হ্যালো 2441139 পর্ব ৯

হ্যালো 2441139 পর্ব ৯
রাজিয়া রহমান

জমিরনের দুই হাতে মাছের রক্ত।আজকে মালিহাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।জমিরন মাছ কাটছে।সাবিহা মুরগি কষাচ্ছে।
তেজপাতা,দারচিনি এলাচের একটা মিষ্টি গন্ধ চারপাশে।
সাবিহা আনমনা হয়ে বললো, “ভাবীর হাতের রোস্ট খুব স্বাদ হইতো না মা?”
জমিরন দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। ওই বজ্জাতের কথা তার এই বোকা মেয়েটা কেনো এতো বেশি মনে করে!
এই মেয়েটা কেনো এতো বোকা হলো?

নিজের চোখের সামনে কতো কিছু ঘটে যাচ্ছে অথচ সে কিছুই বুঝতে পারে না।
জমিরন কথা বাড়ায় না।মাছ ভাজা হলেই রান্না শেষ হবে।মালিহাকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে ছেলের জন্য বউ আনবেন ঘরে।
দুপুরে পাত্রপক্ষ এলো।দুপুরে খাওয়ার পর পাত্রপক্ষ জানিয়ে গেলো মালিহাকে তাদের পছন্দ হয়েছে।
জমিরন স্বস্তি পায় শুনে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলেই তো বাঁচে সে।
জমিরন এদিক ওদিক তাকিয়ে মালিহাকে দেখে।মালিহাকে খুব হাস্যোজ্জ্বল লাগছে।পাত্র নিজে আলাদা করে মালিহার সাথে কথা বলেছে।মালিহা ও সম্ভবত রাজি।
জমিরন সাবিহাকে ডেকে বললো, “তোর বোইনেরে একটু জিগা তো ওর কি মতামত। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাবিহা অবাক হয়ে বললো, “মা যে কি কন!ওরে কি জিগামু আবার? ওর আবার কিসের মতামত। মতামত দিমু আমরা অভিভাবক। আমার বিয়ার সময় তো আমার মতামত লাগে নাই মা।আপনে আর ভাই মিলেই তো দিলেন।”
জমিরন সাবিহার দিকে তাকায়। তার দৃষ্টিতে মায়া না-কি হতাশা সাবিহা বুঝতে পারে না। চোখের ভাষা যদি বুঝতে পারতো সাবিহা তাহলে আরো আগেই বুঝে যেতো তার স্বামী কাদের তার ছোট বোনের দিকে কেমন নোংরা নজরে তাকায় আর য়ার ছোট বোন কেমন কামনার দৃষ্টিতে তাকায়।

নেহাৎ এতো সুক্ষ্ম দৃষ্টি বা চিন্তা শক্তি কোনোটাই সাবিহার নেই বলে এখনো সব তার আড়ালে আছে।
জমিরন বললো, “না আসলে সাদিক আলীর লগে তো বিয়া এক রকম ঠিক হইয়াই ছিলো। ওইখানে তো ওর মন বসছে।ওই হা রা ম জা দা তো আরেক হা রা ম জা দি নিয়ে ভাগছে আমার পোলা মাইয়া দুইজনের মন ভাইঙ্গা। তাই মালিহা কি সেসব ভুলতে পারছে নি জানার দরকার আছে না।বিয়া তো এক দিনের জন্য না।আজীবন থাকবো। ”
সাবিহা মুখ বাঁকিয়ে বললো, “কি জানি আম্মা।তোমার ছোট মাইয়ার মতো তো শিক্ষিত হই নাই। আইয়ে পাস দিতে পারি নাই।মেট্রিক দিতেই বিয়া দিয়া দিছো।এতো কিছু বুঝি না।আইচ্ছা জিগাই।”
সাবিহা উঠে মালিহার রুমে যায়।

মালিহার বিছানায় বসে বললো, “আম্মা বলছে তোরে জিগাইতে তোর কি মতামত। তুই কি কস!”
“আমার আবার কি মতামত থাকবো।তোমরা যা কইবা তাই হইবো।”
সাবিহা উঠে গিয়ে মা’কে বললো, “মালিহা রাজি আছে আম্মা।আপনি শুভ দিন দেইখা শুভ কাজ সাইরা ফেলেন।”
জমিরন খুশি হতে চেয়েও খুশি হতে পারে না। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত জমিরনের বুকের পাথর নামবে না।
রাতে কাদের এলো শ্বশুর বাড়িতে।আজকে দুপুর থেকে মালিহা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি।
কাদেরের মাথা গরম হয়ে আছে।মালিহার রুমের দরজা বন্ধ। কাদের বাহিরে থেকে মালিহাকে ডাকে।আজকে আর মালিহা দরজা খুললো না।দুলাভাইকে এখন আর তার দরকার নাই।
কাদের কিছুক্ষণ বাহিরে দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করলো।তারপর ও মালিহা দরজা না খোলায় গালাগালি করতে লাগলো। এই পর্যন্ত মালিহার পেছনে কম খরচ করে নি কাদের।

এক ভরি দিয়ে একটা গলার চেইন ও বানিয়ে দিয়েছে সে মালিহাকে।
যখন যা খেতে চেয়েছে তাই এনে খাইয়েছে।দুইবার দুটো স্মার্ট ফোন দিয়েছে।
জামা কাপড়ের তো হিসেবেই নেই।
অথচ শালী এখন অন্য কাউকে বিয়ে করে নিচ্ছে!
কাদের এই বিয়ে হতে দিবে না।মালিহা তাকে বলেছিলো সাবিহাকে তালাক দিতে সে তাহলে কাদেরকে বিয়ে করবে অথচ শালী এখন পল্টি নিয়ে নিলো?
জমিরন অনেকক্ষণ ধরে কাদেরের গালাগালি শুনছিলো।এরপর আর সহ্য করতে না পেরে বললো, “জামাই,ও মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।ওর শরীর ভালো নাই।তুমি এখন যাও বাবা।যা হওয়ার হইছে,আমার মেয়ে দুইটার জীবন নষ্ট করিও না।”

“আপনের মেয়েগো কি জীবন নষ্ট!আমার যে লাখ লাখ টাকা নষ্ট হইলো তার বেলায়?
আপনের মাইয়া আমার থেকে কতো কিছু নিছে?আপনে নিজেও তো জানতেন।খাওন তো মা মাইয়া এক সাথে খাইছেন।এখন সব ভুলে গেছেন?”
জমিরন বুঝতে পারছে না কি করবে সে।এতো অসহায় লাগছে কেনো তার!
সাবিহা জানতে পারলে কি হবে?
তার বড় মেয়েটা সহজ সরল বলেই মালিহা বোনকে এভাবে বোকা বানাতে পেরেছে।এখন যদি জেনে যায় সব!
সাবিহা কি মা’কে ক্ষমা করতে পারবে?
কাদের বললো, “আমি যাইতাছি আম্মা কিন্তু আবার আসমু।এই বিয়া আমি হইতে দিমু না মনে রাইখেন।আপনার বড় মাইয়ারে তালাক দিলে মালিহা আমারে বিয়া করবো কইছে।আমি ও তাই করমু।আমি মালিহারেই বিয়া করমু।”
“ও জামাই,এসব কি কও!তোমার আর সাবিহার দুইটা বাচ্চা আছে সব ভুলে যাইবা তুমি?
আমার সাবিহার কি হইবো?”

“সাবিহার কথা তো আপনে আগে ভাবেন নাই আম্মা।এখন আর এসব বলে লাভ নাই।”
মালিহা বাহিরে তর্কাতর্কি শুনে বের হয়ে এলো।
কাদের মালিহাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে হাত চেপে ধরে বললো, “তুই আমারে ধোঁকা দিয়ে বিয়া করবি আরেক বেডার লগে বিয়া করবি?এতো সোজা!”
মালিহা কাদেরের হাত ধরে বললো, “আরে দূর,দুলাভাই এসব কি কন!ওরা তো দেখতে আইছে।দেখতে আসলেই কি বিয়া হয় না-কি। আমি নিজেই তো রাজি না।আপনি এসব ভাইবা মাথা গরম করতেছেন ক্যান!”
কাদের শান্ত হয় মালিহার কথা শুনে।
কাদের চলে যেতেই জমিরন মালিহাকে ধরে। আর পারছে না এসব চাপ নিতে।
মালিহা হেসে বললো, “মা,এতো বোকা ক্যান তুমি?দুলাভাইয়ের ছুটি তো আর এক সপ্তাহ আছে।এরপর উনি আবার সৌদি চলে যাবে। উনি গেলে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করবা।এখন এসব আলোচনা বন্ধ।”
জমিরন বুঝতে পারে মেয়ের হিসেব।

রজনীর সকাল শুরু হলো ব্যস্ততা দিয়ে। গতকালের বৃষ্টিতে ছাদের বৃষ্টির পানি জমা করার পানির সব ড্রাম পাতিল ভরে গেছে।
নির্জন,নীরব,বর্ষা সবাইকে পাঠিয়ে দিলো পানি সব নিচে নামিয়ে আনতে বোতলে করে। বৃষ্টির পানি দিয়ে রজনী রান্না করে।
মহুয়া বেগমের খাবার রান্না করতে হবে আগে।উনি ঝাল খেতে পারেন না মোটেও।ওনার জন্য সব রান্না আলাদা করতে হয় রজনীকে।রজনী আগে শাশুড়ীর রান্না বসালো।আর সবার জন্য চা বসালো।
সিরাজুল ইসলাম অফিসে যাবেন।নাশতার টেবিলে গিয়ে দেখেন রজনী ছুটাছুটি করছে কাজ নিয়ে। সিরাজুল ইসলামের চিন্তা কমলো স্ত্রীকে আগের রূপে দেখে।
রজনী সিরাজুল ইসলামের জন্য রুটি আর ডিম ভাজি এনে দিলেন।তারপর ছুটলেন আষাঢ়কে ডাকতে।ছাদের পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে হবে।প্রতি মাসে একবার ট্যাংক পরিষ্কার করে আষাঢ়।
সকাল সকাল না তুলে দিলে এই ছেলে আবার কখন কোথায় চলে যাবে কে জানে!

এমনিতেই তো সারাদিন খুঁজে পাওয়া যায় না।
আষাঢ়ের রুমে ঢুকে রজনীর রাগ উঠে গেলো। এটা কি কোনো রুম না-কি গোয়াল ঘর!
কি একটা অবস্থা করে রেখেছে এই ছেলে।রজনী চুল টেনে আষাঢ়কে বিছানা থেকে নিচে নামায়।
ঘুম ভাঙতেই আষাঢ় দেখে মা আবার আগের ফর্মে চলে গেছে। হেসে বললো, “গুড মর্নিং মাদার।”
“তোর গুড মর্নিং এর খেঁতা পুড়ি আমি।এইডা কি রুম না-কি গোয়াল ঘর আমারে বল।”
“আমারে কি কোনোভাবে গরুর বাছুরের মতো লাগে মা? বরাবর ৬ ফুট লম্বা আমি।কোন খান দিয়ে মনে হয় আমি গর?এইডা গোয়াল ঘর হইবো ক্যান?
” কোনো মানুষের ঘর তো এরকম হয় না।গোয়ালঘর ও আরো সুন্দর থাকে।তোর কোনো লজ্জা নাই?কেমনে এখানে ঘুমাস?শরীর কুটকুট করে না?”

“মা,রাজনীতি যারা করে তারা দেশের চিন্তা করে। দেশ নিয়ে ভাবে।নিজের কথা ভাবার সময় কোথায় মা?”
” আবারও আমার লগে ডায়লগ মারে।যা ছাদে গিয়ে ট্যাংক পরিষ্কার কর।”
আষাঢ় বিরস মুখে মা’য়ের দিকে তাকিয়ে বললো, “একজন ভবিষ্যৎ নেতাকে এভাবে অসম্মান করে কথা বলা কিন্তু উচিত হচ্ছে না মা।একটু সম্মান দিয়ে ও বলা যায়।”
“ওরে গোলামের পুত, যাবি এখান থেকে? ”
আষাঢ় হেসে ফেলে।মা’য়ের মুখে এই গালিটা ভীষণ কিউট লাগে আষাঢ়ের।মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো, “গতরাতে কি হয়েছে তোমার মা?কেনো আপসেট ছিলে?”
রজনী মলিন হেসে বলে, “আমার আবার কিসের মন খারাপ। আল্লাহ এমন এক সংসারে এনেছে এখানে এতো দায়িত্ব আমার যে একটু আয়োজন করে যে মন খারাপ করে কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকবো তা ও পারি না।আয় আগে খেয়ে নে।”

নাশতার টেবিলে ছেলেমেয়েরা সবাই বসেছে।রজনী তখন বললো, “আগামী শুক্রবার আমরা এক জায়গায় বেড়াতে যাবো সবাই মিলে। ”
পিংকি উঠে বললো, “কোথায় বড় আম্মা?”
“আমার একটা বান্ধবীর বাড়িতে।গ্রামের দিকে।ও আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছে।”
ঝুনি বললো, “ও আল্লাহ তাইলে তো আর সময় বেশি নাই।আর দুইদিন আছে।আজকে তো মঙ্গলবার ভাবী।”
“হ্যাঁ, তো কি হয়েছে? ”
“ভাবী যে কি কন।একটা জায়গায় যামু একটা ভাবসাব আছে না।ভাবী আমি কিন্তু বিকালে একটু পার্লারে যামু বড় আপার লগে।ভুরু একটু ছাচমু আর চুলে রঙ করমু।”
আষাঢ় খেতে খেতে বললো, “কি রঙ করবা খালা?আমি তো রঙ করতে পারি?দেয়ালে রঙ করার নীল রঙ আছে ঘরে। আমি করে দিই?”

হ্যালো 2441139 পর্ব ৮

ঝুনি বিরক্ত হয়ে বললো, “মজা লইয়েন না মামা।আপনে এগুলো কি বুঝবেন।ঠিকমতো মাসে মাসে যে চুল কাটে না,দাড়মুচ কাটে না তার আবার ইস্টাইল সম্পর্কে কোনো জ্ঞান আছে না-কি! ”
আষাঢ় হেসে ফেলে শুনে।

হ্যালো 2441139 পর্ব ১০