অপরাজিতা পর্ব ৫

অপরাজিতা পর্ব ৫
স্নিগ্ধতা প্রিয়তা

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে আনান আবার বাইরে গিয়েছিলো। রাজিতার সাথে ভালো করে কথা বলেনি। হয়ত রাজিতার কথায় কষ্ট পেয়েছে। রাজিতার নিজের উপরেই রাগ হতে থাকে এটা ভেবে যে, যে মানুষটা কাল থেকে আজ পর্যন্ত ওর সাথে এত ভালো ব্যবহার করছে,তাকেই কিনা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। ওর সমস্ত রাগ আনান বেচারার উপর দিয়ে ঝাড়ছে! আনানকে সরি বলা উচিৎ! এসব ভাবছিলো তখনি আনান এসে বললো,

–“সরি, সারাদিন তোমাকে সময় দিতে পারিনি। মা বললো তুমি নাকি রুম থেকেই বের হওনি?”
রাজিতা নরমসুরে বলল,
–“আপনি কেন শুধু-শুধু সরি বলছেন। আমারিতো সরি বলা উচিৎ। প্লিজ আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। ”
–“আমি জানি তোমার সাথে যা যা হচ্ছে তা মেনে নিতে একটু সময় লাগবে৷ তাই তোমার কথায় কিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“সত্যি আমার উপরে রেগে নেইতো?”
–“রেগে থাকলে কি রাগ ভাঙাবে?”
–“আগে বলুন, আমাকে মাফ করে দিয়েছেন?”
–“কিসের জন্য?”
–“এই যে কাল থেকে আমি আপনাকেই ভুল বুঝে যাচ্ছি। অথচ আপনি আমার কত খেয়াল রাখছেন।”
–“তোমার খেয়াল রাখাটা আমার দায়িত্ব।”

–“শুধুই দায়িত্ব?”
–“মানে?”
–“না। কিছুনা!”
কথাটা বলেই রাজিতা ভাবে যে, কি বলতে কি বলে দিয়েছে! আনান বুঝতে পারলো যে রাজিতা কি বলতে চাচ্ছিলো, তাই বলল,

–“একটা বিষয় আমরা না চাইলেও মেনে নিতে হবে যে, আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, ভালবাসা, শ্রদ্ধা এগুলোর জন্ম দিতে হবে। জানিনা তুমি আমাকে কি ভাবছো, তবে আমি আনান, ছেলেটা অতোটাও খারাপ নয়, তুমি যতটা ভাবছো।”

রাজিতা যাকে এত কথা শুনাচ্ছে, সে এখনো ওকে এতসুন্দর করে বোঝাচ্ছে ভেবে অবাক হয়ে যায়। আসলেই মানুষটা মনে হয় অনেক ভালো! এতকিছুর পরেও ওর শুধু রাজিতার প্রতিই খেয়াল। দুইদিনেই মানুষটার প্রতি কেমন একটা মায়া জন্মে গেছে রাজিতার। আনানের মায়াবী মুখটার দিকে তাকাতেই লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয় রাজিতা, কারণ আনান ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু মানুষ আছে যারা সামনের মানুষটিকে না দেখে কথা বলতে পারে না। আনানও হয়ত ওই ধরনের হবে।
রাজিতাকে চুপ থাকতে দেখে আনান বলল,

–“আমাকে তুমি কি এখনো বিশ্বাস করতে পারছো না? তুমি বলছিলে না যে, তুমিও রাজি না থাকা সত্বেও আমি কেন তোমাকে বিয়ে করলাম? জানতে চাও?”
রাজিতা যেন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেছে৷ আমতা-আমতা করে বলল,

–“আপনার ইচ্ছে হলে বলতে পারেন। আমি আর জোর করব না। নিজের মানুষেরা যেখানে বিশ্বাসের মূল্য রাখেনা সেখানে…”
এটুকু বলেই থেমে গেলো রাজিতা৷ আনান বলল,
–“আচ্ছা, আমাকে এখনি বিশ্বাস করতে বলছিনা। তুমি তখন শুনতে চাচ্ছিলে, তাই জিজ্ঞেস করলাম। বাকিটা তোমার ইচ্ছে।”

–“আপনি আমার উপরে রাগ করে আছেন। তাইনা?”
–“সেই অধিকার কি তুমি আমাকে দিয়েছো এখনো? ”
–“আপনি কি নিলা আপুকে বিয়ে করলেও এভাবেই কেয়ার করতেন?”
রাজিতার মুখে আবার নিলা নাম শুনে আনান এইবার একটু চটে যায়।
–“দেখো তোমাকে বারবার বলছি যে, এখন আমরা স্বামী -স্ত্রী, সো, বারবার তুমি অন্যকাউকে টেনে এনে কি প্রমাণ করতে চাইছো!”

–“আপনি আজ সারাদিন কোথায় ছিলেন?”
রাজিতা কথা ঘুরাচ্ছে বুঝতে পেরে আনানও আর কিছু বলল না৷ এক বিষয় নিয়ে বারবার কথা বলতে ভালো লাগছে না।
–“কাজ ছিলো একটু। আরেকটা কথা,যদি মনে করো আমি তোমার উপরে রেগে আছি, আর রাগ ভাঙাতে চাও, তো তৈরি হয়ে নাও। একটু বাইরে যাবো তোমাকে নিয়ে।যদি তুমি যাওতো!”

বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো আনান। রাজিতা ভাবলো যে, আনান নিজে থেকে যখন বলছে তখন বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসলেই ভালো লাগবে। সারাদিন একা-একা রুমের মধ্যে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে ও।
রাজিতা মেরুন রঙের একটা সালোয়ার-কামিজ পড়ল। হাল্কা মেকাপের সাথে খোলা চুল। বেশ লাগছে দেখতে। রাজিতার খুব ইচ্ছে চুল বড় করার, কিন্তু ঘাড় থেকে কিছুটা নেমেই যেন চুলগুলো বড্ড জেদী হয়ে যায়, আর বড় হয়না। তার উপরে হাল্কা কার্লি।

রাজিতার হঠাৎ ওর বাসার কথা মনে হতেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। বাসার কথা ভাবছিলো, তখন হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোন হাতে নিয়ে দেখে যে ওর বান্ধবী নেহা কল করেছে। বেচারী কাল থেকে কল করে যাচ্ছে, কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলো!
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা রাগী, তীক্ষ্ণ কণ্ঠ ভেসে এলো,

–“বান্দরনী! কাল থেকে কল করছি, কল ধরিস না কারোই, আমিতো ভাবলাম মরে-টরে গিয়েছিস! খয়রাতি খাওয়ার প্ল্যান করছিলাম।”
–“আরে কান ফাঁটিয়ে ফেলবি নাকি! আস্তে বল, আমি শুনতে পাচ্ছি। ব্যস্ত ছিলাম খুব, তাই কল ধরতে পারিনি। ”
–“বোনের বিয়েতেই এত ব্যস্ত! নিজের বিয়ে হলেতো তোকে মোম-হারিকেন কিছু লাগিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না দেখছি।”

–“আচ্ছা কি বলবি বল। আমি আবার একটু বাইরে যাবো।”
একথা বলতেই দেখে আনান চলে এসেছে রুমে।রাজিতাকে ফোনে কথা বলতে দেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ভাবলো রাজিতার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত একটু রেস্ট নেওয়া যাক।
আনানকে দেখে রাজিতা একটু অস্বস্তিবোধ করতে লাগলো।
–“আচ্ছা পরে কথা বলবনে।”

কিন্তু ওপাশ থেকে নেহার ফোন রাখার কোনো তাড়া নেই। ও বলেই চলেছে,
–“আরে আজ যে কি হয়েছে, তুই শুনলে হা হয়ে যাবি। আমাদের ডিপার্টমেন্টে একটা নতুন স্যার জয়েন করেছে। সে কি দেখতে! তুর্জ স্যার আর কি! তার চাইতেও ডাবল হ্যান্ডসাম! সে গাড়ি থেকে যখন নামল, দেখার মতো একটা পরিবেশ। আশেপাশে যারা ছিলো আমার মনে হয় সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলো। ক্যাম্পাসে এখন তুর্জ স্যারের ফ্যান ফলোয়ার কমে যাবে দেখিস। তুই নিজেও তুর্জ স্যারকে বাদ দিয়ে এই স্যারের প্রেমে পড়ে যাবি!”

–“নেহা, আমি তোর সাথে পরে কথা বলবনে।”
–“আরে, আমার কথাতো শেষ করতে দে। হ্যালো, হ্যালো। ”
নেহা ‘হ্যালো হ্যালো ‘ করছিলো, কিন্তু তার আগেই রাজিতা কল কেটে দিলো। ওদের ভার্সিটির তুর্জ স্যার অনেক মেয়ের ক্রাশ, রাজিতার কাছেও ভালো লাগে, তবে ওইভাবে না৷ উনি আবার রাজিতাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার নয়।

‘আমার নিজের স্বামীই এত হ্যান্ডসাম! এখনতো আর আমাকে অন্যকাউকে দেখতে হবেনা। একে ভার্সিটির টিচার হিসেবে জয়েন করিয়ে দিলে দেখা যাবে সব মেয়ে চোখ ফেরাতে পারবে না। ভাগ্যিস উনি আমাদের ভার্সিটির টিচার না। নাহলে বদ মেয়েগুলা নজর দিয়ে দিতো!’

এসব ভাবতেই হাসি পায় ওর। যাকে এ পর্যন্ত স্বামী হিসেবে মানতেই পারেনি তাকে নিয়ে কি সব ভাবছে!
রাজিতাকে একা-একা হাসতে দেখে আনান ওর সামনে গিয়ে বলল,
–“একা-একাই হাসবে নাকি আমাকেও হাসির সঙ্গী বানাবে!”
রাজিতা চমক ভেঙে বলল,

–“না, মানে আমার এক বান্ধবী কল করেছিলো, তাই।”
–“তোমার জন্য ড্রেসটা সুন্দর লাগছে নাকি ড্রেসটার জন্য তোমাকে সুন্দর লাগছে বুঝতে পারছি না!”
–“আমার প্রশংসা করছেন নাকি ড্রেসের আমিও তা বুঝতে পারছি না।”
–“মহারানী তৈরি হলে চলুন, যাওয়া যাক! আর কত ওয়েট করাবেন।”
–“জ্বি চলুন।”

সন্ধ্যা কেটে রাতের অন্ধকারে সবকিছু গ্রাস হতে শুরু করেছে। কিন্তু শহরে তার ছিঁটেফোঁটাও নেই। আনান গাড়ির দরজা খুলতে যাচ্ছিলো তখন রাজিতা বলল,
–“এখন কোথায় যাবেন?”
–“আমিতো চাচ্ছিলাম তোমাকে কিছু শপিং করানোর জন্য মলে নিয়ে যেতে।তুমি কোথায় যেতে চাও বলো।সেখানেই নিয়ে যাবো।”

–“প্রথমে এই গাড়ি ছাড়ুন।”
–“মানে?”
–“রিকশায় ঘুরবেন?”
–“গাড়ি থাকতে রিকশা কেন?”
–“রাতের শহরটা রিকশায় ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। ঘুরবেন?”
–“তুমি চাইলে ঘুরতেই পারি। তুমি ঘুরেছো এর আগে কখনো? ”
–“হ্যাঁ, আমরাতো মাঝেমধ্যেই ঘুরতাম।”
–“আমরা মানে?”

–“আমি, রিমি আর নিয়ন ভাইয়া।নিলা আপু মাঝেমধ্যে যেতো আমাদের সাথে”
–“আমার সাথে ঘুরতে ভালো লাগবেতো?”
–“আপনি এত প্রশ্ন করছেন কেন! গেলে চলুন। আর না হলে…”
রাজিতাকে থামিয়ে দিয়ে আনান একটা রিকশা ডেকে দুজনে রিকশায় অনেকক্ষণ ঘুরলো।
রাজিতার কাছে আনানকে এখন আর অপরিচিত লাগছে না। ওর সাথে ঘুরতে ভালোই লাগছে। একটা পার্ক দেখে রাজিতা আনানকে বলল ওখানে নেমে ঘুরতে।

রাজিতা আর আনান দুজনেই চুপচাপ পাশাপাশি হাটছে৷ আনান রাজিতাকে বলল,
–“তোমার হাতটা একটু ধরা যাবে? না মানে, সবার মতো নতুন বউয়ের হাতটা ধরে হাটতাম আর কি। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যে, বউয়ের হাত ধরে পার্কে ঘুরে বেড়াবো। আজ যখন..”
বলতেই রাজিতা আনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আনান রাজিতার হাতে হাত রাখতেই রাজিতার মনে হতে লাগলো যে, এই মানুষটাকে হয়ত বিশ্বাস করা যায়। নিজেকে অনেক মুক্ত লাগছে। সারাদিনের বিষন্নতাগুলো যেন ওকে ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে।
রাজিতা আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
–“এখনো জিজ্ঞেস করে কথা বলতে হবে!”
–“না মানে, আপনার সম্পর্কেতো আমি তেমন কিছুই জানিনা। তাই..”
–“কি জানতে চাও? বলো।”
–“আপনি কি করেন? মানে আপনার পেশা?”

–“সব রেখে তুমি আমার পেশা নিয়ে পড়লে কেন? অন্যন্য মানুষ সাধারণত পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছে-অনিচ্ছে এসব সম্পর্কে জানতে চায়। আর তুমি প্রথমেই পেশা জানতে চাচ্ছো কেন?”
–“জানতে ইচ্ছে হলো তাই। আপনি যদি না বলেন সেটা আপনার ব্যাপার।”
–“রাগ করলে নাকি! আসলে ওইটা বলা যাবেনা। ওটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ। অন্যকিছু জিজ্ঞেস করো।”
–“আপনাদের এখানেই যখন আছি, আস্তে আস্তে সব জানতে পারব।”

–“আমার সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ দেখছি।”
–“সবকিছু ছেড়ে যার কাছে চলে আসলাম, তার সম্পর্কে না জানলে হয়।”
রাজিতার স্বাভাবিক আচরণ দেখে আনানের অনেক ভালো লাগছে। আনানের মা-বাবাও অনেক খুশি হয়েছেন যে, ছেলে আর ছেলেবৌ একসাথে ঘুরতে বেড়িয়েছে।

আনানের মা-বাবার ব্যবহারে রাজিতা মুগ্ধ! উনারা রাজিতাকে একদম আপন মেয়ের মতো দেখছে। রাজিতা যখন আনানের মাকে, “মা” বলে ডাকছিলো উনি মনে হয় আবেগে কেঁদেই ফেলল।
আনানের মিশন কমপ্লিট। রাজিতা সবার সাথে হেসে-খেলে কথা বলছে। আনানের মায়ের সাথেও গল্প করছে, এসব দেখে আনানের অনেক ভালো লাগছে।

রাজিতার পছন্দ-অপছন্দ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ পর্যন্ত আনানের মায়ের সাথে গল্প করল। রাজিতার গল্প থামানোর কোনো নাম-গন্ধ না পেয়ে আনানের মা-ই বলল,
–“অনেক রাত হয়েছে মা। যা, এবার গিয়ে শুয়ে পড়। কাল নাকি আবার ভার্সিটি যাবি আনু বলল।”
রাজিতা খুশিতে যেন লাফিয়ে উঠল,

–“উনি বলেছে? কাল ভার্সিটি যেতে দিবে?”
ওর শাশুড়ী হেসে বলল,
–“তুই চাইলেই হবে। ও কে তোর ব্যাপারে নাক গলানোর। কিছু হলে শুধু আমাকে এসে বলবি, বাকিটা আমি দেখবো! ”
রাজিতা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,

–“আচ্ছা মা, আসি তাইলে। কালতো সকালে উঠতে হবে তাহলে। আমাকে ডেকে দিবেন একটু।”
–“আনু থাকতে আবার আমার ডাকা লাগবে নাকি, ওই ডেকে দিবে দেখিস।”
আনান ডেকে দিবে মনে হতেই ওর সকালের কথা মনে পড়ে গেলো। মুখে পানি ছিটিয়ে কেউ ঘুম ভাঙায়!
রাজিতা রুমে ঢুকতেই আনান বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলতে লাগলো,

–“দরজা লক করে দিও। আর ফোন এখানে রেখে গিয়েছিলে কেন? সাথে নিয়ে গেলেই পারতে।”
রাজিতা দরজা লক করতে করতে বলল,
–“আবার কে ফোন করেছিলো? চাচ্চুরা কেউ? নাকি নেহা? নাকি মালিহা?”
–“তাদের কেউ-ই না। ”

রাজিতার চাচ্চুরা কেউ ফোন করেনি শুনে রাজিতার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। ও সারাদিন আশায় ছিলো যে, অন্তত ওর চাচ্চু ওকে একবার কল করে খোঁজ নিবে। মেয়েটা কেমন আছে না আছে! ওর চাচ্চু এতটা নিষ্ঠুর কীভাবে হলো!
রাজিতার হাতে ফোনটা দিতে দিতে খসখসে গলায় বলল,
–“এতরাতে নিয়ন ভাইয়া কেন কল করেছে?”
‘নিয়ন ভাইয়া’ শুনে রাজিতা যেন কিছুটা খুশি হলো। ফোনটা হাতে নিয়ে কলব্যাক করতে করতে আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আমাকে ডাকেননি কেন?”
–“এতটা জরুরি জানতে পারলে অবশ্যই ডেকে দিতাম। আমিতো ভাবলা…”
আরকিছু বলার আগেই রাজিতা ‘হ্যালো’ বলতে বলতে বেলকনিতে চলে গেলো।
আনান শুধু বারবার ঘড়ি দেখছে। পুরো ২৩ মিনিট ৪৫সেকেন্ড পরে রাজিতা রুমে আসলো। ওর মুখের হাসিটুকুই বলে দিচ্ছে যে, ও কি পরিমাণ খুশি।

‘আমি পাশে থেকেও এতটা খুশি রাখতে পারছি না, আর ওই নিয়ন ব্যাটা হাজারমাইল দূরে থেকেই মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছে! স্বামী থাকতে এতরাতে অন্য মানুষের সাথে কথা বলতে বিবেকে একটুও বাধলো না! কি মেয়েরে বাবা!’ আনান মনে মনে ওসব ভাবছিল। তখন রাজিতা ওর পাশে শুয়ে পড়ল আর বলতে লাগল,

–“জানেন, দুইমাস পরেই নিয়ন ভাইয়া দেশে আসছে, উনার থিসিস পেপার প্রায় কমপ্লিট! কতদিন পর ভাইয়াকে সরাসরি দেখব।”
–“ওহ!”
–“ভাইয়া যখন বাইরে যায়, তখন আমার এইচ এস সির টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। কতদিন হয়ে গেছে।”
–“ওহ!”
রাজিতার মুখে নিয়ন ভাইয়ার গল্প শোনার কোনো ইচ্ছেই আনানের নেই।

–“আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে৷ নাকি বালতি ভর্তি পানি এখনি রেডি করে রাখব!”
–“আচ্ছা বাবা ঘুমাচ্ছি। ”
তারপর একটু চুপ থেকে রাজিতা আবার বলল,
–“ধন্যবাদ। কাল আমাকে ভার্সিটি যেতে দেওয়ার জন্য।”
–“হুম!”

–“কালরাতে ঘুম হয়েছিলো? আসলে আমার ঘুমানো এতবাজে! আপনার কষ্ট হবে নাতো?”
আনান চোখ বন্ধ করে ছিলো, রাজিতার কথা শুনে পাশ ফিরে শুতে-শুতে বলল,
–“বিয়ে যখন করেছি, এইটুকু কষ্টতো সহ্য করতেই হবে৷ এখন বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আনান গাড়িতে আসতে বলেছিলো, কিন্তু রাজিতা অনেক অনুরোধ করে বাসে করে ভার্সিটি আসলো। বউপত্র কিছুই সাথে নেই। দোকান থেকে একটা খাতা আর কলম কিনে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো, যদি প্রয়োজন হয়!রাজিতার চাচ্চু সকালে ফোন করেছিলো, এই কারণে আজ ওর মনটা অনেক ভালো।
আনানদের বাসা থেকে রাজিতার ভার্সিটি অনেকটা দূরে। রাজিতা ভাবছে যে, এতদূরে প্রতিদিন এসে ক্লাস করাটাতো কষ্ট হয়ে যাবে।

রাজিতা ক্লাসে ঢুকতেই নেহা আর মালিহা ওকে ঘিরে ধরলো৷ যেন কতকাল পরে ও ক্লাসে এসেছে।
নেহা ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
–“কাল ওইভাবে কল কেটে দিলি কেন! আমার পুরো কথাটাইতো শুনলি না। তুই ভাবছিস আমি মিথ্যে বলছি! কিন্তু স্যারকে দেখলেই তুই বুঝতে পারবি যে, আমি এক ফোঁটাও মিথ্যে বলিনি ”

অপরাজিতা পর্ব ৪

রাজিতা হঠাৎ দেখতে পায় যে, ওর চাচ্চু দাঁড়িয়ে আছে ওদের ফ্যাকাল্টির নিচে। ও হুট করে কাউকে কিছু না বলেই নিচে চলে আসে ওর চাচ্চুর সামনে।

অপরাজিতা পর্ব ৬