অশ্রুবন্দি পর্ব ৬২

অশ্রুবন্দি পর্ব ৬২
ইসরাত জাহান ফারিয়া

‘আকিকা অনুষ্ঠানের যাবতীয় আয়োজনের ৫০% কন্ট্রিবিউশান যদি ইজহান শেখকে করতে না দেওয়া হয়, তার দেওয়া আইডিয়া যদি মেনে না নেওয়া হয় তাহলে কোনোরুপ আকিকা অনুষ্ঠান শেখ বাড়িতে করতে দেওয়া হবে না এবং ইজহান শেখ তার বউসহ, ইহসান কন্যাকে নিয়ে বাড়িছাড়া হবেন। কোনোদিন এ বাড়ি মুখো হওয়া তো দূরে থাক ইহসান শেখ তার কন্যাকে চোখের দেখা দেখতে পারবে কি না সেটাও তার বিবেচ্য বিষয়। তাই সবকিছু সুন্দর, স্বাভাবিক রাখতে হলে অবশ্যই অবশ্যই টনা-মনার আকিকা অনুষ্ঠানের ৫০% দায়িত্ব ইজহান শেখের উপর ছেড়ে দিলেই সকলের জন্য মঙ্গল।’

ত্রিশোর্ধ্ব একজন মানুষ যদি হুমকি দিয়ে এরকম বাচ্চামোপনা করে তাহলে তাকে ঠিক কী বলা যায়? ইহসান ভেবেছিল অনেক, কিন্তু সমাধান হিসেবে বলার মতো উপযুক্ত শব্দ, বাক্য কিছুই পায়নি। পাগলের পাগলামো দমিয়ে রাখতে সে নিদ্বির্ধায় অদ্ভুত অদ্ভুত শর্ত উল্লেখকৃত স্ট্যাম্পে সই করে ইজহান শেখের দাবিগুলো বিনা শর্তে মেনে নিয়েছে। শর্ত মেনে নেওয়ার ইজহান মহা খুশি তার ভেড়ার উপর। খুশি হয়ে সে কাস্টোমাইজড পাঞ্জাবি অর্ডার করেছে দেশের বিখ্যাত একটি পাঞ্জাবি ব্র‍্যান্ডে। অনুষ্ঠানে ভেড়াকেও তার মতো সেইম ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরতে হবে এটা সে আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছে। বিনা বাক্য ব্যয়ে ইহসান এটাও মেনে নিয়েছে। কারণ সে তার বাচ্চাদের নিয়ে এতই ব্যস্ত যে অন্যকিছুতে মনোযোগ দেওয়াটাও তার পক্ষে কঠিন। সেখানে নিজের কাপড় চুজ করাটা তো বিলাসিতা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তবুও অতি ব্যস্ততার মাঝে পরদিন একফাঁকে ইজহানকে অফিস থেকে ডেকে নিয়ে ওর পছন্দ মতোই সব কেনাকাটা সেরেছে ইহসান। ঘর সাজানোর সামগ্রী থেকে শুরু করে ডায়াপারটা পর্যন্ত নতুন করে নিয়েছে ইজহান। যেটা এই পাগলের চোখে লেগেছে সেটাই একবার দেখিয়ে পছন্দ হয় কি না জিজ্ঞেস করে সে তুলে নিয়েছে। ইহসানের মনে হচ্ছিল শুধু দোষ ফুরানোর জন্যই জিজ্ঞেস করেছে ইজহান। আদতে নিজের যেটা পছন্দ সেটাই নিচ্ছে। ওর ইচ্ছে করছিল ইজহান ছাগলটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। আজকাল তার মনে হয়, সে জন্ম দিয়েছে ঠিক কিন্তু বাচ্চাদুটোর উপর সব অধিকার এই ছাগলটার। আর সে শুধু এই ছাগলের ঘাস। যাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে শান্তি পাচ্ছে ছাগলটা।

ভার্সিটিতে পরীক্ষা চলছিল এলিজার। আজ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ইহসান আকিকার তারিখটা সেভাবেই ফেলেছে যাতে এলিজাও উপস্থিত থাকতে পারে। ওকে ছাড়া আকিকা অনুষ্ঠান করবে এটা সে ভাবতেও পারে না। এই ক’দিন টানা পরীক্ষা চলেছে বলে হাসপাতাল থেকে ফেরার পর এলিজা শেখ বাড়িতে গিয়ে একবারও দেখতে পারেনি পুঁচকু দুটোকে। শেখ বাড়িতে এর আগে একবারও যাওয়া হয়নি এলিজার। সে এই প্রথম যাবে তার বোনের স্বামীর বাড়ি, তার পুঁচকু সোনাদের বাড়ি। ওদের জন্য তো তাই কিছু উপহার নিতেই হবে। এক্সাম শেষ করে কিছু উপহার নেওয়ার উদ্দেশ্যে মলে ঢুকল এলিজা। অষ্টম তলার কিডস জোন থেকে বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা সারতে একঘন্টা সময় নিলো সে। বিল মিটিয়ে ব্যাগগুলো নিয়ে কিডস জোন থেকে বেরুতেই দেখা হয়ে গেল ইহসানদের সঙ্গে৷ এলিজাকে এখানে দেখে ইহসান সব ফেলে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করল ও
এখানে কী করছে? এলিজা জানাল সে তার বোনের মণ্ডামিঠাইদের জন্য উপহার নিতে এসেছে। এলিজাকে এখানে দেখে ইজহানও এগিয়ে এলো। জানাল, সেও তার টনা-মনার জন্য কেনাকাটা করতে এসেছে। সাপে-নেউলে সম্পর্কের দুই ভাই একত্রে শপিং করতে এসেছে দেখে এলিজা বিস্মিত হলেও সেটা প্রকাশ করল না।
সৌজন্যতা বজায় রাখল।

দুপুরের শেষ আর বিকেলের শুরু তখন। খাওয়া হয়নি কারোরই। ইহসান ওদের নিয়ে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসল। কিন্তু এলিজা তার টিউশনির বেতনে নিজ উদ্যোগে, একপ্রকার জোরপূর্বক দুই ভাই এবং ইজহানের ধমকিতে মুখ কালো করে রাখা মিজুকে ট্রিট দিলো। বিল দেওয়ার সময় আড়চোখে এলিজার পার্সে পড়ে থাকা তিনটে হাজার টাকার নোট দেখে ইজহানের কেন যেন লজ্জা লাগল। এতকিছু কেনাকাটা করার পরে তার পকেটে এই মুহূর্তে তিনটে হাজার টাকা নোটের দশগুণ ক্যাশ আছে। কার্ডে আছে লাখের মতোন। গাড়ির সামনে এসে বিদায়ের পূর্বে
সে এলিজাকে বলল, “তুমি আমাদের বাড়িতে চলো! অনুষ্ঠান তো কালই…”
“না ভাইয়া, একেবারে আগামী কালই যাব।”
“আজ নয় কেন?”

“বাসায় ফুপি একা। আমি ফুপিকে একা রেখে এখন আপনাদের সঙ্গে চলে গেলে ফুপির খারাপ লাগবে৷ রাগ করে দু’দিন ভাত খাবে না কেন তাকে রেখে আমি চলে গেলাম এই দুঃখে…”
মজা করে কথাটা বলল এলিজা। কিন্তু ইজহানের মানসপটে ইস্মিতার চেহারা বেসে উঠল। ইস্মিতার উপর রাগ করে সেও এমন করে। ইস্মিতাও কী তারজন্য এভাবেই চিন্তা করে ভেতরে ভেতরে? আহারে! বউটাকে সে কতো যন্ত্রণা দেয়! টিকে আছে কীভাবে এতগুলো দিন তার মতো একটা মানুষের সঙ্গে? ইজহান কিছুটা আবেগী হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কীভাবে জানো তোমার ফুপি ভাত খাবে না?”
“কারণ সে আমার ফুপি। আর আমি তাকে ভালোভাবেই চিনি।”

ঘটনা বহুল পরিচিত। কিছুদিন পূর্বের কাহিনীও। সৃজাদের বাড়ি গিয়েও এমন কান্ড করেছিল ইজহান। রাগ করে সে দু’দিন ভাত খায়নি। ইস্মিতা কত আদর করে জানপ্রাণ ডেকে রাগ ভাঙ্গিয়ে ওকে খাইয়ে দিয়েছিল! মনে পড়তেই ইজহান আবারও উদাস
হয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘আমিও আমার বউকে চিনি। আমি রাগ করে থাকলে সে-ও ভাত খায় না।’
বলামাত্রই মাথায় চাটি পড়ল ইজহানের। তীক্ষ্ণ ব্যথায় চোখমুখ খিঁচে মেজাজ হারাতে যাবে তখনি ইহসান ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, “তুই রাগ করলে যে তোর বউ ভাত খায় না, সেটা এলিজকে জানানোর কী দরকার? মাথামোটা, হাঁদারাম, নষ্ট!”
হুঁশ ফিরতেই ইজহান নিজের অপ্রস্তুত ভাব এড়াতে গাড়ির ডোর খুলতে খুলতে তড়িঘড়ি কণ্ঠে বলল, “কালই যেও তাহলে। সকাল সকাল। হু? এবারে গেলে কিন্তু অনেকদিন থাকতে হবে তোমাকে। টনার হাগুমুতুও পরিষ্কার করতে হবে। ঐ ব্যাটার সারাদিন ডায়াপার চেঞ্জ করতে হয়! আমি নিশ্চিত ওর বাপ ছোটোবেলায় আমাশয়ের পেশেন্ট ছিল…”

বলে ইজহান সিটে বসে মিজুকে তাড়া দিলো গাড়ি স্টার্ট দিতে। এলিজার সামনে উদ্ভট কথাবার্তা বলে মান-সম্মানের বারোটা বাজিয়ে দেওয়ায় ইহসান ক্ষেপে বলল, “আর তুই যে বারোমাসি ডায়রিয়ার রোগী ছিলি, সেটাও বল! আফটার অল তুই আমাকে কপি-পেস্ট করে চলে আসা ভাই।”
মিজু ততক্ষণে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। ইহসানের কথায় অপমানিত বোধ করলেও ইজহান তৎক্ষণাৎ কথা গোছাতে পারল না। তাই জানালা দিয়ে পা বের করে ইহসানকে লাথি দেখাল। বেয়াদবি সহ্য করতে না পেরে রাস্তা থেকে ইট তুলে ইহসান সেটা ছুঁড়ে মারল ইজহানের মুক্তোর মতো সুন্দর ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডোটার গায়ে। হতভম্ব এলিজা ওদের কান্ড দেখে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। হাসতে হাসতে বলল, “একটুও মিলেমিশে থাকতে পারো না দু’জনে! কীভাবে এক বাড়িতে থাকো তোমরা? আমি ভেবেছিলাম ইজহান ভাইয়া একটু পাগলামি করে কিন্তু এখন তো দেখছি তুমিও কম না। মাই গড! আমার আপু কীভাবে টলারেট করে তোমাকে?”
ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা ইহসান এলিজের হাসি দেখে আরো রেগে গেল, “মানে তুই আমাকে পাগল বললি এলিজ? আমাকে? দেখলি না ও আমাকে কীভাবে উগ্রে দিলো? চোখে ছানি পড়েছে তোর? যা! ছানি কাটানোর জন্য তোকে আমি পাগলের সাথেই বিয়ে দেব! এরপর দেখব, তোর আপুর মতো তুইও পাগল টলারেট করতে পারিস কি না!”
এলিজা ইহসানের রক্তিম চেহারার দিকে তাকিয়ে আবারো হাসিতে ফেটে পড়ল, “পাগল সামলানোর মতো আমার এতো ধৈর্য নেই। তাই আগে থেকেই বলে দিচ্ছি, এমন মানুষ আমি টলারেট করব না। নো, নেভার।”
“নেভার যখন এভার হয়ে যাবে তখন বুঝবি। চল এখন। তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

ভোরের দিকে রশিদের পরিচিত এক খামারির খামার থেকে গরু ও খাসি আনতে বেরিয়েছিল ইহসান। জবরদস্তি করে সঙ্গী হয়েছিল ইজহান আর মিজুও। ফিরতে ফিরতে ইহসানদের বেলা হয়ে গেছে। কিন্তু তীব্র গরমে বাড়ি ফিরে যখন দেখল ইভেন ম্যানেজমেন্টের লোকেরা টকটকে লাল গোলাপ দিয়ে পুরো বাড়িটাকে সাজাচ্ছে। আর বসার ঘরে কতজন অচেনা মহিলা তার দুটো অবুঝ শিশুকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে ; ইহসান রীতিমতো ‘থ’ বনে গেল। মকবুল এসে জানাল, এরা সকলেই আজিজ শেখের আত্মীয় গোষ্ঠী। আরো অনেকেই না কি পথিমধ্যে। সকলেই আজকের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত। এক-দু’জন বাদে এদের কাউকে ইহজনমে দেখেনি ইহসান, ইজহানও না।

মহিলাগুলো ‘টনা-মনাকে’ জোরপূর্বক এর কোল থেকে ওর কোলে নিয়ে নিয়ে কে দেখতে কার মতো, কার নাক খাড়া, কার গায়ের রঙ বেশি ভালো, দুটোই কেন ছেলে হলো না বা, দুটোই কেন মেয়ে না এসব নিয়ে আলোচনা করছে। এদিকে অপরিচিত মানুষের কোল থেকে কোলে যেতে অস্বস্তিতে, ভয়ে বাচ্চাদুটো গলা ফাটিয়ে কাঁদছে অথচ কারো কোনো হেলদোল নেই। পুনম চাওয়া স্বত্তেও বাচ্চাদেরকে ওর কোলে দেওয়া হচ্ছে না, ইহসান এসব পছন্দ করে না। এসে দেখলে খুব চটে যাবে, রাগারাগি করবে। এটা কেউ বুঝতেই চাইছে না। পুনম আর সালেহা বেগম অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে এসব কাহিনী দেখল ইহসান। ফুলের গন্ধে সারাবাড়ি ম ম করছে। বাইরে থেকে দেখলে এত সাজগোজ, এত মানুষ দেখে যে কেউ ভাববে এখানে আকিকা অনুষ্ঠান নয়, বরং কোনো বিবাহের অনুষ্ঠান হচ্ছে! বিরক্তিতে ইহসানের সবকিছু তেঁতো ঠেকল। পায়ের রক্ত তড়তড় করে মাথায় উঠতে লাগল। ইজহান ক্ষেপে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইহসান ওকে থামিয়ে দিয়ে ধীরপায়ে বসার ঘরে প্রবেশ করে চাপা, ক্রোধপূর্ণ স্বরে বলে উঠল, “দশ সেকেন্ডের মধ্যে ওদেরকে এখান থেকে না নিয়ে যেতে দিলে সবাইকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দেব!’’

ইহসানের ধমকিতে অপমানিত বোধ করলেন মহিলাগণ। ভয়ও পেলেন। তড়িঘড়ি করে পুনমের কোলে বাচ্চাদের তুলে দিয়ে আমতাআমতা করে বাচ্চারা যাদের কোলে ছিল তারা বলল, “দিয়া দিছি বাজান, দিয়া দিছি…”
মহিলাগুলো রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে। একে-অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। ইহসান একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। চোখদুটো বুজে নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে যথাসম্ভব শান্ত ও গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “আমি আপনাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি, কিন্তু আপনারা ওদের তুলনা করছিলেন যেটা আমার পছন্দ হয়নি তাই ধমক দিয়ে ফেলেছি। আমি দুঃখিত। এবার শুনুন, আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে আমার বাচ্চাদের খারাপ চাইবেন না। ওরা ফেরেশতা তুল্য। কিছু বোঝে না। ওদেরকে দোয়া করে দিন।”
মহিলাগুলো ওর ব্যবহারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাল। কেউ ওকে বুঝল, কেউ আবার গাল ফুলিয়ে বসে রইল। কেউ কেউ এসে আবার নিজে থেকে পরিচিত হলো। তবে বাচ্চাদেরকে সবাইই দোয়া করে দিলো।
ইহসান অতো সামাজিকতার মধ্যে পড়েনি এর আগে। সে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল তবুও চেষ্টা করল ভালো ব্যবহার করার।

ইহসান চেয়েছিল দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে। ছেলে-মেয়ের সুন্দর অর্থপূর্ণ নাম রাখবে, দোয়াদুরুদ পড়াবে, অতিথিদের ভালোভাবে আপ্যায়ন করা হবে, বাড়িটাকেও একটু-আধটু সাজানো হবে যাতে হৈ-হুল্লোড় ছাড়াও বাড়িটাকে চোখে দেখে শান্তি লাগে। মোটকথা, আজিজ শেখের মতো এতো জাঁকজমক না হলেও কোনো অংশে কম আয়োজন করবে না ইহসান তার সন্তানদের জন্য! ভেবেছিল এই লোক যা খুশি করুক, সে তাতে মাথা ঘামাবে না। কিন্তু এখন এসব বাড়াবাড়ি নিতে পারছে না ইহসান। ছোটো ছোটো দুটো বাচ্চা, এই গরমে কাচা ফুলের সংস্পর্শে আসলে তাদের কী অবস্থা হবে ভেবে সে ম্যানেজমেন্টের লোকেদের মানা করল এসব দিয়ে বাড়ি সাজাতে। কিন্তু মূল হোতাই যদি পারমিশন না দেয়, তাহলে তারা কী করবে? যথাসম্ভব রাগ নিয়ন্ত্রণ করে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ইহসান আজিজ শেখকে খুঁজতে গিয়ে পেল পুকুর পাড়ে। গরু জবাই হচ্ছে সেখানে। সাদা-নীলের মিশ্রণে একটা নতুন লুঙ্গি আর অফ শোল্ডার স্যান্ডো গেঞ্জি পরে শারাফ, শামিরকে কাছে বসিয়ে একদিকে বাবুর্চিকে নির্দেশনা দিচ্ছেন রান্নাবান্নার বিষয়ে অন্যদিকে, গ্রামের দিক থেকে আসা পুরোনো বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতেছেন।

আড্ডার মূল বিষয়ই তার চারপুত্র আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে। বোঝাই যাচ্ছে, নানা-দাদা হওয়ার আনন্দে, গর্বে আজিজ শেখের মধ্যে উৎফুল্লতার কমতি নেই। তিনি খুবই খুশি। বন্ধুরাও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নিজেদের মধ্যে বলাবলিও করছে, নাতি-নাতনির জন্য এমন এলাহি আয়োজন আজকাল কয়জনে রাখে? তাও আবার পুরোনো দিনের বন্ধুবান্ধবদেরও দাওয়াত করতে ভুলেনি। আজিজ শেখ কতোটা দিলখোলা আর বড়ো মনের মানুষ ভাবা যায়? তাদের মতো ছা-পোষা মানুষদেরও সামান্য আকিকা অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে ভোলেনি। আল্লাহ যাতে এই মানুষটার আব চাওয়া পূরণ করে এই দোয়াও করল তারা। ইহসান সেগুলো শুনে দাঁতে দাঁত চেপে একজনকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনাদের চোখে আপনাদের বন্ধু এতো বড়ো মাপের মানুষ? তা বন্ধুর কাহিনী জানেন তো? একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে তার জীবনটা যে শেষ করে দিয়েছিল তা জানেন তো?”

বিস্ময় নিয়ে লোকগুলো ইহসানের দিকে তাকালেও পরক্ষণেই একজন গলা খাকারি দিয়ে বলে, “যুবক বয়সে ঐরকম কমবেশি সবাইই করে। পরে তো বিয়াও করছে, তাই আর অভিযোগের সুযোগ নাই। আমরাও তো দাওয়াত খাইছিলাম বিয়াতে। ঐ আধা বিদেশি মাইয়াডা…”
কঠিন গলায় বলল ইহসান, “তুলে নেওয়ার সময়ও নিশ্চয় আপনারা ছিলেন? প্রাণপ্রিয় বন্ধু বলে কথা!”
“তুমি কেডা?”
“যার বিয়েতে গান্ডেপিন্ডে গিলেছেন আমি তাদের সেই সন্তান…জিজ্ঞেস করুন আপনাদের বন্ধুকে আমি কে…”
ইহসানের পরিচয় বুঝে লোকগুলো থতমত খেল। আজিজ শেখ এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলেন ছেলের সঙ্গে পুরোনো বন্ধুদের কথোপকথন। এ পর্যায়ে বললেন, “আব্বাজান, চুপ কইরা যাও। আইজ একটা বিশেষ দিন। পুরোনো কথা টাইনা আইনা দিনটা নষ্ট কইরো না। কিছু লাগব তোমার?”
বাপের অতি আহ্লাদ দেখে ইহসান রাগান্বিত স্বরে বলল, “বাড়িটাকে গোলাপের বাগান যাতে না বানানো হয় তারজন্য দয়া করে আপনার মৌখিক অনুমতিপত্র লাগবে। দয়া করে অনুমতি প্রদান করে এসে আমার মাথাটা ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করুন।”

দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে ইহসান তীব্র রাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আজিজ শেখ দুই নাতিকে রেখে উঠে ওর কাছে এলেন। কাছাকাছি এসে ছেলের হাত ধরতে চাইলেন। কোনো নোংরা বস্তু গায়ে লাগলে মানুষ যেমন ঝেড়ে ফেলে ইহসান আজিজ শেখের হাতটা সেভাবেই ফেলে দিলো। আজিজ শেখ হাসলেন। তোয়াক্কা করলেন না ছেলের তাচ্ছিল্য। একবার, দু’বার বারবার চেষ্টা করে একসময় শক্ত করেই ছেলের হাতটা ধরলেন৷ ইহসান কঠিন দৃষ্টি ছুঁড়লেও এবার আর হাত সরাল না। বিষাক্ত অনুভূতি নিয়েও সে দেখতে চাইল এই কর্দয লোকটা ঠিক কীভাবে তাকে ভোলাতে চাইছে! আজিজ শেখ ধীরপায়ে পুকুরের পাড় ঘেঁষে ওকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “ঠিক এইরকম একটা দিন আমার জীবনেও আসছিল, আব্বাজান! ঐদিন তোমরা আসছিলা আমার জীবনে। সাতাশ দিনের ছোট্ট ইহসান-ইজহান। এতটুকু ছিলা। আমি কোলে নিতে ভয় পাইতাম…আস্তেধীরে শিখেছি। শিখার পর আর কোল ছাড়া করি নাই তোমাদের। সবসময় কোলে কোলে রাখার চেষ্টা করতাম। পি, পটি সব নিজ হাতে সাফ করছি। তোমাদের মা তো ছুঁইতোই না তোমাদের। খাওয়াইতেও চাইতো না, জোরাজোরি করে দিতে হইতো৷ কী একেকটা দিন গেছে তোমার মায়ের সাথে আমার যুদ্ধের!”

বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আজিজ শেখ মন্থর কণ্ঠে বললেন, “তোমাদের প্রথম এ বাড়িতে নিয়া আসার স্মৃতিচারণ করতেই বাড়িটা সাজাইছি।”
তাচ্ছিল্য করে হাসলো ইহসান, “সাজিয়ে গুছিয়ে ঘরে তুলে আমাদের জীবনটা যেমন নরক করে দিয়েছেন, আমার বাচ্চাদেরও এমন অভিশপ্ত করার পায়তারা করছেন, তাই না?”
আজিজ শেখের ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গেল। খ্যাঁকিয়ে উঠলেন তিনি, “ঘরে না তুললে বুঝি তোমাদের জীবনটা বেহেশতি হইয়া যাইতো? লোকে সমাজে টিকতে দিতো তোমার মা-রে? তোমাদের? উহু! তখন ঘরে না, রাস্তায় বড়ো হইতা!”
“অনেক দয়াবান তো আপনি! কত চিন্তা করেছেন আপনি আপনার পাপের ফলদের জন্য! আবার ঘরেও জায়গা দিয়েছেন! ব্যাপারটা এমন যে, যাকে পিষে মারলেন তাকেই ঠাঁই দিলেন। এরকমটা কেউ করে আদৌ? আপনাকে তো তিনবেলা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা উচিৎ!”
চোখ গরম করলেন আজিজ শেখ, “আমি তোমার বাপ হই। মজা করবা না আব্বাজান।”
“মজা করার অধিকার শুধু আজিজ শেখের, তাই না?”

ছেলের রাগের কথা আজিজ শেখ বেশিরভাগ সময়ই গায়ে লাগান না। এবারেও লাগালেন না। যথারীতি বিমোহিত স্মৃতিচারণে ডুবে ঠান্ডা কণ্ঠে বলতে লাগলেন, “তোমাদের দাদা মানে আমার প্রয়াত বাবা, ঠিক এমনই গোলাপ দিয়ে এই বাড়িটা সাজিয়ে তুলছিল। আর আমি নিজে তোমাদের কোলে নিয়া গৃহপ্রবেশ করছিলাম, বুঝছ? এই টকটকে লাল গোলাপ পায়ে পিষে৷ আর তোমার মা—হু! ঐ পাষাণী মহিলারেও আমি নিজে কোলে নিয়া গৃহপ্রবেশ করছিলাম, সারাজীবন রানি বানায়া রাখার জন্য… অথচ সে বুঝলই না!”
“আসলেই তো! একটা রেপিস্টকে কেন ঐ মহিলা বুঝল না? তার তো উচিৎ ছিল রানি হওয়ার লোভে নিজের ধ র্ষ ণ কারীকে মেনে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া, তাই না? আমার মা এতো বোকা ছিল! আশ্চর্য!”
হাসলেন আজিজ শেখ, “সুন্দরী ছিলো তো দেমাগও বেশি ছিল। হাতটা ধরলেই এমন করতো মনে হইতো আমি যেন তার জান নিয়া যাইতেছি। আসলেই তোমার মা একটা বোকা মহিলা ছিল। আর এইজন্যই তারে বেশি ভালোবাসতাম।’’

উচ্চস্বরে হেসে উঠল ইহসান, “যাকে ভালোবাসলেন তাকে নিয়েই নোংরা খেলাটা খেললেন! আপনার প্রেমকাহিনী শুনে আমি ইম্প্রেসড!”
“আব্বাজান, আমার রক্ত বইছে তোমার শরীরে, আমার কোলেপিঠে চইড়া তুমি বড়ো হয়ছ, গলা ধইরা ঝুইলা থাকছ মায়ের বকুনি খাইয়া। দুইদিনের পোলা এখন তিনদিনে আইসা বাপের বাধ্য হইতে চাও না। যাক, পোলাপান তোমারও হইছে। বাচ্চাকাচ্চা এমন করলে কেমন লাগে হাড়ে হাড়ে টের পাইবা! তবে তুমি যেমন আমার অবাধ্য সন্তান, আমিও তেমন তোমার অবাধ্য জন্মদাতা। আমি ফুল খোলার অনুমতি দিবই না কাউরে। যেভাবে সাজানো হইছে সব এমনই থাকব। যতক্ষণ না ভদ্রভাবে আইসা কথা বলবা!”
“আমার পায়ের জুতাও আপনার সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করবে না। আর আমার জুতা যেখানে ভদ্র ব্যবহার করবে না, সেখানে আমি ইহসান তো করবই না।”
গা জ্বালানো হাসি উপহার দিয়ে ইহসান সেখান থেক চলে এলো। আজিজ শেখ কঠিন এবং ব্যথিত চোখে ছেলের গমন পথে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললেন, “অবাধ্য আব্বাজান, তুমি এমন করলে আমার বুকে ব্যথা লাগে কবে বুঝবা? না কি তোমার মায়ের মতো অবুঝই থাকবা সারাজীবন?”

নিজের জন্য ভাবনার সময় না পেলেও ইহসান তার আদরে অতি আহ্লাদী হয়ে দিনদিন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া অর্ধাঙ্গিনীর জন্য পছন্দ করে আকাশী জমিনের নীল পাড়ের একটা জামদানি শাড়ি এনেছে। বিয়ে থেকে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত লম্বা সময়টাতে একবারও সৃজাকে শাড়িতে দেখেনি সে। আলমারি ভরে শাড়ি কিনেছে ঠিকই কিন্তু সৃজা কখনো পরেনি। প্রথমদিকে লজ্জায় মেয়েটা পরতে চাইতো না বলে ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও ইহসান জোর করেনি ঠিক, কিন্তু ফিনফিনে শাড়ি পরে আকর্ষণীয় দেহভঙ্গিমা করে তাকে সিডিউস করতে আসা লিথুর ঐ কান্ডের পর শাড়ির প্রতি রুচিই হারিয়ে গিয়েছিল ইহসানের। কিন্তু ইদানীং সৃজাকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখতে তার অবাধ্য মনটা তাড়া দিচ্ছে। আর অবাধ্য মনটাকে প্রশান্তি দিতেই গত একঘন্টা যাবৎ ইউটিউব দেখে, বেশ কসরত করে আকাশনীল রঙের জামদানিটা সে নিজ হাতে পরিয়ে দিয়েছে তার বাচ্চার মা হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে! নিজেও পড়ে ইজহানের এনে দেওয়া সাদা পাঞ্জাবি।

প্রথমবার শাড়ি পরেছে, তাও আবার স্বামীর হাতে। লজ্জা লাগছে সৃজার। যদিও উচিৎ নয়। লোকটার বাচ্চাদের মা হয়ে গেছে সে, এখন এসে যদি সে লজ্জা পায় তাহলে সেটা ভীষণই নাটুকে ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সৃজা জানে, এরপরেও ওর লজ্জা লাগছে। এর অবশ্য কারণ আছে। শাড়ি পরানোর সময় অসংযত আচরণ করেছে ইহসান। একেবারে প্রথম দিনের কাছাকাছি আসার মতোন! সৃজা ওর বুকে কামড় বসিয়ে দিয়েছে। এখন এই কামড় নিয়েই লোকটা ওকে জ্বালানোর উপায় খুঁজে পেয়েছে। শক্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ইহসান; যতক্ষণ না কামড়ের জায়গাটা চুমু দিয়ে সারিয়ে না দেবে ততক্ষণ শোয়া থেকে উঠবে না বলে গোঁ ধরেছে। তার উপর সেই তখন থেকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কোনো মানে হয় এসবের? লজ্জার সাথে সাথে এ পর্যায়ে খানিকটা বিব্রত স্বরেই বলল, “এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? অন্যদিকে তাকাও।”

“উহু, দেখতে দে। আগে এভাবে দেখিনি। খুব সুন্দর লাগছে তোকে। একেবারে পরীর মতোন।নাহ…তারচেয়ে বেশি চমৎকার! আমার শব্দ ভান্ডারে বলার মতো যুতসই কিছু পাচ্ছি না। তবে এটা বলা যায়, তোকে শাড়িতে দেখে আমি ফিদাটিদা হইনি, ডিরেক্ট ফ্রিজড হয়ে গেছি। আমাকে গলাতে হলে একটা চুমু ঠিক এইখানে…” বুকের মধ্যিখানে ইশারা করে বলল ইহসান, “এইখানে একটা চুমু খেতে হবে। গড প্রমিজ, আমি টু শব্দটিও করব না। না বেশিকিছু আবদার করব।”
ওর কথা তখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। সৃজা অস্বস্তি, জড়তা-সংকোচ নিয়েই ফট করে চুমু খেয়ে বসলো ওকে। ইহসান কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে এরপর ওর মাথাটা বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল, “মাই হার্ট ইজ মেল্টেড, কমপ্লিটলি মেল্টেড! লুক, পুট ইয়োর হ্যান্ড হিয়ার রাইট নাও! ইউ ক্যান ফিল ইট…”

সৃজা ওর বুকে থুতনি ঠেকিয়ে হাতটা রাখল ওর মাথায়। চুলগুলো আঙুলের সাহায্যে পেছনে ঠেলে দিয়ে তাকিয়ে রইল বাচ্চা সামলাতে সামলাতে নিজেও বাচ্চাদের মতো আচরণ করা স্বামীটির দিকে।
কেমন যেন চোখ ভিজে উঠল ওর। ভার গলায় বলল, “তুমি আসলেই একটা কাঙাল। ওদের মতো একটুখানি ভালোবাসা পেলেই হাওয়াই মিঠাই হয়ে যাও। আমার খুব রাগ হয়।”
ইহসান উঠে বসল। ভ্রু কুঁচকে ওর গালে হাত রেখে সন্দেহ এবং ঠাট্টাভরা কণ্ঠে বলল, “বুঝলাম আমি কাঙাল। একটুখানি ভালোবাসাতেই গলে যাই। কিন্তু তুই কাঁদছিস কেন? তোকে তো অনেকটা বেশি ভালোই দিয়ে বশে রাখার চেষ্টা করি।”
“বিকজ আই লাভ দ্যা বেগার দ্যাট ইজ ইউ!”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৬১

ইস্মির পরণে লাইট গ্রীন কালারের একটা কটন সিল্ক শাড়ি। ইজহান পরিয়ে দিয়েছে, সাজিয়েও দিয়েছে সে। যতটুকু পেরেছে বউকে সাজিয়েছে এরপর সে তার টনা-মনাকে সাজিয়েছে, শারাফ-শামিরকে নিয়ে নিজে তৈরি হয়েছে। এরপর ছয়জনের অনেকগুলো ছবি নিয়েছে সে। সবগুলো ছবি পুনম তুলে দিয়েছে। ওকে খুব উৎফুল্ল আর প্রাণবন্ত লাগছে। বুঝদার দেখাচ্ছে। ইস্মির ভালো লাগছে স্বামীকে এভাবে দেখে। আর তাই লোকটার আনন্দে ভরা মুখটাকে চিন্তাগ্রস্ত না দেখতেই চুপ করে বসে আছে। কেননা, সকাল থেকেই ওর পেটের নিচের অংশে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। কখনো মনে হচ্ছে ব্যথা আবার কখনো তা নয়। সেইসঙ্গে হাঁটতেও অস্বস্তি হচ্ছে ওর। পানির তেষ্টা পাচ্ছে একটু পরপর। সবগুলো লক্ষ্মণই সাময়িক, তেমন গুরুতর কিছু মনে হচ্ছে না। সেজন্যই এখন অবধি ইজহানকে কিছু বলেনি ইস্মি। ঠিক করেছে বলবেও না। যদি এটা লেবার পেইনের লক্ষ্মণ হয় তাহলে তো আরো বলবে না। ইস্মি নিশ্চিত, তার এই পাগল স্বামী এগুলো শুনলে ফিট খেয়ে যাবে!

অশ্রুবন্দি পর্ব ৬২ (২)