অন্যরকম তুমি পর্ব ৫৬

অন্যরকম তুমি পর্ব ৫৬
তানিশা সুলতানা

শাশুড়ী সিমিকে একটা মেরুন রঙের শাড়ি দেয়। ওটাই পড়তে বলে দিয়েছে। কিন্তু শাড়ির সাথে ব্লাউজ দেয় নি। এবার পড়বে কি করে? অস্বস্তিতে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না। তনু গাউন পড়েছে। আপাতত সে সাজুগুজু করাতে ব্যস্ত। আর পরি? তার তো খোঁজই নেই। একবারও মায়ের কাছে আসে নি। সিফাত কোথায় জানে না সিমি। জানতে চায়ও না।

“আপু দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও দ্রুত
তনু ফেসপাওডার মুখে মেখে সেটা ঘসতে ঘসতে তনুর দিকে তাকিয়ে বলে।
” ব্লাউজ তো নেই।
রিনরিনিয়ে বলে তনু। নিজের ওপর নিজেই পরম বিরক্ত। এরকম লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এতো লজ্জা কেনো পাচ্ছে ও?
তনু আলমারি খুলে নিজের একটা স্কিন কালার ব্লাউজ দেয়। তনু প্রতিত্তোরে একটু মুচকি হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
তনু শাড়ি পড়তে সাহায্য করে সিমিকে। তারপর বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সিফাতের নানা বাড়ি দাদাবাড়ী থেকে সবাই এসেছে। ফুপি খালা যত আত্মীয় আছে সবাই উপস্থিত। সিমিকে নিয়ে তনু ড্রয়িং রুমে আসতেই সাবিনা বেগম পরিকে কোল থেকে নামিয়ে সিমির দিকে এগিয়ে যায়। মুচকি হেসে সিমির হাতটা ধরে সব মেহমানদের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় সিফাতোর হবু বউ হিসেবে। সবাই খুব পছন্দ করে সিমিকে।

সাদির শার্ট খুলতেই ইচ্ছে করছে না ছোঁয়া। কি এমন হবে এই শার্ট পড়েই বাড়িতে গেলে? কিচ্ছু হবে না। কিন্তু এই কথাটা ওই গোমড়ামুখোটাকে কে বোঝাবে? হনুমান একটা।
সাদি তখন শপিং ব্যাগে ছোঁয়ার জন্য গাউন নিয়ে এসেছে।
সাদি আরামসে খেয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া অল্প অল্প খাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে টেনশনে মরে যাচ্ছে। বাবা নিয়ে গেলে থাকবে কি করে ছোঁয়া? সাদিকে ছাড়া তো নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। কিন্তু এই কথাটা এই গোমড়ামুখে হনুমানটা বুঝলে তো।
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে হাত ধুয়ে নেয়।

“খাওয়া শেষ? এখন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আসো। জলদি ফিরতে হবে আমাদের।
সাদি মুখে রুটি পুরে চিবতে চিবতে বলে।
” হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি। আপনাকে বলতে হবে না।
এক গ্লাস পানি সাদির মাথায় ঢেলে দিয়ে গটগট করে চলে যায় ছোঁয়া। সাদি চিবতে ভুলে গেছে। ছোঁয়ার দিকে হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কি হয়ে গেলো? এমন করলোই বা কেনো? রাগার মতো কিছুই তো হলো না?

এই মেয়েকে বুঝতে সাদির মনের ওপর পিএইচডি করতে হবে। না হলে একে বুঝতে পারবে না।
থালাবাসন সব সাদিকেই ধুতে হয়। কপাল করে বউ পেয়েছে সারাদিন গাল ফুলিয়ে থাকবে আর কাজ সব সাদিকেই করতে হবে। চিন্তার বিষয় এটাই যে বেবি হলে কি করবে? অফিস বাড়ি বেবি। ভাবতেই সাদির গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। নাহহহ বাবা বেবির দরকার নেই। পিচ্চি বড় হলেই বেবির কথা ভাবা যাবে। আপাতত এসব চিন্তা বাদ।
টেবিল পরিষ্কার করে রুমে ঢোকে সাদি। ছোঁয়া এখনো গাল ফুলিয়ে বসে আছে। ড্রেস পাল্টাই নি। সাদির মেজাজ খারাপ হয়। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে

“যাওয়ার ইচ্ছে নেই না কি?
সাদি আলমারির ওপর থেকে ব্যাগ নামিয়ে খাটের ওপর রাখতে রাখতে বলে। ছোঁয়া হাতের কাছে থাকা বালিশ টা সাদির দিকে ছুঁড়ে মারে
“আমাকে তাড়াতে পারলেই তো বাঁচেন আপনি। একটুও টেনশন নেই আপনার মধ্যে। এখান থেকে গেলেই যে বাবা আমাকে নিয়ে চলে যাবে এটা আপনি জানেন না?

ছোঁয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চিল্লায়ে বলে। সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে জামাকাপড় গোছাতে মন দেয়। ছোঁয়ার চোখে এবার পানি চলে আসে। একটুও চিন্তা হচ্ছে না মানুষটার?
ফুঁপিয়ে ওঠে ছোঁয়া। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জামাকাপড় রেখে ছোঁয়ার পাশে গিয়ে বসে।
” সবটা ঠিক হয়ে গেছে সিমি আর ভাইয়ার মধ্যে। আর তোমাকে নিতে চাইলেই আমি যেতে দেবো না কি? কমনসেন্স নেই তোমার।

ছোঁয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে সাদি। ছোঁয়ার মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। তবে সেটা প্রকাশ করে না।
“আগে কেনো বলেন নি? কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে?
ছোঁয়া আবারও গাল ফুলিয়ে বলে।
“সব কিছুই কি বলতে হবে? বুঝতেও পারো।
” আমি কম বুঝি
“কম বুঝলে হবে না। বুদ্ধি বাড়াও।
” হুমম বাদাম এনে দিয়েন।
“বাদাম দিয়ে কি হবে?
” বাদাম খেলে বুদ্ধি বাড়ে।
“আচ্ছা আনবোনি।
সাদির পরিপাটি চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ছোঁয়া। সাদি শব্দ করে হেসে ফেলে।

দুপুরের আগেই শপিং শেষ করে বাসায় ফিরে আসে সিমি সিফাত আর তনু। বড্ড ক্লান্ত সিমি
তাই কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। এখন একটু রেস্ট প্রয়োজন। সিফাতও সিমির পেছন পেছন চলে আসে। মেরুন রঙের শাড়িতে দারুণ লাগছে সিমিকে। ইচ্ছে করছে বুকের মাঝখানে জাপ্টে জড়িয়ে নিতে। ইচ্ছেটাকে পূরণ করার জন্যই সিমির পিছু নেওয়া।
আপাতত সিফাতের রুমটাকেই নিজের রুম মেনে নিয়েছে সিমি। এত মেহমানের মধ্যে নিজের আলাদা রুম আশা করা ঠিক না।

রুমে এসে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সিমি। যে গরম পড়েছে
জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
চোখ দুটো সবে বন্ধ করেছে। আর তখনই কেউ ধাপ করে সিমির পাশে শুয়ে পড়ে। হকচকিয়ে ওঠে সিমি। দ্রুত উঠে বসতে নিলে কেউ একজন দুই হাতের শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ করে ফেলে। ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকায় সিমি।
সিফাত চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসছে। সিমি মুখ বাঁকিয়ে সিফাতের হাত সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। সিমির মোচরামুচরি দেখে সিফাত আরও একটু শক্ত করে ধরে।

সিমি চোখ পাকিয়ে তাকায় সিফাতের দিকে। কিন্তু কোনো কাজে দেয় না। কারণ সিফাত দেখছেই না।
“কি অসব্ভতামী হচ্ছে? চিৎকার করবো আমি?
সিমি রিনরিনিয়ে বলে।
” আজ ইউআর ইউস।
চোখ খুলে সিমির দিকে তাকিয়ে সিমির নাক টেনে দিয়ে বলে সিফাত।
সিফাত ঝাঁড়া দিয়ে সিফাতের হাত সরিয়ে দেয়।
“বাবা তুমি এটা কি করছো?

পরির কন্ঠ শুনে এক লাফে উঠে বসে সিফাত। সিমির হাত পা কাঁপছে। ছি ছি মেয়ে কি ভাবলো?
সিফাত ঘাবড়ে গিয়ে মাথা চুলকায়।
” তুমি মায়ের সাথে কি করছিলে?
পরি সিফাতের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কপাল কুচকে বলে।
সিমি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। এখন কি বলবে? মেয়ে যদি সবাইকে বলে দেয়।
“ইয়ে মানে মা হয়েছে কি

সিফাত একটু হাসার চেষ্টা করে বলতে যায়। পরি হাত তুলে থামিয়ে দেয় সিফাতকে।
” আমি বুঝে গেছি তুমি কি করেছে।
সিফাত চোখ বড়বড় করে তাকায়। সিমি ধাপ করে চোখ খুলে। কি বুঝলো পিচ্চিটা?
“আমি সবাইকে বলে দিবো। এখনি বলে আসছি।
বলেই পরি এক দৌড়ে চলে যায়। সিফাত ডাকতে গিয়েও থেমে যায়। একে থামানো সম্ভব না।

একটা কবরস্থানের সামনে গাড়ি থামায় সাদি। ছোঁয়া কপালে তিনটে ভাজ ফেলে সাদির দিকে তাকায়। এখানে কেনো নিয়ে আসলো বুঝতে পারছে না?
সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস ফেলে। তারপর ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
” মিথির শেষ পরিণতি শুনবে না?
তাচ্ছিল্য হেসে বলে সাদি। ছোঁয়া নরে চরে বসে।

“মানুষের জীবন খুব অদ্ভুত। আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। তাই আজটাকে আজকের মতো করেই উপভোগ করতে হয়। কালকের জন্য ফেলে রাখতে নেই। কারণ কাল তুমি সেটা করার জন্য নাও থাকতে পারো।
কলেজের সবার সমনে মিথিকে থাপ্পড় মেরে খুব ভুল করেছিলাম আমি। সেটা কয়েক মিনিটেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। আমার উচিৎ ছিলো তখনই মিথটির পেছন পেছন গিয়ে ওকে সরি বলা। কিন্তু আমি সেটা না করে কালকের জন্য ফেলে রাখলাম।

অন্যরকম তুমি পর্ব ৫৫

পরের দিন জানতে পারলাম মিথটির বিয়ে। তখন বুঝতে পারলাম কেনো ও সবার সামনে প্রপোজ করেছিলো। বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলো মনের কথা চেপে না রেখে বলে দেওয়াই উচিত।
এক বুক আশা নিয়ে এসেছিলো মেয়েটাকে।

অন্যরকম তুমি শেষ পর্ব