আমার আদরিনী পর্ব ৩৫+৩৬

আমার আদরিনী পর্ব ৩৫+৩৬
আশুথিনী হাওলাদার

মেঘালয় তিয়ানাকে বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে নিজের কেনা ফ্লাটে নিয়ে আসে। তিয়ানা রাগে কন্ঠে বলে,
__‘আপনি আমাকে এখয়ানে কেন নিয়ে আসলেন?’
মেঘালয় তিয়ানার প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে আলমারি থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশ্রুমে ফ্রেস হতে চলে যায়। তিয়ানার মাথায় ধপ করে রাগ উঠে যায়। মেঘালয় কি তাজে এভয়েড করছে? রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে বেডের উপর থেকে এসির রিমোটটা তুলে মেজেতে আছাড় মেরে মুখ ফুলিয়ে বিছানায় আসন পেতে বসে থাকে। আজ কাল মেঘালয়কে তার চরম আকাড়ে বিরক্ত লাগছে। মেঘালয়ের এহনো কান্ডের কোনো মানে খুজে পাচ্ছে না তিয়ানা। এসবের কি কারন হতে পারে? মেঘালয় তো আর তাকে ভালোবাসে না যে তাকে ভালবেসে নিজের রাখার জন্য তুলে নিয়ে আসবে। তিয়ানার ভাবনার মধ্যে মেঘালয় ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আলমারি থেকে তিয়ানার জন্য কিনে রাখা ড্রেসের মধ্যে থেকে ঘরে পড়ার জন্য একটা ড্রেস বের করে তিয়ানার সামনে রাখে মেঘালয়। কপাল কুচকে প্রশ্ন করে তিয়ানা,

__‘কী?’
__‘যা ফ্রেস হয়ে নে।’
কিছু না বলে মেঘালয়ের হাত থেকে ড্রেস নিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায় তিয়ানা। তিয়ানা যাওয়া মাত্র মেঘালয় কিচেনে গিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনা খাবার গুলো বের করে ডাইনিং সাজিয়ে রাখে। আজকে এইগুলো খেয়ে কা্ঁটাতে হবে কালকে না হয় ঘরে রান্নার ব্যাবস্থা করবে।
তিয়ানা ফ্রেস হয়ে মেঘাকয়কে ঘরে না দেখতে পেয়ে ডাইনিং এসে দেখে মেঘালয় খাবার সাজিয়ে বসে আছে। তিয়ানা কোনো কথা বলে চেয়ার টেনে নিজের জন্য রাখা প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করে। মেঘালয় একবার তিয়ানাকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। আগের মতো প্রানবন্ত মেয়েটাকে খুজে পাচ্ছে না সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিয়ানার জন্য ফুসকা নিয়ে বাড়ি ফেরে তিলাত। সকালে বাহিরে যাওয়ার আগে তিয়ানা আনার জন্য বলছিল তাই আসার পথে বোনের জন্য নিয়ে আসে সে। বাড়িতে ফিরে ড্রয়িং রুম লাগোয়া ওয়াশ্রুমে গিয়ে আগে হাত মুখ ধুয়ে নেয় তিলাত। বাইরে থেকে এসেছে সে তাই হাত মুখ ধুয়ে বোনের কাছে যাবে। তিয়ানার প্রেগ্ন্যাসির পর থেজে তিলাত খুব সচেতন ভাবে চলা ফেরা করে। বোনের ঘরে যাওয়ার আগে পরিষ্কার ভাবে যায় সে। হাত মুখ ধুয়ে সোফা থেজে ফুসকার প্যাকেট তুলে তিয়ানার ঘরে যায় তিলাত। তবে ঘরে গিয়ে তিয়ানাকে না দেখতে পেয়ে ভাবলো হয়তো মায়ের ঘরে আছে। ফুসকার প্যাকেট তিয়ানার ঘরে থাকা পড়ার টেবিলের উপর রেখে বোনের খোজে মায়ের ঘরে যায় সে। তুলিকার ঘরের সামনে এসে দেখে তুলিকা ছোটো ছোটো খাতা সিলি করছে। তা দেখে হেসে ফেলে তিলাত। কিছু মাস পরে তাদের ঘরে একটা ছোটো বাবু আসবে। তাকে ‘মামা’ বলে ডাকবে তার কাছে নানা রকম আবদার করবে। যেমন ছোট্টো তিয়ানা করতো। ভাবতে’ই মন খুশি হয়ে যায় তিলাতের। হেসে ঘরে ঢুকে তুলিকা উদ্দেশ্যে বলে,

__‘তিনু কই আম্মু? ‘
ছেলের কন্ঠ শুনে কেঁপে ওঠে তুলিকা। তিলাত বাড়িতে এসেছে তিয়ানাকে ঘরে না দেখে হুরস্তুল বাজলো বলে। মেঘালয়কে ইদানীং তিলাত দু’চোক্ষে দেখতে পারে না। অবশ্য তাতে মেঘালয়ের যথেষ্ট দোষ আছে। কোন ভাই বোনের কষ্ট দেখতে পারে? তিলাত দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করে। তুলিকা চোরা চোখের একবার ছেলেকে দেখে শুক্নো ঢোক গিলে। তুকিকা চুপ থাকতে দেখে সন্দেহ হয় তিলাতের। সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করে সে,
__‘কাহিনী কি আম্মু? তিনু কই? সত্যি বলবা!’
তুলিকা আমতা আমতা করে বলে,
__‘মেঘ এসেছিল। ‘ও’ তিয়ানাকে নিয়ে গেছে।’
তুলিকার কথা শেষ করতে দেরী তিলাতের ঘরে থাকা সোফায় লাথি মারতে দেরী হয়নি। ভয়ে কেঁপে ওঠে তুলিকা। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তিলাত রাগে চিল্লিয়ে বলল,
__‘মেঘ এসে নিয়ে গেছে আর তুমি যেতে দিলে? নিশ্চয়ই জোড়৷ করে তুলে নিয়ে গেছে। তুমি আমাকে জানাওনি কেন?’
ছেকের এমন ব্যাবহারে আহমক হয়ে যায় তুলিকা। তিলাত বরাবর’ই শান্ত ছেলে। আর তার সেই ছেলে কিনা এভাবে ডেস্পারেট হয়ে গেল।

তুলিকার প্রশ্নের অপেক্ষা না করে তিলাত বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মেঘালয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। তুলিকা হতভম্ব হয়ে ছেকের যাওয়ার পথে তাঁকিয়ে থাকে। প্রথম বার নিজের ছেলেকে এতটা রাগতে দেখলো তুলিকা।
চৌধুরী বাড়িতে এসে মেঘ- তিয়ানাকে না পেয়ে মেঘালয় নম্বরে কল দেয় তিলাত। খাওয়া শেষে চেয়ার ছেড়ে ওঠার সময় ফোন বেজে ওঠে মেঘালয়ের। টেবিল তহেকে ফোন তুলে ফোনের স্কিনে তিলাতের কল দেখে বাঁকা হেসে তিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে ফোন রিসিভ করে সে। ফোন রিসিভ করা মাত্র তিলাত চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
__‘আমার বোনকে তুলে নিয়ে যাওআর সাহস কি করে হয় তোর?’
খাওয়া হেসে বেসিং এ হাত দিচ্ছিলো তিয়ানা। ফোনে তিলাতের কন্ঠস্বর শুনে দৌড়ে এসে মেঘালয়ের থেকে ফোন কেঁড়ে নিতে চায় সে। মেঘালয় এক হাতে তিয়ানার কোমড় পেচিয়ে ধরে তিয়ানাকে নিজের কোলে বসিয়ে। বাঁকা হেসে তিলাতের কথার প্রতি উত্তর দিলো,,
__‘আরেহ শালাবাবু! আমার বউ আমি আনবো না।’
__‘দেখ মেঘ! এসব ভাল হচ্ছে না। আমার বোন তোর বউ না। তুই নিজে বলছিস তুই আমার বোনকে ডিভোর্স দিবি।’
তিয়ানা মোচড়ামুচড়ি করছে মেঘালয়কে নিজের থেকে ছাড়ানো জন্য কিন্তু মেঘালয়ের সাথে শক্তিতে পেরে উঠছে না সে। মেঘালয় আরও কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয় তিয়ানার সাথে। তিআনার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নেয়ার মতো করতে করতে তিলাতকে বলল,

__‘ডিভোর্স দেব বলছি দেয়নি। আইনি এবং শরিয়ত মোতাবেক তোর বোন এখনো আমার বউ।’
তিলাত রাগে হিসহিসিয়ে বলে,,
__‘আমার বোন অসুস্থ মেঘ। ‘
আমার বউ সেটা আমি বুঝে নেব। বলে ফোন কাঁটতে নেয় মেঘালয়। তিয়ানা থাবা মেরে মেঘালয়ের থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে বলতে নেয়,,
__‘ভাইয়া এই লোকটা,,,’
কথা শেষ করতে পারে না তিয়ানা। তার আগে’ই মেঘালয় তিয়ানার থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে তিয়ানাকে কোলে তুলে বেডরুমের দিকে অগ্রসর হয়।’
তিলাত স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষন ফোনের দিকে চেয়ে থেকে রেগে গিয়ে গাড়িতে হাত দিয়ে জোড়ে থাপ্পড় মারে। তিলা বেশ বুঝতে পারছে তিয়ানা কিছু বলতে যাচ্ছিলো মেঘলয় আঁটকে দিছে তাকে।”
‘‘মেঘলয় তিয়ানাকে খাটে শুয়ে দিয়ে নিজেও তার পাশে শোয়। তিয়ানা মেঘালয়কে শুতে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে। তিয়ানাকে বসতে দেখে মেঘালয় না শুয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
__‘কি হলো ঘুমাবি না?’
তিয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,
__‘আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবো না আমি।’
মেঘালয় চোখমুখ কুচকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে আচমকা টেনে তিয়ানাকে শুয়ে দিয়ে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে শোয় মেঘালয়। তিয়ানা রেগে বলে,

__‘আপনি কিন্তু বারাবাড়ি করছেন। ছাড়ুন আমাকে।’
মেঘালয় তিয়ানাকে না ছেড়ে তাকে আরও আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে। মেঘালয়ের এসব আদিখ্যেতা তিয়ানার যথেষ্ট বিরক্ত লাগছে। ন্যাকামি মনে হচ্ছে তার কাছে।
__‘আচ্ছা! আপনার ফ্লাটে মেয়েদের ড্রেস কেন? আমি তো কখনো এখানে আসিনি। নাকি! আপনার প্রেমিকাকে নিয়ে এখানে রুম ডেট করতেও আসতেন। হুহ?’
তিয়ানার এমন কথায় রাগে শরীর জ্বলে ওঠে মেঘালয়ের। মানে? তিয়ানার কী তার ক্যারেক্টর নিয়ে কথা বলছে?
__‘কী বলতে চাচ্ছিস তুই?’
মেঘালয়ের অগোচরে হাসে তিয়ানা। টোপ গিলেছে তাহলে মেঘালয়। কিছুটা ঠাট্টার স্বরে বলে ওঠে তিয়ানা,
__‘কী বলতে চাচ্ছি বুঝছেন নিশ্চয়ই। ওকে আবার বলছি। আপনার প্রেমিকার সাথে কী আমার অগোচরে এখানে রুমডেটও হতো?’
তিয়ানার এমন কথায় রাগে শরীর জ্বলে ওঠে মেঘালয়ের। মানে? তিয়ানার কী তার ক্যারেক্টর নিয়ে কথা বলছে?
__‘কী বলতে চাচ্ছিস তুই?’
মেঘালয়ের অগোচরে হাসে তিয়ানা। টোপ গিলেছে তাহলে মেঘালয়। কিছুটা ঠাট্টার স্বরে বলে ওঠে তিয়ানা,
__‘কী বলতে চাচ্ছি বুঝছেন নিশ্চয়ই। ওকে আবার বলছি। আপনার প্রেমিকার সাথে কী আমার অগোচরে এখানে রুমডেটও হতো?’
মেঘালয় আহমক হয়ে যায়। সে ড্রেস গুলো তিয়ানার জন্য কিনে রেখেছিল আর এই মেয়ে কিনা উলটা পালটা বুঝে তার ফুলের মতো পবিত্র চরিত্রে দাগ লাগামোর চেষ্টা করছে।’
রাগে দাতে দাত চেপে উত্তর দেয় মেঘালয়,

__‘ইয়াহ! আমার তো একটা না দশটা গার্লফ্রেন্ড আছে তাদের নিয়ে আমি এখানে এসে রুম ডেট করি। শুনেছিস এখন ঘুমা।’
তিয়ানা রাগী চোখে কিচ্ছু মেঘালয়ের দিকে চেয়ে থেকে বিছানা থেকে উঠে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে পাশের ঘরে গিয়ে শব্দ করে দরজা আঁটকে দেয়। তিয়ানার কান্ডে মেঘালয় ‘হা’ হিয়ে যায়। নিজের মাথার চুল খামছে ধরে সে। ভেবে পাচ্ছে না এই বলদ মেয়েটাকে মানাবে কি করে। যেটা বোঝার সেটা বোঝে না নিজের মতো আউল ফাউল বুঝে বসে থাকে ছাগল একটা ।
‘‘ তিয়ানার পরের দিন সকাল শুরুর হয় ঘুমন্ত মেঘালয়ের গায়ে এক বালতি পানি ফেলে। ঘুমের মধ্যে পানি শরীরে পরায় চমকে ঘুম থেকে উঠে যায় মেঘালয়। তিয়ানা খাটের পাশে এক হাতে বালতি অন্য হাত কোমড়ে রেখে শয়তান হেসে দেখে মেঘালয়কে। ধপ করে রাগ ওঠে যায় মেঘালয়ের। শীতের সকালে শরীরে ঠান্ডা পানি পরা যে কতটা বিরক্তিকর। ভ্রু কুচকে তিয়ানাকে জিজ্ঞেস করে মেঘালয়,
__‘এটা কি করলি? এখন আমিও বাথরুম এক বালতি ঠান্ডা পানি এনে তোর মাথায় ঢালি?’
তিয়ানা মেকি হেসে পেটে হাত রেখে ইশারায় মেঘালয়কে দেখিয়ে বলে,
__‘দেখি ঢালুন তো। শীতের সকালে কনকনে ঠান্ডা পানি আমার মাথায় ঢাললে আপনার বাঁচ্চার’ই ক্ষতি হবে।’
মেঘালয় দাত কিড়মিড়িয়ে বলে,,

__‘ ব্লাকমেইল করছিস?’
__‘বলতে পারেন সেটা’ই’
দু’হাত মেলে আলসে দিয়ে বলে তিয়ানা,
__‘এখন যান তো খাবার রেডি করুন গিয়ে বাবুর খিদে পেয়েছে।’
মেঘালয় দাত কিড়মিড় করে কটমট চোখে দেখতে থাকে তিয়ানাকে। তিয়ানা ডান হাত তুলে বাতাস করার মতো করে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে গলায় সুর তোলে,
__‘ফান্দে পড়িয়া মেঘালয় চিপায় আঁটকেছেরে,,,,’
মেঘালয়ের ইচ্ছে করলো ফ্লোরে থাকা বালতিটা তুলে তিয়ানার মাথায় মারতে। তিয়ানা ভেবে বালতি টাকে মারে মেঘালয়। ব্যাচারা বালতি মেঘালয়ের রোশে পরে নিজের জীবন ত্যাগ করে। মানে ভেংগে চৌচির অবস্থা হয়। তিয়ানাজে গাইল দিতে দিতে বাথ্রুমে গিয়ে ধরাম করে দরজা আঁটকে দেয় মেঘালয়। তিয়ানা ঘরে বাইড়ে থেকে উঁকি ঝুঁকি মেরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে কিটকিটিয়ে হেসে দেয়। এবার বুঝবে ‘মেঘালয় চৌধুরী’। মিসেস তিয়ানা চৌধুরী ঠিক কি! সবে তো শুরু। নিজ মনে কথা গুলো বলে কিটকিটিয়ে হাসে তিয়ানা। হাসতে হাসতে আবার সুর তোলে,
__‘ফান্দে পড়িয়া মেঘালয় চিপায় আঁটকেছেরে,,,’
পার্কের বেঞ্চিতে চোখ -মুখ শক্ত করে বসে আছে তিলাত। তার পাশে অসহায় মুখ করে বসা অবন্তী। কিছুক্ষণ আগে আসতে দেরী হওয়ায় মেঘালয়ের উপরের সব ঝাল বেচারা অবন্তির উপর ঝাড়লো। অবন্তী ভয়ে ভয়ে বলে,
__‘আমার কী দোষ? মেঘ ভাইয়ার রাগ আমার উপর দেখাচ্ছো কেন?’
আশে পাশে তাঁকিয়ে তিলাত নিজে শান্ত করে। অবন্তীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
__‘আমি মেঘকে সহ্য করতে পারছি না অন্তী।
__‘মেঘ ভাইয়া তো তোমার বেস্টফ্রেন্ড।’

ভাবুক হয় তিলাত। হ্যা! মেঘ তার বেস্টফ্রেন্ড জানজিগার বন্ধু তারা। কিন্তু মেঘ কি করলো? তার বোনকে বিয়ে করে নিয়ে এতটা যন্ত্রণা দিলো। এক প্রকার মানসিক টর্চার সেটা কোন ভাই সহ্য করবে? তার মতে পৃথিবীতে এমন কোনো ভাই নেই যে, নিজের বোনের কষ্ট সহ্য করতে পারে। আর না সেই মানুষটাকে ক্ষমা করতে পারে যে বোনকে কষ্ট দেয়। তিলাত জানতো, মেঘালয় প্রচন্ড ভালোবাসে তিয়ানাকে। তাই সে বিয়েতেও মত দিয়েছিল। মেঘের মতো কাউকে তার বোন স্বামী হিসেবে পেকে বোন ভালো থাকবে। সেই বন্ধু’ই কিনা তার বোনকে এতটা কষ্ট দিলো। তিলাত যখন’ই মেঘালয়ের সাথে সব ঠিক করে নিতে চায় তখন তার মস্তিষ্কে হানা দেয় মেঘালয়ের বলা সেই অসহ্য কথাটা,
_‘তাহলে, ডিভোর্স হওয়াটাই বেটার’ এই শব্দ গুলো কিছুতে ভুলতে পারছে না তিলাত। যখন’ই মনে পরে তার মন চায় মেঘালয়কে জানে মেরে দিতে। তিলাত ভেবে নিয়েছে সে কিছুইতে’ই তার বোনকে মেঘালয়ের কাছে রাখবে না। নেহাত সে মেঘালয়ের ফ্লাটটা কোথায় জানে না। তাই এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে।
__‘তোমার এটা মনে হচ্ছে না, তিয়ানাকে মেঘালয় ভাইয়া এতটা ভালবাসা সত্যেও এমন একটা কাজ কেন করলো?’
অবন্তীর কথায় সম্বিত ফিরে পায় তিলাত। ভ্রু কুওচকে বলে উঠে,

আমার আদরিনী পর্ব ৩৩+৩৪

__‘মানে?’
__‘তুমি তো বললে, মেঘয় ভাইয়া নাকি তিয়ানাকে ভালোবাসতো। সেই ছোট্টো বেলা থেকে এবং সবটা তুমি জানতে। তবে তোমার মনে হচ্ছে না মেঘালয় ভাইয়া গত কয়েক মাসে যা করেছে তার কিছু একটা রিজন আছে। নাহলে, তিনি তিয়ানাকে এতোটা ভালোবাসা সত্যেই এমনটা কেন করবেন? কী লাভ? যদি বলো, বৃষ্টি নামের প্রেমিকার জম্য কিন্তু! তুমি তো ছোটো থেকে মেঘ ভাইয়ার সাথে বড় হয়েছো। তোমরা ফ্রেন্ড! এত বছরে একবারও কি জানতে পারোনি বৃষ্টির কথা। বা তোমা মনে হচ্ছে না? হঠাৎ কোথা থেকে এই ‘বৃষ্টি’ ক্যারেক্টর উধাও হলো?
ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে আসন পেতে বসে আছে তিয়ানা। মেঘালয় পাশে কিচেনে খাবার তৈরী করছে। মেঘালয়ের রাগের সীমা ভেবে মনে মনে পৌচাশিক হাসে তিয়ানা। আহা! কি শান্তিটাই না লাগছে তার মনে, প্রানে, দেহে। ডক্টর মেঘালয় চৌধুরী কিনা বউয়ের জন্য কিচেনে গিয়ে খাবার রান্না করছে। এ যেনো স্বপ্ন! তিয়ানার একবার ইচ্ছে করলো এই দৃশ্য ফোনে ক্যাপচার করে রাখবে। পরে ভাবলো না, দরকার নেই দেখা যাবে হিতে বিপরীত হলো। এমনিতে সে সকাল থেকে অনেক ক্ষেপিয়েছে মেঘালয়িকে আরও ক্ষেপে গেলে তাকে তুলে আছাড় মারবে।
কিচেন থেকে খাবার তৈরী করে নিয়ে এসে ডাইনিং এ রাখে মেঘালয়। তিয়ানা একবার আড় চোখে দেখে মেঘালয়কে টি-শার্ট এর উপর কিচেন এপ্রোন পরে আছে মেঘালয় সাথে মাথায় টুপি। তা দেখে মুখ লটকায় তিয়ানা। মনে বিড়বিড়ায়, ঢং দেখে বাঁচি না। বলে ভেংচি কাটে তিয়ানা। মেঘালয় তিয়ানাকে দেখছিল। তিয়ানার হঠাৎ ভেংচিতে ভ্রু কুটি করে সে। তিয়ানা গলার ঝেঁড়ে বলল,

__‘খাবার কী টেবিল চেয়ারে খাবে?’
ভ্রু কুটি করে মেঘালয়। তিয়ানা মেকি হেসে বলে,
__‘স্রাভ করবে কে?
শোনা মতো চোখহ দিয়ে তিয়ানাকে নাই করে দেয়ার মতো করে তাঁকায় মেঘালয়। তিয়ানা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে। মেঘালয় মুখে কিছু না বলে, খাবার সার্ভ করে দেয়। তিয়ানা মনে মনে হাসে, আহা! মেঘালয় তাকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। অবিশ্বাস্য! তিয়ানা এক হাত নিজের পেটে রেখে বলে, বাবু অল ক্রেডিট গোস টো ইউ’ এক মাত্র তোর জন্য’ই তোর এই খারুস বাপ কে টাইট দিতে পারছি। সোনা বেবি আমার।’ মেঘালয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিয়ানার গতি বিধি লক্ষ্য করে। তিয়ানা আড় চোখে মেঘালয়ের চুপসে যাওয়া মুখের দিকে চেয়ে খেতে আবার মিনমিনিয়ে সুর তোলে।
__‘ফান্দে পড়িয়া মেঘালয় চিপাই আঁটকেছেরে,,,,,’

আমার আদরিনী পর্ব ৩৭+৩৮