অনুরাগে তুই পর্ব ২৩

অনুরাগে তুই পর্ব ২৩
সাদিয়া শওকত বাবলি

গম্ভীর কণ্ঠে সে বলল,
“এদিকে আয়।”
ত্রয়ীর ভীতিভাব বাড়লো। লোকটা আবার তাকে ডাকছে কেন? কাছে নিয়ে মা’র’বে টারবে না তো? লোকটা যা ভয়ংকর। ত্রয়ী ঢোক গিললো। গেল না শীর্ষের নিকট। দাঁড়িয়ে রইল নিজের স্থানেই। শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। ধমকের স্বরে বলল,
“তোকে এখানে আসতে বলেছি না? আসবি নাকি ঘাড় ধরে আনতে হবে?”
ত্রয়ী ফের শুকনো ঢোক গিললো। এবার আর শীর্ষের কথাকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হলো না তার। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল লোকটার দিকে। শীর্ষ বিছানার দিকে ইশারা করল। আদেশের স্বরে বলল,

“বস।”
ত্রয়ী নিঃশব্দে বসলো বিছানায়। শীর্ষ একটি চেয়ার আলনো। আঁটসাঁট বেধে বসলো তাতে। অতঃপর দৃষ্টি দিলো মেয়েটির মুখ পানে। সে দৃষ্টি আর সরালো না। এক দৃষ্টে চেয়ে রইল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো মেয়েটিকে। ত্রয়ী আড়ষ্ট হলো। কেমন অস্বস্তি লাগছে তার। এভাবে এক পুরুষ সামনে বসে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকলে কোন নারীর অস্বস্তি লাগবে না? এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো সে। ইতস্তত করে শুধাল,
“ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
শীর্ষ আরও কিছুটা সময় নিয়ে চেয়ে রইল ত্রয়ীর দিকে। অতঃপর কপাল কুঁচকে জবাব দিলো,
“ডান দিক থেকে দেখলে মনে হয় গাধী, বাম দিক থেকে দেখলে মনে হয় বলদী। একজন সুপুরুষের প্রেমে পড়ার মতো তোর মধ্যে আছেটা কি?”
ত্রয়ী ভরকালো। এ কেমন প্রশ্ন? আর কেউ তার প্রেমেই বা পড়তে যাবে কেন? মেয়েটি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে তাকালো শীর্ষের দিকে। কণ্ঠে কিছুটা অবাকতা নিয়ে প্রশ্ন করল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মানে?”
শীর্ষ অপ্রস্তুত হলো কিঞ্চিৎ। তবে নিজের অপ্রস্তুত ভাব সে প্রকাশ করল না ত্রয়ীর সম্মুখে। চোখে মুখে গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুলে বলল,
“মানে জিজ্ঞেস করলাম তোর মধ্যে এমন কিছু আছে কিনা যাতে কেউ তোর প্রেমে কেউ পড়বে। বিয়ে দিতে হবে তো তোকে। বাবা যখন তোকে এ বাড়িতে এনেছেন তখন সে দায়িত্ব তো আমাদেরই তাই না।”
ত্রয়ী অবাক হলো। হুট করে তার বিয়ের কথা কোথা থেকে এলো? তবে কি এরা তার বিয়ের কথা ভাবছে? ভাবতেও পারে। এই বাজারে একটা মেয়েকে দিনের পর দিন ঘাড়ের উপরে বসিয়ে বসিয়ে কেই বা খাওয়াতে চাইবে? সেক্ষেত্রে তার বিয়ে হয়ে যাওয়াটাই হয়তো ভালো। সেও একটা পরিবার পাবে, অভিভাবক পাবে, মাথা গোঁজার নির্দিষ্ট ঠাঁই পাবে। আত্মীয় স্বজনদের অবহেলায় আর বাঁচতে হবে না। শীর্ষ আর কোনো বাক্য ব্যয় করল না। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, পা বাড়ালো দরজার দিকে। ত্রয়ীও তৎক্ষণাৎ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ঝটপট ডাকল,

“শুনুন।”
শীর্ষের পা জোড়া থেমে গেল। পিছন ঘুরে তাকালো তাকালো সে। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“বল।”
ত্রয়ী দৃষ্টি নত করল। আমতা আমতা করে বলল,
“দুঃখিত।”
“কেন?”
“আমি আসলে তখন আপনাকে থা’প্প’ড় মা’র’তে চাইনি। আমি ঐ লোকটাকে থা’প্প’ড় মা’রা’র জন্যই হাত তুলেছিলাম। কিন্তু ঐ লোকটা হুট করে বসে পড়ায় থা’প্প’ড়’টা আপনার গালে লাগে। আমি সত্যিই দুঃখিত।”
ত্রয়ী এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল। শীর্ষের চোখ মুখ ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠল। নয়তো সে এই গাধীর প্রেমে পড়ার চিন্তায় চিন্তায় থা’প্প’ড়ে’র কথা বেমালুম ভুলেই বসেছিল। শীর্ষ তেড়ে এলো মেয়েটির দিকে। শক্ত কণ্ঠে বলতে চাইলো কিছু। তবে তার কণ্ঠনালী ভেদ করে ত্রয়ীর জন্য এই মুহূর্তে কোনো শক্ত বাক্য বেরুতে চাইলো না। মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে চাইছে থা’প্প’ড়ে’র প্রতিশোধ নিতে। আর হৃদয় বলছে,

“ত্রয়ী ইচ্ছে করে কিছুই করেনি। যা হয়েছে ঐ কায়সারের জন্য। সে কেন বসে পড়েছিল? সব দোষ তার।”
হৃদয় আর মস্তিষ্কের অনাবরত কলহে বিরক্ত হলো বেচারা। কণ্ঠনালী হাতরে শুধু উচ্চারণ করল,
“নিচে গিয়ে খাবার গরম কর। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ক্ষুধা লেগেছে আমার।”
শীর্ষ আর দাঁড়াল না এক মুহূর্তও। লম্বা লম্বা কদমে প্রস্থান ঘটালো নিজের। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। এই মাঝ রাতে এখন তাকে ঘুম বাদ দিয়ে খাবার গরম করতে হবে। কি কপাল!

ত্রয়ী খাবার গরম করল। রান্নাঘর থেকে সেগুলো এনে টেবিলে সাজিয়ে রাখতে রাখতে শীর্ষও চলে এলো। এসেই ধপ করে বসে পড়লো একটি চেয়ার টেনে। কোনোরূপ বাক্য বিনিময় না করে খেতে শুরু করল। নীরবে নিঃশব্দে খাওয়া শেষ চলে গেল আবার। ত্রয়ীর দিকে একবার তাকালো না অব্দি। ত্রয়ীও কিছু বলেনি। এই লোকের সাথে যত কথা না বলে থাকা যাবে তার জন্য ততই মঙ্গল। শীর্ষ চলে যাওয়ার পর সে এঁটো থালা-বাসন গুলো সব এক এক করে ধুয়ে মুছে গুছিয়ে রাখলো। কিন্তু এরপর! এরপর সে কি করবে? ঘুমও আর আসছে না এখন। চারপাশে কেউ জেগেও নেই যে তার সাথে দুই দন্ড কথা বলবে কিংবা সময় কাটাবে। ত্রয়ী রান্নাঘর থেকে আর নিজ কক্ষে গেল না। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে এলো সুইমিং পুলের নিকটে। পুরো রাত জুড়ে এ বাড়ির চারিধারেই আলো জ্বলে। এই সুইমিং পুলের এদিকটাও আলোকিত হয়ে রয়েছে কৃত্রিম আলোয়। ত্রয়ী বসলো পুলের পাশে। পা ডোবালো পুলের স্বচ্ছ পানিতে। গুনগুনিয়ে গান ধরলো,

চাঁপা বনে কলির সনে আজ
লুকোচুরি গো লুকোচুরি
আলো ভরা কালো চোখে
কি মাধুরী গো কি মাধুরী
মন চাহে যে ধরা দিতে
মন চাহে যে ধরা দিতে
তবু সে লাজে সরে যায়
মধু মালতি ডাকে আয়।
শীর্ষ দাঁড়িয়ে আছে তার কক্ষের সাথে লাগোয়া বারান্দায়। শরীরে জড়ানো তার অর্ধ হাতার একটি টিশার্ট এবং ট্রাউজার। টিশার্টটার হাতা গলিয়ে তার ফুলে ওঠা পেশি স্পষ্ট। শীর্ষ হাত দ্বারা ঘাড় ঘষতে ঘষতে এদিক ওদিক তাকালো। হঠাৎ নজরে পড়লো নিচে ত্রয়ীর দিকে। ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো তার। এই মেয়েটি এই সময়ে পুলে কি করছে? ঘুমায়নি এখনো? শীর্ষ কিছুটা সময় নিয়ে চেয়ে রইল ত্রয়ীর দিকে। অতঃপর বারান্দা ছেড়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে নেমে এলো নিচে। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ত্রয়ীর পিছনে। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,

“এত রাতে এখানে কি করছিস তুই?”
ত্রয়ী চমকাল। তৎক্ষণাৎ তাকালো পিছন ঘুরে। শীর্ষকে দেখে একটু স্বস্তি পেল যেন। দম নিয়ে জবাব দিলো,
“এমনি ঘুম আসছিল না বলে এসেছিলাম।”
“ঘুম আসবে না বলে রাত বিরাতে এখানে এসে বসে থাকবি?”
ত্রয়ী কিঞ্চিৎ আড়ষ্ট হলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়াল সে। মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
“না মানে…. আচ্ছা চলে যাচ্ছি।”
কণ্ঠে তোলা বাক্যের সমাপ্তি ঘটিয়েই ত্রয়ী হাঁটা ধরল গৃহের দিকে। শীর্ষ তৎক্ষণাৎ ধমকে উঠল,
“তোকে যেতে বলেছি আমি?”
ত্রয়ী থেমে গেল তৎক্ষণাৎ। ঈষৎ কেঁপে উঠল তার কায়া। তবে কণ্ঠ বাড়িয়ে সে শুধাল না কিছু। শীর্ষই আবার নিজে থেকে বলল,

“একটু আগে যেখানে যেভাবে বসেছিলি আবার গিয়ে সেভাবে বস।”
“কেন?”
“বসতে বলেছি বস।”
শীর্ষ ফের ধমকের স্বরে বলল কথাটা। ত্রয়ী আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেল না। সন্তর্পণে বসলো পূর্বের ন্যায় পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে। এবারে শীর্ষও হুট করে গিয়ে বসলো ত্রয়ীর পাশ ঘেঁষে।‌ ত্রয়ী চমকাল। চটজলদি দূরে সরে গেল সে। শীর্ষ ভ্রু কুঁচকে দেখলো তার আর ত্রয়ীর মধ্যেকার দূরত্বটুকু। তবে কণ্ঠে ধ্বনি তুলে বলল না কিছুই। ট্রাউজারটা একটু উপরে তুলে সেও ত্রয়ীর ন্যায় পা ডোবালো পুলের পানিতে। এরপরে হুট করেই প্রশ্ন করে বসলো,
“জীবনে প্রেম করেছিস কয়টা?”
ত্রয়ী ভরকে গেল। এই লোক আবার হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছে কেন? তখন বিয়ের কথা বলল, এখন আবার জিজ্ঞেস করছে প্রেম করেছে কয়টা। মেয়েটা আমতা আমতা শুরু করল। ইতস্তত করে জবাব দিলো,

“একটাও না।”
“সত্যি?”
“হুম।”
শীর্ষ মস্তক নোয়ালো। বিরবিরিয়ে বলল,
“বান্দী তাহলে পুরোপুরি পিওর আছে।”
একটু দূরত্বে থাকায় ত্রয়ী শুনলো না শীর্ষের বিরবিরিয়ে বলা কথাটা। আগ্রহী হয়ে সে প্রশ্ন করল,
“কিছু বললেন?”
“হ্যা, বলেছি যে তোর মতো গাধীর প্রেমে পড়বেও বা কে যে তুই প্রেম করবি।”
ত্রয়ী অপমানিত বোধ করল। এই লোকটা সবসময় তাকে অপমান করে। কখনো বালির বস্তা, কখনো গাধী আবার কখনো বলদী বলে সম্বোধন করে। সে কি এতটাই বোকা যে তাকে গাধী, বলদী বলতে হবে? সে একটু ভদ্র এই তো। এখন আবার বলছে তার প্রেমে কেউ পড়বে না? কেন, সে কি দেখতে কোনো দিক থেকে খারাপ? আজ পর্যন্ত কত প্রেম প্রস্তাব পেয়েছে, কতশত প্রেম নিবেদন তার ঝুলিতে জায়গা করে নিয়েছে তা কি এই লোক জানে? ত্রয়ী হৃদয়ে ক্রোধ জাগলো। অনেকটা ক্রোধের বশবর্তী হয়েই সে বলল,

“কে বলেছে আমার প্রেমে কেউ পড়বে না? গ্রামে থাকতে কত ছেলে আমার পিছনে ঘুরেছে, আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে আপনি জানেন? এমনকি আমার স্কুলের হেডমাস্টারের ছেলে পর্যন্ত আমার পিছনে ঘুরেছে। আমি যদি এখন আবার গ্রামে ফিরে যাই না দেখবেন তারা এখনো আমার পিছনে ছোটাছুটি করবে।”
শীর্ষের কলিজাটা হঠাৎ জ্বলে উঠল যেন। তীব্র হিং’সা’য় ভিতরটা ছেয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল,
“কি বললি তুই? তোকে কত ছেলে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছে?”
ত্রয়ী দুই দিকে হাত ছড়িয়ে দিলো। গর্ব করে বলল,
“এতগুলো।”
শীর্ষ মেজাজ হারালো। চ্যাচিয়ে উঠে বলল,
“তোর হাত আমি কেটে ফেলবো বালির বস্তা।”

ত্রয়ী আঁতকে উঠল। তড়িঘড়ি করে নিজের ছড়ানো হাত দুটো গুটিয়ে নিল সে। শীর্ষ ফুঁসে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। আঙ্গুল তুলে মেয়েটাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কি বলবে সে? কেন বলবে? ত্রয়ী তো রাগার মতো কিছু বলেনি। তবুও সে রেগে গেছে। শীর্ষ কটমট করে একবার তাকালো মেয়েটির দিকে। অতঃপর ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল গৃহের ভিতরে।
ত্রয়ী অবাক হলো। চোখেমুখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইল লোকটার গমনপথের দিকে। কি থেকে কি হয়ে গেল, লোকটা হঠাৎ কেন রেগে গেল কিছুই ঢুকছে না তার মস্তিষ্কে। শীর্ষ তাকে প্রশ্ন করল, সে উত্তর দিলো। এখানে রাগার মতো এমন কি হলো? আশ্চর্য!

ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত জনজীবন। চারদিকে শুধু মানুষ আর যানবাহনের কোলাহল। এই কোলাহলকে উপেক্ষা করেই জনজীবন বয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। আলভী এবং রবি একটি শপিং মলের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেছে। আলভীর কিছু শার্ট প্যান্ট কেনার ছিল, আর রবিও ভাবলো তার সামনে ইন্টারভিউ আছে তাই একটা নতুন শার্ট কিনে নেওয়া যাক। আলভী এদিক ওদিক ঘুরে শার্ট দেখতে দেখতে হঠাৎ তার নজর পড়লো অদূরে একটি মেয়ের দিকে। ওটা মেহের না? ভালোভাবে তাকালো সে। হ্যা ওটা মেহেরই তো। সাথে তার আরও দুটো মেয়ে আছে। ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠল আলভী‌র। যাক মেয়েটার সাথে প্রকৃতির নিয়মেই দেখা হলো তবে। আলভী শার্ট দেখা বাদ দিয়ে এগিয়ে গেল মেহেরের দিকে। হাস্যোজ্জ্বল চোখে মুখে বলল,

“কি চমৎকার! আমাদের আবার দেখা হয়ে গেল। তা কেমন আছেন আপনি?”
মেহের চোখ তুলে তাকালো আলভীর দিকে। সৌজন্য সূচক হেসে বলল,
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
আলভীকে একটি মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে তার দিকে এগিয়ে এলো রবি। দাঁড়াল তার পাশ ঘেঁষে। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে শুধাল,
“এটা কে?”
অলভীও রবির ন্যায় একইভাবে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে জবাব দিলো,
“সরোয়ার চৌধুরীর মেয়ে।”
রবির চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ঐ ব’জ্জা’ত ব্যাটার মেয়ে? ঐ ব’জ্জাত’টার জন্যই তো আজ আমার এই অবস্থা। শা’লা হা’রা’ম’খো’র পার্টিতে কোমল পানীয় বলে লাল পানি চালায়। আর সেই লাল পানি গিলে আমার মতো নিষ্পাপরা নীল হয়ে বাপের হাতে রা’ম দায়ের কো’প খায়।”
আলভী কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“কি সব বলছিস? শুনতে পাবে তো।”

“শুনলে শুনুক। আমি ভয় পাই নাকি? আমি মাইক নিয়েও তো বলতে পারবো ওর বাপ একটা বজ্জাত, হা’রা’ম’খো’র। আমি ওর বাপের নামে মা’ম’লা করব।”
এইটুকু বলে থামল রবি।‌ এবার মেহেরের দিকে চেয়ে একটু উঁচু গলায়ই বলল,
“শোনো মেয়ে, তোমার বাপ….”
আলভী হকচকাল। সাথে অপ্রস্তুতও হলো বেশ। এই ব্যাটা তো দেখা যাচ্ছে তার প্রেম হওয়ার পূর্বেই ভেঙে দিবে। সে তড়িঘড়ি করে মুখ চেপে ধরলো রবির। মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাদের একটু কাজ আছে। আপনার সাথে আবার পরে কথা হবে।”
“কিন্তু উনি…”
“আসছি হ্যা।”

কোনোমতে এইটুকু বলে রবিকে টেনে নিয়ে অন্যপাশে চলে গেল আলভী। ফুঁসে উঠল রবি। তার মুখ থেকে আলভীর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল,
“তুই আমাকে এভাবে নিয়ে এলি কেন? ওর বাপ পার্টিতে কোমল পানীয়র বদলে লাল পানি কেন রেখেছিল তা আজ ওকেই জিজ্ঞেস করতাম আমি।”
আলভী নাক মুখ কুঁচকাল।‌ হাত জোর করে বলল,

অনুরাগে তুই পর্ব ২২

“ক্ষ্যামা দে ভাই। ওর বাপের লাল পানির কীর্তি ওর বাপকেই জিজ্ঞেস করিস ওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না।”
“ও ওর বাপের মেয়ে। ওর জন্মদিনের পার্টিতেই লাল পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গিয়ে দেখ ও সব জানে। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে ও নিজেও লাল পানি সেবন করে কিনা। দেখিস না আজকাল বড়ো লোকদের মেয়েরা এক একটা আদরে বাদর তৈরি হয়। নাইট ক্লাব, লাল পানি, পুরুষ সঙ্গ এসব তাদের কাছে নগন্য বিষয়।”

অনুরাগে তুই পর্ব ২৪