আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫৯

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

সময়টা তখন কতো জানা নেই তবে আসরের আজান ভেসে আসছে কোন মসজিদ থেকে।বাইরের পরিবেশ তখন ছেয়ে আছে সোনালি আভায়।সেই সোনালি কিরন এসে প্রবেশ করছে রুমের ভেতর।বেডের এক কোনায় নিজেকে গুটিয়ে বসে আছে রিদি। ঠিক তার সামনের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে তীব্র।পুরো রুম জুড়ে শুধুই নিঃশ্বাসের শব্দ ব্যাতিত কোন শব্দ নেই।রিদির ঙ্গান ফিরার পর থেকেই তীব্রকে এভাবেই বসে থাকতে দেখে ভয়ে সেও নিশ্চুপ হয়ে ছিল এতোক্ষণ।আরো কিছুক্ষণ এভাবেই চলার এক পর্যায়ে মুখ খুলল রিদি।ভয়ে ভয়েই সাহসিকতার পরিচয় দিতে বলল,

“এক একদম আমার সাথে দা দাদাগিরি করবেন না আর খবরদার যদি আমাকে বকেছেন তো!!আ আমি কিন্তু বাপের বাড়ি চ চলে যাব!!”
তীব্র তখনো নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে রিদির দিকে যেন বহু বছর পর দেখছে বৌ কে!মুখাবয় একদম শান্ত।রিদি তীব্রর থেকে উওর না পেয়ে আবারো বলল,
“এভাবে ভুতের মতো বসে আছেন কেন?”
তীব্র তবুও নিশ্চুপ।রিদি বিরক্ত হল।এটা মানুষ না রোবট!
“এই যে শুনছেন!!আমাকে যেতে দিন!আমি তীরা আম্মুর কাছে যাব!!আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন কেন? কিডন্যাপার কোথাকার!!যেতে দিন আমাকে।”
এতক্ষণ পর মুখ খুলল তীব্র।গম্ভীর মুখে বলল,
“আমি ধরে রাখি নি!!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তীব্রর কথায় রিদি মজার সুর ছেড়ে শুকনো ঢোক গিলল।এই পর্যায়ে রিদি বুঝল তীব্র সিরিয়াস মুডে বসে আছে। তীব্রর এতোবেশি শান্ত থাকাটা তার ভয় আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।সে একটু ইতস্তত করে বিরবিরিয়ে বলল,
ধরে রাখিনি হু!!এভাবে ভিলেনি লুক দিচ্ছে সেটা কিছু না!!
রিদিকে বিরবির করতে দেখে তীব্র ঝট করে উঠে এসে থামল রিদির সামনে।রিদি চমকে উঠে পিছাতে চাইলে বেড থেকে পড়ে যেতেই তীব্র পিঠে হাত রেখে একদম মুখোমুখি করল।
“কিভাবে কলকাঠি নেড়েছেন?আমি তো সব দিক খেয়াল রেখেছি তবে!!”
রিদি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল।তীব্রর নিঃশ্বাস এসে বারি খাচ্ছে তার চোখমুখে।কড়া পারফিউম এর ঘ্রানে মাতাল মাতাল লাগছে।রিদি তীব্রর মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল,

“আসলে আমি মানে!”
“কাঁপা কাঁপি বন্ধ করেন”
“আপনি একটু দূরে সরুন ”
“দূরেই সরে যাব।থাকিস তুই সবার সাথে।তোর তো সবার কথা ভাবতে হয়। শুধু আমি বাদে”
তীব্র রিদিকে বেডের দিকে টেনে এনে।ওকে ছেড়ে আবারো বসল সোফায়।তীব্রর কথায় রিদি অবাক হয়ে বলল,
“আমি ভাবি না আপনার কথা?”
“না!!”
“আম্মুর এই অবস্থার পরেও আপনি এ…….”
“সাট আপ!সি ইজ নট ইউর মম!ডু ইউ গেট দ্যাট!!”
তীব্রর হুংকারে রিদি কেঁপে উঠলেও নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“আমার না আপনার তো মা।আর…..…..”

তীব্র আবারো ঝট করেই সোফা থেকে উঠে এসে রিদির চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“না ওনি আমার মা আর না ওনি তোর মা।এটা মাথায় ঢুকিয়ে নে!”
শক্ত করে ধরায় রিদির চোখ বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে। তবুও সে শক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে তীব্রর দিকে।যেন আজ তীব্র কে ভয় না পাওয়ার প্রতিঙ্গা করেছে।তীব্রর চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে।হয়তো বেশি রেগে থাকার কারনে।রিদি জানে তীব্র তাকে আঘাত করবে না।রিদির ধারনা সঠিক হলো। তীব্র তাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে থাকা টেবিলে জোরে বারি মারল।ঝনঝন আওয়াজ এ রিদি কেঁপে উঠলো আবারো। তবুও শক্ত গলায় বলল,
“না মানলে সত্য মিথ্যা হয়ে যায় না তীব্র।ওনি আপনাকে মানুষ না করলেও জন্ম দিয়েছে।৯ মাস ওনার গর্ভে আপনার অবস্থান ছিল।এটা আপনি না মানলেও সত্য বদলাবে না ”

তীব্র আবারো হুংকার দিয়ে বলল,
“ওনি আমার মা না। খবরদার!! যদি একথা আর একবার বলেছিস।তিশা আম্মু ব্যাতিত কেউ আমার মা না।ওনি আমার মা না।”
“তিশা আম্মু আপনার মা।এটা যেমন সত্য তেমনি তীরা আম্মুও আপনার মা এটাও চিরন্তন সত্য।”
“লিমিট ক্রস করিস না রিদি।আমি বলেছি সে আমার কেউ না মানে কেউ না!”

“ওনি আপনার কেউ না তাইতো!তবে সেই কেউ না মানুষটার জন্য আপনার এতো কিসের ভাবনা।কেন আপনি দেশ বিদেশ থেকে ডক্টর এনে তাকে চিকিৎসা করিয়েছে।কেন আপনি সারা রাত জেগে তার জন্য মেডিসিন খুঁজেছেন।কেন আপনি সবার আড়ালে বাংলাদেশে এসে তীরা আম্মুর চিকিৎসা করিয়েছেন কেন?কেন আপনার ওনার জন্য চিন্তা হয়?
ভাবছেন আমি কিভাবে জানলাম!আমি আপনাকে খেয়াল করি তীব্র।মির ভাইয়ার সাথে ফোনের কথা শুনেছি আমি।তখন না বুঝলেও এখন আমি জানি আপনি কেন বাংলাদেশে এসেছিলেন।তীরা আম্মুর জন্য তাইতো!”
“হ্যাঁ!আমি ওনার জন্য বাংলাদেশে এসেছি তবে মা মেনে না।তিশা মায়ের কথা রাখতে।।তিশা আম্মুকে প্রমেস করেছিলাম আমি ওনার খেয়াল রাখব।”

” তার মানে তিশা আম্মুর কথা রাখতেই আপনি তীরা আম্মুর জন্য এসব করেছেন।আর তিশা আম্মুর কথা রাখতেই হয়তো আপনি আমাকে বিয়ে করেছিলেন।ওনার কথা রাখতেই হয়তো আপনি আমার সাথে সংসার করছেন।আপনি আমাকে ভালোবাসেন না তাই না।শুধু কথা রাখতেই আপনি আমাকে ভালোবাসার নামে আগলে রেখেছেন ।”
“তুই ওনার সাথে নিজের তুলনা করছিস ”
“উহু!তবে বুঝতে পেরেছি আপনি ওয়াদা করলে তা পালন করেন। মানতেই হচ্ছে তীব্র চৌধুরী কথা দিয়ে কথা রাখে।তার কথার বরখেলাপ হয় না।খুব নিখুঁত ভাবেই তার দায়িত্ব পালন করে।”
তীব্র রাগান্বিত স্বরে ক্রুদ্ধ হয়ে বলল,

ঠিক বুঝেছিস তুই!তোর আমার চেয়ে ওনার প্রতি বেশি টান তাই না!! তো যা।আজ থেকে তোকে আমি আর আটকাবো না।যা ইচ্ছে কর। যা আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা।নয়তো জীবন হারাবি।
তীব্রর ভয়ংকর হুংকারে রিদি কেঁপে কেঁপে উঠলো।লাল চোখজোড়া যেন ভয়ংকর হিংস্র হয়ে উঠেছে।হাতের কাছে যা পাচ্ছে সেটাই ছুড়ে ফেলছে।রিদি তীব্রর দিকে কয়েকপলক তাকিয়ে চোখের পানি মুছে ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বের হতেই তীব্রর ভাংচুর বেড়ে গেল কয়েকগুণ!যেন রিদির যাওয়ায় রাগটা আরো বেড়েছে।

এদিকে রিদি দরজা খুলে বের হতেই লাবিব,তীর,মির যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বেচারারা ২ ঘন্টার অধিক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে চিন্তিত বদনে।রিদিকে তখন পড়ে যাওয়া থেকে তখন তীব্র ই বাঁচিয়েছে। আর সেই মূহূর্তেই রিদিকে কোলে তুলে হসপিটালে তার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে ঢুকে ডোর লক করে রেখেছে প্রায় ৩ ঘন্টার মতো।
এদিকে হঠাৎ করে তীব্র কে দেখে সবাই অবাক প্লাস ভীত হলেও তীরের কাছে আশ্চর্যের বিষয় হলো তীব্র এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে এখানে এলো!লাবিবের দিকে তাকাতেই লাবিব তখন চটপট করে বলল,
” বস প্রাইভেট হেলিকপ্টারে করে এসেছে”

ওরা তিনজন রুমে ঢুকে রুমের অবস্থা দেখে অবাক হল ।একটা কিছু আস্ত আছে বলে মনে হয় না।ভ্যাগিস এটা সাউন্ড প্রুফ রুম।নয়তো হসপিটালের সব রোগি আজ বিনা টিকিটে উপরে চলে যেত।তীর তীব্রর দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিলল।তীব্র কে এই মূহুর্তে ভয়ংকর লাগছে। হিংস্র পশুর মতই নির্যাতন করছে ঘরের প্রতিটি জিনিস কে।
এদিকে আরিফ মিজান রিদিকে এভাবে স্তব্ধ হয়ে বের হতে দেখে কিছুটা আন্দাজ করে বলল,
“তীব্রর জেদ ভয়ংকর রিদিতা।তীরার জন্য নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করো না।এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।আর না তীব্র কে রাখা যাবে।”
রিদি আরিফ মিজানের কথায় ভাঙ্গা গলায় বলল,
“তীব্র চৌধুরীর ওয়াইফ হিসেবে তো আমারও জেদ কিছুটা থাকা উচিত নানু”বলেই রিদি তীরার রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
আরিফ চিন্তিত মুখে তাকিয়ে রইল রিদির যাওয়ার পানে। এরপর ঠিক কি হতে চলেছে ধারনা নেই তার।তীরার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে দুইজনের মধ্যে আবার দূরত্বের না সৃষ্টি না তৈরি হয়।

রাত বাজে ১.২০,
রুমের এক কোনায় শান্ত হয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে তীব্র।সোফার পিছনের দিকটায় মাথা দিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ডান হাত থেকে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। সেদিকে কোন ক্রুক্ষেপ নাই।সাদা টাইলস লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ইতিমধ্যে।অথচ সে শান্ত আর নিরব। দীর্ঘ সময় ভাংচুর করে শান্ত হলেও এখন একদম নিশ্চুপ সে।তীর দূরে দাঁড়িয়ে আছে আপাতত ভয়ে তীব্রর আশেপাশে ঘেসছে না।বলা তো যায় না হিংস্র বাঘ কখন হামলা করে।মীর তীব্রর অপর পাশের সোফায় বসে আছে।বার কয়েক হাতে ব্যান্ডেজ করার জন্য এগুলেও তীব্রর হুমকিতে বাধ্য হয়েই সোফায় চুপ করে বসে আছে।

এদিকে তীব্র অনেকক্ষণ ছাদের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখজোড়া বন্ধ করল।বন্ধ করতেই ভেসে এলো অতীতের স্মৃতি।ছোট থেকেই তীব্র বড় হয়েছে খুব আদর যত্নে।মা,বাবা ভাই,দাদু,দাদি,নানু,নানি সব মিলিয়ে স্বাভাবিক একটা পরিবার তার সামনে রেখেছিল সবাই।আর সে বড়ও হচ্ছিল স্বাভাবিক ভাবেই।খুব সুখেই কাটছিল তার দিনকাল। সেদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখল তিশা চিন্তিত হয়ে কাকে যেন বার বার কল করছে। তীব্র আর তীরের বয়স তখন ১২ বছর।মায়ের চিন্তিত মুখখানা দেখে তীব্র এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,
আম্মু কি হয়েছে?তুমি কিছু নিয়ে টেনশন করছ?
তিশা তীব্রর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলল,

আম্মু ঠিক আছি সোনাবাবা।যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার দিচ্ছি!
তীব্র মায়ের বাধ্য সন্তান তাই মায়ের কথায় ফ্রেশ হতে চলে গেল।দুইজনে ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসতেই তিশা তড়িঘড়ি করে নিচে নামতে নামতে কাজের মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
তুমি ওদের খেতে দাও!আমার একটু জরুরি কাজের জন্য যেতে হবে। তীব্র তিশার চিন্তিত মুখখানা দেখে টেবিল থেকে উঠে ছুটে গেল মায়ের কাছে,
তুমি কোথায় যাচ্ছ আম্মু?
তিশা তীব্রর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
মা কোথাও যাচ্ছি না বাবা।একটু কাজে যাচ্ছি এখুনি চলে আসব!
না !!আমিও তোমার সাথে যাব।
আমি সত্যি কোথাও যাচ্ছি না।তুমি বাসায় থাকো মাম্মা চলে আসবে তাড়াতাড়ি।
কিন্তু তীব্র !!সে ছিল জেদি।সে কিছুতেই তিশা কে ছাড়বে না।তীব্রর দেখে তীর ও মায়ের সাথে যাবে বলে ঠিক করল। আর দুই ছেলের জেদের কাছে হার মানতেই হলো তিশা কে।

আম্মু আমরা কোথায় যাচ্ছি??
আমরা হসপিটালে যাচ্ছি!!
কেন??
তিশা তীব্রর কথায় মুচকি হেসে বলল,
আমার ছোট বোন হসপিটালে তাই!!
মানে দিয়ামনি!!
হুম!!
তীর দিয়ার কথা শুনে বলল,
দিয়ামনির বাবু হবে তাই না আম্মু!
তিশা সম্মতি দিয়ে বলল,
হ্যাঁ!!তবে অবস্থা নাকি খুব একটা ভালো না।গ্রামের হসপিটালের চিকিৎসাও ততোটা উন্নত না।বার বার বললাম ঢাকায় নিতে কিন্তু অবস্থা ভালো না দেখে সেইখানেই ভর্তি করিয়েছে।
তীব্র ব্যাপারটা না বুঝে প্রশ্ন করল,

চিকিৎসা ভালো না কেন আম্মু??
উন্নত চিকিৎসার অভাব সেখানে!! মানে ভালো যন্ত্রপাতি এসব।
চিন্তা করো না আম্মু।আমি তো বড় হয়ে ডাক্তার হব।তখন আমি সব হসপিটালের ব্যবস্থা ঠিক করে দিব।
তিশা তীব্রর কথায় মৃদু হেসে বলল,
আমার আব্বা অবশ্যই ডক্টর হবে।খুব বড় ডক্টর হবে। আমার কলিজা!!
আর আমি বুঝি ফেসকা!!
তীরের কথায় তিশা হেসে বলল,
তুমি ,তীব্র দুইজনেই আমার কলিজা!!

গাড়ি হসপিটালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সময় লাগল ২ ঘন্টার মতো। তীব্র মায়ের সাথে একটা রুমে ঢুকতেই ভেসে এলো সদ্য জন্মানো বাচ্চার কান্নার শব্দ। তীব্র এদিক ওদিক তাকিয়ে কান্নার উৎস খুঁজতেই নজরে এলো তোয়ালে মুড়ানো ছোট্ট একটা বাচ্চা।গোলাপি তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে তাকে। কান্নার কারনে গাল আর মুখ গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে। ছোট্ট সেই মাংসপিণ্ডটার দিকে কিসের টানে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখল। আনমনেই হাত বাড়িয়ে তুলতুলে গাল ছুঁয়ে দিতেই কান্না থামিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল বাচ্চাটা।
“একদম ফুলের মতো সুন্দর তাই না তীব্র!!”
তীরের কথায় তীব্র আনমনেই বলল,

“She is more than beautiful……”
“এ্যাই এ্যাঁই দেখি দেখি কেমন হয়েছে আমার ছোট বোন”
যে মেয়েটির কোলে বাচ্চা ছিল সে একটু ঝুকে বাচ্চাটাকে দেখাতেই ছোট মেয়েটি নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“এই বোন আমার চাই না।এই বোন তো কালো!আমার কালো বোন পছন্দ না!আমি মানি না ওকে বোন!”
“আলিশা…… বেয়াদব হয়ছিস দিন দিন তাইনা।এক্কারে মায়ের ছাও হয়ছিস।রুপের পুজারি হকলে!নিজে যেমন মাইয়াটারেও বানাইছে তেমন।এহন যা মায়ের কাছে যা। আলিশা ভেংচি কেটে চলে যেতেই মহিলাটি নার্সটিকে বলল,
“এই নাস দেও দেখি আমার কোলে বাচ্চাটারে দাও!”
নার্স মেয়েটি বাচ্চাটাকে দিতেই মহিলা গাল ভরে হাসলেন! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তখনও বাচ্চাটা।তিনি আদর করে বললেন,

“এক্কারে মায়ের লাহান হয়ছে।হেই চোখ,হেই মুখ, মাশাআল্লাহ! মাশাআল্লাহ!নজর না লাগুক আমার নাতনিরে।কি দিদি ভাই আমারে চিনছ??আমি তোর দাদি!একটু হাইসা দেহাও তো দাদিরে!কাদতাছো কেন?খিদা লাগছে?ওরে আমার দিদিমনি!!একটু পরেই আম্মা তোমারে খাইতে দিবে!”কিন্তু বাচ্চাটি আরো জোরে কেঁদে উঠলো।
খাওয়ার জন্য বাচ্চাটি কাঁদছে শুনে তীব্র উদ্বিগ্ন হয়ে মহিলাটির কাছে এগিয়ে এসে বলল,
ওকে কেন খেতে দিচ্ছেন না?ও তো কাঁদছে!!
রিদির দাদি মানে লতিফা বেগম পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল দুইজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।মাস্ক পরিহিত ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে তিনি তীব্রর উদ্দেশ্য বলল,
“তুমি কি বিদেশি নাকি!”
তীব্রর শান্ত জবাব,
নো।আমি বাংলাদেশি!!
“আইচ্ছা!তই তুমি কেডা??”

আমার পরিচয় আপনি পরেও জানতে পারবেন।আগে ওকে কিছু খাওয়ান!সেই থেকে কেঁদেই যাচ্ছে!
লতিফা বেগম তীব্রর চিন্তিত মুখটা দেখে হেসে বলল,
ওর মা আইলে ওরে খাওয়াবে।
তো ওর আম্মুকে ডাকুন!!
ওর মায়ের তো এহনো ঙ্গান ফিরে নাই।
তীব্র কিছু বলার আগেই ভেসে এলো তিশার কন্ঠস্বর,
তীব্র,তীর ওনি হলেন তোমাদের দিয়ামনির শাশুড়ি।আর আন্টি ওরা আমার দুই ছেলে! তীব্র আর তীর!
ওহহ তাই তো কই!তোমার ছেলে দুখানা মাশাআল্লাহ ভালোই!!
জি দোয়া করবেন।ওরা বড় হয়ে যেন মানুষের মতো মানুষ হয়।
অবশ্যই!এডা কওন লাগে!খুব বড় হও তোমরা!
হুনো!বলছি দিয়ার হুস আইছে? বাচ্চা তো কান্দে!

না!ওকে না হয় আমাকে দিন।আপনি একটু আরাম করুন।অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছেন।
তিশা বাবুকে কোলে নিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা করলেও বাচ্চাটা কাঁদছে। তীব্র বেশ কিছুক্ষণ পর বাচ্চার কান্না সহ্য করতে না পেরে ছুটে এলো,
আম্মু ও এতো কাঁদছে কেন?আর কতো কাঁদবে?
তিশা তীব্রর চিন্তিত মুখটা দেখে বলল,
দিয়া মনির হুস আসলেই ও থেমে যাবে।
তীব্র তবুও কোন এক অজানা টানে ওর কান্না সহ্য করতে পারছে না।তাই তিশাকে বলে,
আম্মু ওকে আমি একটু কোলে নেই!!
তিশা তীব্রর দিকে আবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
তুমি পারবে??
আমি পারব আম্মু প্লিজ ওকে দাও!!

তিশা তীব্রর কোলে ছোট দেহটি দিতেই তীব্র খুব যত্নে সহকারে কোলে নিল।অবাক করা বিষয় হলো বাচ্চাটি এখনো কাঁদছে তবে ঠোঁট উল্টে কাঁদছে।যেন তীব্র কে অভিযোগ করছে তাকে কেন খেতে দেওয়া হচ্ছে না।তার তো খুদা পেয়েছে। তীব্র বেশ কিছুক্ষণ ওমন ঠোঁট ফুলানো দেখে ফিক করে হেসে উঠলো।
তীব্র হাসার মিনিটের মধ্যেই বাচ্চাটি জোরে জোরে কান্না করে দিল। তীব্র হতবাক হয়ে ওর কান্না থামানোর উদ্দেশ্য বলল,
কাঁদে না!! লিটিল গার্ল!ডোন্ট ক্রাই!!প্লিজ প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!!দেখ আম সরি!!সরি সরি!আমি আর হাসব না তোমার উপর!সরি!প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!!
তীর তীব্রর অস্থিরতা দেখে বলল,
কোনদিন আমার জন্য তো এমন অস্থির হসনি ভাই!!তাও নাকি সরির বন্যা বয়ে দিচ্ছিস একদিনও বয়স না হওয়া এই পিচ্চির জন্য!!

তীব্র বিরক্ত কন্ঠে বলল,
চুপ করবি!!
তীর ব্যাঙ্গ করে বলল,
হু!! আম্মুর সামনে খুব ডিসেন্ট হয়ে ঘোরো তুমি।আসলে তুমি যে কি চিজ ভাই!!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫৮

তীব্র তীরের কথায় তোয়াক্কা না করে বাচ্চাটিকে নিবিড়ভাবে কোলে রেখে আলতো করে দোলাতেই কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটা ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমন্ত অবস্থায় বাচ্চাটিকে একদম শান্ত দেখালো। ছোট্ট একখানা মুখ।ঘন কালো চুল।চোখে ঘন কালো পাপড়ি। তীব্র বাচ্চাটিকে দেখার মাঝেই বাচ্চাটি ঘুমিয়েই হেসে উঠলো! তীব্র দুচোখ ভরে দেখল সেই নজরকাড়া হাসি।যে হাসিতে সে প্রথম ঘায়েল হয়েছিল।সদ্য জন্মানো সেই বাচ্চার প্রতি সেদিন অনূভব করল অসীম মায়া।যে মায়া আজও তার কাটেনি।আজো সেই কাঁদো কাঁদো মুখখানা,ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না করা,আর সেই মারাত্বক হাসি তাকে বন্দি করে রেখেছে মেয়েটার মায়ায়।সে শত চেষ্টার পরেও পারে নি সেই মায়াজাল থেকে পালাতে।আর হয়তো পারবেও না।এভাবেই আটকে থাকবে মায়াবতীর মায়াজালে!! আজীবন…..
শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত…..

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬০