অবশেষে পর্ব ৫

অবশেষে পর্ব ৫
Written Sumaiya Karim

আয়রা মানুষ টার কথা শুনে নিজেকে কিছু টা দূরে সরিয়ে নিলো দেখে ফের সেই ব্যক্তি বলে উঠলো,
–‘তুই আমার সাথে পালিয়ে চল! তোকে আমি অনেক আগে থেকে ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারিনি! মানে সুযোগ হয়ে উঠে নি। আজ সকালে শুনেছি যে তোর বিয়ে! আর নিজেকে স্থির করতে পারলাম না ছুটে আসলাম তোর কাছে! প্লিজ চল তুই আমার সাথে! তোকে অনেক সুখে রাখবো বিশ্বাস কর আরু! ফিরিয়ে দিস না আমাকে প্লিজ!’
–‘এসব কি বলছেন আপনি ইশান ভাই?’
–‘আমি ঠিক ই বলছি আয়রা!’

আয়রা ভাবছে ইশান কে এই বাড়িতেই বা কে ঢুকতে দিলো! সম্পর্কে সে তার ফুফাতো ভাই!আজ থেকে প্রায় বছর খানেক আগে এই ইশান একটা অঘটন ঘটিয়েছিলো আয়রার কাজিন মিরার সাথে। সেই থেকে তাদের সম্পর্ক টা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ তাকেই এই মানুষটা ভালোবাসার কথা বলছে? তার উপর পালিয়ে যাওয়ার কথা তো থাকছেই এতো বড় সাহস ইশানের!
–‘আপনি এখানে আসলেন কি করে? মিরার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করছিলেন আপনি সেটা কি ভুলে গেছেন?’
–‘আমি সেদিন তোর কাছে আসতে চেয়েছিলাম আর ভুল করে মিরার রুমে চলে গেছি!’
–‘কিহহ….
–‘বললাম তো বহুদিন আগ থেকে তোকে ভালোবাসি!’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইশান আয়রার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলেছিলো আয়রা ছিটকে নিজের হাত দূরে সরিয়ে নেয়। আর ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
–‘তার মানে আপনি সেদিন আমার সাথে অসভ্যতামি করতে চেয়েছিলেন ছিঃ! আপনি সেটা আমার রুমে আমার সামনে দাঁড়িয়ে স্ব-সাহসের সাথে বলছেন কি করে? আমি এক্ষুনি সবাই কে ডাকছি!’
আয়রা রুম থেকে বেরোতে নিবে ওমনি ইশান তার হাত টেনে ধরে রেগে গিয়ে বলে,
–‘ভালোয় ভালোয় বলছি তাই কানে যাচ্ছে না তাই না? খারাপ রূপ টাই দেখবি?’
আয়রার সাথে জবরদস্তি শুরু করে সে। যত যাই হোক একটা ছেলের শক্তির কাছে একটা মেয়ের শক্তি কিছুই না। আয়রা ও ইশানের সাথে পেরে উঠছিলো না। তার উপর রুমে একা হওয়ায় ভয় কাজ করতে শুরু করলে সে মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে শুরু করে। এমন সময় রাশেদা হুট করে রুমে ঢুকে। আর ইশান কে আয়রার সাথে জোড়া জুড়ি করতে দেখে গিয়ে সজোড়ে চড় বসিয়ে দেয় তার গালে। বেচারা চড় খেয়ে তাল সামলাতে পারলো না।

–‘তোর এতো বড় সাহস? ভাগ্য ভালো আজকে আয়রার বিয়ে নাহলে আজকেই তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতাম। প্রথমে আমার মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে যেই দুঃসাহস তুই দেখিয়েছিলি তার জন্য তোর বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার ছিলো। আর সেই কাজ টাই আবার আয়রার সাথে করতে চেয়েছিস? তোর কলিজা কত বড় রে?’
আরো কয়েক টা চড় মারে তার গালে। চুপচাপ চড় গুলো হজম করতে থাকে।

–‘যদি নিজের খারাপ না চাস তো এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। আর কখনো যাতে তোকে আয়রার তৃ-সিমানায় ও না দেখার যায়।’
ইশান ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে দুজনার দিকে রাগের বর্ষণ করে রাগে হন হন করে বেরিয়ে চলে যায়। আর আয়রা ভয়ে তার চাচি কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। এতো ভয় পেয়েছিলো যা বলার বাহিরে। তার উপর ইশান তার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করেছিলো দেখে ভয়ে গায়ের কাঁপুনি ছুটে গেছে। সে রুমে একা থাকায় ভয়ের মাত্রা তীব্র বেগে বেড়ে গিয়েছিলো। আর একটু দেরি হলে কি হতে পারতো ভেবেই ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আয়রার কান্না দেখে তিনি বললেন,

–‘তুই আমাকে ডাকলি না কেন?’
এই কথার উত্তর দিতে যাবে তক্ষুনি রুমে আগমন হয় তন্নির। খুশি লাগছে তার। এই খুশিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো।
–‘ভাবী ফাইনালি তুমি আজকে আমাদের বাড়িতে সারাজীবনের জন্য ভাইয়ার জীবন সঙ্গী হিসেবে যাচ্ছো! আমার যে কত্তো খুশি লাগছে না তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।’
সে কথা টা বলে সামনে চোখ ফেরাতেই দেখে আয়রার চোখে পানি। চোখ দুটো অস্বাভাবিক বড় করে বললো,
–‘একি তুমি কাঁদছো কেন? ভাবী আর ইউ ওকে?’
রাশেদা আয়রার হাত টেনে ধরে তাকে কিছু একটা ইশারা করে। আর চোখের পানি নিজেই আলতো করে মুছে দিয়ে বলে,
–‘সবাই কে ছেড়ে যাবে তো তাই কষ্ট হচ্ছে বুঝলে?’

–‘অহহো এটা কোনো রিজন হলো? দেখি ভাবী হাসো তো! মেকআপের আগেই কান্না শুরু করেছো পরে কি হবে বলোতো?’
আয়রা কোনো উত্তর দিলো না!
–‘তুমি তো একদম চলে যাচ্ছো না তাই না! আবার তোমার যখন ইচ্ছা হবে তখন তুমি আসতে পারবে কোনো বাঁধা নেই!’
তন্নি নিজে থেকে যথাসাধ্য বলে আয়রা কে হাসাতে চেষ্টা করে। এক সময় আয়রা ফিক করে হেসে ও দেয়।
রাতুল আর সায়ন আদ্র দুপাশে বসে আছে। এক পর্যায়ে রাতুল ফিসফিস করে আদ্রর কানে কানে বলে,
–‘ভাই তুই কাল নেশার ঘোরে বললি মেয়েরা ছলনাময়ী! তাহলে বিয়ে করছিস কেন?’
আদ্র সোজাসুজি নাকোচ না করে কথাটা যে বললো তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘কই কখন বলেছি?’
–‘আরে ভাই সত্যি তুই এই কথাটা বলেছিস!’
–‘আমার তো কিছুই মনে নেই!’

–‘ওয়েট আমি সায়ন কে বলছি দেখবি সেও বলবে তুই গতকাল এই কথাটা বলেছিস নাকি না!’
সে সায়ন কে জিঙ্গেস করতেই ও বললো,
–‘কই নাতো আমি তো শুনিনি!’
–‘এই ভাই তুই অস্বীকার কেন করছিস? তোর মনে নেই আমরা ওর কথা টা শুনে কতটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ইভেন আদ্র শোন আমরা তোর বলা কথাটা নিয়ে খুব হেসেছি ও!’
সায়ন কেন এমন করলো বুঝলো না রাতুল। অন্য দিকে অস্বীকার করায় রাগ ও হয়। দুজনার বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এমন কিছু আঁচ করতে পেরে আদ্র বলে,
–‘কি শুরু করলি তোরা? আমার বিয়ে টা তো বরবাদ করে দিবি রে ভাই থাম একটু!’
–‘ও না কেন করলো বল?’
–‘আহা বাদ দে তো!’

–‘ওকে ফাইন বাদ দিলাম। তুই ভাবী কে আমাদের দেখালি না কেন? এখন সেটা বল!’
–‘নিজেরাই তো দেখতে পাবি তাই আর আমি কষ্ট করলাম না!’
সায়ন আগের কথা বাদ দিয়ে এই প্রসঙ্গে বলে উঠলো,
–‘এখন দেখবো তা তো আমরা ও জানি। কিন্তু তুই গায়ে হলুদে ও আমাদের ভাবীর পিক দেখাস নি। তন্নি কে দেখাতে বললাম তাও না করে দিলি কেন ভাই? আমি তো কিছু বুঝতে পারলাম না!’
–‘ঠিক বলেছিস আমি ও তন্নির কাছে গিয়েছিলাম ও বলল এই বেটা নাকি আমাদের দেখাতে না করেছে!’
–‘চল তো রাতুল আমরাই গিয়ে এখন দেখে আসি!’
আদ্র তাদের বাঁধা দেয় কিন্তু কেউ ই শুনলো না। জোড় পূর্বক গিয়ে ও কোনো লাভ হলো না। দেখা মিলে নি মেয়ে গুলো ঢুকতেই দিলো না। মুখ ছোট করে তাদের দুজন কে ফিরে আসতে দেখে আদ্র বুঝে যায় আসল কাহিনী! আর মনে মনে হাসতে থাকে!

বিয়ে সম্পন্ন হলে বিদায় বেলায় আয়রার কান্নায় পুরো বাড়ি কিছু সময়ের জন্য নিরব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। যেনো দুঃখের ছায়া নেমে আসলো! প্রত্যেক মেয়েদের জীবনে এই সময় টা খুব কষ্টের। আপন জন, আপন পরিবেশ সব ছেড়ে অন্য এক অজানা পরিবেশ অচেনা মানুষের সঙ্গে চলার শুরু টা করে দেয় এই বিয়ে। মেয়েদের জন্য এটা থেকেই হয়তো প্রথম ত্যাগের শুরু।
আয়রা কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ ই হয়ে যায়। গাড়ি তে উঠিয়ে আদ্র পাশে বসানো হয় তাকে। তন্নি তার পাশে বসলো। গাড়ি আপন গন্তব্যে ছুটতে শুরু করলে আয়রার মাথা নড়চড় করে পড়ে যেতে নেয়। এটা দেখে তন্নি বলে,

–‘ভাইয়া নিজের বউ কে সামলাতে পারছিস না? কেমন নিষ্ঠুর রে তুই? ভাবী পড়ে যাচ্ছে উনাকে ধর!’
আদ্র ঝাড়ি খেয়ে আয়রা কে ধরে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও করলে যা হয়। কাজ হচ্ছে না দেখে তন্নি আদ্রর হাতে চিমটি কেটে বলে,
–‘একটু রোমান্টিক হ রোবট কোথাকার! ভাবীর মাথা টা তোর বুকে নিয়ে পারছিস না। এগুলা ও আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে? তোকে বিয়ে করে ভাবীর লাইফ বরবাদ হয়ে গেছে। আম সিউর তুই উনার জীবন তেজপাতা করেই ছাড়বি!’
আদ্র বড় বড় চোখ করে তাকালো। একটা কৃত্রিম আবরণ আই মিন মেকআপ করার কারণে আয়রার চেহারায় একটু চেঞ্জ দেখাচ্ছে দেখে রাতুল আর সায়ন তাদের চেনা মুখ টিকে ও এতো কাছ থেকে দেখেও চিনতে পারলো না।

বাড়ি তে পৌঁছানোর এক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে আয়রারা। আর ভারী গহনা আর লেহেঙ্গা পড়ে থাকায় গরমে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে তন্নি একটা সুন্দর নীল রঙের জামদানি শাড়ি বের করে আয়রা কে দেয়। শাড়ি পড়তে না পারা সত্ত্বেও সে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আর শেষে খুব চেষ্টা করেও শাড়ি টা পড়তে সক্ষম হলো না।
আদ্র অন্য রুমে বসে ল্যাপটপে কি যেনো করছিলো ওমনি তার দুজন জানে জিগার বন্ধুর আগমন ঘটলো। একজন এসেই আদ্র কে উদ্দেশ্য করে বললো,
–‘ভাই তুই জিতছিস!’
আদ্র আড় চোখে তাকালো।
–‘ভাবী খুব সুন্দরী!’
রাতুল বললো,

অবশেষে পর্ব ৪

–‘তুই ওর বউয়ের দিকে ও নজর দিস নি তো?’
–‘মুখ সামলে কথা বল রাতুল!’ (রেগে)
–‘হাহা আচ্ছা সরি মজা করছিলাম!’
আদ্র চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে নিজের মতো আর এই দুইটার বকবক করা বন্ধ ই হচ্ছে না।
–‘কিরে ভাই মুখ এমন বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন? সেই তখন থেকে খেয়াল করছি! কি ব্যাপার বল তো!’
আদ্র বললো,
–‘তোদের কথা শেষ হলে এখান থেকে বের হয়ে!’
–‘বাপরে যেনো বাসর ঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস!’

–‘বকবক করে আমার মাথা খারাপ করে দিস না অফিসের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি এখানে থেকে যা!’
তন্নি ও শাড়ি পড়তে জানে না। তাই সুলতানা কে ডেকে নিয়ে আসে। উনি প্রথমে হাসেন। পরে সযত্নে শাড়ি টা পরিয়ে দিয়ে চলে যান।
আদ্র তাড়িয়ে দিচ্ছে দেখে দুজন বললো,
–‘যাই তোর বউয়ের কাছে নালিশ দিয়ে আসি!’
–‘ঠিক বলেছিস তুই সায়ন। আই হোপ ভাবী আমাদের সাথে থাকবে!’
আদ্র দাঁতে দাঁত চেপে দুজনার দিকে তাকালে দুজন ই ভেঙ্গচি কেটে বেরিয়ে আয়রার রুমে যায়। আর তন্নির ঢুকতে দিতে চাইলো না কিছুক্ষণ পর ঢুকতে দেয়। আর রুমে ঢুকেই আয়রা কে দেখে সায়ন আর রাতুল দুজনার চোখ যেনো ছানাবড়া। একসাথে দুজনার একই প্রশ্ন!
–‘আয়রা এখানে? কিন্তু কি করে?’

অবশেষে পর্ব ৬