আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬
ইশিকা ইসলাম ইশা
পরের দিন সকালে রিদি রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হয়ে নিচে আসতেই দেখে রুপ বাইরে থেকে হাতে একটা কফির মগ নিয়ে বাসায় ঢুকছে!রুপের সুন্দর মুখখানায় কষ্টের ছাপ!রিদি চটপট পায়ে রুপের সামনে এসে বলে,
কি হয়ছে আপু!!মন খারাপ!!
রুপ শুকনো মুখে বলল,
চলে গেছে!আবার চলে গেছে!
রিদি অবাক হয়ে বলল,
কে??চলে গেছে??
তীব্র!!
রিদি অবাক হল না। সে জানে তীব্র চলে গেছে।রাতে দেখেছিল দূর থেকে চকচকে কালো গাড়িতে তীব্র নামক মানুষ টাকে কে!যদিও মুখ দেখে নি!দেখে নি বলতে দেখা যায় নি। শুধু দেখেছিল বিশালদেহী লম্বাটে একজন পুরুষের অবয়ব।রিদির চিনতে অসুবিধা হয় নি সেই পুরুষকে! অদ্ভুত ভাবেই সে চিনতে পেরেছিল তাকে!
অনেক রাতে হুট করেই কিছুর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যেতেই রিদি চমকে উঠে ঘুম থেকে। ভীষণ ভয় ও পেয়েছিল।কিসের শব্দ দেখার জন্য বেলকনিতে যেতেই দেখে একটা টব ভেঙে পড়ে আছে। রিদি অবাক হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কোন বাতাস নেই কিছু নেই !তবে ভাংল কিভাবে!!!রিদি টব টা তুলে রেখে আসতেই দেখেছিল লাবিব সহ কিছু গাডকে! উৎসুক হয়ে সেদিকে খেয়াল করতেই বিশালদেহী ছায়ামানব দেখে আত্বা কেঁপে উঠেছিল।ভয়ে দৌড়ে রুমে আসতে চেয়েও কি মনে করে দাড়াল!ওকি দিয়ে দেখতে চাইলো ভয়ংকর সেই পুরুষকে। কিন্তু সে গটগট পায়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো সামনে মুখ করে ।পেছন থেকে রিদি শুধু শরীরটাই দেখেছে।তবে গাড়িতে বসতে গিয়েও হুট করেই থেমে গেছিল কয়েক সেকেন্ড!হাতে থাকা কালো কালারের গানটি রিদিকে আরো একধাপ ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে আবার বসে পড়েছিল গাড়ির ভেতর!!ওনি বসতেই গাড়িটি চলতে শুরু করল।যা গেট পেরিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের আড়াল হয়ে গেল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সকাল সকাল রুপের কথায় রিদি দোয়া কবুল হয়েছে ভেবে খুশি হলেও রুপের উদাস মুখটা দেখে খারাপ লাগল!! মেয়েটার সুন্দর মুখটাই আমবশ্যার মতো আধার হয়ে আছে!!
এর মাঝেই তিরা চৌধুরী খুশি হয়ে নিচে এসে বলে,
কে চলে গেছে রে রুপ??আজ আমি আমার ছেলের জন্য ওর পছন্দের পিৎজা করব ভাবছি!!মনে আছে আম্মা !!ছোট বেলায় আমার হাতের পিৎজা ওর কতো পছন্দ ছিল!! শোন তুই কিন্তু বলবি না আমি বানিয়েছি বলবি তুই বানিয়েছিস!!
তিরা চৌধুরীর কথায় দাদি পেছনে ঘুরে বলে,
কিন্তু যার জন্য বানাতে চাইছ সে তো চলে গেছে! তাছাড়া সময়ে যে কাজ করো নি এখন করে কি হবে??
রিদি তিরা বেগমের দিকে তাকালো!!টলমলে চোখে একরাশ নিরাশা,হতাশা।
দাদিও কিছু না বলে চুপচাপ রুমে ঢুকে গেল!রিদি সবার দিকে একবার তাকিয়ে দাদির পিছু পিছু গেল।থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যে।তবে দাদিরও মনটা খারাপ দেখে তারও মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল।একটা মানুষ কে ঘিরে আছে কতো গুলো মানুষের ভাল থাকা।এই পরিবার সম্পর্কে রিদির তেমন ধারনা না থাকলেও রিদি বুঝেছে সবাই তীব্র নামক ব্যাক্তিটিকে ভীষণ ভালোবাসে!!
এতো ভালবাসার মানুষ গুলোকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারে লোকটা। এতটুকু ও কি মায়া হয় না!! নির্দয় লোক
!রিদি দাদির রুমে ঢুকে দেখে দাদি চুপচাপ সোফায় বসে আছে!!রিদি দাদির কাছে এসে বসলো।
সরি দাদিমা!!
নাজমা চৌধুরী রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,
কেন??
আমার জন্য কি ওনি এখানে থাকছে না?আপনারা সবাই কতো কষ্ট পাচ্ছেন!!আমি চলে গেলে কি ওনি ফিরে আসবে!!
নাজমা চৌধুরী রিদির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসল!!উদাস কন্ঠে বলল,
তীব্র এমন ই!!কোন শিকলই তাকে বাঁধতে পারে না।জানিস একবার আমার অসুস্থতার বাহানায় ওকে ডেকেছিলাম !
আসেনি!!!!!রিদির চপটপ প্রশ্ন
এসেছিল! কিন্তু আমার চালাকি যখন জানতে পারল কি তান্ডব টাই না চালিয়েছিল!! বাসার কোন কিছু আস্ত রাখে নি।৫০লাখ টাকার ক্ষতি করেছিল!
নাজমা একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।ওকে নিয়ে খুব চিন্তা হয় জানিস! শেষ জীবনে শুধু ওর জীবনটা গুছিয়ে দিতে পারলে আমি মরেও শান্তি পেতাম।
রিদি ভাবনা চিন্তা ছাড়াই বলল,
ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিন দাদিমা।বৌ যখন চার ঘা লাগাবে একদম সোজা পথে হাঁটতে শুরু করবে!
রিদি কথাটা শেষ করে নিজেই অবাক বনে গেল। নাজমা চৌধুরী নিজেও বেশ অবাক হয়েই তাকালো রিদির দিকে! তবে রিদির অবুঝের মতো কথায় হো হো করে হেসে ফেলল!!
রিদি প্রথমে অবাক হলেও দাদির হাসি দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকালো।
দাদি হাসি থামিয়ে মুচকি হেসে বললো,
তুই হয়তো তীব্র চৌধুরী সম্পর্কে জানিস না।বৌ এর দু ঘা ব্যাপারটা তীব্রর সাথে যাই না!!তুই কিন্তু ওর বৌ!! চাইলে দু ঘা দিতেই পারিস!
রিদি ভয়ে হচকচিয়ে তাকাল নাজমা চৌধুরী দিকে। নাজমা চৌধুরী রিদির ঘাবরানো মুখ দেখে মুচকি হেসে আবারো বলল,
আমার নাতিটা ভীষণ নির্দয় রে রিদি।তিশা যাওয়ার পর ওর গম্ভীরতা আরো বেরেছে।সবার থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছে।
রিদি আর কোন প্রশ্ন করল না। দাদিকে বলে বেরিয়ে আসল রুম থেকে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে “বৌ”কথাটা সপ্তাদষী মনে ভয়ের সৃষ্টি করছে।বুক দুর দুর করছে।কিসের এই অনূভুতি,এই সম্পর্কে তো কোন সত্যতা নেই। না আছে মায়া,না আছে টান।তবে কোন ঝরের পূর্বাভাস এই সম্পর্ক।আদো কি কোন দিন আগুন,পানি মিলবে!!সবটাই সামনে ধোঁয়াশা।ঔপঞ
সেদিনের পর কেটে গেছে কয়েকটা মাস,
সকাল সকাল টেবিলে নাস্তায় হরেক রকম পদের রান্না দেখে অবাক হল তিরা চৌধুরী পরোটা,আলুভাজি,কসা মাংস ,পায়েস দেখে অবাক হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখল রিদি লুচি ভাজতে বসেছে।
এসব কি করছ তুমি???
আসলে আন্টি আজ শুক্রবার ছুটির দিন।সবাই বাসায় আছে তাই ভাবলাম আজ আলাদা কিছু…..
তোমাকে এসব করতে কে বলেছে??
না মানে আমি……..
এরপর তোমাকে যেন আমি রান্নাঘরে না দেখি।আর না এসব রান্না করতে। সকাল সকাল এসব খাবার কেউ খাই না!!বানিয়েছো কেন??একবার জিজ্ঞেস ও করো নি….
তাতে কি হয়েছে তিরা!ওর বানাতে ইচ্ছে হয়েছে বানিয়েছে।যার খেতে হচ্ছে হবে সে খাবে যার হবে না সে খাবে না।
দাদির কথায় তিরা চৌধুরী পেছনে তাকাল।
কিন্তু আম্মা সকাল সকাল এতো অয়েলি খাবার….
দাদি শান্ত কন্ঠে বলল,
বললাম তো যে খাবে সে খাবে ,যে খাবেনা সে খাবেনা। তাছাড়া তিশা মারা যাবার পর অনেক বছর পর আজ সকালে এমন নাস্তা কেউ তৈরি করেছে।আমি তো পেটপুরে আজ খাব। তাছাড়া ঘ্রাণ ও কি সুন্দর আসছে!!!আহা…….
সকাল সকাল এতো ঘ্রাণ কিসের ভাবী!!আজ কি সকাল সকাল রাজভোগ…………
রাইফা রান্নাঘরে ঢুকেতে ঢুকতে কথা গুলো বলে অবাক হয়ে তাকালো রিদিকে দেখে,
এই মেয়ে কি যেন তোমার নাম!!তুমি এখানে কেন??
চোখে কি কম দেখছে রাইফা!!দেখছো না গরম গরম লুচি ভাজছে!!তোমারও কি রিদিতার হাতের রান্না খেতে সমস্যা!!আজ সব রিদিতা রান্না করেছে।তোমাদের খেতে ইচ্ছে হলে খাবে না হলে নাই!!
নাজমা বেগমের কথায় রাইফা অবাক হয়ে বলল,
সব একা ও করেছে!!
দাদি কিছুটা ব্যাঙ্গ করে বলল,
তো আর কাউকে দেখছো নাকি!!!এই রিদিতা!আয় তো চল!আমাকে খেতে দে!!বুঝলি সেই কবে এমন নাস্তা করেছিলাম!!আয় আয়……
রিদিতা চুলা অফ করে দাদীর সাথেই রান্না ঘর থেকে লুচি নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখল।মনটা খারাপ হলেও মুচকি হেসে দাদিকে খাবার দেওয়ার মাঝেই উপস্থিত হয় অভি।
আহা!!কি ঘ্রাণ!!আজ কোন বিশেষ দিন নাকি দিদুন!!এতো আয়োজন!!
দাদি মুচকি হেসে বলল,
আজ নাস্তা রিদিতা করেছে। টেষ্ট করে দেখ!!
অভি অবাক হয়ে বলল,
একি তুমি রান্না পারো!!আর এতো কিছু তুমি একা করেছো???
রিদি কিছুটা স্বস্তি বোধ করে বলল,
জি ভাইয়া!!
মাই গড!!এতো কিছু!এতো কষ্ট করার কি দরকার ছিল!!
এইটুকু তে কোথায় আর কষ্ট ভাইয়া।মা তো আমাকে এর চেয়ে বেশি রা……..
কথা শেষ না করেই থেমে গেল রিদিতা।অভির বুঝতে বাকি রইল না কি বলতে চেয়েছিল।রিদির সাথে হওয়া সকল কিছুই দাদির থেকে জেনেছে অভি।অভি কথা কেটে বলল,
আরে শুধু বানালেই হবে।খেতে তো দাও!!
রিদির মুখের হাসি চওড়া হলো!!অভিকে প্লেটে সব পরিবেশন করে দিতেই অভি লুচি ছিড়ে মুখে দিতেই অবাক হল। বাচ্চা মেয়ে এতো ভালো রান্না করতে পারে!! এইটুকু বয়সে কতোকিছুই পারে মেয়েটা।পারে!!নাকি পারতে হয়েছে!! শত মায়ের অত্যাচারের জন্য!!অভি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে খাবারে মন দিল!
আই সয়ার দাদি এতো টেষ্টি হয়েছে!!যাস্ট মাশাআল্লাহ!!
কি ব্যাপার মাই বয়!!আজ সকাল সকাল এতো খুশি!!আহহহ কি ঘ্রাণ আসছে!!
আরফিনের কথায় অভি বলে,
বসে পড়ো ড্যাড!!আমেজিং রান্না হয়েছে আজ!!!
নেকি আর পুচ পুচ!!এতো কিছু সকাল সকাল!কোন ওকেশন!!
না!রিদিতা আজ নিজ হাতে রান্না করেছে সবার জন্য!!
সেকি!!তুমি রান্না পারো!!
জি!!আসলে!!আমি….আমি দিই আপনাকে!!
হ্যা অবশ্যই!! দাও!!
একে একে সবাই এসে বসল ডাইনিং এ!!রাইফা খাবারের মোহনীয় গন্ধে আরফিনের সাথে সাথে বসে পড়ল।
দাও দেখি মেয়ে কেমন রান্না করেছো??
রিদি মুচকি হেসে খাবার বেড়ে দিয়ে তাকালো তিরা বেগমের দিকে!
আন্টি আপনিও বসুন!!প্লিজ!!
আমি এসব খাবার………
আরে ভাবি বসেন বসেন!!এতো টেষ্ট মিস করলে পস্তাতে হবে!!
রাইফা আরফিনের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
বসেন তো মডেল ভাবি!! সত্যি টেষ্টি!!!
সবার জোরাজুরিতে তিরা চৌধুরী বসল।রিদি খুশি হয়ে খাবার বেড়ে দিল।লুচি দুটো দিয়ে আবারো রান্না ঘরে ছুটল লুচি ভাজার জন্য!!
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫
গরম গরম লুচি পরিবেশন করে দিতেই উদাস মুখে নেমে এলো রুপ।মেয়েটা এতো উদাস থাকে আজকাল। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে খাবার খেতে মনোযোগ দিল।আরফিন মেয়ের দিকে তাকিয়ে টুকটাক কথার মাঝেই রিদি গরম ফুলকো ফুলকো লুচি রুপের প্লেটে তুলে দিয়ে আবারো ছুটল রান্না ঘরে।রুপ রিদিকে দেখে মুচকি হাসল।কয়েক মাসে রিদির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।মেয়েটা এখন হাসে,বেশ কথাও বলে।খিলখিল হাসি দেখে মুগ্ধ হয় রূপ।সে সুন্দর! সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে কোন রুপ কথার গল্প লিখলে তার মতো সুন্দরী মেয়েকে নিয়েই হয়তো কবি গল্প লিখবে। কিন্তু রিদি!!রিদির মাঝে বিশেষ কিছু আছে। শ্যামাঙ্গিণী!! শ্যামল বরনে তাকে শ্যামসুন্দরীকন্যা লাগে।যেন এই রং শুধু তার জন্যই বরাদ্দ!!এই হাসি শুধু তার জন্যই বরাদ্দ!! কন্ঠের সুরলা গীতি তার জন্যই বরাদ্দ!!এতো এতো নিখুঁত গুন মেয়েটার!!
কি রে মা খাচ্ছিস না কেন??
আরফিনের কথায় রুপ বেরিয়ে আসে নিজের ভাবনা থেকে। দুটো লুচি শেষ করে আরেকটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই হুট করে থেকে গেল হাত!!চোখ বড় বড় করে চাইল!!