অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১০

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১০
লেখিকা:- তারা ইসলাম

“সকাল নয়’টা আমি গোসল করে ভালো একটা লাল বেনারসি শাড়ি পরলাম।কারণ আজ তানিয়া ভাবির আম্মু আর বোন আর খালামনি আসবেন।তাই এত সকাল সকাল রেডি হওয়া।মির্জা সাহেব অনেক আগেই নিজের কাজের জন্য বের হয়ে গেছেন।উনার সাথে আমার মান-অভিমানটা কমে’নি বরং আরও বেড়েগেছে।আজব ব্যাপার হলো আমাদের প্রতিদিন কোনো না কোনো ভাবে ঝগড়া হয়।এর কারণ এখনো আমি খুঁজে বের করতে পারি’নি।উনিও আগের থেকে কেমন জানি রসিক হয়ে গেছেন।পায়ের ওপর পা দিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করেন।যখন-তখন আমাকে ডিস্টার্ব করেন।উনার চরিএ থেকে আলাদা বিহেভ করেন আমার সাথে।সেসব কথা আমি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে রান্না ঘরের দিকে চলে আসলাম।

“রান্না ঘরে শাশুড়ি মা আমাকে দেখে বললেন- প্রতিদিন শাড়ি পর তবে আজকে একদম বউ বউ লাগছে।এই জন্যই বলি সব সময় একটু সেজে-গুজে থাকবা পুতুল পুতুল লাগে বলে ললাটে হাসলেন।
“উনার কথা শুনে আমি খিলখিল করে হেসে উঠে বললাম- এখন থেকে না-হয় সেজে-গুজে থাকবো প্রতিদিন।আমার কথা শুনে শাশুড়ি মা হাসলেন।তবে কিছু বললেন না।
“এরই মধ্যে দাদি এসে বললেন- মেজো নাতবউ?(এখন উনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন।উনার সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।তাই উনি আমাকে মেজো নাতবউ বলেই সম্মোধন করেন)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি দাদির দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম- বলুন দাদি?
“দাদি আশে-পাশে তাকিয়ে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন- তোমারে অনেক মোটা লাগিতেছে আগের থেইক্কা।পে’টে বা’চ্চা আইছে’নি?
“দাদি কথায় আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো সাথে সাথে সেখানে তাকা একটা আয়নায় নিজেকে দেখে নিলাম হ্যা আগের থেকে একটু স্বাস্থ্যবান হয়েছি।তাই বলে দাদি এভাবে বলবেন।
“আমি কোমড়ে হাত দিয়ে দাদির দিকে মুখ কালো করে তাকিয়ে বললাম- এত শখ নাতীন ঘরের পু’তিন পা’লার?

“দাদি দাঁত বের করে হেসে বললেন- ওই আরকি তোমাগো পোলা-মাইয়া তো আমরাই পালমু।তাই কইতাছি কি বেশি দেরি কইরো না বা*চ্চা একটা লইয়া নাও!
“আমি উনার কথা শুনে এবার খিলখিল করে হেসে উঠে উনার গাল টেনে বললাম- আপাতত মোটা হয়েছি দাদি।বা*চ্চা টা’চ্চা কিছু হয়’নি।আর যদিও হয় আগে তোমারে কমু বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম।
“আমার কথা শুনে দাদিও হাসলেন।তারপর কাজ করার পাশা-পাশি আমরা অনেক গল্প করলাম।

“সন্ধ্যার দিকে তানিয়া ভাবির আম্মুরা চলে গেলেন।তানিয়া ভাবি যেমন ভালো উনার পরিবার ও ঠিক ততটা ভালো।উনার আম্মুকে দেখে আমার নিজের আম্মুর কথাও বেশ মনে পরে গেলে।
“আমি অনেক কান্না করলাম।আম্মু আব্বু ছোট ভাইকে খুব মনে পরছে।তাদের দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু তার সাধ্য আমার নেই।আমি ফোন ও করেছিলাম কিন্তু আমার নাম্বার ব্লক করা।ভাবতেই আবার কেঁদে উঠলাম।
“আমি গহনা গাঁটি খুলে ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।আজকে মারিয়া এখানে নেই তার চাচা মানে শশুড় বাড়িতেই আছে।
“আমি সন্ধ্যায় পড়তে বসলেও রাত নয়’টার দিকে উঠে গেছি।আর উঠে সারা-ঘর টো টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

“কিন্তু কলিংবেলের শব্দ পেয়ে আমি রিনি ভাবির আগেই দরজা খুলে দিলাম!আর দরজা খুলতেই দেখলাম শশুড় বাবা,রুদ্র,আর বড় ভাইয়া আমি হেসে উনাদের ঠুকতে দিলাম।সবাই ভালোভাবে ভেতরে আসলেও রুদ্র আমার মাথায় হালকা ঠোকা দিলো যাতে আমি প্রচুর বিরক্ত অনুভব করলাম।উনার এখন এমন হুট-হাট করা কাজে আমি তাজ্জব বনে যায়।তাই রেগে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে ঠোঁট দিয়ে চুমু দেখালেন।যাতে করে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।উনি দিন দিন চরম-অ’সভ্য হয়ে যাচ্ছেন।

“রাতের খাওয়া দাওয়া করে রুমে ডুকতেই দেখলাম উনি ফাইল নিয়ে বসে আছেন।আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য আলমারি থেকে কাপড় নিতে গেলে হটাৎ মাথায় দুষ্টুমি খেলো গেলো।আর মনে পরে গেলো দাদির সে কথাগুলা।উনি এখন আমাকে প্রচুর জ্বা’লান!তাই আমিও ভাবলাম একটু জ্বা’লাবো।আর জ্বা’লালেও বা কি?মে’রে’তো আর ফে’লবেন না?
“তাই মনে মনে অনেক সাহস করে উনার পাশে বিছানায় ঘুমানোর জন্য রাখা কাপড় গুলা রাখলাম।আর শাড়ি পালটাতে শুরু করলাম।উনি আমাকে প্রথমে খেয়াল করেন’নি!কিন্তু পরে খেয়াল করতেই বিছানা থেকে উঠে পরলেন!আর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রেগে চিল্লিয়ে বললেন- এখানে কাপড় চেঞ্জ করার মানে কি?

“আমি উনার কথার উত্তর না নিয়ে পুরোপুরি ভাবে শাড়িটা খুলতেই উনি পিছনে ফিরে গেলেন।উনার এমন কাজে মনে মনে বললাম- ঢং দেখে আর বাঁচি না।আসছে সাধু মিয়া!বলেই ভেংচি কেটে মুখে বললাম- আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে চেঞ্জ করবো আপনার অসুবিধা হলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।বলেই আমি কাপড় বদলানোতে মন দিলাম।কিন্তু আচমকা উনার আক্রমণে আমি থমথম খেয়ে গেলাম।

“অগ্নি চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছেন।আমি রেগে বললাম- বলেছিলাম না আমার কাছে না আসার জন্য?
“আমার কথা শেষ হতেই উনি দ্রুত আমার কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বললেন- হ*রি*ণ যদি নিজেই হেটে বা*ঘে’র কাছে আসে বা*ঘ তো কা’মড় দিবেই।
“উনার এমন অশ্লীলতাপূর্ন কথা শুনে আমার চোখ ছলছল করে উঠলো।আর আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম- আপনার মতো অ’সভ্য আর নেই।
“উনি আমার চেহেরা গভীর ভাবে দেখে নিয়ে হাহাহা করে হেসে উঠলেন।তারপর আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে মুখোমুখি হয়ে বললেন- অ’সভ্য কেন হতে যাবো।যা করেছি জামালেময় বিয়ে করা নিজের বউের সাথে করেছি।
“আমি রেগে উনার থেকে ছাড়া পেতে চাইলে উনি আরও শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন- ঘুমন্ত বা*ঘ*কে যখন জাগিয়ে দিয়েছো তখন তার সেবাও তুমি করবে।বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন।

“আমি রেগে উনার বুকে ঘু’ষি মে’রে বললাম- কখনো না আজ আমি আর ধরা দিচ্ছি না!বলেই উনার থেকে ছুটার চেষ্টা করলাম।তবে ব্যর্থ হয়ে উনার বুকের সাথে মিশে রইলাম।
“উনি হটাৎ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- যাও আজকে ছাড় দিলাম তোমায়।তবে চলো আজকে আকাশ-বিলাস করি?
“আমি উনার বুক থেকে মাথা তুলে বললাম- আকাশ-বিলাস মানে?
“উনি মেয়েদের মতো করে খিলখিল করে হেসে উঠে বললেন- সবাই তো জোৎস্না-বিলাস বলে তাই আমি ভিন্ন ভাবে আকাশ-বিলাস বলছি।

“উনার কথায় আমি হাসলাম তারপর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে আসতেই দুইজন মিলেই বারান্দাতে আসলাম।আমরা অনেকক্ষণ নানান ধরনের গল্প করতে লাগলাম।কিন্তু আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পারায় নিচে বসে পরলাম।আমার দেখা-দেখি উনিও বসে পরলেন।তবে উনি বসতেই উনাকে অবাক করে দিয়ে উনার কোলে মাথা রাখলাম।উনি প্রথমে চমকে গেলেন তবে পরে নিজেকে সামলে আমাকে আগলে নিলেন।
“উনি বললেন- কালকে তো ছুটির দিন ঘুরতে যাবা কোথাও?
“উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম- যাবো!কোথায় নিয়ে যাবেন?
“উনি বললেন- চলো কালকে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।
“আমি হেসে বললাম- ঠিক আছে।

“উনি আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন- কালকে দিনটা শুধু তোমার-আমার।
“উনার কথা শুনে লাজুক হাসলাম।
“উনি হটাৎ বললেন- তোমার জীবনে কি আগে কোনো পুরুষ ছিলো?
“আমি হেসে বললান- না!
“উনি বললেন- কেন?
“কারণ আমি এসব একদম পছন্দ করতাম না।তারপর হেসে মজা করে বললাম- ক্লাস সেভেন থেকে তো আপনিই আমার ছোট-খাটো ক্রাশ ছিলেন।আমার কথা শুনে উনি শব্দ করে হেসে উঠলেন।
“তারপর আবার আমি উনাকে জিজ্ঞাস করলাম-আপনার জীবনে কি আগে কোনো মেয়ে ছিলো?

“উনি আলতো হেসে বললেন- হুম ছিলো একটা-দুটোর উপরে!লাস্ট রিলেশন ছিলো তিন-বছর আগে।এরপর আমি আর রিলেশনে যাওয়ার আগ্রহ পাই’নি।
“উনার কথা শুনে চোখ আমার ছলছল করে উঠলো।ভাবতেই কষ্ট হলো উনার জীবনে আগেও কেউ ছিলো।আমি অভিমান করে উনার কোল থেকে মাথা তুলে চলে আসতে নিলে উনি আমাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলেন আর বললেন- তখন তো বউ ছিলো না!তাই ওরা আমার জীবনে আসতে পেরেছিলো।কিন্তু এখন তো বউ আছে!তাই দুনিয়া এদিক-ওদিক হলেও তারা আমার জীবনে আর জায়গা পাবে না।
“উনার কথায় শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।উনি আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন- কিছু বলতে নেই তোমরা মেয়ে জাতিকে।কিছু বলতেই প্যাচ-প্যাচ করে কান্না শুরু করে দাও।

“উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে হুট করে আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম- আমি সব সহ্য করতে পারবো।কিন্তু অন্য-মেয়ের সঙ্গে আপনাকে কখনো সহ্য করতে পারবো না।আপনি আমার হাসবেন্ড আপনার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবো না।জানেন কেন আপনি আমার কাছে সুপুরুষ কারণ আপনি এখনো আমার সাথে ছলনা করেন’নি।আমাদের মাঝে হাসবেন্ড ওয়াইফের মতো সম্পর্ক চলতেও’কখনো ভালোবাসি বলে মিথ্যা নাটক করেন’নি।এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।
“উনি আমার কাজে প্রথমে থমকে গেলেন।কিন্তু মুচকি হেসে আমাকে জরিয়ে ধরে বললেন- আমি শুধুমাত্র তোমার।
“আর আমাকে হালকা টিজ করে বললেন- এই না হলো বাঙালী নারী।
“কিন্তু তারপর আবারও সিরিয়াস হয়ে বললেন- হয়তো এখনো তোমাকে ভালোবাসতে পারি’নি।কিন্তু একদিন না একদিন ভালোতোবাসতেই হবে।
~ সে রাতটা আমরা আকাশ-বিলাস করেই পার করলাম।

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৯

সকাল বেলা রুদ্রর ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে নূরকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফে’ললো।কারণ আজকে ছুটির দিন সব বন্ধ না হলে নূরকে কখনোই ঘুম থেকে উঠে তার পাশে পাইনা।যাতে করে সে প্রচুর রেগে যায়!রুদ্র নূরকে স্কেন করতে লাগলো~তার হাতের কাছে নূরের মাথা আর পা দুটো বিছানার বাহিরে।কাপড়ের যাতা-অবস্থা!রুদ্র মনে মনে হাসলো এমন এলোমেলো বউ তার কপালেই ছিলো।কিন্তু আগে সেটা নিয়ে আফসোস করলেও এখন তার অভ্যাস হয়েগেছে।তার বউের জায়গায় একমাত্র সে নূরকেই ভাবতে পারে।বাকি কাউকে এক্কিবারের জন্যই ভাবতে পারে না।
“রুদ্র নূরকে ঠিক ভাবে শুয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমাতে চেষ্টা করলো…….

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১০