অনুরাগে তুই পর্ব ২৬

অনুরাগে তুই পর্ব ২৬
সাদিয়া শওকত বাবলি

শীর্ষ কলেজ থেকে সোজা চলে এলো অফিসে। আজ মিটিং আছে একটা। অফিসের মধ্যে পা রাখতেই নয়ন তার স্থান থেকে উঠে এলো শীর্ষের নিকট। শীর্ষ শরীরে জড়ানো ছাই রঙা শার্টের হাতাটা গোটাতে গোটাতে শুধাল,
“বাবা কোথায়?”
“তিনি ইতোমধ্যে মিটিং কক্ষে চলে গেছেন।”
“তাহলে তুই এখনো এখানে বসে আছিস কেন?”
নয়ন আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
“আপনার আসার অপেক্ষায় ছিলাম।”
শীর্ষ আর সময় ব্যয় করল না। নয়নকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেল মিটিং এর জন্য নির্ধারিত কক্ষের দিকে। কক্ষের দরজাটা চাপানো ছিল। শীর্ষ হাত দ্বারা দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই তার কানে ভেসে এলো একটি পুরুষালী কণ্ঠস্বর,

“হাই হ্যান্ডসাম!”
চমকাল শীর্ষ। চোখ তুলে সম্মুখ পানে তাকাতেই আঁতকে উঠল সে। একি এ তো সেদিনের রেস্টুরেন্টের সেই লোক। কি যেন নাম? মিস্টার সোহাগ বোধ হয়। এই অদ্ভুত লোকটা এখানে কেন? তাও এই পোশাকে? সেদিন তো তাও মিনি স্কার্ট পড়েছিল। আর আজ একদম শাড়িতে। তাও আবার যেই সেই শাড়ি নয়। সাদা রঙের জর্জেট শাড়ি। শীর্ষ ঢোক গিলল। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে নয়নকে শুধাল,
“এই প্রাণী এখানে কি করছে?”
নয়ন তাকালো সোহাগের দিকে। এই লোকের জন্যই তো এতক্ষণ বাহিরে বসেছিল সে। এখানে আসেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না এসেও তো কোনো উপায় নেই। মিটিং এ না থাকলে আবার চাকরিটা হারাতে হবে। আজকালকার চাকরির যে বাজার। এই চাকরিটাই অনেক কষ্টে জোটাতে হয়েছে তাকে। নয়ন কণ্ঠ খাদে নামালো। শীর্ষের ন্যায় একইভাবে জবাব দিলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আজ মিটিংটা তো এর সাথেই স্যার।”
“আমাকে আগে বলিসনি কেন?”
নয়ন ভেংচি কাটলো। মনে মনে বলল,
“হ্যা তারপর সেদিনের রেস্টুরেন্টের ন্যায় আমাকে এই বান্দার হাতে একা ফেলে আপনি চম্পট দেন আর কি। তা তো আর হবে না। ম’র’লে’ও একসাথে ম’র’বো আর বাঁচলেও একসাথে বাঁচবো।”
শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
নয়ন হুট আমতা আমতা করে বলল,
“আমিও জানতাম না স্যার। একটু আগেই জেনেছি।”
“একটু আগে জেনেছিস মানে কি? তোর কাছে আগে…”
কথাটা আর সম্পূর্ণ করতে পারল না শীর্ষ। তার পূর্বেই ডাক পড়লো তার। আব্দুর রহমান খান থমথমে কণ্ঠে বললেন,
“ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে এসে বসো। এমনিই দেরি করে এসেছো তোমরা।”
শীর্ষ একবার তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো নয়নের দিকে অতঃপর গিয়ে বসলো বাবার পাশে। নয়নও এগিয়ে গেল। বসলো শীর্ষের পাশে ঘেঁষে।

কিছুটা সময় নিয়ে মিটিং শেষ হলো। আব্দুর রহমান খান উঠে চলে গেলেন সবার প্রথমে। শীর্ষ আর নয়নও চলে যাবে ঠিক তখনই সোহাগ এসে দাঁড়াল তাদের পথ রোধ করে। শীর্ষের দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুধাল,
“কেমন আছো তুমি?”
জোরপূর্বক হাসলো শীর্ষ। চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দিলো,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?”
সোহাগ হাত নাড়ালো। মেয়ালী ভঙ্গিমায় বলল,
“ওহহো আমাকে আপনি বলছো কেন? আমাকে তুমি করেই বলতে পারো।”
“আচ্ছা। কিন্তু আমার এখন যেতে হবে। জরুরি একটা কাজ আছে। আপনার সাথে পরে কথা বলবো।”
সোহান কপালে ভাঁজ ফেললো। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“আবার আপনি…”
“ঐ তো একটু ভুল হয়ে গেছে। যাইহোক এখন আসছি আমি।”
শীর্ষ তাড়াহুড়ো করল। হন্তদন্ত হয়ে পা বাড়ালো সামনের দিকে। সোহাগ ফের তার পথ আগলে দাঁড়াল। লাজুক চোখ মুখে শুধাল,

“সে না হয় যাবে। তার আগে বলে যাও আমাকে আজ কেমন লাগছে।”
শীর্ষ চোখ ঘুরিয়ে তাকালো সোহাগের পা থেকে মাথা অব্দি। কেমন বিরক্ত লাগলো তার। গালে দাঁড়ি অথচ পড়নে শাড়ি। একজন পুরুষ হয়ে যদি নারীদের ন্যায় এভাবে শাড়ি পড়ে। আবার সাজসজ্জাও নারীদের মতো। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকাল শীর্ষ। বিরবিরিয়ে বলল,
“ম’রা মানুষের মতো লাগছে।”
বিরবিরিয়ে বলার দরুন শীর্ষের কথাগুলো স্পষ্ট শুনলো না সোহাগ। চোখে মুখে উৎসুকতা নিয়ে শুধাল,
“হ্যা, কি বললে?”
শীর্ষ ফের জোরপূর্বক হাসলো। আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
“জীরি এর মতো লাগছে তোমাকে।”
সোহাগ কপাল কুঁচকে বলল,
“জ্বীরি কি?”
“জ্বীন এর ‘জ্বী’ আর পরি এর ‘রি’। দুইটা মিলে জ্বীরি। আসলে তোমাকে দেখতে পুরুষের ন্যায় অথচ সাজ পোশাক নারীর ন্যায় তাই সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলাম জ্বীন বলবো নাকি পরি। তাই দুইটা মিলিয়ে জ্বীরি বলে দিয়েছি আর কি।”
সোহাগ খুশি হলো। লাজুক হেসে বলল,
“যাহ দুষ্টু আমাকে অতটাও সুন্দর লাগছে না। তারপরও তুমি যখন বললে তখন পরিই বলো। আমি দৈহিকভাবে পুরুষ হলেও মন থেকে নারী। একদম বিশুদ্ধ নারী।”

শীর্ষ কেশে উঠল। এই বান্দা বিশুদ্ধ নারী হলে তার মা, চাচী, দাদী, বোন কিংবা অন্য নারীরা কি? তারা কি অশুদ্ধ নারী? তবে মুখ ফুটে এসবের কিছুই বলল না সে। এর সাথে কথা বাড়ালেই কথা বাড়বে। শীর্ষের এই মুহূর্তে এর সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না। তাছাড়া মিস্টার সোহাগের সাথে তাদের ডিলটাও জরুরি। সোহাগ এমনি যেমনই হোক না কেন। কাজের ক্ষেত্রে বেশ পরিশ্রমী। পরে এর সাথে কথা বাড়াতে বাড়াতে কখন কি বলে ফেলবে তারপর দেখা যাবে ডিল ক্যান্সেল। এমনিই শীর্ষের মুখের উপর তার নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যখন যা খুশি মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। শীর্ষ নয়নের কাঁধে হাত রাখলো। মেকি হেসে সোহাগকে বলল,
“নয়ন আছে তো। ওর সাথে কথা বলো। আমার জরুরি কাজ আছে একটা। আমি এখন আসছি, হ্যা।”
কথাটা কোনো রকমে শেষ করে আর এক দন্ডও দাঁড়াল না শীর্ষ। লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে গেল মিটিং এর কক্ষ ছেড়ে। নয়ন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার গমনপথের দিকে। লোকটা আবার তাকে ফাঁসিয়ে চলে গেল? কি হতো এই সোহাগের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজের সাথে নিয়ে গেলে? তা তো নিবে না। নয়ন দাঁতে দাঁত পিষলো। বিরবিরিয়ে বলল,

“শ’য়’তা’ন, ব’র্ব’র লোক।”
সোহাগ তাকালো নয়নের দিকে। উৎসুক হয়ে বলল,
“চলো নয়ন। আমরা দুজন তাহলে একসাথে বসে একটু গল্প করি।”
নয়ন মেকি হাসলো। আমতা আমতা করে বলল,
“আমারও আসলে কাজ আছে স্যার। এখন অফিস টাইম বোঝেনই তো।”
নিজের কথা শেষ করে সোহাগকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না নয়ন। এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল। সোহাগ পিছন ঘুরে হতাশ নয়নে তাকালো তার গমনপথের দিকে। কণ্ঠে একরাশ দুঃখ ঢেলে বলল,
“যাহ বাবা সবাই চলে গেল।”

দুপুরের তপ্ত রৌদ্র। ত্রয়ীর ক্লাস শেষ হয়েছে মাত্রই। মেয়েটা বই খাতা গুছিয়ে আরফা এবং রাকিবকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। কলেজ ক্যাম্পাস হয়ে গেটের দিকে পা রাখতেই এক পুরুষালী কণ্ঠের ডাক ভেসে এলো,
“ত্রয়ী।”
ত্রয়ী, আরফা এবং রাকিব তিনজনই থমকে দাঁড়াল। তাকালো পিছন ঘুরে। চোখে পড়লো সাহেদকে। সাহেদ ততক্ষণে এসে দাঁড়াল তাদের মুখোমুখি। নরম কণ্ঠেই শুধাল,
“কেমন আছো তোমরা?”
ত্রয়ী কিছু বলার পূর্বেই আরফা তার চঞ্চল কণ্ঠে জবাব দিলো,
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন স্যার?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“ডাকলেন যে স্যার কিছু বলবেন কি?”
সাহেদ ইতস্তত করল। একটু সময় নিয়ে বলল,
“হ্যা, ত্রয়ীর সাথে একটু কথা ছিল।”
আরফা ঠোঁট টিপে হাসলো। কিছু একটা সন্দেহ করে রাকিবকে বলল,
“চল আমরা ওদিক থেকে ঘুরে আসি।”
রাকিব যেতে চাইলো না। ভ্রু কুঁচকে শুধাল,

“কেন আমরা ওদিকে যাব কেন? স্যারের যা বলার আছে আমাদের সামনেই বলুক না সমস্যা কি?”
আরফা রাকিবের দিকে একটু এগিয়ে দাঁড়াল। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“তুই কি বোকা?”
“বোকা হতে যাব কেন? আজব!”
“তাহলে ওদিকটায় চল।”
“না আমি যাব না।”
রাকিব যেতে চাইলো না। আরফা এক প্রকার জোরজবরদস্তি করেই তাকে নিয়ে গেল কিছুটা দূরে। ত্রয়ী একবার তাকালো তাদের দিকে অতঃপর মাথা নুইয়ে নিল। নম্র কণ্ঠে বলল,
“কি বলবেন স্যার?”
সাহেদ ইতস্তত করল ফের। আমতা আমতা করে বলল,
“কথাটা কিভাবে তোমাকে বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আবার না জিজ্ঞেস করেও শান্তি পাচ্ছি না। নিজেকে অনেকবার দমানোর চেষ্টা করেছি। পরে আবার ভাবলাম তোমার কাছে একবার জিজ্ঞেস করেই নেই।”
ত্রয়ী অবাক হলো। কি এমন জিজ্ঞেস করবে এই লোক যার জন্য এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব। এই লোক আবার তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিবে না তো? ত্রয়ী এর আগে যতগুলো প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে তাদেরও ঠিক এমন ভাব ভঙ্গি করেই প্রস্তাবটা দিতে দেখেছে। তবুও সেগুলো একটা পর্যায়ে ছিল। কিন্তু এই লোক তো তার কলেজের অধ্যাপক। একে ফিরিয়েও বা দিবে কিভাবে আর মুখের উপর কিছু বলবেও বা কিভাবে? ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো সাহেদের দিকে। পলক ঝাপটে শুধাল,

“কি জিজ্ঞেস করবেন স্যার যার জন্য আপনার এত ভাবতে হচ্ছে।”
সাহেদ নিচু স্বরে শুধাল,
“রিমা শীর্ষের বোন না?”
“হ্যা।”
সাহেদ সময় নিলো একটু। কণ্ঠস্বর নিচু রেখেই বলল,
“রিমা কি কোনো প্রেম করে বা ওর কেমন ছেলে পছন্দ বলতে পারবে?”
ত্রয়ী নিজের ভাবনায় এবার নিজেই লজ্জা পেল। এই লোক এসেছে রিমার জন্য আর সে কি কি না ভেবে ফেলেছে। সবকিছু নিয়ে অতিরিক্ত ভাবার অভ্যাসটা যে তার কবে যাবে কে জানে। অবশ্য এটা তারও দোষ নয়। সাহেদ প্রথমে এসে এমন ভাব করেছে আবার আরফা এবং রাকিবকে দূরে সরিয়ে তার সাথে একাকী কথা বলতে চেয়েছে। তাতে মনের ভিতরে এমন ভাবনা আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ত্রয়ী ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে তুললো। কিঞ্চিৎ মাথা নাড়িয়ে বলল,

“আমি এসবের কিছুই জানি না স্যার। আসলে আমি তাদের বাড়িতে নতুন। রিমা আপুর সাথে আমার এখনো অব্দি তেমন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি যে তিনি আমার সাথে এসব ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলবেন।”
“আচ্ছা।”
পরপর সাহেদ মাথা চুলকালো। কিছুটা লাজুক চোখ মুখে বলল,
“আমি যে তোমাকে এসব কথা জিজ্ঞেস করেছি দয়া করে রিমাকে বলো না।”
ত্রয়ী হাসলো। অভয় দিয়ে বলল,
“আচ্ছা।”
দূর থেকে কিছু না শুনলেও সম্পূর্ণ ঘটনাটাই খেয়াল করল রাকিব। ত্রয়ীকে হাসতে দেখে দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো তার। আরফার থেকে কিঞ্চিৎ দূরে সরে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল। কল লাগালো শীর্ষের নাম্বারে। দুইবার রিং হতেই কলটা ধরল শীর্ষ। স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,
“হ্যা রাকিব বল।”
“ভাই আপনি ত্রয়ীর দিকে নজর রাখতে বলেছিলেন না? নজর রেখেছি। সে এখন আপনার বন্ধু সাহেদের সাথে হেসে হেসে গল্প করছে।”
শীর্ষের চোখ দুটো জ্বলে উঠল যেন। মুহুর্তেই ঠান্ডা মেজাজের পারদটা তড়তড়িয়ে বেড়ে গেল। মুষ্টিবদ্ধ করল হাতের মুঠো। গম্ভীর কণ্ঠে শুধাল,
“কি গল্প করছে?”

“তা জানি না। সাহেদ স্যার আমাকে আর আরফাকে সরিয়ে দিয়েছেন। তার নাকি শুধু ত্রয়ীর সাথে কথা আছে।”
শীর্ষের ক্রোধ বাড়লো আরও। কপালের রগগুলো ফুলেফেঁপে নীলচে বর্ণ ধারণ করল যেন। ধপ করে কলটা কেটে দিলো সে। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“বালির বস্তার বাচ্চা। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। তোকে বলেছিলাম সাহেদের সাথে কথা বলবি না। আবার আমার অবাধ্য হলি।”
বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে। ত্রয়ীর ক্ষেত্রেও বোধহয় তাই ঘটলো। ক্লাস শেষে শিলাকে সাথে নিয়ে বাইরে বেরুতেই রিমার নজর পড়লো ত্রয়ী এবং সাহেদের উপরে। মুহুর্তেই কলিজাটা জ্বলে উঠল তার। হৃদয়ে হিং’সা’ত্ম’ক মনভাব জন্মালো তড়তড়িয়ে। এই মেয়েটা সাহেদের সাথে কি এত কথা বলছে তাও হেসে হেসে। রিমার হৃদয়ে এমনিই হিং’সা’র আ’গু’নে’র আনাগোনা। সেই আগুনে আর একটু ঘি ঢালতে শিলা বলে উঠল,
“ঐ মেয়েটার সাথে সাহেদ স্যার কি এত বলছেন? আবার দেখ দেখ স্যার কেমন লজ্জাও পাচ্ছেন।”
রিমা আর সহ্য করতে পারলো না। ক্রোধে দিশেহারা হয়ে এগিয়ে এলো ত্রয়ী এবং সাহেদের দিকে। দৃষ্টিতে অগ্নি অথচ ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

“ত্রয়ীকে কি বলছেন স্যার?”
সাহেদ অপ্রস্তুত হলো বেশ। রিমাকে সে দেখেছিল প্রায় বছর দুই আগে। তখন থেকেই মেয়েটির প্রতি তার একটা দুর্বলতা কাজ করতো। কিন্তু সহপাঠীর বোন হওয়ায় লজ্জা সংকোচে কখনো কিছু বলা হয়নি। তবে এই কলেজে যোগদান করার পর প্রায় প্রতিদিনই মেয়েটির মুখোমুখি হয়ে নিজেকে দমন দায় হয়ে পড়েছে এখন। প্রায় সারাক্ষণই এই মেয়ে তার মন, মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করছে। কিন্তু ঐ যে লজ্জা সংকোচ! তাই এখনো বলতে পারছে না কিছুই। আবার হৃদয়ে এটা নিয়েও সংশয় ছিল যে রিমা অন্য কারো সাথে কোনো প্রেমমূলক সম্পর্কে আছে কিনা। সে বিষয়েই নিশ্চিত হতেই আজ ত্রয়ীর সাথে কথা বলতে এসেছিল সে। কিন্তু এখানে এসেও রিমা হাজির। মেয়েটা যদি কোনোভাবে জানতে পারে সে কলেজের অধ্যাপক হয়ে ত্রয়ীর কাছে এসব জানতে চেয়েছে তাহলে কি না কি ভেবে বসে কে জানে। সাহেদ এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। আমতা আমতা করে বলল,

“এমনি তেমন কিছু না। আচ্ছা আমি আসছি।”
সাহেদ চলে গেল। রিমা সেদিকে এক পলক দৃষ্টি দিয়ে ত্রয়ীকে শুধাল,
“সাহেদ স্যার তোকে কি বলছিলেন?”
ত্রয়ী অবাক হলো। সাথে সাথে খুশিও হলো ভীষণ। রিমা অবশেষে তার সাথে কথা বলেছে। খান বাড়িতে এতদিন ধরে থাকছে ত্রয়ী অথচ রিমা আজ প্রথম তার সাথে কথা বলল। মেয়েটা অনেকটা খুশিতেই বলে উঠল,
“উনি আপনার….”
এই টুকু বলেই থেমে গেল সে। স্মরণে এলো সাহেদের কথা। তিনি তো সত্যিটা রিমাকে বলতে বারণ করেছিল। মেয়েটা আমতা আমতা শুরু করল। দৃষ্টি নুইয়ে বলল,
“এমনি পড়ার বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। আমি তো নতুন তার উপর অনেক দিন পর বই ধরেছি তাই অনেক কিছুই বুঝতে পারিনি সে ব্যাপারেই জিজ্ঞেস করেছিলাম।”
“ঠিক তো?”
ত্রয়ী মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিলো। রিমা বোধ হয় বিশ্বাস করল তার কথা। সামনের দিকে পা বাড়ালো সে। যেতে যেতে বলল,
“গাড়িতে আয়। বাড়িতে যেতে হবে।”

সূর্যের প্রখর তাপ। প্রকৃতি কেমন নেতিয়ে পড়েছে তীব্র এ তাপের দাপটে। ত্রয়ীদের গাড়িটা রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল মানানসই গতি নিয়ে। হঠাৎ পথিমধ্যে আরেকটা গাড়ি এসে পথ রোধ করল তাদের। চলন্ত অবস্থায় সামনে থেকে আরেকটা গাড়ি চলে আসায় হকচকিয়ে উঠল ড্রাইভার। মধ্যবয়স্ক স্বাস্থ্যবান লোকটা ভীত হয়ে পড়লেন ভীষণ। উপায় না দেখে দ্রুত ব্রেক কষলেন তিনি। ফলস্বরূপ রিমা এবং ত্রয়ী দু’জনেই ঝুঁকে গেল সামনের দিকে। সামনের সিটের সাথে বারি খেলো তাদের কপাল। মেজাজ বিগড়ালো ড্রাইভার লোকটার। গাড়ির জানালা গলিয়ে সম্মুখের দিকে তাকালেন তিনি। শক্ত কণ্ঠে কিছু বলবেন তখনই দেখলেন সমনের গাড়িটার দরজা খুলে শীর্ষ বেরিয়ে আসছে। ড্রাইভার লোকটা আর কিছু বললেন না। শীর্ষ গভীর ক্রোধ নিয়ে এগিয়ে এলো ত্রয়ীদের গাড়ির দিকে। পিছনের দরজাটা খুলে হাত ধরলো ত্রয়ীর। মেয়েটা চমকাল, ভরকালো। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,

অনুরাগে তুই পর্ব ২৫

“একি কি করছেন? হাত ধরেছেন কেন আমার?”
শীর্ষ জবাব দিলো না কোনো। শক্ত হাতে ত্রয়ীকে টেনে নামালো গাড়ি থেকে। রিমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তুই বাড়িতে চলে যা। ওর সাথে আমার কিছু হিসাব নিকাশ আছে।”

অনুরাগে তুই পর্ব ২৭