অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৭

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৭
নন্দিনী নীলা

শ্রাবণ ভাইয়া বাথরুম থেকে বের হল আমি মুখ টিপে হাসছি। আমার যে কি পরিমান হাসি পাচ্ছে তা আমি বুঝাতে পারব না। এখন আমি গড়াগড়ি করে হাসতে পারলে আমার ভালো লাগতো। কিন্তু ভদ্রতার জন্য সেটা পারলাম না কিন্তু উনাকে টিটকারি মারে কথা বলতাম ছাড়লাম না।

আমি শ্রাবণ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমাদের সবাইকে না জানিয়ে একা একা বিয়ে করে ফেললেন। আপনি এত কিপটা টাকা ভাঙতে হবে বলে একা বিয়ে করে ফেললেন‌। এখন ঘোরাঘুরি করছেন কেন নিজের বাড়িতে কি হয়েছে নিজের বাড়িতে ব‌উ নিয়ে উঠতে পারলেন না?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শ্রাবণ ভাইয়া সব সময় কথার পিঠে কথা বলে কিন্তু আজকে বলতে পারল না আজকে তিনি নীচু কন্ঠে বলল, ‘মা ফোনে বলেছে দীপা কে নিয়ে বাসায় ঢুকলে সাথে সাথে নাকি দীপার বাড়িতে খবর চলে যাবে এজন্য ভয় এই যেতে পারছিনা।’
‘গেলে যাবে সমস্যা কি তারা না হয় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি দেখার জন্য আসবে।’

‘না তাদের কানে শুধু খবর না তাদের হাতে দীপাকে নাকি তুলে দেবে আর দীপাকে তারা একটু ও পছন্দ করে না। দীপ আম্মুর সাথে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলেছিল তাই আরো পছন্দ করেনা।
দীপা শ্রাবণ ভাইয়ার কথা শুনে খেপা বাঘিনীর মত তেড়ে গিয়ে বলল, ‘আই কি বললে তুমি আমি চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলি। এইজন্য তোমার ঐ ডাইনি মা আমাকে পছন্দ করো না?’

শ্রাবণ ভাইয়া তো দীপাকে খুব ভয় পায়। তিনি ভীতু গলায় বললেন, ‘তুমি বলো না তো মি এটা মনে করেন।’
‘ তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে তোমার সাথে কি জন্য যে পালিয়ে ছিলাম এখন আমাকে পালিয়ে পালিয়ে বেরাতে হচ্ছে।’

ওদের দুজনকে থামিয়ে বললাম, ‘থাম তোর আর আমার কথা শোন দীপা‌। তোদের বিয়ে তো অলরেডি হয়ে গেছে এখন চাইলেও তোর শাশুড়ি মানে শ্রাবণ ভাইয়ের মা তোকে তোর বাবা মার হাতে তুলে দিতে পারবে না সে যদি আইনের চেষ্টাও করে তারপর ও এই কাজটা করতে পারবে না কারণ বিয়েটা হয়ে গেছে।

স্বামী স্ত্রীকে আইন ও আলাদা করে না। তোর গুন্ডা মার্কা ফ্যামিলি আমাদের যা ভয় দেখিয়েছে জানিস। আমি আর লিলি কি বড় বিপদে পড়েছিলাম তোরা যে পালিয়ে যাবি তার একটুখানি যদি আমাদের জানিয়ে দিতি তাহলে কি আমরা ওই সিংহের গুহায় যেতাম।’

‘ বলার সুযোগ হয়নি রাগ করিস না। এবার তোর পালানোর কথা বল!’
আমি বিছানায় বসে পরলাম, ‘আমার অনেক হয়রানি হয়েছে রে এই ছোট বাসায় তোরা থাকতে পারবি না। এবার দীপা তুই শ্বশুর বাড়ি যা। বাড়িওয়ালা একবার যদি তোদের এখানে দেখে তাদের সহ আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে তখন আমার এখানে থাকলে প্রবলেম হবে।’

দীপা বলল, ‘ তুই আমাদের তাড়িয়ে দিবি।’
আমি বললাম, ‘আমার নিজের বাড়ি থাকলে আমি নিজে চলে যেতাম তোকে এখানের রেখে‌।’
দিন টুকু ওরা জোর করে থাকলেও সন্ধ্যার পর অন্ধকারে তখন ওরা বেরিয়ে চলে গেল আর এর মধ্যে আমার বিয়ের কাহিনী টা দীপাকে শুনিয়ে দিছি।

ওরা চলে যাওয়ার পর আমি বিছানায় শুয়ে একটা ঘুম দেয়। ঘুম ভাঙ্গে লিলির কলে ও আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কোথায় আমি বলি, আমি বাসার।’
‘কাল কলেজ আসবি?’
‘না পরশু এক্সাম দিতে আসবা একেবারে।’

‘ তুই ঠিক আছিস? তুই কাল রাতে কোথায় ছিলি?’
আমি বললাম, ‘সামনা সামনি বলবো নি এভাবে এত কথা বলা যায়না। আর আমি একদম ঠিক আছি আমাকে নিয়ে টেনশন করিস না।’

‘ আচ্ছা আমি খুব টেনশন ছিলাম কাল। আর আমাকে ক্ষমা করে দিস আমি তোকে কালকে হেল্প করতে পারলাম না। কি করবো বল আমি তো জানি না তুই কালকে আমাদের বাসায় আসতে চাবি।আমি তো বাসায় ছিলাম না আমি সত্যি খুব সরি রে।’

‘ আচ্ছা রাখছি ঘুমাবো। দীপার সাথে বকবক করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।’
দীপার কথা শুনতেই লিলি চমকে উঠে বলল, ‘ কি বললি তুই দীপার সাথে বকবক করছিস মানে কি তুই দীপাকে কোথায় পেলি?’

আমি বললাম, ‘বইন তুই এবার চুপ যা আমাকে একটু ঘুমাতে দে।’
‘দ্যাত রাখ ফোন।’

একদিন পর আমার কলেজে আসা হলো পরীক্ষা দিতে। আমাদের পরীক্ষা বিকেলে পড়েছে আমি একটু আগেই এসেছি কারণ লিলি কল দিয়ে বারবার করে আগে আসতে বলেছে। ওকে সব কথা বলতে হবে একদম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবির মতো।

যাইহোক কলেজ আসলাম। লিলি আমার আগে এসে বসে আছে।নিবিড়ের সাথে ছিলাম ও আমাকে হেল্প করেছে। আর ওর একটা ফ্রেন্ডের বাসায় আমাকে রাতে রেখেছিল । তারপর যা যা জালিয়াতি আমার সাথে করেছে সব বললাম। সব শুনে তো লিলি গালে হাত দিয়ে আছে‌।

লিলি অবাক গলায় বলল, ‘ এ তো সিনেমার প্রেম কাহিনী।’
তারপর আবার বলে উঠল, ‘ ওই দেখ তোর হিরো‌।’
আমি বিরক্তকর কন্ঠে বললাম, ‘ পাগলের মতো আজাইরা কথা বলবি না। ওই নিবিড়ের বাচ্চা আমার হিরো হতে যাবে কেন ?’

নিবিড় আর ওর একটা বন্ধু আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আমি ভাবছি হয়তো আমাদের সাথে কথা বলতে আসছে আমি তা দেখে ভাব নিয়ে বসে আছি। কাছাকাছি আসতেই আমি নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলতে যাব যে, আ
আর বলতে পারলাম না।

শয়তান নিবিড় আমাদের খুব নিকটে আসলো কিন্তু আমাদের সাথে কথা না বলে আমাদের পাস করে চলে গেলো আমি হাঁ করে ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম এটা কি হলো। আমি নিবিড় কে লজ্জা দিতে চাইছিলাম যে আপনি না বললেন আমার সাথে আর কথা ফলবেন না আমার সামনে আসবে না কিন্তু এখন নিজে থেকে কথা বলতে আসছেন। ব্যাপার কি?

উনি আমার থেকেও বেশি ধুরিবাজ। আমাকে পাস করে উল্টা আমাকে লজ্জা দিয়ে চলে গেল।
লিলির হাত ধরে টানতে টানতে হলে চলে এলাম। পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম আর দেখতে পেলাম দীপাকে ও যে পরীক্ষা দিতে আসবে এটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল।

দীপা তো দৌড় আমাদের কাছে এলো। আমার আর লিলির সিরিয়াল একসাথে কিন্তু দীপার সিরিয়াল আলাদা এর জন্য আমরা ওকে দেখিনি। আর মনে হয় এমনিতো পরে আসছিলো কলেজে।
আজকে আমি বাড়িতে ঢোকার সময়ই দারোয়ান কাকার থেকে শুনতে পাই আমার মামি নাকি এসে বসে আছে বাসায়।কি এক মুসিবতে পরলাম মামির সাথে দেখা হওয়া মানেই জোর করে আমাকে নিয়ে যাওয়া‌।

আমি বাসায় না ঢুকে আবার উল্টা পথে হাঁটতে লাগলাম। মামি যন্ত্রণায় দেখছি এভাবে থাকা যাচ্ছে না আমাকে ভাষা চেঞ্জ করতে হবে তাড়াতাড়ি।

আমি লিলিদের বাসায় চলে যাব ভাবলাম। একটা অটো জন্য কিছুটা দূরে এসে দাড়িয়ে রইলাম। অটো তো আসল না হঠাৎ একটা মাইক্রো এসে আমার সামনে থেমে গেল। আমি কপাল কুঁচকে মাইক্রো দিকে তাকিয়ে আছি ভেতরে থেকে বেরিয়ে এলো রাফসান। আমি চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছি।

রাফসান বলল, ‘এই সন্ধ্যেবেলা তুমি কি করছ এখানে? তোমার বাসা তো এখানে না।’
আমি বললাম, ‘ আমার বাসা এখানেই কাকা। কিন্তু আমি এখন বাসায় যেতে পারব না কারণ আমার মামী আমাকে তুলে নিয়ে যেতে আসছে এজন্য আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি।’

‘তুলে নিতে আসছে মানে?’
‘আপনার সাথে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর আমাকে আরেক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে। আমি করব না তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
‘ অ আচ্ছা। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তুমি চাইলে আমার সাথে গাড়িতে আসতে পারো। আমি তোমাকে ড্রপ করে দেবো।’

আমি না করে দিয়ে বললাম, ‘ তার কোন দরকার নাই। আমি চলে যেতে পারব আপনি যা বলার এখানেই বলেন কাকা।’
‘এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিভাবে কথা বলল মানুষ ও খারাপ ভাববে। আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমি তোমাকে জাস্ট কয়েকটা কথা বলতে চাইছিলাম।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৬

আমি খুব ইতস্তত বোধ করতে লাগলাম। না করতে পারলাম না একজন বড় মানুষ তার সাথে বেয়াদবি করা হবে না। একটু গেলে কি হবে উনাকে খুব খারাপ বলে মনে হচ্ছে না।
আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। জানিনা উনি আবার আমাকে কি কথা বলবেন।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১৮