আমার আদরিনী পর্ব ৩৩+৩৪

আমার আদরিনী পর্ব ৩৩+৩৪
আশুথিনী হাওলাদার

ঘুমের মধ্যে অনুভব হলো তিয়ানার। কেউ তাকে সাপের মতো পেঁচিয়ে তার সাথে শুয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে কপাল কুচকায় সে। নেড়েচেড়ে উঠতে নিলেও শক্ত হাতের বাঁধনে ওঠতে চেয়ে উঠতে পারে না সে। বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাঁকায় তিয়ানা। তাকে আষ্টেপৃষ্টে সাপের মতো জড়িয়ে ধরা মানুষটাকে দেখে বেশ অবাক হয় সে। স্বপ্ন দেখছে নাকি! দু’হাতের তালু দিয়ে চোখ ডলে আবার তাঁকায় সে না স্বপ্ন না। সত্যি! মেঘালয় তার’ই ঘরে তার বিছানায় তাকে’ই জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। এটা কি করে সম্ভব? বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় তিয়ানা। বিস্মিত ভাব কাটয়েমেঘালয়কে ধাক্কিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে তিয়ানা। এক প্রকার চেচিয়ে বলে উঠে,,

__‘আপনি এখানে কি করছেন?’
তিয়ানার চিৎকারে ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। চোখ চারপাশে ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে সে। তিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে তাকে একবার দেখে চোখ বন্ধ করে দ্বিতীয় বার ঘুমের প্রস্তুতি নেয় মেঘালয়। মেঘালয়ের এহনো কান্ডে মাথা বিগড়ে যায় তিয়ানার। রাগে ফোস ফোস করতে করতে চেচিয়ে প্রশ্ন করে,
__‘আপনি আমার ঘরে কি করছেন?’
তিয়ানার চিৎকারে মেঘালয় কানে হাত দিয়ে ধমকে ওঠে,
—_‘আস্তে কথা বল বেয়াদপ!’
ফোস করে ওঠে তিয়ানা,
__‘কে বেয়াদপ? আপনি আমাকে কোন এংগেলে বেয়াদপ বলছেন?’
মেঘালয় কাল থেকে আংগুল নামিয়ে। ডান হাতের তালু দিয়ে কপাল চাপড়ে বিরক্তি নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। শান্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,
__‘বেশ রাত করে এসেছি তিনু। ঘুম পুরু হয়নি। চেচাস না ঘুমোতে দে।’
__‘ঘুমাবেন তো এখানে কী? নিজের বাড়িতে গিয়ে ঘুমান। আমার বাড়তে আমার ঘরে আমার বিছানায় কেন আপনি?’
মেঘালয় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__‘বউ যেখানে বর তো সেখানে’ই থাকবে।’
ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে তিয়ানা,,
__‘কে? কার বউ?’
মেঘালয় আচমকা তিয়ানার হায়ে টান দিয়ে তাকে বিছানায় শোয়ায়। হঠাৎ এমন হয় হতভম্ব হয়ে যায় তিয়ানা। মেঘালয়কে ধাক্কা দিয়ে উঠে চায় সে। তবে মেঘালয় তার দু’হাত নিজের হাত দিয়ে চেলে ধরে তিয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বাঁকা কন্ঠে বলে,,
__‘বউয়ের দেখি তেজ বেড়ে গেছে।’
মেঘালয়ের এহনো কথা কানে যাওয়া মাত্র তিয়ানার মগজ বিগড়ে যায়। রাগে ফোস ফোস করে উঠে সে,
__‘আপনার এখানে কি দরকার?’
__‘আমার’ই তো দরকার।’
তিয়ানার পেটের উপর হাত দিয়ে বলল,,
__‘এখানে আমার বউ আমার বাঁচ্চা। আমি’ই তো থাকবো।’
মেঘালয়ের হেয়ালি পানা কথায়। তরতর করে রাগ উঠে তিয়ানার। মেঘালয়ের হাতে বাঁধন থেকে মোচড়ামুচড়ি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সে।

__‘আপনি এটা ঠিক করছেন না। ছাড়ুন আমাকে নাহলে, আমি চিৎকার করবো।’
__‘ওকে করো চিৎকার। তুমি না পারলে আমি সাহায্য করছি।’
নিরাশ হয় তিয়ানা। মোচড়ামুচড়ি থানিয়ে ছল ছল চোখে চেয়ে মেঘালয়কে প্রশ্ন করে সে,,
__‘কি চাচ্ছেন আপনি?’
তিয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘বউকে চাচ্ছি।’
মেঘালয়ের এমন আচরণে কেঁপে ওঠে তিয়ানা। গলা শুকিয়ে আসে তার। শুকনো ঢোক গিলে কিছুড়া অভিমান নিয়ে বলে,
__‘আমি আপনার বউ না। আপনি আপনার ‘আদরিনী’ নামক প্রেমিকা বৃষ্টির কাছে যান।’
মৃদু হাসে মেঘালয়। তিয়ানার কানের লতিতে ছোটো কামড় দিয়ে বলল,,
__‘বউ কি আমার রেগে আছে?’
মেঘালয়ের হঠাৎ কাছে আসায়। অসস্তিকর অনুভূতি হয় তিয়ানার। সাথে মেঘালয়ের এসব ন্যাকামোও সহ্য হচ্ছিলো না তার। আচমকা মেঘালয়ের নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বেড সাইড থেকে ওড়না হাতরে গায়ে ওড়না জড়িয়ে খাট থেকে নেমে ফ্লোরে দাঁড়ায়। রাগী স্বরে প্রশ্ন করে তিয়ানা,,

__’এসবের মানে কী মেঘ ভাইয়া? কি চাচ্ছেন আপনি? যখন ইচ্ছে কাছে টেনে নিবেন আবার যখন আপনার ইচ্ছে হবে তখন আমাকে ছুড়ে ফেকে দিবেন? কি ভাবছেন কি আমাকে? আমি আপনার খেলার পুতুল? আপনার প্রেমিকা আছে মেনে নিয়েছি। প্রেমিকাকে ছাড়তে পারবেন না তাও মেনে নিয়েছি। আমাকে ডিভোর্স দিবেন সেটাও মেনে নিয়েছে। সব শেষে এই আদিখ্যেতা কেন?’
বলতে বলতে কেঁদে দেয় তিয়ানা। তিয়ানার কাঁন্না দেখে বুকের ভিতর যন্ত্রণা শুরু হয় মেঘালয়ের। তিয়ানাকে সে এত কষ্ট পেতে কখনো দেখেনি। এভাবে কাঁদতেও দেখেনি। এর আগে কাঁন্না করলেও সেটা আদুরে কাঁন্না ছিল। কিন্তু আজকের তিয়ানার কাঁন্নাটা ভিন্ন। ওর চোখে মুখে হাজারো ব্যাথার ছাপ দেখতে পায় মেঘালয়। ভাবে সে, সব সত্যিটা সামনে আনতে গিয়ে কি! তিয়ানাকে বড্ড বেশি আঘাত করে ফেললো সে?
খাট থেকে নেমে হেটে তিয়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মেঘালয়। হাত বাড়িয়ে তিয়ানার চোখের জল মুছতে নেয় সে। তবে তিয়ানা তাকে সে সুযোগ দেয় না। পিছিয়ে যা সে। মেঘালয় অবাক হয়ে চেয়ে রয়। তিয়ানা এক রাশ ঘৃনা নিয়ে তার তাকে দেখে। তিয়ানার চোখের নিজের জন্য এত এত ঘৃনা দেখে বুক কেঁপে ওঠে মেঘালয়ের। হতবাক চোখের তিয়ানার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। গত দিন গুলোতে এই দৃষ্টিতে নিজের জন্য ‘ভালোবাসা’ নামক কিছু অনুভব করলেও সেখানে আজ সে ভালোবাসার বদলে নিজের জন্য এক প্রকার ঘৃনা দেখতে পাচ্ছে। গলা ধরে আসে মেঘালয়ের। মনে মনে বার বার প্রাথনা করছে সে। তিয়ানার চোখে নিজের জন্য যে ঘৃনাটা দেখছে সেটা যেন ভুল প্রমানিত হয়। গলা ধরে আসে মেঘালয়ের ঢোক গিলে জিহ্বা দিয়ে উপরের ঠোঁট ভিজিয়ে বলল সে,,

__‘তিনু আমার কথাটা শোন?’
তাচ্ছিল্য হাসে তিয়ানা। বলে,
__‘কি শুনবো? এটা তো! আমার কাছে আসা আমার সাথে এত এত ভালো কথার একটা’ই কারণ, আমার পেটের আপনার বাঁচ্চা এটাই তো কারণ?’
তিয়ানার কথায় হতবিহ্বল হয়ে যায় মেঘালয়।
__‘তুই শোন আমার ক্ককত,,,,,
মেঘালয়কে থামিয়ে দেয় তিয়ানা,
__‘এসব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আপনি আমার বাঁচ্চাকে আমার থেকে দূরে সরাতে পারবেন না। আমিও বলছি, আমি আমার মা নকি যে নিজ সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেব। আপনি যত’ই আমার বাঁচ্চার বাবা হন না কেন!’ আমি ‘ওর’ মা গর্ভে ধারণও করছি আমি। তাই একদম অধিকার ফলাতে আসবেন না।’
তিয়ানা মেঘালয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। হেটে আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে ডিভোর্স পেপারটা বের করে। মেঘালয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ডিভোর্স পেপারের দিকে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকায় মেঘালয়। প্রশ্ন করে সে,
__‘এটা কি?’
নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর দেয় তিয়ানা,
__‘ডিভোর্স পেপার।’
তিয়ানার উত্তরে মেজাজ বিগড়ে যায় মেঘালয়ের। তবে কোনো ঝামেলা না করে হাত বাড়িয়ে ডিভোর্স পেপারটা নেয় সে। পেইজ উলটে দেখে তিয়ানার সাইন করা। ডিভোর্স পেপার নিজ হাতের মুঠোয় দুমরে মুচড়ে ফেলে মেঘালয়। সাথে রক্তচক্ষু নিয়ে তিয়ানার পাণে তাঁকায় সে। মেঘালয়ের রাগী চোখ দেখে বুকের ভিতর ভয়ে ধড়ফড় করে ওঠে তিয়ানার। তবে নিজেকে সাহসি প্রমান করতে মেঘালয়ের রাগী চোখের দিকে’ই চেয়ে থাকে সে। মেঘালয় হাতে থাকা ডিভোর্স পেপারকে মুচড়ে ফেলেও শান্তি পায় না সেটা কুটি কুটি করে ছিড়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। তিয়ানা, মেঘালয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ডিভোর্স পেপারের টুকরো গুলোর দিকে দেখে৷ মেঘালয়ের এমন কান্ডে রেগে যায় সে। রেগে বলে ওঠে,,

__‘এসব কি? আপনি ডিভোর্স চেয়েছেন আমি ডিভোর্স পেপারে রেডি করে সাইন করে দিয়েছি। আর কী চাই? তারপরও এসব কেমন আচরণ ?’
মেঘালয়ের এমন কান্ডে রেগে যায় তিয়ানা। রেগে বলে ওঠে,,
__‘এসব কি? আপনি ডিভোর্স চেয়েছেন আমি ডিভোর্স পেপার রেডি করে সাইন করে দিয়েছি। আর কী চাই? তারপরও এসব কেমন আচরণ ?’
মেঘালয় রাগ নিয়ে তিয়ানাকে দেখে। দু’পা এগিয়ে তিয়ানার সামনে গিয়ে তিয়ানার হাত ধরে পিছনে মুচড়ে তিয়ানাকে নিজের কাছাকাছি এনে চোয়াল শক্ত করে দাতে দাত চেপে বলে,,
__‘এসব করার সাহস কোথায় পেয়েছস তুই?’
তিয়ানাও শক্ত চোখে মেঘালয়ের চোখে রেখে বলে,
__‘এটা আমার লাইফ। তাই আমি ঠিক করবো কোনটা করা উচিত কোনটা করা উচিত না। আর যদি সাহসের কথা বলেন তো সাহস আমার বরাবর’ই ছিল।’
তিয়ানার উত্তরে মেঘালয় তিয়ানার হাতে জোড়ে চাপ দেয়। ব্যাথা পেলেও মেঘালয়কে বুঝতে দেয় না তিয়ানা। চোখ মুখ শক্ত করে রাখে।
__‘আমি তোকে ডিভোর্স দেবো না।’
মেঘালয়ের বলা কথা অবাক হয় তিয়ানা। প্রশ্ন করে,
__‘মানে?’
__‘মানে! তোকে ডিভোর্স দেবো না ‘
__‘ ডিভোর্স দেবেন না মানে? আপনি নিজে ডিভোর্স চেয়েছেন।’
তিয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে মেঘালয়,
__‘এখন চাচ্ছি না।’
বিরক্ত হয় তিয়ানা। বিরক্তি নিয়ে বলে,
__‘হেয়ালিপানা ছাড়ুন। আপনার এসব কথায় আমার বিরক্ত লাগছে।’
__‘লাগলে লাগুক। কিন্তু! তোকে আমি ডিভোর্স দিচ্ছি না। ‘
বারবার মেঘালয়ের এমন কথায় নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না তিয়ানা। এক প্রকার চেচিয়ে বলে,
__‘লাগলে লাগুক মানে কি? কি চাচ্ছেন আপনি? আপনি না চাইলেও আমি আপনাকে ডিভোর্স দেবো’ই।’
মেঘালয় বাঁকা হেসে বলল,
__‘চেষ্টা করে দেখ।’

বিরক্তি নিয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেলে তিয়ানা। সেটা দেখে মৃদু হাসে মেঘালয়। ডান হাত বাড়িয়ে তিয়ানার থুতুনি ধরে তিয়ানার মুখ নিজের দিকে ফেতায় মেঘালয়। একটু এগিয়ে দু’জনের মধ্যে থাকা সামন্য দূরত্বটুকু মিটিয়ে তিয়ানার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় মেঘালয়। বিরক্ত হয় তিয়ানা। বিরক্তি নিয়ে ডান হাতের তালু দিয়ে কপাল পুছে নেয় সে। তিয়ানার এমন কান্ডে কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে মেঘালয়। বরাবরের মতো এবারও মেঘালয়ের হাসির প্রেমের পরে তিয়ানা। তবে মেঘালয়ের গত ব্যাবহার গুলোর কথা মনে করে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে সে। দ্বিতীয় বার সে এই হাসির মায়ায় পরতে চাচ্ছে না।
খানিক্ষন নীরাবতা শেষে তিয়ানা বলে,
__‘আপনি এখন আসতে পারেন। আমি আব্বুকে ল’ইয়ারের সাথে কথা বলতে বলবো। ডিভোর্স পেপার তৈরী করার জন্য।’
দ্বিতীয় বার তিয়ানার এহনো কথায় ধপ করে মাথায় রাগ উঠে যায় মেঘালয়ের। পিছনে হাত বাড়িয়ে তিয়ানার চুল নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তিয়ানাকে নিজের কাছাকাছি এনে রাগে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে মেঘালয়,
__‘একবার বললে কানে যায় না তোর? আমি বলছি না আমি তোকে ডিভোর্স দেবো না। তাছাড়া প্রেগ্ন্যাসির সময় ডিভোর্স হয় না। ‘
__‘ওকে! তাহলে বাঁচ্চা জন্মানোর পর ডিভোর্স হবে।’
এবার আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না মেঘালয়। তিয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষন মাথার চুল টানতে টানতে রুম জুড়ে পায়চারি করে। কিছু একটা ভেবে দ্রুত তিয়ানাকে কাঁধে তুলে নেয় সে।

বসার ঘরে বসে অফিসের কাজ করছিলো তুলিকা। কালকের রাতের পর থেকে তার মন কিছুটা ভালো। মেঘালয়ের রাতে ‘এ’ বাড়িতে আসায় সে ভিষন খুশি। এতদিন ধরে শুধু মনে মনে চেয়ে গেছেন যেন তার মেয়ের সংসারটা বাঁচে। রাতে মেঘালয়ের ‘এ’ বাড়তে এসে তিয়ানার ঘরে থাকায় কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে তুলিকা। জীবন তো এভাবে পার হলো শুধু এখন একটা’ই চাওয়া তার ছেলে-মেয়ে দুটো জীবনটা যেন সুন্দর হয়। সাদিদের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা। সেদিন সব জানার পর থেকে সাদিদ তার সাথে একটা কথাও বলেনি। ইদানিং ঠিকঠাক বাড়ি আসে না। সে কিছু দিলে সেটা ছুয়েও দেখা না সাদিদ। এই তো আজ ভোরে বেলা ঘুম থেকে উঠে সাদিদের অফিসে পরে যাওয়ার ড্রেস বের করে খাটের উপরে রেখে এসে সাদিদের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করলো সে। কিন্তু! সাদিদ না তার বের করা ড্রেস পরলো আর না তার তৈরী করা খাবার মুখে তুললো। ভাবতে গিয়ে চোখের কোণে জল আসে তুলিকার। বুকের ভিতর জ্বলছে তার। সত্যি’ই তো সারাজীবন মানুষটা তাকে ভালবাসার ফল ধোকা পেয়ে গেল। আজকাল নিজের প্রতি ঘৃনা হয় তুলিকার।সাদিদের কথা না ভেবে সে সারাজীবন নিজের আর নিজের বোনের কথা’ই ভেবে গেল। এতগুলো বছর ধরে অনুতাপের আগুনে জ্বলছে সে। সাদিদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে কথা বলতেও নিজের প্রতি ঘৃনা হয় তার। মানুষটাকে খুব বেশি কষ্ট, দুঃখ দিয়ে ফেলল সে। হাতে থাকা ফাইলটা বুজিয়ে চোখহ বন্ধ করে সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসতে’ই তিয়ানার চিৎকারের শব্দ পায় সে। মেয়ের আবার কি হলো? বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে তিয়ানার ঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় সে। মেঘালয় তিয়ানাকে কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে সদর সরজার দিকে যেতে যেতে তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

__‘তোমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি আন্টিম্মু। যত দিন বেয়াদবটার মাথা থেকে ডিভোর্সের ভুত না নামবে ততদিন ‘ও’ আমার সাথে থাকবে।’
তিয়ানা চিৎকার করে মেঘালয়ের পিঠে ধুরুম করে কিল বসিয়ে তুলিকাকে বলল,,
__‘আম্মু! আমাকে বাঁচাও আমি ওনার সাথে যাবো না। আমাকে জোড় করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ‘
তিয়ানার হাতের কিলের হালকা ব্যাথা পায় মেঘালয়। সদর দরজা পেরোতে পেরোতে ঠাট্টার স্বরে বলল,
__‘আচ্ছা বেয়াদব হয়েছিস তো! স্বামী সেবা তো জীবনে করলি না উলটো মারছিস।’
তিয়ানা রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলে,
__‘খুব খারাপ করছেন। একবার যদি, আমার ভাইয়া জানে আপনি আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে এভাবে তুলে নয়ে যাচ্ছেন। ভাইয়া কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না।
হাসে মেঘালয়। হেসে তিয়ানাকে নামিয়ে গাড়িতে ফ্রন্ট সীটে বসিয়ে সীট বেমট বাঁধতে বাঁধতে বলল,
__‘তোর ভাই কে ভয় পায় কে? শালাকে পরে বুঝে নেবো আগে শালার বোনের বিষ দাত ভাংগি।’
তুলিকা ওদের পিছন পিছন সদর দরজার অব্দি আসে। মেঘালয় ড্রাইভিং সীটে বসে তুলিকার দিকে তাঁকিয়ে হেসে বলল,
__‘যাচ্ছি শাশুড়ী মা । তোমার মেয়ের হাত থেকে বেঁচে ফিরলে আবার দেখা হবে। ‘ও হ্যা!’ তোমার হিটলার ছেলেকে বুখিয়ে শুনিয়ে রেখো।’

আমার আদরিনী পর্ব ৩১+৩২

মেঘালয়ের কথা শুনে খিল খিল করে হেসে দেয় তুলিকা। তিয়ানা নিজের মায়ের দিকে কটমট করে তাঁকিয়ে থেকে গাড়ির দরজা খুলতে নিলে। মেঘালয় গাড়ি লক করে দেয়। তিয়ানা রেগে গিয়ে দু’হাতে মেঘালয়ের চুল খামচে ধরে।
তিয়ানার হাত চুল ছাড়াতে ছাড়াতে চেচিয়ে দুঃখ নিয়ে বলে ওঠে,
__‘আরে! আমার চুল। হিটলারের বংশধর আমার চুল ছাড়।’
চুল ছাড়িয়ে তিয়ানার গা থেকে ওড়না খুলে ওড়না দিয়ে তিয়ানার হাত বেঁধে রাখে মেঘালয়। তিয়ানা রাগী চোলহে কটমট করে মেঘস্লয়কে দেকজে ফোস ফোস করতে থাকে। মেঘালয় সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়।
__‘আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়বো না।’
দৃষ্টি সামনে রেখে হেসে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘আচ্ছা!’
তিয়ানা ঝুঁকে মেঘালয়ের হাতের বাহুতে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
__‘আমি কিন্তু আপনাকে খুন করে ফেলবো।’

হঠাৎ করে গাড়ি থামিয়ে দেয় মেঘালয়। ঝাঁক্কিতে তিয়ানা সামনে ঝুঁকে পড়তে নিলে মেঘালয় হাত বাড়িয়ে তিয়ানাকে ধরে নেয়। সীট বেল্ট খুলে তিয়ানার দিকে এগিয়ে যায় মেঘালয়। মেঘালয়কে নিজের দিকে আগাতে দেখে তিয়ানা ভয়ে সীটের সাথে লেপ্টে যায়। নিজের প্রতি এখন ভিষণ রাগ হচ্ছে তিয়ানার তলহন রাগে মেঘালয়কে কামড়ে দেয়ার জন্য আফসোস হচ্ছে। তবে মনে মনে ভয় পেলেও নিজেকে সাহসি দেখানোর চেষ্টা করে তিয়ানা। মেঘালয় এগিয়ে গিয়ে তিয়ানার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে কামড় বসিয়ে নিজের সীটে এসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,
__‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর।’

আমার আদরিনী পর্ব ৩৫+৩৬