আমার আদরিনী পর্ব ৩১+৩২

আমার আদরিনী পর্ব ৩১+৩২
আশুথিনী হাওলাদার

তিয়ানার হাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে তার পাশে বসে আছে মেঘালয়। তিয়ানা তখনও চেতনাহীন। মেয়েটার দিকে ভালো করে দৃর্ষটি রাখে মেঘালয় এ ক’দিনে কেমন শুকিয়ে গিয়েছে। চোখের নিচেও কাকি জমেছে কিছুটা। মেয়েটা কি রাতে ঘুমায় না?
কেবিনের বাইরে করিডর এ রাখা চেয়া বসে রাগে ফোস ফোস করছে তিলাত। মেঘালয়কে তিয়ানার কাছে যেতে দেয়াটা তার একদম’ই পছন্দ হয়নি। মায়ের ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না সে। বোনের আশে পাশেও মেঘালয়কে সে সহ্য করতে পারছে না। মেঘালয়কে দেখলেও তার গায়ে জ্বালা পোড়া শুরু হয়। কিন্ত্য, মেঘালয়’ই তার জানপ্রানের বন্ধু ছিল। সময়ের সময়ের সাথে সাথে তাদের বন্ধুত্বেও ফাটল শুরু হয়েছে। ফাটল হবেও বা না কেন, কোনো ভাই কি নিজের বোনের দুঃখ, কষ্ট সইতে পারে? আর যে এই দুঃখ, কষ্টের কারণ তাকেও কি করে সইবে সে?

পেটে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে তিয়ানা। চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে তার। তবে পেট থেকে হাত দু’টো সরিয়ে গাল গড়িয়ে পরা জল মুছে না সে। তার পাশে’ই টুলে বসে আছে মেঘালয় নিস্তব্ধ হয়ে৷ তার যেন বিশ্বাস’ই হচ্চগে না সে বাবা হতে চলেছে। তিয়ানার ওই ছোট্ট পেটে নাকি তার সন্তান। তিয়ানার পেটের দিক দেখে চোখ সরায় না মেঘালয়। এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে সে। ওই খানে নাকি তার বেবি আছে। হাত বাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তিয়ানার পেটে হাত রাখে মেঘালয়। অনুভূতিতে কেঁদে দেয় মেঘালয়। ভাড়ি অবাক হয় তিয়ানা। মেঘালয় কাঁদছে? তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে সে কখনো মেঘালয়কে কাঁদতে দেখেনি। আজ দেখছে। কিন্তু মেঘালয় কাঁদছে কেন? প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে তিয়ানার। তবে মুখ ফুটে বলে না। তার বলতে ইচ্ছে করে না। মেঘালয়ের সাথে কথা বলতেও আজ কাল ইচ্ছে করে না তার। মাঝে ভাবে, সে কি অনুভূতি শূন্য হয়ে গেল?
মেঘালয় হালকা হেসে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করে,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__‘তিনু! ডক্টর কি ঠিক বলল? তোর এই ছোট্টো পেটে কি আমার বাবু আছে?’
মেঘালয়ের করা প্রশ্নে বুকে তোলপাড় শুরু হয় তিআনার। আড়চোখে মেঘালয়ের দিকে তাঁকায়ও বার কয়েক। তবে উত্তর দেয় না সে। মেঘালয়ও উত্তর অপেক্ষা না করে বলতে থাকে,
__‘আচ্ছা! বাবুকে আমি ফিল করতে পারবো? তোর পেটে কান পাতলে ‘ওকে’ অনুভব করা যাবে? ‘ও’ মেয়ে হবে নাকি ছেলে? তিনু ডক্টর কি সত্যি’ই বলেছে তোর পেটে আমার বাচ্চা আছে?’
মুখে কিছু না বললেও মনে মনে মুখ বাঁকায় তিয়ানা। সাথে বকাঝকাও করে বেশ,
__‘এমন ভাব করছে যেন আমি ডক্টর কে ঘুষ খাইয়ে মিথ্যে বলছি।’
নিজ মনে ব্যঙ্গ করে বলে তিয়ানা,,
__‘তিনু ডক্টর কি ঠিক বলল, তোর পেটে কী সত্যি’ই আমার বাচ্চা? ক্যান ভাই? আমি কী অন্যের বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরছি নাকি? খারুস একটা। ‘

‘তিয়ানাকে হস্পিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে দিন তিনেক হলো। তিন দিন’ই মেঘালয় প্রতিদিন একবার করে এসে যায়। এসে ঘন্টার পর ঘন্টা তিয়ানার সাথে হাজারও বকবক করলেও তিয়ানা মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারে না সে। এমন যে, তিয়ানা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এবং ঠিক তাই। তিয়ানা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ তিয়ানা শুধু তার সাথে কথা বলছে না বাকি সবার সাথে হেসে হেসে দাত বের করে কথা বললেও তার সাথে গোমড়া মুখ করে হলেও কথা বলে না। তাতে একটু বেশি’ই কষ্ট লাগে মেঘালয়ের কিন্তু সে সেটাকে পাত্তা দেয় না। যখন তার টার্ম আসবে সে সুদে আসলে উসুল অবশ্য’ই করবে সবটা। এখন নিজের লক্ষে পৌঁছানোর জন্য চুপ করে থাকতে হচ্ছে তাকে। আর ওই বাদরির বাদরামি গুলোও সহ্য করতে হচ্ছে। এ ক’দিন সে অনেক অনেক হেলদি খাবার কিনে এনেছে বউটার জন্য কিন্তু তার আনা খাবার ছুয়ে অব্দি দেখেনি।

‘‘তিয়ানাদের বাসায় ড্রইং রুমে বসে আছে সবাই। আজ একটা ফয়সালা হবে মেঘ-তিয়ানার সম্পর্কের এভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই সাদিদ আর অভীক মিলে বৈঠক বসায়। তিয়ানা সোফার এক কোণে মায়ের সাথে লেগে গুটিসুটি মেরে মাথা নিছু কররে বসে আছে৷ তার সোজাসুজি সোফায় বসে আছে মেঘালয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে দেখে যাচ্ছে তিয়ানাকে। অয়ারলে সে এই মেয়েটাকে কাঁচা চিবিয়ে খেত এখন। এতদিন ধরে তাকে ইগ্নোর করার ফল বুঝাতো হারে হারে।
অভীক সবার দিকে একবার তাঁকিয়ে নিয়ে গলা খাকাড়ি দিয়ে মেঘকে উদ্যেশ্য করে প্রশ্ন করে,,
__‘মেঘ তুমি কি চাচ্ছো?’
মেঘালয় তিয়ানার দিকে কটমট করে তাঁকিয়ে থেকে নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,
__‘আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে চাচ্ছি আব্বু।’
মেঘালয়ের এমন উত্তরে তিয়ানার মনে হলো তার মুকের উপর কেউ পাথর রেখে দিয়েছে। বহু কষ্টে কাঁন্না আঁটকে ঢোক গিলে সে।
মেঘালয়ের এমন উত্তরে সবাই নড়েচড়ে বসে। তিয়ানা প্রেগন্যান্ট তারপরও কেন মেঘাকয় সেই এক’ই কথা বলছে। অভীক থমথমে কন্ঠে বলে,

__‘তিয়ানা প্রেগন্যান্ট জানা সত্যে’ও কেন এসব বলছো তুমি?’
__‘আমি তো আমার সন্তানকে ফেলে দিচ্ছি না বা তিয়ানাকেও। আমি শুধু এটা বলতে চাচ্ছি আমি বৃষ্টিকে ছাড়তে পারছি না। ‘
মেঘালয়ের এমন উত্তরে তিলাতের মাথায় রাগ চটে যায়। নিজের হাত খামচে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখে।’
মুখ খুলে তুলিকা গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
__‘তাহলে তুমি কি চাও?’
__‘আমি বৃষ্টিকেও বিয়ে করতে চাচ্ছি।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় রেগে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তিলাত। রাগে ফোস ফোস করে উত্তর দেয় সে,
__‘আমার বোন সতীনের ঘর করতে পারবে না।’.
__‘তাহলে, ডিভোর্স হওয়াটা’ই বেটার হবে।’
নিরলস, গম্ভির কন্ঠে উত্তর দেয় মেঘালয়। মেঘালয়ের কথাটা কানা যাওয়া মাত্র চোখের কোণ থেকে জল গড়িয়ে পরে তিয়ানার। আপনা-আপনি পেটে হাত চলে যায় তার। অবাক, বিস্মিত দৃষ্টিতে নিজের স্বামীর দিকে তাঁকায় তিয়ানা। বুকের ভিতরটা কেমন ভারী হয়ে আসে তার। ‘

‘ মেঘালয়ের উত্তর কেউ হজম করতে পারে না। হতবাক হয়ে মেঘালয়কে দেখে সবাই। মৌমিতা হতভম্ব হয়ে নিজের ছেকের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। মেঘ তো তিয়ানাকে ভালোবাসে। ভালোবেসেও কেন এসব করছে?
তিয়ানাকে একবার দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা। হতাসা কন্ঠে বলে সে,,
__‘বেশ তুমি যা চাচ্ছো তাই হবে। ডিভোর্স হবে।’
সাদিদ ধমকে উঠে বলে,,
__‘কি বলছো তুমি? মেঘের সাথে সাথে তোমার মাথাটাও গেছে?’
__‘যায়নি তবে যাবে। এমন একটা সম্পর্কে আমি আমার মেয়েকে রাখবো না।’
তিয়ানাকে ধরে নিজের সাথে আগলে জিজ্ঞেস করে তুলিকা,
__‘আম্মা বল তুই কি চাস? মেঘ যা চাচ্ছে তুইও কি তাই চাচ্ছিস?’
তিয়ানা মৃদু হেসে মেঘালয়ের চোখের দিকে তাঁকায় মেঘালয় এতক্ষণ তাকে’ই দেখছিল। তিয়ানার চাহনি দেখে থতমত খেয়ে দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরায়। হাসে তিয়ানা। হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল,
__‘উনি যখন ডিভোর্স চাচ্ছেন। তো ডিভোর্স’ই হবে।’
অভীক মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে,
__‘যদি এটাই তোমারর শেষ কথা হয়। আমার উত্তরও শুনে রাখো আমিও তোমাকে ত্যাগ করবো।’
মেঘালয় হেসে উত্তর দেয়,,

__‘আমি আমার ভালোবাসা ছাড়তে পারবো না আব্বু। আংকেল, আন্টিম্মু তো খুব ভালো করে জানে ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বাঁচা কতটা কঠিন। আশা করছি তারা অন্তত বুঝবে আমাকে।’
তুলিকা এক হাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সাদিদের দিকে একবার তাঁকিয়ে বলে,
__‘বুঝি, আর বুঝি বলে’ই তোমার প্রস্তাব টা আমরা মেনে নিলাম। আশা করছি, আমার মেয়েও মেনে নিবে। তোমাদের ডিভোর্স হবে।’
__‘থ্যাংকস! আন্টিম্মু তুমি অন্তত বুঝলে। আমার একটা শর্ত আছে, তিয়ানার সাথে আমার ডিভোর্স হলেও আমি নিজ সন্তানকে ছাড়বো না। তিয়ানার গর্ভে থাকা সন্তানের উপর যতটা তিয়ানার অধিকার আছে ঠিক ততটা আমারও আছে।
‘তুলিকা মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়,
__‘তোমার শর্তও মেনে নিলাম। কারণ এই সন্তানের উপর আমার মেয়ের না তোমারও অধিকার আছে।’
সাদিদ তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে,
__‘আজ তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান না বলে এটাকে তুমি মেনে নিচ্ছো তুলিকা। বুকে হার রেখে বলতো তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান হলে কি এটা মেনে নিতে?’

সাদিদের এমন প্রশ্নে হোহো৷ করে হেসে ওঠে মেঘালয়। মেঘালয়ের হঠাৎ হাসি দেখে সবাই সবাইক হয়। মেঘালয় হাসি থামিয়ে বলল,,
__‘তিয়ানা তো আন্টি আম্মুর’ই সন্তান। নিজের পেটের সন্তান।’
সাদিদ তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে,
__‘আজ তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান না বলে এটাকে তুমি মেনে নিচ্ছো তুলিকা। বুকে হার রেখে বলতো তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান হলে কি এটা মেনে নিতে?’
সাদিদের এমন প্রশ্নে হোহো৷ করে হেসে ওঠে মেঘালয়। মেঘালয়ের হঠাৎ হাসি দেখে সবাই সবাইক হয়। মেঘালয় হাসি থামিয়ে বলল,,
__‘আমি তো জানি তিয়ানা আন্টিম্মুর’ই সন্তান। নিজের পেটের সন্তান।’
মেঘালয়ের এমন কথায় সবাই হতভম্ব হিয়ে যায়। সাদিদ বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘মানে?’
বাঁকা হাসে মেঘালয়। তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
__‘আন্টিম্মু! আজও চুপ থাকবে?’
থতমত খায় তুলিকা। চোখ জ্বালা করে তার, ওঠে বুকের ভিতর ঝা ঝা করছে কেমন। উত্তর না দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজ ঘরে গিয়ে দরজায় খিল দেয় সে। তুলিকার ঘরের দিকে একবার তাঁকিয়ে মৌমিতাকে বলে মেঘালয়,,
__‘তুমিও চুপ থাকবে আম্মু?
একটু থেমে জোড়ে জোরে তুলিকাকে শুনিয়ে বলে মেঘালয়

__‘ ওকে ফাইন! বলো না। আন্টিম্মু যেমন নিজ সন্তানকে পেয়েও সারাজীবন তার ‘সন্তান না’ শুনতে হয়েছে সেটা সামনে তার সন্তান তিয়ানার জন্যও অপেক্ষা করছে। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে নেব। এত দিন নিজে ছিলে এখন থেকে নিজের মেয়েকেও তোমার মতো সন্তান হারা দেখার জন্য প্রস্তুত হও।’
থেমে শ্বাস ফেলে হাক ছেড়ে তুলিকাকে শুনিয়ে বলে মেঘালয়,
__‘আমি তুলিকা রায়হানের মতো উদার মনের নই যে, নিজ সন্তানকে অন্যের সুখের জন্য ত্যাগ করবো।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় কেঁপে ওঠে তিয়ানা। ঘরের ওপাশে দরজার খিল আটকে ফ্লোরে বসে চোখের অশ্রুবিসার্জন দেয় তুলিকা।’
চলে যেতে নেয় মেঘালয়। তিলাত পিছু ডেকে আঁটকে দেয় তাকে। সন্দিহান কন্ঠে বলল,
__‘সব সত্যটা বলে যা মেঘ। যা জানিস! সব’
মেঘালয় পিছু ফিরে তিলাতের করুণ মুখের দিকে তাঁকিয়ে মৃদু হেসে সোফায় বসে। সাদিদকে বলে,,
__‘এই টুকু বলছি আংকেল। তিয়ানা আপনার আর আন্টিম্মুর সন্তান। এই সত্যিটা আমার আম্মুও জানে। বাকিটা আপনি তাদের থেকে জেনে নিবেন। ‘

বলে, তিয়ানার দিকে একবার তাঁকিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় মেঘালয়।
‘ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুনিয়ে আছে তিয়ানা। সত্যিটা জানতে পেরেছে সে। খানিক্ষন আগে মৌমিতা তাদের সব সত্যিটা জানিয়েছে। সেটা জানার পর তিয়ানা কষ্ট পেলেও তিলাত খুব খুশি হয়। এইটুকু ভেবে তার আম্মুর নিজের কেউ আছে। একে বারে হেরে যায়নি সে। কিছুটা প্রাপ্তি হলেও পেয়েছে সে জীবনে। কিন্তু নিজের মায়ের (তিয়াসার) প্রতিও তার কিছুটা রাগ জন্ম নেয় তিলাতের। কিন্তু পরক্ষ ভাবে ভাবতে গেলে তার মা যেটা করেছে। যেকোনো মেয়ে’ই নিজ সংসার বাঁচাতে সেটা করতো। কোনো মেয়ে’ই নিজ সংসার ভাংতে চায় না।’
‘সাদিদের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে তুলিকা। সাদিদ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকে দেখছে। সব জানা শোনার পর রাগে মাথার রগ ছিড়ে যাচ্ছে যেন সাদিদের। শুধু ঘুরে ফিরে মাথায় একটা প্রশ্ন আসছে,

__‘তুলিকা তাকে এত ভাবে ঠকালো?’
সারাজীবন তাকে এভাবে অন্ধকারে ঠেলে রাখলো?’
নিজের রাগকে ককন্ট্রোলে রাখতে পারে না সাদিদ। তুলিকার ডান হাতের বাহু ধরে তাকে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
__‘আমাকে এতো ভাবে না ঠকালে খুব বেশি খারাপ হতো? এতো গুলো বছর ধরে অন্ধকারে রাখলে? কী দোষ আমার? তোমাকে ভালোবাসাটা’ই কি আমার দোষ ছিল? তাই তার শাস্তি সরুফ এসব? তোমরা দু’বোন মিলে আমার জীবনটা পুরু ছারখার করে দিলে। আমার সন্তানদেরও তোমাদের এই খেলার থেকে ছাড়লে না?’
বুক ফেটে কাঁন্না আসছে সাদিদের। নিজেকে একজন অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে যে সারাজীবন একজন নারীকে ‘ভালোবেসে’ তার ধোঁকা খেয়ে জীবন পারল করলো।
বহুকষ্টে কণ্ঠনালি থেকে শব্দ বের করে সাদিদ,

__‘আমাকে এভাবে ধোঁকা না দিলেও পারতে তুলি। সারাজীবন আমি তোমাকে ভালবাসার ফল অনুসারে ধোঁকা পেলাম।’
বেশ কিছুদিন কেঁটে যায় পরিস্থিতিও অনুকূলে আসে। তিলাতের সাথে অবন্তীর প্রেমেও খুব ভাল চলছে। শুধু অপেক্ষা বিয়ের। এর মধ্যে তিলাত অবন্তীর ব্যাপারে তুলিকাকেও জানিয়েছে। তুলিকা গিয়ে অবন্তীকে আন্টিও পড়িয়ে এসেছে। শুধু বিয়ের অপেক্ষা। সব ঠিকঠাক হলেও ঠিক হয় ‘তিমেঘের’ সম্পর্ক। মেঘালয়ের সাথে তিয়ানার দেখাও হয় না বহুদিন। তবে সে আলাপ পায় মেঘাল্প্য প্রতিদিন আসে তার বাড়িতে। নানা রকমের খাবার নিয়ে আসে। আসবে নাই বা কেন! তার পেটে যে মেঘালয়ের সন্তান বেড়ে উঠছে। তাই নিজ সন্তানের জন্য হেলদি খাবার নিয়ে আসে। ইদানিং তিয়ানার মনে ভয় ঢুকেছে। দিন যত গড়াচ্ছে তার ভয়ও ততোটা বাড়ছে। শুধু একটা’ই ভয় তার মেঘালয় যদি তার সন্তানকে তার থেকে কেঁড়ে নেয়। ভাবলে’ই কলিজা ছোটো হয়ে যায় তিয়ানার। তখন মায়ের কোলে মাতগা রেখে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মেয়ের মুখের দিকে তাঁকাতে পারে না তুলিকা। মেয়েটা শোকে দিন দিন চিমটে যাচ্ছে। কিন্তু! কী’ই বা করবে সে? মেঘালয় তো অন্যকাউকে ভালোবাসে। শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছু’ই করার নেই তার। সাদিদও দিন দিন মুড়িয়ে যাচ্ছে। নিজেকে দোষ দিচ্ছে সে। কেন তারাহুরো করে মেয়ের বিয়ে দিলো সেদিন। সেও বা কি করতো? মেয়ের মুখ থেকে মেঘালয়কে ভালোবাসার কথা শুনে অপেক্ষা করতে চায় না সাদিদ। তার ভয় হচ্ছিল যদি তিয়ানার জীবনটাও তার মতো ভালবাসাহীন হয়! সেই ভয়ে তারাহুরো করে মেঘের সাথে এক প্রকার জোড় করে তিয়ানার বিয়ে দিয়েছিল। মেয়ের ঘরের সামনে যায় কিন্তু ঘরে গিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাঁকানোর সাহস পায় না সাদিদ। নিজেকে দোষি মনে হয় তার। ভালো করতে গিয়ে নিজের মেয়ের এত বড় ক্ষতি করলো সে?
তবে সাদিদ নিজেও বুঝতে পারেনি মেঘালয়ের মতামত না নিয়ে’ই অভীক তাকে ‘হ্যা’ বলেছিল।

আমার আদরিনী পর্ব ২৯+৩০

“পড়ার টেবিলের উপর ডিভোর্স পেপারটা রেখে থম মেরে চেয়ারে বসে আছে তিয়ানা। হাতে কলম কিন্তু সাহস করে সাইন করতে পারছে না সে। বারবার মনে হচ্ছে সাইনটা করলে’ই সে মেঘালয়ের থেকে দূরে সরে যাবে। পরক্ষণে ভাবে সে,,
__‘কোনো দিন কি সে মেঘালয়ের কাছের ছিল? যে এখন এই সাইনের মাধ্যমে দূরে সরে যাবে।’

বুকের ভিতর ভাড়ি হয়ে আসে তিয়ানার। খুব কাঁন্না অয়ায় তার। কিন্তু সে কাঁদবে না, সে কাঁদতে চায় না ওই পাষান মানুষটার জন্য এক ফোটা চোখের জলও সে ফ্বলতে চাচ্ছে না। কিন্তু, আজ- কাল তার চোখও তার সাথে বেইমানি করছে। যখন তলহন সে না চাইতেও চোখ দিয়ে জল বের হয় তার। কাঁন্না করে সে। আজও করলো খুব কাঁদলো শত চেষ্টা করে নিজের কাঁন্না গুলোকে আঁটকাতে পারে না তিয়ানা। দু’হাতে নিজের পেট জড়িয়ে কেঁদে দেয় তিয়ানা। কেঁদে কেঁটে নাকের পানি চোখেরর পানি এক করে ফেলে সে। পরে কাঁন্না থামলে এক পলকে হাতে কলম তুলে গটগট করে নিজের নামটা লিখে দেয় সে। হাত প্রথমে একটু কাঁপলে নিজের মনকে শক্ত করে সে। তবে মনে মনে এটাও প্রতিজ্ঞা করে তিয়ানা। নিজ সন্তানকে সে মেঘালয়ের হাতে কোনোদিন তুলে দেবে না। যতদিন সে নিজে বেঁচে আছে ততদিনে সে কখনো তার সন্তানকে কেঁড়ে নিতে দেবে না। মেঘালয় তাতে যত’ই যা করুক না কেন!

আমার আদরিনী পর্ব ৩৩+৩৪