অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ২

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ২
লেখিকা:- তারা ইসলাম

রাত তখন কতটা গভীর হয়েছে জানা নেই।আমি চোখ খুলতেই মাথা ব্যথা করে উঠলো।মনে পরলো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।উনি আমার মাথায় পি*স্ত*ল রাখতেই আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।তারপর থেকে আর কিছু মনে নেই।আমি ভালোভাবে আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার পাশে বিছানায় বসে আছেন।আর পি*স্ত*ল নিজের কপালে ঠে*কা*নো তবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
“আমি ভয়ে ভয়ে বললাম- দয়া করে আমাকে অকালে কবরে পাঠাবেন না মির্জা সাহেব(উনাকে আমি মির্জা সাহেব বলেই সম্মোধন করি)

“উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন- তোমার মতো একটা আধ-পা*গ*ল পা*ব*না থেকে আসা রো*গীকে যে আল্লাহ আমার কপালে রাখবেন সেটা আমি জীবনেও ভাবি’নি।তুমি যদি আজ জ্ঞান না হারাতে তাহলে এতসব ড্রামা হতো না।
“উনার কথা শুনেই মুখ চেপে ধরে কেঁদে উঠলাম।
“উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন- এই পা*গ*ল তোমার চোখের সাথে কি সমুদ্রের কন্ট্রাক্ট আছে।এত কেমনে কাঁদতে পারো?কান্না বন্ধ করো।আরেকবার যদি আমার সামনে জ্ঞান হারাও তখন একদম পি*স্ত*ল দিয়ে ঠু*কে দিব।বলে রাখলাম!
“উনার কথা শুনে ভয়ে আমি দ্রুত শ্বাস নিতে লাগলাম মনে হলো এখনই আমি মা’রা যাবো।আমার এইরকম অবস্থা দেখে উনি রেগে আমার দিকে তাকালেন তারপর একটা গ্লাসে পানি ঢেলে গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।উনার থেকে গ্লাসটা নিয়ে আমি পুরো গ্লাসের পানি খেয়েনিলাম।তারপর একটু শান্ত হলাম।
“আমি শান্ত হতেই উনি বললেন- বিয়েটা যখন হয়েছে তখন আমাদের একসাথে মানিয়ে নিতে হবে।আমি ডিভোর্স দিয়ে তোমার জীবন নষ্ট করতে চাইনা!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমারও বোন আছে।আর দ্বিতীয় তো আমার জীবনে থাকতে হলে কিছু রুলস মেনে চলতে হবে।মন দিয়ে শুনো তুমি এখন মির্জা পরিবারের বউ।আর তুমি নিশ্চয় জানো এই মির্জা বংশের বউ গুলা কেমন।একদম লাফালাফি”দুষ্টুমি,বাচ্চামো আমি সহ্য করবো না।আর সবচাইতে বড় কথা কোনো ছেলে ফ্রেন্ড রাখা যাবে না।এমনকি কোনো ছেলে কাজিনের সাথেও কথা বলতে পারবা না।বোরকা ছাড়া বাসা থেকে বের হতে পারবে না।আর পড়ালেখা করবে ঠিক আছে কিন্তু সংসার ও সামলাতে হবে।যেভাবে আম্মু আর ভাবিরা সামলায়।বুঝেছো?

“উনার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম মনে মনে ভাবলাম এর চাইতে তো জেলখানা ভালো ছিলো।আমি জীবনে ও ভাবি’নি এই সংসার টংসারের কথা।আম্মু আমাকে পছন্দ না করলেও কোনোদিন দাসীর মতো রাখেন’নি সংসারের তো অনেক কাজ আল্লাহ আমি তো কাজ-টাজ কিছু জানিনা বললেও চলে।আর উনি কি বললেন লাফালাফি না করার জন্য এইগুলা তো আমার র*ক্তে মিশে আছে এইগুলা কিভাবে বদলাবো।এসব ভেবেই আবার কেঁদে উঠলাম।
“উনি আমার কান্না দেখে বিরক্তি নিয়ে বললেন- এখন কান্না করছো কেন?
“আমি কেঁদে কেঁদে বললাম- আমি তো কাজ-টাজ কিছুই জানি না ভালোভাবে নিজের কাপড় গুলাও ধুতে জানি না।
“উনি এবার রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন- জানো না যখন শিখে নিবে।
“আমি কিছু না বলে কাঁদতে লাগলাম।

“আমার কান্না থামছে না দেখে উনি বড় একটা ধমক দিয়ে বললেন- কান্না থামাও আর ফ্রেশ হয়ে এসো।এমন ময়লা জামা কাপড়ে তোমাকে আমি আমার বিছানায় জায়গা দিবো না।কি হলো?যাও।
“উনার ধমকের সাথেই সাথেই আমি তাড়াহুড়া করে উঠে দাঁড়ালাম।মনে হচ্ছিলো জ্ঞান হারাবো কিন্তু উনার ভয়ে তাও করতে পারছিলাম না।
“আম্মু বাসায় গিয়েই আমার জামা-কাপড় বই-খাতা যাবতীয় সব জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।আমি আমার ব্যাগ থেকে একটা ঘুমানোর জন্য জামা নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে গেলাম।
“কয়েক-মিনিট পর আমি ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।প্লাজু পেন্ট,আর একটা লম্বা ঢিলে-ঢালা শি-র্শাট আর উড়না।
“আমি বের হতে দেখলাম উনি অন্য-পাশ ফিরে শুয়ে আছেন।আমি কোথায় ঘুমাবো সেটাই ভাবছিলাম।যদি উনার পাশে শুয়ে পড়ি তাহলে নির্ঘাত জ্ঞান হারাবো হয়তো।এসবই ভাবছিলাম তখন উনি হুট করে আমার দিকে তাকালেন।উনার তাকানো দেখেই আমি কেঁপে উঠলাম।

“উনি আমাকে পুরোপুরি ভাবে স্কেন করে বললেন- এসব জামা আবার বাহিরে পরতে যেও না।আগে পরতে তখন অন্য কথা এখন তুমি বিবাহিত আর রুদ্র মির্জার ওয়াইফ সেটা মনে রাখবে।আর আমার পাশে শুয়ে পড়।
“আমি উনাকে মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বুঝালাম।তারপর উনি আবার অন্য-পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন।
“আমি আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলাম অনেক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে শুয়ে পড়লাম।আমাদের মাঝে বেশ দুরুত্ব।আমি শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছি আমার ঘুমের মধ্যে উল্টাপাল্টা করার অভ্যাস আছে।প্রায় আমি এপাশ-ওপাশ করতে করতে বিছানা থেকে পড়ে যায়।ক্লান্ত এসে ভর করলো শরীরে।আর ঘুম হানা দিলো চোখে।

সকাল সকাল কারো ধা*ক্কা*নোতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো রুদ্রর।কিন্তু যখন চোখ খুলে ভালোভাবে দেখলো যে তাকে কেউ ধা*ক্কা দে’নি বরং নূরের দুইপা তার ওপর দেওয়া আর তার মাথা বিছানার শেষের দিকে আরেকটু হলেই পরে যাবে।রুদ্র বিরক্তি নিয়ে নূরকে ঠিক করতে যাবে তখন তার চোখ যায় এলোমেলো নূরের দিকে।নূর ধবধবে ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে।মোটামুটি ফিট আছে না মোটা না শুকনা।তার জামা কাপড় একদম এলোমেলো।পেন্ট হাটু পর্যন্ত উঠে গেছে জামা উপরে উঠে অনেকটাই পেট বের হয়ে আছে।রুদ্র চোখ সরিয়ে নিলো!নূর বেশ আবেদনময়ী তাই সে দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে উঠে ওয়াশরুমের চলে গেলো।নূরকে আর ডাকলো না।

“বিছানা থেকে পরে যেতেই নূরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।এটা নতুন না তাও সে কোমড় ধরে আশে-পাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো মনে মনে ভাবলো সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে।কিন্তু ওয়াশরুম থেকে রুদ্রকে বের হতে দেখে তার গতকালকের সব ঘটনা মনে পরলো।
“নূরকে নিচে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে রুদ্র বললো- এই রো*গী এভাবে নিচে বসে আছো কেন?
“আমি উনার কথা শুনে ভয়ে ভয়ে আর মুখ কালো করে বললাম- আসলে আমি বিছানা থেকে পরে গেছি।
“আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ তাকলেন তারপর হালকা হেসে ঠোঁট কামড়ে বললেন-এমন পা*গ*ল যে আমার কপালে ছিলো তা আমার জানা ছিলো না বলেই রুম ত্যাগ করলেন।
“উনার কথা শুনে মন খারাপ করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

~~~~~~~ ফ্রেশ হয়ে এসে আমি একটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে নিলাম।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আন্টি মানে যে এখন আমার শাশুড়ি উনি আর ভাবি আসলেন মানে মারিয়ার বড় ভাবি।
“উনাদের হাতে কিছু শাড়ি আর গহনা।প্রায় ছয়-সাতটা শাড়ি হবে।
“শাশুড়ি মা বললেন- কেমন আছো নূরমনি(উনি আমাকে এভাবেই সম্মোধন করেন)
“আমি বললাম- আমি ভালো আছি আন্টি আপনি ভালো আছেন।আসলে আন্টি স্যরি আমি জানতাম না এতসব ঘটনা ঘটে যাবে- মনে খারাপ করে বললাম।
“শাশুড়ি মা মুচকি হেসে বললেন- তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত।আমি মনে মনে এটাই চেয়েছিলাম।তবে রুদ্রের ভয়ে কিছু বলিনি।আর আমাকে আন্টি নয় আম্মু কিংবা মা বলেই ডাকবে।
“আমি মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বুঝলাম।
“তখন ভাবি বললেন- তোমাকে আমি ছোট বলেই ডাকবো কেমন।
“আমি হেসে বললাম- ঠিক আছে ভাবি।
~~ তারপর শাশুড়ি মা বললেন- এ বাড়ির সব বউদের শাড়ি পড়তে হয়।আজ থেকে তুমিও পড়বে।আর এই নাও এখানে অনেক গহনা আছে এসব আমি অনেক আগেই বানিয়ে রেখেছিলাম মেজো ছেলের বউএর জন্য।এখন যখন তুমিই তার বউ তখন এসব তোমার।

“আমি উনাদের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম- আমি তো শাড়ি পড়তে জানি না।না গহনা পড়তে পছন্দ করি।
“ভাবি হেসে বললেন- সে আমিও ছিলাম তোমার মতো।কিন্তু এখন দেখো এইগুলা না পড়লে ভালোও লাগে না।তারপর শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন- আপনি যান মা আমি ওকে রেডি করিয়ে আনছি।তারপর শাশুড়ি মা চলে গেলেন।
~~~ তারপর ভাবি আমাকে লাল একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।ঠিকভাবে পিনও করে দিলেন যাতে শাড়ি খুলে না যায়+পড়ে যেন না যায়।তারপর হাতে মোটা বালা,সুন্দর করে হিজাব করা তার উপর টিকলি দেওয়া। আর শেষে নাকফুল ব্যস রেডি।ভাবি আমার শাড়ি আরও ঠিক করে দিতে দিতে বললেন- জানো কপাল খারাপ তোমার আর আমার।নাহলে কি এই দুই-ভাইয়ের বউ হয়ে আসতাম এই ঘরে।ইচ্ছামতো শ্বাস নেওয়ার ও স্বাধীনতা নেই তোমার ভাইয়া যে কি পরিমাণ পজেসিব আমাকে নিয়ে।আর ছোট ভাইও কম না সবে-মাত্র বিয়ে হয়েছে আস্তে আস্তে বুঝবা কত-ধানে কত-চাল।
“ভাবির কথার মানে আমি বেশ বুঝেছি।আমার জীবন যে জেলখানায় পরিণত হবে তা এক্কিবারে সিউর।উনার জন্য ঠিক ভাবে শ্বাসটাও নিতে পারবো না।না হারাতে পারবো ইচ্ছেমত জ্ঞান।আমার জ্ঞান হারানোও আমাকে মিস করবে।এসব ভেবেই কাঁদো কাঁদো চেহেরা করলাম।

“ভাবি আমাকে বললেন- মারিয়ার বিয়ে হয়েছে তাই এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়াবেন শশুড়-বাবা।তার আয়োজন বাড়ির বাগানেই হবে অনেক মানুষজন আসবে তুমি আমার সাথেই থেকো না হলে আম্মুর সাথে থাকিও তাও আগের মতো তিড়িংবিড়িং করিও না।এসব একদম পছন্দ না ছোট ভাইয়ের(রুদ্র মির্জার)
“আমি কিছু না বলে ভাবির পিছন পিছন হেটে ডাইনিং রুমে গেলাম।যেতেই দেখলাম মারিয়ার দাদিকে।আমাকে দেখেই বললেন- এই যে জ্ঞান হারানো মাইয়া বউ হইয়া গেছো মির্জা পরিবারের।এখানে একদম দৌড়াদৌড়ি চলবে না।
“আমি কিছু না বলে মাথা নাড়ালাম।
“এখানে কোনো বাড়ির পুরুষকে দেখলাম না হয়তো সবাই নিচে এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছেন।
“সকালের নাস্তা করতে করতে শুনলাম দাদি শাশুড়ি বলছেন- রুদ্র মির্জা নাকি আমার আর উনার বিয়েটা বড় করে আর করতে চান’না।যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকতে চান।আর কোনো ধরনের অনুষ্টান ও করতে চান’না।এটা নাকি উনার অপছন্দ।বাড়ির বউকে হাজারো পুরুষ দেখবে সেটা উনি মেনে নিবেন না।
“উনার কথা গুলা শুনে আমি অবাক হলাম।এইরকম করে কতজনও বা ভাবে।মনে মনে খুশি হলাম উনার পরিবারটা আসলেই অন্যরকম।কিন্তু ভয় হয় সব সামলাতে পারবো তো?

সকাল থেকেই মির্জা সাহেব কে দেখলান না।এতে অবশ্য আমার ভালোই লেগেছিলো উনাকে দেখলেই কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।দুপুরে খেয়ে রুমে চলে আসলাম তবে রুমের দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেলাম।আর ভাবছি শাশুড়ি মার কথা গুলা উনি বলেছেন সাপ্তাহ খানেক পর যেনো ভার্সিটি যাওয়া শুরু করি মারিয়ার সাথে।এর আগে যেন ভালোভাবে সংসার সামলানোটা শিখতে পারি। তাই উনি আমাকে সব কাজ শিখিয়ে দিবেন বলেছেন।
“সেসব ভেবেই ব্যাগ থেকে সব কাপড় বের করে উনার আলমারির একপাশে সব গুছিয়ে রাখলাম।উনি আমার জন্য জায়গা করে দিয়েছেন।আমি এক-পাশে শাড়ি আরেক-পাশে আমার সেলোয়া-কামিজ গুলা রাখলাম।
“ভাবলাম এখন তো আর রুম থেকে বের হতে হবে!না রুমে কেউ আসবে।আর আসলেও দরজা বন্ধ সেটা ভেবেই আমি বুক থেকে আচঁলটা সরিয়ে শুয়ে পড়লাম।ঘুম চোখে নামবে নামবে ভাব এই সময় কেউ কঠাক করে দরজা খুলে ভেতরে আসলো।কে আসলো দেখতেই আমি চমকে গেলাম রুদ্র মির্জা।উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললেন।তারপর রাগি চোখে তাকাতেই~আমি নিজের দিকে তাকালাম তাকাকেই আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম।আর কেঁপে কেঁপে শাড়ি ঠিক করে নিলাম।উনি যে এখন রুমে আসবেন আমি ভাবতেও পারি’নি আর আমি ডাফর যে ঠিক ভাবে দরজাটা বন্ধ করি’নি তাও মনে নেই।এখন নিশ্চয় উনি আমাকে উনার সে বিখ্যাত পি*স্ত*ল দিয়ে ঠু*কে দিবেন……

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ১

(ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন।আর ভুল গুলা ধরিয়ে দিবেন)
(গল্পের নায়ক নায়কার নামটা পছন্দ না হওয়ায় আমি নাম বদলে দিলাম।নায়কা নূর জামান।আর নায়ক রুদ্র মির্জা।আপনারা একটু কষ্ট করে বুঝে নিবেন)

অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব ৩