আমার আদরিনী পর্ব ২৫+২৬

আমার আদরিনী পর্ব ২৫+২৬
আশুথিনী হাওলাদার

লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি নিয়ে মেঘালয়ের ঘরের মাঝ বরারবর দাঁড়িয়ে আছে তিয়ানা। পাশে থাকা কাউচে হেলান দিয়ে কপালে এক হাত রেখে বসে আছে মেঘালয়। তিয়ানা সেদিকে তাঁকিয়ে কিটকিটিয়ে হেসে দেয়। মেঘালয় ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে আছে তার দিকে। তিয়ানা হেসে মেঘালয় বরাবর বিছানায় আসন পেতে বসে, মিচকে হেসে বলল,,
__‘কেমন দিলাম?’
মেঘালয় থমথমে কন্ঠে বলল,,
__‘এখানে আসার জন্য উঠে পরে লেগেছিস কেন?’
তিয়ানা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,
__‘জামাইর পরকীয়া দূর করার জন্য।’
চোখ পাকিয়ে তাঁকায় মেঘালয়। রাগী স্বরে বলল,,
__‘হোয়াট! পরকীয়া? আমি পরকিয়া করছি?’
__‘অবশ্যই! এটা পরকীয়া। বউ কে লুকিয়ে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরলে সেটা পর%কিয়া’ই।’
পায়ে ধুম করে শব্দ করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় মেঘালয়। খাটের কাছে এসে হালকা ঝুঁকে ধমকে বলে উঠলো,,
__‘বৃষ্টি আমার গার্লফ্রেন্ড। আর সেটা তোকে বিয়ে করার আগে থেকে।’
তিয়ানা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,,

__‘কতদিন?’
মেঘালয় চার টা আংগুল তুলে বলল,,
__‘চার! চার বছর। আমি পরকীয়া করছি না। তুই আমাদের মধ্যে ঢুকে পরেছিস। সেটার তোর বাপ আর আমার বাপের জন্য।
তিয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলল,,
—_‘ধুরো! খালি এক কথা। আমার বাপ আর তোর বাপের জন্য। তো! তাতে আমি কি করবো? আমার তো হাত নেই। আর প্রেম করছেন ভালো কথা। এখন ভুলে যাবেন ব্যাস তাহলে’ই হলো। ‘
__‘ভুলে যাবো মানে? তুই ভুলে যাবি! তুই এক্ষুনি যাবি আমার ঘর থেকে। কাল আমার বাড়ি থেকে।’
মেঘালয়কে সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে বিছানার এক পাশে শুয়ে পরে তিয়ানা। শুয়ে নিজ হাতের আংগুল টানতে টানতে ব্যাঙ্গ করে বলল,,
__‘তুই যাবি! কেন? আমি যকেন যাবো? আমাকে কি নিরহ মনে হয়? আমি যাবো না। এটা আমার বরের ঘর। এখানে আমি থাকবো আমার অধিকার এটা। আপনি আপনার ওই গার্লফ্রেন্ড টারফ্রেন্ড কে ভুলে যান।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘালয়কে কথা গুলো শুনিয়ে চোখহ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরে তিয়ানা। মেঘালয় হতবাক হয়ে চেয়ে আছে তিয়ানার মুখের দিলে। সে হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝতে পারছে না। এই মেয়ে তার বাপের মতো’ই হিটলার। কি ভাবলো আর কি ঘটছে। মেঘালয় দুঃখি দুঃখি মুখে সোফায় বসে পরে। আজ সে মায়ের কল পেয়ে ‘ও’ বাড়ি গিয়ে দেখলো তিয়ানা শাড়ি, চুড়ি পরে ফিটফাট বউ সেজে বসে আছে। কি হলো ব্যাপারটা বোঝার আগে’ই তার ঘাড়ে চেপে এ বাড়িতে চলে এলো। রিয়াল্লি? মেঘালয় চৌধুরীকে ঘোল খাওয়াচ্ছে এই টুকু পুচকে মেয়ে। যাকে সে জন্মাতে দেখেছে। তার কোলে উঠে পটি, হিসু করে তাকে ভাসিয়ে দিয়েছে। সেই মেয়ে কিনা এখন বউ হয়ে নাচাচ্ছে তাকে। এটাও হয়? এই পুচকে মেয়েকে সে ছোটো বেলায় কাঁধে করে নিয়ে ঘুরেছে আর সেই মেয়ে বড় হয়ে তার কাঁধে আঠার মতো চরে নৃত্য করছে। কি আর করবে? সহ্য করছে। ঘরের লাইট অফ করে সোফাতে শুয়ে পরে মেঘালয়। ভুলেও বিছানার দিকে ফিরে তাঁকায় না সে। দেখা যাবে নিজের কন্ট্রোল’ই হারিয়ে ফেলল। তিয়ানার ছোটো থেকে’ই ঘুমালে দিন দুনিয়ার হুস থাকে না। সাথে জামা কাপড়েরও ঠিক ঠিকানা থাকে না। আজ তো আবার ঘটা করে শাড়ি পরেছে।
“বিছানায় বালিসের সাথে হেলান দিয়ে বই পরছে অভীক। পাশে এসে বসে মৌমিতা। অভীক বই বন্ধ করর বলল,,

__‘কাজ শেষ?’
মৌমিতা মুচকি হেসে বলল,,
__‘হ্যা!’
অভীক হেসে বলল,,
__‘আমাদের বউমার কি খবর?’
__‘খাইয়ে দাইয়ে ছেলের ঘরে রেখে আসলাম।’
অভীক হাসতে হাসতে বলল,,
__‘ভাগ্য করে ছেলের বউ পেলাম। আজ মনে হলো তার এখন শশুড় বাড়িতে থাকা দরকার। আজ’ই চলে আসলো। ‘
অভীকের হাসির সাথে তাল মিলিয়ে হাসে মৌমিতা।
হাসি থামিয়ে বলল মৌমিতা,
__‘দেখো! আমাদের তিনু-মেঘ ওরা খুব সুখি হবে।’
অভীক তাল মিলিয়ে বলল,
__‘হ্যা ইনশাআল্লাহ! শুধু সাদিদ আর তুলির ব্যাপারটা যদি সব ঠিকঠাক হতো।’
মৌমিতার চোখ ছলছল করে ওঠে। চোখে জল চলে আসে তার। ধরা গলায় বলল,,
__‘তুলির ভাগ্যটা এতো খারাপ কেন হলো বলোতো? সাদিদ ভাই কি পারতো না সব ভুলে ওকে মেনে নিতে?’
অভীক চোখের চশমা খুলে পাঞ্জাবির কোনা দিয়ে মুচতে মুচতে বলল,,
__‘সাদিদের সাথে কথা বলেছি আমি। কিন্তু! সে তো সে। নিজে যা বোঝে সেটাই করে। বুড়ো হয়ে গেল শালা তারপরও ত্যাড়ামি গেল না।’

বলে হাসা শুরু করে সাদিদ। মৌমিতা কিছু না বলে চোখের জল মুছে উঠে আলমারি খুলে ব্লাংকেট নামায়। আজ একটু বেশি শীত পরেছে। অভীক সেদিকে তাঁকিয়ে বলল,,
__‘এটা আবার নামাচ্ছো কেন? আছে তো একটা। ‘
মৌমিতা ব্লাংকেট বিছানায় রেখে বলল,,
__‘ওটা পাতলা। আজ বেশি শীত শীত লাগছে।’
একটু থেমে কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো মৌমিতা,,
__‘আমাকে ভাবাচ্ছে অভীক। সাদিদ ভাইকে না আবার পরে আফসোস করতে হয়। বয়স তো কম হলো না আমাদের তার বুঝতে বুঝতে আবার না বেশি দেরী হয়ে যায়। তুলির শরীরটা আজকে ভালো ঠেকছিল না।’
অভীক অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
__‘মানে?’
মৌমিতা ঘুমানোর জন্য বিছানা গুছাতে গুছাতে বলল,
__‘তুলির শরীর ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। সে ব্যাপারে হয়তো সাদিদ ভাই কিছু জানেও না। বয়স তো আর কম হলো না ৫২ পেরিয়ে গেল বলে। তার উপর আবার মনের শান্তি বড় শান্তি। মনের শান্তীটা ঠিক কি সেটা তো আমার বান্ধুবি এ জীবনে বুঝলোও না আর পেলোও না।’

বেলকনিতে থাকা দোলনায় মোবাইল হাতে বসে আছে তিলাত। ডায়েলে অবন্তীর ফোন নম্বর। যা সে আজ তিয়ানার ফোন থেকে চুরে করেছে। ফোন করবে কি করবে না। ভেবে পাচ্ছে না দু’মোনায় আছে সে। রাত প্রায় একটা বাজে এত রাতে কল দিলে যদি তাকে খারাপ ভাবে। তিলাতের ভারি দুঃখ লাগে মনে। তার বিয়েটাও যদি মেঘ-তিনুর মতো হঠাৎ করে এভাবে হয়ে যেত। আর ভাবতে পারছে না তিলাত। যদি খারাপ ভাবে তো ভাব্বে! তাই বলে এমন যন্ত্রণা নিয়ে থাকা যায় না। আল্লাহর নাম নিয়ে কল দেয় সে।
রিং হচ্ছে তার সাথে বুকে ধুকপুক শুরু হয়ে যায় তিলাতের। এটা আবার মহা জ্বালা মেয়েদের মতো হাত- পা কাঁপা শুরু হয় তার। কল রিসিভ হওয়ার আগে কেঁটে দেয় সে। কল কেঁটে বড় করে শ্বাস নেয় সে। তার দ্বারা এসব কল টল প্রেম ট্রেম কিচ্ছু হবে না। আঠাইস বছরের যুবক হয়ে কিনা আট বছরের ছোটো মেয়েকে নিজের মনের কথা বলতে পারছে না সে। কি লজ্জাকর ব্যাপার। মা’কেও জানাতে পারছে না। নিজ মনেই বলে সে,
__‘তোর মরে যাওয়া উচিত তিলাত। তুই পুরুষ জাতির মান ডুবাবি।’
দুঃখি মনে বেলকনি থেকে রুমে এসে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পরে সে। বিছানায় শোয়ার পর’ই হঠাৎ তার মনে হলো। তার বোন বাড়িতে নেই শশুড় বাড়ি চলে গিয়েছে। এই বাড়িতে আর থাকবে না। দু’জন সারাক্ষণ ঝগড়াও করতে পারবে না । আর কেউ ভুল করে তাকে ফাসিয়ে দিয়ে মায়ের বকুনি খাওয়াবে না। এই বাড়িতে মাঝে মাঝে আসবে বেড়াতে। বুকের ভিতর কেমন ব্যাথা অনুভব হয় তিলাতের। কেমন অজানা যন্ত্রণা শুরু হয় তার। ইচ্ছে করছে দৌড়ে ও বাড়ি চলে যেতে। আজ মায়ের কথাও মনে পরছে তার। মা সব সময় বলতো,

__‘তাত’ বাবা আমি না থাকলে বনুকে দেখে রাখিস কেমন?’
মা নেই! মা মারা গেছে বহুবছর হলো কিন্তু কখনো তিলাতের মায়ের অভাব মনে হয়নি। কারন, তার আম্মু কখনো তাকে সেটা বুঝতেও দেয়নি। আজ বোনটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে মায়ের কথাও বড্ড মনে পরছে তার। আচ্ছা! আজ বোন চলে যাওয়ার সময় আম্মুর(তুলিকা) চোখে মুখে যে ব্যাথা অনুভব করছিল ঠিক ততোটা কষ্ট কি আর মায়েরও হতো? কখনো কখনো তিলাতের মনে হয় মা কেন গেল তাদের ছেড়ে। পরক্ষণে মনে হয় মা(তিয়াসা) মারা না গেলে তো আম্মু (তুলিকা) আব্বু কখনো এক হতে পারতো না। আজ খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে তিলাতের। আচ্ছা! সব ভাইদের কি? বোনের বিদায়ে এমন কষ্ট অনুভব হয়? এতো! এতো যন্ত্রণা দায়ক। কই? তারাতো দু’জন সারাক্ষণ ঝগড়া করে দিন কাটাতো দু’জন দু’জনকে সহ্য করতে পারতো না এমন। তাহলে, এতো ভালোবাসা কোথায় লুকানো ছিল?
“বিছানায় হাত পা গুটিয়ে থম মেরে বসে আছে তুলিকা। সাদিদ ঘরে এসে তুলিকাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কাছে এগিয়ে এসে বলল,,

__‘মন খারাপ?’
আনমনে উত্তর দিলো তুলিকা,,
__‘আমার মেয়েটা বড্ড তারাতাড়ি বড় হয়ে গেল। তাই না?’
কিছু বলে না সাদিদ। সত্যি’ই মেয়েটা বড় হয়ে গেল। আর হয়তো বাবা -মেয়ে মিলে যখন তখন লং ড্রাইভেও বের হওয়া হবে না।
তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল সাদিদ,,
__‘তোমাকে দেখলে মনে হয় না তিলাত, তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান না।’
সাদিদের কথার উত্তরে মৃদু হাসে তুলিকা।
সাদিদ তুলিকার পাশে বসে বলল,,
__‘আমার মাঝে মাঝে তোমাদের দু’বোনের জন্য আফসোস হয় তুলি।’
সাদিদের এহনো কথায় ভ্রু কুচকে তার দিকে তাঁকায় তুলিকা। তা দেখে সাদিদ মৃদু হাসলো তবে কিছু বলল না। বলতে ইচ্ছে করলো না তার। আর না তুলিকাকে জালাতে ইচ্ছে করলো আজ। তাই চুপচাপ শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো সে।
সকালে তিয়ানা ঘুম থেকে উঠে দেখে মেঘালয় তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ভুত দেখার মতো চমকে যায় তিয়ানা। এ কি করে পসিবল? মেঘালয় তাকে জড়িয়ে আছে তাও সম্ভব! হাত দিয়ে নিজে চোখ ডলে নেয় তিয়ানা। না! যা দেখছে সত্যি দেখছে সে। দম বন্ধ হয়ে আসে তিয়ানার। মেঘালয়কে ছাড়াতে নেয় সে। তিয়ানার নড়াচড়ায় ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। চোখ পিট পিট করে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে তিয়ানাকে বলল,,

__‘অনেক রাতে ঘুমিয়েছি বউ। নড়াচরা করো না ঘুমোতে দাও।”
মেঘালয়ের এমন আচরন, এমন কথায় তিয়ানা হতবাক হয়ে যায়। মেঘালয়কে জোড়ে ঠেলে নিজের থেকে সরিয়ে উঠে বসে সে। ঘনঘন শ্বাস নেয় সে। মেঘালয় এত কাছে থাকায় দম আটকে যাচ্ছিলো তার। তিয়ানার ঠ্যালা ঠেলিতে ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। শোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে সে। তিয়ানার কোমড়ে হাত রেখে তাকে টেনে এনে নিজের কোলে বসিয়ে তিয়ানার ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে গাড়ো ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে তার ঘাড়ে থুতুনি রাখে মেঘালয়। মেঘালয়ের এসব অদ্ভুত কান্ডে মাথা ভনভন করে ওঠে তিয়ানার। পাগল হয়ে গেল নাকি! চোখ পাকিয়ে তাঁকায় তিয়ানা। মেঘালয়ের হাত নিজের কোমড় থেকে সরিয়ে মেঘালয়ের কাছ থেকে সরে যায় সে। হাত বাড়িয়ে মেঘালয়ের ঘাড়ে কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বলল,,
__‘আপনার জ্বর টর হলো নাকি! কি সব করছেন। আমার মাথা ভনভন করছে। ‘
তিয়ানার কথায় শব্দ করে হেসে দেয় মেঘালয়। এমন যে তিয়ানা কোনো জোকস বলছে। তিয়ানা আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। মেঘালয় আচমকা তিয়ানাকে শুয়ে দিয়ে তার উপরে উঠে যায়। হঠাৎ আক্রমনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায় তিয়ানা। মুখ দিয়ে টা শব্দ না করে চেয়ে থাকে সে। মাথায় খেলছে না তার কিছু। মেঘালয় তিয়ানার নাকে কামড় দিয়ে বলল,,

__‘বউ রোম্যান্স করি? ‘
হেচকি উঠে যায় তিয়ানার। আমতা আমতে করে বলল সে,,
__‘আপনি কি কিছু খেয়ে ফেলছেন মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় তিয়ানার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। ব্যাথায় হালকা চেচিয়ে ওঠে তিয়ানা। ব্যাথিত কন্ঠে বলল,,
__‘কি করছেন? ব্যাথা পাচ্ছি আমি।’
দুষ্টু হাসে মেঘালয়। ঘাড়ে ঠোঁট ছুয়ে বলল,,
__‘আর একবার ভাইয়া বলে ডাকলে এর চেয়ে বেশি কিছু হবে।’
বলে মেঘালয় উঠে ওয়াসশ্রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে তিয়ানা সেদিকে আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। নিজ মনে ভাবে তিয়ানা,
__‘কি হলো এটা? কিছু একটা গন্ডগোল আছে।’
‘‘__আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তোমার ভাবা উচিত সাদিদ।”
তুলিকার এমন কথায় ভ্রু কুচকায় সাদিদ। প্রশ্ন করলো,,
__‘মানে?”
হাসে তুলিকা। হেসে বলল,
__‘মানেটা তুমি ভালো জানো সাদিদ। আমি আর এসব এভাবে নিতে পারছিনা। ”
__‘কি নিতে পারছো না?’
তুলিকা সাদিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,
__‘বুঝতে পারছো না? একুশটা বছর ধরে তোমার মানুষিক টর্চার গুলো নিতে পারছি না আর আমি। এবার আমার এসব থেকে মুক্তি চাই।’
তুলিকার শেষে বলা কথাগুলো শুনে রাগ হয় সাদিদের। তুলিকার হাত খামছে ধরে রাগ নিয়ে বলল,,
__‘আমি তোমাকে মানুষিক টর্চার করি নাকি তোমার দেয়া আঘাতের জন্য আমার পুরু লাইফ শেষ হয়ে গেছে।”
__‘আমার দোষ ছিল সাদিদ! সেই দোষের শাস্তি আমিও পেয়ে গিয়েছি এত গুলো বছর ধরে তারপরও আমার পাপ মোচন হয়নি।’
তুলিকার হাত মুচড়ে রাগি কন্ঠে উত্তর দেয় সাদিদ,,
__‘ এ জীবনে হবে না। সব কেঁড়ে নিয়েছো তুমি আমার থেকে শেষ যখন একটা সন্তান চেয়েছিলাম তখনও তুমি আমাকে সেটা দাওনি তুলি।’
তুলিকা শান্ত কন্ঠে বলল,,

__‘তিলাত, তিয়ানা ছিল।’
রাগে হিসহিসে বলে উঠে সাদিদ,
__‘ওরা তিয়াসার সন্তান তোমার না। আমার তোমার আমার সন্তান দরকার ছিল। তিলাত, তিয়ানাও আমাদের সন্তান তুলি কিন্তু আমার তোমার গর্ভের সন্তান দরকার ছিল। যে আমার চোখেরর সামনে একটু একটু করে বেড়ে উঠবে। যা আমি পাইনি তোমার থেকে।’
শ্বাস ঘোনো হয়ে আসে সাদিদের। থেমে শ্বাস নিয়ে কঠর কন্ঠে বলল,,
__‘মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমার জীবনের অভিশাপ। যা আমার জীবনে আসার পর থেকে কখনো সুখি হইনি আমি। আই হেইট ইউ।’
থমকায় তুলিকা! চোখ কোণে জল চলে আসে তার। ভাবে সে,
__‘সত্যি’ই কি সে সাদিদের জীবনের অভিশাপ? ‘

__‘আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় সোফায় বসে কিছু রিপোর্ট দেখছিল সাথে কফি খাচ্ছিল। এমন সময় তিয়ানা প্রশ্ন করলো। মেঘালয় রিপোর্ট থেকে চোখহ সরিয়ে তিয়ানার দিকে তাঁকায়। মেঘালয় তিয়ানার এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হয়েছে। তিয়ানা দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করলো,,

__‘আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় প্রশ্নের উত্তর না দিতে তিয়ানাকে পালটা প্রশ্ন করলো,
__‘তোর কেন মনে হলো?’
তিয়ানা ভাবশালীন ভাবে উত্তর দিলো,,
__‘এত দিন এক সাথে এক ঘরে থেকে মনে হলো।
থেমে কিছুটা আকুল কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘কি হলো? বলুন! ভালোবাসেন আমাকে?’
মেঘালয় কফির মগ টি টেবিল উপর রেখে। হাতে থাকা ফাইল সোফার উপর রেখে দাঁড়ালো। তিয়ানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থেকে হেটে তিয়ানার পাশে এসে দাঁড়ালো। তিয়ানা এতক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে ছিল। পাশে মেঘালয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মেঘালয়ে দিকে তাঁকায় সে। মেঘালয় ঠোঁটের কোনো হাসির রেখা নিয়ে বলল,,
__‘ভালোবাসি’
মেঘালয়ের বলা ‘ভালোবাসি’ শব্দটা কানে যাওয়া মাত্র বুকে ধুকপুক শুরু হয় তিয়ানার। মেঘালয় তাকে ভালোবাসে! নিজেকে খুব সুখি মনে হলো হঠাৎ করে তিয়ানার। হো হো করে হেসে দেয় মেঘালয়। অবাক হয় তিয়ানা! অবাক চোখহ নিয়ে চেয়ে থাকে মেঘালয়ের মুখ পাণে। মেঘালয় হাসি বন্ধ করে আবার হেসে দেয়। যেন, সে হাসি আঁটকে রাখতে পারছে না। তিয়ানার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। মেঘালয়ের এমন হাসির মানে সে বুঝতে পারছে না। মেঘালয় হাসি থামিয়ে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে কিছুটা তিয়ানার দিকে ঝুঁকে বলল,,

আমার আদরিনী পর্ব ২৩+২৪

__‘কী ভাবছিস? ভালোবাসি?
তিয়ানা মুখ দিয়ে টা শব্দ না করে হতভম্ব হয়ে মেঘালয়কে দেখছে। বুকের ভিতর অজানা ভিয় হচ্ছে তার। তিয়ানাকে অবাক চোখে চেয়ে থাকতে দেখে বাঁকা হাসে মেঘালয়। জেসে বলল,,
__‘তোকে আগেও বলছি তিনু। তোকে আমি ভালোবাসি না। আমি ‘আদরিনী’ কে ভালোবাসি।’
নিজের কথা বলা চলে যেতে নেয় মেঘালয়। দরজার কাছে গিয়ে পিছন ফিরে বলল,,
__‘আর না ভালোবাসবো।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় পাথর হয়ে যায় তিয়ানা। ধরে আসা কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘তাহলে আমাদের মধ্যে যেটা এতদিন হলো?’
মেঘালয় চোয়াল শক্ত করে উত্তর দেয়,
__‘বউ হোস আমার। বিয়ে তো করেছি অধিকার তো দিতে হবে। এক মাস ধরে সংসার করছিস আমার সাথে। তাই অধিকার দিয়েছি তবে ভালোবাসা নয় আর না সেটা পাবি।’

ঘর ছেড়ে চলে যায় মেঘালয়। তিয়ানা ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে। কি করবে সে? মেঘালয়কে সে ছাড়তে পারবে না আবার ভালোবাসা ছাড়াও থাকবে কি করে। যেখানে ভালবাসা নেই সেখানে থেকে কি লাভ? আচ্ছা! তার জীবনটাও কি তার মায়ের মতো হলো? সেও কি তার মায়ের মতো দু’জন ভালবাসার মানুষের মাঝখানে এসে পড়লো? মায়ের’ই মতো সারাজীবন ভালবাসাহীন বাঁচতে হবে তাকেও! মায়ের করা যাওয়া পাপে ধরলো তাকে? যাকে সে নিজের শরীর মন সব দিলো সে নাকি বলছে ভালোইবাসে না শুধু অধিকার। এই এক মাসে মনে হলো মেঘ তাকে ভালবেসে ফেলেছে। তাহলে, তার ধারনা ভুল।

আমার আদরিনী পর্ব ২৭+২৮