অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৬

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৬
লেখিকা:- তারা ইসলাম

সকাল সকাল ডাইনিং রুমে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে রেয়ান চৌধুরি আর ফারিয়া চৌধুরি।তারা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলো তখন রেয়ান বললো- বোন আমার এখনো মন খারাপ?
“ফারিয়া ভাইয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তবে কিছু বললো না।
“রেয়ান বললো- আমি কথা বলেছিলাম রুদ্রর সাথে।সে বলেছে তার বর্তমান ওয়াইফকে ডিভোর্স দিবে না।
“কথাটা শুনে ফারিয়ার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো তারপর রেগে বললো- ভাইয়া আমি কিছু শুনতে চাইনা।আমার রুদ্রকে চাই মানে চাই ব্যস।

“রেয়ান শান্ত দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো- আর আমার নূরময়ীকে।
“রেয়ানের কথা ভ্রু কুঁচকে এলো ফারিয়ার তাই বললো- মানে?
“রেয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- ও কিছু না তোর রুদ্রকে চাই তো?ঠিক আছে তাই হবে।
“ফারিয়া কিছুনা বলে খেতে লাগলো তার কিছু ভালো লাগছে না।তিনটা বছর ধরে সে রুদ্রকে ভালোবেসে আসছে।এত সহজে কি তাকে ভুলে যাওয়া যায়।সে বিয়ে করেছে যেভাবে হোক করেছে তো।কিন্তু সে রুদ্রকে ভুলে যেতে পারছে না।তাই যে কোনো ভাবেই থাকে চাই চাই।
“রেয়ানের চোখে বার বার নূরের চেহেরা ভাসছে।সে আর নিতে পারছে না এমন দুরুত্ব।তার যে নূরময়ীকে চাই।সে এই বিষয়ে সরাসরি নূরের সাথে কথা বলবেই বলবে।তাদের বিয়েটা যখন একটা ভুল বুঝা-বুঝির কারণে হয়েছে নিশ্চয় সে বিয়েটা থেকে বের হয়ে আসতে চাই।এসব ভেবেই রেয়ান মনে মনে হাসলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নূরের মা তুমি কি আর খুঁজ-খবর নিবে না মেয়েটার।আর কতদিন এভাবে চলতে থাকবে।ছোট থেকে তো লালন-পালন করেছো।মেয়েটা কয়বার কল দিয়েছে তোমাকে আর আমাকে।কল ও রিসিভ করো’নি।তুমি এত নিষ্টুর কেন হয়ে যাচ্ছো?মেয়েটার জন্য যে তুমি আড়ালে কান্না করো তা কি আমি জানি না ভেবেছো?
“রেহেলা খান খাবার পরিবেশন করছিলেন।স্বামীর কথা শুনে চমকে গেলেন।তারপর দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে বললেন- আগেও বলেছি এখনও বলছি ওই মেয়ের মা না আমি।আমি শুধুমাত্র লিয়নের মা।আর আমি শুধু দায়িত্ব পালন করেছি কাউকে কথা দিয়েছিলাম তাই ভালোবাসে লালন-পালন করি’নি।ওর জন্য আমি কেন কাঁদতে যাবো।

“লেয়ান জামান বললেন- তুমি কি আমাকে শিখাতে চাচ্ছো?মেয়েটাকে কি তুমি ভালোবাসো না?
“রেহেলা খান ছলছল চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন- ভালোবেসে কি হবে সে তো আর আমার পেটের সন্তান না।সে যার সন্তান তারই সন্তান।আমার তো আর না বলেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
“লেয়ান জামানের চোখে পানি চলে আসলো সে জানে রেহেলা খান নিজেকে যত কঠোর,নিষ্টুর দেখায় না কেন সে নূরকে প্রচণ্ড ভালোবাসে।তবে সেটা প্রকাশ করে না।হয়তো তার অতীতের কথা গুলা বার বার মনে পরে যায়।

রুদ্র রাগি চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।আর নূর ভয়ে কাঁপছে।নূর গোসল করতে গিয়েছিলো মাত্র শাড়ি খুলে একপাশে রেখে ব্লাউজ খুলার আগেই ওয়াশরুমের দরজা ঠাস করে খুলে গেলো আর দেখতে পেলো রুদ্র জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে আসছে।রুদ্র নূরের এইরকম অবস্থায় দেখে চমকে তাড়াহুড়ো করে চোখ সরিয়ে নিলো।আর এইদিকে নূর লজ্জায় ভয়ে তাড়াতাড়ি গায়ে শাড়ি জড়িয়ে নিলো।
“নূরের অবস্থা ঠিক আছে বুঝতে পেরে রুদ্র তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো- তোমার কি কোনোদিন বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না।ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ না করে গোসল করতে চলে এলে?তুমি আসলেই একটা হা*দা।
“নূর ভয়ে ভয়ে বললো- বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না আপনি এই সময়ে আসবেন।আপনি তো এই সময়ে বাসায় আসেন না।আর আমি ভুলে গিয়েছিলাম দরজা বন্ধ করতে বলেই কেঁদে দিলো।
“রুদ্র রেগে বললো- আল্লাহ!তুমি এত কথায় কথায় কেঁদে দাও কেন?ভুলে গেছো মানে?মাথায় ছিট আছে?আর যদি এমন হয় দেখবে একদম ঠু*কে দিবো।

“নূর মুখে হাত চেপে কান্না করতে করতে বললো- আর জীবনেও হবে না।
“রুদ্র এবার শান্ত হলো।তারপর কি মনে করে যেনো নূরকে স্কেন করে থমকে গেলো।এক্কিবারে এলোমেলো মেয়েটা এর কখন বুদ্ধিশুদ্ধি হয় সেটা আল্লাহ ভালো জানেন।
“নূর এবার কান্না বন্ধ করে হেচকি তুলতে লাগলো।রুদ্র ওকে এখনো দেখে যাচ্ছে কান্না করার ফলে নাক,চোখ,গাল লাল হয়ে গেছে।তার হটাৎ নূরের এই কান্নাময় মুখশ্রী দেখতে বেশ ভালো লাগলো।সে হুট করে নূরের দিকে এগিয়ে গেলো।নূর নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো বলে খেয়াল করে’নি!কিন্তু যখন বুঝতে পারলো উনার আর তার দুরুত্ব কমে গেছে।তখন সে উপরে তাকাতেই যেনো থমকে গেলো।দুটো ঘোর লাগা দৃষ্টি তার মধ্যে আবদ্ধ।তার হটাৎ অস্বস্তি লাগলো তাই রুদ্রকে পাশ-কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রুদ্র তাকে হাত ধরে আটকায়।এতেই যেনো সে শকড তারপর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে অনেকটা সাহস নিয়ে বললো- ছা…ড়ু…ন।
“রুদ্র ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো- বলেছিলাম না এইরকম অবস্থায় আমার সামনে না আসতে?
“নূর এবার কাঁপা কাঁপা চোখে রুদের দিকে তাকালো তবে কিছু বললো না।

“রুদ্র তাকে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো।এতে দুইজনেই ভিজে একাকার।
“নূর কাঁপা কাঁপা হাত দুটো রুদ্রের বুকে রাখলো।ভয়ে সে বরফের নায় জমে গেলো।কি হচ্ছে কেন হচ্ছে?সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।রুদ্রর এমন বিহেভ সে মেনে নিতে পারছে না।সে তো সব সময় রুদ্রকে রাগি মুডি গম্ভীর অহংকারী ভেবেছিলো।
“রুদ্র এখনো ঘোরের মাঝেই আছে সে এক মনে তাকিয়ে আছে নূরের ভীতু মুখশ্রীর দিকে।শাড়ি ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে।রুদ্র নিজেকে অনেক সামলাতে চেয়ে ও না পেরে নূরের কাঁপা ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেললো।
“নূরের সাথে আচমকা এমন হওয়াতে সে পাথরের নায় দাঁড়িয়ে রইলো।
“রুদ্রের যখন হুশ আসলো তখন সে ছিটকে দূরে সরে এলো নূরের থেকে।
“নূর লজ্জায় আর রুদ্রের দিকে তাকালো না।নূর এখন ভয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে।

“রুদ্র নিজেকে শান্ত করে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো- আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ!আমাদের মাঝে এসব হওয়া স্বাভাবিক।তাই এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিবে।আমি কোনো মহাপুরুষ না যে নিজের বউকে এই অবস্থায় দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো।আর হ্যা নেক্সট টাইম থেকে যদি আর এই এলোমেলো অবস্থায় দেখি তাহলে আজকের থেকে ভয়ংকর কিছু করবো বলে উনি চলে গেলেন।
“উনি যেতেই আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে নিচে বসে পরলাম।আমার সাথে কি হয়ে গেলো তা বুঝতে পারলাম না।নিজের ঠোঁটে হাত দিতেই চমকে গেলাম মনে মনে ভাবলাম আমি জ্ঞান হারায়নি কেন উনাকে দেখলে যেখানে আমি জ্ঞান হারাতাম।সেখানে এত কিছু হয়ে গেলো আমি জ্ঞান হারালাম না।আমি কি উনার প্রতি দূর্বল হয়ে পরছি।দাদির কথা মতো ভালোবেসে ফেলছি।ভাবতেই বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।তারপর এক-প্রকার লজ্জা নিয়েই গোসল শেষ করলাম।

রেয়ান এক মনে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে সে কিছুক্ষণ আগেই নূরের ভার্সিটির সামনে এসেছিলো।এক নজর তার নূরময়ীকে দেখার জন্য।আর দেখা পেয়েও গেলো।সে হাসতে হাসতে ঝালমুড়ি খাচ্ছে।সে গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নূরকে দেখতে লাগলো।তার কিছুক্ষণ পর সে হেটে নূরদের কাছে গেলো তবে কিছুটা দুরুত্ব রেখে দাঁড়ালো।আর ঝালমুড়ি ওয়ালাকে বললো ঝালমুড়ি দিতে।সে জীবনেও এভাবে ঝালমুড়ি খাইনি।সে ঝাল খেতেই পারে না।তারপর ঝালমুড়ি তার হাতে আসায়।সে নূরের দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো।তবে মেয়েটার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সে আছে তার মতো আড্ডা দিতে।
“এক সময় রেয়ানের ঝাল লেগে উঠলো।তার কাশি শুরু হয়ে গেলো ভুল করে সে কাঁচা মরিচ খেয়ে ফেলেছে।
“তার কাশি দেখে নূর আর মারিয়া তার দিকে ফিরে তাকালো।নূর অবাক হলো কারণ সে আজাইরা ছেলেটা।কিন্তু তার এমন কাশি দেখে সে দ্রুত তার কাছে থাকা পানির বোতল টা রেয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো।রেয়ানের কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ।সে তাড়াহুড়ো করে নূর থেকে বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে ফে’ল’লো।

“তারপর সে স্বাভাবিক হতেই নূর জিজ্ঞাস করলো- ভাইয়া আপনি ঠিক আছে?
“রেয়ান নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো- আমি ঠিক আছি নূরময়ী।
“নূর কিছুটা অবাক হয়ে বললো- নূরময়ী মানে?
“রেয়ান বললো- তোমার নাম নূর।তাই তোমাকে নূরময়ী বলে সম্মোধন করছি।
“নূর ভ্রু কুচকে বললো- আপনি আমার নাম জানেন কিভাবে?আর দয়া করে এই নামে আমাকে সম্মোধন করবেন না।

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৫

“রেয়ান হালকা হেসে বললো- কিছু কিছু কথা না জানায় ভালো নূরময়ী।তারপর সে একমুহুর্ত না দাঁড়িয়ে গাড়ির কাছে চলে আসলো।তার নূরের প্রতি অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে।সেখানে থাকলে সে সেটা সামলাতে পারবে না তাই দ্রুত চলে আসলো।
“নূর আর মারিয়া একে-অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উটলো।
“মারিয়া বললো- ব্যাটা নিশ্চয় তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে?
“আমি তার কথা শুনে বললাম- তাতে আমার কি?আমি তো বিয়াইত্তা বলেই আবার খিলখিল করে উঠলাম…..

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৭