আমার আদরিনী পর্ব ২৭+২৮

আমার আদরিনী পর্ব ২৭+২৮
আশুথিনী হাওলাদার

অবন্তীকে নিয়ে দিয়াবাড়ি ঘুরতে আসে তিলাত। গত একমাসে তার অবন্তীর সাথে বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আজ তিলাত অবন্তীকে প্রপোজ করে নিজের মনে কথা জানাতে চাচ্ছে সে। পাশাপাশি হাটছে দু’জন। গোলাওই শাড়ি পড়া অবন্তীকে বেশ সুন্দর লাগছে। চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করছে না তিলাতের। আড়৷ চোখে এক পলক অবন্তীকে দেখে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল তিলাত,,,,
__‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ‘
তিলাতের প্রশংসায় লজ্জা পায় অবন্তী। মুচকি হেসে বলল্,
__‘ধন্যবাদ।’
তিলা হঠাৎ করে গরম লাগতে শুরু করে। নার্ভাস লাগে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো,
__‘তোমাকে একটা কথা বলি অবন্তী!’
__‘জী বলুন।’

খুব করে চাচ্ছে তিলাত মুখ ফুটে যে ‘আমি তোমাকে ভাকোবাসি অবন্তী’ কিন্তু বলতে চেয়েও বলতে পারেনা সে। নিজেকে খুব নার্ভাস লাগছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কেমন। বার কয়েক বড়ড় শ্বাস নিয়ে বলল,
__‘আমি তোমাকে ভালোবাসি অন্তী’ আই নিড ইউ’
বিস্মিত ভাবে চেয়ে থাকে অবন্তী। কখনো সে বুঝতে অয়ারিনি তিলাত এসব ভাবছে তাকে নিয়ে। বুকের ভিতর হঠাৎ করে ঝড় শুরু হয় তার। কিছু বলতে নেয় অবন্তী তাকে বলতে না দিয়ে তিলাত অস্থির কন্ঠে বলল,,
__‘আমি জানি তুমি কি বলবে। এটাই তো আমার তোমাকে পছন্দ না। আমাকে খারাপ ভাববে। আসলে ভাবার কথা আমি তো অনেক রিলিশন করেছি তাই আমাকে বিশ্বাস না করা’ই যায়।
অবন্তী ধমকে বলল,,
__‘থামেন তো! আমি কি একবারও বলছি সেটা? আপনি আমাকে কিছু বলতে’ই দিচ্ছেন না।’
অবন্তীর ধমকে থতমত খেয়ে যায় তিলাত। চুপ হয়ে থাকে সে। অবন্তী মৃদু লজ্জা হেসে বলল,,
__‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি আপনি আমাকে নিয়ে কিছু ভাবেন। ‘
থেমে কাঁপা কন্ঠে বলল,,
__‘আপনি আপনার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে পারেন।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথা শেষ করে তিলাতের সামনে আর দাঁড়ায় না অবন্তী। দৌঁড়ে তিলাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। তিলাত সেদিকে তাঁকিয়ে আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। অবন্তী কি ব্বোঝানে চেয়ে সেটা বুঝতে’ই হাসি দেয় তিলাত। হেসে নিজের মাথার চুকে হাত বুলায়। আজ তার খুব খুশি লাগছে। এত দিন পর সে নিজের মনের কথা জানাতে পেরেছে অবন্তীকে। এবার শুধু ঘরে বউ করে আনার পালা। কিন্তু! মা’কে কি করে জানাবে সে? সে তো মায়ের কাছে বলতে’ই পারবে না। এই এক মাস ধরে অনেক ট্রাই করছে সে তুলিকাকে অবন্তীর ব্যাপারে জানানোর জন্য। তবে সে ব্যার্থ! ভয়ে পেট দিয়ে কোনো কথাই বের হয়নি তার। মেঘালয় এটা নিয়ে খুব মজাও করেছে তার সাথে। শালার জামাইবাবু কি করে বুঝবে। কুছু না করে’ই তো তার রাস্তা কিলিয়ার হয়ে গেছে। শুধু সে মাইনকা চিলায় পরে আছে।
‘সকাল থেকে চুপচাপ আছে তিয়ানা। কারো সাথে তেমন একটা কথা না বলে মেঘালয়দের বাড়িতে নিজের আগের বরাদ্দ করা ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে বসে থাকে। মৌমিতা কারন জানতে চাইলেও কিছু বলেনি তাকে তিয়ানা। বলতে ইচ্ছে হয়নি। কি বলবে সে? এটা যে তোমার ছেলে আমাকে ভালোবাসে না মাম্মি। তোমার তাকে আমার সাথে বিয়ে করিয়ে ভুল করেছো। সকাল থেজে এক ভাবে ফ্লোরে বসে আছে তিয়ানা। ঠিক কি করা উচিত সেটা নিয়ে ভাবছে সে। মেঘালয়কে কি সে মুক্তি দেবে? গত এক মাস ধরে মেঘালয়ের আচরণে তার প্রতি যে ভালবাসাটা সে অনুভব করলো তা সব মিথ্যে? সব! আর কিছু ভাবতে পারেনা তিয়ানা। নিজ ঘর থেকে বেড়িয়ে বাড়ি থেকেও চলে যায় সে। এই বাড়িতে এক মুহূর্ত থাকলে সে দম আঁটকে মারা যাবে।

“রান্না করছিল তুলিকা। হঠাৎ তাকে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় চমকে গিয়ে ঘাবড়ে যায় সে। পিছন ফিরে তিয়ানাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে বুক কেঁপে ওঠে তার। দু’হাত বাড়িয়ে মেয়ের গাল অব্দি গড়িয়ে পরা চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করলো,,
__‘আম্মা কি হইছে কাঁদতেছো কেন?’
তিয়ানা কিছুনা বলে মা’কে জড়িয়ে ধরে থাকে। অজানা আতংকে বুক কাঁপছে তুলিকার। তার মেয়ের কি হলো হঠাৎ করে। দু’হাত ধরে তিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে চুলে বিলি কেঁটে বলল,,
__‘কি হইছে আম্মা? মেঘ কিছু বলছে?’
ফুঁপাতে ফুঁপাতে উত্তর দেয় তিয়ানা,,
__‘মেঘ ভাইয়া আমায় চায় না আম্মু। সে অন্য কাউকে ভালবাসে।’
মেয়েকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় তুলিকা। তিয়ানাকে ঘরে নিয়ে বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,
__‘মেঘ নিজে তোকে বলেছে?’
__‘হ্যা’

হতভম্ব হয়ে যায় তুলিকা। ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে সে। মা’কে রভাবে নির্বাক হয়ে যেতে দেখে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে তিয়ানার। আচ্ছা! এই মানুষটা তার নিজের মা হলে কি এমন ক্ষতি হতো? আজ তার কতটা কষ্ট পেল। কেন যেন মনে হচ্ছে তিয়াসা নয় তুলিকা’ই তার মা। তিয়ানা ফ্লোরে মায়ের পাশে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে শব্দ করে কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
__‘আমি মেঘ ভাইয়াকে খুব ভালবাসি আম্মু। উনি কেন ভালোবাসলো না আমাকে।”
তুলিকা পাথর হয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চেয়ে থাকে। ভাবছে সে, তার মেয়েও কি তার’ই ভাগ্য পেলো!’
মেয়েকে কোল থেকে তুলে, মেয়ের দু’গালে হাত রেখে ধরে আসা গলায় কেঁপে ওঠা ঠোঁটে বলল,,
__‘ সুখ পাবি কি করে? মায়ের ভাগ্য যে পেয়েছিস!’
মায়ের বলা কথায় থমকায় তিয়ানা। আম্মু কি তার নিজের মা তিয়াসার ভাগ্যের কথা বলল? ”
তিয়ানার খুব বলতে ইচ্ছে করলো,
__‘আমি কেন আমার মায়ের ভাগ্য পেলাম আম্মু।

আমি তো ক্ষতি করিনি কারো। আমি তো নিজে থেকে মেঘের জীবনেও ঢুকে পরিনি। তাহলে কেন? বাবা মাতের কর্মফল সন্তান ভোগ করে। আমি তো কারো খারাপ করিনি আম্মু। কিন্তু কিছু বলতে পারে না তিয়ানা। শুধু মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থেকে মায়ের নির্বাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখলো। আচ্ছা! নিজের মা না হওয়া সত্যেও কি করে আম্মু তাদেরকে এতো ভালোবাসছে?
তিয়ানাকে সকালে কথা গুলো শুনিয়ে গেলেও। একটুকুওও শান্তি পায়নি মেঘালয়। মনে হলো সে তিয়ানাকে খুব বেশি আঘাত করে ফেলছে। তিয়ানা হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে। রাত করে বাড়ি ফেরে সে। তিয়ানার সম্মুখীন হতে ভয় হচ্ছিলো তার। মেয়েটা হয়তো কেঁদে কেঁটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। মায়ের (মৌমিতা) কাছেও হয়তো তার নামে বানয়ে বানিয়ে নালিশ করা হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে। ঘরে এসে তিয়ানাকে না দেখে খুব অবাক হয় সে। সাথে মেজাজও বিগড়ে যায় তার। প্রতিদিন ঘরে ফিরে প্রথমে তিয়ানার হাসি মুখখানা দেখার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তার। প্রতিদিন তো ঘরে বসে তার জন্য অপেক্ষা করে মেয়েটা আজ কি হলো? কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে মেঘালয়। আজ তো তিনুরানী ক্ষেপে আছে তার উপর। হয়তো নিজের ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে ঘুমিয়ে আছে তার উপর রাগ করে। কালকে’ই সে ওই রুমে তালা দেবে। কিছু একটা হলে’ই নিজের ঘরে গিয়ে খিল আঁটকানো বের করবে সে। মেয়েটা এত বোকা কেন? কেন বোঝে না মেয়েটা! সে তাকে’ই ভালোবাসে।

তিয়ানা সোজাসুজি সোফায় বসে আছে মেঘালয়। চোখের দৃষ্টি কঠর হাত রাগে মুষ্টিবদ্ধ করা। রাতে ঘরে না পেয়ে তখন’ই তিয়ানার খোজে এই বাড়িতে এসেছে। মেঘালয় তার দিকে কঠর দৃষ্টি নিয়ে তাঁকালেও সেদিকে পাত্তা দেয় না তিয়ানা। নিজের মতো নেল কাটার দিয়ে হাতে পায়ের নখ কেঁটে যাচ্ছে। এমন ভাব তার আসে পাশে সে ছাড়া আর কেউ নেই। তিয়ানার এমন আচরণে মেঘালয়ের রাগ হচ্ছে। বসে না থকতে পেরে উঠে দাঁড়ায়ে তিয়ানার কাছে গিয়ে ওঁর হাত ধরে টেনে সোফা থেকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আঁটকে দেয়। মেঘালয়ের হঠাৎ আচরণে কিছুটা বিস্মিত হয় তিয়ানা। বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘এসব কি মেঘ ভাইয়া?’
রাগে মেঘালয়ের মাথার রগ টগবগ করছিল তার মধ্যে তিয়ানার তাকে ভাইয়া ডাকা যেন আরও রাগিয়ে দেয় তাকে। আসে পাশে তাঁকিয়ে বেড সাইডের টেবিলে থাকা টেবিল ল্যাম্প তুলে রেগে আচার মারে মেঘালয়। হতভম্ব হয়ে যায় এহনো কান্ডে। ভয়ে ঢোক গিলে চোরা চোখে তাঁকিয়ে দুঃখি স্বরে বলল,,
__‘আমার স্বাদের মাটির হারিকেন ল্যাম্প’
মেঘালয় ভ্রু’কুটি করে তাঁকায়। সেটা দেখে মুখে হাত দিয়ে চুপ হয়ে যায় তিয়ানা। মেঘালয় রাগি রাগি কন্ঠে ধমকে উঠে বলল,,

__‘এই বাড়িতে কি করছিস।’
তিয়ানা মুখ থেকে হাত সরিয়ে। ধীর স্বরে বলল,
__‘আমার বাড়ি আমি আসবো না?’
__’‘না আসবি না। আসার আগে আমার পারমিশন নিয়েছিস?’
তিয়ানা কপাল কুচকে প্রশ্ন করল,
__‘আপনার পারমিশন কেন নিব?’
তিয়ানার হাতের বাহু ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে ধমকে বলে মেঘালয়,
__‘আই অ্যাম ইউর হাসবেন্ড।’
হেসে দেয় তিয়ানা। তিয়ানার হাসি দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে মেঘালয়। তিয়ানা হাসতে হাসতে মেঘালয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বিছানায় বসে পরে। খানিক্ষন পর হাসি থামিয়ে বলে উঠলো,
__‘রিয়াল্লি? আপনি আমার হাসবেন্ড? আপনি তো আমাদের বিয়েটা’কেই মানেন না। তাহলে হাসবেন্ড কি করে হন?’
জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে তিয়ানা,
__‘আমি আপনার বাড়ি ছেড়ে এসেছি। আমি কখনো’ই ফিরবো না আর আপনি আপনার গার্ল্ফ্রেন্ড কে বিয়ে করতে পারেন। ‘
তিয়ানার এহনো কথায় হতবাক হয়ে যায় মেঘালয়। হাসি অয়াচ্ছে তার প্রচন্ড সাথে তীব্র রাগ। রেগে বলল,
__‘তুই আমার বউ তিনু। আমি একবারও বলেনি বিয়ে মানি না শুধু এটা বলেছি আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে ছাড়তে পারবো না বিকজ আই লাভ হার। তাছাড়া, তোর আর আমার মধ্যে সব হয়ে গেছে। গত এক মাসে বেশ কয়েকবার কাছাকাছি এসেছি তাই আমি তোকে ছাড়তে পারবো না।”

মেঘাকয়ের বলা প্রতিটা কথায় বুকের ভিতর তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় তিয়ানার। ধম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অনুভূতি হয় তার। মনে হলো সে শ্বাস ফিরাতে পারছে না। বুকের তীব্রতর যন্ত্রণার সাতগে মস্তিষ্কে একটা কতগা ঘোর পাক খাচ্ছে তিয়ানার। আচ্ছা! তার সাথে ফিজিক্যাল্লি ইনভলভ হওয়ার ফলে কি মেঘালয় তাকে দায়বদ্ধতা ভাবছে? তাকে না ছেড়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছে?
অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তুলিকাকে আনমনা, চিন্তিতো, দুঃখিত দেখছে সাদিদ। কি হয়েছে জানতে ইচ্ছে করলেও প্রশ্ন করা হয়ে ওঠেনি তার। শশুড় বাড়িতে যাওয়ার এক মাস পর মেয়ে বাড়িতে এলো। মেয়ের সাথেও দু’টো কথা বলা হয়নি তার। মেয়ে ঘর থেকে’ই বের হয়নি। মা মেয়ে দুজনের’ই হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া ভাবাচ্ছে সাদিদকে। খাওয়া দাওয়া শেষ ঘরে এসেছে অনেক্ষন রাত প্রায় দেড়টা বাজে কিন্তু তুলিকা বেলকনিতে গিয়ে সেই যে বসেছে ঘরে আসার নাম নেই। তুলিকার হঠাৎ চিন্তা, নিরবতা কারন কি? ঘুমনোর জন্য৷ বিছানায় শুয়েছিল সাদিদ। তুলিকার ঘরে না ফেরায় শোয়া থেকে উঠে বেলকনিতে যায় সে। বাইরে আজ একটু বেশি’ই শীত পরেছে। আর সেই শীতের মধ্যে কি না গায়ে কিছু না জড়য়ে বেলকনিতে বসে আছে তুলিকা৷ তুলিকার এসব কান্ডে মনে মনে বেশ রাগ হয় সাদিদের তবে বরাবরের মতো নিজের মনের ভাব নিজের মনে’ই দমিয়ে রেখে খাটের উপর থেকে তুলিকার চাদর তুলে নেয় সে। বেলকনিতে গিয়ে পিছন থেকে তুলিকার গায়ে চাদর জড়িতে দেয় সে। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও তুলিকার আজ শীত লাগছে না। সাদিদের উপস্থিতিও সে টের পায়নি আর না শরীরে চাদর জড়ানো। তার মাথায় শুধু নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা। পাশের ঘরে মেয়ে আর মেয়ের জামাই আছে কথা কাটাকাটির শব্দও শোনা যাচ্ছে। ভাবাচ্ছে তাকে, মেয়ের সংসারটা টিকবে তো? টিকলেও কি তার মতো করে’ই জীবন কাঁটাতে হিবে তার সন্তানকে!

সাদিদের ডাকে সস্মিত ফিরে পায় তুলিকা। পাশে সাদিদ দাঁড়িয়ে আছে টের পায়নি সে। তার শরীরে চাদর জড়ানো দেখে এক পলক তাঁকায় সাদিদের দিকে। বুঝতে বাকি নেই সাদিদ দিয়েছে। কিছু বলে না তুলিকা। বলতে ইচ্ছে করছে না তার। সাদিদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাইরে দেখে সে। বাইরে রাতের অন্ধকার সাথে কুয়াশাকে কালো ধোয়ার মতো লাগছে। তুলিকার নিরবতা দেখে সাদিদ গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,
__‘এই শীতে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? শরীর অসুস্থ করার চিন্তা ভাবনা করছো নাকি?’
মৃদু হাসে তুলিকা। বলল,
__‘মনের অসুক’ই তো বড় অসুক। শরীরের অসুক হলে ওষুধ দিয়ে ছাড়ানো যাবে মনের টা কি করে ছাড়াবো?’
তুলিকার প্রশ্নের উত্তর দেয় না সাদিদ। উত্তর নেই তার কাছে৷ কি বলবে সে? তউমি তোমার শাস্তি পাচ্ছো। কিন্তু, কি করে বলবে সে? গত ২১ বিছির ধরে তো শাস্তি দিয়ে আসছে আর কত?
তুলিকা সাদিদের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে শান্ত কন্ঠে প্রশন করল,
__‘এত দিন, এত বছর ধরে এত ভাবে শাস্তি দিয়েও আমার শাস্তি মওকুফ হয়নি তাইনা?’
সাদিদ বুঝতে না পেরে বলল,,
__‘মানে?’
তাচ্ছিল্য হাসে তুলিকা। বলল,,

আমার আদরিনী পর্ব ২৫+২৬

__‘শুধু মাত্র আমাকে শাস্তি দিতে মেঘ রাজি না সত্যেও তুমি আমার মেয়েকে মেঘের সাথে জোড় করে বিয়ে দিলে? আমাকে শাস্তি দেয়ার এতো নেশা তোমার?’
হতভম্ব হয়ে যায় সাদিদ। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো তার। জোর করে মানে? মেঘের সম্মতি নিয়ে’ই তো বিয়ে হয়েছে। সাদিদের বুকে ধক করে ওঠে। আমতা করে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,
__‘ম্মমানে কি বলছ? মেঘ তো রাজি ছিল?’
হাউমাউ করে কেঁদে দেয় তিয়ানা। নিজে এতদিন ধরে সব কষ্ট সহ্য করলেও আজ নিজের সন্তানকে এভাবে দেখে ঠিক থাকতে পারছে না সে। এত বছর তুলিকার এমন কাঁন্না দেখে ভয় পেয়ে যায় সাদিদ। সে ভুল কিছু করে বসলো না তো। তুলিকা রেলিং ধরে ফ্লোরে বসে পরে। সাদিদও তার পাশে বসে। তুলিকার গাল দু’হাতে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো সাদিদ,,
__‘কি হয়েছে তুলি? বলো? আমার ভয় হচ্ছে। আমার মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয়নি তো।’
ততক্ষণে কাঁন্না থেমে যায় তুলিকার। ফুঁপাচ্ছে সে! গালে গড়িয়ে পরা জল গুলো হাতের আংগুল দিয়ে মুছে দিয়ে জিজ্ঞেসা দৃষ্টি নিয়ে তুলিকার চোখের দিকে তাঁকায় সে।
তুলিকা সাদিদের চোখে চোখ রেখে বলল,,

__‘আমাদের মেয়ে ভাল নেই সাদিদ। বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। তিনুকে ভাকোবাসে না মেঘ। মেঘ অন্য কাউকে ভালোবাসে।’
কথা গুলো শুনে হতবুদ্ধি হয়ে যায় সাদিদ। মুখ থেকে টু শব্দ বের হয় না তার। হতবাক হয়ে স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে সে। তারা দুজনে’ই নিজ মনে ভাবছে, তাদের আদরের সন্তানের জীবনটা তাদের মতো হবে না তো!

আমার আদরিনী পর্ব ২৯+৩০