অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৭

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৭
সাবরিন জাহান

খুনশুটি,হাসি ঠাট্টা, ঝগ/ড়া নিয়েই পার হলো একসপ্তাহ।আজ আয়ুশী আর আয়ানের গায়ে হলুদ! আয়ান আয়ুশীকে হলুদ লাগিয়ে নিচে নামছিলো ডেইজি!ছাদে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে!আজকে খুব একটা ভালো করে হাঁটতে পারছে না শাড়ি পড়ে!শাড়ি ঠিক করতেই রুমে যাচ্ছিলো ও!সিড়ি থেকে নামতে গিয়ে অসাবধানতায় শাড়িতে পা বেজে পড়ে যেতে নিলেই কেউ একজন আগলে নিলো।

কোনো পুরুষালি হাত নিজের উন্মুক্ত পেটে আবিষ্কার করলো ও!শাড়িটা সরে গেছে কখন টেরও পায়নি!হিতাহিত জ্ঞান ফিরতেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে জোড়ে একটা চ’র মা’র’লো হাতের অধিকারী কে!আফরান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!ডেইজি জ্ঞান শূন্য হয়ে রইলো…কিছুই বুঝতে পারলো না কি করছে বা করেছে!উপায় না পেয়ে শাড়ির আঁচল ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিয়ে আরেক হাতে কুচি ধরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো ও!আফরান এখনও অবাক হয়ে ওখানেই গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে!ঘটনার আকস্মিকতায় দুইজনই স্তব্ধ!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুমে এসে বিছানায় বসলো ডেইজি!ছোট থেকে ফাহিন ও আয়ানের সঙ্গ পেতো বেশি বলে অন্য কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানায়নি!বিদেশে আর সবাই ছোট ছোট ড্রেস পড়লেও, ও আয়ানের কথামত শালীন পোশাকে নিজেকে আবদ্ধ রাখতো! আয়ান আর ফাহিন বন্ধু হলেও কখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি!এমনকি বিদেশে থাকাকালীনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি!আজ প্রথম কোনো পুরুষের হাতের ছোঁয়া পেয়েছে!

পুরো শরীর ওর ঘিন ঘিন করছে! কিছুক্ষন বাদে শান্ত হলো ও…পুরো ঘটনায় আফরানের কোনো দোষ ছিল না। সে তো ওকে পরা থেকে বাঁচাতেই সাহায্য করলো! পেটে হাত রাখা ব্যাপারটা সম্পূর্ণ একটি দু’র্ঘটনা..এভাবে ওকে মা’রাটা ঠিক হয়নি!দু হাতে চুল খামচে ধরলো ও….জীবনটা ওর বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।সত্যি কি এই এলোমেলো জীবনে কাউকে আনা দরকার?

সীমা আর ইভার ফটোশুট করছে ফাহিন।দুইজন একপ্রকার জোর করেই ছবি তুলছে ওকে দিয়ে!বেচারা ওদের কারণে নিজের বউয়ের কাছে যেতে পারছে না!
“ডিয়ার শালিকারা!আর কত ছবি তুলবে তোমরা?”
“ভাইয়া,মাত্রই তো কয়েকটা হলো!”(সীমা)
“দুইশো প্লাস হয়ে গেছে!”
“না ভাইয়া আর লাগবে না!”(ইভা)
ফাহিন এতক্ষণে রেহাই পেলো!সোজা চলে গেলো স্টেজের কাছে!
সীমা ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,”আমার তো হয়নি!”

“উফফ,শিম!ভাইয়া কি নিজের বউ এর ছবি তুলবে না নাকি?”
সীমা কিছুক্ষণ ভাবলো…
“তাও ঠিক!”
হুট করেই ওর দুই গালে কেউ হলুদ লাগিয়ে দিল!
“কোন ফা’জিল রে?আমার মেকআপ নষ্ট করলো!”
বলে পিছে ঘুরতেই নাহিমকে দেখতে পেলো! চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে গেলো!ইভা ওদের একান্ত সময় দিতে আলাদা হয়ে গেলো!

“আপনি?”
“কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিস নাকি?”
“না মানে,আপনি না বললেন আসবেন না?”
“এখন মন চাইলো,এসে গেলাম!”
সীমার উত্তরটা পছন্দ হলো না।বেশি আফসোস হচ্ছে ওর হলুদ নিয়ে!এত কষ্ট করে সাজলো,আর ঠিক মত ছবি না তুলেই মেকআপ নষ্ট করে দিলো।রাগে ফুসে উঠলো ও!নিজের গাল থেকে হলুদ নিয়ে নাহিমকে বললো,”ওই ছেলেগুলো কি কিউট না?”
নাহিম তৎক্ষণাৎ সীমার দৃষ্টি অনুসারে তাকালো!সেই ফাঁকেই সীমা ওর গালে হলুদ লাগিয়ে দৌড়ে স্টেজের দিকে গেলো! নাহিম বির বির করে বললো,”ফা’জিল মাইয়া!”

স্টেজে আয়ুশীর দুইপাশে বসে আছে ইহরা আর ফাহিন। দুইজনই আয়ুশীর সাথে বসে ছবি তুলছে। আয়ান গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সেও যে এখানে আছে তার কোনো হুস এদের নাই। আফরান ওদের ছবি তুলে দিচ্ছে।মন খারাপ করে থাকা ওর ডিকশনারিতে নেই!কিছুক্ষণ পরেই ডেইজি এলো । আফরান এক পলক ডেইজিকে দেখে ছবি তোলায় মন দিল।ব্যাপারটা ডেইজির মনে দাগ কাটলো! আর দিন তো একবার তাকালে কেউ না বলা অব্দি চোখ সরতো না ওর! ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ওদের কাছে দাড়ালো! ইহরা ওকে নিজের পাশে বসালো!আফরান চারজনের ছবি নিতে গিয়েও থেমে গেলো!ক্যামেরায় চোখ রেখেই বললো,”হাসি মুখ ছাড়া ছবি ভালো আসে না!”

ইহরা না বুঝে বললো,”মানে?”
আফরান ওদের ডেইজির দিকে তাকিয়ে বললো,”স্মাইল প্লিজ!”
তিনজনের নজর ডেইজির উপর গেলো!এতে ডেইজি ভরকে গেল। মেকি হাসি মুখে ফুটিয়ে তুললো!
“ভাই এবার আমাকেও ফ্রেমে নে!”(আয়ান)
সবাই এক সাথে হেসে উঠলো….

বাড়িতে মানুষ গিজ গিজ করছে।সীমা,ইভা, ইহরা,আয়ুশী আর ডেইজি সহ আরো দুইটা মেয়ে একসাথে এক ঘর শেয়ার করছে!এত লোকের মাঝে ঘুম আসছিল না ডেইজির!তাই একটু রুমের বাইরে এলো!ভালো লাগছে না কিছু ওর…করিডোরের শেষ প্রান্তে গিয়ে জানালার কাছে দাড়ালো ও!ওখান থেকেই ছাদের সিড়ি! হঠাৎ খেয়াল হলো ছাদের দরজা খোলা! সাধারণত এই সময় দরজা খোলা থাকে না!কেউ ভুলে খুলে রেখেছে ভেবে উঠে গেট লাগিয়ে দিতে নিলো!তখনই কেউ হাত দিয়ে বাঁধা দিলো! আফরান বিচলিত কণ্ঠে বললো,”ওগো বিদেশিনী,আমাকে কি ছাদে বন্দী বানানোর প্ল্যান করছো?”

“আপনি এত রাতে?”
“আমার কাজ করছিলাম!”
বলেই দূরে গিয়ে দাড়ালো!ডেইজি ফিরে যেতে নিয়েও যায় না!ভিতরে ঢুকে আফরানের কাছে দাড়ালো!
“সিগারেট খাচ্ছিলেন বুঝি?”
“নাতো!”
“মিথ্যে বলা লাগবে না!লুকিয়ে রাখলে কি হবে?ধোয়া উড়ছে!”
আফরান হেসে সিগারেট নিভিয়ে দিয়ে বললো,”বদভ্যাস হয়ে গেছে!চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি!”
ডেইজি কিছু বললো না।

“এত রাতে যে?”
“ঘুম আসছিলো না ,তাই হাঁটতে বের হলাম!”
“ওহ!”
“দুঃখিত!”
“তখনের ব্যাপারটা নিতান্তই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা!ওটা নিয়ে সরি বলার কিছুই নেই!”
“আমার তো আপনাকে ওভাবে মা’রা…”
ডেইজিকে থামিয়ে আফরান বললো,”আপনি একজন মেয়ে!সেখানে আপনার ওভাবে রিয়েক্ট করা ভুল কিছুই ছিল না।আমি কিছু মনে করিনি!”

“তবে ছবি তুলার সময় আমার দিকে ঠিক মত তাকালেন না কেনো?”
আফরান ভ্রু কুঁচকে তাকালো!ডেইজি জিভ কাটলো!মুখ ফসকে বলে ফেলেছে কথাটা!আফরান ঠোঁট চেপে হেসে বললো,”আপনি এসবও খেয়াল করেন!”
ডেইজি আমতা আমতা করতে লাগলো।ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে ওর।ওর অস্বস্তি বাড়িয়ে আফরান আবার বললো,”আমার তাকানোটা মিস করেছেন বুঝি?”
“আমি ওটা বলিনি!”

আফরান জোড়ে হেসে ফেললো।ডেইজির দিকে একটু ঝুঁকে বললো,”আপনার দিকে তাকালে চোখ সরানো দায় বিদেশিনী!তাই তো তাকাইনি!যদি এত লোকের সামনে অস্বস্তিবোধ করেন…যেমন এখন করছেন!”
আর এক মুহূর্ত থাকলো না ডেইজি!দৌড়ে বেরিয়ে এলো!তাই দেখে হেসে ফেললো আফরান…
“বিদেশিনীর মনের কোটর আস্তে আস্তে খুলছে মনে হয়!”
ভেবেই আরেকটা সিগারেট ধরালো!

রুমের সামনে এসে হাপাতে লাগলো ডেইজি! কি অদ্ভুত অনুভূতি…বুকের মাঝে যেনো উত্থাল পাতাল শুরু হয়েছে!তখনকার কথা বলার জন্য নিজেকে নিজেই বকলো ও।রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখলো আয়ুশী নিজের জায়গায় নেই!বেলকনিতে উকি দিতেই দেখলো আয়ুশী পাশের বেলকনিতে থাকা আয়ানের সাথে কথা বলছে!অন্ধকারে হয়তো খেয়াল করেনি ডেইজি রুমে নেই!উকি দিয়ে ওদের খুনশুটি দেখতে লাগলো ও।
আয়ুশী আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,”আজকে মনে হয় অমাবস্যা!চাঁদের দেখা নেই কোনো!”
“কোথায় আমার কাছে তো পূর্ণিমা লাগছে!”

আয়ুশী বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”চাঁদ না থাকলে পূর্ণিমা হবে কি করে?”
“চাঁদ আছে তো!”
আয়ুশী কোমরে হাত দিয়ে বললো,”কোথায়?আমি দেখতে পাচ্ছি না কেনো শুনি?চাঁদ কি আপনাকেই দেখা দিচ্ছে শুধু?”
আয়ান হেসে বললো,”আয়নার সামনে গেলে ঠিকই দেখতে পারবে!”
কিছুক্ষণ ভেবে কথাটার মানে উদঘটন করলো ও!মাথা নিচু করে ঠোঁট চেপে হাসলো!সেই হাসিতেই আবার মুগ্ধ হয়ে আয়ান বললো,”আমার ব্যাক্তিগত চাঁদ তুমি! একান্তই ব্যক্তিগত…”

আয়ুশী আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে নিলো।মনে মনে বললো,”আম্মু,আব্বু…তোমরা দেখতে পাচ্ছো আমায়?দেখো না!তোমাদের মেয়ের এক বিশাল প্রাপ্তি হয়েছে!এমন এক মানুষ যে কিনা আমার ব্যাক্তিগত সম্পদ.. একান্তই আমার!”
এদিকে আয়ান নিষ্পলক তাকিয়ে আয়ুশীকে দেখতে ব্যাস্ত!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৬

ওদের মুহুর্ত দেখে তৃপ্তির হাসি হাসলো ডেইজি!আচ্ছা সেও তো এমন ভালোবাসা পেতে চায়!সে কি পাবে?মুহূর্তেই আফরানের মুখ ভেসে উঠলো।মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটলো।পরক্ষণেই হাসি মিলিয়ে দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই চা’টি মে’রে বললো,”পা’গল হয়ে গেছি নাকি?কিসব ভাবছি…ঘুমানো প্রয়োজন!”
বলেই চাদর মুড়ো দিয়ে শুয়ে পড়লো!ভাবতে ইচ্ছুক নয় এখন কাউকে নিয়ে…

অবেলায় ভালোবাসি শেষ পর্ব