অবাধ্য প্রেম পর্ব ৫০ 

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৫০ 
নন্দিনী নীলা

নিবিড়কে বাসায় আনা হয়েছে আজ ১৫ দিন হলো। হসপিটালে লাস্ট দিন ছোঁয়ার সাথে লাস্ট দেখা হয়েছিল আর সেই দিনটি ছিল সবচেয়ে সুখকর ভালোবাসা ময় নিবিড়ের জন্য। বেশি সুখ, আনন্দ দুঃখের পূর্বাভাস সেটা নিবিড় আগে বুঝতে পারিনি।

কিন্তু সেটা বুঝতে পেরেছে বাসায় আসার কয়দিন পর‌ই। বাসায় আসার পর নিবিড় প্রায় সুস্থ শুধু পা টাই ভাঙা যার জন্য হাঁটাচলা করতে পারে না। কিন্তু হুইল চেয়ার করে বাসার বাইরে বের হয় অন্যের সহযোগিতায়। নিবিড় বাসায় আসার পর জানত ছোঁয়া এখানে আসতে পারবে না তাই হয়তো দেখতে আসে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুইদিন পর নিজে একটা নতুন ফোন নেয়। ফোন ওপেন করার পর প্রথম কলটা মনে হয় ছোঁয়ার নাম্বারে করে। ফোন অফ। একদিন দুইদিন তিনদিন করতে করতে আজ পনেরো দিন হয়ে গেছে ফোন অফ। আর খোলা পায় নি। তখন থেকে ওর মনে সন্দেহের দানা বাজতে শুরু করে বারবার করে আবির কে বলেছে একবার ছোঁয়া যে বাসায় থাকে সেখানে খোঁজ নিতে কিন্তু আবির নানান অজুহাত দিয়েছে।

যে আবির ওকে আর ছোঁয়া কে সব রকম সাহায্য করেছে প্রথম থেকে কিছু বলার আগে করে ফেলে সব কিছু সে কিনা বারবার অজুহাত দিচ্ছে এটা ওর সমস্যা নয়। আসলে ও চাচ্ছে না ছোঁয়ার কোন খোঁজ নিতে। এজন্য বাহানা বানিয়ে যাচ্ছে। না হলে ১৫ দিনে কি একদিন আবিরের সুযোগ হয়নি। নিবিড়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে ও আর টেনশন নিতে পারছে না। ও আজ নিজেই যাবে ছোঁয়ার খোঁজ করতে। আর কারো ভরসা করবে না।

ড্রাইভার লতিফ এসে নিবিড় কে রুম থেকে বের করে সোফার কাছে আসতে নিবিড়ের মা ও পরিবারের সবাই অবাক হয়ে তাকায় নিবিড়ের দিকে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়নি কারণ নিবিড় এখন নিচের একটা রুমে শিফট হয়েছে। ড্রয়িং রুম আজকে সবাই ছিল কারণ শুক্রবার নিবিড়ের বাবা মেজ চাচা পোলাপান সবাই বাসা ভর্তি।

১৫ দিনে নিবিড় মনে হয় চার পাঁচ বার বাইরে বের হয়েছে হসপিটাল থেকে আসার পর সবাই নিবিড় রুমে গিয়ে হ‌ইহুল্ল করে কারণ বের হতে পারবে না বলে আর খারাপ লাগতে পারে। সেই মন খারাপটা যাতে না হয় এজন্য এমন করে। আজ কে ও বাইরে আসতে দেখে সবাই ভেবেছে হয়তো সবার সাথে ড্রয়িং রুমে বসে কপি বা চা খেয়ে আড্ডা দেবে।

কিন্তু ড্রাইভার লতিফ কেন নিবিড় কে নিয়ে বের হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না তবুও তারা পাত্তা না দিয়ে নিবিড় দিকে তাকিয়ে হেসে বলল আসো আড্ডা দেওয়া যাক। রাফসান কাকা বলে উঠলো কথাটা।
নিবিড় ড্রয়িং রুমের কাছে এসে বলল, ‘সরি কাকু আমি তোমাদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য বের হয়নি। আমি এখন একটা দরকারি কাজের জন্য বের হয়েছি। একটু বাইরে যেতে হবে।’

সোফায় বসে থাকা ৫ জন মানুষই কপাল তাকায় নিবিড়ের দিকে। সোফায় বসে আছে নিবিড়ের বাবা দুই চাচা, ছোট চাচী ও নিবিড়ের দাদি।

নিবিড়ের বাবা গম্ভীর স্বরে বলল, ‘এ অবস্থায় তুমি কেমন দরকারি কাজে যাচ্ছ? এখন তোমার কোন কাজ করতে হবে না। চুপচাপ বাসায় থাকো। যা দরকার হয় আমাদের বলো! আর বাইরে গিয়ে আড্ডা মাস্তি করার চিন্তা দয়া করে এখন বন্ধ কর। এই অবস্থায় তোমাকে বাসার বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে সব ফ্রেন্ড কে বাসায় ডেএক আড্ডা দাও যা খুশি তাই করো।’

নিবিড় বলে ওঠে, ‘তোমাদের বলে লাভ নাই আমার নিজের কাজ নিজেই করতে হবে। আমার নিজের মানুষ নিজেকে সন্ধান করতে হবে।’

নিবিড়ের মা ও এগিয়ে এসেছে রান্না ঘর থেকে। ছেলে বাসার বাইরে যাবে শুনি তিনি চমকে উঠেছে। নিশ্চয়ই ওই মেয়েটাকে খোঁজার জন্যই বের হচ্ছে আমার ছেলেটা এই অবস্থায়। রাগ হয় তার প্রচুর রাগ হয় ওই মেয়েটার উপর। তিনি নিবিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ফালতু মানুষকে খুঁজতে তোমার কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। তুমি রুমে যাও।’

‘ সে কোন ফালতু মানুষ না ও তোমার ছেলের জীবনে প্রাণভোমরা ওকে না পেলে আমি কিন্তু মরে যাব।’
নিলাশা বেগম সহ বাসার সবাই চমকে উঠে। নিলাশা বেগম চায়না নিবিড়ের মুখে ছোঁয়ার বজ্জাত মেয়েটার নাম সবাই জানুক। ছেলেকে রুমে পাঠানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তা হচ্ছে না নিবিড় বাইরে যাবেই যাবে। বাসার সবাই হতভম্ব হয়ে মা ছেলের কান্ড দেখছে।

নিবিড় এবার চিৎকার করে উঠলো,’মম আমি ছোঁয়া কে খুঁজতে যাচ্ছি। আমার এই অবস্থা আজ ১৫ দিন হয়ে গেল ছোঁয়া আমাকে না দেখতে এসেছে আর না কোন কল করেছে। ওর কোন খুঁজে আমি পাচ্ছি না। বাসায় বসে থেকে আবিরকে আমি অনেকবার বলেছি ও আমার কথা শুনেনি। বাহানা দিয়ে গেছে। জানিনা ও এমন কেন করেছে তাই আমি বাধ্য হয়ে নিজেই নিজের মানুষকে খুঁজতে যাচ্ছি।’

বাসায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে!
রাফসান এগিয়ে অবাক গলায়, ‘ ছোঁয়া কে খুঁজতে যাচ্ছিস কেন? ছোঁয়া কে দিয়ে কি করবি তুই? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তুই এই অবস্থায় ছোঁয়া কে কেন খুঁজতে যাচ্ছিস!’
নিবিড় চিৎকার করে বলল,’ বিকজ আই লাভ ছোঁয়া। ভালোবাসি ওকে আমি!’

প্রত্যেকটা ব্যক্তি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে এমন কিছু কারো কল্পনাতেও ছিল না। তিনজন মানুষ চমকালো না। আবির , নিলাশা বেগম, আর তাহমিনা। হতবিহ্বল চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

তাহমিনা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। ওর জন্য আজকে সবকিছু হচ্ছে ওর জন্য ছোঁয়া নিবিড়ের জীবন থেকে চলে গেছে দুটো ভালোবাসার মানুষকে ওই আলাদা করে দিয়েছে। ভাবতেও বুকটা ফেটে যায়। যে মেয়েটা ওর ভালোবাসা ওর জীবনটা সাজিয়ে দিল। তার জীবনটা ও অগোছালো করে দিল মেয়েটাকে শহর ছাড়তে বাধ্য করল।

আবির মাথা নিচু করে বসে আছে। ভাইকে বলার মত কোন খবরও পায়নি কি বলবে এজন্য বাহানা দিচ্ছিল। আসলেও তো অনেক আগেই ছোঁয়া কে খুঁজতে গিয়েছিল। কিন্তু সে বাসায় পাইনি আর লিলি আপুর মায়ের থেকে জানতে পেরেছে লিলি আপুর বিয়ের রাতের পর দিন থেকে ছোঁয়া কে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি বাসা ফাঁকা। কেউ খোঁজ খবর দিতে পারেনি যতোটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছে।

এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে খুঁজে যাচ্ছে। ভার্সিটিতে গিয়েও জানতে পেরেছে ছোঁয়া নাকি কিছুদিন আগেই ট্রান্সফার লেটার নিয়ে নিয়েছে। অন্য কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য এখান থেকে টিসি নিয়ে গেছে। কিন্তু এখান থেকে কোন কলেজে যাবে সেই সবকিছু কলেজের স্যাররা বলতে পারেনি।

ছোঁয়া নাকি বলেছে লেখাপড়া করতেও পারে নাও করতে পারে যদি করে এজন্যই টিসি নিচ্ছে। এখনো নাকি জায়গা ঠিক হয়নি তাই কিছু বলতে পারেনি। এই সবকিছুতে একটা জিনিসে বুঝতে পেরেছে আবির অনেকদিন ধরে ছোঁয়া এসব কিছু বন্দোবস্ত করছিল। সবার আড়ালে যাওয়া কেউ যাতে খুঁজে না পায় বিশেষ করে নিবিড়।

ও জানতো ও চলে যাওয়ার পর নিবিড় পাগলের হয়ে যাবে পাগল প্রায় ওকে খুঁজে বের করবে এজন্য কোন প্রমাণ রেখে যায়নি। কোথায় গিয়েছে।
এমন খবর নিজের অসুস্থ ভাইকে জানানোর সাহস হয়নি আবিরের। তাইতো তালবাহানা করে যাচ্ছিল। ভেবেছিলাম ভাইয়া আগে সুস্থ হোক তারপর যা বলার বলবে কিন্তু ভাই তো আগে থেকেই পাগল হয়ে যাচ্ছে। এবার মনে হয় না বলে উপায় নাই।

নিলাশা বেগম এবার জীবনে যে কাজটা করে না সেই কাজটা করল। নিবিড়ের গালে থাপ্পড় মেরে বললো, ‘ওই বজ্জাত মেয়েটার খোঁজ করতে যাচ্ছ এত বড় সাহস তোমার? চালচুলো হীন গাইয়া একটা মেয়ে তাকে তুমি ভালোবাসো সেটা আবার গলা উঁচু করে বলছো লজ্জা করে না তোমার?

অনেক সহ্য করেছি ভেবেছিলাম ওই মেয়ে চোখের আড়াল হলে তুমি শুধরে যাবে কিন্তু এখন এই অবস্থায় পাগলামি করে যাচ্ছো! আমার দুই ছেলে মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
নিবিড় থাপ্পর খেয়েছে তাতে ওর কোনো ভাবান্তর হলো না। কিন্তু সন্দেহীন চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,, ‘ তুমি আগে থেকেই জানতে?’

‘ হ্যা জানতাম। আমিই তো ওই মেয়েকে তোমার জীবন থেকে চলে যেতে বলছি‌।’
নিবিড় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন। ওম মম ওর জীবন থেকে ছোঁয়া কে চলে যেতে বলেছে কথাটাও হজম করতে পারছে না।

‘তুমি কি জানতে না? ছোঁয়া কে আমি ভালোবাসি নিজের জীবনের সুখ মনে করি!’
নিলাশা বেগম বললেন, ‘এসব তোমার ভুল ধারনা, পাগলামি এটা ভালোবাসা না। ওই মেয়েটাকে তুমি ভালবাসতেই পারো না ও তোমার স্ট্যান্ডারের না। ওই মেয়ে তোমার যোগ্য না এখন তুমি যেটাকে ভালোবাসার মনে করছো কয়দিন পর সেটা তোমার আর ভালোবাসা মনে হবে না ও চলে গেছে এবার তুমি বুঝতে পারবে তোমার জীবনে কিছুই ছিল না। তুমি ভুলে যাবে খুব তাড়াতাড়ি ওকে।মমের কথা শোনো মম তোমার খারাপ চায়না।’

নিবিড় পাথরের ন্যায় বসে আছে। হঠাৎ বলে উঠল,’মম এটাই বোঝাতে চাচ্ছ আমি ছোঁয়া কে ভালোবাসি না। তাই তো??’
নিলাশা বেগম ভাবল ছেলে বোধহয় মেনে নিয়েছে। তিনি বললেন, ‘ অফকোর্স এটা তোমার ভালোবাসা না তুমি কয়দিন গেলেই বুঝতে পারবে।’

নিবিড়ের চোখ লাল হয়ে উঠেছে মুখটা রক্ত হয়ে গেছে, রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলল।
রাগে চিৎকার করে বলল, ‘ কাজটা তুমি ভাল করনি মম। আমার কাছ থেকে তুমি ছোঁয়া কে সরে যেতে বললে ঠিক করেনি। তুমি আমার সুখ কেড়ে নিয়েছো, তুমি আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছো।কেমন মম তুমি।

যেখানে ছোঁয়া কে হাসিমুখে মেনে নেয়া উচিত ছিল সেখানে তুমি উল্টা করেছ তুমি নিজের ছেলে অথবা ভাবোনি। ছোঁয়া আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না। আমি এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না। সেটা তুমি ভাবনি। নিজের ছেলের জন্য ও তোমার মায়া নাই।

ভালোবাসা না থাকলে তুমি আমার ভালবাসা কেড়ে নিতে পারতে না। এখন আমার কেমন লাগছে জানো মম। মন চাচ্ছে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেই। এই কাজটা যদি তুমি ছাড়া অন্য কেউ করত তাকে আমি আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতাম। সম্পর্ক শেষ করে দিতাম। কিন্তু তোমার সাথে এটা কি করে করব বলো। ছোঁয়া কে যতটা ভালোবাসি তার থেকেও তিন গুণ বেশি আমি তোমায় ভালোবাসি মম। এমন আঘাত কেন করলে তুমি।’

বলতে বলতে নিবিড় বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো। আবির দৌড়ে এসে ভাইকে ধরল ওর চোখেও পানি চলে এসেছে।
রাফসান কাকা নিবিড়ের কাছে এসে অবাক থমকানো গলায় বলল, ‘ তুই ছোঁয়া কে ভালবাসিস? ভাবি তুমি এসব করছে। ছোঁয়া তো খুব ভালো একটা মেয়ে ওকে মানতে তোমার সমস্যা কি?

কাজটা তুমি একদম ঠিক করনি। নিবিড় তোর কাকা তোর পাশে আছে আমি খুঁজে বের করবো তুই এত হাইপার হস না। ডাক্তার কি বলেছে তুই সময়ের আগেও হাঁটতে পারিস তুই অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাচ্ছিস। ঠিকমতো ওষুধ খা নিজেকে সুস্থ করে আগে আমি আবির সাথে আছি। আমরা নিজেদের মতো খুঁজি তুই বাসায় থাকিস এই অবস্থায় বের হস না।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪৯

তাহমিনা ভাবছে নিবিড় যদি জানে তার মায়ের সাথে সে ও ছিল তাহলে তার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে দিবে। আর রাফসান সেও তো সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছে। আমি যে এসবের পিছনে সে আছি জানলে রাফসান কি রাগ করবে আমার সাথে।

অবাধ্য প্রেম শেষ পর্ব