আমার আদরিনী পর্ব ২৯+৩০

আমার আদরিনী পর্ব ২৯+৩০
আশুথিনী হাওলাদার

নিজ ঘরে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে তিয়ানা। ইদানিং তার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে কোথাও একটা হারিয়ে যেতে। সেদিন রাতের কথা কাটাকাটির পর মেঘালয় মাঝ রাতে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর কোনো ফোন বা মেসেজ তাকে দেয়নি। হয়তো মেঘালয়ও সব কিছুর শেষ চাচ্ছে। ঘরের দরজা খোলা শব্দ পায় তিয়ানা। তবে নিজের ভাব গতির পরিবর্তন করে না সে। দরজা চাপিয়ে বোনের পাশে এসে বসে তিলাত। মাত্র এক মাসে’ই চেহারার হাল বেহাল হয়ে গেছে বোনটার । তিলাতের হঠাৎ করে প্রচন্ড রাগ জন্ম নেয় মেঘালয়ের প্রতি। সে তো তাকে বিশ্বাস করেছিল। বিশ্বাস করে নিজের বোনকে মেঘালয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। আর মেঘালয়? বিশ্বাস ভাংলো? নিজেকে শান্ত করে তিলাত। নিজ মনে হাসার চেষ্টা করে ঠাট্টার স্বরে বলল,,

__‘তিনু তুই দিন দিন কেমন প্যাচা মুখি হয়ে যাচ্ছিস। তিন দিন হলো বাড়িতে আসছিস আর সারা শব্দ নেই তোর। এত ভালো কবে হলি? আমি তো ভাবতাম আমার পিছনে লাগাই তোর কাজ।’
বলে কিছুক্ষণ হেসে তিয়ানার দিকে তাঁকায় তিলাত। তিয়ানার কোনো হেল দোল নেই। মন খারাপ হয়ে যায় তার। আদরের বোনের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছে না তিলাত। হেরে যায় না সে বসা থেকে উঠে রুমটা ঘুরেফিরে দেখে তিয়ানাকে খুঁচিয়ে বলে,,
__‘ছি! তিনু তোর ঘরের একদম যা তা অবস্থা দূর্গন্ধ আসছে। ইয়াক! কি করে থাকিস তুই এসব দুর্গন্ধ নিয়ে?’
উমহুম তিয়ানার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এক’ই ভাবে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সে। যেন, ঘরে সে ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো ব্যাক্তি নেই। বুকটা কেমন ভাড়ি হয়ে আসে তিলাতের। অন্য সময় হলে এই কথা গুলো বলার অপরাধে তিয়ানা তাকে সারা বাড়ি দৌঁড় করাতো কিন্তু এখন? কষ্ট হয় তার বোনকে এই অবস্থায় দেখে। তিলাত দাঁড়ায় না ঘরে থেকে বের হয়ে যায়। মেঘালয়ের সাথে দেখা করতে হবে তাকে। জানতে হবে মেঘালয় কেন করছে এসব? সে কি চায়?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হস্পিটালেও আসলেও কোন রুগি দেখতে পারছে না মেঘালয়। ভুল করছে বারবার সে। মাথায় শুধু তিয়ানার চিন্তা আসছে। তিয়ানাকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলছে সে। কিন্তু, সব সত্যি’টা সামনে আনতে হলে এই টুকু করতে হবে তাকে। তিয়ানার ব্যাথিত, ক্লান্ত মুখখানা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বুকে সূক্ষ্ম যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে তার। সাথে মাথাটাও খুব ধরেছে তাই নিজ কেবিনে এসে টেবিলে মাথা ঠেঁকিয়ে বসে থাকে সে। এই যন্ত্রণা, এই মাথা ব্যাথা সারানোর এক মাত্র ওষুধ হচ্ছে তিয়ানা। কিন্তু, তিয়ানা’ই তো দূরে তার থেকে তার উপর অভিমান করে বসে আছে মেসেয়েটা । আজকাল বাড়ি ফিরতেও ইচ্ছে করে না তার। ঘরে ফিরে তিয়ানাকে দেখাটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। সেখানে ঘরে ফিরে যদি বউকে’ই না দেখে তবে ফিরে কি লাভ? কেবিনের দরজায় জোরে শব্দ হওয়ায় ভ্রু কুচকে মাথা তুলে তাঁকায় মেঘালয়। সামনে তিলাত দাঁড়িয়ে চোখে অসম্ভব রাগ নিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। তিলাতের রাগের কারন বুঝতে পেরে ঠোঁট এলিয়ে হালকা হাসে মেঘালয়। ঠাট্টা ময় কন্ঠে বলল,,

__‘ হঠাৎ কি মনে করে আপনার আবির্ভাব হলো শালাবাবু?’
উত্তর দেয় না তিলাত। চোয়াল শক্ত করে কঠর দৃষ্টিতে মেঘালয়ের দিকে তাঁকিয়ে থাকে সে। তা দেখে মুচকি হাসে মেঘালয়। হেসে বলল,
__‘বসে কথা বলি?’
কোনো কথা না বলে শান্ত হয়ে চেয়ার টেনে বসে তিলাত। খানিকক্ষণ চুপ থেকে নিজেকেশান্ত করে মেঘালয়কে প্রশ্ন ছুড়ে মারে,,
__‘কি চাস?’
চেয়ারে গা এলিয়ে এতক্ষণ তিলাতের দিকে তাঁকিয়ে ছিল মেঘালয়। তিলাতের প্রশ্ন ঠোঁট এলিয়ে হাসে সে। বিরক্ত হয়ে তিলাত বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ বের করে সে। নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারে না তিলাত রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে নিলে তাকে থামিয়ে দেয় প্রশ্ন করলো মেঘালয়,,
__‘কি খাবি? চা না কফি?’
রাগে হিসহিসিয়ে উঠে তিলাত। নিজেকে কন্ট্রলে না রাখতে পেরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ারে সজোরে পা দিয়ে লাথি মারে সে। তবে সেসবে মেঘালয়ের তেমন একটা ভাবান্তর হয় না। সে আগের মতো’ই চেয়ারে গা এলিয়ে বসে হাসতে থাকে। তিলাত টেবিলের উপর জোরে থাপ্পড় মারে। তার থাপ্পড়ে ফলে টেবিলে থাকা পানির ক্লাস নিচে পরে ভেংগে যায়। মেঘালয় এক নজর সেদিকে তাঁকিয়ে হালকা হেসে বলল,,

__‘মাথা ঠান্ডা কর।’
রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে বলে তিলাত,,
__‘মাথা ঠান্ডা করবো? যার বোনের আজ এই অবস্থা সে মাথা ঠান্ডা করবে? তুই জানিস? আমার বোনের কি অবস্থা তুই করেছিস? আমার বোন বোবা হয়ে গিয়েছে কারো সাথে কথা বলছে না। আমি হাজারটা খুচিয়ে কথা বললেও ‘ও’ এখন আর ক্ষেপে যায় না। সবটা তোর কারনে হয়েছে মেঘ। আমি তোকে বিশ্বাস করে ছিলাম। ‘
তিলাতের কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনে মেঘালয়। তিলাতের বলা শেষে তাকে প্রশ্ন করলো মেঘালয়,,
__‘এখন বিশ্বাস করিস না?’
__‘না’
আকপটে উত্তর দেয় তিলাত। তিলাতের এমন উত্তরে খানিকটা খারাপ লাগে মেঘালয়। বন্ধুর তাকে অবিশ্বাসে বুক কেঁপে উঠে তার। মলিন হয়ে যায় মুখ। হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল সে,,
__‘ যা খচ্ছে ভালোর জন্য হচ্ছে তিলাত।’
তেড়ে ওঠে তিলাত,
__‘আমার বোনকে কষ্ট দেয়াটা ভালো হচ্ছে?’
__‘তোর বোনকে আমি ভালোবাসি।’
তিলাত চোখ মুখ খিছে উত্তর দেয়,,
__‘আমি বিশ্বাস করি না। দু’দিন আগে হলেও আমি বিশ্বাস করতাম তুই আমার বোনকে ভালোবাসিস কিন্তু আজ বিশ্বাস করতে পারছি না। পরিস্থিতি বা তোর আচারণ বিশ্বাস করতে দিচ্ছে না আমাকে।’
থেমে যায় তিলাত। কিচ্ছুক্ষণ চুপ থেকে ধরা তবে কঠর স্বরে বলে,,
__‘আমার বোন যদি চায় তোকে ডিভোর্স দেবে অন্যরা না চাইলেও তাতে আমি আমার বোনকে সাপোর্ট করবো। আসছি”
দাঁড়ায় না তিলাত গটগট করে হেটে চলে যায়। মেঘালয় অবাক দৃষ্টি নিয়ে তিলাতের যাওয়ার পথে তাঁকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে হালকা হাসে সে।
রাতে বেশ দেরী করে বাড়ি ফেরে মেঘালয়। বাড়িতে এসে পরিবারের সবাইকে এত রাতে ড্রয়িং রুমে দেখে এক পলক তাদের দিকে তাঁকিয়ে তাদের এক প্রকার উপেক্ষা করে নিজ ঘরে চলে যায় সে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে অভীকের। হুংকার দিয়ে মৌমিতার উদ্দেশ্য বলে উঠে সে,,

__‘তোমার ছেলে চাচ্ছে কি? এভাবে উপেক্ষা করে চলে যাওয়ার মানে কি?’
মৌমিতা একবার উপরে ছেলের ঘরের দিকে চেয়ে ধীর কন্ঠে বলল,,
__‘সারাদিন পর এত রাতে এসেছে। হয়তো ক্লান্ত তাই কথা না বলে চলে গিয়েছে।’
ধমকে উঠে অভীক,
__‘ছেলের হয়ে কথা বলবে না। তোমার ছেলে কে কী বিয়ের জন্য জোর করা হয়েছিল? নিজ ইচ্ছেতে বিয়ে করে এসবের মানে কি? নিজের অরেমিকাকে বিয়ের করার যখন এত’ই ইচ্ছে ছিল তাহলে আমার তিনু মায়ের জীবন কেন নষ্ট করলো?’
__‘আমি কথা বলছি মেঘের সাথে।’
অভীক কন্ঠস্বর উঁচু করে বলে উঠলো,,
__‘তোমার ছেলের জন্য যদি আমার বন্ধুর সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়। তো তোমার ছেলেকে ত্যাজ্য সন্তান করতেও আমার বাঁধবে না।”
নিজ ঘর থেকে অভীকের চেচামেচি শুনলেও সেটা কানে নেয় না মেঘালয়। শাওয়ার নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পরে সে। বিছানায় শুতে’ই তিয়ানার কথা প্রচন্ড মনে পরে যায় তার। এই একটা মাস প্রতিদিন তিয়ানাকে সে তার বুকে নিয়ে ঘুমাতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমোনোর বৃথা চেষ্টা করে মেঘালয়।
তিয়াসার কিছু ছবি হাতে নিয়ে সেদিকে একদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে তিয়ানা। তার মনে শুধু একটা কথা’ই বারংবার ফিরে ফিরে আসছে। মায়ের করা যাওয়া পাপে’ই কি আজ তার এই দশা? পিছন থেকে তিয়ানার ঘাড়ে কেউ হাত রাখে। পিছন ফিরে তিলাতকে দেখে মৃদু হাসে তিয়ানা। তিলাতকে বসতে বলে নিজে সরে গিয়ে জায়গা দেয় বসার। তিলাত বোনের পাশে বেলকনির ফ্লোরে বসে পরে। তিয়ানার হাতে তিয়াসার ছবি দেখে থমকায় তিলাত। তিয়ানার কাছে কী করে ছবি গুলো আসলো। আবার নিজ মনে’ই বলে হয়তো তিয়ানা এগুলো তুলিকার ছবি ভেবে দেখছে। তাই হাসার চেষ্টা করে বলল,,
__‘আম্মু আব্বুর বিয়ের ছবি নিয়ে কি করছিস? দেখছিস নাকি? দেখি এদিকে দে আমিও দেখি। ”
তিয়ানা ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বলল,,
__‘মায়ের ছবি গুলো দেখছি আর ভাবছি। মায়ের করে যাওয়া পাপের ফল সন্তান হিসেবে আমি ভোগ করছি কি না। ‘
থতমত খায় তিলাত। গলা শুকিয়ে আসে তার। বার কয়েক চোখহ পিট পিট করে হাসার চেষ্টা করে বলে,,
__‘কি বলছিস? আম্মুরর আবার কীসের পাপ?
ভাইয়ের থতমত ভাব দেখে ঠোঁট এলিয়ে শব্দ করে হাসে তিয়ানা। তিয়াসার একটা ছবি নিজ হাতে তুলে ছবিটার দিকে তাঁকিয়ে হাসি দিয়ে বলল,,

__‘এটা তো আমাদের মায়ের ছবি তাইনা ভাইয়া? যার নাম ‘তিয়াসা’ যিনি আমাদের গর্ভধারিনী? তাই না?’
মেয়ের জন্য গ্লাসে করে গরম দুধ নিয়ে আসছিলো তুলিকা। বারান্দায় এসে মেয়ের বলা কথা গুলো শুনে তার বুক ধরফর করে ওঠে। হাত থেকে দুধের গ্লাস ফ্লোরে পরে যায়। হতভম্ব হয়ে মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে থাকে সে।
দরজায় খিল আঁটকে বসে আছে তুলিকা। অতিরিক্ত ভয়ে শরীর কাঁপছে তার। ঘুরে ফিরে মাথায় একটা’ই প্রশ্ন আসছে, তিয়াসা কি শেষ অব্দি তার মেয়েকেও কেঁড়ে নিলো? বোন হয়ে বোনের সব কেঁড়ে নিয়েও খ্যান্ত হলো না? শেষে তার সন্তানকেও? ডুকরে কেঁদে ওঠে তুলিকা। তার আর যন্ত্রণা গুলো সহ্য হচ্ছে না। এর চেয়ে হয়তো তার মরণ ভাল ছিল। মরে গিয়েও তার সব সুখ কেঁড়ে নিয়ে গেল তিয়াসা। আজ প্রথম তুলিকার ভিষণ ক্ষোভ জন্ম নেয় নিজের বোনের প্রতি।
পাশের ঘরে থেকে শোনা যাচ্ছে সাদিদ তিয়ানাকে জিজ্ঞেস করছে কি করে সে এসব জানলো?’
“সোফায় মাথা নিচু করে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে তিয়ানা। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরছে। তিলাত দরজা সামনে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কিয়ে মা’কে ডেকে যাচ্ছে। সাদিদ তিয়ানার পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
__‘তিয়া মা তুমি কি করে এসব জানলে? ‘
ফুঁপিয়ে ওঠে তিয়ানা। জলে চিকচিক করা চোখ নিয়ে বাবার দিকে তাঁকায় সে। কেঁদে দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। সাদিদ পরম যত্নে মেয়েকে আগলে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,

__‘বললে না কি করে জানলে?’
__‘ কিছু মাস আগে রাতে যখন মেঘ ভাইয়াদের বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম আমরা তখন তোমার আর পাপ্পির কথা শুনে ফেলি আমি। তুমি যখন পাপ্পিকে চগাদের দাঁড়িয়ে সব বলছিলে সিড়ির রুম থেকে আমি শুনে নেই সব।”
মেয়ের কথা শেষে দীর্ঘশ্বাস গেকে সাদিদ। এটা তো হওয়ার’ই ছিল এক দিন না এক দিন তো জানিতো’ই তিয়ানা। কিন্তু, আজ তার তুলিকার জন্য বড্ড কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভিতির কেমন খা খা করছে। তিয়ানা বাবার বুক থেকে মাথা তুলে প্রশ্ন করলো,,
__‘আমার মা খুব খারাপ ছিল তাই না আব্বু?’
উত্তর দেয় না সাদিদ। মেয়ের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাঁকিয়ে থাকে সে। বোনের কথা গুলো শুনে সেখানে আর দাঁড়ায় না তিলাত। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে। ভিতরের ক্ষত গুলো কেমন তাজা হয়ে উঠলী আবার। নিজের মায়ের (তিয়াসা) আরও বেশি ক্ষোভ জন্ম নেয় তার। আজ মানিষটা না থেকেও তাদের সংসারে আগুন লাগালো।’
সাদিদকে চুপ থাকতে দেখে তাকে হালকা ঝাঁকিয়ে জানতে চাইলো তিয়ানা। সাদিদ মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
__‘খারাপ ছিল না। শুধু দু’জন ভালোবাসার মানুষের মধ্যে ঢুকে পরেছিল। যার ফলাফল অনুসারে আমাদের সবার জীবন আজ এতটা অগুছালো।’
সাদিদের বলা শেষে উঠে নিজ ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে দেয় তিয়ানা। সাদিদ খানিকক্ষণ মেয়ের ঘরের দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থেকে নিজ ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।’
‘অতীত’

সেদিন সাদিদের ঘুম ভাংগার পর তার কিছু মনে না থাকলেও নিজের অবস্থা দেখে সাথে নিজ ঘরে কাউকে না দেখলেও এটুকু বুঝে যায় গত কাল রাতে তার সাথে কেউ ছিল। তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়েছে প্রথম সন্দেহটা তার তিয়াসার প্রতি’ই হয় কারণ তিয়াসা এর আগেও একবার সুযোগ নিয়েছিল। রাগ হয় সাদিদের রেগে তিয়াসার ঘরে গিয়ে তিয়াসাকে ধমকেও আসে। তিয়াসা জানতো সে ছিল না আর সে না থাকলে এই বাড়িতে দ্বিতীয় তুলিকা। তাহলে তুলিকা’ই হবে হয়তো। তবে তিয়াসা সাদিদের ভুল ভাংগায় না সে। নিজের সংসার খুয়ানোর ভয়ে। দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে সাদিদের বিভিন্ন কটু কথা গুলো হজম করে নেয় সে। কিন্তু, বিপত্তি বাঁধে মাস দেড়েক পর যখহন তুলিকা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হস্পিটালাইজ হয়। এবং জানতে লারে সে মা হতে চলেছে। থমকায় তিয়াসা তুলিকা নিজেও বিস্মিত হয়। তিয়াসা জানতো সে ভুল করেছে এরপর যা সে করবে সেটাও তার ভুল’ই বটে কিন্তু কী করার ছিল তার? সাদিদ তাকে মেনে না নিলেও তাদের সংসার জীবনের ততদিনে বহুবছর পার হয়ে গিয়েছিল। তাদের একটা সন্তানও ছিল। তাকে মেনে না নিলেও সাদিদ তার তিলাতকে কখনো দূরে সরাইনি মেনে নিয়েছিল সে তিলাত। এবার যদি সাদিদ জেনে যায় তুলিকার গর্ভে তার সন্তান বেড়ে উঠছে। সাদিদকে সে কখনো’ই আর পাবে না। তিয়াসা সেদিন নিজের সংসার বাঁচাতে দ্বিতীয় বার তুলিকার পায়ে পরে ভিক্ষা চায় সাদিদকে। বরাবরের মতো সেদিনও তুলিকা বোনকে’ই বেঁছে নেয়। মেনে নেয় তিয়াসার কথা। আমেরিকা চলে যাওয়ার বাহানা করে আলাদা ফ্লাট নিয়ে আলাদা থেকে যায় সে। এদিকে তিয়াসা নিজেকে সাদিদের সামনে প্রেগন্যান্ট দাবি করে। সব কিছু’ই মৌমিতার দৃষ্টি গোচরে ছিল। এমনকি তুলিকার সিজার অব্দি সে করেছিল। এবং তুলিকা নিজের সন্তানকে বোনের হাতে তুলে দেয়। যা সবটায় আট বছর বয়সি মেঘালয় জেনে যায়। সেদিন স্কুল থেকে সোজা মায়ের হস্পিটালে চলে আসে মেঘালয়। মায়ের কেবিনের সামনে এসে’ই সবটা দেখে ফেলে সে, তার আন্টি আম্মু নিজের সন্তানকে কি করে বলিদান দিতেছিল। মেনে নিতে না পারলেও কাউকে সেটা জানতে অব্দি দেয় না মেঘালয়। সে সত্যিটা জানে নিজের মধ্যে’ই গোপন রাখে বিষয়টা। ‘

‘বর্তমান’
হস্পিটালে তিয়ানাকে কোলে নিয়ে ছোটাছুটি করছে তিলাত। হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেকে তিয়ানা। পানির ছিটাতেও জ্ঞান ফিরছিলো না তার। ভয় অএয়ে যায় তিলাত তৎক্ষনাৎ বোনকে কোলে তুলে হস্পিটালে চলে আসে সে। তিয়ানাকে কেবিনে দিয়ে করিডোরে থাকা চেয়ারে বসে পরে তিলাত। ততক্ষণে তুলিকাও এসে পরে। মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে বসা অবস্থাতে’ই মা’কে ঝাঁপটে ধরে তিলাত। চোলহ থেকে তার জল গড়িয়ে পরে। মনে মনে প্রতিজ্ঞাও করে, মেঘালয়কে তার বোনে কাছে ঘেষতে অব্দি দেবে না সে। আজ মেঘালয়ের জন্য তার বোনের এই অবস্থা। ছেলের পিঠে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তুলিকা। নিজেকে উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে তার। তার সুখের সংসারটা কেমন ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। এটা তো তার কাম্য ছিল না। এত কষ্ট কেন তার? পৃথিবীর সব যন্ত্রণা, সব কষ্ট যন্ত্রণা কী শুধু তার আর তার সন্তানদের জন্য’ই?

আমার আদরিনী পর্ব ২৭+২৮

মায়ের থেকে সরে গিয়ে মা’কে পাশে থাকা চেয়ারে বসে তিলাত। তুলিকা পাথরের মতো বসে থাকে। ভালো করে মা’কে পর্যবেক্ষণ করে তিলাত। মনে হলো, তার মা এ ক’দিনে কেমন বুড়িয়ে গিয়েছে। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেকে তিলাত। মেঘালয়ের প্রতি জমে থাকা রাগটা যেন তীর তীর করে বাড়ছে তার। নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পরেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। হাত কচলে করিডরের এ মাথা থেকে ‘ও” মাথা অব্দি হাটতে থাকে নিজের রাগটাকে আয়তত্ত্বে আনার জন্য। তবে হেটে মেঘালয়ের কেবিন অব্দি এসে’ই মাথা বিগড়ে যায় তার। ভিতর থেকে খিল খিল করে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিজেকে আঁটকাতে না পেরে মেঘালয়ের কেবিনের দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পরে সে।
বৃষ্টির সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে কতগা বলতে বলতে হাসছিলো মেঘালয়। তখন কেবিনের দরজা জোরে ধাক্কানোর শব্দে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তিলাত এসেছে। তিলাত কে দেখে মুখের হাসির রেখাটা বড় করে বলল,,
__‘হঠাৎ তুই? আয় বস।’

তিলাত একবার বৃষ্টি নামক মেয়েটার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে মেঘালয়ের দিকে তাকায়। রাগে সামনে থাকা টেবিলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সে। তিলাতের এহনো কান্ডে রেগে যায় মেঘালয় তবে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে সংযত করে সে। বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে যায় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ভিতু চোখে তিলাতকে দেখে সে। তিলাত দেখতে ভয়ংকর লাগছে রাগে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। শরীর কাঁপছে তিলাত বড় বড় শ্বাস ফেলে রেগে চিল্লিয়ে বলল,,
__‘তোর জন্য আমার বোন আজ হস্পিটালাইজড আর তুই এখানে বসে এই মেয়েটার সাথে হাসি ঠাট্টা করছিস।’
তিয়ানার অসুস্থতার খবরে চোখেহের দৃষ্টি শীতল হয়ে আসে মেঘালয়ের। অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘মানে?
মেঘালয়ের প্রশ্নে তাচ্ছিল্য হাসে তিলাত। তাচ্ছিল্য স্বরে বলল,
__‘ভালোবাসিস নাকি আমার বোনকে? এই ভালোবাসার নমুনা ?

আমার আদরিনী পর্ব ৩১+৩২