প্রেমে বাধা দিও না। আমি সিংগেল থাকতে পারবো না। ফোনটা দেও।
মুজাহিদ ওর বাড়ানো হাতে ব্রাশ ধরিয়ে দিয়ে বলে,
– ওঠ। আগে ফ্রেশ হ। খাবার খা। তারপর প্রেম করবি।
রেজুয়ান কিঞ্চিৎ কাতর স্বরে বলে,
-আরে বাপের ভাই, বুঝো না কেন? কাঠগোলাপের সাথে কথা বলতে না পেরে, আমার হৃদয় লাফাইতেছে! ফুসফুস জোরে জোরে বুকে বাড়ি দিতেছে! কিডনি কাঁপতেছে! কলিজা কামড়াইতেছে। ওর নাম্বার থেকে সত্ত্বেও কথা হয়নি। দেও না বাপের ভাই!
রেজুয়ান এত গুলা অর্থহীন যুক্তিহীন কথাবার্তা শুনে মুজাহিদের কপালে ভাজ পড়ে। মানুষ প্রেমে পড়লে ও এমন পাগল হয় না; যে এই সব অর্থহীন কথাবার্তা বলবে।
-মাতালেরাও এত বেতাল হয় না। যতটা তুই হইছস। ফালতু কথা বলা বাদ দিয়ে ওঠ। মেয়ে যদি তর এই সব কথা শুনে প্রেম তো দূর; কপালে লাথি মেরে চলে যাবে।
রেজুয়ান উঠে বসার চেষ্টা করলে, মুজাহিদ ওকে সাহায্য করে। ও মুজাহিদ কে খোঁচানোর জন্য বলে,
-বুঝেছি! তোমার হিংসা হচ্ছে!
মুজাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-মানে?
-এই যে, তুমি আমার বাপের ভাই হওয়া সত্ত্বেও; তোমার আগে আমি বিয়ে করবো। প্রেম করবো৷ আরও কত কিছু করবো! এই সব ভেবেই তোমার হিংসে হচ্ছে আমার প্রতি।
মুজাহিদ রেজুয়ানের আঘাতপ্রাপ্ত পায়ে হাত দিয়ে বলে,
-এই যে ভাঙা পা ধরে যে একটা মোচড় মারবো; তোর প্রেম করা, বিয়ে করা সব ঘুচে যাবে ফাজিল। শয়তানী বাদ দিয়ে উঠ।
-আচ্ছা যাও, তোমার আগে বাবা হবো না। তবুও আমাকে প্রেম করা থেকে আটকি ও না।
মুজাহিদ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-তোকে কে বলেছে আমি বাপ হয়-নি? তোদের দুই ভাইয়ের পালিত বাপ আমি। আর তুই বলছিস তর প্রেম দেখে আমার হিংসে হচ্ছে!
-অহ্! তাহলে তো আর সমস্যা রইলোই না। তুমি তার মানে হিংসে করছো না। তাহলে তো হয়েই গেলো। আমার আর বাধা রইলো না; তোমার আগে বিয়ে করার। এখন শুধু মেয়ে তুলে আনার পালা।
– ভণ্ডামি বাদ দিয়ে উঠ৷
-আরে বাপের ভাই, তুমি বুঝতাছো না কেন? কাঠগোলাপের গাছের মালিক আমি হওয়া সত্ত্বেও আমি মাইর খাইছি। ভাই…
আদনানের কথা মনে হতে, কথা থেমে যায় রেজুয়ানের। আদনানের খোঁজ নেওয়া হয়-নি। অস্থির কণ্ঠে মুজাহিদের কাছে জানতে চায়
-বাপের ভাই, ভাই কেমন আছে? তুমি গেছিলে ভাইয়ের কাছে? কি অবস্থা তাঁর?
মুজাহিদ ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে বলে,
-হ্যাঁ, সুস্থ আছে। আমি যায়-নি। তবে বৌ-মার কাছে শুনেছি। ও ঘুমে।
রেজুয়ান কপালে ভাজ ফেলে বলে,
-তোমার মনে হয়; ঐ শয়তানের মাতা সত্যি কথা বলেছে? সব সময় ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে।
মুজাহিদ রেজুয়ানের পায়ের কাছ থেকে উঠে বলে,
-আরে ভেবেছি, তর খাবার ঘরে রেখে, তার পর যাবো। কিন্তু, তুই তো উঠে গেছিস। তুই ফ্রেশ হতে যা। আমি খবর নিয়ে আসছি।
রেজুয়ান হাতের ব্রাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
-এখানে ব্রাশ করবো কি ভাবে? থু-থু ফেলবো কই? আমার হাত ধরো ওয়াশরুমে যাবো।
মুজাহিদ রেজুয়ানকে উঠতে সাহায্য করে। তখন ঘরে প্রবেশ করে আদনান। রেজুয়ান কে ঐ ভাবে দেখে দ্রুত পায়ে ওর কাছে যায়। অস্থির কণ্ঠে বলে,
-মীম!
ভাইয়ের কণ্ঠ পেয়ে ঘাড় ঘুরে তাকায় রেজুয়ান। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-ভাই!
আদনান বাম হাত ওর পিঠে দিয়ে বলে,
-ভাই আমার! কেমন আছিস? পায়ের অবস্থা কেমন?
– তেমন ভালো না। তবে আলহামদুলিল্লাহ। বাপের ভাই ছিলো সারাক্ষণ। ঠিক আবার হবো না? তোমার অবস্থা কেমন? হাত দেখি।
-আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ঠিক আছি।
আদনান মুজাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-বাপের ভাই, তুমি ওকে একবার হাসপাতালে নিয়ে যাও। পা-টা একবার এক্স-রে করিয়ে নিয়ে আসো।
-হ্যাঁ। তুই না বললে ও যেতাম। তুই ওর চিন্তা করিস না। আমি আছি। তোর হাত, পিঠের কি অবস্থা, বাচ্চা।
আদনান উপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে বলে,
-হ্যাঁ ভালো।
আদনান মুজাহিদ মিলে রেজুয়ানকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।
রেজুয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে খাবারের টেবিলে বসে। ও জানে মুজাহিদের কথা না শুনলে সে ফোন দিবে না। আর ওর পায়ের যে অবস্থা; এই পা নিয়ে দৌড়া-দৌড়ি করতে পারবে না! আদনান ওর পাশে বসে। কিচ্ছুক্ষণের জন্য খোশগল্পে মাতে।
হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে ঘরে আসে তুর্কি। ঘরে এসে দেখে আদনান ঘরে নেই। ও ট্রে টেবিলের উপর রেখে জগ নিয়ে যায় পানি আনতে।
ততক্ষণে আড্ডা শেষ করে ঘরে আসে আদনান। তুর্কি পানির জগ নিয়ে আবার রেজুয়ানের ঘরে যায় ওর খোঁজ নিতে। রেজুয়ান ওকে দেখে বলে,
-হায় হায়! শয়তানের মা আমার মত ফেরেশতা কে দেখতে এসেছে? দিনের বেলা চাঁদ কোন দিকে উঠলো? এইটা কি সম্ভব৷!
তবে তুর্কি কিছু বলে না। শুধু মুখ বাঁকিয়ে চলে আসে। নেহাত ছেলেটা অসুস্থ৷ তা না হলে জগের পানি মাথায় ঢেলে চলে যেত। যত-সব। ভালো বুঝে খোঁজ নিতে আসলো!
তুর্কি ঘরে এসে দেখে আদনান বিছানায় আধ-শোয়া অবস্থায় বসে আছে৷ ও পানির জগ টেবিলে রেখে খাবারের ট্রে নিয়ে বিছানায় যায়। আদনান মুখো-মুখি বসে ট্রে বিছানায় রাখে।
আদনান ট্রে দেখে কপালে ভাজ ফেলে বলে,
-চামচ-টামচ কিছু আনো নাই? কি ভাবে খাবো? হাত তো কাটা!
তুর্কি আদনানের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ রাগান্বিত স্বরে বলে,
– স্যার, এইটা আপনার ফিজিক্স না। যে, কোনো সূত্র আপ্ল্যাই করলেই চামচ দিয়ে রুটি খেতে পারবেন!
আদনান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তুর্কি রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলে,
-আর আমি থাকতে; আপনি কিনা অসুস্থ হয়ে, হাত দিয়ে খাবার খাবেন? এইটা কোনো কথা? তাহলে আমি আছি কিসের জন্য? আমার ধর্মই তো আপনার সেবা-যত্ন করা।
টুকরো করা অংশে আলু ভাজি আর ডিম ভাজি নিয়ে আদানানের মুখের কাছে নিয়ে বলে,
-নিন। আপনার হাতের ক্ষত সেরে না ওঠা পর্যন্ত আমি আপনাকে খাইয়ে দেবো। ঠিক আছে।
আদনান ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে মুখের সামনে তোলা খাবার মুখে পুরে নেয়। তুর্কি আবারও রুটি ছেঁড়ায় মত্ত হয়ে বলে,
-আপনি আমাকে পিচ্চি বলেন, পাগল বলেন আর চঞ্চল বলেন; আমি কিন্তু ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল। একটু লাফা-লাফি, ফাজলামি, ভণ্ডামি করলেও আপনার সেবায় নো কম্প্রোমাইজ।
আদনান রুটি চিবাতে চিবাতে বলে,
-হুম! তাই তো দেখছি।
তুর্কি মুখ তুলে আদনানের মুখে পুনরায় রুটি দিয়ে বলে,
-বয়সে ছোট হলেও ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল। বুঝেছেন?
আদনান কে কথা বলতে না দিয়ে তুর্কি আবারও বলে,
-আচ্ছা এক মিনিট! আপনি আমাকে পিচ্চি কেনো বলেন কোন লজিকে?
আদনান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-মানে?
তুর্কি রুটি ছিঁড়ে তাতে ভাজি নিতে-নিতে বলে,
-মানে আপনি তো ফিজিক্স এর টিচার। আপনার সব কিছুতেই লজিক লাগে। সেই জন্য জিজ্ঞাসা করলাম; আপনি আমাকে পিচ্চি বলেন কোন লজিকে?
আদনান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রুটি চিবাতে থাকে। এই মেয়ে যে এমনি এমনি ওকে এইটা জিজ্ঞাসা করে নেই; ও তা ভালো ভাবেই জানে। কোনো প্যাঁচ তো নিশ্চয়ই আছে। ও চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-এইখানে লজিক আসছে কই থেকে?
তুর্কি আদনানের মুখ রুটি দিয়ে বলে,
– অবশ্যই আসবে। কখনো শুনেছেন; বরের থেকে বউ বড় হয়? আশে-পাশে কিংবা পাতিহাঁসের কোনো পাতায় শুনেছেন বরের থেকে বউ বড় হয়? পাতিহাঁস থেকে এই পর্যন্ত হয়ে আসছে; বরের থেকে বউ বয়সে ছোট হবে! তো আমি ও আপনার থেকে ছোট! তাহলে আপনি আমাকে পিচ্চি বলেন কেনো?
আদনান তুর্কির কথা শুনে, মূহুর্তের জন্য রুটি চিবানো বন্ধ করে৷ তুর্কি মাথা নিচু করে রুটিতে ভাজি নিচ্ছে৷ ও তুর্কির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। পাতিহাঁসের পাতা মানে কি?!
তুর্কি মুখ তুলে আবারও আদনানের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করে
-নাকি আপনার কোনো সুগার-মাম্মি বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো?
আদনান কপালের চামড়া ভাজ করে বলে,
-পাতিহাঁসের পাতা মানে কি?!
তুর্কি আদনানের কথা শুনে থমকায়। ও কি পাতিহাঁসের পাতা বলেছে! সর্বনাশ! ও আদনানের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হেসে বলে,
-আসলে স্যার, আই মিন ইতিহাস! কি ভাবে যেনো ঐ টা পাতিহাঁস বলে ফেলেছি। দুঃখিত!
আদনান জোরে শ্বাস নিয়ে খাবার চিবানো শুরু করে। কই পাতিহাঁস কই ইতিহাস! ও মনে দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করে,
-তোমার সাবজেক্ট গুলোর নাম জানোতো?
তুর্কি মুখ বাঁকিয়ে বলে
-তাহলে? আসলে আমার একটা মানবিক বিভাগের ফ্রেন্ড ছিলো; যে ইতিহাস কে পাতিহাঁস বলতো। তো ওর কাছেই শুনেছি।
আদনান মৃদু হেসে বলে,
-বয়সে বড়; এমন কাউকে বিয়ে করা কিন্তু অনেক লাভ। এই যেমনঃ এই যে তুমি তোমার ছোট ছোট হাত দিয়ে রুটি ছিঁড়ছো। আর বড় কেউ থাকলে তার বড় বড় হাত দিয়ে বড় বড় করে ছিঁড়তো। এতে আমার খেতে সুবিধা হতো।
ভ্রু কুঁচকে তাকায় তুর্কি। লোকটার খেতে সুবিধা হয় সেই জন্য-ই তো ও ছোট ছোট করে ছিঁড়ছে। ও কি জানে, বড় করে দিলে লোকটার বেশি সুবিধা হবে! তাহলে তো ঐ ভাবে-ই দিতো। তুর্কি এবার হাতে থাকা বাকি অংশ সম্পূর্ণ নিয়ে তাতে ভাজি নিয়ে বলে,
-বলেই হয়। এতে বড় কারো কি প্রয়োজন। আপনার যখন যা প্রয়োজন সব আমাকে বলবেন। আমি আপনার মত করে চলবো। যা বলবেন তাই শুনবো। শুধু পড়ার বিষয় বাদ। এইটা আমাকে দিয়ে হবে না।
ও রুটি আদনানের মুখে তুলে দেয়।
-উহুম! মিসেস আদনান। এইটা করবেন না। আপনাকে আমার মন হতো হতে হবে না। আপনি যেমন আছেন; আমি আপনাকে সেই ভাবেই মানিয়ে নেবো। আপনার এই আপনি টাই আমার পছন্দের। এখন বলুন আপনি কখন খাবেন?
আদনানের মুখে প্রথম মিসেস আদনান শুনে মূহুর্তের জন্য থমকায় তুর্কি। এমনি তে আদনান এক-এক সময় এক-এক নামে ডাকে। তবে এইটা ডিফ্রেন্ট। আদনান হাত উপরে-নিচে ইশারা করে তুর্কির ধ্যান ভাঙায়। তুর্কি শোধ-বোধ ফিরে পেয়ে হাতের প্লেট আদনানের মুখের কাছে নিয়ে বলে,
-এই প্লেট থেকে খাই?
অস্ফুট স্বরে বলে, ‘এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বলে’
তবে তা কর্ণকুহরে পৌঁছায় না আদনানের। আদনান রুটির দিকে তাকিয়ে বলে,
-রুটি তো কম। আর ও কয়েকটা নিয়ে আসো।
আদনানের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে প্লেট বিছানায় রেখে ট্রে নিয়ে বিছানা থেকে নামে তুর্কি। দ্রুত পায়ে হেঁটে ঘরের বাইরে যায়। আদনান ওর উদ্দেশ্যে বলে,
-আসতে যাও। পড়ে যাবে।
ততক্ষণে তুর্কি বারান্দা দিয়ে ছুট লাগিয়েছে নিচে নামার জন্য। আদনান মৃদু হেসে রুটি চিবাতে থাকে।
কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে আদনান- তুর্কি। তুর্কি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ডান কাঁধে পিন লাগাছে। তবে ওর সম্পূর্ণ ধ্যান আদনানের দিকে। আয়নাতে তাকিয়ে, আয়নাতে সৃষ্ট আদনানের প্রতিবিম্বের দিকে দৃষ্টি স্থির করে আছে। আদনান ওর থেকে দূরে কাটা হাত নিয়ে শার্টের বোতাম লাগানোর প্রচেষ্টায় আছে।
তুর্কি সম্পূর্ণ স্কার্ফ বাঁধা শেষ করে। পেছন ঘুরে আদনানের দিকে পা বাড়ায়। ওকে বললেই তো হয়! অযথা কষ্ট করছে কেনো?
ও আদনানের সামনে দাঁড়িয়ে আদনানের হাত সরিয়ে বোতাম লাগাতে ব্যস্ত হয়৷ ভরাট কণ্ঠে বলে,
-আমি থাকতে আপনি কষ্ট করছেন কেনো? আমাকে বললেই তো হয়।
আদনান একটু গম্ভীর স্বরে বলে,
-যে নিজের স্কার্ফ টাই ঠিক-ঠাক ভাবে পড়তে পারে-নি; সে নাকি আবার শার্ট পড়াতে হেল্প করবে।
আদনানের কথা শুনে তুর্কি মাথা তুলে তাকায়। চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-মানে?
-শেষ করো দেখাচ্ছি।
তুর্কি শার্টের বোতাম লাগানো শেষ করে। আদনান ওর হাত ধরে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,
-দেখো তো, স্কার্ফটা সোজা নাকি উলটো।
তুর্কি নিজের দিকে তাকিয়ে ভালো-ভাবে পরখ করে দেখে সত্যি তো ও উলটো করে স্কার্ফ বেঁধেছে! ও আড়ষ্ট কণ্ঠে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-তাতে কি? নিজের খেয়াল নিতে নাই পারি। তবে আপনার খেয়ালে কোনো কমতি রাখবো না। বুঝেছেন?
আদনান মৃদু হেসে সরে দাঁড়ায়। যাবতীয় জিনিস বের করে নিতে থাকে। তুর্কি স্কার্ফ পুনরায় খুলে ঠিক করে বাঁধতে থাকে।
-আগে কিন্তু হাসপাতালে যাবো। আমি কোনো না শুনবো না।
আদনান ঘাড় ওর দিকে ফিরিয়ে বলে,
– আরে আমার সময় নেই। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে। তার উপর মিটিং আছে।
তুর্কি কিঞ্চিৎ রাগী স্বরে বলে,
-এক দম নাটক করবেন না। এত সকালে কে আপনার মিটিং রেখেছে, হ্যাঁ?
-বুঝতেছো না…
-বুঝতে চাই না।
আদনান ওর সামনে এসে পারফিউম হাতে নিলে; তুর্কি ওর হাত থেকে নেয়। নিজে ঝাঁকিয়ে আদনানের শরীরে দিয়ে দেয়৷ জায়গা মত রেখে বলে,
-আমি কোনো কথা শুনবো না। আমার কথাই শেষ কথা।
এই বলে ও নিজের ব্যাগ গোছাতে যায়। আদনান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে। তুর্কি যে ওর কথা কানে তুলবে না; ও তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতেছে। রাগ-জিদ দেখিয়ে ও লাভ হবে না। এই মেয়ে সে সবে পাত্তা দিবে না। অন্য ভাবে থামায়ে হবে। এই অল্প ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কোনো মানে নেই। ও কিছুক্ষণ ভেবে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
-ওকে। একটা কিন্ডিশনে যাবো।
তুর্কি ব্যাগের চেইন লাগাতে লাগাতে বলে,
-কি?
আদনান ওর দিকে এগিয়ে এসে নিজের হাত পেছনে পিঠমোড়ো করে বেঁধে; ওর ঘাড়ের দিকে মাথা কিঞ্চিৎ নুইয়ে বলে,
-যদি কাল রাতের মত আমার ক্ষত স্থানে চুম্বন করো তাহলে যাবো।
আদনানের কথা শুনে তুর্কির বুক ধক করে উঠে! চোখ বড় বড় হয়ে যায়! নিশ্বাসের গতি কিঞ্চিৎ পরিমাণ বেড়ে যায়। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হয়। ব্যাগের চেইন লাগানো হাত থেমে যায়। ও খুক খুক করে কেশে উঠে।
তুর্কির অবস্থা দেখে আদনান মৃদু হাসে। পিঠমোড়া করা হাত ছুটিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে যায়। তুর্কিকে আরও বিব্রত বোধ করতে আবারও বলে,
-যদি দেও। তাহলে বলো। তাহলে যাবো। তা না হলে চুপ-চাপ কলেজের দিকে হাঁটা দেও।
তুর্কি আড়চোখে তাকায়। এত সাবধানে কাজ টা করেছে; তবু ও লোকটা বুঝে গেছে। আল্লাহ! আদনান সম্পূর্ণ নিজেকে দেখে তুর্কির দিকে তাকিয়ে বলে,
-কি বেগম সাহেবা? হবে?
তুর্কি আমতা আমতা করে বলে,
-আপনি সপ্ন দেখেছেন বোধহয়। আমি এই রকম কিছু করি-নি। আমি আপনার হাতে ঘাড়ে এমন কিছু করি-নি।
আদনান ঠোঁটের হাসি দীর্ঘ করে বলে,
-আমি এক বার ও বলি-নি তুমি আমার কোন ক্ষততে চুম্বন করেছো তুমি নিজে থেকেই বললে!
চোর ধরা পড়লে যেমন অনুভূতি হয়; তুর্কির মাঝে ও ঠিক সেই রকম অনুভূতি হচ্ছে। ও লজ্জায় পেছন ঘুরে তাকাচ্ছে ও না। ব্যাগের চেইন একবার লাগাছে, তো একবার খুলছে। আদনান মৃদু হেসে বলে,
-আসো। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমাকে ক্লাসে ঢুকতে হবে।
তুর্কি জানে এই লোক যেটা বলেছে সেটা না করলে কখনোই ও এই লোককে নিয়ে হাসপাতালে নিতে পারবে না। উফফ! কেন যে কাল আরও সময় নিয়ে কাজ টা করলো না। অসহ্য! এই লোক ধরলো কি ভাবে।
-বেগম সাহেবা!
আদনানের ডাকে ধ্যান ভাঙে তুর্কির। ও জোরে শ্বাস নিয়ে ব্যাগ খুব শক্ত বুকে জড়িয়ে মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। আদনান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তুর্কি ঐ ভাবে আসতে দেখে ঠোঁট টিপে হাসে।
তুর্কি প্রতিটা কদমে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাতে তো মূহুর্তটা অন্য রকম ছিলো। লোকটা ঘুমে ছিলো। না ঘুমে না! ঘুমের ভান ধরেছিলো। কিন্তু, এখন তো সজাগ। ও আদনানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। আদনান ইশারা করে সামনে হাঁটতে। আদনান উলটো ঘুরলে তুর্কি এক হাত দিয়ে আদনানের হাত টেনে ধরে। চোখ মুখ খিঁচে বলে,
-চোখ বন্ধ করুন!
-কেনো?
আদনানের কথায় মেজাজ খারাপ হয় তুর্কির। ন্যাকামো করছে! যেনো বুঝতে পাড়ছে না। ও চোখ খুলে আদনানের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে,
-যা বলছি তাই করুন। এত কথা বলছেন কেনো?
আদনান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে। তুর্কি দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে আদনানের কাটা হাত উঁচু করে ছোট করে চুম্বন করে। দ্রুত হাত ছেড়ে দিয়ে আদনানের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। ও লম্বায় আদনানের বুক অব্দি। আর ঘাড়ের ক্ষত টা বেশ উঁচুতে। ও আড়ষ্ট কণ্ঠে মিনমিনিয়ে বলে,
-একটু নিচু হোন।
আদনান তুর্কির দিকে পিঠ হেলিয়ে দেয়। তুর্কি চোখ বন্ধ করে এবার ও ছোট করে চুম্বন করে। চুম্বন করা শেষ হলে দ্রুত সরে যেতে নেয়। তবে আদনান বাম হাত দিয়ে ওর হাত টেনে ধরে। তুর্কি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঢোক গিলে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
-আবার কি?
আদনান ওর কাটা হাতের তর্জনী আঙুল ঠোঁটের কাছে নিয়ে বলে,
-এইখানে কাটলে ও ভালো হতো। যাই হোক এটা তোলা রইলো। পরে…
তুর্কি আদনানের কথা শেষ করতে না দিয়ে হাত ছাড়িয়ে ছুটে বের হয়ে যায়। বিড়বিড় করে বলে যায়
-অসভ্য লোক…।
হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ২৮
আদনান তুর্কির অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে উঠে। তুর্কি এক ছুটে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আর কোনো দিন এই লোকের কথা শুনবে না। রাতে যে কি হয়ে ছিলো আল্লাহ জানে! কেনো যে এই লোকের কাছে গেছিলো!
আদনান বেরিয়ে এসে বলে,
-তুমি নিচে যাও৷ আমি মীম এর সাথে দেখা করে আসছি।