আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫৩
ইশিকা ইসলাম ইশা
“এই বৌ!!
বৌ!!শুনেন তো!
এই বৌ!এই…….
ও বৌ…..
রিদি বিরক্তিকর মুখে তাকালো তীব্রর দিকে,
সমস্যা কি আপনার? এসে থেকে বৌ বৌ করে আমার মাথা খাচ্ছেন কেন??
তীব্র জোর পূর্বক হেসে বলল,
ইয়ে!আপনি কথা বলছেন না কেন??
রিদি ঠাস করে খুন্তি রেখে বলল,
কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাই বলছি না।আর কিছু??
তীব্র হেসে বলল,
অনেক কিছু!!আসলে আমি আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলা……
রিদি রেগে বলে,
হ্যাঁ এমন সারপ্রাইজ যে আমি হাট এট্যাক করে বসি তাই তো!!আমি মরলে আপনি আরো বি……উমমম উমমম উমমম…….
দীর্ঘ ১৫ মিনিট পর রিদিকে ছেড়ে দিল তীব্র।রিদি জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল,
পাগল হয়ে গেছেন???
তীব্র একহাতে রিদির চুল মুঠি করে ধরে রেগে বলল,
একদম আজেবাজে কথা বলবি না।নয়তো শাস্তি এর চেয়েও ভয়াবহ হবে।মরে যাওয়া, ছেড়ে যাওয়া বাদে যা বলবি শুনব।আর একদিনও যেন এই দুই শব্দ তোর মুখে না শুনি নয়য়তো এখানে পুঁতে রাখব!বলেই রিদিকে ছেড়ে হনহন করে রুমে চলে গেল।
রিদি ফ্যালফ্যাল করে তীব্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।চোখে জমল মৃদু জল। অভিমানী মন আরো একটু অভিমানী হয়ে উঠল।দুহাতে চোখের পানি মুছে বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত তখন ১০ টার কাছাকাছি।এখনো রুমে আসেনি রিদি। তীব্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একবার দরজার দিকে তাকালো। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে ল্যাপটপ বন্ধ করে নিচে এসে দেখল টেবিলে খাবার রাখা। কিন্তু রিদি আশেপাশে নেই।তীব্র ভু কুঁচকে এদিক ওদিক ভালো করে দেখল।রিদিকে না পেয়ে তার ভূ কুঁচকে গেল।সিড়ি বেয়ে দোতলায় এসে একবার চারদিকে নজর বুলিয়ে হাটল ছাদের দিকে।ছাদে আসতেই দেখল রিদি দোলনায় ঘুমিয়ে আছে।খোলা চুলগুলো গড়াগড়ি খাচ্ছে ফ্লোর জুড়ে। তীব্র রিদির সামনে এসে দাড়ালো।রিদি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।বড় গলার গেঞ্জি হওয়াই গলা সহ বুকের কিছুটা উন্মুক্ত হয়ে আছে।নরম তুলতুলে দোলনায় তুলতুলে নরম একটা বাচ্চা মেয়ে শুয়ে আছে।মায়াবী মুখখানায় মলিনতা ছড়িয়ে আছে। তীব্র ঝট করেই দোলনায় উঠে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে মুখ গুজল গলার ভাঁজে। ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠল রিদি।আনমনেই হাত চলে গেল তীব্রর চুলের ভাজে।মূলত এটা তার অভ্যাস হলেও তীব্রর অতিরিক্ত পাগলামিতে চোখ খুলতে বাধ্য হল। ঘুমঘুম কন্ঠে বিরক্ত হয়ে বলল,
এমন করছেন কেন?ঘুমাচ্ছি তো!!
তীব্র রিদির গলা থেমে মুখ নামতে নামতে বলল,
আমার ঘুম হারাম করে ঘুমাচ্ছেন কেন??
কি করলাম আমি?যা করার আপনিই করেছেন!
আমিই করবো!বলেই তীব্রর কঠোরতা আরো বাড়তে থাকল।তীব্রর ছোঁয়ায় কোমলতা নেই আছে কঠোরতা যেন শাস্তি দিচ্ছে তাকে।
তীব্রর অধিক বাড়াবাড়িতে রিদি এবার বলল,
কি করছেন এটা ছাদ!
কিন্তু তীব্র সে কি থামে!! উহু!!তবে আজকের ছোঁয়ায় ভালবাসা নেই আছে কঠোরতা,রাগ।
একটা সময় অধৈর্য হয়ে রিদি শক্ত হাতে তীব্রর মাথা বুকে চেপে ধরল!ছটফটিয়ে পাগলামি করতে থাকা তীব্র যেন রিদির বুকে শান্ত হলো।রিদি গায়ের টিশার্ট টা কোনমতে টেনে ঠিক করে আশান্ত তীব্রর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
এমন পাগলামী করছেন কেন তীব্র?
তীব্রর থেকে রিদির প্রশ্নের উত্তরটা এলো অদ্ভুত।রিদি এবার ভীষণ অবাক হল তীব্রর কথায়,
“ভালাবাসার মানুষ গুলো কে আমি হারিয়ে ফেলি বৌ!
তাই আপনাকে আমি কখনোই ভালোবাসতে চাই না ”
কিন্তু আজীবন আপনাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।আমি সারাজীবন আপনাকে আমার কাছেই রাখব এট এনি কস্ট!”
“ভালবেসে হারিয়ে ফেলার চেয়ে ভালো না বেসে সারাজীবন আপনাকে আমার কাছেই রাখব ।আমি চাই না আপনি হারিয়ে যান।আপনি হারিয়ে গেলে আমি! আমি তখন কি করব? কোথায় খুঁজব? পাগল হয়ে যাব বৌ!”
তীব্রর কথায় রিদি হতভম্ব,অবাক।এতো কিছুর পরেও তীব্র তাকে ভালোবাসে না এটা তাকে মানতে হবে!! হ্যাঁ হয়তো কখনো ভালোবাসি বলেনি তবে মুখে বললেই কি ভালবাসা হয় অনূভব কি করা যায় না।যায় তো!তীব্রর তাকে ভালোবাসে কি না তার জন্য কোন প্রমাণপত্রের প্রয়োজন নেই। ভালবাসি বলার দরকার ও নেই।কারন সে জানে ভালোবাসা শুধু মুখে বলে হয় না।অনুভব করতে হয়।আর সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তীব্র তাকে ভালোবাসে।
তবে এমন কি অতীতে হয়েছে যার জন্য তীব্র ভালোবাসতে ভয় পায়।হারিয়ে ফেলার ভয়।ভালোবাসলে হারিয়ে ফেলবে এটা কে বলেছে? আচ্ছা!!,ওনি কি কাউকে ভালোবাসতেন?আমি ব্যাতিত তার জীবনে অন্য নারী ছিল!!এটা ভাবতেই রিদি বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো। শক্ত করে চেপে ধরল তীব্রর পেছনের টি শার্ট।
আজ ছুটির দিন রিদি দুপুরের জন্য রান্না করছে। হঠাৎ কলিং বেল এর শব্দে চুলায় আঁচ কমিয়ে দরজা খুলতেই নজরে এলো তীর কে।তীর বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল,
গুড মর্নিং পিচ্চি ভাবি!!
রিদি ছোট ছোট চোখ করে বলল,
এখন মর্নিং বুঝি ভাইয়া!!
তীর আমতা আমতা করে বলল,
আসলে ভাবি হয়েছে কি!!আসলে সব দোষ” পির বাবা ফকির শাহ আলী আকবর শেখ এর নাতির সালা আমাকে অফিস হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজে বিন্দাস।এতো এতো কাজ করে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।আমার মতো মাসুম বাচ্চার প্রতি এটা ঘোর অন্যায়!
রিদি ফিক করে হেসে উঠলো তীরের আজগবি ডাকে।ভেতরে আসতে বলে কিচেনে চলে গেল।তীর বসার রুম থেকে দেখল তীব্র গম্ভীর মুখে চপিং করছে।তীর জ্বালানোর উদ্দেশ্য ঝটপট এগিয়ে এলো,
বলছি সাবেক পীর আলামুদদ্দিন আলী ববাবা চল্লিশ চোরের নাতি আপনার কি বিবেক বলে কিছু আছে??
তীব্র বিরক্ত চোখে তাকাল তীরের দিকে।তীর সেসব তোয়াক্কা না করে রিদির উদ্দেশ্য বলল,
তা পিচ্চি ভাবি!! আপনার সুয়ামির সারপ্রাইজ কেমন ছিল??
রিদি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
পুরাই শকিং!!
তীর উত্তেজিত হয়ে বলল,
আমি বলছিলাম এই চল্লিশ চোরের নাতিরে ভাবি ছোট্ট একটা মানুষ এতো শকড্ নিতে পারবে না। কিন্তু এই চল্লিশ চোরের নাতি আমার কথা শুনল না তিনি শুনলেন বিট্রিশের কথা!!
তীব্র রক্তিম চোখে তাকাল তীরের দিকে।তীর আমতা আমতা করে বলল,
এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?আমি কিছু করিনি!
তীব্র চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
চুপ থাক নয়তো ছুরি তোর গলায় বসাবো!!
তীর চোখ বড়বড় করে হা হুতাশ করে বলল,
কিহহ?আপমানস??নাহ আমি আর এই জীবন রাখব না।এই বন্ধু আমার কলিজায় আঘাত করেছে।
তীব্র একটা ছুরি মুছে তীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
এই নে এটা দিয়ে ট্রাই কর মরে যাবি!
তীর শুকনো ঢোক গিলে বলল,
কি যে বলিস দোস্ত আমি মরলে তোর কি হবে!এতো কিছু একা সামলাতে পারবি না।আমার মতো একটা মাসুম বাচ্চাকে বাঁচতে দে।
রিদি এদের কথায় মুখ টিপে হাসছে।তীর ছুটির দিনে আসলেই এদের মধ্যে এমন আজগুবি কথা চলে। তীব্র একবার রিদির দিকে তাকিয়ে রেগে হনহন করে উপরে চলে গেল। তীব্র যেতেই রিদি হো হো করে হেসে উঠলো সাথে তীর ও।
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫২
দিন পিচ্চি ভাবি আমি কেটে দিচ্ছি!!
থাক ভাইয়া ওনি কেটে দিয়েছে।আব ভাইয়া আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
আরে এটা আবার বলা লাগে!!!
ইয়ে আসলে মানে!!
কি ব্যাপার ভাবি!গোপন কিছু!!!
আসলে মানে বলছিলাম যে ওনার জীবনে কি মেয়ে ছিল?মানে ওনি কি কাউকে পছন্দ করতেন বা ভালোবাসাতেন??