অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৫

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৫
সাবরিন জাহান

বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে আয়ান আর আয়ুশীর!আজ থেকে এক সপ্তাহ পর ওদের বিয়ে!সবাই প্ল্যানিং এ ব্যাস্ত!আয়ুশী গালে হাত দিয়ে সবার প্ল্যানিং শুনছে! আয়ান আর ফাহিন গেছে ফাহিনের কাজিনকে রিসিভ করতে!আয়ুশী অপেক্ষা করছে সীমা আর ইভার আসার!বিয়েতে ফ্রেন্ড ছাড়া মজা হয় নাকি?আলোচনার ফাঁকেই ডেইজির মায়ের কল এলো!ডেইজি একটু আলাদা হয়ে গেলো কথা বলতে!

“হ্যাঁ মম বলো!”
ডেইজির মা বাংলা বুঝলেও ইংরেজিতেই কথা বলেন!
“কি ব্যাপার ডেইজি?তুমি দেশে কবে আসবে?”(নোট – কথা গুলো গল্পের ভারসাম্য রাখতে আর বোঝার সুবিধার্থে বাংলায় লিখলাম!)
“মম,বললাম তো!বিয়ে শেষ হোক,তারপর!”
“ছেলে পক্ষ কি তোমার জন্য এতদিন অপেক্ষা করবে?”
“অপেক্ষা না করলে বিদায় করো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হোয়াট?এমনেই তুমি পড়াশোনা শেষ করার জিদ করে নিজের বয়স বাড়িয়েছো!এখন এক ছেলে পক্ষ গেলে আরেক ছেলেপক্ষ পাবে কোথায়?”
“প্লিজ মম,আমি এসব শোনার মুডে নেই!”
“তুমি এত জেদী কেনো ডেইজি?তোমার কি মনে হয়?বয়স জানার পর কেউ তোমায় বিয়ে করবে?”
“করলে না করুক!”

বলেই ফোন কেঁটে দিলো!বিয়ের জন্য ওর মা বাবা যেনো পাগল হয়ে গেছে!ওর মা আবার ফোন করলেও ধরলো না!সাইলেন্ট করে রেখে দিলো!ফোনের দিকে তাকিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলো ও!হুট করেই করো বুকের সাথে ধাক্কা লাগলো ওর!চোখ তুলে সামনে তাকাতেই সুঠাম দেহের অধিকারী এক যুবককে দেখলো!ডেইজির চোখ আপনাআপনিই ছোট হয়ে গেলো!সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”কে আপনি?”
পিছন থেকে আয়ান ট্রলি আনতে আনতে উত্তর দিলো,”ও আফরান! ফাহিনের ফুফাতো ভাই!”
“ওহ!”

বলেই নিজের জায়গায় বসলো!কিন্তু আফরান ওভাবেই দাড়িয়ে রইলো!এক মিনিটের জন্য ওর হার্ট অ্যাটাক হয়নি!ফর্সা মুখ,হালকা গোল্ডেন ,সেই সাথে রিবন্ডিং করা পিঠ অব্দি পড়ে থাকা চুল…কোনো সাজ সজ্জা ছাড়াই অপূর্ব লাগছে!মেয়েটি বিদেশি তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।তার মানে সে বিদেশিনী!বিদেশিনী কথাটা মাথায় আসতেই ওর মনে একটাই গান বাজতে লাগলো!
“আমি চিনি গো চিনি তোমারে,ওগো বিদেশিনী!”
পিছন থেকে ফাহিন এসে জোড়ে একটা কি’ল ওর পিঠে বসিয়ে দিল! বিদেশিনীর কথা ভুলে আপাতত ব্যাথায় আর্তনাদ করলো ও!ওরা সমবয়সী ই!

“স্ট্যাচুর মত এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভূত দেখলি?”(ফাহিন)
“ভূত না বন্ধু,ভূত না!পরী…”
“মাথা গেছে তোর?”
“মন গেছে রে!”
ফাহিন কিছুই বুঝলো না।এসব পাত্তা না দিয়েই টানতে টানতে ওকে নিয়ে আলোচনা সভায় গেলো!
“মামনি দেখো তো চিনো নাকি?”
নাহার ফাহিনের কথায় হেসে বললেন,”আরে চিনবো না কেনো?তোরা না থাকতে ওই তো এসে আমাদের আর তোর মা বাবার খবর নিতো!”

আফরান নিজেকে ছাড়িয়ে নাহারের পায়ের কাছে বসে বললো,”এরা ভাবে আমি কোনোদিন তোমাদের কাছেও আসিনি!”
“আসো নাই ই তো,আমি কিন্তু বেশ অভিমান করেছি!”
“এমা কেনো?”
“আয়ান আসার পর তো একবারও আসো নি!”
“আন্টি, বুঝোই তো কাজ থাকে!”

ফাহিন ওকে তাচ্ছিল্য করে বললো,”ও তো আমার বিয়েতেই আসেনি! নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ব্যাস্ত এখন!”
“আমাকে তোর মত পেয়েছিস নাকি,যে মেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকবো?”
ফাহিন চোখ বড় বড় করে ইহরার দিকে তাকালো! ইহরা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! ফাহিন আফরানের পিছে দিলো এক লা’থি!আফরান আবারও ব্যাথায় আর্তনাদ করলো।নাহারের কাছে বিচার দিয়ে বললো,”দেখো আন্টি,কিভাবে মা’রছে ফাহিন!”
“মিথ্যা কেন বলিস?”
“মজাও করতে পারবো না নাকি!”

নাহার ওদের থামিয়ে বললো,”হয়েছে হয়েছে,এখন যাও।ফ্রেশ হয়ে আসো!”
“আরে আগে আমার ভাবীকে তো দেখাও!”
ফাহিন ওর মুখ প্রথমে ইহরার দিকে ঘুরিয়ে বললো,”এটা আমার ভাবী!”
ইহরা চোখ বড় বড় করে বলল,”আমি তোমার ভাবী?”
ফাহিন জিভ কেটে বললো,”সরি,আমার বউ ,তোর ভাবী!”
আফরান হেসে বললো,”হাই ভাবী!”
ইহরা হাসলো!

এরপর আয়ুশীর দিকে ধরে বললো,”এইযে আয়ানের হবু বউ,তোর ভাবী!”
মুহূর্তেই আফরান এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো!আয়ুশীর অস্বস্তি হতে লাগলো!কিছুক্ষণ পরেই অস্ফুট স্বরে বললো,”মাশাআল্লাহ!”
সঙ্গে সঙ্গে গালে চ’র পড়লো!আফরান গালে হাত দিয়ে চ’রদাতার দিকে তাকালো। আয়ান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকিয়ে আছে!উপরে আফরানের ট্রলি রাখতে গিয়েছিল!সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখলো আফরান মুগ্ধ দৃষ্টিতে আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে আছে।এটা আয়ানের সহ্য হলো না!

“শা’লা, ভাবী হয় তোর!”
“তুই আমায় মা’রলি কেনো?”
“তুই ওভাবে আমার বউকে দেখছিস কেনো?”
“আমি তো বিদেশিনীকে দেখছিলাম!”

মুহূর্তেই সবার চোখ ডেইজির দিকে গেলো।ডেইজি ভ্রু কুঁচকে তাকালো!আয়ুশীর কাছে ডেইজি বসে ছিলো।ডেইজিকে দেখেই ওভাবে তাকিয়ে ছিলো।এক পর্যায়ে দেখলো ডেইজি ওর সামনের ছোট চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিলো।তখনই আফরান বললো মাশাআল্লাহ! আফরানের কথা শুনে ডেইজি বললো, “এক্সকিউজ মি,বিদেশিনী কে?”
আফরান ভরকে গেলো।চ’রের চোটে মুখ ফসকে বলে দিলো!

“ইয়ে মানে আপনি!আসলে কখনো বিদেশী মেয়ে দেখিনি!আপনাকেই প্রথম দেখলাম,তাও বাঙালি পোশাকে।তাই…”
“ওহ!”, ছোট করে উত্তর দিয়ে লিস্ট করতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো! আফরান কোমর ধরে,গালে হাত রেখে উঠে দাড়ালো!আফসোসের সুরে বললো,”” আসতে না আসতেই এত মা’র খেতে হচ্ছে!এক সপ্তাহে না জানি কি কি হবে!”
আয়ান ওর গলা জড়িয়ে “আরে আরে,মা’র বলিস কেনো?এটা ভালোবাসা!”
ফাহিন ও গলা জড়িয়ে বললো,”হয় ভালোবাসা!”

ইহরা ফোঁড়ন কেঁটে বললো,”তোমাদের ছেলে ছেলে ভালোবাসা শেষ হলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো!”
তিন জন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।ইহরার কথার মানে বুঝতেই একসাথে বলে উঠলো,”ষীহ!”
আয়ুশী আর ডেইজি ফিক করে হেসে দিলো!ডেইজির হাসি দেখে আফরান বাম বুকে হাত দিয়ে মিন মিন করে বললো,”হায়!কিতনি সুন্দর হাসি….”

আয়ুশীরা ওর কথা না শুনলেও ফাহিন আর আয়ান শুনে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো!আফরান ওদের চাহুনি দেখে বললো,”ফ্রেশ হতে যাওয়া দরকার!”
বলেই ওদের ছাড়িয়ে দৌড় দিলো!
“ওই দাড়া!” (বলেই ফাহিন আর আয়ানও পিছু গেলো)
নাহার আফসোসের সুরে বললো,”এরা এখন বাচ্চাদের মতো ঝ’গ’ড়া করছে…”
আয়ুশীরা আর ওদিকে না তাকিয়ে প্ল্যানিংয়ে মনোযোগ দিলো।

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বাইরে আসতেই আফরান দেখলো ফাহিন আর আয়ান বিছানায় বসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে! ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সেটাও লক করে রেখেছে!বুঝতেই পারছে আজ আর ছাড় নেই!তোয়ালে চেয়ারে রেখে ওদের মাঝে বসে পড়লো!
“বল কি বলবি?”
“নিচে অমন ব্যাবহার করলি কেনো?”(ফাহিন)
“কি চলে তোর?”(আয়ান)
আফরান ওদের পাত্তা না দিয়ে বসা অবস্থাতেই মাথার নিচে দুই হাত রেখে শুয়ে পড়লো!ভাবুক কুমার হয়ে বললে,”প্রথম দেখাতেই বিদেশিনীর প্রেমে পড়েছি বন্ধুগন!এখন আর উঠার ইচ্ছে নেই!”
আয়ান আর ফাহিন ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,”ওহো!”

দরজায় বেল বাজার শব্দ শুনতেই আয়ুশী উঠে গেলো!দরজা খুলে কাউকেই পেলো না!কেউ মজা করেছে ভেবে আবার লাগিয়ে আসতে নিলো,তখন আবার বেল বাজলো!কিন্তু আবারও খুলার পর দেখলো কেউ নেই!এবার বেশ বিরক্ত হলো!এভাবে বেশ কয়েকবার হওয়ার পর আয়ুশীর ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙলো!দরজা খুলে বাইরে গিয়ে উকি ঝুঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না!ক্ষিপ্ত গলায় বললো,”কোন বা’ন্দর রে?”

তখনই ওর পিছ থেকে,”ভাউ!” ,বলে সীমা আর ইভা লাফিয়ে পড়লো!হুট করে এমন হওয়ায় বেশ ঘাবড়ে গেলো!বুকে থু থু দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাতেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো ওরা!কিছুক্ষণ বাদেই দেখলো জুনাইদ আর নাহিম দুইজন দুইটা ব্যাগ কাধে করে নিয়ে আসছে!ওদের দেখে ওখানেই রাখলো ব্যাগ দুটো!
“বুঝলাম না তুমি এক সপ্তাহের জিনিস এনেছো,নাকি এক মাসের?”(জুনাইদ)
“আমারও একই প্রশ্ন!এত ভারী কেনো তোর ব্যাগ?”(নাহিম)
“আরে বাবা,বিয়ে বলে কথা!জিনিস তো লাগবেই!”(ইভা)

“তাই বলে এত?”(জুনাইদ)
“আরে দুলাভাই!আপনি তো বিয়ে করেছেন , জানেনই তো কত সাজসজ্জা লাগে!”(সীমা)
“বাবা রে,জানি না আবার?বিয়ে ছাড়াই তো এর সাজসজ্জার কোনো সীমা নাই!বিয়ের সময় তো আরো লাগবে!”(জুনাইদ)
“কি বললে?”(ইভা)
জুনাইদ মেকি হেসে বললো,”কিছু না!”

“এই ওয়েট ওয়েট!তোমরা সব এক সাথে এসেছো?”(আয়ুশী)
“আরে না,বাড়ির সামনে আসতেই দেখা হয়ে গেলো!”(ইভা)
“আমাকে তো নাহিম ভাইয়া এনেছে!”(সীমা)
নাহিম ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি বললি?”
ইভা হেসে বললো,”শিম,কয়েকদিন পর যাকে বিয়ে করবি তাকে এখনও ভাইয়া ডাকিস?”
“বোঝাও তোমার বান্ধবীকে!”(নাহিম)
“কেউ যদি আমাকে তুই ডাকে আমার কি করার আছে?হবু বউকে কেউ তুই ডাকে?”(সীমা)
নাহিম মাথা চুলকালো!

“আচ্ছা ইভা আমি গেলাম!”(জুনাইদ)
“সেকি ভাইয়া,আপনি থাকবেন না?”(আয়ুশী)
“উনি বিজনেস এর কাজে বাইরে যাবে!তাই তো আমি এখানে থাকার পারমিশন পেলাম!”(ইভা)
জুনাইদ হেসে বললো,”বুঝোই তো!”
“বিয়েতেও আসবেন না?”(আয়ুশী)
“বিয়েতে অবশ্যই আসবো!”
“তাতেই হবে! নাহিম ভাইয়া আপনি তো থাকবেন?”
“না না,আমার কাজ আছে!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৪

সীমা মনে মনে বলে,”কাজ না ছাই!এভাবে কোনো সম্পর্ক ছাড়া হবু বউয়ের ফ্রেন্ডের শ্বশুর বাড়িতে থাকা ঠিক হবে না বলেই থাকতে চাচ্ছে না!”
“আচ্ছা বেশ!অন্তত ছোট আম্মুর সাথে দেখা করে যান!”
ওরা দুইজনেই ভেবে দেখলো!এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না!তাই নাহার আর বেলালের সাথে দেখা করে গেলো….

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৬