অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১৪

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১৪
লেখিকা:- তারা ইসলাম

রাত তখন এগারো’টার কাছাকাছি।উনি মাত্রই থানা থেকে ফিরলেন।উনি ফ্রেশ হতে গেলে আমি টেবিলে রাতের খাবার পরিবেশন করতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি এসে চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন- একা একা ভয় লাগে’নিতো?

“আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম- পুলিশের বউদের ভয় থাকতে নেই।
“আমার কথায় উনি শব্দ করে হেসে উঠলেন আর বললেন- হ্যা তা তুমি ঠিক বলেছো!রুদ্র মির্জার বউ হয়ে ভয় পাবা তা কি করে হয়?
“তারপর উনার প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললাম- ফ্রিজে মাছ ছিলো ও গুলা অনেক কষ্টে রান্না করেছি।আর ডিম আর ডাল ব্যস আর কিছু রান্না করতে পারি’নি।খাবার ভালো না হলে কিন্তু একদম বলবেন না।দরকার হলে পানি দিয়ে খাবেন।
“আমার কথায় উনি পানি খেতে খেতে বললেন- শিখে নিতে বলেছিলাম সব”আমার এসব হেলা-পেলা একদম ভালো লাগে না।আর এখন তো ওই বাড়িতে আছো তাই না করলেও চলছে তোমার।কিন্তু তোমার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলে এখানেই থাকতে হবে!তাই ভালোভাবে সব শিখে নিবা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি মুখ কালো করে বললাম- আমার কাজ করতে ভাল্লাগেনা।
“উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে বললেন- খেতে তো নিশ্চয় ভালো লাগে,ঠিক সেভাবেই কাজকেও ভালো লাগাবে।আমি এসব বা*চ্চা*মো কথা একদম পাত্তা দিবো না।সব শিখে নিবে।বলেই খেতে লাগলেন খেতে খেতে বললেন- ততটুক খারাপ হয়’নি ভালোই হয়েছে তুমিও খেয়ে নাও!
~ তারপর আর কোনো কথা না বলে আমরা খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম।
“সব গুছিয়ে রুমে আসতে আসতে উনাকে বললাম- আপনার সত্যটা বাসায় বলবেন না?

“উনি বিছানায় শুতে শুতে বললেন- আপাতত বলার মুড নেই।
“আমি বললাম- বলে দিলে কি হয়?উনারা জানলে প্রথমে অভিমান করবেন পরে সবাই কত খুশি হবেন।শশুড় বাবা সব থেকে বেশি খুশি হবেন দেখে নিয়েন।
“উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে থাকিয়ে হালকা চিল্লিয়ে বললেন- এই জন্যই তোমরা মেয়েদের কিছু বলতে নেই!তোমাকে আমি জীবনেও সত্যটা বলতাম না!তুমি কেমন জানা আছে আমার!আর তুমি ভাগ্যক্রমে সত্যটা জেনে ফেলছো যে!

না’হলে তোমার মতো ইস্টু’পিটকে আমি জীবনেও বলতাম না।আর হ্যা এখন আবার ন্যাকা-কান্না শুরু করে দিও না বলে রাগ নিয়ে অন্য-পাশে শুয়ে পরলেন।
“উনার কথায় আমি সত্যি সত্যি কষ্ট পেলাম।আর চোখে পানিও চলে আসলো।উনি মাঝে মাঝে এমন ভাবে কথা বলেন যে আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়!আমি নিজেকে শক্ত করে উনার অন্য-পাশ ফিরে শুয়ে পরলাম।আর মনে মনে ঠিক করলাম কালকেই আমি ফিরে যাবো ওই বাসায়।এখানে উনার অপমান জনক কথা শুনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই আমার।
~ সে রাতে আর আমাদের কথা হলো না।সেভাবেই রাতটা পার হয়ে গেলো।আমি অভিমান নিয়ে ঘুমালাম! আর উনি রাগ নিয়ে।

“সকালে ঘুম থেকে উঠে আর উনার দেখা পেলাম না।বুঝে গেলাম উনি থানায় চলে গেছেন।প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও রাতের কথা মনে পরতেই আমি ফ্রেশ হয়ে বোরকা পরে নিলাম।তারপর দরজায় তালা দিয়ে বেড়িয়ে পরলাম বাহিরে।এখন অনেকটা চেনা জায়গাটা।আমার কাছে যথেষ্ট টাকা ছিলো!তাই আমি একটা অটোতে উঠে পরলাম।উদ্দেশ্য আমার নিজের বাড়ি আব্বুর কথা ভীষণ মনে পরছে!মনে মনে ভাবলাম- আচ্ছা আব্বুর কি আমার কথা মনে পরে না।সেদিন তো আমার কোনো দোষ ছিল’না সেটা কি আব্বু বুঝতে পারেন’নি।

~ অনেকক্ষণ জার্নি করার পর নিজ বাসায় এসে মন আমার একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো!আজকে হয়তো আগের মতো আম্মুর হাতে চ*ড় খাবো কেন আসলাম এই বাড়িতে তাই,তবে আমি নিজেকে আগে-ভাগে রেডি করে রাখলাম প্রচুর বকা আর চ*ড় খাওয়ার জন্য।
“কলিংবেল দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আমার ছোট ভাই লিয়ন দরজা খুলে দিলো”সে আমাকে দেখে হতবাক”চমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“ওর দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে বললাম- ভাই আমার।আমি না থাকায় তো বহুত ঘরে রাজত্ব করেছিস।কিন্তু এখন আমি চলে এসেছি!
“লিয়ন আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বললো- দেখবি আম্মু তোকে ঝা’ড়ু দিয়ে মে’রে বের করে দিবে।

~ আমাদের কথার মাঝে আম্মু আচঁলে হাত মুছতে মুছতে বললেন- লিয়ু বাবা কে এসেছে?বলতে বলতেই দরজার কাছে আমাকে দেখে থমকে গেলেন।
“আম্মুকে দেখে ভয়ে আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
“আম্মু হটাৎ গম্ভীর গলায় বললেন- ভেতরে এসো।
“আম্মুর কথা শুনে খুশি হয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম! তবে উনি ধরলেন না।
“আম্মু আমাকে ছাড়িয়ে বললেন- হটাৎ এখানে আসা?বের করে দিয়েছে নাকি তারা?

“আম্মুর কথায় আহত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম- আম্মু আমার তোমাদের কথা ভীষণ মনে পরছিলো।আজ কোনো ভাবেই নিজের আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারি’নি।বের করে দিবে কেন আমি সেখানে অনেক অনেক ভালো আছি আম্মু।উনারা আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন।আর আম্মু জানো আমি না সব কাজ মোটামুটি শিখে নিয়েছি বলেই কেঁদে ফেললাম।
“আম্মু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- আজ এসেছো এসেছো আর কখনো আসবে না।ভালো আছো সেটাই অনেক আর সেখানেই থাকবে।আর হ্যা লিয়নের আব্বু আসার পর উনার সাথে দেখা করে চলে যা’বা।

“আমি মুখ কালো করে বললাম- আমি এখানে থাকবো!এটা আমারও ঘর।
“আম্মু রে’গে বললেন- এটা তোমার ঘর না!তোমার স্বামীর ঘর হলো এখন তোমার আসল ঘর। তাই এখানে তাকার কোনো প্রয়োজন নেই তোমার।
“আমি ধরা গলায় বললাম- আজকের রাত’টুকু কি এখানে থাকতে পারি”শুধু আজকের রাত কালকেই আমি ফিরে যাবো।
“আম্মু কিছু একটা ভেবে বললেন- ঠিক আছে তবে সকালে সূর্য্য উঠার সাথেই সাথেই বিদায় হবে।
“আমি কান্নার মাঝে মুচকি হেসে বললাম- ঠিক আছে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে মাত্র!আমি আমার রুমে শুয়ে শুয়ে ফ্যানের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছি।আর ভাবছি যা শুনলাম তা’কি সত্য নিজেকে হুট করে মৃ’ত মৃ’ত মনে হচ্ছে।তখনই দরজার বাহিরে আব্বুর গলা শুনতে পেলাম উনি বলছেন- মা আমার এসব কথা ভেবে তুমি কষ্ট পেয়েও না প্লিজ।মাই প্রিন্সেস দরজা খুলো!আমি রোবটের মতো দরজাটা খুলে দিলাম।তখন আব্বু আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন- তুমি আমারই মেয়ে নূর!তোমাকে আমাদের শিক্ষায় বড় করেছি।তুমি তোমার আম্মুর কথায় কষ্ট পেও না উনি এমনি এসব কথা বলেছেন।

“আমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম তবে কিছু বললাম না।
~ অতীত ~
“আমি আব্বুর বাসায় আসার কয়েক’ঘন্টা পর আব্বু বাসায় আসলেন।আমরা বাবা-মেয়ে অনেকদিন পর একে-অপরকে দেখায় অনেক ইমোশনাল হয়ে পরেছিলাম।তারপর আমরা অনেকক্ষণ কথা বলার পর! লান্স করে নিলাম সবাই মিলে।

“কিন্তু দুপুরের খেয়ে-দেয়ে ঘুমাতে এসেছিলাম কিন্তু আব্বুকে মারিয়া প্রেগন্যান্ট সেটা বলতে যেতেই দরজার সামনে গিয়ে কিছু কথা শুনে আমি থেমে গেলাম।দরজাটা লাগানো ছিলো তবে লক করা নই তাই সব কথা স্পষ্ট করে শুনা যাচ্ছে।মনে হচ্ছিলো উনারা আমাকে নিয়েই ঝগড়া করছেন তবে আম্মু রেগে আব্বুকে বললেন- পরের মেয়ের জন্য তোমার এত দরদ কই আমার ছেলের জন্য তো এত দরদ নেই।নাকি পুরণো প্রেমিকার মেয়ে বলে এত দরদ।মেয়েটাকে কালকেই বিদেয় করবে না হলে এই ঘর ছেড়ে আমি বের হয়ে যাবো।

“আব্বু বললেন- রেহু এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে শায়লা কখনো আমার প্রেমিকা ছিলো না।সে শুধুমাত্র আমার আপা ছিলো।ভুলে যাবে না আমি তোমাকেই ভালোবাসতাম আর বাসি!তুমি এমন ভান করছো যেনো তুমি নূরকে ভালোবাসো না?
“রেহেনা খান রেগে বললেন- একটা চরিএহীন মা আর বাবার মেয়েকে ভালোবেসে আমি কি করবো?ওই মেয়েকে কালকেই বিদেয় করবে।অনেক তো লালন-পালন করলাম ওই পাপীদের সন্তানকে আর কত আর যে পারি’না।ওকে দেখলেই আমার অতীতের সব কথা মনে পরে যায়।

“লেয়ান জামান রেগে উনার ওয়াইফের গালে চ*ড় লাগালেন আর বললেন- তুমি আর মানুষ নেই রেহেলা খান।ভেবেছিলাম তুমি মেয়েটাকে ভালোবাসো কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম।হ্যা সে আমাদের মেয়ে না শায়লা আপা আর আহান চৌধুরের মেয়ে তো তাতে কি?আমরা ওকে বড় করেছি আমাদের শিক্ষায়।তাই ও আমাদেরই মেয়ে।
~ উনাদের সব কথা শুনে আমার দুনিয়া থমকে গেলো আর আমি সেসব কথা নিতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

~ যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি আব্বুর রুমে নিজেকে পায়।উনি কান্না করছেন আর আম্মু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কান্না করছেন।আমার তখনের সব কথা মনে পরতেই মন আমার বি’ষে গেলো।কি বলবো?কি করবো বুঝতে পারছিলাম না মানসিক ভাবে এক্কিবারে ভেঙ্গে পরলাম।কান্না করতে ইচ্ছা হলো তবে কাঁদতে পারছিনা।আহা কাঁদতে চাইলে যে কাঁদতে না পারার কষ্টটা আমি সেদিন বুঝেছিলাম।নিজেকে সেদিন আমার পাথর মনে হয়েছিলো।
“আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললাম- আমার আসল বাবা-মা কারা আব্বু?

“আমার কথায় আব্বু শব্দ করে কেঁদে উঠলেন আর বললেন- প্লিজ মাই প্রিন্সেস এসব বিশ্বাস করিও না!তুমি আমাদেরই মেয়ে।
“আমি আবারও স্বাভাবিক গলায় বললাম- আব্বু শাক দিয়ে আর মাছ ডেকে যে লাফ নেই।আমি সব শুনেছি!আর আমি সত্যটা জানতে চাই।
“আমাদের কথার মাঝে আম্মু বলে উঠলেন- তুই একজন মেয়ে ব্যবসা’কারি’নী মা আর আর একজন দু’শ্চরিএ বাবার সন্তা’ন…বলেই উনি আমার সব কালো-অতীত বলতে লাগলেন।

~~~ আমি নিজের কালো-অতীত জেনে বিস্মিত হলাম।ঘৃণায় রাগে দুঃখে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি।মনে হচ্ছে হয়তো এক্ষুণি আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।এসব মিথ্যা হয়ে যাক সেটাই তখন মনে মনে ভাবছিলাম।আমি আর কথা গুলা শুনতে পারছিলাম না।তাই উনাদের দিকে আর না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।এখন আমার কি করা উচিত বুঝতেছিলাম না।কিন্তু ভীষণ ভাবে ইচ্ছা হচ্ছিছিলো ম’রে যেতে।এসব আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম।সে-সব কথা মনে পরতেই আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরছিলাম বার বার।
~ বর্তমান ~

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১৩

“আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক শান্তনা দিলেন।তবে আমি শুধু বললাম- আমার একটু একা থাকা প্রয়োজন।আব্বু আমার কথা শুনে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলেন।আর আমি আবারও বিছানায় লা’শের মতো শুয়ে থাকলাম….

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১৫

2 COMMENTS

Comments are closed.