অবশেষে পর্ব ৬

অবশেষে পর্ব ৬
Written Sumaiya Karim

রাতুল আর সায়ন দুজন দুজনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উত্তর মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। এটা দেখে তন্নি বললো,
–‘কি হয়েছে তোমাদের? ভাবী কে দেখতে এসে মনে হয় আশে পাশে কোথাও ভূত দেখলে!’
–‘ভূত না কিন্তু যা দেখছি তা কি সত্যি?’
–‘অবকোর্স সত্যি হবে কিন্তু জানার বিষয় এটা যে, তোমরা দেখছো টা কি?’
–‘সেটাই যেটা দুচোখ দেখলো!’
তারা দুজন আয়রার পাশে বসলো। আয়রা ও তাদের দেখে হেলদোল কোনো রকম ব্যতিক্রম হলো না। মূলত সে চিনতেই পারে নি। উল্টো তাদের দুজনার কথায় কি রিয়েক্ট করা উচিত তা ভেবেই কোনো কুলকিনারা পেলো না। আয়রা কিছু বললো না তাদের দুজনের মধ্য থেকে একজন বলে,

–‘আয়রা তুমি এখানে কি করে?’
–‘আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না যে তোমার বিয়ে আদ্রর সাথে হয়েছে!’
আয়রা আস্তে করে বললো,
–‘মানে ঠিক বুঝলাম না ভাইয়া!’
–‘আমাদের ভুলে গেলে তুমি? রাতুল সায়ন জিসান এই তিন জন কে চিনতে না তুমি?’
তন্নি তাদের কথার কোনো অর্থ বুঝে উঠতে পারলো না আর না তো বুঝলো তাদের কথার আগা মাথা। খুব মনোযোগ সহকারে শুনলো তাতে ও কাজ হয় নি।
–‘এক মিনিট এক মিনিট, তোমরা কি ভাবী কে আগে থেকে চিনো?’
–‘হ্যাঁ চিনি!’
–‘কিভাবে চেনো?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আয়রা নাম গুলো শুনে অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকালো। ভাবতে থাকলো আজ ৩ বছর আগে সে দেখেছিলো এই মানুষ গুলো কে। আর এখন প্রায় দুবছর পর আবারো দেখা! মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঘটে যায় যা কখনো ভুলে যায় না। আর কিছু কিছু মানুষ ও স্মৃতি তে এমন ভাবে গেঁথে যায় যে তাদের মুখ গুলো ও সামনে দেখলেই অটোমেটিক চেনা যায়। কিন্তু আয়রা প্রথমে চিনতে না পারলে এখন চিনতে পেরেছে। এই কয়েক বছরে তাদের চেহারায় হালকা পরিবর্তন লক্ষ্য করাই যায়। এই জন্যই হয়তো চিনতে পারে নি ভেবে নিজেকে বুঝতে দিলো আয়রা।
তন্নি উত্তর না পেয়ে বললো,

–‘কি হলো কেউ বলছো না যে?’
আয়রা তাদের বলতে না দিয়ে নিজেই বললো,
–‘আমি যেই ভার্সিটি তে পড়তাম তখন উনারা সেখান কার সিনিয়র ছিলেন। ওভাবেই চিনতাম!’
–‘হুম ঠিক বলেছো!’
–‘আশ্চর্য তাহলে তোমরা বিয়ের আগে ভাবীর পিক দেখো নি? তখন চিনতে পারলে না আর এখন চিনেছো?’
–‘তোমারা বউ পাগলা ভাই আমাদের দেখতে দিলে তবে তো দেখবো তাই না? ও তো আমাদের দেখায় ই নি!’
–‘কিহহ কেনো?’
–‘এটা তো ও ই ভালো জানে জিঙ্গেস করে আসছি ওয়েট!’
রাতুল আর সায়ন আরো কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। তন্নি আয়রা কে বললো,
–‘ভাইয়া এমন টা করেছে তোমার মনে হয়? আমার মনে হচ্ছে উনারা আমার নিরহ ভাই টার নামে মিথ্যা কথা বলছে!’
–‘মিথ্যা কেন বলবে?’

–‘কি জানি ধুর বাদ দাও। একটা কথা তো মিথ্যা ই আমার ভাই মোটেও বউ পাগলা না ও তো একটা..!
–‘কি?’
–‘রোবট, রোবট একটা!’
–‘কিভাবে?’
–‘শোনো তাহলে…
তন্নির বলা শেষ হলে দুজন বেশ হাসে।
–‘তবে আমি কনফিউজড যে এই রোবট টা তোমাকে ভালোবাসে।’
–‘আচ্ছা তন্নি এই দুজন তোমাদের সম্পর্কে কেউ হয়? মানে আমি বলতে চাইছি তোমাদের কোনো রিলেটিভ?’
–‘কোন দুজন?’
–‘এই যে একটু আগে দুইটা ভাইয়া গেলো!’
–‘আরে এরা তো ভাইয়ার বন্ধু সেই ছোট্ট বেলা থেকে!’
–‘ও আচ্ছা!’
আয়রা ভাবতে থাকলো ওদের বন্ধুদের মধ্যে তো ৩ জন ই ছিলো আদ্র কোথা থেকে আসলো? রাতুল সায়ন আর জিসান এই তিন জন কেই জানতো আয়রা। আদ্র কে তো কখনো দেখে ও নি! কিভাবে বন্ধু হলো? আর হলেও কখনো আদ্র কে কেনই বা দেখলো না?

সায়ন আর রাতুল গিয়েও আর আদ্র কে পেলো না। বাসর রাত নিয়ে কোনো ফিলিংস নেই আদ্রর মাঝে। সবাই কে ফাঁকি দিয়ে সে ছাঁদে বসে আকাশ দেখতে ব্যস্ত থাকলো। এই দুদিনে বিয়ে নিয়ে কোনো আনন্দ ছিলো না তার মনে। যা ছিলো প্রতিশোধ নেওয়া প্রচেষ্টা।
এদিকে সুলতানা এসে আয়রা কে খাইয়ে দিয়ে চলে যায়। বাসর ঘরে তাকে নিয়ে এসে বসানো হয় রাত ১২ টায়। সে এখন অপেক্ষা করতে থাকে মিস্টার রোবটের আসার জন্য। তন্নির থেকে আদ্র কেমন তা জানার পর তার বিশ্বাস হয়ে গেছে এই লোকটার ভেতরে কোনো ফিলিংস ই নেই। কাকে ভালোবেসেছিলো আয়রা তা ভেবে নিজেই ডিপ্রেশনে চলে যায়। তাছাড়া ও বলেছিলো তাকে ভালোবেসেই সেদিন রাতে গিয়েছিলো, তাহলে রাতের কথা গুলো কি ছিলো? এক পয়েন্টের সাথে অন্য পয়েন্টের কোনো মিল নেই; ঠিক এই জায়গায় এসেই মনে হচ্ছে কোনো তো গন্ডগোল আছে এটা নিয়ে নিশ্চিত আয়রা! তবে আজ ভাবলো আদ্র কে সে জিঙ্গেস করবে নিজে আর ভয় পাবে না। কেননা সাহসী সে। হুহ

আদ্র রুমে আসলো ঠিকই তবে আয়রা কে কিছু বললো না। শুধু বিছানা থেকে বালিশ আর কাঁথা টা নিয়ে সোফায় চলে যায়। আর সেখানে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। আয়রা ড্যাব ড্যাব চোখে তা শুধু দেখলো। আদ্র কোনো কিছু না বলে ঘুমানোর চেষ্টায় মত্ত থাকলো নিজের মতোই। কেটে গেলো আরো কিছু মুহুর্ত আয়রা উঠে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসলো আদ্রর দিকে। মানুষ টার চেহারায় আলাদা মায়া আছে। কেন এমন করলো আদ্র তাই ভাবতে থাকলো। শেষে ভেবে না পেয়ে বিছানায় গিয়ে নিজেই শুয়ে পড়লো। সারাদিনে সব কিছু শেষে এই মুহূর্তে নিজেকে ক্লান্ত লাগছে বেশ। আদ্র আসলে তাকে জিঙ্গেস করবে ভেবেই এতোক্ষণ জেগে ছিলো বাট সেও যখন ঘুমিয়ে পড়লো তার ও আর জেগে থেকে কাজ নেই ভেবে নিজেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
এদিকে অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আসলো না আদ্রর। কারণ একটাই সোফায় ঘুমানোর অভ্যাস তার নেই। তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বিছানার দিকে এগিয়ে যায় আর দেখে আয়রা গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। একটা কোলবালিশ নিয়ে এসে মাঝখানে রেখে দিয়ে একপাশে শুয়ে পড়ে সে। দুজনে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।

সকালে ঘুম আগে ভাঙ্গলো আয়রার। আর বিশাল দেহি শক্ত হাত জাতীয় কিছু তাকে জাপটে ধরে থাকতে খেয়াল করলো। সে আর কেউ নয় আদ্র ই। কিছু টা সময় পর এটা লক্ষ্য করলো আয়রা এই মুহূর্তে আদ্রর বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে। এটা লক্ষ্য করতেই আয়রার চোখ গুলো অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায়। আর তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে। আচমকা এমন করায় আদ্রর গভীর ঘুমেও ফাটল ধরলো। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যেতেই ভীষণ রাগ হয় মানুষ টার। রক্ত চক্ষু নিয়ে আয়রার দিকে তাকায় সে। আয়রা নিজেকে সামলে নেয় ক্ষিপ্ত চোখ জোড়ায় রাগের মিশ্রন দেখতে পেয়ে বলে,

–‘ভাগ্যিস চোখ দিয়ে কাউকে খেয়ে ফেলা যায় না। তা না হলে কবে যে আমাকে মস্ত বড় হাতি টা এক নিশ্বাসে নিজেই‌ গিলে ফেলতো কে জানে!’
আয়রা ভেবেছিলো তার কথা শুনে আদ্র রিয়েক্ট করবে আর তাকে রেগে গিয়ে কিছু বলবে কিন্তু না তেমন কিছুই হলো না। আদ্র ভদ্র ছেলের মতো ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আয়রা নিজেই নিজেকে বলতে থাকলো,
–‘এটা কি হলো? উনি কিছু বললো না কেন? কি চলে এই রোবটের মনে? আমাকে জানতেই হবে! থাক বাবা আমার আর উঠে কাজ নেই আমি বরং ঘুমাই!’

অবশেষে পর্ব ৫

আয়রা আবার শুয়ে পড়লো আর ঘুম ভাঙ্গলো দরজায় কারো টোকা পড়ায়। তন্নি এসে তাড়া দিয়ে বলে যায় তাকে ফ্রেশ হতে। আড়মোড়া ভেঙ্গে আয়রা ওয়াশরুমে চলে আবার কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে ও আসে। তারপর ভাবলো একবার বাড়িতে ফোন দিলে কেমন হয়? সবার সাথে কথা বলা যাবে নাহ ভালোই হয় সকাল সকাল মাইন্ড টাও ফ্রেশ হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ কল দেওয়ার জন্য তো এবার ফোন দরকার। কিন্তু ফোন কই পাবে সে? তার ফোন টা তো সাথে করে নিয়ে ও আসে নি হায়রে বলে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে আয়রা। আর হঠাৎ করে চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের উপর। যেখানে একটা ফোন রাখা। আর দেরি করলো না উঠেই ফোন টা হাতে নেয়।

দেখলো ফোন টা আদ্রর ই। কোনো লক দেওয়া নেই দেখে আয়রা নিজে নিজেই বললো,
–‘আশ্চর্য ফোনে কি নিজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই নাকি? একটা লক তো দিতে পারতো নাকি? যাগ্গে এখন আমার জন্য তো ভালোই হলো। কল দেই! ব্যালেন্স আছে কিনা দেখি!’

আয়রার মন রিতিমত আঁকুপাঁকু করছে গ্যালারি তে যাওয়ার জন্য কিন্তু আরেক জনের ফোন অনুমতি ব্যতীত গ্যালারি তে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে বেলকনিতে গিয়ে নাম্বার মুখস্থ থাকায় কল দেয় সে। আর একে একে সবার সাথে কথা বলে নেয়। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো সবার সাথে কিছুক্ষণ হাসি কান্নার খুনসুটির মধ্য দিয়েই কেটে যায়। সকাল সকাল সবার সাথে কথা বলে আয়রার মন টাও বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। যেই না ও ফোন টা যেখানে ছিলো সেখানে রাখার জন্য পেছনে ফিরে আর ওমনি দেখে….!

অবশেষে পর্ব ৭